মনের পিঞ্জরে পর্ব ৪৪+৪৫+৪৬ || Ariyana Nur

মনের পিঞ্জরে পর্ব ৪৪+৪৫+৪৬
Ariyana Nur

সান অফিসে নিজের কেবিনে চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে রয়েছে।সামনেই টেবিলে উপর কাজের কয়েকটি ফাইল পরে রয়েছে।কিন্তু সেদিকে তার কোন খেয়াল নেই।খেয়াল করেও কোন লাভ নেই কেননা কাজের দিকে সে কিছুতেই মন বসাতে পারছে না।কাজেই বা মন বসাবে কি করে?সে তো ভিতরে ভিতরে ইশফার উপর প্রচন্ড রেগে রয়েছে।তার রাগ করার কারন হল,আজ সান এর বার্থডে।কাল রাতে ইশফার সাথে কথা বলার সময় সান ভেবেছিলো ইশফা তাকে কল এ রেখেই সবার আগে উইস করবে।কিন্তু সান এর সেই আশায় পানি ঢেলে ইশফা ১২টা বাজার কয়েক মিনিট আগেই কিছু না বলে ফোন কেটে দেয়।সান পুনরায় কল ব‍্যাক না করে ইশফার ফোনের আশায় অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত থাকায় ঘুমিয়ে পরে।সকালে ঘুম ভাঙতেই সান প্রথমে ফোন চেক করে দেখে নেয় ইশফা রাতে ফোন দিয়েছে কিনা।ফোন ধরতেই সান নিরাস হয়ে যায়। কেননা ইশফার নাম্বার থেকে না কোন কল আর নাই বা কোন মেসেজে এসেছে।সান রাগ করে ফোন বেডে ছুড়ে ফেলে ফ্রেস হতে চলে যায়।সারাদিনও রাগ করে সান আর ইশফাকে একবারের জন‍্যও কল করেনি আর না ইশফা সানকে কল করেছে।

দরজায় নক হতেই সান সোজা হয়ে বসে বলল……
—কামিং।
সাথে সাথে একজন পিয়ন ভিতরে ঢুকে ভনিতা ছাড়াই বলল…….
—বড় স‍্যার খরব পাঠিয়েছে ফাইলগুলো সব কমম্পিট হয়েছে কিনা।
সান একটা চাপা নিশ্বাস ফেলে বলল…..
—তুমি যাও। আমি দেখে নিচ্ছি।
সান এর কথা শুনে পিয়ন আর কিছু না বলেই চলে গেলো।পিয়ন চলে যেতেই সান নিজের রাগটাকে দমানোর জন‍্য বড় বড় কয়েকটা নিশ্বাস নিয়ে সামনে থেকে একটা ফাইল তুলে খুলে নিল।অনেকক্ষন সামনে ফাইল খুলে বসে থাকার পরেও সান কিছুতেই কাজে মন বসাতে পারলো না।তাতেই যেন তার নিভু নিভু করা রাগটা দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল।সান নিজের রাগটাকে আর দমাতে না পেরে ইশফাকে কয়েকটা কড়া কথা শোনানোর জন‍্য পাশ থেকে ফোনটা হাতে তুলে নিল। ইশফার নাম্বারে কল করার আগেই তার ফোনটা বেজে উঠল।ফোনের স্কিনে “আন্টি আশ্রম” লেখাটি দেখে সান এর কপালে একটু ভাজ পরে গেলো।কেননা তিনি কখনো সানকে কল দেন না।সান ওই সব সময় তাকে ফোন করে খবরা খবর নিয়ে থাকে।সান ফোন রিসিভ করে সালাম দিতে না দিতেই অপর পাশ থেকে ভেসে এল…..

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

—বাবা একটা সমস্যা হয়ে গেছে।
তার কথা শুনে সান উওেজিত হয়ে বলল…..
—কি হয়েছে আন্টি?আপনার কথা এমন শোনা যাচ্ছে কেন?
—ফোনে কিছু বলতে পারবো না বাবা। প্লিজ তুমি যত তাড়াতাড়ি পারো এখানে চলে আসো।প্লিজ বাবা মানা করো না।তাড়াতাড়ি চলে আসো।
সান কিছু বলার আগেই ফোনের লাইন কেটে গেলো।কল কেটে যেতেই সান কয়েক বার ঐ নাম্বারে ডায়াল করলো কিন্তু প্রতিবারই ভেসে এল “দুঃখিত কাঙ্খিত নাম্বারটিতে সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না।” সান এর কাছে আশ্রমের অরেকটা নাম্বার ছিলো।সান দ্রুত ঐ নাম্বারে কল করল।কিন্তু সেই নাম্বারটিও বন্ধ।তাই সান দেড়ি না করে ড্রয়ার থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে তড়িঘড়ি কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো।

