মন পায়রা পর্ব ২

মন পায়রা পর্ব ২
নুসাইবা ইসলাম

যখন তিথির জ্ঞান ফিরে আসলো সে নিজেকে কারো, বাহুবন্ধনে আবিষ্কার করলো। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে ফায়াজ এর কোলে,তিথি এবার প্রায় আশ্চর্য হয়ে যায় যে সে কিভাবে? হাতের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলো হাত ব্যান্ডেজ করা, অন্যহাতে ক্যানেলার লাগানো স্যালাইন চলছে।ফায়াজ তিথিকে কোলে করে হেটে যাচ্ছে আর তামিম স্যালাইন এর ব্যাগ উঁচু করে ধরে রাখছে।

তিথিঃ আমাকে নামান আমি হেটে যেতে পারবো!অনেক্ষন চুপচাপ থাকার পড়ে তিথি বললো,আর ফায়াজের দিকে একবার দেখে নিলো।
ফায়াজ তিথির কথা কে পাত্তা না দিয়ে চুপচাপ নিজের মতো করে হেটে যাচ্ছে।বাসায় ইতিমধ্যে তিথির মা কান্নাকাটি শুরু করছে,মেয়ের হাল্কা ব্যাথাও যে তিনি সহ্য করতে পারেন না।ফিহা আর ফিহার মা উনাকে শান্ত করতে ব্যাস্ত।
তিথির মাঃকেনো এমন হলো,আল্লাহ আমার মেয়েটার হাত কতোটা কাটছে।এই মেয়ে নিজের খেয়াল রাখেনা কেনো?ফিহা তোদের সাথে না আসছে তাহলে ওকে একা বাসায় কেনো যেতে দিলি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ফিহাঃআন্টি কান্না কইরো না তুমি,আমি আর ভাই গাড়ি থেকে নামার আগেই ও দৌড় দেয় ওর নাকি পানির পিপাসা লাগছে।ভাই এর বিহেভ এ যে তিথুর খারাপ লাগছে তা তো বলা যাবে না,মনে মনে ভাবলো ফিহা।
তুমি এটা ভালো কাজ করলা না মায়াময়ী, আমার রাগ নিজের উপর কেনো দেখালে।তুমি কি আমাকে একটু ও বুঝবা না? মনেমনে আওরাতে থাকে ফায়াজ কথাগুলো।তিথিকে নিয়ে ফায়াজ নিজেদের ফ্লাটে গিয়ে নিজের রুমে শুইয়ে দিলো।এর মাঝে তিথি অনেক কথা বলেছে কিন্তু ফায়াজ একটা কথার ও উত্তর দেয় নাই।

তিথিঃ কি ভাবে নিজেকে কে জানে এতোগুলা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলাম একটার ও উত্তর দিলো না? এই বজ্জাত বেডায় ই আছিলো আমার কপালে আল্লাহ,বিরবির করে বললো।
ফায়াজঃ কিছু বললে? তিথিকে বিরবির করতে দেখে ভাবলো হয়তো কিছু লাগবে।
তিথিঃ হ্যাঁ পানি দিবেন আমাকে?আমার পানির পিপাসা পেয়েছে। তিথি এক ভ্রু হাল্কা উপর দিকে উঠিয়ে ভাবলো কিঁছু শুনে নাই তো?
ফায়াজঃ এখন পানি দেওয়া যাবে না,দেখছো না স্যালাইন পুশ করা আছে? স্যালাইন শেষ হলে খেও। এখন চুপচাপ শুয়ে থাকো।

তিথিঃ একটু পানি দিন না কিছু হবেনা,করুনভাবে ফায়াজের দিকে তাকিয়ে।
ফায়াজঃ একদম চুপ থাকবে,হাত কাটার সময় মনে ছিলো না হ্যাঁ? আর কতোদিন ধরে এমন না খেয়ে থেকে নিজের এই হাল বানিয়েছো? এবার ফায়াজের কন্ঠে কঠরতা প্রকাশ পেলো।
তিথির সাথে ফায়াজ এতোক্ষন স্বাভাবিক ভাবে কথা বললেও এবার ফায়াজের কন্ঠে এরুপ কঠরতা দেখে তিথি তুতলিয়ে বলে,
তিথিঃ কি বলছেন এসব আমি কেনো ইচ্ছা করে কাটবো ভুলে কেটে গেছে,আর আমি না খেয়ে থাকিনা।
ফায়াজের তিথির কথা কতোটা বিশ্বাস করছে তা তার ফেস দেখে বুঝা যাচ্ছে না তাই তিথি চুপ করে থাকলো।তিথির আম্মু এবার তিথির কাছে এসে বসলো,

তিথির আম্মুঃ বেশি ব্যাথা করে তিথু? তুই কেন পরিষ্কার করতে গেলি, আমি কি তোকে বেশি বকি। অসহায় কন্ঠে মেয়েকে বললো,
তিথিঃ আরেহ না আম্মু কিছুই হয় নাই আমি বেশি ব্যাথা পাই নাই সামান্য। আম্মু আমি বাসায় যাবো এখন আমাকে নিয়ে চলো।
ফায়াজঃ আন্টি স্যালাইন শেষ না হওয়া অবদি এখান থেকে এক পা ও নড়াচড়া যেনো না করে। আমি চুপচাপ আছি দেখে এটা ভাবতে না করেন যে আমি কিছু বলবো না। আন্ট ওর কাছ থেকে উঠে আসেন ওর এখন রেস্ট এর প্রয়োজন।
ফায়াজের কথায় তিথির মা উঠে আসে,ফায়াজ আর উনি তিথির রুম থেকে বেরিয়ে যায়।তিথির শরীর দূরবল থাকায় তিথি এবার ঘুমিয়ে পড়ে।ফায়াজ গেস্ট রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়,ছেলেটা আসার পড় কি আর দাড়াতে পারছে।
——-কিছুক্ষন আগের ঘটনা———–

