মনে পড়ে তোমায় সন্ধ্যে বেলায় পর্ব ৯

মনে পড়ে তোমায় সন্ধ্যে বেলায় পর্ব ৯
নুজাইফা নূন

-” একি! আপনি দরজা বন্ধ করছেন কেন?”
-” রোমান্স করবো বলে।”
-” রোমান্স মানে??”

-” প্রতিত্তরে উৎস কিছু না বলে নেশা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আদ্রির দিকে এক পা এক করে আগাতে লাগলো। উৎসের এমন চাহনি দেখে শরীর শিরশির করে গাঁয়ে কাটা দিয়ে উঠলো আদ্রির।আদ্রি উৎস কে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে এক পা এক পা করে পেছাতে লাগলো।এক পর্যায়ে আদ্রি শাড়িতে বেঁধে পড়ে যেতে গেলেই উৎস আদ্রির কোমড় আঁকড়ে ধরলো।এতেই যেন আদ্রির হাত পা কাঁপতে শুরু করলো।আদ্রি নিজের ব্যালেন্স রাখতে না পেরে উৎসের শার্ট খাঁমছে ধরলো।যা দেখে উৎস আরো শক্ত করে আদ্রির কোমড় চেপে ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে এসে আদ্রির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” আমাদের বিয়ের সবে মাত্র দুটো দিন হয়েছে।আমরা এখনো নববিবাহিত দম্পতি।আর নববিবাহিত দম্পতি যখন একত্রে রোমান্স করে,তখন দরজা বন্ধ করে রাখতে হয়।এই সামান্য ব্যাপার টাও বোঝো না তুমি? মাথামোটা একটা বলে উৎস আদ্রির ওষ্টের দিকে নিজের ওষ্ট এগিয়ে নিয়ে যায়। তৎক্ষণাৎ আদ্রি নাহহহ বলে চিৎকার দিয়ে হাত দিয়ে নিজের ওষ্ট চেপে ধরে ‌।আদ্রির চিৎকার শুনে উৎস আদ্রির দিকে এগিয়ে এসে বললো,

-” আমাকে দরজায় দেখে এভাবে চিৎকার দিয়ে উঠলে কেন?আমি বাঘ না ভাল্লুক যে আমাকে দেখে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিতে হবে?তোমার এমন চিৎকার শুনে পাশের রুমে থেকে নানু কি না কি মনে করে বসবে তিনিই জানেন?

-“আদ্রি মনে মনে বললো, হায় আল্লাহ! তার মানে সবটা আমার ভাবনা ছিলো। ছিঃ ছিঃ আমি এই মানুষ টাকে নিয়ে এসব ভাবতে পারলাম?এখন তাকে কি জবাব দিবো আমি?আদ্রির থেকে রেসপন্স না পেয়ে উৎস আবারো বললো,
-“তুমি কি জেগে জেগে আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছিলে নাকি?উৎসের প্রশ্নে আদ্রি থতমত খেয়ে বললো, হ্যাঁ না মানে না । আমার বয়েই গেছে আপনাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে।”

-” ভেরি গুড।আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখলেও সেটা তোমার স্বপ্ন‌’ই থেকে যাবে।আমি কখনোই তোমাকে আমার স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারবো না।আর না পারবো আমার সন্ধ্যে কন্যা কে ভুলে যেতে।”
-” উৎসের কথা শুনে আদ্রি মনে মনে বললো,আপনার এই সন্ধ্যে কন্যার ব্যাপার টা বড্ড ভাবাচ্ছে আমাকে। নাতাশার জন্মদিনের পার্টিতে সন্ধ্যে বেলায় আপনার সাথে আমার দেখা হয়েছিলো।সেদিন কল্পনায় নয় , বরং বাস্তবে আপনি আমার কোমড় আঁকড়ে ধরেছিলেন। কিছু সময়ের জন্য দু জোড়া চোখ এক হয়েছিলো।

