মন পায়রা গল্পের লিংক || নুসাইবা ইসলাম

মন পায়রা পর্ব ১
নুসাইবা ইসলাম

তিথি এয়ারপোর্টে এসেছিল তার স্বামী ফায়াজ কে নিতে, অনেকদিন পর কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিকে দেখে তিথির চোখের কোনে পানি জমাট বাধা শুরু করলো। আজ ১ বছর পর সে ফায়াজ কে দেখছে আর শেষবার দেখেছিলো বিয়ের দিন সন্ধ্যায়। ১৭ বছর এর কিশোরী কে দেখে ফায়াজের ও অনেক মায়া কাজ করছিলো তবুও সে আজ তিথিকে ইগনোর করবে। ফায়াজকে আসতে দেখে ফিহাপু এগিয়ে গেলো,

ফিহাঃ কেমন আছিস ভাই আমার, কতোদিন পর তোকে দেখছি।ভাইকে দেখে ফিহা কান্না করে দিলো আর জরিয়ে ধরলো।
ফায়াজঃ ফায়াজ এক হাতে বোনকে হাল্কা ভাবে ধরে বলতে লাগলো,দূর পাগলি কাদছিস কেনো?আমি তো ভালো আছি।
ফিহাঃ দেখতেই পাচ্ছি কতো ভালো আছো তুমি।আচ্ছা অইদিকে কে আসছে আমার সাথে দেখছো তুমি?
ফায়াজ তিথিকে দেখে চেহারা গম্ভির করে বললো,আমার চোখ আছে আমি দেখতে পাচ্ছি কে আসছে চল বাড়িতে আমার ভাল্লাগছে না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ফায়াজ এর এরুপ কথায় তিথি অপমানিত বোধ করলো। আর চুপচাপ গিয়ে গাড়ির পিছের সীটে বসে পড়লো। ফায়াজ অইদিকে তাকিয়ে বললো, তোমাকে কিছু শাস্তিতো পেতে হবে মায়াময়ী।
তিথি ভাবছে আমাকে যদি উনার ভালোই না লাগে তাহলে উনি আমাকে বিয়ে করেছেন কেনো? আর আমি উনার জন্য দিন কে দিন পাগল হচ্ছি। কেনোই বা আসতে গেলাম উনাকে নিতে আর এতো অপমানিত হলাম, তিথি অনেক কষ্টে নিজের কান্না আটকে রাখছে।

……..সকালের ঘটনা………
আজ তিথির বিয়ের একবছর পূর্ণ হলো। কেউ জানেই না তিথির বিয়ের ব্যাপারে।ফায়াজের সাথে তিথির বিয়েটা হুট করেই দিয়ে দেয় তাদের পরিবার।বিয়ের দিন ই ফায়াজ বিদেশ চলে যায়, তিথি নিজের রুম এ বসে একাই ভাবছে!
আমাকে যদি আপনি ভালোই না বাসেন তাহলে কেনো বিয়ে করেছিলেন ফায়াজ?আজ আপনার জন্য আমি ধুকে ধুকে মরি। আপনাকে না দেখার যন্ত্রনা যে আমাকে রোজ পুরায় আপনি তা জানেন না। আপনি কি ভুলে গেছেন যে আপনার কোনো স্ত্রী আছে।

তখন তিথি শুনতে পেলো তার মা তাকে ডাকছে, তিথি সেখানে যেতেই বললো,
তিথির মাঃ একা একা রুমে কি করছিলি? যা রেডি হয়েনে তাড়াতাড়ি।
তিথিঃমায়ের কথায় তিথি বললো,কেনো মা এখন রেডি হয়ে কোথায় যাবো তার চেয়ে বরং তোমরা যাও আমার ভালো লাগছে না।