আধা ঘন্টার মধ‍্যেই সান “স্বপ্নের রাজপ্রাসাদে” পৌচ্ছে গেল।গেডের এর পাশে গাড়ি পার্ক করে দ্রুত গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করল।ভিতরে প্রবেশ করতেই সান পুরো থ’হয়ে গেলো কেননা ভিতরে খুব সুন্দর করে বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে।সান কিছু বুঝার আগেই ১০/১২জন বাচ্চা হাতে লাল হার্ট সেপ বেলুন নিয়ে সান এর দিকে দৌড়ে আসলো।প্রতি বেলুনের মধ‍্যেই লিখা ছিলো “হ‍্যাপি বার্থডে”।বাচ্চারা এক এক করে সান এর হাতে বেলুন দিতে লাগল আর সানকে উইস করতে লাগল।
সান এখনো ঘোরের মধ‍্যে আছে। ঘোর কাটিয়ে সান বাচ্চাদের উদ্দেশ্য বলল……

—এসব কি হচ্ছে?আন্টি কোথায়?আন্টি ঠিক আছে তো?
বাচ্চাদের থেকে একজন বাচ্চা বলল…..
—সবাই ঠিক আছে ভাইয়া। এখন কথা না বলে আমাদের সাথে চল।
সান কিছু বুঝা বা বলার আগেই সান এর হাত ধরে টেনে তারা সানকে সামনে নিয়ে যেতে লাগল।সান বাচ্চাদের সাথে কিছুটা সামনে যেতেই দেখলো কিছু বাচ্চারা লাল হার্ট সেপ বেলুন হাতে দাড়িয়ে রয়েছে।তাদের হাতের বেলুনের মধ‍্যেই “এই লাভ ইউ” লিখা।তারা সবাই ও এক এক করে সান এর হাতে বেলুন ধরিয়ে দিয়ে সান কে উইস করতে লাগল।সবার বেলুন দেওয়া শেষ হতেই সবাই এক সাথে চেচিয়ে সানকে উইস করল।সান খুশি হয়ে বাচ্চাদের সামনে হাটু গেড়ে বসে বলল…….

—ধন‍্যবাদ,ধন‍্যবাদ।অনেক অনেক ধন‍্যবাদ।আই এম সো হ‍্যাপি।তোমরা কি করে জানলে আজ আমার বার্থডে?
বাচ্চারা কোন কথা না বলে একজন পিছন থেকে সান এর চোখ বেধে দিতে লাগলো।সান বাধা দিয়ে বলল……
—আরে আরে কি করছো?চোখ বাধছো কেন?
বাচ্চাটি বিরক্ত হয়ে বলল……
—ভাইয়া আমার কাজে ডিস্টাব করো না তো।আমাকে আমার কাজ করতে দাও।
আমরা না বলার আগে চোখ খুলবে না বলে দিলাম।
সান কিছু না বলে চুপ করে রইল।তারা সান এর হাত থেকে বেলুনগুলো নিয়ে নিল।সানকে দাড় করিয়ে দিয়ে তারা সরে গেল।
কিছুক্ষন পর বাচ্চাদের কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে সান বলল……

—বাচ্চারা কোথায় তোমরা?আর কতক্ষন এভাবে দাড়িয়ে থাকবো?চোখ কি খুলবো?
বাচ্চাদের থেকে কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে সান চোখ থেকে কাপড় সরিয়ে তাকাতেই হা হয়ে গেলো।কেননা সকল বাচ্চারা মিলে হার্ট সেপ আকার ধারন করে বেলুন হাতে নিয়ে সানকে ঘিরে দাড়িয়ে রয়েছে।আর সান এর সামনে একজন রমনী হাটু গেড়ে বসে আছে।তার দু ‘হাতে দুটো হার্ট সেপ বেলুন।একটার মধ‍্যে লিখা “হ‍্যাপি বার্থডে”। অপরটিতে লিখা “আই লাভ ইউ”।রমনীটি “আই লাভ ইউ” লিখা বেলুনটি সান এর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে “হ‍্যাপি বার্থডে” লিখা বেলুনটি নিজের মুখের সামনে ধরে রেখেছে।বেলুন দিয়ে মুখ ঢেকে রাখলেও হাতের আংটি টি বলে দিচ্ছে মানুষটা কেন?সব দেখে সান যেন কথা বলার ভাষাই হাড়িয়ে ফেলেছে।সান কি বলবে তার কি বলা উচিত সে কিছুই বুঝতে পারছে না।সান কি স্বপ্ন দেখছে নাকি যা হচ্ছে তা সব বাস্তব তাও সান এর জানা নেই। সানকে চুপ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে রমনীটি মুখ থেকে একটু বেলুনটা সরিয়ে মিনমিনে গলায় বলল…….

