মনের পিঞ্জরে পর্ব ২৬+২৭+২৮ || Ariyana Nur

মনের পিঞ্জরে পর্ব ২৬+২৭+২৮
Ariyana Nur

১৫দিন পরঃ
—কাছে থাকতে কেন আমরা মানুষের মূল‍্য বুঝিনা?কেন সব সময় নিজের মানুষটাকে হাড়িয়ে তাকে ফিরে পাওয়ার জন‍্য পথ চেয়ে বসে থাকি বলতে পারো?
আপন মনে গাড়ি ড্রাইভ করছিলো সান।ইশফা গাড়ির কাচ নামিয়ে চারোপাশে তাকিয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছিলো।সান চুপ করে গাড়ি ড্রাইভ করছিলো আর আড়চোখে ইশফাকে পর্যবেক্ষণ করছে।হঠাৎ সানের এমন কথা শুনে ইশফার সানের দিকে তাকিয়ে দেখে সান এর চেহারাটা কেমন ফেকাসে হয়ে রয়েছে।কথাটা বলে হয়তো সান উওরের আশায় চুপ করে সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করছে।
ইশফা সান এর কথার উওর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল……

—আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে?
ইশফার কথা শুনে সান ইশফার দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে বলল……
—না ঠিক আছি।
—দেখুন সব সময় কিন্তু বাড়াবাড়ি ভালো না।আপনি এই অবস্থায় না আসলেও পারতেন।আমি একাই চলে যেতে পারতাম।
সান সামনের দিকে তাকিয়ে বলল…..
—বেশি কথা বলো না তো।যা জিগ্যেস করেছি তার উওর দাও।আমি ঠিক আছি।
—বললেই হলো ঠিক আছেন।আপনারা চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে আপনি অসুস্থ।আপনি আমাকে নামিয়ে দিন।আমি এখান থেকে একাই চলে যেতে পারবো।
সান মুচকি হেসে বলল…..

—বাহ আমার কথা দেখি কত ভাবো তুমি।তা হঠাৎ আমার প্রতি এতো ভাল…..
সানকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে ইশফা বলল……
—আস্তে আস্তে বেশি ঊড়তে হবে না।আপনি অসুস্থ তাই আমি কথাগুলো বলেছি।আপনার জায়গায় অন‍্য কেউ হলেও আমি এই কথাগুলোই বলতাম।
সান মুখটা ছোট করে বলল…..
—তোমার মনে কি একটুও মায়া দয়া নেই?আমি অসুস্থ আমার মন রাখতেও তো একটু লাজুক হেসে বলতে পারতে তেমন কিছু না।আপনার চিন্তা আমি না করলে কে করবে শুনি।
ইশফা সান এর কথা বলার ভাব ভঙ্গি দেখে নিজের হাসি আটকিয়ে রাখতে পারলো না।ইশফা ফিক করে হেসে উঠল।হাসতে হাসতে বলল……

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

—ও মাই গড।মিঃসান যে কিনা সব সময় রাগি,গম্ভীর লুকে থাকে তাকে যে এই লুকে দেখবো কখনো ভাবতেও পারিনি। তাকে কিন্তু এই লুকে মানাচ্ছে না।আর আসলেই আমার মনে মায়া দয়া নেই।বলতে পারেন পাষাণ।তাই এই পাষাণের জন‍্য নিজের মুল‍্যবান সময়ের থেকে একটুও সময় নষ্ট না করাই ভালো।ভালো কাউকে খুজে নিন।
ইশফার কথা শুনে সান বড় করে নিশ্বাস নিয়ে নিজের রাগ দমিয়ে গম্ভীর গলায় বলল…….
—যা আজ বলেছো তো বলেছো।দ্বিতীয় বার এই কথা আর মুখে নিবে না।আগেও বলেছি এখনও বলছি তুমি শুধু আমার।না তোমাকে কারো হতে দিব আর না নিজে অন‍্য কারো হব।
ইশরার ডাকে ইশফা ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে এল।ইশফা ব‍্যালকনিতে দাড়িয়ে পুরোন কথাগুলো ভাবছিল।ইশরা,ইশফার পাশে এসে দাড়িয়ে বলল…….

—এতো রাতে ব‍্যালকনিতে কি করছিস তুই?
ইশফা আগের মত দাড়িয়ে থেকেই আস্তে করে বলল…..
—ঘুম আসছে না।
ইশরা,ইশফার দিকে ভালো করে চোখ বুলিয়ে বলল…..
—তোর সূর্যর কোন খবর জানতে পেরেছিস?হতেও তো পারে তার বিয়ের খবরটা রটানো ছিল।
ইশফা একটু সময় চুপ করে থেকে বড় করে নিশ্বাস ফেলে বলল…..
—প্রথমত সে আমার না।দ্বিতীয়ত অন‍্যের খবর জেনে আমার কি লাভ?
ইশরা চোখ ছোট ছোট করে ইশফার দিকে তাকিয়ে বলল……
—ঢং করো আমার সাথে ঢং।তুমি যে তোমার ঐ সূর্য এর চিন্তায় চেহারার তেরোটা বাজিয়ে রেখেছো আমি কি বুঝি না মনে করেছো।
ইশফা সান্ত গলায় বলল……

