মনের কোনে গল্পের লিংক || নাহিয়ানা আফ্রিন লেখিকা

মনের কোনে পর্ব ১
নাহিয়ানা আফ্রিন 

কিরে আসফিন মেয়ে টা কেরে, আগে তো কখনো ই দেখি নাই?
আসফিন তার বন্ধুদের বললো মেয়েটা ওদের বাড়ির কাজের লোক।
(আসফিন এর এমন উত্তর শুনে অবাক হয়ে গেলো আফ্রিন।কারণ আফ্রিন হলো আসফিন এর খালাতো বোন কিছুদিন আগে কার এক্সিডেন্টে আফ্রিন এর মা-বাবা মারা যায়।আসফিন এর আম্মু আফ্রিন কে নিজের বাসায় নিয়ে আসে। আসফিন আফ্রিন কে দেখতে পারে না তা আফ্রিন মনে করেন)

পিছন থেকে আসফিন এর আম্মু বললো এটা কোন ধরনের অসভ্যতা আসফিন? ও কেনো কাজের লোক হবে রাহিল আফ্রিন হলো আমার ছোট বোনের মেয়ে।
রাহিলঃ ও আচ্ছা আন্টি আগে দেখি নাই তা আস্ক করলাম।আর আসফিন এটা ঠিক করলি না তুই।
আফ্রিন আর ওদের কথা শুনলো না দৌড়ে চলে আসলো তার রুম এ। কান্না কর‍তে করতে ভাবতে লাগলো কেনো ওর সাথেই এমন হলো, না ওরা বিডিতে আসতো আর না এক্সিডেন্ট ওর মা -বাবা চলে যেতো ওকে ছেড়ে।
আফ্রিন ঃ আমি কি এমন করছি আল্লাহ ভাইয়া আমাকে মেইড কেন বললো?ভাইয়া আমাকে কেন দেখতে পারে না। আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে মাম্মি পাপ্পা আই মিস ইউ।
নিচ থেকে আফ্রিন এর খালা সাহিরা তাকে ডাকছে,তাই চোখ -মুখ মুছে নিচে গেলাম মামনি আমাকে নিজের কাছে ডেকে বললো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সাহিরা ঃ বাবু কিছু মনে করিস না জানিস ই তো আসফিন এমন একরোখা,আর ওর কথা তুই ধরিস না আমি আছি না কান্না করবি না একদম সোনা যা টেবিলে বস।
আফ্রিন ঃ মামনি আমার ভালো লাগছে না আমি খাবো না গো।
সাহিরাঃ একদম মাইর দিবো এখন আমার কথা না শুনলে চল আমি খাওয়াই দিবো।

আফ্রিন আর না করতে পারলো না তার মামনি তাকে খাবার খাইয়ে দিতে লাগলো, মামনি আর বাবাই (খালা&খালু) তাকে বেশি ই আদর করে এই আসফিন ই তাকে শুধু বকে।আজ আমি বাহিরে যাবো রামিম ভাইয়া আসবেন আমাকে নিয়ে যেতে, রামিম ভাইয়া হলো আমার মামার ছেলে। আমার আম্মুরা দু বোন এক ভাই এখন যদিও আমার মম না থাকায় এক ভাই এক বোন হয়ে গেছে।মিস করি যখন আমরা ইউ এস এ তে থাকতাম মম ড্যাড আর আমি অনেক মজা করতাম কতো ঘুরতাম।একটা টি-সার্ট পড়ে তার উপর জ্যাকেট পরলাম জিন্স এন্ড সু পরে নিলাম,চুল গুলো ঝুটি করেছি পিংক লিপস্টিক দিয়েছি আর হাতে ওয়াচ আমার সাজগুজ শেষ।

আসফিন হঠাৎ আফ্রিন কে দেখে থমকে গেলো আর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল যে এটা ইউ এস এ নয় এটা বাংলাদেশ এখানে এগুলা চলবে না গো এন্ড চেঞ্জড ইট নাও।
আফ্রিনঃ সো হোয়াট?মাই ড্রেস মাই লাইফ মাই উইস হু দা হেল আর ইউ?
আসফিন ঃ তোমার ইচ্ছা হলেই হবে না এটা আমার বাড়ি এখানে থাকতে হলে সালিনতা বজায় রেখে থাকতে হবে এসব ওয়েস্টার্ন আমার বাসার জন্য না।আন্ডারস্ট্যান্ড ইউ বিটচ?

আফ্রিন কিছু বললো না আসফিন এর কথায় সে কষ্ট পেয়েছে।সে রুম এ চলে গেলো সে আর কি বা করবে তার তো এসব ছাড়া আর জামা নাই কারণ সে ওয়েস্টার্ন পরতো সবসময়।
কিছুক্ষণ পড় মামনি এসে আফ্রিন কে একটি সপিং ব্যাগ দিয়ে গেলো, আফ্রিন সপিং ব্যাগ খুলে খুব সুন্দর একটি গাউন পেলো কালো রঙ এর যা দেখে তার মন ভালো হয়ে গেলো।সে গাউন এর সাথে ম্যাচিং হিজাব ও পেয়েছে তাই তা পরেই রেডি হয়ে গেলো!

