মনের পিঞ্জরে পর্ব ৫,৬ || Ariyana Nur

মনের পিঞ্জরে পর্ব ৫,৬
Ariyana Nur

সান ভার্সিটি থেকে রেগে বাড়িতে চলে এসেছে।‍বাড়িতে ঢুকেই দেখে সিনথিয়া আর তার দাদু মিলে ডিজে গান ছেড়ে নাচ করছে।দাদুর নাচ বলতে সোফায় বসে সে হাত পা নাড়াচ্ছে।সান রেগে গিয়ে গান বন্ধ করে দিল।গান বন্ধ হওয়াতে সিনথিয়ার নাচ থেমে গেলো।সানকে পাশে দাড়িয়ে থাকতে দেখে তার আর বুঝতে বাকি রইল না গান কে বন্ধ করেছে।সিনথিয়া বিরক্ত হয়ে বলল….
—উফ্ ভাই গান কেন বন্ধ করলে?নাচার একটা মুড চলে এসেছিলো।মুডটাই খারাপ করে দিলে।
সান সিনথিয়াকে এক রাম ধমক দিয়ে বলল….

—সারাদিন তো শুধু বাদরের মত ফালাফালি করিস।পড়ালেখা নেই?যা পড়তে বস।
কথাটা বলেই সান গটগট করে রুমে চলে গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিল।
দাদু সানের যাওয়ার দিকে সন্দেহর চোখে তাকিয়ে বলল….
—এর আবার কি হল?এমন গরম হয়ে আছে কেন?
সিনথিয়া ভেংচি কেটে বলল…

—কি আর হবে দেখো গিয়ে নিশ্চই কোন ঝামেলা করে এসেছে।নিজে সারাদিন ঘুরে বেরায় আর আমাকে বলে পড়তে বসতে।আমার মত মাসুম একটা মেয়ের উপর হুকুম চালাস না দেখিস তোর কপালে একটা জল্লাদ বউ জুটবে।মিলিয়ে নিস আমার কথা।
দাদু সিনথিয়ার কথা শুনে হাসতে হাসতে বলল…..
—জল্লাদ বউ জুটলে তো তোরি সমস‍্যা।তোরি তো চুল ছিড়বে।
—মোটেও না।আমার ভাবী আমার চুল ছিড়বে না।আমাকে খুব আদর করবে।ভাবী আসলে আমি আর ভাবি মিলে ওর চুল ছিড়বো।হনুমান একটা সব সময় আমাকে বকে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ইশফা রুম জুড়ে পায়চারী করছে আর “মি” দিয়ে সেভ করা নাম্বারটাতে বার বার কল করছে।কিন্তু যাকে ফোন দিচ্ছে তার ফোন ধরার কোন নাম গন্ধ নেই।ইশফার রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।হাতের ফোন টা বিছানায় ছুড়ে মেড়ে বিছানার এক কোনে মাথা চেপে বসে রইল।
ইশফার এমন হুট করে রেগে যাওয়া আর এমন অদ্ভুত কান্ড করার কারণ হল এলি।ইশফার রাগ বরাবরই একটু বেশি।কেউ তাকে কিছু বললে সে তাকে ছেড়ে দেয় না।ইশফার ক্লাশ শেষে করিডোর দিয়ে যাবার সময় এলি ইশফার সামনে এসে দাড়ায়।সান এর গায়ে তখন কোল্ড ড্রিংকস লাগার কারনে ইশফাকে যা না তাই শুনিয়ে দেয়।ইশফা প্রথমে চুপ করে থাকলেও এলি যখন শার্ট নিয়ে খোটা দেয় আর তার ফ‍্যেমিলিকে নিয়ে বাজে কথা বলে তখন সেও দু’কথা শুনিয়ে দেয়। এলিকে কথা শুনিয়ে যাওয়ার সময় সামনে সান কে দেখতেই তার রাগটা আরো বেড়ে যায়।তাই তো রাগ ঝাড়তে তখন এমন একটা কান্ড করেছে।

