মনের পিঞ্জরে পর্ব ৩,৪ || Ariyana Nur

মনের পিঞ্জরে পর্ব ৩,৪
Ariyana Nur

ইশফা রিকশার জন‍্য অনেকক্ষন দাড়িয়ে থাকার কারনে ভার্সিটিতে পৌচ্ছাতে একটু দেড়ি হয়ে গেলো।তাড়াহুড়ো করে ক্লাশের দিকে পা বাড়াতে লাগলো।ইশফা ক্লাশে পৌচ্ছাবার আগেই কয়েকজন ইশফার সামনে এসে পথ আটকে দাড়ালো।ইশফা পাশ কেটে চলে যেতে নিলেই একজন ইশফার ব‍্যাগ ধরে বলল….
—কই যাস?আমাদের কে কি চোখে পরে না ?

ইশফা তাদের দিকে ভালো মত খেয়াল করে তাকাতেই তাদের চিনতে অসুবিধে হল না।তারা আর কেউ না কালকের সিনিয়র আপুগুলো।তাদের দেখেই ইশফার মাথা গরম হয়ে গেলো।তার পরেও নিজের রাগটাকে দমিয়ে সুন্দর করে বলল….
—আপুরা আমার ক্লাশ আছে।
তাদের থেকে একজন মেয়ে বলল…..
—বইয়ের ক্লাশ পরে করিস আগে আমরা তোর ক্লাশ নিয়ে নেই।
আরেক জন মেয়ে বলল…..

—প‍্যাচাল বন্ধ।আগে বল কালকে যে সান জানুর কাছে তোরে দিয়া একটা চিঠি পাঠিয়েছি সেটা তাকে দিস নি কেন?
ইশফাঃ আমি তো ঐ ভাইয়াকে চিরকুটটা দেবার আগেই তার বন্ধুরা সেটা নিয়ে নিয়েছে।
—হুম তারা চিঠি নিয়েছে কিন্তু তাতে কিছু লিখা ছিলো না।আমি যেই চিঠিটা দিয়েছিলাম সেটা কই?
ইশফা এবার কোন কথা না বলে চুপ করে দাড়িয়ে রইল।ইশফাকে চুপ করে থাকতে দেখে মেয়েগুলো ওর সাথে ধমকা ধমকি করতে লাগলো।তার পরেও ও কোন উওর দিচ্ছে না।
—এখানে কি হচ্ছে?

পিছন থেকে নিরবের কথা শুনে মেয়েগুলোর থেকে একজন মেয়ে বলল….
—নিরব তুই তোর কাজে যা।আমাদের কাজে নাক গলাতে আসিস না।
নিরব হাত ভাজ করে দাড়িয়ে বলল….
—বাহ্ সাহস তো দেখছি বেশি বেড়েছে তোদের?কাল তাহলে তোরাই এই মেয়েটাকে সান এর কাছে চিরকুট দিয়ে পাঠিয়েছিলি?
প্রথম মেয়েটা বিরক্ত হয়ে বলল….
—হা পাঠিয়েছি তাতে তোর কি? তুই তোর কাজে যা।আমাদেরকে আমাদের কাজ করতে দে।
নিরবঃআমার কিছুই না।সান তো তোদেরকেই খুজছে। যাই গিয়ে খবরটা দিয়ে আসি।তোরাই সে যারা কালকে এই মেয়েটাকে সান এর কাছে চিরকুট দিয়ে পাঠিয়েছিস।
সান এর নাম শুনতেই মেয়েরা একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে চলে গেলো।মেয়েগুলো চলে যেতেই ইশফা ক্লাশের দিকে পা বাড়াতে নিলেই নিরব বলল….

