মনের উঠোন জুড়ে সিজন ২ শেষ পর্ব 

মনের উঠোন জুড়ে সিজন ২ শেষ পর্ব 
নূন মাহবুব

-” আচ্ছা বাদ দাও।আমার কিন্তু বিয়ের সব প্ল্যানিং শেষ।মম , ড্যাড কে আগামীকাল তোমাদের বাড়ি পাঠাবো। আমি তাদের কে বলেছি আমি তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করছি।সো তুমি নিশ্চয় বুঝতে পারছো তোমার করনীয় কি?”
-“শিক্ষা কিছু একটা ভেবে বললো, আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি আছি।তবে আপনার মতো আমারো কিছু শর্ত আছে।”
-“শর্ত?
-” হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন।শর্ত।”
-” কি শর্ত শুনি?”

-” আমার পাপা , মমের আমি ছাড়া কেউ নেই।তারা আমাকে ছাড়া কখনো ভালো থাকবে না।বিয়ের পরে আমি আমার পাপা , মমের সাথে থাকবো।”
-” আর ইউ ক্রেজি?বিয়ে করেও যদি ব্যাচেলর থাকি ,তাহলে আমার বিয়ে করার মানে টা কি হলো?”.
-” আপনি তো আর আমাকে ভালোবেসে

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বিয়ে করছেন না তাই না? তাহলে আমি কোথায় থাকি বা না থাকি এতে আপনার কি আসে যায়?”
-” সাহিত্য তৎক্ষণাৎ শিক্ষার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো, যদি বলি ভালোবেসে বিয়ে করছি তুমি বিশ্বাস করবে?যদি বলি প্রথম বার যখন তোমাকে দেখেছি , তখনি আমার #মনের_উঠোন_জুড়ে তোমার ছবি এঁকে নিয়েছি , তুমি সেটা বিশ্বাস করবে?”

-” সিরিয়াসলি আপনি আমাকে ভালোবাসেন? হা হা হা ।হাসালেন মিস্টার সাহিত্য শিকদার। ”
-” কেনো?”
-” মাত্র একটা দিন হয়েছে আমাদের দেখা হবার ‌।এর‌ই মধ্যে আপনি আমাকে ভালোবেসে ফেললেন?আপনার প্রথম দর্শনেই আপনি আমার হাতের থা’প্প’ড় খেয়েছেন। আমার হাতের থা’প্প’ড় খেয়ে’ই বুঝি আপনি আমার প্রেমে পড়ে গিয়েছেন।এতো ফার্স্ট আপনি।ভাবা যায়?”

-” ভালোবাসা কখনো বলে কয়ে আসে না।হুট করে হয়ে যায়। নম্রতা যদি প্রথম দেখায় আমাকে ভালোবাসতে পারে, আমি কেন প্রথম দেখায় তোমাকে ভালোবাসতে পারবো না?”
-” তার মানে আপনি জানেন নিমু আপনাকে ভালোবাসে?”
-” হ্যাঁ আমি তোমাদের কথোপকথন শুনেছিলাম।”

-” নিমু যেহেতু আপনাকে ভালোবাসে, তাহলে আপনি বরং নিমুকে’ই বিয়ে করুন। আপনার মধ্যে শুধু শুধু আমাকে টানছেন কেন? আপনার তাকে’ই ভালোবাসা উচিত ,যে আপনাকে ভালোবাসে।”
-” কিন্তু আমি যে তোমাকে ভালোবাসি ।তোমাকে হালাল ভাবে নিজের করে পেতে চাই। তুমি শুধু শুধু টেনশন করছো। তোমার বাবা মা কি আমার বাবা মা নয়?বিয়ের পর তোমার বাবা মায়ের দায়িত্ব আমার।আমি তাদের কে প্রয়োজনে আমাদের সাথে রাখবো। এবার তো আমাকে বিয়ে করতে তোমার আর কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়।”

-” সমস্যা আছে সাহিত্য।’
-” আবার কি?”
-“আমাদের কেসের ইনভেস্টিগেশন যতোদিন না শেষ হচ্ছে, আমি বিয়ে করতে পারবো না।চার চার টা মেয়ে নিখোঁজ হয়েছে। আমাদের ধারণা ভার্সিটির কেউ এই অপরাধের সাথে জড়িত।হতে পারে সে এই ভার্সিটির স্টুডেন্ট বা ভার্সিটিতে তার আসা যাওয়া রয়েছে।হয়তো সে এই কাজের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা ও পেয়েছে।

-“এক মিনিট! দাঁড়াও দাঁড়াও । এই ব্যাপারে আমার একজন কে সন্দেহ হয়।”
-” কে?”
-” নির্জন। আমার ফ্রেন্ড।ওর বোন অনেক অসুস্থ্য। কিছু দিন আগে টাকার জন্য নির্জন হন্যে হয়ে বেড়াচ্ছিলো। আমি ওকে বলেছিলাম ওর বোনের সমস্ত চিকিৎসার খরচ আমি দিবো। কিন্তু হুট করে কোথা থেকে যেনো নির্জন সব টাকা জোগাড় করে নিজেই ওর বোনের চিকিৎসার খরচ বহন করলো।

নির্জনের এহেন কাজে আমি অনেক অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আমি বারবার নির্জন কে এতো গুলো টাকা কোথায় পেলো এটা জিজ্ঞেস করেছি। কিন্তু নির্জন আমাকে এই ব্যাপারে কিছু বলে নি।আমাকে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছে। ওহ্ নো! তার মানে নির্জন খারাপ পথে পা বাড়িয়েছে?”

