মনের পিঞ্জরে পর্ব ৩২+৩৩+৩৪ || Ariyana Nur

মনের পিঞ্জরে পর্ব ৩২+৩৩+৩৪
Ariyana Nur

ইশফা ভার্সিটির গেডের সামনে রিকশার জন‍্য দাড়িয়ে রয়েছে।একে তো সান এর জন‍্য এলিকে ভালোমত ধুয়ে দিতে না পারায় সান এর উপর রেগে রয়েছে তার উপরে একটা রিকশাও পাচ্ছে না।যাকেই জিগ্যেস করে সেই বলে ঐ রোডে যাবো না।তাতেই যেন ইশফার রাগটা তরতর করে আরো বেশি বাড়ছে।
দূর থেকে সান ইশফাকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে গাড়ি নিয়ে এসে ইশফার সামনে গাড়ি থামিয়ে বলল……

—গাড়িতে উঠ।
ইশফা সানকে এক পলক দেখেও না দেখার ভান করে একটু সামনে হেটে গিয়ে এদিক ওদিন তাকিয়ে রিকশা খুজতে লাগলো।সান আবারো ইশফার সামনে গাড়ি থামিয়ে বলল….
—এই টাইমে গাড়ি পাবে না।উঠ আমি নামিয়ে দিয়ে আসছি।
ইশফা কোন কথা না বলে সামনের দিকে হাটা ধরল।সান ইশফার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল……
—কেন যে ভুলে যাই আমার বাঘিনী একটা ঘাড়ত‍্যাড়া।যাকে সোজা কথা সোজা ভাবে বললে কাজ হয় না।
সান গাড়ি থেকে নেমে গটগট করে হেটে এসে ইশফার সামনে দাড়িয়ে বলল…….
—কি সমস‍‍্যা তোমার?গাড়িতে যে উঠতে বলছি শুনতে পাওনি?
ইশফা কোন কথা না বলে সাইড কেটে চলে যেতে নিলেই সান ইশফার হাত ধরে ফেলল।ইশফা হাতের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল…..

—হাত ছাড়ুন।
সান এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল…..
—তুমি নিজের ইচ্ছায় গাড়িতে উঠবে নাকি আমি অন‍্য ভাবে গাড়িতে উঠাবো?
ইশফা সানের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলল……
—কোন ভাবেই যাওয়ার ইচ্ছা আমার নেই।
—তাহলে তুমি যাবে না?
ইশফা কড়া গলায় বলল…..
—না যাবো না।এবার হাত ছাড়ুন।
—ওকে।
সান সাথে সাথে ইশফার হাত ছেড়ে দিয়ে ইশফাকে কোলে তুলি নিল।ইশফা সান এর কান্ডে কথা বলতে ভুলে গেল।কয়েক সেকেন্ড পর নিজেকে শূন‍্যে অনুভব করে নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে হালকা চেচিয়ে বলল…..
—কি করছেন কি?নমান আমাকে।আপনার কি কান্ডজ্ঞান নেই?লোকে দেখলে কি ভাববে?
সান কোন কথা না বলে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে গাড়ির দিকে হেটে যেতে লাগলো।
ইশফা কোল থেকে নামার জন‍্য ছটছট করতে লাগলো।কোন ভাবেই কোল থেকে নামতে না পেরে রাগে গজগজ করতে করতে বলল…..

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

—বয়রা হয়ে গেছেন কি বলছি শুনতে পাচ্ছেন না?
সান সামনের দিকে যেতে যেতে বলল…..
—যেভাবে চেচাচ্ছ বয়রা না হলেও বয়রা হতে সময় লাগবে না।

সান ইশফাকে গাড়িতে বসিয়ে ডোর লক করে দিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে হেলান দিয়ে বসে বলল…….
—উফ্ মনে হচ্ছে আমার 2kg ওয়েট লস হয়ে গেছে।এই তোমার ওজন কত গো…..
ইশফা কিছু না বলে সান এর দিকে কটমট করে তাকিয়ে রইল।সান ইশফার মুখের থেকে হিজাব টা সরিয়ে মিষ্টি হেসে বলল…..
—এভাবে দেখার কিছু নেই।তোমার বর আগের মতই হ‍্যান্ডস‍্যাম আছে।তবে তোমাকে কোলে করে গাড়িতে উঠাতে গিয়ে ওজন একটু কমেছে।
ইশফা রাগি গলায় বলল…..
—আপনাকে আমি খুন করবো।
—খুন তো আগেই করেছো নতুন করে মরা কে আর কি মারবে।
—ডোর লক খুলুন আমি গাড়ি থেকে নামবো।
সান গাড়ি স্টাট দিয়ে বলল…..