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

—এই যে পিচ্ছি।আমি তোমাকে ওদের কাছ থেকে বাচালাম আর তুমি ধন‍্যবাদ না দিয়েই চলে যাচ্ছো।
ইশফা ঘুড়ে দাড়াতেই নিরব মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে বলল….
—হাই আমি নিরব।সান এর বন্ধু।এখানে কোন সমস‍্যা হলে আমাকে বলবে আমি স্লভ করে দিব।
ইশফা নিরবের হাতের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল….
—সান কা চামচা।
নিরব শুনতে না পেরে বলল….
—সরি….
—আমার দেড়ি হচ্ছে।
কথাটা বরে ইশফা আর দেড়ি না করে ক্লাশের দিকে পা বাড়ালো।

ক্লাশে ঢুকে ইশফা মুখের থেকে হিজাব সরিয়ে একটা বড় নিশ্বাস ছাড়লো।ইশফা বোরখার সাথে সব সময় হিজাব তো পড়বেই সাথে হিজাব দিয়ে সুন্দর করে মুখ ঢেকে রাখবে।তার আবার বোরখার সাথে হিজাব পড়ে মুখ খুলে রাখা পছন্দ না।স‍্যার এখনো ক্লাশে আসে নি।ক্লাশ শুরুর আরো ৫মিনিট বাকি আছে।হঠাৎ একটা মেয়ে হুড়মুড় করে ক্লাশে ঢুকে ইশফার পাশে এসে বসে পরল।এদিন ওদিক একবার তাকিয়ে ইশফার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল….
—হাই….আমি রিধি।
ইশফা মুচকি হেসে হাত মিলিয়ে বলল….
—আমি ইশফা।
—তুমি কি এখানে নতুন?
ইশফা মাথা ন‍েড়ে হ‍্যা বলতেই রিধি বলল….

—জানো আমিও না নতুন।একা একা কি আর ভালো লাগে বল।আমার হাড়ামী বন্ধুগুলোকে কত করে বললাম এখানে ভর্তি হতে কিন্তু ওরা শুনলোই না আমার কথা।ওদের রাজি না করাতে পেরে আমিও পরে ঠিক করেছিলাম ওদের সাথে ভর্তি হব।কিন্তু বাবার চাপে এখানেই ভর্তি হলাম।আচ্ছা বাদ দাও সে সব কথা তুমি কি আমার ফ্রেন্ড হবে?(হাত বাড়িয়ে)
ইশফা মুচকি হেসে হাত মিলাতেই রিধি বলল….
—থ‍্যাক্স আল্লাহ্।কারো কান পচানোর ব‍্যবস্থা করে দিলে।আমি কিন্তু প্রচুর কথা বলি তুই কিন্তু কিছু বলতে পারবি না।আর শোন কোন তুমি,আপনি চলবে না।বন্ধুদের মধ‍্যে তুই বেটার।
ইশরা মুচকি হেসে বলল….
—ওকে।

আর কিছু বলার আগেই স‍্যার চলে আসলো।ইশফা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে স‍্যার ঠিক টাইমেই চলে এসেছে।ইশফা এক পলক রিধির দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল….
—ইয়া আল্লাহ্ পাচ মিনিটেই এতো কথা বললো মেয়েটা বাকি সময়ে কি করে আল্লাহ্ মালুম।

ইশরা কলেজে যাবার জন‍্য তাড়াহুড়ো করে রেডি হচ্ছে আর চিৎকার করে বলছে…..
—ও মা….
তাড়াতাড়ি আমার ব‍্যাগ গুছিয়ে দাও আমার দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।
ইশরার মা এতোক্ষন ইশরার দরজার সামনেই দাড়ানো ছিল।ইশরা নিজের কাজে ব‍্যস্ত থাকায় তাকে দেখতে পায় নি।ইশরার কথা শেষ হতেই ইশরার মা বলল…..
—এখন ব‍্যাগ গোছানোর কথা বলছো কেন?একটু আগে যখন ডেকে গেলাম তখন তো আমাকে ঝাড়ি দিয়ে পাঠিয়ে দিলে।আমার মাথা ধরেছে আমাকে ডাকবেনা বললে।এতো তাড়াতাড়ি মাথা ঠিক হয়ে গেলো?
ইশরা মায়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে নিজের কাজ করতে করতে বলল…..
—আম্মা জান।আমার মাথা ঠিক হওয়ার মেডিসিন ফোন করে আমার মাথা ঠিক করে দিছে।
মা রুমে এসে ব‍্যাগ গুছিয়ে দিতে দিতে বলল….