-” প্রমাণ ছাড়া কারো দিকে মিথ্যা আঙ্গুল তোলা উচিত নয় সাহিত্য। আমাদের আগে সত্য টা জানতে হবে।”
-” ঠিক আছে।এই কাজে আমি তোমাকে সাহায্য করবো।”
-” ধন্যবাদ।”
-” ধন্যবাদ নয় ভালোবাসা কবে দিবা তাই বলো? আই মিন বিয়ে কবে করছো?”
-” বললাম তো এই কেস টা সলভ হলে করবো।”

-” অপেক্ষায় রইলাম সেই মধুর দিন টার জন্য। অনেক রাত হয়েছে। রুমে যাও ।গুড নাইট বলে সাহিত্য শিক্ষার দিকে একটা ফ্লাইং কিস ছুড়ে দিয়ে বাইক নিয়ে নিজ গন্তব্যে ছুটে গেলো। সাহিত্যের যাওয়ার পানে তাকিয়ে শিক্ষা বললো, আমার পাপা মমের সুখে’ই আমার সুখ। আপনাকে বিয়ে করলে যদি আমার পাপা ,মম ভালো থাকে , তাহলে আমি আপনাকে বিয়ে করবো সাহিত্য।’

-” দেখতে দেখতে কে’টে যায় কয়েক দিন।এ কয়দিন শিক্ষা, সাহিত্য, নম্রতা সবাই নির্জনের উপর নজর রেখেছে। সাহিত্যের ধারণা সত্যি হয়েছে।এসব কিছুর পেছনে নির্জনের হাত হয়েছে। নির্জন পাঁচ টা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের কে চাকরি দেওয়ার কথা বলে অফ টাইমে তাদের কে ভার্সিটি ক্যাম্পাসে একত্রিত হতে বলে।বোকা মেয়েরা স্বেচ্ছায় নির্জনের ফাঁদে পা দেয়।

সে চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়ার নাম করে মেয়েদের কে বিক্রি করে দিতে চায়।তার প্ল্যান সম্পর্কে একটা মেয়ে জেনে যায়।যার কারণে নির্জন তাকে খু’ন করে জঙ্গলে ফেলে বাকি মেয়েদের ডন নামের লোকের কাছে বিক্রি করে দেয়। বিনিময়ে ডন তাকে মোটা অঙ্কের টাকা দেয়। শিক্ষা , নম্রতা নির্জনের ব্যাপারে সবটা যেনে গেলেও নির্জন কে কিছু বলে নি।তারা নির্জন কে ফলো করতে করতে চুপিচুপি ডনের আস্তানায় চলে আসে।

তারা এইখানে এসে জানালা দিয়ে লুকিয়ে দেখে শুধু চার টা মেয়ে নয় , প্রায় বিশ টা মেয়ে কে হাত পা বেঁধে একটা রুমের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছে। কিন্তু ডন বা নির্জন কে দেখতে পায় না তারা। কিছুক্ষণের মধ্যে ডন আর নির্জন সেই রুমে উপস্থিত হয় ।তারা একে একে সবগুলো মেয়েকে ডনের আস্তানার বাইরে নিয়ে আসে গাড়িতে তোলার জন্য।আর তখনি সিআইডির পুরো টিম তাদের উপর অ্যাটাক করে।

মূহুর্তের মধ্যে ডনের দলের লোক ও সেইখানে উপস্থিত হয়ে যায়। তাদের মধ্যে গোলাগুলি, মা’রা’মা’রি শুরু হয়।এক পর্যায়ে ডন আর নির্জন পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ।আর তখনি এসিপি সাইফুজ্জামান তাদের পায়ে গু’লি করে দেয়।বাধ্য হয়ে তারা তাদের সমস্ত অপকর্মের কথা স্বীকার করে। তাদের কে অ্যারেস্ট করে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে নম্রতা বললো, এবার সময় এসেছে তোদের এক হবার। সাহিত্য যে তোর নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ফুপি অন্তরার ছেলে, এটা আমাকে আগে বলিস নি কেন?”

