মনের উঠোন জুড়ে সিজন ২ পর্ব ২

মনের উঠোন জুড়ে সিজন ২ পর্ব ২
নূন মাহবুব

-“শিক্ষা পুনরায় সাহিত্যের গালে থা’প্প’ড় দেওয়ার আগেই সাহিত্য তার হাত ধরে বললো, সেকেন্ড টাইম এক‌ই ভুল করলে তুমি। নির্ঘাত আমি মেয়েদের সম্মান করি বলে এখনো তোমার গাল অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। না হলে আমার গালে থা’প্প’ড় দেওয়ার অপরাধে এতোক্ষণে তোমার গালে সিলমোহর লাগিয়ে দিতাম। তুমি নিজেই নিজের বিপদ ডেকে এনেছো। তুমি নিজেও জানো না আমি চাইলে তোমার ঠিক কি অবস্থা করতে পারি?”

-” শিক্ষা তৎক্ষণাৎ সাহিত্যে কে কিক মে’রে নিচে ফেলে দিয়ে বললো, ওহ্ আচ্ছা! আপনি মেয়েদের সম্মান করেন তাই না? তো তাদের কে বাজে প্রস্তাব দেওয়ার মাধ্যমে সম্মান জানান‌ বুঝি?এই আপনার সম্মান জানানোর নমুনা?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” দেখো মেয়ে আমরা অনেক সময় চোখের সামনে যা দেখি সেটা সত্যি হয় না। আমাদের উচিত সত্য মিথ্যা যাচাই করা। কিন্তু তুমি সেটা না করে আমাকে থা’প্প’ড় দিয়ে অনেক বড়ো ভুল করেছো।এর মাশুল তোমাকে দিতে হবে। অন্যায়ের কোনো ক্ষমা আমার ডিকশনারি তে নেই।তবে তুমি ভেবো না আমি তোমার গাঁয়ে হাত দিবো।

তোমার শাস্তি অন্য ভাবে হবে বলে সাহিত্য নিজের ফোন বের করে কোথাও কল করতে যাবে এমন সময় কোথা থেকে একটা সুদর্শন ছেলে এসে সাহিত্যের হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে বললো,বাদ দে না ইয়ার। মানছি মেয়েটা যা করছে ভুল করছে। বাচ্চা মেয়ে ভুল করে ফেলেছে।তোর নিজের বোন মনে করে ক্ষমা করে দে মেয়েটা কে।”

-“অর্নাস পড়ুয়া একটা মেয়ে বাচ্চা হয় কিভাবে নির্জন?ও অপরাধ যখন করেছে তখন শাস্তি তো পেতেই হবে।”
-” সাহিত্যের কথা শুনে নম্রতা এগিয়ে এসে বললো, ভাইয়া শিক্ষার হয়ে আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি।আপনি প্লিজ কিছু মনে করবেন না।ওকে নিজের বোন মনে করে ক্ষমা করে দিন।”

-“যেহেতু তুমি কোনো অন্যায় করো নি,তাই তোমার ক্ষমা চাওয়ার ও কোনো প্রয়োজন নেই। অন্যায় যে করেছে ক্ষমা ও তাকেই চায়তে হবে।”
-” শিক্ষা তৎক্ষণাৎ সাহিত্যের দিকে তেড়ে এসে বললো, অসম্ভব! আমি কোনো অন্যায় করি নি। বরং অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি।তাই ক্ষমা চাওয়ার কোনো প্রশ্নেই উঠে না বলে শিক্ষা সামনের দিকে পা বাড়ানোর আগেই একটা ছেলে এসে শিক্ষার পা জড়িয়ে ধরে বললো, আমার ভুল হয়েছে। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও।”

-” শিক্ষা তৎক্ষণাৎ পা ছড়িয়ে নিয়ে বললো, আরে আরে করছেন টা কি? পা ধরেছেন কেন? পা ছাড়ুন বলছি।”
-” তুমি যতোক্ষণ না পর্যন্ত আমাকে ক্ষমা করছো ততক্ষণে আমি তোমার পা ছাড়ছি না সুন্দরী। তাছাড়া তোমার নরম কোমল পা ধরে রাখতে আমার ভালোই লাগছে।”