—তোকে নিয়ে আর পারি না।একটু কিছু হলেই কান্না করে সব ভাসিয়ে ফেলবে।গাল ফুলিয়ে বসে থাকবে।এতো বড় মেয়ে হয়ে গেছে এখনো ব‍্যাগ গোছাতে পারে না।তাকে নাকি এখনো আমার ব‍্যাগ গুছিয়ে দিতে হবে।
ইশরা রেডি হয়ে মায়ের হাত থেকে ব‍্যাগ নিয়ে মাকে একটা আদর দিয়ে বলল…..
—আসছি।
—আসছি মানে।আরে নাস্তা তো করে যা।
ইশরা তাড়াহুড়ো করে যেতে যেতে বলল….
—কেন্টিন থেকে খেয়ে নিব।

জিদানের মা জিদানের রুমে এসে ছেলেকে বিশাল বড় ব‍্যাগ প‍্যাক করতে দেখে চিন্তিত সুরে বলল….
—কি ব‍্যপার বাবা কোথাও যাচ্ছো তুমি?সকাল সকাল এতো বড় ব‍্যাগ গোছাচ্ছো কেন?
জিদান ব‍্যাগ প‍্যাক করতে করতেই বলল…..
—হুম যাচ্ছি।এখানে বসে থেকে কি করবো।আমার এক বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করে জব ঠিক করেছি।
জিদানের মা হালকা চেচিয়ে বলল….
—কি তুমি চাকরী করবে?তোমার বাবার এতো টাকা পয়সা আর তুমি করবে চাকরী?
—বাহিরে পড়াশুনা করতে পাঠিয়েছিলে কি ঘড়ে বসে থাকার জন‍্য?
—তাই বলে…..
জিদান মাকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে বলল…..
—তাড়াতাড়ি খেতে দাও মা।দেড়ি হলে বাস ধরতে অসুবিধে হবে।
মা করুন চোখে তাকিয়ে বলল…..
—না গেলে হয় না।

জিদান হাতের কাজ রেখে এক হাতে মাকে জড়িয়ে ধরে বলল…..
—খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবো।কিছু অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করেই চলে আসবো।
জিদানের মা জিদানের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল….
—কি কাজ?তুমি কোন কাজের কথা বলছো?
জিদান কথা ঘুড়িয়ে বলল…..
—কিছু না।মা তাড়াতাড়ি খেতে দাও তো। আমার দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।
ছেলের ব‍্যস্ততা দেখে জিদানের মা বলল…..
—ঠিক আছে।তুমি তাড়াতাড়ি আসো।আমি খাবার দিচ্ছি।
কথাটা বলেই তিনি চলে গেলেন।
মা চলে যেতেই জিদান একটা র্দীঘ নিশ্বাস ফেলে কাজে লেগে গেল।

ইশফা,রিধি,তুশি অফ টাইমে মাঠের এক কোনে বসে গল্প করছে।তুশি ইশফার বেস্ট ফ্রেন্ড।তারা এক সাথেই এই ভার্সিটিতে এডমিশন নিয়েছে।তুশি খুব ঘুম কুমারী মেয়ে।ঘুমের জন‍্য কালকে ভার্সিটিতে আসতে পারেনি।আর আজকেও ঘুমের জন‍্য ক্লাশে পৌচ্ছাতে দেড়ি হয়ে গেছে।অফ টাইম শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা তাদের গল্প সেখানেই ইতি টেনে ক্লাশের দিকে পা বাড়ালো। তুশির হাতের কোল্ড ড্রিংকস ইশফার হাতে ধরিয়ে দিয়ে সে নানান ভাবে সেলফি নিতে ব‍্যস্ত।ইশফা ত‍াড়া দিয়ে বলল….
—পরে সেলফি নেবার অনেক টাইম পাবি এখন তাড়াতাড়ি ক্লাশে চল।
তুশি তার পরেও তার সেলফি নিতে ব‍্যস্ত।সে জায়গায় জায়গায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে বিভিন্ন ভাবে সেলফি নিচ্ছে।
ইশফা বিরক্ত হয়ে বলল….