—কি হল কথা বলছেন না কেন?আপনি জানেন আমি মুখে কিছু বলতে পারি না।তাই যতটুকু বলেছি ততটুকেই বুঝে নিন।এর বেশি আমি বলতে পারবো না।যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন না। আমার পা ব‍্যাথা করছে তো।
সামনের রমনীটি আর কেউ না ইশফা।ইশফার কথা শুনে সান এর ঠোটের কোনে হাসির ঝিলিক ফুটে উঠল।সান ইশফার হাত থেকে বেলুনটি নিতেই ইশফা অপর হাতের বেলুনটি সান এর দিকে বাড়িয়ে দিল।সান মুচকি হেসে সেটা হাতে নিয়ে ইশফার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল।ইশফা মুচকি হেসে সান এর হাত ধরে উঠে দাড়ালো।ইশফা দাড়াতেই সান অবাক চোখে ইশফার দিকে তাকিয়ে রইল।এতোক্ষন সান ইশফাকে খেয়াল না করলেও এখন সে খুটিয়ে খুটিয়ে ইশফাকে দেখতে লাগলো।কালো শাড়ি,দু’হাত ভর্তি কালো কাচের চুড়ি,মাথায় সুন্দর করে হিজাব বাধা।হালকা মেকআপে সান এর কাছে ইশফাকে পুরো অপ্সরী লাগছে।ইশফা কোন কথা না বলে নিজের শাড়ির আচল দিয়ে সান এর কপালের বিন্দু বিন্দু জমে থাকা ঘাম মুছতে মুছতে বলল……

—ইস একেবারে ঘেমেনেয়ে ফেলেছে।এসি গাড়িতেই তো এসেছেন এতো ঘামলেন কিভাবে?
সান ইশফার কথার উওর না দিয়ে ইশফার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।আজ যেন সান নতুন এক ইশফাকে দেখছে।ইশফার এই নতুন রুপে সানকে পুরোই বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে।
–উহুম উহুম ভাই তোর ভাবিকে দেখা শেষ হলে আমাদের দিকেও একটু তাকা।আমরাও তোকে উইস করার জন‍্য দাড়িয়ে রয়েছি।
সিনথিয়ার কথা শুনে সান ইশফার থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকাতেই দেখল সামনে সিনথিয়া,তুশি, রিধি, নিরব, ইশান,হেনা,শিপন দাড়িয়ে রয়েছে।সানকে তাদের দিকে তাকাতে দেখেই সবাই এক সাথে চেচিয়ে সানকে উইস করল।সান প্রথমে কিছুটা অবাক হলেও মুহূর্তের মধ‍্যে তার চেহারার হাসির রেখা ফুটে উঠল।

একে একে সবাই সানকে উইস করলো। আশ্রমের মনি মা এসে সানের মাথায় হাত রেখে দোয়া করল।
সানঃভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন আন্টি।প্রচুর ভয় পেয়েছিলাম।আমি যে কিভাবে ড্রাইভ করে এখানে পৌচ্ছেছি তা একমাত্র আমিই জানি।
মনি মাঃসরি বাবা।এই সব এদের বুদ্ধি।এদের কথা মতই আমি এসব করেছি।
সানঃইটস ওকে আন্টি।সরি বলার কিছু নেই।এটা যে এদের কাজ তা এখানে এসেই বুঝতে পেরেছি।
মনি মাঃতোমরা কথা বল।আমি ঐ দিকটা একটু দেখে আসি।
কথাটা বলেই মনি মা চলে গেলো।মনি মা চলে যেতেই সিনথিয়া সানকে খোচা মেরে বলল……

—ভাই তুই ভয় পেয়েছিস?তোর চেহারা দেখে তো সেটা মনে হচ্ছে না।তোর চেহারায় তো খুশির রেখা ঢেলে মেলে ফুটে উঠেছে।
রিধি সুর টেনে বলল…..
—সিনথু কি যে বলিস না তুই!খুশির রেখা ফুটবেনা তো দুঃখের রেখা ফুটবে নাকি?দেড়টা বছরের অপেক্ষার পর আজ সে……
রিধির কথার মাঝেই নিরব রিধির মুখ চেপে ধরে চোখ রাঙিয়ে ফিসফিস করে বলল……
—কবে বড় হবে তুমি?কোথায় কি বলতে হয় তা জানো না?আশেপাশে বাচ্চারা আছে।সাথে ইশফার বড় ভাই আছে।তার মধ‍্যে তুমি….?
রিধি নিজের মুখ থেকে নিরবের হাত সরিয়ে ভেঙচি কেটে বলল……

—তো কি হয়েছে?সবাই জানুক আমার ভাই তার বউ এর জন‍্য কতটা পাগল।কি কি করেছে?এদিকে তুমি কি করেছো আমার জন‍্য?কত করে বললাম আমার মিকিমাউস টিশার্টটা গায়ে ফিট হচ্ছে না। একটা নতুন সেম টু সেম টিশার্ট কিনে দিতে।সাথে মিকি মাউস এর দুটো রাউন্ড ব‍্যান্ড।দিয়েছো কিনে?
নিরবঃতোমাকে নিয়ে আর পারি না।নিজেই এখনো বাচ্চামো করো।দুদিন পর নিজের বাচ্চাকে কিভাবে সামলাবে তুমি?
হেনা ফোড়ন কেটে বলল…..
—তুই আছিস কি করতে?রিধি এই ভদ্র শয়তান বহুত জ্বালিয়েছে আমাকে।তুমি আর বেবি মিলে এটাকে ইচ্ছে মত জ্বালিয়ে তার সোধ নিবে।
নিরব হেনার মাথায় গাট্টা মেরে বলল…..