-” সুন্দরী কথা টা কানে বাজতে লাগলো শিক্ষার। শিক্ষা তৎক্ষণাৎ ছেলেটার থেকে পা ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, তার মানে আপনি সেই ব্যক্তি যে আমাকে এমন বাজে একটা কথা বলেছিলেন?ও মাই গড! এতো বড় একটা ভুল কিভাবে করলাম আমি? একটা নিরাপদ লোকের গালে থা’প্প’ড় দিলাম?”

-” শিক্ষার কথা শুনে ছেলেটা তার খোঁচা খোঁচা দাড়ি তে হাত বুলিয়ে বললো, কি করবো সুন্দরী বলো তো? তুমি যে আমার নজরে চলে এসেছো।আর এই বাচ্চু বিল্লার চোখে একবার যাকে ভালো লাগে তাকে আমার খাঁচায় ঠিক বন্দী হতে হয়।হয় আজ না হয় কাল আমার কাছে ধরা তো দিতেই হবে সুন্দরী বলার সাথে সাথে সাহিত্য এসে বাচ্চু বিল্লার কলার চেপে ধরে বললো, কু’কু’রে’র লেজ কখনো সোজা হয় না।তোকে এতো বার এতো ভাবে বলার পরেও তুই নিজেকে শুধরাতে পারলি না। লজ্জা হলো না তোর।এই লাস্ট বার তোকে ওয়ার্নিং দিচ্ছি ভালো হয়ে যায়।না হলে সারাজীবন জেলে পচে ম’র’তে হবে তোর।”

-” পৃথিবীতে এখনো এমন কোনো জেল তৈরি হয় নি , যেখানে বাচ্চু বিল্লার মতো শ’য়’তা’ন কে আটকে রাখতে পারবে।মেয়েটাকে আমার ভালো লেগেছে মানে আমার তাকে চাই ই চাই। আমার খাঁচায় তাকে বন্দী হতেই হবে।”

-” শিক্ষা তেড়ে এসে বললো,কে কার খাঁচায় বন্দী হয় সেটা তো সময় ই বলে দিবে।তবে একটা কথা মনে রাখবেন মেয়েদের কে সম্মান করতে নাই পারেন তবে তাদের কে অসম্মান করার কোনো রাইট আপনার নেই বলে শিক্ষা নম্রতার হাত ধরে জটলার বাইরে নিয়ে এসে বললো, এতো বড়ো ভুল আমি কিভাবে করতে পারলাম নিমু? নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে আমার।বাচ্চু বিল্লা যখন আমাকে বাজে কথা টা বলেছিলো আমি পেছনে ফিরে ঐ পাঞ্জাবি পরা ছেলেটা কে দেখেছিলাম।আর আমি কোনো কিছু না ভেবেই তার গালে থা’প্প’ড় মে’রে দেই।”

-” কাজটা মোটেও তুমি ঠিক করো নি। তুমি কলেজের ভিপির গালে থা’প্প’ড় দিয়েছো।ভাবতে পারছো কতো বড়ো অন্যায় করেছো তুমি? ক্যাম্পাসে মোটামুটি তোমাকে নিয়ে কানাঘুষা শুরু হয়ে গিয়েছে।মনে হয় না তুমি এই ভার্সিটি তে পড়াশোনা করতে পারবে।”

-” তোমাকে তো চিনতে পারলাম না। তুমি কি ফার্স্ট ইয়ার?”
-“আমি প্রিয়া। সাহিত্য ভাইয়ার বোন আবৃত্তির ফ্রেন্ড।”
-“মানে ঐ পাঞ্জাবি পরা লোকটা সাহিত্য শিকদার?”