ইশফা মাথা চেপে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর তার ফোনটা বেজে উঠল। ফোন বাজতেই এক হাত মাথা থেকে সরিয়ে ফোনের দিকে তাকালো।ফোনের স্ত্রিনে “মি” লিখাটা দেখে ইচ্ছে মত ঝাড়ি দেবার প্রস্তুতি নিয়ে ফোন রিসিভ করতেই ভেসে এল…..
—সরি সরি সরি আসলে আমি ওয়াসরুমে ছিলাম।তাই ফোন ধরতে পারিনি।প্লিজ রাগ করো না বেবি…..
ইশফা রেগে কটমট করে বলল…..

—খবরদার আমাকে ও সব ভেবি,টেক্সি বলে ডাকবে না।
—ঠিক আছে ঐ সব ভেবি,টেক্সি বলবো না।জানু তো বলতে পারবো।তাই না জানু…..
—আমি এখন ফাজলামোর মুডে নেই।
—তা কোন মুডে আছো তুমি?
—দেখো ফাজলামি পরে করো।আগে বল কাজ হয়েছে?শার্ট কিনেছো?
—না যাবো এখন কিনতে।শার্টের সাইজ বল আর কালার বল।
ইশফা শুকনো ঢোক গিলে বলল…..
—কালার আর সাইজ?
—তা ছাড়া কিনবো কি ভাবে?
ইশফা একটু ভেবে বলল….
—কালারটা অফ হোয়াইট কালার হবে মনে হয়?
—অফ হোয়াইট নাকি ময়লা হোয়াইট শার্ট পরে আসার কারনে অফ হোয়াইট মনে হয়েছে কোনটা?(হাসতে হাসতে)
ইশফা হালকা চেচিয়ে বলল…..

—তুমি….
অপর পাশ থেকে হাসতে হাসতে বলল…..
—ওকে অফ হোয়াইট কালার আর সাইজ?
—আমি কি করে সাইজ বলবো?
—তা আমি কি জানি?সব সময় বলি মাথাটা একটু ঠান্ডা রাখতে।না তা করবে কেন।পারে শুধু মাথা গরম করে চলতে।
—তুমি আমাকে বকছো।লাগবে না তোমার শার্ট কেনা।
—আসছে শার্ট কেনা লাগবে না বলতে।এখন রাগ না দেখিয়ে সাইজ বল।
—আরে আমি কি করে বলবো?তুমি মাপ দেখে একটা কিনে নিও।
—বললেই হল।মাপ দেখে একটা কিনে নিও।আমি তো তাকে দেখিও নি।সে দেখতে আমাদের চেনা জানা দেখতে কারো মত হবে কিনা ভেবে বল।
ইশফা কিছুক্ষন ভেবে আনমনে বলল…..

—ভাইয়ার মত।
কথাটা বলতে না বলতেই অপর পাশ থেকে আর কোন কথা না বলে লাইন কেটে দিল।ইশফা অপর পাশ থেকে কথার আওয়াজ না পেয়ে ফোন হাতে নিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়লো।

ইশফা ভার্সিটিতে আসার পর থেকে সান কে খুজে যাচ্ছে।কিন্তু কোথাও তাকে পাচ্ছে না।রিধি হাপাতে হাপাতে ইশফার সামনে এসে বলল…..
—ইশু কখন থেকে ডাকছি শুনতে পারছিস না।আর এদিক ওদিক তাকিয়ে কাকে খুজছিস?
ইশফা এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল….
—মিঃবাদর আর তার চেলাদের।
রিধি হালকা চেচিয়ে বলল….