-” আমি তো নিজেই জানতাম না‌।তোকে কিভাবে বলবো?হুট করে একদিন রাতে সাহিত্য বললো ওর বাবা মা আমাকে দেখতে চায়।আমি পাপা মমের সাথে ব্যাপার টা শেয়ার করি।পাপা তাদের কে সকালে আসার আমন্ত্রণ জানান।সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে আমি আর মম কাজে লেগে যায়।মম নানা রকমের রান্না বান্না করেন তাদের জন্য।

দশটা নাগাদ সাহিত্যের পরিবারের সবাই আমাদের বাসায় আসে।আমি আর মম তখন কিচেনে ছিলাম।পাপা ড্রয়িং রুমে বসে পেপার পড়ছিলেন , এমন সময় কলিংবেল বেজে ওঠে। তৎক্ষণাৎ পাপা গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে অন্তরা তুই বলে চিৎকার দিয়ে উঠে।পাপার চিৎকার শুনে আমরা ছুটে গিয়ে দেখি ফুপি পাপা দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে।তখন জানতে পারি সাহিত্য আমার ফুফাতো ভাই। তারপর সবার মধ্যে কুশলাদি বিনিময় হয়।দুই পরিবারের সম্মতিতে আমাদের বিয়ের পাকা কথা হয়। তুই তো সাহিত্য কে ভালোবাসতি ।আমি সত্যিই ভাবতে পারি নি তুই আমাদের বিয়ের ব্যাপার টা এতো তাড়াতাড়ি মেনে নিতে পারবি।”

-” সত্যি বলতে প্রথম প্রথম আমার খুব খারাপ লেগেছিলো।পরে ভেবে দেখলাম আমি চাইলেই সাহিত্যের থেকে আরো ভালো কাউকে আমার জীবনসঙ্গী হিসেবে পাবো। কিন্তু সাহিত্যের জন্য আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হলে আমি তোর মতো আর কাউকে পাবো না। তুই তো আমার ফ্রেন্ড না । আমার বোন।আর বোনের জন্য যদি এইটুকু আত্মত্যাগ না করতে পারি , তাহলে আমি কেমন বোন হলাম বল?”

-” শিক্ষা তৎক্ষণাৎ নম্রতা কে জড়িয়ে ধরে বললো, আমি সত্যিই অনেক লাকি তোর মতো একজন বোন পেয়ে। তুই আজ থেকে বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত আমাদের বাসায় থাকবি ।”
-” কিন্তু?’
-” কোনো কিন্তু নয়। তুই সাহিত্যের একমাত্র শালিকা বলে কথা। সাহিত্যের পকেট একদম ফাঁকা করে দেওয়ার জন্য হলেও তুই আমাদের বাসায় যাবি।”
-” নম্রতা চোখের পানি মুছে বললো, ঠিক আছে রে বাবা , ঠিক আছে। অতঃপর নম্রতা মনে মনে বললো, ভালোবাসা দেখতেও ভালো লাগে।আমি না হয় দূর থেকে তোদের ভালোবাসা দেখে ভালো থাকবো।”

-” বাসর ঘরে এক হাত ঘোমটা টেনে বসে রয়েছে শিক্ষা। কিছুক্ষণ আগেই সে পবিত্র কালেমা পাঠ করে সাহিত্যের ব‌উ হয়েছে।যত সময় অতিবাহিত হচ্ছে ততই অজানা এক ভয় আঁকড়ে ধরছে শিক্ষা কে। হঠাৎ দরজায় খট করে শব্দ হয়। শিক্ষা বুঝতে পারে সাহিত্য এসেছে। সাহিত্য এসে শিক্ষার পাশে বসে তার মোহরানা পরিশোধ করে দিয়ে শিক্ষার ঘোমটা তুলে বললো, তুমি এতো সুন্দর কেন বলো তো ব‌উ? মনে হচ্ছে রুমের মধ্যে বসে আকাশের চাঁদ দেখতে পাচ্ছি।”

-” ব‌উ শব্দটা শুনে শিক্ষার শরীরে অজানা এক শিহরণ বয়ে যায়। লজ্জায় তার গাল লাল হয়ে উঠে।যা দেখে সাহিত্য বললো, যাহ্ বাব্বা এখনো কিছুই বললাম না করলাম না এর‌ই মধ্যে তুমি লজ্জা পেতে শুরু করেছো। শোনো মেয়ে তুমি ভেবো না তোমার ঐ লজ্জা রাঙ্গা মুখ দেখে আমি নাটক বা সিনেমার নায়কের মতো ব‌উ ছেড়ে সোফায় শুয়ে রাত কাটিয়ে দিবো।

মনের উঠোন জুড়ে সিজন ২ পর্ব ৫

বছরের পর বছর চলে যাবে কিন্তু আমাদের বাসর বাচ্চা কাচ্চা কিছুই হবে না ,এমন টা কিন্তু স্বপ্নে ও ভেবো না।তোমাকে প্রথম যেদিন দেখেছিলাম সেদিন থেকেই তুমি আমার #মনের_উঠোন_জুড়ে বিরাজ করছো।আর সারাজীবন সেখানেই থাকবে বলে সাহিত্য শিক্ষার কপালে একটা চুমু দিয়ে বললো, আজকের এই রাত কভু যেন শেষ না হয়।এই রাত একান্তই তোমার আমার। আজকের এই রাত একে অন্যকে ভালোবাসায় রাঙিয়ে দেওয়ার রাত।”

সমাপ্ত