-” হ্যাঁ।যাকে তুমি তোমার সাথে অ’স’ভ্য’তা করার অপরাধে থা’প্প’ড় দিয়েছিলো। অথচ তোমার সাথে অ’স’ভ্য’তা করেছিলো বাচ্চু বিল্লা। নাম্বার ওয়ান ব’দ’মা’ই’শ ও। মেয়েদেরকে পড়া ওর নেশা।সকালে ও তোমাকে বাজে কথা বলেই সাহিত্য ভাইয়া কে দেখে তোমার পেছন থেকে সরে আসে। সাহিত্য ভাইয়া তোমাকে বাচ্চু বিল্লার ব্যাপারে বলতে যাচ্ছিলো। কিন্তু তুমি তাকে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তার গালে থা’প্প’ড় মে’রে দাও।

তোমার সাথে অ’স’ভ্য’তা করার জন্য সাহিত্য ভাইয়া বাচ্চু বিল্লা কে মা’রছিলো কিন্তু তখন ও তুমি সত্য মিথ্যা যাচাই না করে আবারো একই ভুল করো বসো। সাহিত্য ভাইয়া অনেক ভালো মনের মানুষ। তুমি যদি তার কাছে ক্ষমা চাও, ভাইয়া অবশ্যই তোমাকে ক্ষমা করে দিবে বলে প্রিয়ার ফোনে কল আসতেই মেয়েটা চলে গেল।প্রিয়ার যাওয়ার পানে তাকিয়ে নম্রতা বললো, তারমানে প্রিন্সিপাল স্যার এই ছেলেটার কথা বলেছিলো? উফ্ আমার কিন্তু দারুণ লেগেছে সাহিত্য শিকদার কে।কি তার চোখের চাহনি? আহ্ একদম বুকে এসে লাগে।”

-” কি হচ্ছে নিমু?”
-“তুই কি কোনো ঘণ্টা বাজার আওয়াজ শুনতে পারছিস শিক্ষা?”
-” তুই কি এটাকে স্কুল মনে করেছিস যে ঘণ্টা বাজিয়ে বাজিয়ে ক্লাস টাইম শেষ হয়েছে সেটা জানিয়ে দিবে?”
-” গা’ধা এই ঘণ্টা সেই স্কুলের ঘণ্টা না।এটা প্রেমের ঘণ্টা।আই আ’ম ইন লাভ শিক্ষা। এতো দিন শুধু লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট এর গল্প শুনে এসেছি। কিন্তু সেটা কখনো ফিল করতে পারি নি।আজ সাহিত্য কে দেখে আমার গাইয়ে ইচ্ছে করছে, আমি তো ক্রাশ খাইছি সাহিত্য শিকদারের উপরে ।আহারে আহারে কবে পাবো তাহারে।”

-” শিক্ষা তৎক্ষণাৎ নম্রতার মাথায় চাটি মে’রে বললো , আমরা এইখানে ইনভেস্টিগেশনে এসেছি, ক্রাশ খাওয়া , প্রেম ভালোবাসার জন্য নয় নিমু।সো বি কেয়ারফুল।”
-” ভালোবাসা কখনো বলে কয়ে আসে না শিক্ষা।হুট করেই ভালোবাসা হয়ে যায়। যেমন টা আমার হয়েছে। এখন আমার মনের উঠোন জুড়ে শুধু মাত্র সাহিত্য শিকদার বিরাজ করছে। বিশ্বাস কর যতোবার সাহিত্যের চেহারা টা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে , আমি সুস্থ্য থাকতে পারছি না।কোনো এক অজানা শিহরণ বয়ে যাচ্ছে আমার শরীরে।”

মনের উঠোন জুড়ে সিজন ২ পর্ব ১

-” যার জন্য তোর এতো নাচুনি তার সম্পর্কে কতোটুকু জানিস তুই? সে একজন সেলিব্রিটি মানুষ । খোঁজ নিয়ে দেখ তার হালি হালি গার্লফ্রেন্ড।”
-” আমার সাহিত্যে কে চাই মানে চাই। আমি সাহিত্যের ভাগ কাউকে দিতে পারবো না। এমনকি তোকে ও না শিক্ষা।”

মনের উঠোন জুড়ে সিজন ২ পর্ব ৩