মনের পিঞ্জরে গল্পের লিঙ্ক || Ariyana Nur

মনের পিঞ্জরে পর্ব ১
Ariyana Nur

ভার্সিটিতে এসেই র‍্যার্গিং এর খপ্পরে পরল ইশফা।ইশফার হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে একটা ছেলেকে দেখিয়ে বলা হয়েছে তাকে সেটা দিয়ে আসতে।ইশফা কোন ঝামেলায় পরতে চায় না।তাই সে চিরকুট টা নিয়ে গুটিগুটি পায়ে ছেলেটার দিকে এগিয়ে গেল।
ছেলেটা উল্টোদিকে ঘুরে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিল।ইশফা পিছনে গিয়ে দাড়াতেই ছেলেটার কল আসায় ছেলেটা কথা বলতে বলতে উঠে একটু দূরে চলে গেল।ছেলেটার বন্ধুরা ইশফাকে ওদের সামনে দাড়াতে দেখে ইশফার দিকে সন্দিহান চোখে তাকালো।ইশফা কোন কথা না বলে চুপচাপ সেখানেই দাড়িয়ে রইল।

—এই যে মিস বোরখাওয়ালী কিছু বলবে?
বন্ধুদের থেকে এলি নামের মেয়েটি ইশফাকে গম্ভীর হয়ে কথাটা বলল।
ইশফা তোতলাতে তোতলাতে বলল….
—আ..সলে এই চি..রকুট টা সি..নিয়র আ..পুরা ঐ ভা..ইয়াকে দি..তে ব..লেছে।(ছেলেটিকে ইশারা করে)
ইশফার কথা শুনে সবাই উচ্চ স্বরে হেসে দিল।হাসতে হাসতে শিপন ইশফাকে ব‍্যঙ্গ করে তুতলিয়ে বলল….
—তু..মি ঐ ভা..ইয়াটাকে চি..রকুট দিতে এ..সেছো।তা কো..থায় চি..রকুট আমাদেরকেও এ..কটু দেখাও।দে..খি কি লিখা আছে তা..তে।

ছেলেটা যে ইশফাকে অনুকরন করে এভাবে কথাগুলো বলল তা আর ইশফার বুঝতে বাকি রইল না।ছেলেটার কথা শেষ হতেই সবাই আবারও একসাথে উচ্চ স্বরে হাসতে লাগলো।আর ইশফা কাচুমাচু করে সেখানেই দাড়িয়ে রইল।
হেনা ইশরার হাত থেকে চিরকুটটা নিয়ে খুলে উলোট পালোট করে দেখতে লাগলো।চিরকুটে কিছুই লিখা নেই।হেনা হাসতে হাসতে বলল…..
—দেখ তোরা সানকে চিরকুট দেওয়ার সাহস দেখাতে এসেছে।অথচ বেচারী সাহসের ঠেলায় চিরকুটে কিছু লিখতেই পারে নি।
হেনার কথায় আরেক দফা সবাই দাত কেলিয়ে হাসলো।
এলি ইশফার মুখোমুখি দাড়িয়ে রাগি গলায় বলল….
—এই মেয়ে কে তোমাকে এই চিরকুট দিতে বলেছে?নাম বল তার।
ইশফা কাপাকাপা গলায় বলল….
—আ..মি জানি না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

এলিঃজানো না মানে।ফাজলামি করো আমাদের সাথে। তাড়াতাড়ি নাম বল।নাইলে তোমার খবর আছে।
ইশফাঃআমি সত‍্যিই তাদের চিনি না।আমি তো আজ নতুন এসেছি।সত‍্যি বলছি কাউকেই আমি চিনি না।
নিরবঃআরে ছাড়না হেনা।দেখছিস মেয়েটা ভয় পেয়ে আছে।এই পিচ্ছি যাও তুমি।
এলিঃযাবে মানে?এই মেয়েকে কি এভাবেই ছেড়ে দিব নাকি।কত্ত বড় সাহস আমার সানকে চিরকুট দিতে আসে।এর তো খবর নিয়েই ছাড়বো সাথে ঐ মেয়ে গুলোরো।
—সান তোর হল কবে?
হেনার কথা শুনে এলি কথা ঘুড়িয়ে বলল…

