মনের পিঞ্জরে পর্ব ২ || Ariyana Nur

মনের পিঞ্জরে পর্ব ২
Ariyana Nur

ওয়াসরুমে সাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে রয়েছে ইশফা।রাগে তার ফর্সা মুখটা পুরো লাল হয়ে রয়েছে।নিজের রাগ কমানোর জন‍্য এক হাতের নখ আরেক হাতের বিভিন্ন জায়গায় চেপে ধরছে।সে সব জায়গায় পানি লাগার কারনে জ্বলে যাচ্ছে।কিন্তু সেদিকে তার খেয়াল নেই।সে তার রাগ কমানোর জ‍ন‍্য হাতের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত করেই যাচ্ছে। তারপরেও যেন তার রাগ কমছে না।
তখন ক্লাশরুমে তার মুখ চেপে ধরার কয়েক সেকেন্ডের মধ‍্যে তার হাতে একটা টিস‍্যু আর একটা চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে লোকটা তাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।ছাড়া পেতেই ইশফা দ্রুত ক্লাশ রুম থেকে বের হয় যায়।ক্লাশ রুম থেকে বের হয়ে আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পায় না।ইশফা ভ্রু কুচকে হাতের চিরকুট আর টিস‍্যুটার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে চিরকুটটা খুলতেই দেখতে পায় সেখানে সুন্দর করে লিখা…..

“সব সময় শুনে এসেছি মেয়েদের কাজল কালো চোখে নাকি ছেলেরা হাড়িয়ে যায়।কিন্তু আমি তো তোমার কাজল ছাড়া ঐ চোখেই হাড়িয়ে গেছি।টিস‍্যু দিয়ে সুন্দর করে চোখ মুছে নাও।খবরদার আর যেন তোমার ঐ চোখে পানি না দেখি।তাহলে কিন্তু আমার চাইতে খারাপ কেউ হবে না।বাঘীনীকে বাঘীনী রুপেই মানায় ছিদ কাদুনে রুপে নয়।”
লিখাট পড়েই ইশফা রাগে চিরকুট আর টিস‍্যু টুকরো করে মোচরিয়ে ফেলে দিয়ে চলে যায়।
এক ঘন্টার মত সাওয়ার নিয়ে ইশফা ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে বেডে শরীর বিছিয়ে দিতেই তার ফোনটা বেজে উঠল।ফোনের স্কিনে “মি”লেখাটা দেখে রিসিভ করে ফোন কানে ধরতেই অপর পাস থেকে ভেসে আসে….

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

—হাই বেবি….কি অবস্থা?কেমন কাটলো প্রথম দিন?
ইশফা গম্ভীর গলায় বলল….
—ভালো।
ইশফার গম্ভীর গলার কথা শুনে অপর পাশ থেকে চিন্তিত শুরে ভেসে আসে…..
—কি হয়েছে তোমার?কথা এমন শোনা যাচ্ছে কেন?নিশ্চই কোন ঝামেলা করেছো তা না?
—মাথা ধরেছে।পরে কথা বলি ঘুমোব।
—ওকে টেক কেয়ার।আল্লাহ হাফেজ।
—আল্লাহ হাফেজ।
কথা শেষ করেই ইশফা ঘুমের দেশে পাড়ি দেবার জন‍্য চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইল।
?????
ড্রয়িংরুম জুড়ে পানির পাত্র হাতে নিয়ে সান এর পিছু পিছু ছুটছে সিনথিয়া।সিনথিয়া সানের পিছু পিছু ছুটছে আর চেচিয়ে বলছে….
—ভাইয়া থাম বলছি।ভালো হবে না কিন্তু।
সান ছুটতে ছুটতে বলল…..

—মাথা খারাপ না পেট খারাপ। আমি তোর হাতে ধরা দিব।তুই ডাইনী যে একবার আমাকে ধরতে পারলে কি করবি তা আমার জানা আছে।
—বজ্জাত পোলা তুই কি ছেড়ে দেবার কাজ করেছিস যে তোকে ছেড়ে দিব।ইচ্ছে তো করছে তোর চুল ছিড়তে।
—আগে আমাকে ধর তার পর না হয় চুল ছিড়িস।
দু’ভাই বোনের ঝগড়া শুনে মিসেস শিকদার রান্না ঘর থেকে হাতে খুনতি নিয়ে এসে কোমরে হাত দিয়ে রাগি গলায় বলল….
—চুপচাপ দাড়াও তোমরা।যদি কেউ ছোটাছুটি কর তাহলে খবর আছে।
মায়ের ধমক খেয়ে দু’জন ভদ্র বাচ্চার মত দাড়িয়ে রইল।
মা দুজনের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বলল….