—দেখ ইরু প্রতিদিন এক প‍্যাচাল ভালো লাগে না।তার জন‍্য আমার মনে না কিছু আছে আর না ছিলো।এসব কথা এবার বন্ধ কর।ভালো লাগে না শুনতে আর।
ইশরা সান্ত গলায় বলল…..
—সত‍্যি বলতাছোস?তার জন‍্য তোর মনে কিছু নাই?
—মিথ‍্যে বলে আমার কি লাভ।তার বিয়ের কথা শুনে প্রথমে একটু খারাপ লেগেছে।হয়তো তার ঐ সব পাগলামি দেখে তার প্রতি একটু ভালো লাগা কাজ করে ছিলো তাই।এখন সে অন‍্য কারো হয়ে গেছে।তাকে নিয়ে সুখে থাক তাই ভালো।আমার পিছু তো ছেড়েছে আর কি চাই।
—সত‍্যি বলছিস তার জন‍্য এখন তোর মনে কোন অনুভূতি নেই?
ইশফা কিছু না বলে চুপ করে দাড়িয়ে রইল।ইশফাকে চুপ থাকতে দেখে ইশরা বলল…..
—এখন চুপ কইরা আছোস ক‍্যান?
ইশফা রুমে যেতে যেতে বলল…..

—মাথা ব‍্যাথা করছে ঘুমোব।খবরদার কানের সামনে আর কোন প‍্যানপ‍্যান করবি না।
ইশফা চলে যেতেই ইশরা হতাশ হয়ে নিশ্বাস ছেড়ে বিরবির করে বলল…..
—আমার বোইনডা আসলেই পাষান।এর দ্বারা কিছুই হবে না।বুক ফাটবে তবুও মুখ ফাটবে না।
পার্কের সেদিনের ঘটনার পরের দিন ইশফা অসুস্থ থাকার কারনে ভার্সিটিতে যেতে পারে নি।এমনকি বাসা থেকেও ইশফার মা ইশফাকে বের হতে দেয়নি।অনেক চেষ্টা করেও সেদিন সান এর খবর নিতে পারেনি।সারাদিন বাড়িতে থেকে শুধু ছটফট করেছে।না জানি সান কি করে বসে।সারাদিন মাথার মধ‍্যে শুধু সানকে নিয়ে দুঃশ্চিন্তা ঘুরপাক করেছে।

পরের দিন ইশফা ভার্সিটিতে গিয়ে সানকে বহু খোজাখুজি করে কিন্তু পায় না।পরে রিধির কাছে জানতে পারে সান তার এক আত্মীয় এর বাড়িতে অনুষ্ঠানে গিয়েছে।কথাটা শুনে ইশফা হাফ ছেড়ে বাচে।সান সুস্থ আছে শুনেই সে শান্তি পায়।কিন্তু মনে মনে সানকে দেখার জন‍্য অধিক আগ্রহে বসে থাকে।৫দিন পরে ইশফা সানকে দূর থেকে দেখতে পায় বন্ধুদের সাথে হাসাহাসি করছে।ইশফা সান এর সাথে দেখা করার আগেই রিধির এক কথায় ইশফার পুরো স্টেচু হয়ে যায়।এলির সাথে সান এর বিয়ে ঠিক এবং বিয়ে এই সপ্তাহে।কথাটা শুনে ইশফা কি রিয়েক্ট করবে সেটাই ভুলে গিয়েছিল।কিছুক্ষন স্টেচু হয়ে থেকে মলিন হেসে বলেছে……
—ভালো তো?আমার পিছু আর পরতে আসবে না।আপদ বিদায় হল।
মুখে হাসি নিয়ে কথাটা বললেও মনের মধ‍্যে ঠিকই ইশফার রক্ত ক্ষরন হচ্ছিল।ইশফা কেমন এক চাপা কষ্ট অনুভব করছিলো।কেন সে তা জানে না।
সেদিন ভার্সিটি থেকে ফিরে বাড়িতে কেউ না থাকায় দু’ঘন্টা সাওয়ার নিয়ে বের হয়।সেদিন রাত থেকেই ইশফার ধুম জ্বর, ঠান্ডা।জ্বর,ঠান্ডা ছেড়ে উঠতেই সপ্তাহ পার হয়ে যায়।

ইশফা ভার্সিটি থেকে ফিরে দেখে বাড়িতে হুলস্থুল লেগে গেছে।বাসায় তার ফুপ্পি,ফুপা সাথে ইশান এসেছে।ইশফা তাদের সাথে কথা বলে নিজের রুমে চলে যায়। মনে মনে ভাবলো তারা এসেছে দেখে হয়তো এমন কান্ড।বোরকা,হিজাব খুলে ফ্রেস না হয়েই বিছানায় শরীর বিছিয়ে দেয়।একটু পর তার মা এসে তাড়া দিয়ে বলল……..
—কিরে তুই এমন শুয়ে রয়েছিস কেন?তাড়াতাড়ি কর মেহমান এসে পরবে।
ইশফাঃমা একটু রেস্ট নিতে দেও তো।ফুপিরা তো এসেই পরেছে নতুন করে আর কে আসবে?
মাঃকে আসবে মানে?আজ তোকে দেখতে আসবে ভুলে গেছিস।
ইশফা লাফ দিয়ে উঠে বসে বলল……

—কিহহহহ!বলা নাই কওয়া নাই দেখতে আসবে মানে কি?
মাঃকেন ইরু তোকে কালকে কিছু বলে নি?
—না তো ও কিছু বলেনি।
—না বলেছে তো কি হয়েছে এখন তো আমি বললাম।যা এবার তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।
ইশফা গম্ভীর গলায় বলল…..
—মা এখন এসবের কি দরকার?আমি এখন কারো সামনে যেতে পারবো না।
মা, ইশফার দিকে সন্দেহর চোখে তাকিয়ে বলল…..
—যেতে পারবি না মানে কি? তোর কি কোন পছন্দ আছে?
ইশফা মাথা নিচু করে বলল…..
—না আমার কোন পছন্দ নেই?
মা ইশফার সামনে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল……
—তাহলে এমন করছিস কেন?মেয়ে বড় হয়েছে বিয়ে দিতে হবে না।
ইশফা নিচু গলায় বলল…..