—ঐ আর কতো সেলফি নিবি।ক্লাশের দেড়ি হচ্ছে তো।
—হয়ে গেছে।যাস্ট এক মিনিট।
—তোর এক মিনিটে তোর কাছে রাখ। এক সেকেন্ড সময় বেশি লাগলে এই কোল্ড ড্রিংকস তোর মাথায় ঢালুম।
তুশি আসে পাশে তাকিয়ে দেখে বলল….
—কি ভাবে ঢালবে।তুমি ঢালার আগেই আমি ছু মন্তর হয়ে যাবো।
—দেখবি কিভাবে?
কথাটা বলার সাথে সাথেই ইশফা তুশির দিকে কোল্ড ড্রিংকস ছুড়ে মারতেই তুশি সরে গেল।আর তা লাগলো সানের গায়ে। হুট করেই যে তাদের সামনে সান আর নিরবের আগমন ঘটবে তা ইশফা ভাবতেও পারে নি।
সান শার্ট ঝেড়ে ইশফার দিকে তাকিয়ে রাগি গলায় বলল…..

—ইউ স্টুপিট কি করলে এটা?
ইশফা একবার তুশির দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে মিনমিনে গলায় বলল….
—আমি ইচ্ছে করে করি নি।আমি তো ওকে…..আর সামনে আপনি চলে আসলেন।
সান ইশফার দিকে একবার রাগি চোখে তাকিয়ে শার্ট ঝাড়তে ঝাড়তে কোন কথা না বলে চলে গেলো।

সান,নিরব মাঠের এক কোনে দাড়িয়ে কিছু একটা নিয়ে আলোচনা করছে।ঝড়ের গতিতে ইশফা সান, নিরবের সামনে এসে দাড়ালো।তুশি আর রিধি ইশফা থেকে একটু দূরে দাড়িয়ে আছে।নিরব ইশফাকে দেখে মুখের মধ‍্যে লম্বা একটা হাসি ঝুলিয়ে বলল…..
—আরে পিচ্ছি যে।কিছু বলবে।
ইশফা নিরবের কথার কোন উওর না দিয়ে এক কান্ড ঘটিয়ে ফেলল।ব‍্যাগ থেকে ইন এর বোতল বের করে সান এর শার্টে ছুড়ে মারল।তার এই কাজে নিরব,রিধি হা করে ওর দিকে তাকিয়ে রইল।ইশফা যে এমন একটা কান্ড ঘটিয়ে ফেলবে তা কেউ ভাবতেও পারে নি।
সান রেগে ইশফার দিকে তাকিয়ে বলল….

—ইউ ইডিয়েট কি করলে এটা তুমি?
ইশফাঃশার্ট যখন কিনে দিতে হবে তাহলে একটু নষ্ট হওয়াতে কেন কিনে দিব।তাই বেশি করে নষ্ট করে দিলাম।কালকে আপনার শার্ট পেয়ে যাবেন।
কথাটা বলেই ইশফা গটগট করে সেখান থেকে চলে গেলো।
ইশফা চলে যেতেই নিবর বলল……
—এই পিচ্ছির কথা তো কিছুই আমার মাথায় ঢুকছে না।
সান নিরবের দিকে রাগি চোখে তাকাতেই নিরব শুকনো ঢোক গিলে বলল…..

—না মানে তখন তো তুই ওকে কিছু বলিস নি।তাহলে হঠাৎ এসে এমন কান্ড করল কেন?কেউ কি ওকে কিছু বলেছে?
সান ভার্সিটি থেকে রেগে বাড়িতে চলে এসেছে।‍বাড়িতে ঢুকেই দেখে সিনথিয়া আর তার দাদু মিলে ডিজে গান ছেড়ে নাচ করছে।দাদুর নাচ বলতে সোফায় বসে সে হাত পা নাড়াচ্ছে।সান রেগে গিয়ে গান বন্ধ করে দিল।গান বন্ধ হওয়াতে সিনথিয়ার নাচ থেমে গেলো।সানকে পাশে দাড়িয়ে থাকতে দেখে তার আর বুঝতে বাকি রইল না গান কে বন্ধ করেছে।সিনথিয়া বিরক্ত হয়ে বলল….
—উফ্ ভাই গান কেন বন্ধ করলে?নাচার একটা মুড চলে এসেছিলো।মুডটাই খারাপ করে দিলে।
সান সিনথিয়াকে এক রাম ধমক দিয়ে বলল….