—কি হয়েছে তোমাদের?এমন বাদরের মত ছোটাছুটি করছো কেন?
মায়ের কথা শুনে সিনথিয়া ন‍্যাকা কান্না করে হাতের পানির পাত্র টা দেখিয়ে বলল….
—দেখ আম্মু ভাই আমার সব মেকাপ পানিতে গুলিয়ে নষ্ট করে ফেলেছে।
মা গম্ভীর হয়ে বলল….
—সান তুমি এগুলো নষ্ট করেছো?

সানঃআম্মু সেদিন নিউজে দেখলাম এই সব আটা ময়দা মাখার কারনে স্কিন নষ্ট হয়ে গেছে অনেকের।মুখের মধ‍্যে বড় বড় পিম্পল উঠেছে।শুধু পিম্পল না বড় বড় ফোসকাও পরেছে।পুরো মুখ নষ্ট হয়ে গেছে।ও যেই হাড়ে এই আটা ময়দা মেখে ডাইনী সাজে কোন দিন যেন ওর মুখও নষ্ট হয়ে যায়।তাই এগুলো নষ্ট করেছি।ফেলে দিলে তো এই ফকন্নী কুড়িয়ে এনে সেগুলো মুখে মাখবে তাই পানি তে গুলিয়েছি।ভালো করেছিনা আম্মু।(দাত কেলিয়ে হেসে)
সিনসিয়াঃআম্মু ভাই মিথ‍্যে বলছে ভাই আমাকে একটা পেন্টিং একে দিতে বলেছিল না করেছি দেখে ও এমন করেছে।আম্মু জানো ভাই আমাকে দিয়ে……

আর কিছু বলার আগেই সান সিনথিয়ার মুখ চেপে ধরে দাতে দাত চেপে ফিসফিস করে বলল……
—আমার ডাইনী সরি হুর পরি বোন আমার।আমি কালকেই তোকে শপিংয়ে নিয়ে যাবো।তোর মেকআপের যা যা লাগবে সব কিনে নিস।এগুলো তো ডেট এক্সফেল হয়ে গেছিলো তাই তো নষ্ট করেছি।তা না হলে কি আমি এমন করতাম বল।
মিসেস শিকদারঃএই সান তুমি ওর মুখ চেপে ধরেছো কেন?কি বলছিলো ও?
সান সিনথিয়ার মুখ থেকে হাত সরিয়ে বলল….
—কিছু না আম্মু।তুমি তো জানোই এই পাগলে সারাদিন কিছু না কিছু বলতেই থাকে।
সান এর কথা মনে হয় না মিসেস শিকদারের পছন্দ হল।তাই সে সিনথিয়ার দিকে প্রশ্ন বোধক দৃষ্টিতে তাকাতেই সিনথিয়া সানের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে মেকি হেসে বলল….

—কিছু না আম্মু।আমাদের ভাই বোনদের ব‍্যপার আমাদের উপর ছেড়ে দাও।
মিসেস শিকদার দুজনের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে নিজের কাজে চলে গেলো।কেননা সে তাদের ছেলেমেয়ের ভালো মত চিনে।একবার যখন বলেছে কিছু না তাহলে বোম ফাটালেও তাদের পেট থেকে কথা বের হবে না।
মিসেস শিকদার চলে যেতেই সিনথিয়া দাত বের করে হেসে বলল….
—তা কাল কখন নিয়ে যাবে শপিং এ ভাই?
সান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে সিনথিয়ার দিকে আগাতে নিলেই সিনথিয়া ভৌ দৌড়।সান ও সিনথিয়ার পিছু পিছু ছুটতে লাগলো।
সান সিনথিয়া দৌড়াতে থাক ততক্ষনে আমরা তার পরিচয় জেনে নেই।

সানজান শিকদার।ডাক নাম সান।শিকদার গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যত CEO।শিকদার বাড়ির বড় ছেলে।বাড়িতে বাবা,মা,বোন আর দাদুকে নিয়েই তাদের সুখি পরিবার।সান এর দুইটি রুপ।সান কাছের মানুষদের সাথে খুব ফ্রি।দুষ্টুমি, ফাজলামি তে সবাইকে মাতিয়ে রাখে।যদিও রাগটা নাকের ডোগায় থাকে।কাছের মানুষ ছাড়া সবাই সানকে গম্ভীর, রাগি, বদমেজাজী হিসেবে চিনে।কিন্তু তাতে সানের কোন মাথা ব‍্যথা নেই।সে তার দু’রুপকেই পছন্দ করে।ভার্সিটির কারো সাহস নেই সান এর উপর দিয়ে কথা বলার।সান পড়াশুনার সাথে সাথে বাবার ব‍্যিজনেসেও সাহায্য করে।