—বললেই হলো।2kg ওয়েট লস করে গাড়িতে উঠিয়েছি কি গাড়ি থেকে নামিয়ে দিতে।
ইশফা সান এর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে রয়েছে।সান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করছে।সান এর সাথে রাগারাগি করেও যে ইশফা গাড়ি থেকে নামতে পারবে না তা বুঝতে পেরে ইশফা বাহিরের দিকে মুখ করে বসে রইল।সান ইশফার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে মুচকি হেসে গন্তব্যের দিকে ছুটলো।

ইশরা চেচিয়ে বলল……
—আপনি এখানে?
জিদান কানে হাত দিয়ে বলল……
—আস্তে কথা বল আমার কানে কোন সমস‍্যা নেই।
ইশরা উওেজিত হয়ে বলল……
—আপনি এখানে কি করে এলেন?
জিদান কোন কথা না বলে ইশরার পায়ের সামনে বসে এক ধ‍্যানে পায়ের ব‍্যান্ডেজ এর দিকে তাকিয়ে রইল।
ইশরা দরজার দিকে তাকিয়ে বলল…..
—প্লিজ স‍্যার আপনি এখান থেকে চলে যান।দরজা খোলা মা যে কোন সময় চলে আসতে পারে।
জিদান কপালে ভাজ ফেলে বলল…..
—নিজেকে কি সিনেমার হিরোইন মনে করিস?তোর কি মনে হচ্ছে তোর জন‍্য আমি হিরোর মত পাইপ বেড়ে ব‍্যালকনি দিয়ে লুকিয়ে তোর সাথে দেখা করতে এসেছি?
ইশরা গাল ফুলিয়ে বলল…..

—লুকিয়ে আসেন নি কথাটা সোজা ভাবে বললেও হত।ত‍্যাড়া ভাবে বলার কি আছে।আর তাছাড়া হিরোদের মত লুকিয়ে আসতে মুরোদ লাগে।নিজে তো একটা ভিতুর ডিম।হুহ…..
জিদান ইশরার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বলল…..
—কি বললি তুই?
ইশরা ভেঙচি কেটে বলল….
—হুহ ঢং।যা শুনেছেন তাই বলেছি।
—সাহসের কথা বলতে আসিস না খান বাড়ির ছেলে আমি।নিজের মত সবাইকে ভিতু ভাবিস না।
—সাহস ধুয়ে ধুয়ে পানি খান।সাহসই আছে হিরো হওয়নের লিগা সুন্দর চেহারা লাগে,যগ‍্যতা লাগে যার কোনটাই আপনার নেই।
—যে বলবে আমার ছেলের হিরো হবার যোগ‍্যতা নেই তার চোখ খারাপ।

ইশিতা বেগম ট্রে ভর্তি খাবার নিয়ে রুমে ঢুকে কথাগুলো বলল।
ইশরা একবার ইশিতা বেগম এর দিকে তো একবার জিদানের দিকে ভীতু নজরে তাকাচ্ছে।
জিদানঃফুপি চোখ অন‍্য কারো খারাপ হয়নি হয়েছে তোমার মেয়ের।তোমার মেয়েই বলছে আমি নাকি দেখতে খারাপ।
ইশিতা বেগমঃএর কথায় বাবা কিছু মনে করো না।এর চোখ না পুরো মাথাই খারাপ।
ইশিতা বেগম এর কথা শুনে জিদান মিটমিট করে হেসে বলল……
—তা অবস‍্য ঠিক বলেছো ফুপি।আর এই পাগলের কথায় কিছু মনে করতে যাবো কেন।আমাকে কি পাগলে পেয়েছে।
ইশরার সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।ইশরা তার ফুপির দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কাপাকাপা গলায় বলল…..
—ফু-ফুপি……

ইশিতা বেগম ইশরার চোখের ভাষা বুঝতে পেয়ে মুচকি হেসে ইশরার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল……
—আমি নিয়ে এসেছি।দেখেছিস ছেলেটাকে ভালোমত তাকিয়ে।তোর অসুস্থতার কথা শুনে কি হাল করেছে।
ইশরা জিদানের দিকে এক পলক তাকিয়ে ছলছল চোখে বলল……
—ফুপি আব্বু……
ইশিতা বেগমঃতোর বাবা কি বলবে না বলবে পরেরটা পরে দেখা যাবে।আমি বেচে থাকতে তাদের ভাইদের রেষারষির জন‍্য আমার ছেলেমেয়ের দের কষ্ট পেতে দিব না।মগের মুল্লুক নাকি ছোটবেলায় একজনের সাথে এংগেজ করে রাখবে।বড় হলে তারা তাদের ঝামেলার জন‍্য মত পাল্টাবে।
ইশরা ছলছল চোখে ইশিতা বেগম এর দিকে তাকিয়ে বলল……

—ফুপি তুমি সব ভুলে গেলে?
—কিছু ভুলিনি আমি।সব মনে আছে।এতে জিদানের না কোন হাত ছিলো না দোষ।
—পরে যদি আব্বু সব জানতে পেয়ে কষ্ট পায়?মা জানে ভাইয়ার কথা?
ইশিতা বেগম ইশরার কথার উওর না দিয়ে জিদানকে উদ্দেশ্য করে বলল…..
—জিদান নাস্তা দিয়ে গেলাম খেয়ে নিও।আর একে একটু খাওয়ার জন‍্য বকা দিয়ে যেও।সকালে শুধু একটা টোষ্ট আর এককাপ চা খেয়েছে।আসছি আমার কিচেনে কাজ আছে।ভাবির ফিরতে দেরি হবে তাই আমিই রান্নাটা সেরে নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।কিছু লাগলে বল আমি কিচেনে আছি।
কথাটা বলে ইশিতা বেগম এক মুহূর্ত দেড়ি না করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

