যদি তুমি বলো পর্ব ২১

যদি তুমি বলো পর্ব ২১
আফনান লারা

তিথি ইশানকে সামনে থেকে সরিয়ে দিয়ে বললো,’আগেও বাসতাম না,এখনও বাসিনা’
এটা শুনে ইশানের মেজাজটা আরও বেশি খারাপ হয়ে যায়।সে দেয়ালে খুব জোরে আঘাত করে রুম থেকে চলে গেলো।তিথি গাল ফুলিয়ে রেখে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।ইশান সেই যে গেলো তার আর কোনো খোঁজ মিললোনা।অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে তিথি বিরক্ত হয়ে সোফায় বসে পড়ে।পায়ে মশা কামড়াচ্ছিল বলে পা দুটো তুলে বসে সে।বসতে বসতে ওখানেই ঘুমিয়ে যায় তিথি।

পরেরদিন সকাল সাতটার দিকে চোখ মেলে সে বুঝতে পারে কাল সোফাতেই ঘুমিয়েছিল।রাতের খাবার খাওয়ার জন্য ও ওঠেনি। এরপর হঠাৎ ওর ইশানের কথা মাথায় আসে।
সে সোফা থেকে নেমে বাহিরে বের হয়ে ইশানকে খুঁজতে থাকে।দরজা ভেতর থেকে লক করা দেখে তিথি নিশ্চিত হলো সে বাসাতেই আছে।তাই বাসার বাকি রুম গুলো খুঁজতে থাকে তিথি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

সবার শেষে মায়ের রুমে ইশানের দেখা পায় সে।মায়ের কাঁথা গায়ে জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে সে।তিথি ওর সামনে এসে ওকে দেখে আবার চলে যাচ্ছিলো ঠিক তখনই ইশানের গলা শুনে তার পা থেমে যায়।ইশান শুয়ে শুয়ে তাকে বলছে খাবার তৈরি করতে দশ মিনিটের মধ্যে।

কথাটা খুব কঠিন করে বললো সে।তিথি ওর কথা শুনে দ্রুত রান্নাঘরে ঢুকে ভাবছে কি বানাবে।ইশান যে হারে চেঞ্জ হইছে তাতে ওর খাবার দাবারে কেমন চেঞ্জ হইছে কে জানে!
দশ মিনিটে নুডুলস ছাড়া অন্য কিছু বানানো অসম্ভব ভেবে সে নুডুলসই তৈরি করলো।তাও রান্নাঘরে পাওয়া ইশানের কোম্পানির নুডুলস।টেবিলে নুডুলস রেখে তিথি নিজের বাটি নিয়ে একটু দূরে বসলো খাবার জন্য।
ইশান ততক্ষণে মুখ ধুয়ে আসতেছে।তিথি এক চামচ মুখে দিয়ে বুঝতে পারলো প্যাকেটে জাপানি ভাষায় লেখা ছিল এলাচি ফ্লেভার।

এটা দেখে তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়।রিসিপশানে খাবার খাওয়ার সময় পাতে এলাচি পড়ায় ইশান অনেক চেঁচামেচি করেছিল।তার নাকি এলাচি অনেক অসহ্য লাগে।
কিন্তু এলাচ ফ্লেভারের নুডুলস অনেক মানুষের পছন্দ বলে সে নিজের কোম্পানিতেও নিয়ে এসেছে।
তিথি কি আর জানতো এটা এলাচ ফ্লেভারের নুডুলস!
সে এক দৌড় দিলো বাটিটা সরিয়ে নিতে কিন্তু তার আগেই ইশান বসে পড়ে।
তিথি বাটিটা সরিয়ে বললো,’আমাকে আর পাঁচ মিনিট সময় দিন।আমি অন্য কিছু বানিয়ে দিচ্ছি।এটাতে সমস্যা আছে’

‘বিষ মিশালি?’
‘না না।তবে এটা ভালনা’
ইশান তো নাছড়বান্দা।সে কিছুতেই এই বাটি সরাতে দেবেনা।টানাটানি করে বাটিটা তিথির কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে সে এক চামচ নুডুলস মুখে পুরলো।তারপর সোজা তিথির মুখের দিকে তাকালো কপাল কুঁচকে।