তিথির মাঃ আমি কোথায় যাবো হ্যাঁ, আজ যে ফায়াজ আসবে তোকে ফায়াজ বলে নাই? তোর শাশুড়ি মা আমাকে উনার কাজে হেল্প করতে যাইতে বলছে। তিথির মা তিথিকে রাগি কন্ঠে বললেন।
তিথিঃ তিথিতো পুরাই অবাক সে জানতোই না আজ ফায়াজ আসবে।
আপনি আসবেন আর আমি ই জানিনা বাহ, আপনাকে তো আমি নিজ থেকে বিয়ে করি নাই। আপনার কারনেই এতোকিছু হলো আর আপনি আমাকে দহনে পুরাচ্ছেন।এই একবছরের আপনি একবার ও আমার খোঁজ নেন নাই কিন্তু ফ্যামিলি তো আর তা জানে না!তিথি মনে মনে তা ভাবছিলো।

তিথি রেডি হয়ে আসতেই তিথি কে নিয়ে চলে আসলেন ওর শশুর বাড়ি। তিথীদের সামনের ফ্লাটেই থাকেন ফায়াজ রা, তিথিকে দেখতে পেয়েই বলে ফিহা রুমে আছে ওকে নিয়ে চলে যা। তিথী ফিহার রুমে গেলো, ফায়াজ আর ফিহা ওরা যমজ দুভাইবোন।
তিথিঃ ফিহা আপু তুমিও আমাকে তোমার ভাই এর মতো পর করে দিছো? তোমার ভাই যে দেশে আসছে কই আমাকে তো জানালা না! তিথি অভিমান নিয়ে বললো ফিহাকে,
ফিহাঃ তুমি নিজেই তো আমার সাথে কথা বলো না কিভাবে তোমাকে বলবো তবে তিথি? তা কোন কলেজ এ এডমিশন নিবা ভাবলা, ফিহা তিথির কথা ঘুরানোর জন্য বললো,।

তিথিঃ এখোনো শিউর না আমি ফিহাপু, জানো আমি কথা ভাবছি তোমার ভাই এর সাথে তো আমার রেজিস্ট্রি হয় নাই। আবার উনার আমার বিয়ের কথাও কেউ জানেনা, উনি আসলে বলবো আমাকে ছেড়ে দিতে। যেহেতু শরিয়ত মোতাবেক উনার সাথে আমার শুধু কবুল বলে বিয়ে হয়েছে তাই উনি যেনো আমাকে তালাক দিয়ে দেয়।আমার এগুলা আর ভাল্লাগছেনা।তিথি অভিমান নিয়ে ফিহা কে কথাগুলো বলছে,
ফিহাঃ কি বলছিস তিথু এগুলা বলতে নাই পাগলি এখন চুপচাপ চল আমার সাথে।ফিহা ঘাবরে গেছে তিথির কথায় বাচ্চা মেয়েটা নিজের অজান্তেই এই ভুল করে ফেললো!

ফোনের ওপাশে কেউ তিথির কথায় অনেক বেশি রেগে গেছে,নিজের মোবাইল ফ্লোরে আছার মেরে ফেলে দেয়। আর সে আর কেউ না ফায়াজ।
ফায়াজঃতুমি কিভাবে ভাবলে আমি তোমাকে ছেড়ে দিবো, জান আমার থেকে দূরে যাওয়ার চিন্তা করার শাস্তি যে কি হবে তা তুমি ভাবতেও পারছো না।

…..বর্তমান…..
গাড়ি এসে তিথিদের বিল্ডিং এর সামনে থামাতেই তিথি দৌড়ে চলে যায় উপরে,ফায়াজ সেদিকে তাকিয়ে কেবল হাসে। মেয়েটা যে তার সামান্য ইগনর ই সয্য করতে পারেনা।
ফিহাঃ তুই মেয়েটা কে অনেক কষ্ট দিচ্ছিস ফায়াজ, এইটুকু মেয়েটার মনের উপর দিয়ে কি যাচ্ছে তা তুই নিজেও ভাবতেই পারবিনা। ফিহা তার ভাইকে বুঝানোর চেষ্টা করলো,