—মা আমি সবে মাত্র অর্নাস করছি।এতো তাড়াতাড়ি বিয়ের তাড়া কিসের?আমি আরো পড়ালেখা করবো।
—আজ দেখতে আসছে বিয়ে তো আর হয়ে যাচ্ছে না।আর তাছাড়া বিয়ের পর যদি লেখাপড়া করায় তাহলে তোর সমস‍্যা কোথায়?
ইশফা কিছু না বলে চুপ করে বসে রইল।
ইশরা ধরফরিয়ে রুমে ঢুকে বিছানায় গা বিছিয়ে দিয়ে বলল……
—মা গো কাজ করতে করতে আজ আমি শেষ।ইফু যা পাবি তার থেকে অর্ধেক আমারে দিবি।লোকেরা কিন্তু খালি তোর চেহারা দেইখাই টাকা দিবো না।গোছগাছ, আদর-আপ্পায়ন দেখেও দিবো।
ইশফা, ইশরার দিকে রাগি চোখে তাকাতেই ইশরা ঢোক গিলে তোতলাতে তোতলাতে বলল……

—ম-মা ড-ড্রয়িং রুমে আমি ময়লা রেখে এসেছিলাম।তা পরিষ্কার করে আসছি।
কথাটা বলেই ইশরা যেভাবে এসেছিল সেভাবেই জান নিয়ে পালালো।মনে মনে বলল……
—এর সামনে আজ আর পরা যাবে না।এ আমারে আজ একা পাইলে পানি ছাড়াই কাচা গিল্লা খাইবো।

বেডের মধ‍্যে মাথা নিচু করে বসে রয়েছে ইশফা। চোখ দিয়ে তার টপটপ করে পানি ঝড়ছে ।ইশরা দূরে দাড়িয়ে রয়েছে তার চোখেও পানি।
ছেলে পক্ষ ইশফাকে দেখতে আসার পর তারা ইশফাকে পছন্দ করেছে এবং তারা আজই রেজিষ্ট্রার মেরেজ করে রাখতে চাচ্ছে।ছেলের বাবা কয়েক দিনের মধ‍্যেই বিডির বাহিরে যাবে।ফিরতে একটু সময় লাগবে।তাই তারা শুভ কাজে দেড়ি করতে চাচ্ছে না।ছেলে,ছেলের ফ‍্যামিলি ইশিতা বেগমদের পূর্ব পরিচিত।তাই তারাও ছেলের পক্ষের জোড় এর কাছে হার মেনে বসে রয়েছে।ইশফার যেহেতু কোন পছন্দ নেই তাই তারাও এতো ভালো সমন্ধ হাত ছাড়া করতে চাচ্ছে না।
মিঃখান এসে ইশফার পাশে বসে মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলল……

—দেখ মা মেয়ে হয়ে জন্মেছিস একদিন না একদিন তো পরের ঘড়ে যেতেই হবে।এটাই সমাজের নিয়ম।তোর মনে হতে পারে ছেলের সম্পর্কে না জেনে কিভাবে হুট করে আমরা তোকে তার হাতে তুলে দিতে চাচ্ছি।আমরা ছেলে, ছেলের ফ‍্যামিলি সম্পর্কে আগে থেকেই খোজ নিয়েছি।তোর ফুপারও পরিচিত।তারা যখন এতো করে জোর করছে তাই আমরাও আগাতে চাচ্ছি।কিন্তু আমরা কিছু বলার আগে তোর মতামত জানতে চাই।তোর যদি কোন আপত্তি থাকে বলতে পারিস।আর অন‍্য কোথাও পছন্দ থাকলেও বলতে পারিস।তোর মতেই সব হবে।আমাদের সবারই ছেলে পছন্দ হয়েছে।তোর যদি না হয় তাহলে আমরা না করে দিব।এখন বল কি করবো?
ইশফা তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কান্না করে বলল……

—আ-আমি ক-কোথাও যাবো না আব্বু।ত-তোমাদের কে ছেড়ে কোথাও যাব না।
জিদানের নাম্বারে একের পর এক কল দিয়েই চলেছে ইশফা।বার বার জিদান কল রিসিভ না করে কেটে দিচ্ছে।ইশফা হাল না ছেড়ে লাগাতার কল দিয়েই যাচ্ছে।অনেকক্ষণ পর জিদান কল রিসিভ করে গম্ভীর গলায় বলল…..
—এতো বারবার কল কেন দিচ্ছিস বুচি?দেখছিস কলটা কেটে দিচ্ছি তারপরেও কেন ডিস্টাব করছিস?একটা কাজে আছি।বাসায় গিয়ে কল দিব।
ইশফা ফুপিয়ে,ফুপিয়ে বলল……

—মি-মিথ‍্যে কে-কেন ব-বলছো ভা-ভাইয়া?তোমার মুখে কিন্তু মিথ‍্যে মানায় না ভাইয়া।ইশান ভাইয়া বলেছে তুমি আমাদের বাসার আশেপাশে আছো।আর এখানে কি হচ্ছে তুমি সব জানো।আমার জীবনের এতো বড় একটা দিনে তুমি কি আমার পাশে থাকবে না ভাইয়া?
ইশফার কথা শুনে জিদানের চোখের কোন ভিজে গেল।ইশফাকে কি বলবে তাই ভেবে পাচ্ছেনা জিদান।তারও তো ইচ্ছে করছে বড় ভাই এর মত ছোট বোনটার পাশে থেকে তাকে আরেক জনের হাতে তুলে দিতে।কিন্তু পরিস্থিতির কাছে সে নিরুপায়।জিদান কান্না আটকিয়ে বলল……
—আমার দোয়ায় সব সময়ই আমার বুচি বোনটা থাকবে।সামনে থেকে আলাদা কর‍ে দোয়া করতে হবে না।
জিদানের কথা শুনে ইশফা শব্দ করে কান্না করতে লাগলো।জিদান ব‍্যাস্ত হয়ে বলল……
—বুচি তুই এভাবে কাদছিস কেন?কি হয়েছে তোর?তোর কি এই বিয়েতে মত নেই?
ইশফা ফুপিয়ে বলল…..