—চুপ কর ব্রিটিশ মহিলা।এমনেই আমার বউ নাচনী বুড়ি তার উপর তোকে আর ঢোলের বাড়ি দিতে হবে না।
রিধি কপালে ভাজ ফেলে দাতে দাত চেপে বলল……
—বাসায় চল আজ।নাচ কত প্রকার ও কি কি উদাহরন সহ বুঝিয়ে দিব।
রিধির কথা শুনে নিরব শুকনো ঢোক গিলে অসহায় ফেস করে রিধির দিকে তাকালো।নিরবের ফেস দেখে সবাই মিটমিট করে হাসতে লাগলো।
রিধি নিরব কে ভেঙচি কেটে সান ইশফাকে উদ্দেশ্য করে বলল……

—ভাইয়া তুমি এখনো দাড়িয়ে রয়েছো?সারপ্রাইজ কিন্তু আরো বাকি আছে।আজ তোমার বাঘিনী তোমার জন‍্য নিজের হাতে কেক বানিয়েছে।কেক দেখেই কিন্তু আমার জিভে পানি চলে এসেছে।তাড়াতাড়ি চল কেক কাটবে।আমার কিন্তু আর তর সইছে না।
সিনথিয়াঃকেক ফেক পরে কাটা হবে।ভাইয়া আগে বল ভাবির এই সারপ্রাইজ তোর কেমন লেগেছে।এই আইডিয়ার অর্ধেক বুদ্ধি কিন্তু আমার।(ভাব নিয়ে)
সান ইশফার দিকে এক পলক তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল……
—এগুলো সারপ্রাইজ না কি শক তা নিয়ে আমি কনফিউজড।
তুশিঃভাইয়া আপনার ফিউজ টিউজ সব দুর করনের পরে অনেক টাইম পাইবেন।এখন চিল করেন চিল।
সান মুচকি হেসে বলল…..
—যো হুকুম শালি সাহেবা।
সান আশেপাশে তাকিয়ে বলল……
—সবাই এখানে ভাইয়া আর ইরু কোথায়?তারা আসেনি?

সান এর কথা শুনে ইশফার মুখটা মলিন হয়ে গেলো।সান ইশফার উওরের আশায় ইশফার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।ইশফা নিজেকে সাভাবিক করে বলল……
—ভাইয়ার একটু ব‍্যাস্ত তাই আসতে পারেনি।আর ভাইয়াকে ছাড়া ইরুকে সামলানোর কারো সাধ‍্য নেই।তাই……।জানেনই তো সামান‍্য থেকে সামান‍্য বিষয় নিয়ে ইরু কি তুরকালাম বাধাতে পারে।তাই আমিও জোর দেই নি।(মুখে জোর পূর্বক হাসির রেখা টেনে)
ইশফা ঠোটের কোনে হাসির রেখা টেনে কথাটা বললেও তার হাসির আড়ালের কষ্টটা বুঝতে কারোরই বাকি রইল না।

জোস্নারাতে খোলা আকাশের নিচে নিজের কাছের মানুষটার হাতে হাত রেখে তার কাধে মাথা রেখে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে ইশফা।বাচ্চাদের সাথে,কেক কাটা হতে শুরু করে হৈ হুল্লোড়,খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আশ্রমের মাঠের একপাশে এসে বসেছে তারা।ইশফার আজকের করা নিজের কাজে নিজেই অবাক হচ্ছে।সে কি ছিলো আর কি হয়ে গেছে।যেই সানকে সে সহ‍্যই করতে পারতো না।তাকে দেখলে অজানা কারনে কেন যেন তার রাগ উঠে যেত।আজ সেই সানকে সে চোখে হাড়ায়।সান যখন ইশফাকে কল করে বিরক্ত করতো তখন একদিন সান কথার ছলে বলেছিল, তোমার আমাকে তোমার মনে জায়গা দিতে হবে না।আমি নিজের জায়গা নিজেই বানিয়ে নিব।আসলেই সান তার কথা মত কেয়ার, শাষণ,ভালোবাসা দিয়ে একটু একটু করে ইশফার মনে নিজের জায়গা নিজেই করে নিয়েছে।