—সারাদিন তো শুধু বাদরের মত ফালাফালি করিস।পড়ালেখা নেই?যা পড়তে বস।
কথাটা বলেই সান গটগট করে রুমে চলে গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিল।
দাদু সানের যাওয়ার দিকে সন্দেহর চোখে তাকিয়ে বলল….
—এর আবার কি হল?এমন গরম হয়ে আছে কেন?
সিনথিয়া ভেংচি কেটে বলল…
—কি আর হবে দেখো গিয়ে নিশ্চই কোন ঝামেলা করে এসেছে।নিজে সারাদিন ঘুরে বেরায় আর আমাকে বলে পড়তে বসতে।আমার মত মাসুম একটা মেয়ের উপর হুকুম চালাস না দেখিস তোর কপালে একটা জল্লাদ বউ জুটবে।মিলিয়ে নিস আমার কথা।
দাদু সিনথিয়ার কথা শুনে হাসতে হাসতে বলল…..
—জল্লাদ বউ জুটলে তো তোরি সমস‍্যা।তোরি তো চুল ছিড়বে।
—মোটেও না।আমার ভাবী আমার চুল ছিড়বে না।আমাকে খুব আদর করবে।ভাবী আসলে আমি আর ভাবি মিলে ওর চুল ছিড়বো।হনুমান একটা সব সময় আমাকে বকে।

ইশফা রুম জুড়ে পায়চারী করছে আর “মি” দিয়ে সেভ করা নাম্বারটাতে বার বার কল করছে।কিন্তু যাকে ফোন দিচ্ছে তার ফোন ধরার কোন নাম গন্ধ নেই।ইশফার রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।হাতের ফোন টা বিছানায় ছুড়ে মেড়ে বিছানার এক কোনে মাথা চেপে বসে রইল।
ইশফার এমন হুট করে রেগে যাওয়া আর এমন অদ্ভুত কান্ড করার কারণ হল এলি।ইশফার রাগ বরাবরই একটু বেশি।কেউ তাকে কিছু বললে সে তাকে ছেড়ে দেয় না।ইশফার ক্লাশ শেষে করিডোর দিয়ে যাবার সময় এলি ইশফার সামনে এসে দাড়ায়।সান এর গায়ে তখন কোল্ড ড্রিংকস লাগার কারনে ইশফাকে যা না তাই শুনিয়ে দেয়।ইশফা প্রথমে চুপ করে থাকলেও এলি যখন শার্ট নিয়ে খোটা দেয় আর তার ফ‍্যেমিলিকে নিয়ে বাজে কথা বলে তখন সেও দু’কথা শুনিয়ে দেয়। এলিকে কথা শুনিয়ে যাওয়ার সময় সামনে সান কে দেখতেই তার রাগটা আরো বেড়ে যায়।তাই তো রাগ ঝাড়তে তখন এমন একটা কান্ড করেছে।

ইশফা মাথা চেপে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর তার ফোনটা বেজে উঠল। ফোন বাজতেই এক হাত মাথা থেকে সরিয়ে ফোনের দিকে তাকালো।ফোনের স্ত্রিনে “মি” লিখাটা দেখে ইচ্ছে মত ঝাড়ি দেবার প্রস্তুতি নিয়ে ফোন রিসিভ করতেই ভেসে এল…..
—সরি সরি সরি আসলে আমি ওয়াসরুমে ছিলাম।তাই ফোন ধরতে পারিনি।প্লিজ রাগ করো না বেবি…..
ইশফা রেগে কটমট করে বলল…..
—খবরদার আমাকে ও সব ভেবি,টেক্সি বলে ডাকবে না।
—ঠিক আছে ঐ সব ভেবি,টেক্সি বলবো না।জানু তো বলতে পারবো।তাই না জানু…..
—আমি এখন ফাজলামোর মুডে নেই।
—তা কোন মুডে আছো তুমি?