—আরে আমাদের সানকে চিরকুট দিতে এসেছে এভাবে এভাবেই কি একে ছেড়ে দিব নাকি।এই মেয়ে তুমি সানকে চিনো?জানো সান কে?সান এই ভার্সিটির ভিপি।মেয়েরা সান এর দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস পায় না আর সেখানে তুমি ওকে লাভ লেটার দিতে এসেছো?কত বড় সাহস তোমার।
নিরবঃঅনেক হয়েছে এবার থাম তোরা।নতুন তো বুঝতে পারেনি।এই যে পিচ্ছি যাও তুমি।
শিপন ফিসফিস করে নিরবকে বলল…
—যাবে মানে? অনেক দিন পর এমন একটা পিস পেয়েছি। এমনে এমনেই কি ছেড়ে দিব।কিন্তু বুঝতাছি না মামা তোমার এত দরদ লাগছে কেন?লাড্ডু ফুটটাছে নাকি মনে।(চোখ টিপে)
নিরব রাগ দেখিয়ে বলল….
—তোদের সাথে কথা বলাই বেকার। যা খুশি কর তোরা।
কথাটা বলেই নিরব হন হন করে চলে গেল।
সান ফোনের দিকে তাকিয়ে ওদের সামনে এসে বলল….

—কি হচ্ছে এখানে?
এলিঃদেখোনা সান এই বোরখাওয়ালী কত বড় সাহস ও তোমাকে চিরকুট দিতে এসেছে।
সান গম্ভীর গলায় বলল….
—তুমি আমাকে চিরকুট দিতে এসেছো?
ইশফা কোন কথা না বলে চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে।সান আবার বলল….
—কি হল কথা বলছো না কেন?
ইশফা এবারো চুপ করে দাড়িয়ে রইল।সানের বাজে স্বাভাবের মধ‍্যে একটি হচ্ছে এক কথা বার বার বলা পছন্দ করে না।ইশফাকে চুপ থাকতে দেখে সান এবার ধমক দিয়ে বলল….

—এই মেয়ে কি বলছি কানে যাচ্ছে না।কথা বলছো না কেন?
সানের ধমক খেয়ে ইশফা কেপে উঠল।টলমল চোখে থেমে থেমে বলল….
—আ…মি ই..চ্ছে করে আ..সি নি।আ..মাকে সি..নিয়র আ..পুরা ব..লেছে তাই এ..সেছি।
এলিঃসান ও মিথ‍্যে বলছে। আমরা ছাড়া এই ভার্সিটিতে কেউ র‍্যাগ করে না।
সানঃমিথ‍্যে বলবে তাও আবার সান কে?তার পরিনতি কি হবে ভেবে দেখেছে?সান সব সহ‍্য করতে পারে মিথ‍্যে না।সান…
আর কিছু বলার আগেই সানের ফোনটা বেজে উঠল।সান ফোন রিসিভ করে অপর পাশের কথা শুনে বলল….
—আসছি।
সান কল কেটে ফোন পকেটে ভরে গম্ভীর গলায় বলল…..
—ডাক পরেছে।চল তোরা একে পরে দেখে নিব।

কথাটা বলেই সান ইশফার দিকে একবার রাগি লুকে তাকিয়ে গটগট করে চলে গেলো।সান এর কথার উপর দিয়ে কারো কথা বলার সাহস নেই।তাই তারও সানের পিছু পিছু চলে গেলো।
ওরা চলে যেতেই ইশফা চোখ মুছে ক্লাশের দিকে পা বাড়ানোর আগেই দুজন এসে ইশফার পথ আটকালো।একজন বিশ্রি একটা হাসি দিয়ে বলল….