ইশফা সব সময় তার জীবনে এমন একজনকে চেয়েছে যে শুধু তাকে ভালোবাসবে না।তার সাথে তার পরিবার-পরিজন কেও ভালোবাসবে।তার ইচ্ছা,চাওয়া-না চাওয়া, পছন্দ-অপছন্দ সব কিছুকে সম্মান করবে।ইশফার এই দোয়া যে আল্লাহ্ কবুল করে নিবেন তা ইশফা ভাবতেও পারেনি।সান সব সময়ই ইশফার পছন্দ অপছন্দ কে প্রাধান্য দিয়েছে।ইশফার বিপদের দিনে ইশফার ফ‍্যামিলিকে নিজের ফ‍্যামিলির মত আগলে রেখেছে।ইশরার অসুস্থতার সময় যখন ইশফা সম্পূর্ণ ভেঙে পরেছিল তখন সান ইশফার পাশে বন্ধুর মত থেকে নানান ভাবে ইশফাকে বুঝিয়ে তাকে অনেকটাই সাভাবিক করেছে।সব সময় ইশফার ঢাল হয়ে ইশফার পাশে থেকেছে।

—কি হল ভাবনা কুমারী? কি এতো ভাবছো তুমি?
সান এর কথা শুনে ইশফা ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এসে সান এর দিকে তাকিয়ে বলল……
—কিছু বললেন?
—কোথায় হাড়িয়ে রয়েছো তুমি?
—হাড়াতে দিলেন আর কই?হাড়ানোর আগেই তো নিজের সাথে বেধে ফেলেছেন।এখন এমন ভাবে আপনার সাথে আটকা পরেছি যে চাইলেও এই বাধন ছিড়ে যেতে পারবো না।
ইশফা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল……
—জীবন কত অদ্ভুত তাই না?উপরওয়ালা জীবনের মোড় কোথার থেকে কোথায় নিয়ে যায় তা কেউ কল্পণাও করতে পারে না।
ইশফার কথা শুনে সান ফট করে ইশফার মাথা নিজের কাধ থেকে সরিয়ে ইশফার থেকে একটু দূরে সরে বসে সন্দেহর চোখে ইশফাকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল।সান এর কাজে ইশফা হকচকিয়ে সান এর দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল…..
—কি হয়েছে?এমন করছেন কেন?
সান ইশফার উপর সন্দেহর নরজ রেখেই বলল….

—তুমি আমার বাঘিনী তো?আমি কেন যেন তোমার কথাবার্তায় রহস‍্য রহস‍্য গন্ধ পাচ্ছি।কেন যে মনে হচ্ছে কোন ভূত-প্রেত আমার বাঘিনীর রুপ নিয়ে আমার কাছে এসেছে আমার ঘাড় মটকাতে।
ইশফা কোমড়ে হাত রেখে সান এর দিকে রাগি চোখে তাকাতেই সান মুচকি হেসে বলল…..
—কি করব বল?এক সাথে তোমার এত নতুন রুপ আমার হজম হচ্ছে না।সব কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে।আমার বাঘিনী যে আজ পযর্ন্ত আমাকে তার মনের খবর বিন্দু পরিমান বুঝতে দেয়নি সে যে এমন একটা সারপ্রাইজ দিয়েছে তা ভাবতেই আমার যে কেমন লাগছে তা তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না।জানো আমার যদি ডানা থাকতো অথবা কারো কাছ থেকে ডানা ধার নিতে পারতাম তাহলে আমি খুশিতে মুক্ত আকাশে ঊড়ে ঊড়ে বেড়াতাম।
ইশফা মনে মনে খুশি হয়ে মুখে রাগি ভাব রেখে বলল……

—ঊড়া ঊড়ি পরে কইরেন।আগে বলেন আপনি আমারে কবের থেকে চিনেন।রিধু তখন কিসের দেড় বছরের কথা বলল।
সান ইশফার কথার কোন উওর না দিয়ে ফট করে ইশফার কোলে মাথা রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল……
—আজ বলার মুড নাই।মাথা ব‍্যাথা করছে মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও।
—মাথা ব‍্যাথা না ছাই।জানি তো সব না বলার ধান্দাবাজি।
সান ইশফার হাত নিজের মাথায় রেখে চোখ বন্ধ করে বলল…..
—সত‍্যি অনেক মাথা ব‍্যাথা করছে।মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও।প্লিজ সেদিনের মত চুল ছিড়ে দিও না।তাহলে আজ আমি টাকলা হয়ে যাব।তখন সবাই তোমাকেই টাকলুর বউ বলবে।
ইশফা সান এর বাহুতে চাপড় মেরে বলল….
—উল্টাপাল্টা কথা না বললে ভালো লাগে না।
—উল্টাপাল্টা কোথায়?যা সত‍্যি তাই তো বলালাম।
ইশফা সান এর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল…..

