যদি তুমি বলো পর্ব ২২

যদি তুমি বলো পর্ব ২২
আফনান লারা

তিথি কলটা হোল্ডে রেখে বললো,’কি ভেবেছেন?টাকা খাওয়াবেন আমার পরিবারকে তারপর সেই টাকার জোরে আমি সত্যটা চাপা রেখে দিবো?তা হবেনা মিঃইশতিয়াক!আমি বাবাকে সব সত্যিটা জানিয়ে দিবো।এবং সেটা খুব দ্রুতই হবে।আমার বাবা এমন না যে টাকার লোভে আমাকে আপনার কাছে থাকতে বাধ্য করবে’

এই বলে তিথি ফোন আবার কানে ধরে বললো সে আজ বাবার সাথে দেখা করতে আসবে।এটা বলে কলটা কেটে সে ফোন ইশানের হাতে ধরিয়ে বাকি জামাকাপড় গুলো ধুতে থাকলো।
তার এ কথায় ইশানের যেন কিছুই যায় আসলোনা।সে একটা হাসি দিয়ে চলে যায়।যেন সে জানতো তিথি এটাই বলবে।
তিথি সব জামাকাপড় ধুয়ে এসে দেখে ইশান তিথির জামাকাপড় সব ব্যাগে তুলছে।এটা দেখে তিথি প্রথমে বুঝতেই পারছিলনা আসলে হচ্ছে টা কি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

তিথিকে দেখে ইশান বলে ওঠে সে যেন তৈরি হয়ে নেয়।তখন তিথি জানতে চাইলো কেন সে তৈরি হবে।
‘ওমা!বাপের বাড়ি যাবিনা?তুই তো বললি আমার সংসার করবিনা’
‘আর আপনি দিবেন সেটা? ‘
‘কেনো দিবোনা।অবশ্যই দিবো।’

এই বলে ইশান ব্যাগটা নিয়ে দরজার কাছে রেখে আসে।এরপর নিজের ল্যাপটপটা নিয়ে মায়ের রুমে চলে যায়।তিথি ভাবতে পারেনি ইশান সব এত সিরিয়াস নিয়ে ফেলবে।এখন ব্যাগ নিয়ে বাড়ি গেলে সকলে কি না কি ভাববে।যদি তার কথা কেউ বিশ্বাস না করে?

ঢোক গিলে অনেক চিন্তাভাবনা শেষে তিথি সিদ্ধান্ত নেয় সে যাবেই,যা হয়ে যাক না কেন।
যেমন ভাবা তেমন কাজ।সে ব্যাগ নিয়ে ইশানকে বাই বলে দরজা খুলে চলেও গেছে ।
ইশান তখনও নিজের কাজ করছিল।উঠে একবার দেখতেও আসেনি,কারণ সে জানে এরপর কি হতে চলেছে।
তিথি একটা রিকশা নিয়ে তার বাসায় ফিরে।সে ভেবেছিল সবাই ওকে দেখে অনেক খুশি হবে।কিন্তু হলো তার উল্টো। সবাই ব্যস্ত অন্য কাজে।তানিয়ার কাবিন নিয়ে আলোচনা করছে সবাই।

তিথি গেছে তাতে খুশি হলেও সবাই এখন বেশি ব্যস্ত তানিয়াকে নিয়ে।
এদিকে তিথি মুখ ফুটে বলতেও পারছেনা সে ইশানকে ছেড়ে এখানে এসেছে।একটা সময়ে বাবাকে একা পেয়ে সে ধরলো কথাগুলো বলার জন্য।
‘হ্যাঁ রে মা বল কি বলবি,তুই না কি বলতে চেয়েছিলি?’
‘বাবা আমি ইশানকে….’

‘ইশান যে কি ছেলেরে মা।তোকে আর কি বলবো।যত বলবো তত কম বলা হবে।সে এত কিছু কেন করছে আমি বুঝতেছিনা।আজীবন মেয়ের বাপেরা মেয়ের শ্বশুর বাড়ির জন্য করতে করতে শেষ হয়ে যায়,আর তোর বেলায় হচ্ছে উল্টো। ছেলে তোর জন্য সব করছে।খুব ভাগ্য করে পেয়েছিস রে।তোর বিয়েতে আমার অনেক খরচ হয়েছিল,এদিকে রকিবের পরিবার বিয়ের চাপ দিচ্ছিলো।এই মূহুর্তে আরেকটা বিয়ের খরচ জোগানো আমার জন্য অসম্ভব হয়ে গেছিলো। ঠিক সেসময় ইশান আমায় জানায় তানিয়াকে ছোট বোন হিসেবে ওর জন্য সে কিছু দায়িত্ব পালন করতে চায়।তানিয়া নাকি তার অনেক আদরের।তোর যেমন আদরের তেমনই ওর ও আদরের।