আপন মনে গাড়ি ড্রাইভ করছে সান।নিজের বাসার রাস্তা ছাড়া যে গাড়ি অন‍্য রাস্তায় যাচ্ছে তা বুঝতে পেরে ইশফা অনেক বার সান কে জিগ্যেস করেছে, কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?কোথায় যাচ্ছি?এটা তো আমার বাসার রাস্তা না ইত‍্যাদি ইত‍্যাদি।প্রতি উওরে সান এর থেকে একটা কথাই ভেসে এসেছে গেলেই দেখতে পাবে।তাই ইশফা হাল ছেড়ে রাগ দেখিয়ে আর কোন কথা না বলে বাহিরের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ বসে রয়েছে।
সান তার গন্তব্যে গাড়ি থামিয়ে নিজে গাড়ি থেকে বের হয়ে ইশফাকে গাড়ি থেকে বের হতে সাহায্য করল।ইশফা গাড়ি থেকে নেমেই রনচন্ডি রুপ ধারন করে চেচিয়ে বলল……
—আমার বাসায় না নিয়ে গিয়ে কোথায় নিয়ে এসেছেন আমাকে?দেখুন মিঃ বিয়ে করেছেন মাথা কিনে নিন নি যে আপনার ইচ্ছে মত সব হবে।আপ……

ইশফার কথার মাঝেই সান ইশফার হিজাব ঠিক করে দিতে লাগল।ইশফা সান এর কাজে কথা বন্ধ করে সান এর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই সান মুচকি হেসে বলল…….
—আমি কখনো আমার বাঘিনীকে কোন ব‍্যপারে জোর করবো না।সব সময় ছায়া হয়ে,ঢাল হয়ে তার পাশে থাকবো।আমার বাঘিনীকে রাগি রুপে মানায় কিন্তু রাগি রুপটা থেকে আমার তার হাসিখুশি রুপটা বেশি পছন্দ।সেই হাসিটুকু ফিরিয়ে দেওয়ার জন‍্য আমি যা কিছুই করতে পারি।তাতে তুমি বাধা দিলেও শুনবো না।কোথায় এসেছি আমাকে জিগ্যেস না করে মাথা খাটিয়ে একটু আশেপাশে তাকিয়ে দেখে।তাহলেই তো হয়।
ইশফা আশেপাশে তাকাতেই সামনের একটা লিখার দিকে তার চোখ আটকে গেলো।
ইশফা লিখাটার দিকে তাকিয়ে থেকে অস্পষ্ট সুরে উচ্চারণ করল…..

— “স্বপ্নের রাজপ্রাসাদ”।এটা কি আপনাদের বাড়ি?
সান কিছু না বলে ইশফাকে ইশারা করে বলল,তার সাথে যেতে।ইশফা ভালো মেয়ের মত সান এর পিছু পিছু চলতে লাগল।ইশফা গেইট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখতে পেল সারি সারি ফুলের গাছ।সবুজ ঘাসে ঘেরা বড় এক মাঠ।মাঠে কয়েকটা ছোট ছোট বাচ্চা খেলা করছে।
বাচ্চাদের থেকে একজন ওদের কে দেখতে পেয়ে ভাইয়া বলে চেচিয়ে দৌড়ে সান এর দিকে ছুটে আসতে লাগলো।বাচ্চাটি সান এর সামনে এসে হাপাতে হাপাতে বলল……
—কেমন আছো ভাইয়া?কতদিন পর তোমাকে দেখলাম।
সান বাচ্চাটির সামনে হাটু গেড়ে বসে বাচ্চাটির মাথায় হাত বুলিয়ে মুচকি হেসে বলল…..
— আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো।তুমি কেমন আছো
—আমিও ভালো আছি।তোমাকে দেখে আরো ভালো হয়ে গেছি।

এদের কথার মধ‍্যেই আরো ২০/২৫জন বাচ্চা দৌড়ে এসে সান কে ঘিরে ধরল।তারা সানকে এটা সেটা প্রশ্ন করতে লাগলো।সান হাসি মুখে তাদের সাথে কথা বলছে আর সবার প্রশ্নের উওর দিচ্ছে।সান এর পাশে ইশফা স্টেচু হয়ে দাড়িয়ে রয়েছে।সব যেন তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।বিশেষ করে সান এর ব‍্যপারটা।ইশফা অবাক চোখে সানকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে।কি সুন্দর সে বাচ্চাদের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।হাসলে যে কোন ছেলেকে এতো সুন্দর লাগে তা ইশফার জানা ছিলো না।সত‍্যিই কি সান এর হাসিটা মারাত্মক সুন্দর নাকি ইশফার কাছেই লাগছে তা ইশফার জানা নেই।
একজন ভদ্র মহিলা সান এর দিকে এগিয়ে এসে বলল…..

—কেমন আছো বাবা?
সান দাড়িয়ে মহিলাকে সালাম দিয়ে বলল…….
— আসসালামু আলাইকুম আন্টি। আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো।আপনি কেমন আছেন?
ভদ্র মহিলাঃভালো বাবা।
ভদ্র মহিলা ইশফার দিকে তাকিয়ে বলল…..
—এ কে বাবা?একে তো আগে কখনো দেখি নি?
সান মুচকি হেসে বলল…..
—আপনাদের বউমা আন্টি।আপনাদের সাথে পরিচয় করানোর জন‍্য নিয়ে আসলাম।
ভদ্র মহিলাটি ইশফার সামনে গিয়ে ইশফার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল……

