মনের উঠোন জুড়ে সিজন ২ পর্ব ৩

মনের উঠোন জুড়ে সিজন ২ পর্ব ৩
নূন মাহবুব

-” আমার সাহিত্যে কে চাই মানে চাই।আমি সাহিত্যের ভাগ কাউকে দিতে পারবো না। এমনকি তোকে ও না শিক্ষা।”
-“কিন্তু সাহিত্য যে শুধু আমার।আমি যে নিজেও আমার মনের উঠোনে সাহিত্যের ছবি এঁকে নিয়েছি।আমিও যে সাহিত্যের ভাগ তোকে দিতে পারবো না নিমু। এখন সাহিত্য কার হবে বল তো?

হে বিধি তুমি বলে দাও সাহিত্য কার? দুটি মানুষ একটা মনের দাবিদার বলে শিক্ষা হো হো করে হেসে উঠে বললো, জাস্ট কিডিং ইয়ার। ডোন্ট বি সিরিয়াস। আমার সাহিত্য শিকদারের প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট নেই।সো নো‌ টেনশন ‌ডু ফুর্তি ওকে। সাহিত্য আমার জিজু লাগে ।এবার খুশি তো তুই?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” শিক্ষার কথা শুনে নম্রতা তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,এক মুহূর্তের জন্য মনে হচ্ছিল তুই আমার বন্ধু থেকে শত্রু তে পরিনত হয়ে যাবি। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো তুই কখনো আমার যাতে কষ্ট হয় এমন কিছু করতে পারিস না। এজন্যই তো তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।তোর মতো করে কেউ আমাকে বুঝতে পারে না।লাভ ইউ।”

-” থাক হয়েছে ।এতো পাম দিতে হবে না।এখন তাড়াতাড়ি চল বাসায় ফিরতে হবে। নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ পাপা মম হয়তো বোরিং ফিল করছে। তাদেরকে কতো করে বললাম আমি ইনভেস্টিগেশন এর কাজে যাচ্ছি,কেস টা সলভ হলে ফিরে আসবো। কিন্তু তারা ভাবে আমি এখনো সেই ছোট্ট উষ্ণতা রয়েছি।আমাকে কিছুতেই একা ছাড়তে চায় না।আমি যখন যেখানে থাকবো তাদের কেও সেখানেই থাকা লাগবে।”

-” এটাই বাবা মায়ের ভালোবাসা। সন্তান যতোই বড় হোক না কেন বাবা মায়ের কাছে কখনো তারা বড় হয় না।সেই ছোট্ট টায় থেকে যায়।তোর হয়তো আমাদের মতো এতো টাকা পয়সা নেই। কিন্তু তোর ভালোবাসার অভাব নেই।তোর বাবা মা তাদের নিজের থেকে ও তোকে বেশি ভালোবাসে। তুই তো অনেক ভাগ্যবতী এমন বাবা মা পেয়ে। কিন্তু আমি যে অভাগী। শুনেছি এক গাছের ছাল যেমন অন্য গাছে লাগে না, তেমনি সৎ মা কখনো আপন হয় না।

আর আমার তো সৎ মায়ের সাথে সাথে বাবা ও পর হয়ে গেছে।সে তো আমার কোনো খোঁজ খবর নেই না। আমি বেঁচে আছি কি মা’রা গেছি সেই চিন্তা টুকু ও নেই তার মধ্যে।সে মনে করে মাসে মাসে মেয়ের হাতে টাকার বান্ডিল ধরিয়ে দিলেই হয়তো বাবার দায়িত্ব পালন করা হয়ে যায়। কিন্তু তুই বিশ্বাস কর আমার টাকার প্রতি কোনো লোভ নেই। আমি শুধু মাত্র সবার ভালোবাসা পেতে চাই। কিন্তু আমার কপালে ভালোবাসা জিনিস টা সহ্য হয় না বলে চোখের পানি মুছলো নম্রতা। শিক্ষা নম্রতার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বললো,

-” এই নিমু চল আজ আমি তোকে ট্রিট দিবো। শুনেছি ক্যাম্পাস থেকে একটু দূরে একটা রেস্টুরেন্টে আছে। সেইখানের কাচ্চি বিরিয়ানি নাকি‌ অনেক মজা হয়।এফবিতে অনেক রিভিউ ও দেখেছি।চল আজ আমার পকেটের টাকা খরচ করে তোকে খাওয়াবো।”
-” আমার ভালো লাগছে না রে। তোর খেতে মন চায়লে তুই যা উষু।তোর টাকা দিতে হবে না। আমি টাকা দিবো। তুই খেয়ে আয় যা।”

-” শিক্ষা তৎক্ষণাৎ নম্রতার হাত ধরে বললো, চল না নিমু।দেখবি ভালো লাগবে।আজকে এমনিতেই একটার পর একটা ঝামেলা হয়েছে।একটু রিল্যাক্স করা প্রয়োজন।চল না ইয়ার।”
-” ঠিক আছে চল।”

-” শিক্ষা রেস্টুরেন্টে এসে দুই প্লেট কাচ্চি, বোরহানি সাথে মিষ্টি ও অর্ডার করলো। শিক্ষা আর নম্রতা দুজনে বসে গল্প করছে এমন সময় নম্রতার ফোনে কল আসে।যার জন্য নম্রতা রেস্টুরেন্ট থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে। শিক্ষা নিজের মতো করে ফোন টিপতে থাকে এমন সময় টেবিলের উপর কেউ খাবার রাখে।সে উপরে না তাকিয়ে নিজের ফোন টিপতে টিপতে বললো, ধন্যবাদ ভাইয়া। কিন্তু লোকটা প্রতিত্তরে কিছু বললো না দেখে শিক্ষা উপরে চোখ তুলতেই দেখলো তার সামনে স্বয়ং সাহিত্য দাঁড়িয়ে রয়েছে।যা দেখে শিক্ষা আমতা আমতা করে বললো, আপনি এইখানে?”