সে জোর করে টাকা দিতে চায়,আমি বারবার মানা করার পরেও শুনলোনা রে।এত ভাল কেন!আচ্ছা তুই ওর মন জুড়িয়ে চলিস তো?ছেলেটাকে একদম কষ্ট দিবিনা।ওর কথা মত চলবি।’
এ কথা শুনে তিথির মেজাজ গেলো খারাপ হয়ে।সে কিছু না বলেই উঠে চলে গেলো।যাবার সময় নিজের ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে গেলো সে।
কোথায় গেলো কেউ জানেনা।বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হবার পর তিথির বাবা ওর কোনো খোঁজ না পেয়ে ইশানকে একটা কল দিলেন।

ইশান মনে করেছিল তিথি হয়ত ওর বাসাতেই আছে,কিন্তু ওর বাবার কাছে এ কথা শুনে সে নিজেও চিন্তায় পড়ে গেলো। শান্ত মনে কাজ করছিল সে আজ সারাদিন ধরে।তিথি তার বাসায় নিরাপদ আছে ভেবে সে আর কোনো খবর রাখেনি।
এখন তিথির বাবার মুখে তিথির না থাকার কথা শুনে সে ভীষণ চিন্তায় পড়ে যায়।দ্রুত তানিয়াকে কল দিয়ে তিথির কোনো বান্ধবীর কাছে আছে কিনা খোঁজ নিতে বললো।শুরুতে তিথির যে বান্ধবীর বাসায় সে গিয়েছিল সে আপাতত বাংলাদেশে নেই।পরিবার নিয়ে সুইডেন গেছে।তাকে বাদ দিয়ে আর বাকিদের খোঁজ নিতে বললো সে তানিয়াকে।এরপর নিজেই বের হয়ে গেলো তিথিকে খুঁজতে।

তিথি আসলে তার নানুর বাড়িতে চলে এসেছিল।ওর নানুর বাড়ি ঢাকার বাহিরে।
এটার কথা ইশান জানতোনা।অনেক খোঁজাখোঁজির পর হঠাৎ তানিয়া তাকে কল দিয়ে জানায় নানু কল দিয়েছিল।তিথি নাকি উনার কাছে।এটাও তিথি কাউকে জানাতে মানা করেছিল কিন্তু তিথির মা চিন্তা করবেন ভেবে তিনি তিথির থেকে লুকিয়ে কথাটা ওদের জানিয়ে দিয়েছেন।

ইশান আর বাসায় ফিরলোনা,সোজা তিথির নানুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো।তিথির নানুর বাড়ি ইশান খুব ভাল ভাবে চেনে। কারণ ইশানের কাছ থেকে মুক্তি পেতে প্রায় এক মাসের মতন তিথি তার নানুর বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করেছে,সে ভেবেছিল ইশান ওর নানুর বাড়ির ঠিকানা পাবেনা,কিন্তু ইশান তো ইশানই।সে ঠিকানা বের করে নিয়েছিল, তা অবশ্য তিথিকে বুঝতে দেয়নি।

তিথি নানুর বাড়িতে বসে বসে মুড়ি দিয়ে চিনি মাখিয়ে খাচ্ছিল আর টিভি দেখছিল।ওমনি দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ শুনে নানু উঠতে গেলেন,তিথি তাকে উঠতে মানা করে নিজেই গেলো দেখতে।দরজা খুলতেই সে দেখে ইশান দাঁড়িয়ে আছে।এত রাতে আচমকা ইশানকে দেখে তিথি ভয় পেয়ে গেছিলো।হা করে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিল সে।ইশান ওর সাথে কোনো কথা না বলে হাতে থাকা মিষ্টি আর ফল এনে নানুর সামনে রেখে তাকে সালাম করলো।

নানু তো ইশানকে দেখে আত্নহারা হয়ে গেছেন।তিনি কি দিয়ে ওর আপ্যায়ন করবেন সেটাই ভেবে চলেছেন।
তিথি এক কোণায় দাঁড়িয়ে চোখ বড় করে তাকিয়েছিল।নানু সোফার রুম থেকে চলে যেতেই ইশান খপ করে তিথির হাতটা ধরে একটা রুমে নিয়ে আসলো,তিথি কিছু বলবে তার আগেই ইশান ওর মুখটা চেপে ধরে বললো,’কি ভাবিস নিজেকে?তুই না বাপের বাড়ি যাস?এটা তোর বাপের বাড়ি?’