—দেখো ফাজলামি পরে করো।আগে বল কাজ হয়েছে?শার্ট কিনেছো?
—না যাবো এখন কিনতে।শার্টের সাইজ বল আর কালার বল।
ইশফা শুকনো ঢোক গিলে বলল…..
—কালার আর সাইজ?
—তা ছাড়া কিনবো কি ভাবে?
ইশফা একটু ভেবে বলল….
—কালারটা অফ হোয়াইট কালার হবে মনে হয়?
—অফ হোয়াইট নাকি ময়লা হোয়াইট শার্ট পরে আসার কারনে অফ হোয়াইট মনে হয়েছে কোনটা?(হাসতে হাসতে)
ইশফা হালকা চেচিয়ে বলল…..
—তুমি….

অপর পাশ থেকে হাসতে হাসতে বলল…..
—ওকে অফ হোয়াইট কালার আর সাইজ?
—আমি কি করে সাইজ বলবো?
—তা আমি কি জানি?সব সময় বলি মাথাটা একটু ঠান্ডা রাখতে।না তা করবে কেন।পারে শুধু মাথা গরম করে চলতে।
—তুমি আমাকে বকছো।লাগবে না তোমার শার্ট কেনা।
—আসছে শার্ট কেনা লাগবে না বলতে।এখন রাগ না দেখিয়ে সাইজ বল।
—আরে আমি কি করে বলবো?তুমি মাপ দেখে একটা কিনে নিও।
—বললেই হল।মাপ দেখে একটা কিনে নিও।আমি তো তাকে দেখিও নি।সে দেখতে আমাদের চেনা জানা দেখতে কারো মত হবে কিনা ভেবে বল।
ইশফা কিছুক্ষন ভেবে আনমনে বলল…..
—ভাইয়ার মত।
কথাটা বলতে না বলতেই অপর পাশ থেকে আর কোন কথা না বলে লাইন কেটে দিল।ইশফা অপর পাশ থেকে কথার আওয়াজ না পেয়ে ফোন হাতে নিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়লো।

ইশফা ভার্সিটিতে আসার পর থেকে সান কে খুজে যাচ্ছে।কিন্তু কোথাও তাকে পাচ্ছে না।রিধি হাপাতে হাপাতে ইশফার সামনে এসে বলল…..
—ইশু কখন থেকে ডাকছি শুনতে পারছিস না।আর এদিক ওদিক তাকিয়ে কাকে খুজছিস?
ইশফা এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল….
—মিঃবাদর আর তার চেলাদের।
রিধি হালকা চেচিয়ে বলল….
—হোয়াট? কে বাদর?কার কথা বলছিস তুই ইশু?
—এই ইশু বলা বন্ধ কর।ইশু আমা….পুরো নাম ধরে ডাক অথবা অন‍্য নামে ডাক।
—আচ্ছা ঠিক আছে তা ডাকবো।এবার বল তুই কার কথা বলছিস?

—কেন আবার ঐ সান না ফান এর কথা।বাদরের মত লাফাতে লাফাতেই তো সামনে আসলো।তাই তো কোল্ড ড্রিংকস তার উপর পরলো।
—সব দোষ এখন তার তুমি কিছুই করোনি।
পিছন থেকে কথাটা বলে তুশি ইশফার সামনে এসে দাড়ালো।
ইশফা তুশির দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বলল….
—আসতে এতো দেড়ি হল কেন?আগে না আসতে বলছি।
তুশি বড় করে একটা হাই দিয়ে বলল….
—তোর জন‍্য আমার সাধের ঘুম হারাম কইরা আইছি ছেড়ি শুকরিয়া আদায় কর।
ইশফাঃপ‍্যাচাল বন্ধ কইরা আগে ঐ বাদরেরে খোজ।
রিধিঃআরে ভাইয়া তো তোর জন‍্য অডিটোরিয়াম রুমে বসে আছে।আমি এই মাত্র দেখে আসলাম।
ইশফা রিধির দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল….