—ভালো আছো মা?
ইশফাঃ আলহামদুলিল্লাহ্। আপনি?
ভদ্র মহিলাঃ আমিও বেশ আছি।
ভদ্র মহিলাটি বাচ্চাদের উদ্দেশ্য করে বলল……
—বাবুরা ভাইয়াকে পেয়ে ভাইয়ার সাথেই শুধু কথা বললে হবে।এই আপুর সাথে কথা বলবে না।
বাচ্চাদের থেকে একজন বলল…..
—মনি মা এই আপুটা কে?
ভদ্র মহিলাঃএই আপুটা তোমাদের ভাইয়ার জীবন সাথী।তোমাদের ভাইয়ার……
ভদ্র মহিলাকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে একজন বাচ্চা বলে উঠল…..
—ও মনি মা বুঝতে পেরেছি এই আপুটা আমাদের ভাইয়ার বউ।
ভদ্র মহিলা মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে হ‍্যা বলল।
আরেক জন বাচ্চা বলল……

—মনি মা এই আপুটা যদি ভাইয়ার বউ হয় তাহলে তো আমাদের ভাবি হবে তুমি আপু বলছো কেন?
ভদ্র মহিলা কিছু বলার আগেই আরেক জন বাচ্চা সান কে উদ্দেশ্য করে বলল……
—ভাইয়া এটা তো তোমার বউ।আমারা তাকে কি বলে ডাকবো?ভাবি না আপু?
সান মুচকি হেসে বলল…..
—যাকে ডাকবে তাকেই জিগ‍্যেস করো কি বলে ডাকবে।
বাচ্চাটি ইশফার সামনে গিয়ে কাচুমাচু করে বলল…….
—আমরা আপনাকে কি বলে ডাকবো?আপু না ভাবি?
ইশফা গম্ভীর গলায় বলল……
—তোমাদের যা ইচ্ছে তাই ডাকতে পারো।তবে একটা শর্ত আছে।
ইশফার গম্ভীর গলার কথা শুনে সবার মুখটা ছোট হয়ে গেলো।সবাই প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে ইশফার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।সান এর চেহারায় তো মনে হচ্ছে মেঘ জমে গেছে।সান মনে মনে প্রর্থনা করছে ইশফা যেন এদের সাথে কোন রকম মিস বিহেব না করে।
ইশফা সবার দিকে চোখ বুলিয়ে মুচকি হেসে বলল……

—আমার শর্ত হল আমাকে তোমাদের ভাইয়ার মত তুমি করে বলতে হবে আর এতো,এতো,এতো ভালোবাসতে হবে। (হাত দিয়ে দেখিয়ে)কি পারবে তো?
সবাই খুশি হয়ে চেচিয়ে বলল….
—হ‍্যা পারবো।
ইশফা খুশি হয়ে হাটু গেড়ে বসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল……
—তাহলে আমার থেকে দূরে দাড়িয়ে রয়েছো কেন?কাছে আসো।
সবাই খুশি হয়ে ইশফার উপর ঝাপিয়ে পরল।
ইশফাকে বাচ্চাদের সাথে হাসিমুখে কথা বলতে দেখে সান মুচকি হেসে বড় করে একটা নিশ্বাস ফেললো।মনে হচ্ছে সানের বুক থেকে একটা বড় পাথর সরে গেছে।সান নিজের মনে ইশফাকে নিয়ে উল্টোপাল্টা ভাবার জন‍্য মনে মনে নিজেকে গালাগাল করতে লাগলো।

ইশিতা বেগম চলে যাওয়ার পর ইশরা জিদান কে ফ‍্যালফ‍্যাল চোখে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে।চেহারা কেমন মলিন হয়ে গেছে,চোখের নিচে কালি পরে রয়েছে, চুলে মনে হচ্ছে কোন রকম চিরুনি চালিয়ে এসেছে।জিদান কিছুক্ষন চুপকরে বসে থেকে উঠে খাবারের ট্রেটা নিয়ে ইশরার সামনে চেয়ার টেনে বসল।জিদান ট্রে থেকে এক টুকরো আপেল ইশার দিকে বাড়িয়ে দিল।ইশরা আপেলের টুকরো হাতে নিয়ে বসে রইল।
—আপেল খেতে দিয়েছি হাতে নিয়ে বসে থাকতে দেইনি।
জিদানের কথা শুনে ইশরা কাচুমাচু করে বলল……

—এই ফল খেয়ে আমার পেট ভরবে না।আমার প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে।দেখোনা ফুপি কিছু রান্না করেছে কি না।
জিদান ইশরার দিকে সন্দেহের চোখে তাকাতেই ইশরা ইনোসেন্ট ফেস করে বলল……
—সত‍্যি বলছি প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে।মনে হচ্ছে পেটের ইন্দুরগুলো লাফালাফি করছে।
জিদান ইশরার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল……..
—তুই লাফালাফি করতে পারছিস না দেখে তোর পেটের ইন্দুরগুলো তোর কাজ করে দিচ্ছে।
ইশরা জিদানের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই জিদান মলিন হেসে বলল…….

—ছোটবেলার অভ‍্যাস এখনো যায়নি তোর তাই না?
ইশরা জিদানের দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকাতেই জিদান এক দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলল……
—আমাকে খাওয়ানোর জন‍্যই যে ক্ষুধার বাহানা করছিস তা কি ভাবছিস আমি বুঝতে পারিনি।
ইশরা চোর ধরা পরার মত চেহারা করে ভেঙচি কেটে বলল……
—বয়েই গেছে আমার তোমাকে খাওয়ানোর জন‍্য মিথ‍্যে কথা বলতে হুহ…..
জিদান কিছু না বলে ইশরার দিকে তাকিয়ে মলিন হাসতে।