ইশফার ঘুমের মধ‍্যে চোখের মধ‍্যে র্তীব আলো লাগার কারনে ঘুম ছুটে গেল।ইশফা চোখ খিচে বন্ধ করে ঘুমঘুম কন্ঠে বলল…
—আব্বু…লাইট অফ করো।চোখে লাগছে তো।
ইশফার বাবা ইশফার মাথার সামনে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল….
—তা তো হচ্ছে না মামুনি।এখন তো তোমাকে উঠতে হবে।
ইশফা বাবার কোলে মাথা রেখে বলল….
—উহু….এখন উঠবো না।আরেকটু ঘুমোব। আব্বু প্লিজ লাইট অফ করো।(অদুরে কন্ঠে)

—যতই আদর দেখাও না কেন মামুনি কাজ হবে না।তুমি স্কুল থেকে এসে না খেয়েই ঘুমিয়ে রয়েছো।তা কি আমি জানি না মনে করেছো।
—ওফ আব্বু তুমি আমাকে রাগানোর জন‍্য আবার স্কুল বলছো।সো স‍্যেড আব্বু। আমি রাগছি না।আর একটু ঘুমাই তার পরে এক সাথে রাতের খাবার খাব।
—আরেকটু ঘুমালে রাতের খাবার না একসাথে সকালের নাস্তা খেতে পারবে।কটা বাজে সেই খেয়াল আছে তোমার?
—কটা বাজে?৫টা নাকি ৬টা?
—সাড়ে ১০টা বাজে।
ইশফা লাফ দিয়ে উঠে বলল…..
—কিহহহ…..সাড়ে ১০টা।আল্লাহ আব্বু আমাকে আগে ডাক দাও নি কেন?আমার না রান্নার কথা ছিল।
ইশফার বাবা মুচকি হেসে বলল……
—পাগলি মেয়ে।ফ্রেস হয়ে খেতে আয়।
ইশফা গাল ফুলিয়ে বলল….

মনের পিঞ্জরে পর্ব ১

—এটা ঠিক না আব্বু।এতোদিন তুমি রান্না করে খেতে একা ছিলে বিধায় এখন তো আমি আছি।তুমি আমাকে কেন আগে ডেকে দিলে না?
ইশফার বাবা ইশফার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল….
—আমার একটু ইচ্ছে হল আমার মাকে রান্না করে খাওয়াতে।তাই ডাকি নি।এখন তাড়াতাড়ি আয় তোর পছন্দের খাবার রান্না করেছি।
ইশফা খুশি হলে বলল….
—সত‍্যি।আমি এখনি ফ্রেস হয়ে আসছি।কিন্তু কাল থেকে কিন্তু আমি রান্না করবো।মনে থাকে যেন।(শাসনের সুরে)
ইশফার বাবা ইশফার গাল টেনে বলল……
—পাগলি মা আমায়।তাড়াতাড়ি আয়।
কথাটা বলে সে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
ইশফা মুচকি হেসে ওয়াসরুমের দিকে পা বাড়ালো।

মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে যাবার পর বহু চেস্টা করেও ঘুমের দেশে পাড়ি দিতে পারে নি ইশরা।তাই চুপিচুপি রুম থেকে বেরিয়ে চোরের মত পা ফেলে ছাদে চলে আসে।ছাদের এক কোনে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে আকাশের ঐ অর্ধেক ওঠা চাদ টার দিকে তাকিয়ে রইল।চাদের দিকে তাকিয়ে কিছু ভাবতে ভাবতে মুহূর্তের মধ‍্যে মনের মধ‍্যে জমা হল এক রাশ অভিমান।তার সাথে চোখ দিয়ে বেড়িয়ে এল লোনা জল।চাদের দিকে তাকিয়ে অভিমানের সুরে বিরবির করে বলল…..
—দেখেছো চাদ তুমিও একা আজ আমিও একা।আচ্ছা বলতে পারো কেন সব সময় কাছের মানুষগুলো আমাকে একা করে রেখে যায়?আমি কি অনেক পচা?আমি না হয় একটু বেশিই দুষ্টুমি করি তাই বলে কি তারা আমাকে এভাবে কষ্ট দিবে?তাদের কি একটুও কষ্ট হয় না আমার জন‍্য?

ইশফা রিকশা জন‍্য অনেকক্ষন দাড়িয়ে থাকার কারনে ভার্সিটিতে পৌচ্ছাতে একটু দেড়ি হয়ে গেলো।তাড়াহুড়ো করে ক্লাশের দিকে পা বাড়াতে লাগলো।ইশফা ক্লাশে পৌচ্ছাবার আগেই কয়েকজন ইশফার সামনে এসে পথ আটকে দাড়ালো।ইশফা পাশ কেটে চলে যেতে নিলেই…..

মনের পিঞ্জরে পর্ব ৩,৪