—হোয়াট? কে বাদর?কার কথা বলছিস তুই ইশু?
—এই ইশু বলা বন্ধ কর।ইশু আমা….পুরো নাম ধরে ডাক অথবা অন‍্য নামে ডাক।
—আচ্ছা ঠিক আছে তা ডাকবো।এবার বল তুই কার কথা বলছিস?
—কেন আবার ঐ সান না ফান এর কথা।বাদরের মত লাফাতে লাফাতেই তো সামনে আসলো।তাই তো কোল্ড ড্রিংকস তার উপর পরলো।
—সব দোষ এখন তার তুমি কিছুই করোনি।
পিছন থেকে কথাটা বলে তুশি ইশফার সামনে এসে দাড়ালো।
ইশফা তুশির দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বলল….
—আসতে এতো দেড়ি হল কেন?আগে না আসতে বলছি।
তুশি বড় করে একটা হাই দিয়ে বলল….
—তোর জন‍্য আমার সাধের ঘুম হারাম কইরা আইছি ছেড়ি শুকরিয়া আদায় কর।
ইশফাঃপ‍্যাচাল বন্ধ কইরা আগে ঐ বাদরেরে খোজ।
রিধিঃআরে ভাইয়া তো তোর জন‍্য অডিটোরিয়াম রুমে বসে আছে।আমি এই মাত্র দেখে আসলাম।
ইশফা রিধির দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল….

—কোন ভাইয়া?আর তোর ভাইয়া আমার জন‍্য বইসা থাকবো কেন?
ইশফার কথা শুনে রিধি আমতা আমতা করতে লাগলো।ফট করে তুশি বলল…..
—ঢং কোন ভাইয়া জিগ্যেস করছে।তুমি জানো না কোন ভাইয়া?তুই যার কথা বলছিস রিধি তার কথাই বলছে।আজকে তো তুই তারে শার্ট গিফরোট করবি অন্তরে অন্তরস্থল থিকে তাই সে অধিক আগ্রহে তোমার অপেক্ষায় বসে আছে বালিকা।
ইশফা একবার তুশির দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে রিধিকে বলল….
—চল রিধি।এই তার ছিড়া মেন্টেলের আমাদের সাথে আশার দরকার নাই।
তুশি আরেকটা হাই দিয়ে বলল….

—যা যা তোরাই যা।আমি বরং ক্লাশে বইসা একটু ঘুমাইয়া নেই।
ইশফা তুশির পিঠে এক তাল ফালাতেই তুশি হালকা চেচিয়ে বলল…..
—ঐ ছেমড়ি তোর সমস‍্যা কি?মারোস ক‍্যান?
ইশফা কিছু না বলে তুশির দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে সামনের দিকে হাটা ধরল।
??????
সান অডিটোরিয়াম রুমে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।ইশফা,রিধি,তুশি বাহিরে দাড়িয়ে আছে।ইশফা এতোক্ষন সাহস দেখালেও এখন কেন যেন সান এর সামনে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না।ইশফা তুশির হাতে শপিং ব‍্যাগটা ধরিয়ে দিয়ে বলল…..
—যা এটা দিয়ে আয়।আমি এখানেই আছি।
তুশি সাথে সাথে শপিং ব‍্যাগটা ইশফার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল…..

—আকাম করছেন নিজে,নিজেই যান।আমি পারতাম না।
ইশফা তুশির দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে রিধির দিকে তাকাতেই রিধি হাত জোড় করে বলল…..
—মাপও চাই দোয়াও চাই।আমি ঐ সিংহের গুহায় যাবো না।তারে দেখলেই আমার ভয় করে।কেমন করে তাকায়।আমি পারবো না।
ইশফা রাগ দেখিয়ে বলল….
—তোদের যেতে হবে না।আমিই যাবো।সব কয়টা ভীতু।
তুশিঃতুমি যখন এতো সাহসী তাহলে তুমিই যাও।আমগো কও ক‍্যান।
ইশফা রাগি গলায় বলল…..
—যাচ্ছিই তো।তোর বলতে হবে না।
ইশফা গুটিগুটি পায়ে সান এর সামনে গিয়ে শপিং ব‍্যাগটা সামনে ধরে বলল…..
—এটা আপনার।