সেই হিসেবে আমি আপনার সন্ধ্যে কন্যা।কিন্তু আদি বলেছিলো আদির সাথেও নাকি আপনার দেখাটা সন্ধ্যে বেলায় হয়েছিলো কোনো এক পার্টি তে।আপনি আদি কে পার্টিতে দেখেই পছন্দ করে আমাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।ব্যাপার টা কেমন যেন গোলক ধাঁধার মতো লাগছে আমার কাছে।যাই হোক ।বিয়েটা যখন হয়েছে, তখন আমি আমার অধিকার ছাড়ছি না।এটা জি বাংলার সিরিয়াল নয় যে একজনের চার টা স্বামী থাকবে।আপনাকে যখন তিন কবুল বলে বিয়ে করেছি।তখন আমৃত্যু আপনার সাথেই থাকবো।সেটা আপনি চান বা না।আমি সহজ সরল হতে পারি।তাই বলে ভাববেন না আপনাকে এতো সহজে ছেড়ে দিবো।”

-” আদ্রি কে চুপ থাকতে দেখে উৎস বললো, আমার কাছে প্রতিটা সেকেন্ডের মূল্য অনেক বেশি।তোমার এসব নাটক দেখার সময় বা ইচ্ছা কোনটাই আমার নেই।অতি দ্রুত নিচে আসো বলে উৎস বেরিয়ে গেলো।উৎস যাওয়ার সাথে সাথেই আদ্রি লাগেজ নিয়ে নিচে এসে দেখে‌ সাজিন সবে মাত্র স্কুল থেকে ফিরেছে।আদ্রি কে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখেই সাজিন দৌড়ে এসে আদ্রি কে জড়িয়ে ধরে বললো, তুমি কোথাও যাচ্ছো নতুন ব‌উ?”

-” আদ্রি নিচু হয়ে সাজিনের গালে চুমু দিয়ে বললো,
হ্যাঁ সোনা।বাবার বাড়িতে যাচ্ছি।”
-” আমি ও যাবো তোমার সাথে।”
-” আদ্রি কিছু বলতে যাবে তার আগেই ঝর্ণা তালুকদার দৌড়ে এসে সাজিন কে আদ্রির থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, তুমি কোথাও যাবে না সাজিন।দু দিন পর তোমার পরীক্ষা শুরু হবে।”

-” ও যেতে চাইছে যাক না কাকিমা।”
-” তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে আদ্রি? দু দিন পর বরের মুখ দর্শন করতে পেরেছো।একটা সুযোগ পেয়েছো নিজেদের মধ্যে সব ঠিক করে নেওয়ার। কিন্তু তুমি যদি সাজিন কে তোমাদের সাথে নিয়ে যাও, সেই সুযোগ টা হাত ছাড়া হয়ে যাবে।”

-” কিন্তু কাকিমা সাজিন!”
-” কোনো কিন্তু নয়।আমি সাজিনের মা।আমি সাজিন কে ঠিক সামলে নিবো। তুমি তোমার বর কে সামলাও। নিজের আঁচলের তলায় বেঁধে নাও।ঝর্ণা তালুকদারের কথায় আদ্রি তৎক্ষণাৎ তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-” আপনি অনেক ভালো কাকিমা।কতো সহজে আমাকে আপন করে নিয়েছেন।আমি ভেবেছিলাম বিয়েটা যেভাবে হয়েছে তাতে হয়তো কেউই আমার সাথে ভালো করে কথায় বলবে না।”