—আপনি না আকাশে ঊড়তে চাইছিলেন? আমার কাছে একটা আইডিয়া আছে।আপনাকে মুক্ত আকাশে ঊড়তে না পারলেও আপনি চাইলে আমি আপনাকে রাতের শহরটা ঘুড়িয়ে দেখাতে পারি।
সান ফট করে চোখ খুলে ইশফার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল…..
—মানে?
—এতো মানের উওর দিতে পারবো না।যদি যেতে চান তাহলে ফটাফট উঠে দাড়ান আর না হলে এখানে শুয়ে থাকুন।
সান ফটাফট দাড়িয়ে বলল……
—যাবো না মানে?আমার বাঘিনী আমাকে কোথাও নিয়ে যেতে চেয়েছে আমি কি না করতে পারি বল।
ইশফা সান এর দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে বলল……
—মাথা ব‍্যাথা শেষ?
সান মাথা চুলকিয়ে ভূবন ভুলানো একটা হাসি দিয়ে বলল…..
—তোমার হাতের ছোয়া পেয়ে ব‍্যাথা পালিয়েছে।
ইশফা ভেঙচি কেটে বলল…..
—চাপাবাজ।

সান মুচকি হেসে ইশফার দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই ইশফা সান এর হাত ধরে উঠে দাড়ালো।
জিদানের আজ কলেজ থেকে ফিরতে অনেকটা দেড়ি হয়ে গেছে।সারাদিনের ব‍্যস্ততা,ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাসায় ফিরে মিঃখান কে ড্রয়িং রুমে বসে থাকতে দেখে জিদান ক্লান্ত মাখা হাসি দিয়ে বলল…..
—কি ব‍্যপার চাচ্চু!আজ এতো তাড়াতাড়ি বাসায় যে তুমি?
মিঃখানঃবাপজান তাড়াতাড়ি বাসায় আমি আসিনি।তুমিই বাসায় আসতে লেট করেছো।
জিদান নিজের হাত ঘড়িতে টাইম দেখে বলল…..
—ক্লাশ শেষে মিটিং ছিলো।তাই ফিরতে একটু বেশিই দেড়ি হয়ে গেছে।
জিদান বাসায় ফিরতেই মিসেস খান জিদানের জন‍্য বানিয়ে রাখা ঠান্ডা পানির শরবত নিয়ে ফটাফট হাজির হয়ে গেল।মিসেস খান জিদানের দিকে শরবতের গ্লাসটা বাড়িয়ে দিলে জিদান মুচকি হেসে মিসেস খান এর হাত থেকে শরবতটা নিয়ে মিঃখান এর পাশে বসতে বসতে বলল……

—ছোট মা!পাগলীটার কি খবর?আজ কোন ঝামেলা করেছে?
মিসেস খান মলিন হেসে বলল……
—না আজ সারাদিন ভালোই ছিলো।কোন পাগলামো করেনি।
জিদানঃকোথায় সে?
মিসেস খানঃ রুমেই আছে।ইশফার সাথে গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পরেছে।
জিদান আর কিছু না বলে মলিন হাসল।
জিদান রুমে ঢুকে দেখে ইশরা বাচ্চাদের মত কাচুমাচু করে ঘুমিয়ে রয়েছে।জিদান ইশরার ঘুমন্ত মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে হাত ব‍্যাগটা সোফার এক কোনে রেখে কাবাড থেকে নিজের কাপড় নিয়ে ফ্রেস হতে চলে গেলো।জিদান ফ্রেস হয়ে ওয়াসরুম থেকে বের হতে না হতেই ইশরা জিদানের দিকে পানির গ্লাস ছুড়ে মারল এবং সেটা জিদানের বাহুতে লেগে নিচে পরে ভেঙে কাচগুলো ফ্লোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরল।ইশরার হঠাৎ আক্রমনে জিদান অবাক হয়ে ইশরার দিকে তাকাতেই দেখল ইশরা রনমূর্তি হয়ে দাড়িয়ে রয়েছে।জিদান নরম গলায় বলল….

—কি হয়েছে ইশু?পানির গ্লাস ছুড়ে মারলে কেন?
ইশরা কোন কথা না বলে পাশ থেকে ফুলদানি তুলে জিদানের দিকে ছুড়ে মারল।জিদান সরে যেতেই ফুলদানি জিদানের শরীরে না লাগলেও কাচ দিয়ে জিদানের পা কেটে গেল।জিদান পা থেকে কাচের টুকরা বের করে ইশরার দিকে অগ্রসর হতে নিলেই ইশরা পানির জগ জিদানের দিকে ছুড়ে মেরে চেচিয়ে বলল……
—খবরদার কাছে আসবি না।কাছে আসলে খুন করে ফেরবো।
জিদান থেমে গিয়ে বলল……

—ওকে ওকে কাছে যাব না।কিন্তু তুমি আমাকে বল এমন কেন করছো?কি করেছি আমি?
ইশরা জিদানের কথার কোন উওর না দিয়ে একটার পর একটা জিনিস জিদানের দিকে ছুড়ে মারতে লাগল।
ইশরার রুমে ভাঙচুরের শব্দ পেয়ে ইশফা নিজের রুম থেকে তড়িঘড়ি সেখানে এসে দেখে ইশরা পাগলামি করছে।জিদান নানান ভাবে ইশরাকে থামানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই থামাতে পারছে না।মিসেস খান ইশরার রুমের দিকে যেতে চাইলে মিঃখান তাকে বাধা দিয়ে বলল…..