সান বুকে হাত বেধে গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে দূর থেকে ইশফাকে পর্যবেক্ষণ করছে।ইশফা বাচ্চাদের সাথে খেলা করছে আর হাসাহাসি করছে।বাচ্চাদের সাথে ইশফাও পুরো বাচ্চা হয়ে গেছে।সান ভাবতেও পারেনি ইশফা অল্প সময়ে বাচ্চাদের সাথে এতোটা মিশে যাবে।
সান এখানে আসার পর এখানকার সবার জন‍্য খাবারের অর্ডার করেছে।খাবার আসার পর ভদ্র মহিলা এসে বাচ্চাদের খাবারের জন‍্য ডাক দিতেই বাচ্চারা খেলা রেখে সেদিকে চলে গেলো।ইশফা হাপাতে হাপাতে এক গাছের ছায়ার নিচে গিয়ে বসল।সান ইশফার সামনে গিয়ে পানিতে বোতল বাড়িয়ে দিতেই ইশফা বোতল ছু মেড়ে নিয়ে গটগট করে পানি পান করল।
সান ইশফার পাশে বসে টিস‍্যু বাড়িয়ে দিতেই ইশফা সান এর দিকে একপলক তাকিয়ে টিস‍্যু দিয়ে তার চেহারার ঘাম মুছতে লাগলো।দুজনই পাশাপাশি চুপ করে বসে রয়েছে।কারো মুখে কোন কথা নেই।কিছুক্ষন পর সান ইশফার দিকে তাকিয়ে বলল…..

—আমি তো মনে করেছিলাম, মারামারি, রাগ দেখানো ছাড়া কিছুই পারো না। এতো তাড়াতাড়ি যে বাচ্চাদের সাথে মিশে যাবে তা ভাবতেও পারিনি।
ইশফা মুচকি হেসে বলল…..
—বাচ্চাদের সাথে মিশতে আমার বেশি সময় লাগে না।আমাদের গ্রামের বাড়ির পাশে একটা মাঠ ছিলো সেখানে প্রতিদিন বাচ্চাদের সাথে খেলা করতাম।মা তো মাঝে মাঝে লাঠি নিয়ে যেত আমাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে।আর ইরু তো বাচ্চাদের সাথে খেলতাম বলে কত কিছুই না বলতো। আজ প্রায় চার বছর পর আমি বাচ্চাদের সাথে খেলার সুযোগ পেয়ে নিজেই ওদের সাথে বাচ্চা হয়ে গিয়েছিলাম।
সান কিছু না বলে শুধু মুচকি হাসলো।
ইশফাঃএটা কি আপনাদের আশ্রম?
সান ইশফার দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল……

—না এটা আমাদের আশ্রম না।যাকে সবাই মনি মা ডাকে সে একদিন আমার গাড়ির সাথে ছোট একটা এক্সিডেন্ট করে।তাকে ট্রিটমেন্ট করে এখানে দিয়ে যেতে এসেই এদের সাথে আমার পরিচয়।সম্পর্ক ছাড়া যে কেউ কাউকে নিস্বার্থ ভাবে ভালোবাসতে পারে সেদিন তাদের দেখেই বুঝেছি।মনি মা ছোট একটা এক্সিডেন্টে সবাই চেহেরায় আমি তাকে হারানোর ভয় দেখেছি।একজন বাচ্চা তো পারলে আমাকে বেধে পিটায়।কেন তার মনি মা কে আমি কষ্ট দিয়েছি।আমার জন‍্য তার মনি মা কষ্ট পাচ্ছে।আরেক জন আন্টি বহুত কষ্ট করে বাচ্চাটাকে সামলিয়েছে।সেদিনের পর থেকে মাঝে মাঝে এদের সাথে এসে দেখা করে যাই।সাধ‍্য অনুযায়ী এদের জন‍্য কিছু করার ব‍্যবস্থা করি এই আর কি।জানো আমার যখন মুড খারাপ থাকে বা বেশি রেগে যাই তখন আমি এদের কাছে চলে আসি।অটোমেটিক মুড ঠিক হয়ে যায়।আমার মনে হয় এদের কাছে কোন যাদু আছে তাই তো এরা খুব সহজে সবাইকে আপন করে নিতে পারে।সহজেই কারো মন ভালো করে দিতে পারে।

—ধন‍্যবাদ এতো সুন্দর একটা পরিবেশে নিয়ে আসার জন‍্য।
সান ইশফার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল……
—মুড ঠিক হয়েছে তাহলে।
—মুড ঠিক হয়েছে কিন্তু আপনার উপর আমি এখনো রেগে আছি?
সান ইশফার কি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল…..
—কারনটা জানতে পারি?
—আপনার জন‍্য ঐ এলি,চেলিকে আমি ভালো মত ধুয়ে দিতে পারিনি।
সান অবাক হয়ে বলল……
—থাপ্পড় দিয়েছো,থ্রেড দিয়েছো তার পরেও বলছো ধুয়ে দিতে পারোনি?
—ঐ টুকু থ্রেডে মন ভরে নাকি।আচ্ছা আপনি কেন আমাকে তখন বাধা দিলেন? আজ সারারাতেও ঐ চেলিকে ইচ্ছে মত ধুয়ে দিতে না পারায় ডিপ্রেশনে গিয়ে ঘুম হবে না আমার।