-” আমাদের রেস্টুরেন্টে আমি থাকবো না তো কে থাকবে শুনি?”
-” এটা আপনাদের রেস্টুরেন্টে?”
-” কেন কোনো সন্দেহ আছে মিস উষ্ণতা মীর?”

-” চমকে উঠলো শিক্ষা।সে মনে মনে বললো তার মানে কি লোকটা আমার ব্যাপারে সব জেনে গিয়েছে? ওহ্ হ্যাঁ হয়তো প্রিন্সিপাল স্যার বলেছেন। কিন্তু শিক্ষার ভাবনার মাঝে তাকে অবাক করে দিয়ে সাহিত্যে বললো, তুমি হয়তো ভাবছো আমি তোমার ব্যাপার কিভাবে জানতে পারলাম?হয়তো ভাবছো প্রিন্সিপাল স্যার আমাকে তোমার ব্যাপারে বলছে। কিন্তু না । তোমার ব্যাপারে স্যার আমাকে কিছু বলেন নি।আমি নিজেই কষ্ট করে তোমার ব্যাপারে সব খোঁজ খবর নিয়েছি। তুমি একজন সিআইডি অফিসার রাইট? সিআইডি অফিসারের কাজ অপরাধ দমন করা। কিন্তু তুমি ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেই অপরাধ করেছো।যেটা ক্ষমার অযোগ্য।”

-” আমি মানছি যে আমি অনেক বড়ো ভুল করেছি। এজন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।আ’ম রিয়েলি ভেরি সরি।”
-” বাব্বা যে মেয়েটা কিছুক্ষণ আগেও নত হতে চায় নি, এখন সে নিজে থেকে সরি বলছে।ওয়াও গ্ৰেট! আমার আবার দয়ার শরীর।কেউ কিছু চায়লে আমি না করতে পারি না। আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিবো। কিন্তু একটা শর্তে।”

-” মানে টা কি হ্যাঁ? আমি আপনার কোনো শর্ত মানতে পারবো না। আপনার ইচ্ছা হলে আমাকে ক্ষমা করুন আর না হলে নাই বলে শিক্ষা খাবার ছেড়ে উঠে যাওয়ার আগেই সাহিত্য বললো,আমি খুব ভালো করে জানি তোমার বাবা রায়হান মীর একজন এসিপি ছিলেন।যিনি বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত এবং অসুস্থ্য।যার চিকিৎসার জন্য মাসে মাসে হাজার টাকার প্রয়োজন হয়।যদিও তোমাদের আয়ের অন্য উৎস আছে।

কিন্তু অনেক টাকা তোমার বাবার পেছনে খরচা হয়ে যায়।বলতে গেলে তোমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তুমি। তুমি কি চায়ছো এই চাকরি টা তোমার হাত ছাড়া হয়ে যাক? তোমাদের সুখী পরিবারে অশান্তির কালো ছায়া নেমে আসুক? তোমার ‌বাবা তোমার চিন্তায় ধুঁকে ধুঁকে মা’রা যাক?”

-” আপনি ঠিক কি বলতে চায়ছেন ক্লিয়ার করে বলুন সাহিত্য?”
-” তুমি যদি আমার শর্তে রাজি না হ‌ও আমি তোমাকে এমন কেসে ফাঁসিয়ে দিবো যে সিআইডির চাকরি তো তোমাকে ছাড়তেই হবে সাথে জেলের ঘানি ও টানতে হবে তোমার।”

-” শিক্ষা তৎক্ষণাৎ সাহিত্যের কলার চেপে ধরে বললো, ছিঃ এতোটা নিকৃষ্ট আপনি? সবাই আপনার কতো সুনাম সুখ্যাতি করলো।আর আপনি কিনা এতো নিচু মনের মানুষ? অন্যের দূর্বলতার সুযোগ নিতে চায়ছেন?এখন মনে হচ্ছে আমি আপনার গালে থা’প্প’ড় দিয়ে কোনো ভুল করি নি।আপনি এটারি যোগ্য।”
-” সাহিত্য শিক্ষার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে

নিয়ে বললো, সাহিত্য শিকদার সম্পর্কে তোমার বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। এজন্য বারবার এক‌ই ভুল কাজ করছো।সকালে আমাকে দুই বার থা’প্প’ড় এখন আবার আমার কলার চেপে ধরে তোমার নিজের দিকে আমাকে আহবান করছো,এসব যদি সোশ্যাল মিডিয়া তে ভাইরাল হয় , তোমার কি অবস্থা হবে ভাবতে পারছো?এক দিকে চাকরি হারাবে আর অন্যদিকে নিজের সম্মান টুকু ও হারাবে।কি দরকার এতো ঝামেলা করে বলো? তার থেকে বরং তুমি আমার শর্তে রাজি হয়ে যাও। এটাই বেটার অপশন তোমার জন্য।”

মনের উঠোন জুড়ে সিজন ২ পর্ব ২

-” শিক্ষা মনে মনে কিছু একটা ভেবে বললো, ঠিক আছে আমি আপনার শর্তে রাজি আছি । বলুন ‌কি করতে হবে?”
-” বিয়ে করতে হবে আমাকে।”

মনের উঠোন জুড়ে সিজন ২ পর্ব ৪