—তুমি বাসায় আসো ভাইয়া।আমি তোমাকে আজ আমার পাশে চাই।
ইশফার কথা শুনে জিদানের চোখ দিয়ে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পরল।নিচু গলায় বলল…..
—তোর কি মনে হয় বাসায় যেতে পারলে তোর বলার আশায় বসে থাকতাম?
ইশফা কিছু না বলে ফুপিয়ে কান্না করতে লাগলো।জিদানও অপর পাশ থেকে নিরবে কান্না করতে লাগল।কিছুক্ষন পর ইশন এসে তাড়া দিয়ে বলল…..
—তাড়াতাড়ি কথা শেষ কর।মামা এখনি তোর সাইন নিতে আসবে।
জিদান,ইশান এর কথা শুনতে পেয়ে কান্নামাখা গলায় বলল…..
—দোয়া করি আমার বুচি বোনটা যেন সুখি হয়।দুনিয়ার কোন দুঃখ যেন তাকে স্পর্স করতে না পারে।আল্লাহ্ যেন তাকে সকল বালা-মুছিবত থেকে হেফাজত করে।

ইশফা পাথরের মত বসে নিরবে কান্না করছে।পাশে বসে তুশি বিরক্ত হয়ে বলল…..
—ঐ ছ‍েমড়ি এমন কানতাছোস ক‍্যান? আমরা কি তোরে বনবাসে দিয়া দিছি?কান্না বন্ধ কর।তোরে এমন ফ‍্যাসফ‍্যাস কান্নায় মানায় না।
ইশফা কিছু না বলে সেই আগের মত বসে রয়েছে।ইশফাকে চুপ থাকতে দেখে তুশি আবার বলল……
—দেখ ইফু একটা ভালো বুদ্ধি দেই।জীবনে তো পারলিনা একটা প্রেম করতে।সারা জীবন গুন্ডামি কইরা গেলি।প্রপোজ করতে আসলেও এমন থ্রেড দিছোস দ্বিতীয় বার ঐ পোলা আর সামনে পরে নাই।তোর লিগা আমিও জীবনে একটা প্রেম করতে পারলাম না?।কথা সেটা না কথা হল এখন যতদিন পযর্ন্ত জিজু তোরে উঠাইয়া না নেয় চুটিয়ে জিজুর লগে প্রেম কর।দেখবি তাইলে সব সমস‍্যা সমাধান।তোর লগে আমিও না হয় হালু,কালু একটা খুইজা নিমু নে।আইডিয়া টা কেমন বলতো?☺

—হালু,কালু কেন খুজতে যাবে আমাকে কি চোখে পরে না।
ইশান এর কথা শুনে তুশি চোখ বড় বড় করে সামনে তাকিয়ে তুতলিয়ে বলল…..
—আ-আপনি!আপনি রুমে কখন এসেছেন?
ইশানঃযখন থেকে আপনি বকবক শুরু করেছেন তখন।আপনাদের তো আবার সভাব ভালো কথা শুরু করলে কোন হুস থাকে না।সামনে পিছে না দেখেই বকবক করতে থাকেন।
তুশি বিরবির করে বলল…..
—শুরু হয়ে গেছে লেকচার।
তুশি,ইশফার দিকে কাদো কাদো ফেস করে তাকিয়ে থেকে কেটে পরতে চাইলে জিদান বলল…….
—যা শোনার শুনে নিয়েছি এখন আর পালিয়ে লাভ নেই।ইশফাকে নিয়ে ছাদে আসো ওর বর ওর সাথে কথা বলবে।
কথাটা বলে ইশান তুশির দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে চলে গেল।তুশি মাথায় হাত দিয়ে ন‍্যাকা কান্না করে বলল…..
—আমি শেষ ইফু।তোর ভাই এবার আমারে পচাইয়া মারবো।এই লোক আমার রিলেশন শুরু করার আগেই ব্রেকআপ করাইয়া দিব।

ছাদের এক পাশে নিচের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে ইশফা। পাশে দাড়িয়ে রয়েছে আরেক জন লোক।প্রচন্ড কান্নার ফলে ইশফার চেহারা, চোখ-মুখ পুরো লাল হয়ে রয়েছে।ইশফা জানে না লোকটা কে?হয়তো তার বর হবে।তা না হলে কি তুশি,ইশান মিলে ওদের কে একা কথা বলার জন‍্য এখানে রেখে অন‍্য পাশে চলে যেত।কিছুক্ষন চুপকরে থাকার পর লোকটি গলা পরিষ্কার করে বলল……
—হাই আমি রিমন।আপনার নাম কি?
ইশফা ত‍্যাড়া ভাবে উওর দিল……
—নাম না জেনেই বিয়ে করেছেন?
রিমন মুচকি হেসে বলল……
—আসলে আপনাকে একটু ফ্রি করতে চাইছিলাম ঐ আর কি। আচ্ছা আপনাকে তো আজ নিয়ে যাচ্ছি না।তাহলে কান্না করে চোখ-মুখ এমন ফুলিয়েছেন কেন?আপনি কি এই বিয়েতে রাজি ছিলেন না?আপনার কি কোন পছন্দ আছে?
রিমনের কথা শুনে ইশফা তাসিল‍্য হেসে বলল ……