আওলাদ খান (জিদানের বাবা )চেয়ারে বসে রাগি চোখে তাকিয়ে আছেন হাফসা বেগমের দিকে(জিদানের মা)।স্ত্রীর মুখে ছেলের ব‍্যপারে সব কথা শোনার পর থেকেই সে রেগে আছে।স্বামীকে এমন রেগে তাকিয়ে থাকতে দেখে হাফসা বেগম ভয়ে গুটিয়ে রয়েছেন।আওলাদ খান গম্ভীর গলায় বলল….
—ছেলে কবে বাড়ি থেকে বের হয়েছে?
হাফসা বেগম কাপা কাপা গলায় বলল….
—কালকে।
কথাটা শোনার সাথে সাথেই আওলাদ খান সামনের চেয়ারে লাথি দিয়ে চেচিয়ে বললেন…..

—ও কালকে বাড়ি থেকে বেড়িয়েছে আর আজ তুমি আমাকে বলছো?কেন গিয়েছে ও?কি নেই আমার?টাকা-পয়সা কোনটার তো অভাব নেই।তাহলে কেন ও আরেক জনের দুয়ারে ভিক্ষা করতে গেছে?কার জন‍্য আমি এতো খাটছি?কার সুখের কথা ভেবে আমি এতো কিছু করছি?কি নেই আমার, বল কিসের অভাব এখানে?
—সুখ।সুখের অভাব এখানে।টাকা-পয়সা থাকলেই তো আর হয় না।সুখটা তো লাগবে।টাকা-পয়সা ইট,পাথরের বড় দালান থাকলেও এখানে সুখ নেই।
কথাগুলো মনে মনে বলে চোখের পানি ছেড়ে দিলেন হাফসা বেগম।চোখের পানি ফালানো ছাড়া সে আর কিছুই করতে পারবে না।

ইশফা ভার্সিটিতে এসে ক্লাশরুমে ঢুকতে না ঢুকতেই রিধি এসে ইশফাকে ঝেকে ধরেছে।
রিধিঃকি হয়েছিলো তোর?দুদিন ধরে তোর কোন খবর নেই কেন?কালকে ভার্সিটিতে আসিস নি কেন?জানিস কত টেনশনে ছিলাম?তোর ফোন নাম্বারটাও নেই যে তোর কোন খোজ নিব।
ইশফাঃএইটু দম ছেড়ে কথা বল।এক সাথে এতো প্রশ্নের উওর কিভাবে দিব।
রিধিঃআগে একে একে সব প্রশ্নের উওর দে পরে দম ছাড়া যাবে।
ইশফাঃআমি ঠিক আছি।কিছুই হয়নি আমার।ফুপির বাসায় গিয়েছিলাম শুক্রবার।ফুপি আসতে দেয়নি।তাই শনিবার ফুপির বাসায় থেকে ওখান থেকেই আজ ভার্সিটিতে আসা।
রিধি কোমরে হাত দিয়ে রাগি গলায় বলল…..

—তুই এদিকে বেড়িয়ে,খেলে ঘুড়ে বেড়াচ্ছিস আর তোর চিন্তায় আমাদের জান যায় যায় অবস্থা।
ইশফাঃআরে রাগ করছিস কেন?যা এর পরের বার তোকেও সাথে নিয়ে যাব।
রিধিঃতোর সাথে যাওয়া লাগবে না আমার।এখন আগে ফোন নাম্বার দে।
ইশফাঃদিচ্ছি দিচ্ছি এতো রাগ করতে হবে না।