—রুপসী হোক বা পেত্নী।সবাই এতো সান সান করে কেন?দেখলি তো সান কোন দাম দিল না।কিভাবে এটিটিউড নিয়ে চলে গেল।
অপর জনঃঠিক বলেছিস।সান এর কাছে দাম না পেলেও মেয়েরা যে কেন সান এর পিছু পড়ে থাকে বুঝি না কিছু।
ইশফা কোন কথা না বলে পাশ কেটে চলে যেতে নিলেই একজন ইশফার হাত ধরে বলল….
—এই যে ফুলটুসি আমাদের দিকেও একটু তাকাও।আমরাও কিন্তু সানের থেকে কোন অংশে কম না।চাইলে…..
কথাটা শেষ করার আগেই ইশফা ঝাড়া দিয়ে হাত ছাড়িয়ে ছেলেটার গালে এক চড় বসিয়ে দিল।তার পর ডানে বামে না তাকিয়ে সোজা ক্লাশের দিকে পা বাড়ালো।

ইশফার হাতে চড় খেয়ে ছেলেটা গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে রইল।আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কয়েকজন তার দিকে তাকিয়ে আছে।কেউ মিটমিট করে হাসছে,কেউ আবার কানাঘুষা করছে।ছেলেটা রেগে বিরবির করে বলল….
—একে আমি দেখে নিব।থাপ্পরে জবার সুদে আসলে পুষিয়ে নিব।
?????
এক হাতে কান আরেক হাতে বই ধরে এক পা উঠিয়ে দাড়িয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে একটি মেয়ে।মেয়েটির এমন কান্না দেখে সামনের মানুষটার কোন হেলদুল নেই।সে এক মনে নিজের কাজ করেই যাচ্ছে।মেয়েটা কিছুক্ষন কান্না করার পর সামনের মানুষটার কোন হেলদুল না দেখে বির বির করে বলল…

—ধূর ছাই।আমার কান্নাটাই বেকার গেলো।হুদ্দা মিছা কাইন্দা চোখের পানি অপচয় করলাম।এই নবাবের তো আমার কান্নায় কিছুই যায় আসে না।সবার লগে কত সুন্দর কইরা কতা কয় আর আমার লগে ভাব লইয়া বইয়া থাকে।হুহ ঢং।
মেয়েটা বিরবির করে ইচ্ছে মত সামনের মানুষটাকে বকছে।
সামনের মানুষটা মেয়টার কথা সব শুনেও না শোনার ভান করে নিজের কাজ করেই যাচ্ছে।
কিছুক্ষন বকাঝকার পর মেয়েটা করুন কন্ঠে বলল….

—জিদ ভাইয়া….এবারের মত আমাকে মাফ করে দাও।আমি কালকেই সত‍্যি সত‍্যি পড়া কমপ্লিট করবো।প্রমিস….
সামনের মানুষটি মোটা বেত দিয়ে টেবিলে একটা বাড়ি দিয়ে বলল….
—খবর দার ইশু আমাকে জিদ ভাইয়া বলে ডাকবি না।তোর ঐ শট নাম আমার লাগবে না।আমার নাম জিদান।জিদান ভাইয়া বললেই খুশি হব।
ইশু ভেঙচি কেটে বলল….
—হুহ ঢং আসছে পুরো নাম ধরে ডাকতে বলতে। তাহলে আমাকে কেন ইশু বলে ডাকো।পুরো নাম বলতে পারো না।মুখে কি ফোসকা পরে।
জিদান রাগি গলায় বলল….

—আবার মুখে মুখে কথা বলিস তোকে তো আমি….
জিদান ইশুর দিকে বেত নিয়ে তেড়ে যেতে নিলেই ইশু ভ‍্যা ভ‍্যা করে কান্না করতে করতে বলল….
—তুই একটুও ভালো না ভাইয়া।তুই অনেক পচা।আমাকে একটুও আদর করিস না।শুধু শুধু আমাকে বকিস।আমি সবার কাছে তোর নামে বিচার দিব।আমি তোর একমাত্র ছোট্ট একটা বউ।আমার সাথে একটু ভালো ব‍্যবহার করলে কি হয় তোর?
জিদান কপালে ভাজ ফেলে রাগি লুকে ইশুর দিকে তাকাতেই ইশু ঢোক গিলে বলল…
—এমনে চাইয়া রইছোস ক‍্যান।আমি কইছি আমি তোর একমাত্র ছোট বোন।ইদানিং কানে বেশি শুনোস নাকি?কানের ডাক্তার দেখাইস।বোইন কইছি বয়রা বউ না।
জিদান চিবিয়ে চিবিয়ে বলল….