তিথি আগেভাগে কানে হাত দিয়ে রেখেছে।কিন্তু তিথিকে অবাক করে দিয়ে ইশান নুডুলসের বাটি শেষ করে উঠে চলে যায়।
তিথি অবাক হয়ে থাকে।রিসিপশানে এলাচি নিয়ে চেঁচামেচি করা ছেলেটা এখন সুযোগ পেয়েও ওকে কিছু বললোনা?অদ্ভুত!’
ইশান মায়ের রুমে এসে আবার শুয়ে পড়ে।শুয়ে শুয়ে ফোন টিপতে থাকে।তিথির পেট ভরে নাই নুডুলস খেয়ে।সে রান্নাঘরে অন্য কিছু খুঁজছে বানিয়ে খাওয়ার জন্য।

ইশান এ প্রথমবার তার কোম্পানির এলাচি ফ্লেভারের নুডুলসটা টেস্ট করেছে।এবং তার কাছে ভীষণ ভাল লেগেছে। কারণ এটা নয় বরং কারণ ছিল অন্যটা।
তিথি এ প্রথম বার ওর জন্য নিজের হাতে কিছু তৈরি করেছে বলেই সে মজা করে খেলো।
ফোন টিপতে টিপতে ইশানের এবার মনে হলো তিথিকে হালকা পাতলা শাস্তি দেয়া যাক।তাই ভেবে সে তিথির নাম ধরে ডাক দেয়।

তিথি তখন রান্নাঘরে বসে বসে চানাচুর খাচ্ছিল।ইশানের ডাক শুনে হাত থেকে প্যাকেট রেখে ছুটে আসে সে।সারা গালে চানাচুর মাখা ছিল ওর।
ইশান তখন ওর চেহারা দেখে মুখ মুছে নিতে বলে।তিথি ও শাড়ীর আঁচল দিয়ে মুখটা মুছে নেয় তাড়াতাড়ি।ইশান তখন দাঁত কেলিয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে বললো ‘নে,আমার পা দুটো টিপে দে একটু’
তিথি চোখ বড় করে বলে,’কেন?’

‘কেন?আমি বলছি তাই’
‘পারবোনা’
‘পারবিনা?’
‘নাহ’
ইশান এক লাফে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াতেই তিথি নড়েচড়ে দাঁড়ায় এরপর বলে,’আচ্ছা ঠিক আছে।দিচ্ছি’
ইশান এবার নিজের দুহাত কচলাতে কচলাতে বলে,’নাহ।এখন আর পা ব্যাথা করছেনা। ঘাড়ের পেছনের দিকটা খুব ব্যাথা করছে।গরম তেল নিয় আয়,মালিশ করে দিবি’

তিথি চোখ বড় করে তাকায় আবারও।এরপর মনে মনে ভাবে পা মানা করায় পিঠে উঠেছে।পিঠ মানা করলে আবার কিসে উঠে যায় কে জানে তার চেয়ে বরং পিঠই ভাল।
এই ভেবে সে গরম তেল আনতে চলে গেলো।
তেল গরম করে নিয়ে আসার পর তিথি দেখে ইশান আয়োজন করে বসে আছে।সে একেবারে প্রস্তুত। খাটের নিচে বসে খাটে হেলান দিয়ে সে বললো তিথি খাটে উঠে বসে যেন তেল লাগায়।তাহলে ওর হাতের চাপটা বেশি হবে আর ওর ঘাড় ব্যাথাটাও দ্রুত যাবে।

তিথি আর কি করবে।খাটে উঠে বাটিটা রেখে হাত ডুবিয়ে ঘঁষে ইশানের পিঠের উপর নিয়ে মালিশ করতে থাকলো।ইশান মেঝের দিকে তাকিয়ে হাসছে শুধু।
তার মাথায় অন্য কিছু ঘুরছে।একটু পরেই সেটা ফাঁস করবে।
তিথি মালিশ করা শেষ দিয়ে আরও একবার হাত দিয়ে চাপ দিতে গেলো ওমনি ইশান সরে যায় আর সেজন্য তিথি খাট থেকে একেবারে নিচে পড়ে যায় ইশানের সামনে।মেঝেতে পড়ে কোমড়ে হাত দিয়ে সে চোখ বন্ধ করে রাখলো।ইশান তখন তিথির মাথায় হাত দিয়ে বললো,’আহারে,ব্যাথা পেলি?মনে পড়ে ইশতিয়াককে কাদায় ঠিক এমন করেই ফেলে দেয়ার কথা? ‘