ইশফা,তুশি,রিধি কেন্টিনে বসে আছে।খাওয়া-দাওয়ার সাথে সাথে তাদের গল্পের ভান্ডার নিয়ে বসেছে।গল্পের মধ‍্যে তুশি ইশফাকে খোচাতে লাগল।কয়েকবার খোচা দেবার পর ইশফা বিরক্ত হয়ে বলল…..
—ঐ ছেড়ি কি হইছে তোর?এমন খোচাইতাছোস কেন?
তুশি সামনের দিকে ইশারা করে বলল…..
—দেখ ঐ ছেমরায় তোর দিকে কেমনে তাকাইয়া রইছে।
ইশফাঃতাকাইলে তাকাক।তাতে আমার কি?ওর চোখ দিয়া ও তাকাইছে।
তুশিঃআরে দেখনা একবার তাকিয়ে কেমন আগুন চোখে তোর দিকে তাকাইয়া রইছে।মনে হইতাছে তোরে তার চোখের আগুনে জ্বালাইয়া দিব।

ইশফাঃদিতে থাক।তাতে আমার কি।
রিধিঃআরে একবার তাকিয়ে দেখোই না চিনোস কিনা।
ইশফা ওদের কথায় বিরক্ত হয়ে উল্টোদিকে ঘুরে বলল…
—কোন ছেলেটা।
তুশিঃঐ যে দেখ হাতে বেন্ডেজ করা ছেলেটা।
ইশফা ছেলেটাকে ভালোমত দেখে ঠিক করে বসল।
তুশিঃতুই কি চিনোস তাকে?
ইশফাঃহুম।এইটারেই থাবরা মারছিলাম।
তুশিঃকিহহহ?তুই এই হ‍্যান্ডস‍াম পোলাডারে থাবরা মারছোস?
ইশফাঃএতোই যখন তোর কাছে হ‍্যান্ডসাম লাগতাছে এক কাজ কর তুই যাইয়া গলায় ঝুইলা পর।
তুশি ইশফার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকাতেই ইশফা বলল……
—এমনে তাকাইয়া না থাইকা তাড়াতাড়ি খাবার শেষ কর।তোর……
ইশফা আর কিছু বলার আগে সামনের দিকে চোখ পরতেই দেখলো সান,নিরব ওদের দিকে আসছে।ইশফা হিজাব ঠিক করে কেটে পরার জন‍্য বলল…..

—তোরা আয় আমি ক্লাশের দিকে যাচ্ছি।
ইশফা দাড়াতেই রিধি ইশফার হাত ধরে বলল….
—কই যাস তুই?এক সাথে আসছি এক সাথে যামু।
ক্লাশ শুরু হওয়ার আরো ১৩মিনিট বাকি আছে।(হাতের ঘড়ি দেখে)
ইশফাঃতাতে কি হয়েছে আমার না কিছু বই লাগবে।আমি একটু লাইব্রেরী থেকে ঘুড়ে আসি।
রিধিঃআমারও বই লাগবে ছুটির পরে এক সাথে যাওয়া যাবে।এখন চুপচাপ এখানে বসেন।
নিরব ওদের সামনে এসে বলল….
–এই যে পিচ্ছি কেমন আছো তুমি?
ইশফ রিধির দিকে একবার চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বলল…
— আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো ভাইয়া।আপনি কেমন আছেন?
নিরব চেয়ার টেনে বসে মুচকি হেসে বলল……
—এতোক্ষন ভালো ছিলাম না।তোমাকে দেখার পর ভালো হয়ে গেছি।
ইশফা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল…..
—মানে???