রামিম ঃএসে বললো আফ্রিন আমার কিউট বনু কইরে?
আফ্রিনঃ এইযে আমি ভাইয়ু,আই মিসড ইউ সো মাচ।(বলেই হাগ করলো)
রামিমঃ আই অলসো মিস ইউ কিউটি,বাই দা ওয়ে ইউ লুকিং সো প্রিটি। (সে এক হাত দিয়ে জরিয়ে ধরলো)
আফ্রিনঃ থ্যাংকস ব্রো। যাওয়া যাক?
রামিমঃ ইয়া অবভিয়াসলি, লেটস গো।

রামিম আর আফ্রিন তার মামনি কে বলে বেরিয়ে গেলো তারা অনেক জায়গায় ঘুরলো দেন রাতে ডিনার করে ১১ টায় বাসায় আফ্রিন কে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো রামিম।আফ্রিন বাসায় ঢুকে উপর এ উঠতে যাবে তখন,
আসফিনঃ এটা কোনো হোটেল নয় যে যখন ইচ্ছা আসবে আর যখন ইচ্ছা যাবে তুমি (বলেই আফ্রিন এর হাত ঘুরিয়ে ধরলো)
আফ্রিন ঃ আমি ব্যাথা পাচ্ছি ভাইয়া লিভ মি?(হাত ছাড়ানোর ট্রাই করে)

আসফিন ঃ আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দেন আপনি এটা আসার সময় আপনার? মেয়ে আপনি ভুলে গেছেন রাত ১১ টা তবুও আপনি বাসায় আসেন নাই আপনার জন্য আমার আম্মু চিন্তায় শেষ আপনি তো ফূর্তি করতে ব্যাস্ত।
আফ্রিনঃ ভাইয়া(ছিহ ভাইয়া এভাবে বলতে পারলো আমায় আমি ফূর্তি করতে গেছি,মনে মনে বললাম)
আসফিনঃ এভাবে তাকালে যে আমি আপনার উপর গলে যাবো এটা কখনোই ভাববেন না, শেষ বার এর মতো ছেড়ে দিলাম(ধাক্কা মেরে আফ্রিন কে ফেলে গটগট করে হেটে উপরে উঠে গেলো)

আফ্রিনঃ ভাইয়া কেনো আমার সাথে এমন করে আমি কি করেছি?(নিচে বসে কান্না করতে করতে,নিচে পরায় সে হাতে ব্যাথা পায় কিন্তু তার চেয়ে বেশি পায় আসফিন এর ব্যাবহার এ)
নিয়তি এমন এক জিনিস কখন কি হয় কেউ জানেনা, আজব দুনিয়ায় কেউ ভালো থাকে তো আবার কেউ খারাপ।কেউ আবার নিজের দুনিয়ায় ব্যাস্ত।সারা শহর নিস্তব্ধ যে যার মতো ঘুমাচ্ছে শুধু ঘুম নেই আসফিন এর চোখে। আজ সে তার প্রিয়তমা কে অনেক আঘাত করে ফেলছে কি বা আর করবে আসফিন আফ্রিন দের লেট দেখে তার অনেক টেনশন হচ্ছিল সে রামিম আর আফ্রিন কে অনেক কল দিয়েছিল কিন্তু কেউ ধরে নাই।তাই তো সে রাগ সামলাতে না পেরে আঘাত দিয়ে ফেলছে তার প্রিয়তমা কে।

ঘুমের মাঝে আফ্রিন টের পেলো কে জেনো তার হাতে ব্যাথার জায়গায় চুমু খেলো আর কি স্প্রে করলো ঘুমের জন্য বুঝতে পারে নাই। ঘুম এতোটাই গভির ছিলো আফ্রিন এর সে চোখ খুলে দেখে নাই যে কে এসেছিলো তার রুম এ। আফ্রিন বরাবর ই ঘুম পাগলি মেয়ে ঘুমাতে সে অনেক ভালোবাসে।
আফ্রিন এর এহেন কান্ডে হাসে আসফিন।হ্যাঁ লোকটা হচ্ছে আসফিন সে তো আসছে তার প্রিয়তমার ব্যাথায় ঔষুধ লাগাতে। আফ্রিন এর কপালে সে আলতো পরশ একে চলে গেলো নিজের ঘরে এখন হয়তো সে একটু ঘুমাতে পারবে।

—-____সকালে____—-
আজানের শব্দে ঘুম ভেংগে যায় আফ্রিন এর উঠে বসে সে, হাত একটু নাড়াচাড়া দিয়ে বুঝতে পারলো তার হাতের ব্যাথা অনেক টাই কম। হাত নাকের কাছে নিয়ে বুঝতে পারলো হাতে মুভ স্প্রে করা হয়েছে, তাহলে কি রাতের দেখা অইটা স্বপ্ন ছিলো না। তাহলে কে আসলো আফ্রিন এর রুম এ তার হাতে মেডিছিন দিতে তা ভেবে পাচ্ছে না সে। তাকিয়ে দেখলো সালাত এর সময় পার হয়ে যাচ্ছে তাই সে দ্রুত ওয়াসরুম থেকে ফ্রেস হয়্র ওজু করে সালাত আদায় করে নিলো।
নিচে নেমে দেখলো সে আসফিজ যগিং এর জন্য যাচ্ছে। সে সেদিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো কফি বানাতে যা তার খুব দরকার এখন।নিজের জন্য কফি আর মামনি এর জন্য চা বানিয়ে মামির রুম এর দিকে পা বারালো আফ্রিন….

মনের কোনে পর্ব ২