মনের পিঞ্জরে পর্ব ৭+৮ || Ariyana Nur

মনের পিঞ্জরে পর্ব ৭+৮
Ariyana Nur

ছাদের এক কোনে কফির মগ হাতে নিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে জিদান।দৃষ্টি তার ব‍্যস্ত নগরীর দিকে।হঠাৎ রাস্তায় এক ছোট মেয়ের দিকে চোখ পরতেই তার চোখ সেখানেই আটকে গেল।মেয়েটার বয়স অনুমানিক ৭/৮বছর হবে।মেয়েটা সুন্দর একটা লং গাউন পরেছে।দূরের থেকে মেয়েটাকে পুরো পুতুলের মত লাগছে।মেয়েটা পাশেষ একজন বয়ষ্ক লোকের হাত ধরে রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে।আর হাত নাড়িয়ে একেক কথা বলছে।মেয়েটাকে দেখের পর জিদানের চোখের সামনে ভেসে উঠলো পুরোন কিছু স্মৃতি।

—ভাইয়া,ভাইয়া দেখো তো আমাকে কেমন লাগছে?
জিদান টেবিলে পড়াশুনা করছে।বইয়ের দিকে চোখ রেখেই বিরক্ত হয়ে বলল…..
—দেখ ইশু আমি পড়ছি আমাকে ডিস্টাব করিস না।
—পড়ছো তো কি হয়েছে।একটু কি তাকিয়ে দেখে বলা যায় না।
—তুই তো পেত্নী।নতুন করে তোকে কি দেখবো।পেত্নী যতই পরি সাজার চেষ্টা করুক না কেন তাকে পেত্নীই লাগবে।
ইশু কটমট করে বলল…..
—তুই পেত্নী ,তোর বউ পেত্নী।
—মাথা মোটা আমি কিভাবে পেত্নী হব?
—তুই পেত্নী হতে যাবি কেন তোর বউ হবে পেত্নী।
জিদান রাগ দেখিয়ে বলল…..
—ঠাটিয়ে দিব এক চর।তুই আবার আমার সাথে তুই তোকারি করছিস কেন?
ইশু ভেংচি কেটে বলল…..
—হুহ আমার মনে হয় হাত নাই।
—দেখ তুই কিন্তু ইদানিং বেশি বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস।আমি কিন্তু চাচ্চুর কাছে বিচার দিব।
—দে বিচার না করলো কে।তুই আমার নামে একটা বিচার দিবি আর আমি তোর নামে বড় মার কাছে হাজারটা দিব।তাও বানিয়ে বানিয়ে হুহ…..

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

জিদান দাতে দাত চেপে বলল….
—বেয়াদব মেয়ে বের হ তুই আমার রুম থেকে।
ইশু বেডে আরাম করে বসে বিরবির করে বলল…..
—আসছে আমাকে এই রুম থেকে বের করতে।বিয়েটা শুধু হতে দে।তখন দেখবি কে কাকে রুম থেকে বের করে।
জিদান সব শুনেও না শোনার ভান করে ভ্রু কুচকে বলল…
—কি বিরবির করছিস।বললাম না রুম থেকে বের হ।
—ভাইয়া আসবো?
জিদান সামনের দিকে তাকিয়ে বলল…..
—অনুমতি নেয়ার কি আছে।আয় ভিতরে।
মেয়েটি গুটিগুটি পায়ে ভিতরে আসতেই জিদান হাসি মুখে বলল…..
—বাহ আমাদের বুচিকে তো মাশাল্লাহ্ অনেক সুন্দর লাগছে শাড়িতে।তা হঠাৎ শাড়ি পরলি কেন?
মেয়েটি মুচকি হেসে বলল….
—ধন‍্যবাদ ভাইয়া।শাড়ির কথা আর বলোনা আসলে ও….
আর কিছু বলার আগেই ইশু জিদানের দিকে তেড়ে এসে কোমরে হাত রেখে বলল……