—কথাটা অনেক দ্রুত জিগ্যেস করে ফেললে না?কয়েক বছর ঘড়-সংসার করার পরে করলেও হতো।
—আপনি কি রেগে আছেন আমার উপর?
—রাগ করার কি কিছু করেছেন?
—রাগের কারনটা কি জানতে পারি?
ইশফা গম্ভীর গলায় বলল…..
— আমার সম্পর্কে কিছু না জেনে হুট করে এভাবে বিয়ে করার কারনটা কি জানতে পারি?
রিমন লাজুক হেসে বলল…..
—আপনাকে আমাদের সবার খুব পছন্দ হয়েছে তাই হুট করে এভাবে….।যাই হোক আপনার কি পছন্দের কেউ আছে?
ইশফা ত‍্যাড়া ভাবেই বলল…..
—থাকলে কি তার কাছে ফিরিয়ে দিবেন?
রিমন ইশফার মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে মুচকি হেসে বলল…..
—যদি পাগলাটে কোন আশিক থাকে তাহলে ভেবে দেখবো?ছেচড়া আশিক হলে কিন্তু দিব না।
ইশফা তাসিল‍্য হেসে বলল……

—আমার মত গুন্ডি মেয়ের আবার আশিক।সবারই জানের মায়া আছে।আমার তেমন কেউ নেই।
রিমন সন্দেহর গলায় বলল…..
—সত‍্যি কেউ নেই?কেউ আপনার জ‍ন‍্য পাগলামো করে নি?
ইশফা মনে মনে ভাবলো,পরে না জানিয়ে আগে জানিয়ে দেয়াই ভালো।তাই সে একটা বড় করে নিশ্বাস ফেলে সামনের দিকে তাকিয়ে বলল…..
—মিথ‍্যে বলে কি লাভ।একজন কিছুদিন পাগলামো করেছে।তারপর নিজেই পিছু ছেড়ে দিয়েছে।
ইশফার কথা শেষ হতে না হতেই পিছন থেকে ভেসে এল……
—তুমি ভাবলে কি করে এতো সহজে আমি তোমার পিছু ছেড়ে দিব?আমি অমন আশিক নই যে দুদিন ঘুরেই পাগলামো শেষ।সান-ইশফার জন‍্য তার পাগলামো ছাড়তে পারে কিন্তু আমি আমার বাঘিনীর জন‍্য কখনো পাগলামো ছাড়ি নি আর না ছাড়বো।আমার বাঘিনী আমার ছিল, আছে এবং থাকবে।

ইশফার কানে আমার বাঘিনী কথাটা বার বার বাজছে।ইশাফাকে বাঘিনী বলে একজনই ডাকে।ইশফা লোকটাকে দেখার জন‍্য পিছনের দিকে ঘুরে লোকটাকে দেখে কি রিয়েক্ট করবে সেটাই সে ভুলে গেলো।কেননা লোকটা আর কেউ নয় সান।ইশফা,সানকে এখানে দেখে অবাক হবে নাকি এটা বুঝতে পেরে রাগ করবে যে,সানই সে লোক যে ইশফাকে প্রতিদিন একবার না একবার ফোন করে বিরক্ত করতো।ইশফা কিছুক্ষণ থ’ হয়ে দাড়িয়ে থেকে সান এর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল……
—আপনি এখানে?
সান বুকে হাত চেপে ধরে সুর টেনে বলল……
—ওহ্ মেরি বাঘিনী এভাবে তাকিয় না।তোমার এই তাকানো দেখলে আমি ঘায়েল হয়ে যাই।
ইশফা রাগি গলায় বলল…..
—তাহলে আপনিই সে যে আমা…..
ইশফা কথাটা শেষ না করে রিমনের দিকে এক পলক তাকিয়ে চুপ করে রইল।এক হাতের নখ আরেক হাতে চেপে ধরে নিজের রাগ দমাতে লাগলো।ইশফা,রিমনের জন‍্য পারছেনা সান এর তেরোটা বাজাতে।
সান, ইশফার সামনে এসে মুচকি হেসে বলল…..
— “আমার বাঘিনীর নজর”
” একেবারে শকুনের মত।”
“বুদ্ধির তো কোন জবাব নেই”
“পুরোই সিম্পাঞ্জির মত।”

সান এর কথা শুনে ইশফা ভিতরে,ভিতরে রেগে বোম হতে লাগলো।রিমন সান কে বাহবাহ দিয়ে বলল….
— আহা আমার ভাই তো দেখছি পুরো কবি হয়ে গেছে।কবি, কবি ভাব ভাবির অভাব।সরি ভাবিও তো মিলে গেছে।ভাবি যাই বলুন না কেন?আপনি কিন্তু আমার ভাইকে পুরোই চেঞ্জ করে দিয়েছেন।(রিমন শেষের কথাটা ইশফার দিকে তাকিয়ে বলল)
ইশফা অবাক হয়ে বলল….
—মানে!কে আপনার ভাবি?
রিমন মুচকি হেসে বলল…..
—কেন আপনি।
ইশফা সন্দেহর চোখে রিমনের দিকে তাকিয়ে বলল…..
—আপনি কে বলুন তো?
রিমন মুচকি হেসে বলল…..
—আপনার অনলি এন্ড ওয়ান পিস দেবর।
ইশফা,রিমনের কথা শুনে অবাক হয়ে বলল…..
—তাহলে বিয়েটা কার সাথে হয়েছে?
সানঃতুমি ভাবলে কি করে আমি থাকতে অন‍্য কারো সাথে তোমার বিয়ে হতে দিব মাই ডিয়ার বাঘিনী বউ।
“মন পিঞ্জরে আটকিয়েছি তোরে”
“ঊড়ে যেতে চাইলেই কি পারবি যেতে ”
“এই মনের পিঞ্জর ভেঙে?”
ইশফা,রিমনকে উদ্দেশ্য করে বলল…..
—বিয়েটা কি আপনার সাথে হয়নি?