—যা করেছো তাই বহুত ছিলো।সবার সামনে যেই ভাবে থ্রেড দিয়েছো আরো বেশি কিছু করতে গেছে পরে তোমারই সমস‍্যা হত।এইতেই আমার ব‍্যপারটা হেন্ডেল করতে বহুত প্রবলেমে পরতে হবে।পিন্সিপাল স‍্যার ডাকালে সমস‍্যা হতে পারে।
—কেমন ভিপি হয়েছেন এইটুকু ব‍্যাপার হেন্ডেল করতে পারবেন না।জানেন আগের কলেজে আমি একেকটার হাড়-গোড় ফাটিয়ে দিয়েছি তার পরেও একদিনের জন‍্য পিন্সিপ‍াল স‍্যার ডাকে নি এমনকি কোন স‍্যাররাও তার জন‍্য জবাবদিহি চায় নি।
সান বিরবির করে বলল…….
—চাকরির ভয় সবারই আছে।তাই তো কেউ কিছু বলার সাহস পায়নি।
ইশফা সন্দেহের চোখে সান এর দিকে তাকিয়ে বলল…….
—কি বলছেন আপনি বিরবির করে?
সান থতমত খেয়ে বলল……

—কিছু না।
—না আপনি কিছু বলেছেন আমি শুনেছি।
—তা হলে তো শুনেছোই।
—শুনেছি তবে ভালো মত শুনিনি কি বলেছেন।তাড়াতাড়ি বলুন কি বলেছেন।তা না হলে……
ইশফা আর কিছু বলার আগেই সান এর ফোনটা বেজে উঠল।সান ফোন বের করে কথা বলতেই সান এর চেহারায় খুশির ঝিলিক ফুটে উঠল।সান কল কেটে হাসি মুখে ইশফার দিকে তাকাতেই দেখলো ইশফা ওর দিকে প্রশ্ন বোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে।সান হুট করে ইশফাকে জড়িয়ে ধরে বলল…….

—কংগ্রেচুলেশন।তুমি মামি হতে যাচ্ছ।আর আমি মামা।রিধি প্রেগন‍্যান্ট কথাটা শুনে যে আমার কি খুশি লাগছে আমি তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না।আই এম সো হ‍্যাপি।
রিধি প্রেগন‍্যান্ট কথাটা যেন ইশফার মাথায় চরকির মত ঘুরপাক করতে লাগলো।না চাইতেও ইশফার চোখ দিয়ে জ্বল গড়িয়ে পরল।কেন তা নিজেও জানে না।
সান একের পর এক কথা বলেই চলেছে।থামান নামই নিচ্ছে না।সান এর চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে সান কতটা খুশি।আশেপাশের কোন কিছুতেই তার হুস নেই।
সান কথা থামাতেই ইশফা কাপাকাপা গলায় বলল…..
—হোয়াট এ সারপ্রাইজ!এক সাথে দুইটি গুড নিউজ পেলাম।বিয়ের নিউজটা প্রথমে না পেলেও বেবির নিউজটা কিন্তু তাড়াতাড়িই পেয়েছি।

ইশফার কথা শুনে সান এর টনক নড়ল।সে যে খুশিতে আত্মহারা হয়ে কত বড় যে ভুল করে ফেলেছে তা বুঝতে পেরে ইশফার দিকে তাকাল।ইশফার চোখে পানি টলমল করতে দেখে সান অপরাধীর মত মাথা নিচু করে ফেলল।পুনরায় ইশফার দিকে তাকানোর সাহস করতে পারলো না।ইশফা চোখের জল গড়িয়ে পরার আগেই মুছে নিল।
সান একটু চুপ করে থেকে অপরাধীর মত বলল…..
—বাঘিনী আ……
সানকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে ইশফা মলিন হেসে বলল…..
—কংগ্রেচুলেশন।আপনার চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে মামা হওয়ার খবর শুনে আপনি অনেক খুশি হয়েছেন।তা রিধি আপনার কেমন বোন?
—আসলে বাঘিনী আ…….
সানকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়েই ইশফা বলল……

—রিধি কখনো বলেনি তাই জিগ্যেস করলাম।না বলতে চাইলে সমস‍্যা নেই আমি জোর করবো না।আসলে ওর বিয়ে ব‍্যপারটাও জানা ছিলো না।তাই প্রথমে প্রেগন‍্যান্ট শুনে একটু শকড হয়ে গিয়েছিলাম।
ইশফা একটু চুপ থেকে বলল…..
—হয়তো আমিই ওর ভালো বন্ধু হতে পারিনি তাই নিজের ব‍্যপারে কিছু আমার সাথে সেয়ার করেনি।
কথাগুলো বলার সময় ইশফা চোখ দিয়ে একফোটা জল গড়িয়ে পরল।
সান নরম গলায় বলল…..
—আসলে আমিই বলতে মানা করেছিলাম। তুমি যে এতো কষ……
সান কে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে ইশফা তাড়া দিয়ে বলল……
—তো এবার বাসায় ফিরা যাক।দেরি হলে মা খুব চিন্তা করবে সাথে বকাও খেতে হবে।
কথাটা বলেই ইশফা উঠে চলে গেলো।সান এক দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে উঠে দাড়ালো।ইশফা যে রিধির বিয়ের ব‍্যাপারটা তার কাছ থেকে গোপন রাখার কারনে অনেক কষ্ট পেয়েছে তা তার চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।