—ও আসতে না আসতেই ওরে সুন্দর লাগতাছে তা বললে।আর আমি যে কখন থেকে জিগ্যেস করছি আমাকে কেমন লাগছে তখন কিছু বললে না কেন?আমাকে সুন্দর লাগছে বলতে কি মুখে তোমার ফোসকা পরে?
জিদান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল…..
—বুচি আর তুই কি এক হলি নাকি।তাছাড়া বুচিকে সুন্দর লাগছে তাই বললাম।আমি আবার পেত্নীদের মন রক্ষার জন‍্য মিছেমিছে তারিফ করতে পারি না।
ইশু ছলছল চোখে জিদানের দিকে একবার তাকিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
ইশুর কাজে জিদান অবাক হয়ে গেল।জিদান ভেবেছিল ইশু ওর সাথে ঝগড়া করবে।তা না করে যে এভাবে বের হয়ে যাবে তা ও ভাবতেও পারেনি।

—উফ ভাইয়া দিলে তো মেয়েটাকে কাদিয়ে।একটু সুন্দর বললে কি এমন হতো। তোমার জন‍্য কত কষ্ট করে শাড়ি পরলো সাজলো।সাথে দেখো আমাকেও বস্তা পরিয়ে রেখেছে।এখন যাও তার মান ভাঙাও।আমি কিন্তু কোন সাহায্য করতে পারবো না।
কথাটা বলে মেয়েটি ও রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।
জিদান অসহায় মুখ করে সেখানেই দাড়িয়ে ভাবতে লাগলো,তার অভিমানির অভিমান কিভাবে ভাঙাবে।
পুরোন স্মৃতি মনে করে জিদান একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল।আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতে লাগলো, এখনো বুঝি তুই এভাবেই গাল ফুলিয়ে,রাগ করে থাকিস তাই না?সেদিন তোকে দেখতে পুরো পুতুলের মত লাগছিল।মনে হচ্ছিল আমার সামনে একটা পুতুল দাড়িয়ে তার হাত নেড়ে কথা বলছে।আমার উপর তোর অনেক অভিমান জমেছে তাই নারে।তাই তো কোন খবর নিসনি আমার।তোর সব অভিমান,অভিযোগ ভাঙাতে আমি আসছি।আই এম ব‍্যাক।

ইশফা,তুশি ভার্সিটির মাঠের এক কোনে বসে রয়েছে।ইশফাকে আজ অন‍্য দিনের থেকে একটু অন‍্য রকম লাগছে।তাই তুশি কিছু জিগ্যেস করার সাহস পাচ্ছে না।
ঝড়ের গতিতে রিধি ওদের কাছে এসে ওদের পাশে বসে হাপাতে হাপাতে বলল……
—সরি রে দেড়ি তে আসার জন‍্য।আজ ভার্সিটিতে আসার ইচ্ছে ছিলো না।কিন্তু এক উজবুকের তাড়ায় আমাকে আসতে হল।
রিধির কথা শুনে তুশি একটু মুচকি হাসলো।ইশফা সেই আগের মত বসেই রয়েছে। কোন কথা বলল না।রিধি ইশফাকে চুপকরে বসে থাকতে দেখে ইশারায় তুশিকে জিগ্যেস করল ইশফার কি হয়েছে?তুশি ইশারায় বলল,সে জানে না।রিধি নজর ইশফার হাতের দিকে পরতেই রিধি ইশফার হাত ধরে চিন্তিত শুরে বলল…..
—হাতে কি হয়েছে তোর?এতো বড় বেন্ডেজ করেছিস কেন?
ইশফা রিধির থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল…..
—হাত কেটে গেছে?