ফায়াজকে তামিম মেসেজ করে আসতে বলে তখন,ফায়াজ এসে এগুলা দেখে হতভম্ব হয় যায়।তিথি যখন তার মুখের উপর দরজা আটকায় অনেক টা রেগে যায় ফায়াজ।তার থেকে বেশি রাগে তিথির হাত থেকে রক্ত পড়া দেখে।তিথি সেন্সলেস হওয়ার পড়ে তিথিকে কোলে করে নিয়ে যায় ফায়াজ।ফার্মেসি তে নিয়ে যাওয়ার পড় ব্যান্ডেজ করে দেয়।তিথি প্রায় ঠিকমতো না খাওয়ার কারণে আর এতো রক্ত পড়ায় প্রেশার কমে যায় আর সেন্সলেস হয়।এইজন্য ডাক্তার তিথিকে স্যালাইন পুস করে এই পুরোটা সময় তিথির জ্ঞান ফিরে নাই। তিথিকে নিয়ে চিন্তায় ফায়াজ শেষ হয় যাচ্ছে,মেয়েটা তার জন্য এতো দুরবল তা সে ভাবতেও পারে নাই।

ফিহাঃ ভাইয়া আম্মু ডাকছে খাবার খেতে আয়।
ফায়াজঃ আমার এখন খিদে নাই রে,মেয়েটা একটু পানি খেতে চাইছে তাকে পানি খাওয়াইতে পারলাম না আর আমি এখন খাবার খাবো?
ফিহাঃ দেখো ভাইয়া ওর তো স্যালাইন লাগানো তাই খেতে পারবে না। এসে খেয়ে যাও না এখন।
ফায়াজঃ নাহ পড়ে খাবো আগে ওর স্যালাইন শেষ হোক তুই যা আমি ওকে দেখে আসি।
এদিকে তিথির মা আর ফায়াজের মা কথা বলছে,

তিথির আম্মুঃ ফারজানা আপা আমি অনেক খুশি যে আমার তিথি ফায়াজের মতো কাউকে পেয়েছে,খুব ভালোবাসে ছেলেটা আমার মেয়েকে।ফায়াজের আম্মুর নাম ফারজানা।
ফারজানাঃ আর বলিয়েন না তাহমিনা আপা, ছেলেটা যে এতোটা পাগল হবে আমিও ভাবি নাই।আমি কিন্ত মেয়ে এবার নিয়ে আসবো আর ভাল্লাগে না বুজছেন আপা।ছেলেটা এবার ট্রান্সফার হয়ে আসছে।
তাহমিনাঃযা বলছেন আপা,কিন্তু তিথি আমার একমাত্র মেয়ে এখন তিথিকে দিয়ে দিলে আমার ঘরটা ও খালি হয়ে যাবে।আমি ভাবছি কি আমার তামিম এর সাথে ফিহার বিয়েটা দিয়ে দিবো,আপনি কি আপনার মেয়েকে আমাকে দিবেন?
ফারজানাঃ এটা তো ভালো কথা কিন্তু বাচ্চাদের ও তো মতের ব্যাপার আছে,আপনি তামিম কে জিজ্ঞাস করেন আমি ফিহার সাথে কথা বলে ঠিক করবো সব।

তাহামিনাঃ এটাই ঠিক হবে, চলেন খাবার টেবিল সাজাই ছেলেটা সেই কখন আসছে এখনো খাবার খায় নাই।
দুই বিয়ান এখন খাবার সাজাতে বেস্ত,ফিহা নিজের রুমে বসে ফোম চাপছে।ফায়াজ রুমে গিয়ে দেখে তিথি ঘুমচ্ছে,কি নিস্পাপ লাগছে মেয়েটা কে।আর কেউ বলবে এক সময় এই মেয়েটা অনেক চঞ্চল ছিলো?আগে অনেক দুষ্টু ছিলো তিথি।এই দুষ্টুমির কারণেই তো ফায়াজ মেয়েটার মায়ায় জরিয়েছিলো। চঞ্চল মেয়েটা কি নিশ্চুপ হয়ে গেছে।তিথির স্যালাইন শেষ হয়েছে ফায়াজ স্যালাইন খুলে রেখে দিলো।বাট ক্যানেলার এখোনো লাগানো রাতে আরেকটা দেওয়া লাগবে।

সময় নিজের মতো করে চলে কেটে গেছে দুদিন,এ দুদিনে তিথি নিজের রুম থেকে একবারের জন্য ও বাহির হয় নাই।ফায়াজ দুবার এসেছিলো তাকে দেখতে, ফায়াজ ও তার নতুন অফিস এ জয়েন করছে এ দুদিনে।তিথির অভিমানের পাল্লা সময়ের সাথে ভারি হচ্ছে।সে চায় ফায়াজ তার কাছে আসুক,তার সাথে কথা বলুক।তার মনের সব কথা তো সে ফায়াজ এর সাথেই বলতে চায়। চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করে তিথি প্রত্যেক টা সময় ফায়াজেত জন্য যদি একবার আসে ফায়াজ।

মন পায়রা পর্ব ১

ফিহাকে ওর মা বলেছে যে সে তার জন্য একটা ছেলে পছন্দ৷ করেছে, ছেলেটি না কি খুব ভালো জব করেন।তার মতামত জানতে চেয়েছে।সে কিভাবে কাউকে বিয়ে করবে সে তো অন্যকাউক৩ ভালোবাসে,এ কথা সে কাউকে বলতে পারছে না।
কি হবে ফিহার এখন,যাকে ভালোবাসে তাকে কি সে পাবে?

মন পায়রা পর্ব ৩