‘আপনার কি তাতে?আপনার সংসার তো করছিনা আমি’
‘ডিভোর্স হয় নাই যে আমি এসব পাত্তা দিব না’
‘আমার ইচ্ছে আমি বাবার বাড়ি যাবো নাকি মায়ের বাড়ি যাবো।আপনার জীবন নিয়ে আপনি থাকুন।সেই ছোটকালকার বেহায়াপনা আবারও শুরু করেছেন।পিছু ছাড়তে বলেছি,ছাড়ছেন না কেন?’
‘আমি সেই ছোট ইশতিয়াক নয় যে তুই পিছু ছাড়তে বলবি,আর আমিও পিছু ছেড়ে দিবো।এখন তুই আমার বিয়ে করা বউ’
‘না কেউ না আমি।আপনি আমাকে রাখছেন দিনের পর দিন অত্যাচার করার জন্য।যা আমি কিছুতেই সহ্য করবোনা।আপনি চলে যাবেন এখন… ‘

নানু সোফার রুমে শরবতের গ্লাস এনে বললেন,’ইশান নাতি কই তুমি?কোথায় গেলে!তিথি কই তুই?’
তিথি নানুকে ডাকতে যাবে তখনই ইশান ওর মুখটা আরও জোরে চেপে ধরে বললো,’নানু আমি ওয়াশরুমে’
নানু ইশানের এ কথা শুনে অন্যদিকে তিথিকে খুঁজতে চলে গেছেন।তিথি ইশানের শার্ট খাঁমছাচ্ছে নিজেকে ছুটানোর জন্য,কিন্তু কিছুতেই ইশানের সাথে পেরে উঠছেনা।

নানু চলে যাবার পর ইশান ওর মুখ থেকে হাত সরিয়ে বললো,’তখন তোর উপর আমার কোনো অধিকার ছিল না।এখন আছে।তখনও তুই এরকম নাছোড়বান্দা ছিলি আর এখনও আছিস।কিন্তু এখন আর আমি সহ্য করবোনা।আমি যেভাবে বলবো তোকে সেভাবেই চলতে হবে’
‘আর যদি না চলি তখন কি করবেন?আপনি সেইসময় ও আমায় কাবু করতে পারেন নাই।এখন ও পারবেন না।আমি আমার জেদে অটল থাকবো’

ওমনি ইশান ওর হাত ছেড়ে দেয়।ওকে ছেড়ে যাবার সময় চেঁচিয়ে বলে,’নানু খাবার দাও,খেয়ে ভাতঘুম দিবো’
এই বলে একটা হাসি দিয়ে সে নানুর কাছে চলে যায়।তিথি ভাবছে সে কি করার কথা ভাবছে আসলে।তার মাথায় কি চলে যদি একবার সে বুঝতো তাহলে আগে থেকে তৈরি হয়ে নিতো।

রাতে খাবার খেয়ে ইশান ওর জন্য তৈরি করা রুমটাতে গিয়ে আরাম করে বসেছে।তিথি নানুর সাথে ঘুমাবে বলে ঠিক করছিল ঐ সময়ে নানু তাকে ধমকে ইশানের কাছে পাঠিয়ে দিলেন।কিন্তু তিথি তো জানে,সে এখন ঐ রুমে যাওয়া মানে আজ একটা যুদ্ধ ঘটে যাবে।তাই সে সোফায় এসে শুয়ে পড়ে।
ইশান দেখলো সব রুমের আলো নিভানো।মানে মামা মামি সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।নানু ও ঘুমায়।তবে তিথি আসছেনা কেন?
ইশান সে কারণে বিছানা থেকে নামলো দেখার জন্য।

রুম থেকে বেরিয়ে অন্ধকারে হাঁটতে হাঁটতে সে সোফার রুমে এসে দেখে তিথি সোফায় শুয়ে শুয়ে মশা মারছে।
ইশান তখন রুমের আলো জ্বালিয়ে বললো,’উঠ’
‘যাব না।আমি এখানেই ঘুমাবো।আমার ইচ্ছে’

যদি তুমি বলো পর্ব ২১

ইশান জোর করতে যাবে ওমনি নানু পানির বোতল নিয়ে এসে বললেন,’কি গো তোমরা এখানে কি করো?আমি পানির বোতল এনেছি দেয়ার জন্য।একি তিথি!তুই বালিশ নিয়ে সোফায় শুয়ে আছিস কেন?যা ঘরে যা!’
ইশান মুচকি হাসি দিয়ে বোতলটা নিয়ে বললো,’এই তো আমিই নিয়ে যাচ্ছি ওকে’
এই বলে সে তিথির হাত শক্ত করে ধরে টেনে নিয়ে গেলো রুমে।এরপর দরজাটা ভেতর থেকে লক করে নিলো।

যদি তুমি বলো পর্ব ২৩