তুশি ইশফাকে রিধির সাথে কথা বলতে দেখে একটু সাহস করে বলল……
—কি হয়েছে তোর?মন খারাপ কেন?
—……….
তুশি কিছুটা আচ করতে পেরে বলল……
—তুই আবার কোন ঝামেলা করিস নি তো?
ইশফাঃকোন ঝামেলাই করি নি।সোজা গিয়ে হাত ভেঙে দিয়েছি।
রিধি অবাক হয়ে বলল…..
—কি বলছিস তুই?কার হাত ভেঙেছিস?
ইশফাঃএক অমানুষের।
তুশিঃতুই কি একটু রাগটাকে কন্টল করতে পারিস না?
ইশফা রেগে বলল….
—ঐ অমানুষের জন‍্য তোমার এতো দরদ দেখাতে হবে না।বেশি কিছুই করিনি।শুধু হাত টাই ভেঙে দিয়েছি।ইচ্ছে তো করছিলো জানে মেরে দিতে।আফসোস পারিনি।

রিধিঃতোরা কিসের কথা বলছিস আমাকে একটু ক্লিয়ার করে বলবি প্লিজ।আমি তোদের কথা কিছুই বুঝছি না।
তুশিঃআমারও তো মাথা ভনভন করছে।কি হয়েছে পুরোটা ক্লিয়ার করে বল না ভাই।
ইশফাঃবলবো সব আগে আমার মাথা ঠান্ডা হতে দে।
ইশফা কথাটা বলে উদাস মনে সামনের দিকে তাকিয়ে রইল।ওরাও ইশফাকে আর কোন জোর করলো না।
ইশফা একজনকে হাসিমুখে ওদের দিকে আসতে দেখে ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকালো।চোখের ভুল ভেবে কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে পুনরায় সামনের দিকে তাকালো।ততক্ষনে লোকটি তার বড় বড় কদম ফেলে তার সামনে এসে দাড়ালো।ইশফা চোখ খুলতেই বুঝতে পারলো,না সে ভুল দেখছে না।তার সামনে সত‍্যি সত‍্যি সেই মানুষটি দাড়িয়ে আছে।সামনের মানুষটি আর কেউ নয় স্বয় জিদান।ইশফা দাড়িয়ে ছলছল চোখে জিদানের দিকে তাকিয়ে রইল।

জিদান হাসি মুখে বলল…..
—কেমন আছিস?
ইশফা কোন কথা না বলে চলে যেতে নিলেই জিদান ইশফার হাত ধরে করুন কন্ঠে বলল……
—সবাই আমার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকলেও আমি জানি তুই অন্তত মুখ ফিরিয়ে থাকবি না।তুই ও কি আমাকে ভুল প্রমান করে মুখ ফিরিয়ে নিবি?
ইশফা কোন কথা না বলে কিছুক্ষন ছলছল চোখে নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে উল্টো ঘুড়ে জিদানকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেদে উঠল।
ইশরা ক্লাশরুমে লাষ্টবেঞ্চে বসে উদাস মনে জানালার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।কলেজে আসার পর থেকে সবার মুখে ইশরা এক গানই শুনছে।নতুন টিচার আসবে,নতুন টিচার আসবে।সবাই এই এক বিষয় নিয়েই মাতামাতি করছে।সবার মুখে একি কথা, কলেজে নাকি নতুন টিচার আসবে।নতুন টিচার দেখতে কেমন হবে?সুন্দর হ‍্যান্ডস‍্যাম হবে নাকি মোটা পেটওয়ালা হবে?মেরিড না আনমেরিড হবে?রাগি হবে না কি নম্রভদ্র হবে ইত‍্যাদি ইত‍্যাদি।