—আমি বয়রা?কানে বেশি শুনি?আর কি বললি তুই ছোট?তুই আমার একটা মাত্র ছোট বোন?তাহলে বুচি কি?
ইশু বেবি ফেস করে বলল…
—আমি তো বুচির ছোট?বুটি তো আমার অনেননক বড়?
জিদান ভ্রু কুচকে বলল….
—বুচি তোর অনেক বড়?তা কত বড় শুনি?
ইশু হাতের আঙুল গুনে আঙুল দেখিয়ে বলল….
—বুচি আমার ৩ মিনিটের বড়।ভাবতে পারছো কত বড়!এক মিনিটে ৬০সেকেন্ড দুই মিনিটে ১২০সেকেন্ড।তিন মিনিটে…তিন মিনিটে… (মাথা চুলকিয়ে) তিন মিনিটে কত সেকেন্ড হয় রে ভাইয়া?(বোকা ফেস করে)
জিদান কপাল হাত দিয়ে বলল….

—এই জন‍্যই তো তুই গনিতে ডাব্বা পাস।তিন মিনিটে কত সেকেন্ড তাই বলতে পারিস না গাধী।
ইশু কপট রাগ দেখিয়ে বলল….
—একদম আমাকে গাধি বলবে না।আমি গনিত অনেক ভালো পারি।আসলে হয়েছে কি,গনিত পরিক্ষার দিন রুটিনের মধ‍্যে সুন্দর করে ইংরেজীতে মেথ…মেথ….মেথ….
—মেথমেটিক্স
—হ‍্যা।সে যাই হোক সুন্দর করে ওটা লিখা ছিল।আমি ভেবেছি বাংলা বা অংক বইয়ের নাম তো আর ইংলিসে সুন্দর করে লিখা থাকবে না তাই বাংলা,অংক বই বাদে সব বইয়ের নামের সাথে রুটিনের নাম মিলিয়েছি। কিন্তু কোনটাই মিলে নি।এই চাকরি করতে করতেই আমার রাত পার হয়ে গেছে।সকালে ঘুমের জ্বালায় চোখে দেখতে না পেরে উঠে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্কুলে গিয়েছি।এখানে আমার কি দোষ বল।(অসহায় ফেস করে)
জিদান হাত জোর করে বলল….

—বোইন মাপ চাই। তোরে আর আমি পড়াতে আসুম না।আমার এতো সুন্দর লাইফটা পাগলা গারদে কাটানোর ইচ্ছা নাই আমার।
ইশু খুশি হয়ে বলল…..
—ইয়েয়য়….ভাইয়া আর আমাকে পড়াতে আসবে না। কি মজা কি মজা।(হাতে তালি দিয়ে)
হাতে সিগারেট এর তাপ লাগতেই ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে এলো জিদান।পুরোন কথা মনে করে আনমনেই হেসে ফেলল ।বিরবির করে বলল….

—কোথায় আছিস তুই ইশু।এখনো কি আগের মতই আছিস না চেঞ্জ হয়েছিস?অনেক তো বড় হয়ে গেছিস তাই না রে।ফিরে আয় না আমার কাছে।একবার এসে দেখে যা তোর জিদ ভাইয়া ভালো নেই তোকে ছাড়া।একটুও ভালো নেই।
?????
ইশফার আজ ক্লাশ করতে ভালো লাগছে না।কোন রকম কয়েকটা ক্লাশ করে ক্লাশ থেকে বের হয়ে গেলো।ইশফা করিডোর দিয়ে যাওয়ার সময় হুট করে একজন ইশফাকে টান দিয়ে অন্ধকার একটা রুমে নিয়ে গেল।হুট করে এমন হওয়ার ইশফার ব‍্যপারটা বুঝতে একটু সময় লাগলো।যখন বুঝতে পারল তখন চিৎকার দেবার জন‍্য মুখ খোলার আগেই শক্ত একটি হাত ইশফার মুখ চেপে ধরল।

মনের পিঞ্জরে পর্ব ২