ইশফা,তুশি ভার্সিটি মাঠের এক কোনে মনমরা হয়ে বসে রয়েছে।রিধির ব‍্যপারটা প্রথমে তুশির মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে।যাকে এতোদিন যেনে এসেছে আনম‍্যারেড হুট করেই যদি শোনে সে প্রেগন‍্যাট তাহলে তো শকড লাগারই কথা।
তুশি আফসোসের শুরে বলল……
—কি করলাম রে ইফু জীবনে কি করলাম?রিধি বিয়া কইরা বাচ্চা ফুটাইয়া ফালাইতাছে আর আমগো দেখ থুক্কু
আমারে দেখ। আমি এখনো সিঙ্গেল ঘুরতাছি।এই জীবন আর রাখতে চাইনারে ইফু….কেউ রে একটু বিষ খাইতে ক’আমি মইরা যাই।
ইশফা তুশির দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই তুশি ঝাঝালো গলায় বলল…..
—চেতোস ক‍্যান?তোমারও তো বিয়া হইয়া গেছে তুমিও দুইদিন পর বাচ্চা ফুটাইবা।আমার না আছে বয়ফ্রেন্ড না আছে জামাই।আমার কষ্ট তোমরা কেউ বুঝবা না।
ইশফা দাতে দাত চেপে বলল……

—ইশান ভাইয়ারে খবর দিমু?তোর শখ পুরা করতে?
—রাখ তোর ইশান ভাই। আমি আছি আমার জ্বালায়।রিধিকি বাচ্চি একটু কইলোও না ওর বিয়ার কথা।তুই ক’কইলে কি আমরা ওর জামাইরে নিয়া জাইতাম?
—এতে রিধির কোন দোষ নাই।আমি একশতে একশ পারসেন্ট সিউর এর পিছনে ঐ বাদর দলের নেতার হাত আছে।
—তোর তো সব কিছুতেই জিজুরে সন্দেহ।জিজু দোষ করলেও দোষী না করলেও।
ইশফা,তুশির দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বলল…….

—ঐ বাদর তো জিজু হলো কবের থেকে?তুমি এত তার হয়ে ছালা ধরতাছো ক‍্যান?
—কুত্তী তোর জামাই আমার জিজু হইবো না তো কি হইবো?সেই হিসেবে আমি ছালা ধরুম না তো কে ধরবো শুনি।
—রাখ তোর ছালা ধরা।ইরু আর তুই তোদের দুইটারে মাঝে মাঝে মনে চায় ড্রেনের পচা পানিতে হাবুডুবু খাওয়াতে।সিরিয়াস একটা ব‍্যাপারে কথা বলার সময় ও ওদের মজা শুরু হয়ে যায়।
তুমি কাদো কাদো হয়ে বলল……
—তুই আমগো এমতে কইতে পারলি?
ইশফা চোখ রাগিয়ে তুশির দিকে তাকিয়ে
কিছু না বলে উঠে দাড়াল।
ইশফা,তুশি করিডোর দিয়ে ক্লাশরুমের দিকে যাওয়ার সময় সান ওদের সামনে এসে দাড়ালো।ইশফা সান কে এক পলক দেখেও না দেখার ভান করে কোন কথা না বলেই ক্লাসের দিকে গটগট করে চলে গেলো।সান কিছু না বলে ইশফার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।

২দিন পর…….
সান ফুল স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে।নিজের কাছে নিজেকে পাগল পাগল লাগছে।একে তো ইশফা ভার্সিটিতে যেই কান্ড ঘটিয়েছে তার জন‍্য ঝামেলায় পরতে হচ্ছে।এখন সান যদি উল্টো রিয়েক্ট করে বা এলিকে কোন কথা শোনায় তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে।ইশফার যাতে পরে কোন সমস‍্যা না হয় তাই তো সে দাতে দাত চেপে এলিকে কিছু না বলে চুপ করে রয়েছে।আর অপর দিকে আজ দুদিন ধরে ইশফার কোন খবর নেই।দুদিন ধরে তো ভার্সিটিতে আসছেই না তার উপরে ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছে।রাগে সান এর মাথা গরম হয়ে রয়েছে।

ইশফা ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।বিছানা ঠিক করে শোয়ার আগেই ইশরার ফোনটা বেজে উঠলো।স্কিনে সিনথিয়া নামটা ভেসে উঠতে দেখে ইশফা কল রিসিভ করে সালাম দিতে না দিতেই অপর পাশ থেকে ভেসে এল…….
—পাচ মিনিটের মধ‍্যে ছাদে আসবে।নয়তো আমি সোজা তোমাদের ফ্লাটে ঢুকবো।
সান এর রাগি গলার কথা শুনে ইশফা ঘাবড়ে গেল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মিনমিনে গলায় বলল……
—রাত পোনে বারটা বাজে।এতো রাতে আমি আপনার বাসার ছাদে কি করে যাবো?
সান ধমক দিয়ে বলল……
—স্টুপিট তোমার বাসার ছাদে আসো।পাচ মিনিটের থেকে এক সেকেন্ড লেট হলে আমি সোজা গিয়ে তোমাকে তোমার রুম থেকে তুলে আনবো।

কথাটা বলেই সান ফট করে লাইন কেটে দিল।সান এর কথা শুনেই ইশফার বুঝতে বাকি রইল না সান যে বহুত রেগে আছে।সান কে দিয়ে বিশ্বাস নেই পাচ মিনিটের মধ‍্যে ছাদে না গেলে সত‍্যি সত‍্যি চলে আসতে পারে।তাই সে জটপট ওরনা দিয়ে ঘোমটা দিয়ে পা টিপে টিপে মায়ের রুমে উকি দিয়ে মা কে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে ছাদের দিকে পা বাড়ালো।
ইশফা আস্তে আস্তে পা ফেলে ছাদে গিয়ে দাড়াতে না দাড়াতেই সান ইশফাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে রাগি গলায় বলল……
—কি পেয়েছো কি তুমি?আমাকে কি মানুষ মনে হয় না?শান্তিতে কি বাচতে দিবে না আমাকে?
সান শক্ত করে ইশফার বাহু চেপে ধরাতে ইশফা ব‍্যাথায় কুকরিয়ে উঠে বলল……
—আমার লাগছে।