—কোন ভাইয়া?আর তোর ভাইয়া আমার জন‍্য বইসা থাকবো কেন?
ইশফার কথা শুনে রিধি আমতা আমতা করতে লাগলো।ফট করে তুশি বলল…..
—ঢং কোন ভাইয়া জিগ্যেস করছে।তুমি জানো না কোন ভাইয়া?তুই যার কথা বলছিস রিধি তার কথাই বলছে।আজকে তো তুই তারে শার্ট গিফরোট করবি অন্তরে অন্তরস্থল থিকে তাই সে অধিক আগ্রহে তোমার অপেক্ষায় বসে আছে বালিকা।
ইশফা একবার তুশির দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে রিধিকে বলল….
—চল রিধি।এই তার ছিড়া মেন্টেলের আমাদের সাথে আশার দরকার নাই।
তুশি আরেকটা হাই দিয়ে বলল….
—যা যা তোরাই যা।আমি বরং ক্লাশে বইসা একটু ঘুমাইয়া নেই।
ইশফা তুশির পিঠে এক তাল ফালাতেই তুশি হালকা চেচিয়ে বলল…..
—ঐ ছেমড়ি তোর সমস‍্যা কি?মারোস ক‍্যান?
ইশফা কিছু না বলে তুশির দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে সামনের দিকে হাটা ধরল।

সান অডিটোরিয়াম রুমে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।ইশফা,রিধি,তুশি বাহিরে দাড়িয়ে আছে।ইশফা এতোক্ষন সাহস দেখালেও এখন কেন যেন সান এর সামনে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না।ইশফা তুশির হাতে শপিং ব‍্যাগটা ধরিয়ে দিয়ে বলল…..
—যা এটা দিয়ে আয়।আমি এখানেই আছি।
তুশি সাথে সাথে শপিং ব‍্যাগটা ইশফার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল…..
—আকাম করছেন নিজে,নিজেই যান।আমি পারতাম না।
ইশফা তুশির দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে রিধির দিকে তাকাতেই রিধি হাত জোড় করে বলল…..
—মাপও চাই দোয়াও চাই।আমি ঐ সিংহের গুহায় যাবো না।তারে দেখলেই আমার ভয় করে।কেমন করে তাকায়।আমি পারবো না।
ইশফা রাগ দেখিয়ে বলল….

—তোদের যেতে হবে না।আমিই যাবো।সব কয়টা ভীতু।
তুশিঃতুমি যখন এতো সাহসী তাহলে তুমিই যাও।আমগো কও ক‍্যান।
ইশফা রাগি গলায় বলল…..
—যাচ্ছিই তো।তোর বলতে হবে না।
ইশফা গুটিগুটি পায়ে সান এর সামনে গিয়ে শপিং ব‍্যাগটা সামনে ধরে বলল…..
—এটা আপনার।

মনের পিঞ্জরে পর্ব ২

আওলাদ খান (জিদানের বাবা )চেয়ারে বসে রাগি চোখে তাকিয়ে আছেন হাফসা বেগমের দিকে(জিদানের মা)।স্ত্রীর মুখে ছেলের ব‍্যপারে সব কথা শোনার পর থেকেই সে রেগে আছে।স্বামীকে এমন রেগে তাকিয়ে থাকতে দেখে হাফসা বেগম ভয়ে গুটিয়ে রয়েছেন।আওলাদ খান গম্ভীর গলায় বলল….
—ছেলে কবে বাড়ি থেকে বের হয়েছে?
হাফসা বেগম কাপা কাপা গলায় বলল….
—কালকে।
কথাটা শোনার সাথে সাথেই আওলাদ খান সামনের চেয়ারে লাথি দিয়ে চেচিয়ে বললেন…..

—ও কালকে বাড়ি থেকে বেড়িয়েছে আর আজ তুমি আমাকে বলছো?কেন গিয়েছে ও?কি নেই আমার?টাকা-পয়সা কোনটার তো অভাব নেই।তাহলে কেন ও আরেক জনের দুয়ারে ভিক্ষা করতে গেছে?কার জন‍্য আমি এতো খাটছি?কার সুখের কথা ভেবে আমি এতো কিছু করছি?কি নেই আমার, বল কিসের অভাব এখানে?
—সুখ।সুখের অভাব এখানে।টাকা-পয়সা থাকলেই তো আর হয় না।সুখটা তো লাগবে।টাকা-পয়সা ইট,পাথরের বড় দালান থাকলেও এখানে সুখ নেই।
কথাগুলো মনে মনে বলে চোখের পানি ছেড়ে দিলেন হাফসা বেগম।চোখের পানি ফালানো ছাড়া সে আর কিছুই করতে পারবে না।

মনের পিঞ্জরে পর্ব ৫,৬