রিমনঃতওবা,তওবা আমার কাছে আমার বড় ভাবি মায়ের মত।তাকে বিয়ের কথা মুখে আনাও পাপ।
ইশফা, রিমন এর দিকে ছোট,ছোট চোখ করে তাকিয়ে বলল……
—আপনার বড় ভাই কে?
সান, ইশফার কথা শুনে মুচকি হেসে বলল……
—বউ আমাকে কি চোখে পরছে না?আমার জন‍্য কান্না করে কি চোখে ছানি পরিয়ে ফেলেছো?
সান এর কথা শুনে রিমন মিটমিট করে হাসতে লাগল।
ইশফা বুঝতে আর বাকি রইল না বিয়েটা কার সাথে হয়েছে।ইশফার মাথায় মধ‍্যে নানান প্রশ্ন জট বেধে চরকির মত ঘুরপাক করার কারনে মাথা ভনভন করে ঘুড়তে লাগল।ইশফা সান এর দিকে ঝাপসা চোখে তাকিয়ে অস্পষ্ট সুরে বলল……
—তার মানে বিয়েটা আপনার সাথে হয়ে….
পুরো কথা শেষ করার আগেই ইশফা ঠলে পরে যেতে নিলেই সান ইশফাকে ধরে ফেলল।
সান, ইশফার গালে হালকা চাপড় মেরে কয়েকবার ডাক দিল।
রিমন ব‍্যাস্ত গলায় বলল…..

—ভাইয়া ভাবি তো সেন্সলেস হয়ে গেছে।
সান,রিমনের কথায় উওর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল…..
—রিমন বলতো আমারে কেমন দেখা যাচ্ছে?ভালো মত তাকিয়ে দেখে তারপর বলবি।আর সত‍্যি কথা বললি।
রিমন বিরক্ত হয়ে বলল….
—ভাইয়া এখন এসব কথা বলার সময়।ভাবিকে নিয়ে আগে নিচে চল।
সান চোখ রাঙিয়ে বলল…….
—যা জিগ্যেস করছি তা আগে বল।
রিমন অর্ধয‍্য গলায় বলল…..
—কেমন আবার লাগবে সব সময় যেমন হ‍্যান্ডস‍্যাম লাগে এখনো তেমনি লাগছে।
সান হতাশ হয়ে বলল…..

—তাহলে তোর ভাবি আমার দিকে তাকিয়ে সেন্সলেস হলো কেন?কি বিয়ে করলাম রে ভাই বউ আমার চেহারা দেখেই বেহুস।
“পরিস্থিতি মাঝে মাঝে এমন এক জায়গায় মানুষকে নিয়ে দাড় করায় যার কারণে অতি কাছের মানুষটাকেও দূরে ঠেলে দিতে হয়।”
বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে রয়েছে জিদান।ফোলা ফোলা চোখ আর চোখের ভেজা পাপড়িগুলো জানান দিচ্ছে তার কান্না কথা।জিদানের ভিতরে কি চলছে তা একমাত্র জিদানই জানে।কিছু ঠুনকো কারনের জন‍্য ইশফাদের সাথে তার সম্পর্কে আজ দেয়াল সৃষ্টি হয়েছে।যাদের কাছে র্নিদিধায় একটা আবদার করে বসতে পারতো,যার সাথে হাসি-ঠাট্টা করতেও কোনো ভয় কাজ করতো না আজ তার সামনে গিয়ে দাড়ানোর সাহসও জিদান পাচ্ছে না।জিদানের মাথায় একটা প্রশ্ন বার বার এসে নাড়া দিচ্ছে সে কি কোন ভুল করেছে?তার মন বলছে সে কোন ভুল করেনি।তার পরেও অন‍্যের করা ব‍্যবহারের জন‍্য সে পারছে না তাদের সামনে গিয়ে দাড়াতে।
নানান ভাবনার মাঝে জিদানের ফোনটা বেজে উঠল।জিদান স্কিনে বুচি নামটা দেখে হাত দিয়ে চোখের জল মুছে ফোন রিসিভ করে চুপ করে রইল।দু’পাশ থেকে নিরবতা বিরাজ করছে।জিদান কিছুক্ষন পরে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলল….