ফায়াজঃ এই পিচ্চির উপর যে আমার মায়া পড়ে গেছে রে ফিহু, ওকে ছাড়া আমি বাঁচার কথা ভাবতেও পারিনা তাই তো সেদিন ওভাবে বিয়ে করি। আর ও বয়স কতো দেখ ওভাবে চলে না গেলে কি হতো তুই ভাবছিস?
ফিহাঃ আমি আর কি বলবো তোর ব্যাপার তুই ভালো জানোস, কিন্তু মেয়েটা তোকে খুব ভালোবেসে ফেলছে।

এরপর ফায়াজ আর ফিহা নিজেদের ফ্লাটের উদ্দেশ্যে হাটা শুরু করলো।ব তিথি নিজেদের ফ্লাটে এসে নিজের রুম এ দরজা আটকে খাটে বসে পড়লো। সাউন্ড বক্স এ গান ছেড়ে চিৎকার করে কান্না শুরু করলো সে তো ফায়াজের এমন বিহেভ আশা করে নাই। কিভাবে পারলো ফায়াজ এতো নিষ্ঠুর হতে।তিথি নিজের রাগ কমাতে না পেরে কাচের গ্লাসটা জোরে আছার দিলো ফ্লোরে আর গ্লাস ফেটে তিথির হাতের তালুতে অনেকগুলো অংশ ঢুকে গেলো।

হাত বেয়ে রক্ত পড়ছে তিথির সেদিকে খেয়াল নাকি সে তো ফায়াজকে নিয়ে ভাবায় বেস্ত। প্রায় অনেকটা সময় কেটে গেলো কারো কলিংবেল বাজানোর শব্দে তিথির ধ্যান ফিরলো। দরজা খুলে দেখলো তিথির বড় ভাই তামিম দাঁড়ানো,তামিমের খেয়াল তিথির হাতের দিকে যেতে আঁতকে উঠলো।

তামিমঃ কি ব্যাপার তিথু তোর হাত কাটলো কিভাবে, আর কতো রক্ত পড়ছে খেয়াল নাই তোর।তামিম বোনের হাত ধরে বলে,
তিথি দেখলো ফায়াজ তাদের ফ্লাটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মেবি কোথাও যাচ্ছে, মাত্রই না আসলো লোকটা। তিথি ফায়াজের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে অসম্ভব লাল হয়ে যাচ্ছে তার চোখ, তিথি তার অন্যহাতের সাহায্যে দরজা আটিকে দিলো।
তিথিঃ আরে ভাইয়া শুনছো না মিউজিক বাজছে আমি তো ডান্স করছিলাম আর ভুলে গ্লাস পড়ে ভেঙে যায়,আম্মুর ভয়ে তারাহুরো করে তুলতে গিয়ে না হাত কেটে যায়।আর তখনি তুমি কলিংবেল বাজালে তাই দরজা খুলতে চলে আসলাম।তিথি তা ভাইকে মিথ্যা বলে বুঝ দিলো।

তামিম এবার বোনকে চেয়্যার এ বসিয়ে স্যাভলন এনে কাটা যায়গা পরিষ্কার করে নিলো, কিন্ত অনেকটা কাটার ফলে রক্ত পড়া থামছে না।তামিম এবার কাউকে ফোন করে নিচে আসতে বলে তিথির হাতে রুমাল পেচিয়ে নিয়ে গেলো ফার্মেসিতে।তিথিতো কিছুতেই যাবেনা। তিথি ইঞ্জেকশন কে অনেক ভয় পাই, এবার তামিম জোরে এক ধমক দিলাও তিথিকে।ভাইয়ের ধমকে ভয় পেয়ে কান্না করে দিলো তিথি, আর ওর চারোপাশে সব অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে।ধিরে ধির নেতিয়ে পড়ছে ভাইয়ের উপর তা বুঝতে পারছে ও আর কিছু বুঝতে পারলো না….

মন পায়রা পর্ব ২