—ওদের ঝামেলা ওদের মিটাতে দাও।আমার মতে সেখানে আমাদের না যাওয়াই ভালো।
কথাটা বলে মিঃখান একটা চাপা নিশ্বাস ফেলল।
মিসেস খান মিঃখান এর কথা শুনে সেদিনে পা না বাড়িয়ে চুপ করে বসে রইল।
ইশরা নিজের হাতের নখ দিয়ে জিদানের শরীরে,হাতে,মুখে আঁচড় কাটছে,হাতের কয়েক জায়গায় কামড় দিয়ে রক্ত জমাট হয়ে রয়েছে কিন্তু সেদিকে জিদানের কোন খেয়াল নেই।সে তো তার পাগলীর মান ভাঙাতে ব‍্যাস্ত।জিদান বার বার ইশরাকে জিগ্যেস করছে,সে কি করেছে?তার দোষটা কি?ইশরা জিদানের কথার কোন উওর না দিয়ে এক কথা বলছে,ধরবিনা আমায় ছুবিনা আমায়।সাথে নিজের মত পাগলামী করেই চলেছে।

ইশফা, ইশরার রুমের সামনে ছলছল চোখে ইশরা,জিদানের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে।ইশফা রুমে ঢুকতে চাইলে জিদান ইশফাকে ইশারায় রুমে ঢুকতে মানা করে দেয়।কেননা ইশরা যেই পরিমানের রেগে আছে তাতে সে এখন এখানে ইশফাকে দেখলে উল্টো রিয়েক্ট করতে পারে।ইশফাও জিদানের কথা মত রুমে না ঢুকে রুমের বাহিরে আড়াল থেকে ওদের কাহিনী দেখছে।ইশফা জিদানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল……..
—ভালোবাসি ভালোবাসি বলে সবাই স্লোগান করতে পারে।কয়জনই বা ভাইয়া তোমার মত নিজের ভালোবাসাকে আগলে রাখতে পারে?

জিদান ইশরাকে বহু কষ্ট করে মানিয়ে হালকা কিছু খাবার খাইয়ে দিয়ে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে দিয়েছে।জিদান ইশরার মাথার পাশে বসে ইশরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর ইশরার সাথে গল্প করছে।কিছুক্ষনের মধ‍্যেই ইশরা ঘুমের দেশে চলে যায়।জিদান ইশরাকে ভালোভাবে শুইয়ে দিয়ে রুমের লাইট অফ করে দিয়ে ডিমলাইট অন করে দেয়।যাতে ইশরার ঘুমে ডিস্টাব না হয়।
এমনিতেই সারাদিনের খাটাখাটনিতে জিদান ক্লান্ত ছিলো।তার উপর বউ এর সাথে এক প্রকার যুদ্ধ করে বউ এর রাগ, মান ভাঙাতে গিয়ে জিদানের রফাদফা হয়ে গেছে।জিদান ঘুমন্ত ইশরার মাথায় আদর দিয়ে বলল…..
—পাগলী।কি সুন্দর এখন বাচ্চাদের মত ঘুমিয়ে রয়েছে।কে বলবে এই মেয়ে একটু আগে তুরকালাম বাধিয়েছে?

ইশফা জিদান এর পায়ে বেন্ডেজ করে দিচ্ছে আর নাক টানছে।জিদান মলিন হেসে বলল…….
—বুচি বাচ্চাদের মত কান্না করছিস কেন?আমি ঠিক আছি।আমি তো বেন্ডেজ করেই নিয়েছিলাম।তুই শুধু শুধু আবার বেন্ডেজ করছিস।
ইশফা নাক টেনে বলল……
—আমি কানা নই।তুমি যে কি ঠিক আছো তা আমার জানা আছে।আর কি যে বেন্ডেজ করেছো তা তো দেখতেই পাচ্ছি।পাগলীটা নিজের অজান্তেই কত কষ্ট দিচ্ছে তোমায়।সুস্থ হয়ে নেক একবার।তখন ওকে বুঝাবো আমার ভাইকে কষ্ট দেবার ফল।
—পারবি ওকে শাস্তি দিতে?
—পারবো না কেন?সুস্থ হোক একবার প্রথমেই থাটিয়ে কানের নিচে দু’টো লাগাবো।তোমাকে জ্বালানোর জন‍্য।
—দেখা যাবে কে কাকে মারে।
—সেটা সময় হলেই দেখে নিও।তা পাগলীটা কি নিয়ে আজ এমন রাগটা দেখালো?
—আর বলিস না।সকালে আমাকে বলে দিয়েছিল,কলেজ থেকে ফিরেই যেন তার সাথে আগে দেখা করি।ওকে ঘুমোতে দেখে ফ্রেস হতে চলে গিয়েছিলাম।ওয়াসরুম থেকে বের হতে না হতেই আক্রমন শুরু।
ইশফা জিদানের হাতের দিকে তাকিয়ে বলল……