—আমার লাগে না?নাকি আমি পাথর?আমার মন বলতে কি কিছু নেই?কেন তুই বুঝিস না তোকে একপলক দেখতে না পারলে,তোর কন্ঠস্বর শুনতে না পারলে আমি পাগল হয়ে যাই।তুই কি আমাকে মেরে ফেলতে চাস?তাহলে বার বার মারার চেয়ে একবারে মেরে ফেল।কিছু বলবো না আমি তোকে।কোন প্রকার বাধাও দিবো না আমি।যেভাবে খুশি মেরে ফেল আমাকে।তারপরেও যদি একটু শান্তি পাই।একটু শান্তি দে আমাকে।
ইশফা ব‍্যাথা ভুলে অবাক চোখে সান এর দিকে তাকিয়ে রয়েছে।ছাদের লাইটের আলোতে সান এর রাগি মুখটা ইশফার দেখতে একটুও অসুবিধে হলো না।ইশফা কাপা কাপা গলায় বলল……

—শুনুন……
সান ইশফাকে ছেড়ে দিয়ে দেয়ালে ঘুষি দিয়ে বলল…….
—কি বলবি তুই কি বলবি?বলার কোন মুখ আছে তোর।দুই,দুইটা দিন না তোকে দেখতে পেয়েছি না তোর কন্ঠ শুনতে পেরেছি।কেন করিস তুই এমন?কেন পালিয়ে বেড়াস আমার থেকে?কেন তুই আমাকে বুঝিস না।আমাকে একটু বুঝলে কি হয় তোর কি হয় আমাকে একটু বুঝলে।
সান দু হাত দিয়ে মাথার চুল টানছে আর কথা গুলো বলছে।
সান এর পাগলামো বাড়তে লাগলো।সান, ইশফার কোন কথা না শুনে পাগলামো করেই চলেছে। ইশফা কিছুতেই সান এর পাগলামো থামাতে না পেরে ফট করে সান এর কলার চেপে ধরে রাগি গলায় বলল……

—চুপ একদম চুপ। একটাও কথা বলবেন না।কি মনে করেন নিজেকে হ‍্যা কি মনে করেন? কষ্ট শুধু আপনার একা হয় আমার হয় না?জোর করে আংটি পরিয়েছেন,না জানিয়ে বিয়ে করেছেন।দিনের পর দিন ফোন করে বিরক্ত করেছেন।এসব করার সময় একবারো কি ভেবেছেন আমার কষ্ট হয়েছে কিনা।না তা ভাববেন কেন?ইশফা তো পাষান তার কি মন আছে নাকি।ইশফা তো নিজের অনুভুতি নিজের মনের কথা কারো সাথে সেয়ার করতে পারেনা তাই সবাই ভাবে ইশফা পাষান।আমারোও মন আছে আমারো কষ্ট হয়েছে।কেন সব সময় এমন করেন আপনি? কেন এমন করেন?
কথাগুলো বলতে বলতে ইশফা ডুকরে কান্না করতে লাগলো।

মনের পিঞ্জরে পর্ব ২৯+৩০+৩১

সান ইশফাকে কান্না করতে দেখে তার সব রাগ চলে গেলো।ইশফার দিকে মলিন চোখে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে নরম গলায় বলল…….
—আমি তোমাকে হাড়াতে চাইনি।তাই তো সব এভাবে….।আমার কাজে তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছো।তার জন‍্য সরি।আজকের পর থেকে তোমাকে আর কোন ডিস্টাব করবো না।তুমি যেভাবে থাকতে চাইবে সেভাবেই পারবে।শুধু একটা রিকুয়েস্ট আমাকে ছেড়ে যেও না।পাশে না থাকি দূর থেকেই না হয় ভালোবেসে যাবো।তারপরেও তো আমারই থাকবে।
সান এর কথা শুনে ইশফা রেগে সান এর গলা চেপে ধরে বলল……

—ঐ মগের মুল্লুক পাইছেন হ‍্যা।এতোদিন দেবদাসের মত পিছু ঘুইড়া,ছেছড়া পোলাপাইনগো মত ছেছড়ামি কইরা এহন আইছেন সাধু সাজতে।ছিটকির ডাইল দিয়া পিটাইয়া সাধু সাজনের ভুত তাড়ামু।
এহন দূরে সরনের কথা কন ক‍্যা হ‍্যা?দূরে সইরা কি ঐ এলি, চেলির কাছে যাওনের ইচ্ছা নাকি?স্বপ্নেও যদি ঐ এলি,চেলির কাছে যাওনের কথা চিন্তা করেন না তাইলেও আপনার খবর আছে।
ইশফা এই রনচন্ডী রুপ দেখে সান কোন কথা না বলে ইশফা দিকে ফ‍্যালফ‍্যাল নয়নে তাকিয়ে রইল।আনমনেই সান এর মুখ থেকে বেড়িয়ে এল…….
—কে তুমি?তুমি আমার বাঘিনী তো?

মনের পিঞ্জরে পর্ব ৩৫+৩৬+৩৭