তিথি গাল ফুলিয়ে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারেনা।কোমড়ে বড়জোর ব্যাথা পেয়েছে।
ইশান হাসতে হাসতে বললো,’উঠ।আরও অনেক কাজ বাকি আছে’
‘পারবোনা’

এটা বলে তিথি মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকে।ইশান ওর ময়লা জামাকাপড় এনে তিথির সামনে ফেলে বললো,’এগুলো ধুয়ে দে’
‘পারবোনা।আপনার না কতগুলা কাজের লোক আছে?ওদের দিয়ে করান’
‘আজ ওরা আসবেনা।আজ আমি ছুটি নিয়েছি।আমি যেদিন বাসায় ছুটি নিই,সেদিন কাজের লোক আসেনা।কারণ সেদিন আমি নিজের কাজ নিজে করি।’

‘তো নিজের জামাকাপড় নিজেই ধুয়ে নিন’
‘তা হবেনা।তোকে বললাম,তুই ধুবি।আর না শুনলে…..’
তিথি ঘুরে তাকিয়ে বলে,’কি?মারবেন?’
ওমনি গালে চড় খেয়ে তিথির যত দেমাগ সব ধুয়ে মুছে গেলো।ইশান হাত নাড়তে নাড়তে বললো,’তোর জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতাম বলে হাজারটা চড় মেরেছিলি।আজকে একটা দিয়ে শুভযাত্রা করলাম’
তিথি গাল ঘঁষতে ঘঁষতে জামাকাপড় নিয়ে চলে গেছে।

কিন্তু তিথিকে এভাবে মারার ইচ্ছা ইশানের ছিল না।তার খারাপ লাগলো।নিজের হাতটাকে শক্ত করে ধরে সে তিথিকে দেখতে গেলো।তিথি চোখ মুছতে মুছতে জামাকাপড় ধুয়ে চলেছে।ইশান একটা মূহুর্তের জন্য গলে গেলেও হঠাৎ তার মনে পড়ে যায় তিথি ওকে এভাবে কত মার মেরেছিল।তাও বেহায়ার মতন সে তিথির পিছে পড়ে থাকতো।
তিথি তো কোনো দরদ দেখায়নি!পাষাণের মতন ব্যবহার করেছে দিনের পর দিন।এরকম একটা দিন দেখার জন্যই তো সে তিথিকে বিয়ে করে এনেছে।

রাগে ইশান তার আরও কিছু জামাকাপড় এনে তিথির পাশে রেখে দেয়।তিথি ওগুলা দেখে চেঁচিয়ে বললো,’আমি বাবার কাছে সব বলে দিবো। আমার ঠ্যাকা পড়ে নাই আপনার সংসারে থেকে এত অত্যাচার সহ্য করার।’
এ কথা শুনে ইশান তার ফোন তিথির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,’নাও,বলে দাও’
তিথি ও দাঁতে দাঁত চেপে ফোনটা নেয়।কন্টাক্ট থেকে বাবার নাম্বার খুঁজে কল ও দেয়।
বাবা রিসিভ করে শুরুতে তিথির খোঁজ খবর জানতে চাইলেন।

যদি তুমি বলো পর্ব ২০

‘বাবা আমি আসলে…..’
‘ মা, একটা দারুণ খবর।ইশান কি করেছে জানিস?আমি যে এতগুলো বছর ধরে ফ্ল্যাটের লোন দিয়ে এসেছি,এখনও দশ বছর সে লোন রয়ে গেছিলো।ইশান সেই লোন পরিশোধ করে দিয়েছে।ছেলেটা কত ভাল ভাবতে পারিস?তার উপর তোর মায়ের লেন্স অপারেশন করার জন্য যে ৫০হাজার টাকা আমার দরকার ছিল সেটাও নাকি ইশান দিবে বলেছে। বিশ্বাস কর,আমি ওর থেকে চাইনি।ও নিজে থেকেই খবর নিয়েছে আমাদের কার কি লাগবে।’

যদি তুমি বলো পর্ব ২২