—হাতের কি অবস্থাতাই না হয়েছে তোমার?
জিদান মলিন হেসে বলল……
—এগুলো আমার কাছে কিছুই মনে হয় না বুচি।ওর সকল পাগলামোই আমি হাসিমুখে সহ‍্য করি।কেননা ওর এই পাগলামোর জন‍্যই তো একটু একটু করে ওর প্রতি দূর্বল হয়েছি আমি।আগের চাইতে পাগলামীটা হয়তো এখন একটু বেশিই করে।কিন্তু তাতে সমস্যা নেই আমি সামলিয়ে নিব।
ইশফা বেন্ডেজ করতে করতে বলল……
—তুমি সহ‍্য করলে কি হবে?কিছুর মানুষ আছে না যাদের নিজেরটা খেয়ে পরের ব‍্যাপারে নাক না গলালে পেটের ভাত হজম হয় না।তাদের তো বহুত সমস‍্যা হচ্ছে।
জিদান কপালে ভাজ ফেলে বলল……
—মানে?
—মানে আমরা তোমাকে ঘর ছাড়া করেছি।আমরা তোমাকে সহজ-সরল পেয়ে আমাদের পাগল বোনটা কে তোমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছি ইত‍্যাদি,ইত‍্যাদি।
ইশরার কথা শুনে জিদান রাগি গলায় বলল……
—এসব কথা কে বলেছে?

জিদান মিঃখান এর রুমের সামনে দাড়িয়ে দরজায় নক করে বলল……
—চাচ্চু আসবো?
মিঃখান বেডে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে রয়েছে।পাশেই মিসেস খান মলিন মুখে মাথা চেপে বসে রয়েছে।জিদান এর গলার আওয়াজ পেয়ে মিঃখান উঠে বসে বলল…….
—দাড়িয়ে কেন ভিতরে আয়।
জিদান ভিতরে ঢুকে কোন ভনিতা ছাড়াই বলল…..
—ছোট মা বাসায় কে এসেছিলো?
জিদানের কাঠকাঠ গলার আওয়াজ শুনে মিসেস খান জিদানের দিকে তাকালো।জিদানের চেহারায় রাগ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।মিসেস খান কিছুটা ঘবড়ে গিয়ে বলল…..
—কেন বাবা কি হয়েছে?
জিদান সোজা ভাবে উওর দিল……

মনের পিঞ্জরে পর্ব ৪১+৪২+৪৩

—ছোট মা তোমার ঐ পাতানো ভাবির আমার বউকে নিয়ে কিসের এতো সমস‍্যা তা আমি জানি না?ইশু পাগল হোক বা ভালো ওর বিয়েটা তো আমার সাথে হয়েছে।আমি যদি ওকে নিয়ে সুখে থাকি তাহলে সে কেন আমাদের ব‍্যাপারে নাক গালাতে আসে?মানুষ এতোটা নিচ কি করে হতে পারে?একটা অসুস্থ মানুষ কে নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলতে কি তার বিবেকে বাধেনি?আর তুমিই বা কি করে ঐ মহিলার সকল কথা মুখ বুজে সহ‍্য করেছো?কয়েকটা কড়া কথা শুনিয়ে দাওনি কেন?
(আজ বিকেলে পাশের বাসার এক মহিলা এসে ইশরাকে নিয়ে মিসেস খানকে নানান কথা শুনিয়ে গেছে।মহিলার কথার প্রতি উওরে মিসেস খান কিছুই বলেনি।সে চুপচাপ বসে ঐ মহিলার কথা হজম করেছে।ইশফা প্রতিবাদ করতে চাইলে মিসেস খান ইশফাকে ধমক দিয়ে বসিয়ে রাখে।ভাগ‍্য ভালো ইশরা তখন ঘুমিয়ে ছিল। তা না হলে তখন যে কি হত কেউ জানে না।)
জিদানের কথা শুনে মিসেস খান কোন কথা না বলে চুপকরে বসে রইল।সে কি আর বলবে।তার কিই বা বলার আছে।
জিদান বড় করে একটা নিশ্বাস নিয়ে বলল…..

—শোন ছোট মা!ইশু আমার জন‍্য কি সেটা তোমরা সবাই ভালো করে জানো।শুধু শুধু পরের কথা শুনে মন খারাপ করবে না।আমি যেন আর না শুনি ঐ মহিলা এই বাসায় এসেছে।যদি আসে তাহলে দরজার বাহির থেকেই বিদেয় করে দিবে।যাদের বিবেক,বুদ্ধি নেই।পরের গুনগান করার অভ‍্যাস।দরকার নেই সেসব মানুষের এই বাসায় আশার।
যত পারবে এসব মানুষ থেকে দূরে থাকবে।
কথাটা বলে জিদান গটগট করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
মিসেস খান জিদানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল……
—এটা কি চুপচাপ,শান্তশিষ্ঠ সেই জিদান?যে নাকি বড়দের সামনে উচু গলায় কথা বলা তো দূর তাদের চেহারার দিকে তাকিয়েও কথা বলতো না?

মনের পিঞ্জরে পর্ব ৪৭+৪৮+৪৯