নিরবঃআরে দাড়িয়ে আছো কেন?বস বস।তোমার শরীরের অবস্থা এখন কেমন?
ইশফা ভদ্রতার খাতিরে চেয়ারে বসে বলল……
— আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো ।
সান এতোক্ষন পাশে দাড়িয়ে একজনের সাথে কথা বলছিলো।কথা শেষ করে ইশফার মুখামুখি হয়ে চেয়ার টেনে বসে পরল।
নিরব বসে বসে ইশফাকে এটা সেটা জিগ্যেস করতে লাগলো।ইশফা না চাওয়া শর্তেও হু হা করে তার উওর দিতে লাগলো।
মুহূর্তের মধ‍্যে কেন্টিন খালি হয়ে যেতে লাগলো।সবাইকে একে একে কেন্টিন থেকে চলে যেতে দেখে ইশফা বলল…….
—চল তোরা সবাই চলে যাচ্ছে।আসি ভাইয়া।
কথাটা বলে দাড়াতেই নিরব বলল……
—এতো তাড়া কিসের।বস তোমাদের সাথে কথা আছে।
ইশফা নিরবের কথা সুনে চুপচাপ বসে রইল।
একটু পর কেন্টিন পুরো খালি হতেই সান নড়েচড়ে বসে বলল….

—তো মিসঃ ইশফা খান ইফা কেমন আছেন আপনি?পেশার ঠিক আছে তো?আজ আবার ভয়ে সেন্সলেস হয়ে যেয়ো না।যে আমার গায়ে ইন ছুড়ার সাহস রাখে সে নাকি আবার আমার এক ধমকেই সেন্সলেস হয়ে যায়।
সান এর এমন পিন মারা কথা শুনে ইশফা নিজের রাগটাকে সাইডে রেখে দাতে দাত চেপে বলল…..
—তেমন কিছুই না।সাহস আমার বরাবরই একটু বেশি।
সানঃ হুম তা তো দেখতেই পারছি।সাহসের নমুনা তো আপনি দেখিয়ে দিয়েছেন।তা এবার কাজের কথায় আসি।আমার গাড়িতে শার্ট রেখেছে কে?

(সেদিন ইশফা যাওয়ার সময় সুন্দর করে একটা চিরকুট লিখে শপিং ব‍্যাগের সাথে লাগিয়ে সান এর গাড়িতে রেখে যায়।চিরকুট টা অবশ‍্য তুশি লিখে দিয়েছিল।চিরকুটে লিখা ছিল…….
“প্লিজ ভাইয়া ছোট বোন মনে করে আমার ভুল ক্ষমা করে দিবেন।শার্ট টা রেখে গেলাম।প্লিজ রাগ করবেন না।ইন ছুড়ে আপনার শার্ট নষ্ট করার জন‍্য নয়।ছোট বোনের পক্ষ থেকে বড় ভাইয়ের জন‍্য গিফট হিসেবে ।যদি ক্ষমা না করতে পারেন তাহলে রাস্তায় কোন ফকির মিসকিনকে শার্টটা দিয়ে দিয়েন।”)
ইশফা এক পলক তুশির দিকে তাকিয়ে নিচু গলায় বলল….

—আমি।
সানঃচিরকুটে কি লিখেছিলে?
রিধি সানের দিকে তাকিয়ে দাত কেলিয়ে হেসে বলল…..
—কেন ভাইয়া আপনি লিখা পড়তে পারেন নি?লিখাগুলো তো খুব স্পস্ট ছিল।এমনকি খুব বড় করেই লিখা ছিল।সমস‍্যা নেই আমার মনে আছে কি লিখা ছিল তাতে।আমি বলছি,প্লিজ ভাইয়া ছোট বোন মনে করে……
সান রিধিকে থাকিয়ে দিয়ে রিধির দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বলল…..
—আমি উপরে যেই চিরকুট ছিল সেটার কথা বলছি না।শার্টের মধ‍্যে যে চিরকুট ছিল সেটার কথা বলছি স্টুপিট।
কথাটা শোনার সাথে সাথে ইশফার চোখ বড় বড় হয়ে গেল।ইশফা হালকা চেচিয়ে বলল…..
—কিহহহ?শার্টের মধ‍্যে চিরকুট ছিল?কি লিখা ছিল তাতে?
সান ভ্রু কুচকে বলল…..