ইশরার এই সব বিষয়গুলো বিরক্ত লাগে।তাই সে নিজের মত চুপচাপ করে বসে রয়েছে।
ইশরার ফ্রেন্ড লিপি এসে ইশরার পাশে বসে বলল….
—কিরে কি হয়েছে?এমন উদাস মনে বসে বসে কার কথা ভাবছিস?
—কারো কথাই ভাবছি না।আমার সবার আলোচলার টপিক গুলো যাস্ট বিরক্ত লাগছে।তাই চুপ করে এখানে বসে রয়েছি।
লিপি ইশরার কপালে,গলায় হাত ছুইয়ে বলল……
—কিরে তোর কি শরীর টরীর খারাপ নাকি?জ্বরটর এসেছে? ডাক্তার ডাকবো?
ইশরা কপালে ভাজ ফেলে বলল……
—শরীর খারাপ হইতে যাইবো কেন?দেখোস না ভালো মানুষ তোর সামনে বইসা রইছি।ডাক্তার আমারে না দেখাইয়া তুই যা ডাক্তার এর কাছে।
—তয় তুই এমনে কথা কইতাছোস কেন?
—কেমনে কথা কইতাছি।ভালোমত কথা কইলে কি তোর ভালো লাগে না?
লিপি দাত কেলিয়ে হেসে বলল…..

—না।তোর ভালো কথা আমার ভালো লাগে না।তোরে চুপচাপ থাকতে দেখতে তো আরো ভালো লাগে না।
ইশরা কিছু না বলে আবার জানালার দিকে তাকিয়ে উদাস মনে বলল……
—ভালো লাগছেনারে।মা আর ইফুর সাথে আবার ঝগড়া হয়েছে।
—কেন?কালকের বিষয়টা কি আন্টি আচ করতে পেরেছে?
—হুম ইফু যে কাল আবার ঝামেলা করেছে সেটা মা কিভাবে যেন জেনে গেছে।তাই ইফুকে অনেক বকেছে।
লিপি সান্তনা দিয়ে বলল……
—থাক মন খারাপ করিস না।ঠিক হয়ে যাবে।জানিস তো আন্টি কেমন।এসব ঝামেলা সে পছন্দ করে না।তাই ইফু আপুকে বকেকে।
—সব আমার জন‍্য হল।আমারি সব দোষ ।

—শুধু শুধু নিজের দোষ কেন দিচ্ছিস।আপু যা করেছে বেশ করেছে।ঐ রবিন অনেক বার বেরেছিল।আপু দু বার ঐ রবিনকে ওয়ার্নিং দিয়েছে যাতে তোর সাথে মিসবিহেব না করে।তারপরেও শুনেনি।আর কাল তো সব সিমা পার করে তোর সাথে খারাপ ব‍্যবহার করল।কত বড় সাহস ওর খারাপ ব‍্যবহার করেও শান্তি মিলেনি সাথে তোর হাত ধরে হাত সিগারেটে দিয়ে পুড়ে দিল।আপু যা করেছে বেশ করেছে।আপু ঐ রবিন্নারে আরো কয়েকটা লাগালে খুশি হতাম।(রেগে)
ইশরা কিছু না বলে একি ভাবে বসে রইল।কেন যেন তার এই বিষয়ে কথা বলতেই ইচ্ছে করছে না।

জিদান ইশফাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বসে আসে।ইশফা এখনো নাক টেনে কান্না করেই যাচ্ছে।সামনে রিধি আর তুশি অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।রিধির মুখে আশ্চর্যের ছাপ এর থেকে ভয়ের ছাপ বেশি ফুটে উঠেছে।রিধি ইশফা আর জিদানকে দেখার সাথে সাথে বার বার আশেপাশে তাকিয়ে কিছু একটা খোজ করছে।
জিদান ইশফার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল…..
—থাম এবার।আমি কি মরে গেছি।এমন মরা কান্না জুড়ে দিলি কেন?
জিদানের কথা শুনে ইশফা নাক টেনে রাগি গলায় বলল….
—একদম উল্টাপাল্টা কথা বলবে না।বলে দিলাম।
জিদান মুচকি হেসে বলল…..