—বুচির কি খবর?
ইশরা বুঝতে পারলো জিদান বুঝে গেছে ওই ফোন করেছে।তাই কথা না বাড়িয়ে সোজা উওর দিল…..
—ভালো।
তারপর আবার নিরবতা।কেউ কিছু বলল না।দুজনই চুপ করে রইল।একটু পর ইশরা মিনমিনে গলায় বলল……
—ইফু কে নিয়ে চিন্তা করো না। ইনশাআল্লাহ ও ভালো থাকবে।কান্নাকাটি না করে খাবার খেয়ে ঘুমাও।তা না হলে শরীর খারাপ করবে।
জিদান একটু চুপ করে থেকে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলল……
—আমাদের সম্পর্কটা কেন এমন হয়ে গেলো ইশু?কোন কিছুরই তো কারো অভাব ছিলো না।তাহলে কেন এমন হলো বলতে পারিস?
—পুরোন কথা তুলে কেন কষ্ট পাচ্ছ।যা হয়ে গেছে তো গেছেই।তা তো আর বদলাতে পারবে না।
—এতো সহজ তা ভুলে যাওয়া?তুই কি ভুলতে পেরেছিস?
ইশরা কিছু না বলে চুপ করে রইল।জিদান চুপ করে থেকে কথা ঘুরাতে বলল……
—খুব কষ্ট হচ্ছে বুচির জন‍্য?
ইশরা ধরা গলায় বলল…..
—কষ্ট কেন হবে ও কি এখনি চলে যাচ্ছে নাকি।
জিদান ইশরাকে সাভাবিক করতে মজা করে বলল…..

—আমিও না কাকে কি বলছি। তুই তো বুচিকে হিংসে করিস।তোর আবার ওর জন‍্য কষ্ট কেন হবে।তুই তো চাস ও যেন তাড়াতাড়ি চলে যায়।
ইশরা চট করে রেগে গিয়ে বলল……
—একদম আমাকে রাগানোর চেষ্টা করবে না।আমি মোটেও ইফুকে হিংসে করি না।
জিদান মুচকি হেসে বলল…..
—তা আমার ভালো করে জানা আছে আপনি বুচিকে হিংসে করেন কি না করেন।ছোট বেলায় বুচিকে কিছু কিনে দিলে মুখটা যে পেচির মত করে রাখতি তা কিন্তু আমি ভুলিনি।
ইশরা রাগি গলায় বলল……
—আমিও কিছু ভুলিনি একবার শুধু তোরে হাতে আইনা নই তখন বুঝবি এই ইশরা খান কি চিজ।
—তোর বেয়াদবি কোনো দিনও ঠিক হবে না।আবার তুই তোকারি করছিস।
—এখনতো তুই তোকারি করছি বিয়েটা শুধু হতে দে।তখন দেখবি কি করি।
জিদান আলতো হেসে বলল……
—যাক তাহলে এতোদিনে স্বীকার করলি বিয়ে করবি।
ইশরা রাগের বসে কি বলে ফেলেছে হুস হতেই লাইন কেটে দিল।মনে মনে নিজেকে গালাগাল করে চোখ বন্ধ করে বসে রইল।নিজের পুরোন সেই বাচ্চামো কথাগুলো মনে পরতেই মুখে হাসি ফুটে উঠল।কত পাগলামিই না করেছে সে জিদানের সাথে।

পিটপিট করে চোখ খুলতেই ইশফা নিজেকে বেডে আবিষ্কার করল।কয়টা বাজে তা ইশফার জানা নেই।পুরো রুমে সে একবার চোখ বুলিয়ে নিল।ডিম লাইটের আলোতে নিজের রুমটা চিনতে ভুল হলো না তার।পাশে তাকাতেই ইশরাকে দেখতে পেল।ইশরা,ইশফার পাশে ঘুমিয়ে রয়েছে।ইশফা,ইশরাকে মৃদু আওয়াজে কয়েক বার ডাক দিল।কিন্তু ইশরার কোন হেলদুল নেই।ইশরা আগের মত ঘুমিয়েই রয়েছে।ইশফা, ইশরাকে ধাক্কা দিয়ে জোরে জোরে ডাকতেই ইশরা ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল…..
—কি হইছে এমন করতাছোস ক‍্যান?দেখ সারাদিন অনেক খাটাখাটনি করছি ডিস্টাব করিস না।ঘুমাইতে দে।
ইশফা গম্ভীর গলায় বলল…..
—রাখ তোর ঘুম।আগে বল আমি এখানে কি করে এলাম?আমি তো ছাদে ছিলাম।হঠাৎ মাথাটা চরকির মত ঘুরতে লাগলো তারপর কি হয়েছে কিছুই মনে নাই।
ইশরা শোয়া থেকে লাফ দিয়ে উঠে ঝাঝালো গলায় বলল……
—ছাদে ছিলা,মাথা ঘুড়ছে সব মনে আছে।হুমড়ি খাইয়া কার উপরে পরছো তা মনে নাই?জানি তো সবই তোর জিজুর কোলে উঠনের ধান্দা।
ইশফা চোখ রাঙিয়ে বলল…..

—থাপ্পড় চিনোস।না খাইতে চাইলে ভালো কইরা ক’ আমি এখানে কেমনে?
—আ…হা….ন‍্যাকা সাজতাছে যেন কিছুই জানে না।যার কোলে উঠনের লিগা জ্ঞান হাড়ানোর নাটক করছো সেই তোমারে এখানে নিয়া আইছে।
ইশফা অবাক হয়ে বলল…..
—মানে!
ইশরা ভেংচি কেটে বলল…..
—মানে মানে করতাছোস ক‍্যান?মনে হইতাছে ভাজা মাছটা উলটাইয়া খাইতে জানে না।তোর সূর্যই তোরে হিরোদের মত কোলে করে এখানে নিয়া আইছে।তোর দ্বারা এটা আশা করি নাইরে ইফু আমার শিশ‍্য হয়ে কোলে ওঠার জন‍্য শেষমেষ বেহুস হলি?(ইশরা শেষের কথাটা আফসোসের সুরে বলল)
ইশফা,ইশরার হাতে চোড়ে এর থাপ্পড় বসিয়ে রাগি গলায় বলল……
—আর একটা আজে বাজে কথা বলবি তাইলে তোর খবর আছে।তুই জানতি বিয়েটা ঐ বাদর দলের নেতার সাথে হচ্ছে তাহলে আমাকে আগে বললি না কেন?
ইশরা হাত ঢলতে ঢলতে বলল…..