-” আমি ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান।খুব‌ই সাধারণ ভাবে জীবনযাপন করেছি।সত্যি বলতে আদিতার চলাফেরা, পোশাক দেখে আমার আদিতা কে পছন্দ হয়েছিলো না। বারবার মনে হচ্ছিলো আদিতার সাথে উৎসের বিয়ে হলে উৎসের জীবন টা নষ্ট হয়ে যাবে।আমি বারবার চাইছিলাম বিয়েটা যেন ভেঙ্গে যায়। যখন বিয়েটা হয়ে গেল তখন উৎসের কথা ভেবে খুব খারাপ লাগছিলো। কিন্তু পরমুহূর্তেই পাত্রী বদলের কথা শুনে মনটা ভালো হয়ে গিয়েছিল।জীবনে অনেক সুখী হ‌ও আদ্রি‌।স্বামীর আদর ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠুক তোমার সংসার।”

-” আমি এখন আসি কাকিমা।”
-” ঠিক আছে যাও।”
-” আদ্রি একে একে সবার থেকে বিদায় নিয়ে নিচে এসে দেখে উৎস কারো সাথে ফোনে চিৎকার চেঁচামেচি করছে‌। চেহারায় রাগের ছাপ ফুটে উঠেছে।আদ্রি একটু এগিয়ে গিয়ে শুনতে পেল উৎস বলছে,

-” নাম্বার ট্র্যাক করা যাচ্ছে না মানে ? যেভাবেই হোক ওকে খুঁজে বের করো।আমি একটা বারের জন্যে হলেও আদিতার মুখোমুখি দাঁড়াতে চাই।আমি আদিতার মুখ থেকে শুনতে চাই আমার কোথায় ভুল ছিলো? কেন ছলনা করলো আমার সাথে? আমার সত্যি টা জানতে হবে বলতেই আদ্রির দিকে উৎসের চোখ পড়ে।উৎস তৎক্ষণাৎ কল কে’টে দিয়ে ফোন নিজের পকেটে ঢুকিয়ে বললো,

-” আমাকে কি তোমার বেতন ভুক্ত কর্মচারী মনে হয়? দশ মিনিট ধরে আমি এখানে অপেক্ষা করছি।এবার কি নিজে থেকে গাড়িতে বসবে নাকি কোলে করে নিয়ে বসাতে হবে?প্রতিত্তরে আদ্রি কিছু না বলে চুপচাপ গাড়ির পেছন সিটে গিয়ে বসে পড়ে।যা দেখে উৎস রেগে গিয়ে আদ্রির হাত ধরে টেনে বাইরে বের করে দিয়ে বললো,
-” আমি তোমার ড্রাইভার না ।ওকে?”
-” গাড়িতে বসলে ও দোষ ।না বসলে ও দোষ।আমি যাবো টা কোথায়?”

-” সামনের সিটে গিয়ে চুপচাপ বসে পড়ো। উৎসের কথা আদ্রি ও ভদ্র মেয়ের মতো চুপচাপ গাড়িতে বসে পড়লো‌।উৎস এসে নিজের সিট বেল্ট লাগিয়ে বললো, সিট বেল্ট লাগিয়ে নাও।”
-” আদ্রি কয়েকবার সিট বেল্ট লাগানোর চেষ্টা করে লাগাতে না পেরে এ পর্যায়ে হাল ছেড়ে দিয়ে বললো, এসবের কোনো প্রয়োজন নেই আমার।”

মনে পড়ে তোমায় সন্ধ্যে বেলায় পর্ব ৮

-” উৎস তৎক্ষণাৎ আদ্রির দিকে ঝুঁকে সিট বেল্ট লাগিয়ে দিয়ে বললো, নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা।কথাটা কর্ণপাত হলো না আদ্রির।আদ্রি এক ধ্যানে উৎসের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,আপনি যতোবার আমার সংস্পর্শে আসেন ততোবার আমার ভালো লাগা কাজ করছে।আমি নতুন নতুন অনুভূতির সাথে পরিচিত হচ্ছি।আমার যদি ক্ষমতা থাকতো আমি এই সময়ে ঘড়ির কাঁটা থামিয়ে দিতাম।তাহলে অন্তত কিছু সময় আমাদের হতো‌। একান্তই আমাদের।”

মনে পড়ে তোমায় সন্ধ্যে বেলায় পর্ব ১০