—ঠিক আছে আর বলবো না।এবার কান্না বন্ধ কর।তোর এই নাক টেনে কান্নার কারনে তোর বোচা নাক কিন্তু আরো বোচা হয়ে যাবে।
ইশফা জিদানের থেকে সরে কপট রাগ দেখিয়ে বলল…..
—তুমি আবার আমার নাক নিয়ে কথা শুনাচ্ছো।একদম আমার নাক নিয়ে কোন কথা বলবে না।আমার নাক যথেষ্ট খাড়া আছে।
জিদান ইশফার নাক টেনে দিয়ে মুচকি হেসে বলল……
—এই তো আমার বুচি তার রুপে ফিরে এসেছে।আসলে আমার বুচি বোনটাকে এই রাগি রুপেই মানায়। এমন ছিদ কাদুনে রুপে নয়।
জিদানের কথা শুনে ইশফা কান্নামাখা মুখে হাসি ফুটে উঠল।
তুশি অবাক হয়ে বলল……
—ইফু ইনিই কি জিদ ভাইয়া।
ইশফা চোখের পানি মুছে বলল….
—হুম ইনিই আমার রাগি ভাইয়া মানে আমার জিদান ভাইয়া।
রিধি অবাক হয়ে বলল……

—ইনি তোর ভাই!না মানে তুই না বলেছিলি তোর কোন ভাই নেই?
ইশফাঃহুম আমি আপন ভাইয়ের কথা বলেছিলাম।ভাইয়া তো আমার চাচাতো ভাই।
রিধি একটা বড় করে নিশ্বাস ফেলে বিরবির করে বলল…..
—tnx আল্লাহ্ বাচালে।তা না হলে সিডর, ঘূর্ণিঝড় সব শুরু হয়ে যেত।মনে মনে তো ঘূর্ণিঝড়ের অভাস পাচ্ছি।নাকি শুরু হয়ে গেছে কে জানে।
ইশফাঃ ঐ রিধি একা একা কি এমন বিরবির করছিস?
রিধি ইশফার ডাকে থতমত খেয়ে বলল…..
—কিছু না।বলছি কি তোর ভাইয়া দেখতে কিন্তু অনেক হ‍্যান্ডস‍্যাম।(লাজুক হেসে)
ইশফা গর্ববোধ করে বলল…..
—আমি জানি আমার ভাই দেখতে হ‍্যান্ডস‍্যাম।জানিস আমার ভাইয়ের পিছে মেয়েদের লাইন লেগে থাকে।কিন্তু আমার বেচারা ভাই কারো দিকেই নজর দেয় না।
জিদান ইশফার মাথায় গাট্টা মেরে বলল……

—আর তেল মাখতে হবে না।আমার পরিচয় তো ওদের দিলি।আমাকেও একটু ওদের সাথে পরিচয় করিয়ে দে।
ইশফাঃওরা দুজন আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।ও তুশি(তুশিকে দেখিয়ে)ও রিধি (রিধিকে দেখিয়ে)।তুশির সাথে আমার বন্ধুত্ব ক্লাশ নাইন থেকে।আর রিধির সাথে এখানে এসে বন্ধুত্ব হয়েছে।
??????
সবাই মিলে কিছুক্ষন আড্ডা দেওয়ার পর জিদান বলল….
—আজ উঠি।আমি জানি তোর মনে অনেক প্রশ্ন রয়েছে সবগুলোর উওর পাবি।রাতে সময় করে ফোন দিস।
ইশফা মাথা নাড়িয়ে হ‍্যা বলল।
জিদান দাড়িয়ে বলল…..
—আজ আসি।ভালো থাকিস।এই যে ছোট্ট বোনরা তোমরা আবার এই ভাইকে ভুলে যেও না।(রিধি,তুশিকে উদ্দেশ্য করে)
রিধি কাদো কাদো মুখ করে বলল….
—ভাইয়া জানি আমরা দেখতে বেশি সুন্দর না।তাই বলে এভাবে ছোট বোন বলে আমাদের হৃদয় চুরমার করে দেওয়া কি ঠিক?
রিধির কথা সুনে ইশফা,তুশি মিটমিট করে হাসতে লাগলো।জিদান কিছুক্ষন অবাক হয়ে রিধির দিকে তাকিয়ে থেকে মুচকি হেসে বলল…..