—এমন ভাব করছো মনে হয় নিজে জানোই না কি লিখা ছিল?
ইশফাঃনিজে জানলে আপনাকে আর কষ্ট করে জিগ্যেস করতাম না তাতে কি লিখা ছিল।টাইম নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি বলুন কি লিখা ছিল?
সান পকেট থেকে একটা চিরকুট বের করে টেবিলের উপর রেখে রাগি গলায় বলল….
—তুমিই পড়ে দেখো কি লিখেছিলে।
ইশফা চিরকুটটা খুলে হাতের লিখা দেখতেই তার চোখ বড় বড় হয়ে গেল।এই হাতের লিখা যে কার তা চিনতে তার একটুও ভুল হল না।ইশফা দ্রুত চিরকুটটা পড়তে লাগলো।চিরকুটে লিখা ছিল…….
“বাদরের গলায় মুক্তার মালা পরালে বাদরকে দেখতে যেমন লাগে আপনি এই শার্টটা পরলে ঠিক একি রকম লাগবে।অবশ‍্য আপনাকে আমি আপনার অগোচরে বাদর বলেই ডাকি।চাপ নিবেন না আমি না হয় বাদর ডাকি তাতে কি হয়েছে।আপনি তো জানেন আপনি বাদর না মানুষ?”

মনের পিঞ্জরে পর্ব ৩,৪

চিরকুট টা পড়ে ইশফা মাথা নিচু করে বসে রইল।রাগে তার চোখ,মুখ লাল হয়ে গেলো।হঠাৎ তার ফোনটা বেজে উঠার কারনে মাথা উচু করে ফোনটা ব‍্যাগ থেকে বের করে দেখলো ফোনের স্কিনে “মি”লিখাটি জ্বলজ্বল করছে।ইশফা কলটা কেটে দিয়ে ফোনটা শব্দ করে টেবিলের উপর রাখলো।সবাই এতোক্ষন ধরে ইশফার দিকে ড‍্যাবড‍্যাব করে তাকিয়ে রয়েছে।ইশফাকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে সান কিছু বলার জন‍্য মুখ খোলার আগেই ইশফার ফোনটা আবার বেজে উঠল।সানের চোখ ইশফার ফোনের দিকে পরতেই দেখতে পেল স্কিনে উপর হার্ট সেপের একটা পিক দেয়া পিকচার ভেসে উঠেছে।যার মধ‍্যে সুন্দর করে ইংলিশ ফন্টে লিখা মাই লাভ।আর উপরে ইংলিশ ফন্টে “মি” লিখাটা জ্বলজ্বল করছে।ইশফা এবারো ফোনটা কেটে দিল।৩য় বার কল আসতেই ইশফা রেগে ফোন রিসিভ করে রাগি গলায় বলল….

—শয়তান,বান্দর,কুত্তা,বিলাই,টিকটিকি,গরিলা,হনুমান তোরে এখন সামনে পাইলে যে আমি কি করতাম তা আমি নিজেও জানি না।
অপর পাশ থেকে ফুপিয়ে কান্নার আওয়াজ পেতেই ইশফার রাগ পানি হয়ে গেল।ইশফা চিন্তিত সুরে বলল…..
—কি হয়েছে তোমার?কথা বলছো না কেন?
—……
—কি হল কথা বলছো না কেন?
—………..
—কোথায় আছো তুমি?
—বা-বাড়িতে।
— আমি এখনি আসছি।
কথা শেষ হতেই তুশি বলল……
—কিরে কি হয়েছে?কার ফোন ছিল?
ইশফাঃআসছি।পরে সব বলল।

ইশফা আর কোন কথা না বলেই তাড়াতাড়ি করে চলে গেল।সবাই ইশফার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।সান চোখ মুখ কঠিন করে সামনের চেয়ারে এক লাথি দিয়ে ভেঙে গটগট করে হেটে চলে গেল।
(সান এর আবার কি হল?মিটার এমন গরম হল কেন?)

মনের পিঞ্জরে পর্ব ৭,৮