—আহ্ ঢং।বলিনাই পোলা দেইখা ল পোলার লগে কথা বইলা ল।তখন তুমিই তো বলছো সবাই দেখেছে না আমার আর দেখতে হবে না।এখন ঢং করো ক‍্যান।
—তাই বলে একবার কি বলতে পারতি না বিয়েটা ঐ বাদর এর সাথে হচ্ছে?
ইশরা হুমকি দিয়ে বলল…..
—খবরদার আমার জিজুরে বাদর বলবি না।জিজু অনেক ভালো তা ছাড়া…..
ইশরার চোখ ইশফার চোখের দিকে পরতেই ইশরা থেমে গেলো।কেননা ইশফা ওর দিকে সন্দেহর চোখে তাকিয়ে রয়েছে।
ইশরাকে কথা থামিয়ে শুকনো ঢোক গিলতে দেখে ইশফা বলল…..
—আমার কেন যেন মনে হচ্ছে এসবের পিছে তুই আছিস?
ইশরা শুকনো ঢোক গিলে ভয়ে ভয়ে ডানে বামে তাকিয়ে বেড থেকে নেমে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।ইশরাকে পালাতে দেখে ইশফার সন্দেহ আরো বেড়ে গেলো।রাগে বেডে বসে ফুলে বোম হতে লাগলো।এ বোম কার উপর ব্লাস্ট হয় কে জানে?

ইশফা সকাল বেলা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে না খেয়েই আগে আগে ভার্সিটিতে চলে এসেছে।ইশরা কাছ থেকে তো কিছুই জানতে পারে নি।জানবে কি ভাবে ইশরা যে সেই রাতের বেলা পালিয়েছে আর তো ইশফার সামনেই পরেনি।তাই তো শেষ ভরসা তুশি আর রিধি।ওদের থেকে সব জানার জন‍্যই সকাল সকাল ভার্সিটিতে ছুটে এসেছে।
করিডোর দিয়ে যাবার সময় হুট করে একজন ইশফার হাত টেনে পাশের রুমে নিয়ে গেল।ইশফা প্রথমে একটু চমকে গেলে।সামনে সানকে দেখে নিজেকে সামলিয়ে অপর হাত দিয়ে সান এর গলা চেপে ধরে দাতে দাত চেপে বলল……
—বলেছিলাম না আমার থেকে দূরে থাকতে সামনে আসলে খুন করে ফেলবো।
সান আলতো হেসে ইশফার হাত ছেড়ে দিয়ে ইশফার অপর হাত নিজের গলা থেকে ছাড়িয়ে সুর টেনে বলল…….
—আমি তো অনেক আগেই খুন হয়ে গেছি।নতুন করে আর কি খুন করবে তুমি?
ইশফা, সান এর দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বলল…..

মনের পিঞ্জরে পর্ব ২৩+২৪+২৫

—এসবের মানে কি?
সান না জানার ভান করে বলল…..
—কোন সব?
ইশফা চোখ রাঙিয়ে সানের দিকে তাকিয়ে বলল…..
—আপন……..
ইশফা আর কিছু বলার আগেই সান,ইশফার মুখ থেকে হিজাব সরিয়ে দিয়ে মুচকি হেসে বলল……
—এবার বল।তোমার চেহারা না দেখে কথা বলতে ভালো লাগে না।এতোদিন তো আর এই আবদার করার কোন রিজন পাই নি।তাই করা হয়নি।
—আপনাকে…….
ইশফাকে আবারও পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে সান আবার বলল……
—তোমার চেহারা এমন শুকনো দেখা যাচ্ছে কেন?তুমি কি অসুস্থ?কি হয়েছে তোমার? সকালে নাস্তা করেছো?
ইশফা দাতে দাত চেপে বলল…..
—না নাস্তা করিনি আপনার কোনো সমস্যা?
সান গম্ভীর গলায় বলল…..

—নাস্তা করোনি মানে কি?কাল রাতেও তুমি তেমন কিছু খাওনি।আবার আজ না খেয়েই ভার্সিটিতে চলে এসেছো?
ইশফা রেগে সানকে কিছু কড়া কথা বলার জন‍্য মুখ খোলার আগেই আগেই সামনে থেকে ভেসে এল…..
— আসসালামু আলাইকুম ভাবিবব সাহেবা?
সালাম সুনে ইশফা সামনে তাকাতেই দেখে নিরব,রিধি দাড়িয়ে রয়েছে।ইশফা,নিধির দিকে রাগি চোখে তাকাতেই রিধি ঢোক গিলে আমতা আমতা করে গরগর করে বলতে লাগল……

—ভাবি সরি ইফু এমনে তাকাইস না।তোর ঐ তাকানোরে আমি বহুত ভয় পাই।বিশ্বাস কর ইফু আমি কিছুই জানি না।সব দোষ ভাইয়া আর ইরুর।তারা শালী, জিজু মিলে আমাকে যা শিখিয়ে দিয়েছে আমি তাই বলেছি বাস এতোটুকু।
ইশফা কপালে ভাজ ফেলে বলল……
—তুই ইরুকে কিভাবে চিনিস?আমি তো ইরুর কথা তোকে কখনো বলিনি।
ইশফার মত কি আপনারাও কি ভাবছেন, এসব কিভাবে হল?চলুন তাহলে ফ্লাসব‍্যাক থেকে ঘুরে আসি।
ফ্লাশব‍্যাক…………

মনের পিঞ্জরে পর্ব ২৯+৩০+৩১