—কে বলেছে তোমরা দেখতে সুন্দর না।আমার এই ছোট্ট বোনগুলো দেখতে মাশাল্লাহ্ অনেক সুন্দর।
রিধি বাচ্চাদের মত ঠোট ফুলিয়ে বলল…..
—আবার বোন।দিল টুট গেয়া।
এবার আর কেউ নিজেদের হাসি আটকিয়ে রাখতে পারলো না।সবাই দম ফাটিয়ে হাসতে লাগলো।

সান বেডের এক কোনে এক হাতে মাথা চেপে বসে রয়েছে।অপর হাত দিয়ে যে টপটপ করে রক্ত পরছে সেদিকে তার খেয়াল নেই।
সিনথিয়া দোয়া-দুরুদ পরে গুটিগুটি পায়ে সানের রুমের দরজার সামনে এসে দাড়ালো।কিছুক্ষন দরজায় দাড়িয়ে থেকে আল্লাহর নাম নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো।
সিনথিয়া সানের রুমে এসে পুরো রুমে একবার চোখ বুলিয়ে নিল।রুমের কোন জিনিস তার জায়গা মত নেই।সব কিছুই এলোমেলো হয়ে আছে।ফ্লোরে মধ‍্যে কাচের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।

(সানের রুমের এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণ হল ইশফা।একে তো সান কালকের থেকে ইশফার উপর রেগে ছিল।আর আজ যখন দূর থেকে ইশফাকে অন‍্য একটা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে দেখলো।তখন সান নিজের মনেই খেয়ালি পোলাও পাকিয়ে রাগ করে বাড়িতে এসে নিজের রাগ কমাতে রুমের জিনিসের উপর অত‍্যাচার চালিয়েছে)
সিনথিয়া বড় করে একটা নিশ্বাস নিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে পা ফেলে সানের কাছে গিয়ে বসল।
সান সিনথিয়ার উপস্থিতি বুঝতে পেরে রাগি গলায় বলল……
—সিনথি চলে যা এখান থেকে।আমাকে একা থাকতে দে।
সিনথিয়া কোন কথা না বলে সানের হাত জড়িয়ে ধরে ওর কাধে মাথা রেখে বলল…….
—ভাই আমি যে তোকে এভাবে ধরেছি,আবার মাঝে মাঝে জড়িয়ে ধরি তাতে কি আমার বর আমাকে খারাপ ভাববে?সে কি রাগ করবে আমার উপর?

মনের পিঞ্জরে পর্ব ৫+৬

সান কপাল থেকে হাত সরিয়ে রাগি গলায় বলল….
—কি সব কথা বলছিস?তোর বর আসলো কোথার থেকে?গাজা টাজা খাসনি তো আবার।দেখ আমি এখন একটুও ফাজলামোর মুডে নাই।যা ভাগ এখান থেকে।
—আরে ভাই ধর না আমার বর আছে।ধরতে অসুবিধে কোথায়?
সান জানে এই মেয়ে তার মুখের কথা না সুনে তাকে ছাড়বে না।যতোই সে রাগ দেখাক না কেন।তাই সে কথা না বাড়িয়ে রাগি গলায় বলল…..

—রাগ করার কি আছে।তুই আমার বোন। তুই আমাকে আমি তোকে জড়িয়ে ধরতেই পারি।এখানে তো রাগের কিছু দেখছি না।
—তাহলে তুই রাগ করে ঘরে সিডর, ঘূর্ণিঝড় বইয়ে বসে রয়েছিস কেন?
সান কপালে ভাজ ফেলে বলল…..
—মানে?
সিনথিয়া মুচকি হেসে বলল……
—মানে তোর জাসুস ফোন করেছিল।ভাবীর সাথে যাকে দেখে জেলাসিতে নিজেকে দেবদাস বানিয়ে ঘরে বসে রয়েছিস সে ভাবীর ভাইয়া।

মনের পিঞ্জরে পর্ব ৯+১০