মন পায়রা শেষ পর্ব

মন পায়রা শেষ পর্ব
নুসাইবা ইসলাম

খুব ব্যাস্ততার সাথে কাটছে তিথির দিন, আজ তিথির চাকরির প্রথম দিন ছিলো। বাসায় এসে কলিংবেল দেওয়া মাত্র ই দোরজা খুলে দেয় কেউ,তাকে দেখে তিথি মিষ্টি হেসে জরিয়ে ধরে।
তিথিঃ আরে আমার সোনা বাচ্চাটা বুঝি রাগ করছে? আম সরি বাচ্চা মাম্মা আর লেট করনে না।
বাচ্চাটিঃ আমি দানি আবাল তুমি লেত কলবে হুহ!(আমি জানি আবার তুমি লেট করবে)
হ্যাঁ এইটা তিথির একমাত্র মেয়ে, মা আর মেয়ে মিলে খুনশুটি করছে তখন পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো,
তিথিঃ দেখো কান্ড মেয়ে বড় হচ্ছে আর দিনদিন তোমার লাজ লজ্জা লোভ পাচ্ছে ফায়াজ?
ফায়াজঃ হ্যাঁ একমাত্র বউ তুমি আমার কিভাবে তোমাকে ছাড়া থাকতে পারি? ভালোবাসি বউ!
তিথিঃ বুঝছি ভালোবাসেন আপনি আমাকে, এখন ছাড়ুন ফ্রেস হয়ে আসি আমি।

তিথি ফ্রেস হতে চলে যায়, ফায়াজ মেয়েকে নিয়ে বসে। অইদিনের ঘটনার পড়ে কেটে যায় অনেক গুলো বছর। ফায়াজ যখন হাল ছেড়ে দিয়েছিলো তিথিকে পাওয়ার তখন তামিম ভরসা দেয় ফায়াজ কে। তিথি তো বলেই দিয়েছিলো ফায়াজ কে ডিভোর্স দিবে কিন্তু দেয় নাই, কারণ তিথি ও তো ভালোবেসে ফেলছিলো ফায়াজ কে। প্রায় ২ বছর লেগেছিলো তিথিকে মানানোর জন্য , এই পুরো সময় তামিম ফায়াজ কে সাপোর্ট দিয়ে গেছে। তিথি লেখাপড়া করে নিজের পায়ে দাঁড়ায়, এর মাঝে কান্সিভ করে তিথি আর ফায়াজের মেয়ে হয়। তারা তাত নাম তিয়া রাখে, তিথি জব এর জন্য কিছুদিন আগে এপ্লাই করলে সিলেকশন হয় আর আজ থেকে জয়েনিং ছিলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তামিম অই ঘটনা যখম তিথির মুখে শুনেছিলো অনেক কষ্ট পেয়েছিলো, ভালোবেসেছিলো যে খুব সে ফিহা কে। বারবার অপমানিত হয়েও সে ফিহার কাছে গিয়েছিলো, তিথি তখন তার বেষ্ট ফ্রেন্ড সাথির সাথে তামিম এর বিয়ে দেয় জোর করে। কেনো তামিম ফিহার জন্য কষ্ট পাবে? তামিম এর ও তো ভালোবাসা পাওয়ার কথা সে কেনো বঞ্চিত হবে। সাথি মেয়েটা অনেক নরম মনের মানুষ কখোনো কারো সাথে রুড ভাবে কথা বলে না, অনেক শান্ত তাইতো তিথির তাকে ভালো লেগেছিলো। আর তিথি এতে ভুল প্রমানিত হয় নাই সত্যি সাথি নিজের ভালোবাসা, গুন দিয়ে জিতে নিয়েছিলো তামিম এর মন।
তামিম এখন সাথি ছাড়া কিছু বুঝে না, তার প্রানপ্রিয় স্ত্রী যে সন্তানসম্ভবা।

তামিমঃ সাথি তোমাকে না কতোবার বলেছি রান্না ঘরে যাবা না!
তামিমের মাঃ আর বলিস না রে পাগল টা কিছু শুনেই না, এতো না করি তবুও যায়।
সাথি এবার অপরাধির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে,কি বলবে বুঝতে পারছিলো না।
সাথিঃ আমার তো ঝাল ঝাল নুডলস খেতে ইচ্ছে করছিলো তাই আমি রান্না ঘরে গিয়ে বানাচ্ছিলাম।
তামিমঃ মা কে বললে কি সে তোমাকে বানিয়ে দিতো না?
সাথিঃ আম্মু তো ঘুমাচ্ছিলো তাই আমি আম্মুকে ডিস্টার্ব করি নাই।
তামিমের মাঃ আমি কি ডিস্টার্ব হতাম সাথি? আমার মেয়েটার জন্য সামান্য নুডুলস বানাতে গিয়ে?
সাথিঃ আমার ভুল হয়ে গেছে আর এমন হবেনা সরি!

তামিম এবার সাথিকে রুমে নিয়ে গেলো,তামিমের মা ও চলে গেলো নিজের রুমে। তামিম পরম আদরের সাথে খাইয়ে দিতে লাগলো তার স্ত্রীকে আর সাথি ও খুশি হয়ে খাচ্ছে।
ফিহা এর সাথে ফায়াজ আর ফায়াজের মা কথা বলতো না, এউ ব্যবহার না মানতে পেরে অনেক দূড়ে চলে যায় ফিহা। ফায়াজ আর ফায়াজের মা অনেক খুজেও পায় না ফিহা কে, শেষ সবাই হাল ছেড়ে দেয়। কি বা করার যে নিজ ইচ্ছায় গায়েব হয় তাকে খুজে পাওয়া তো মুসকিল।

বেলকনিতে বসে ঢাকার ব্যাস্ত শহর দেখতে ব্যাস্ত দুত কপোত কপতি, তারা তাদের শুখ দঃখ ভাগ করে নিচ্ছে। ভালোবাসা দিনশেষে মানুষকে সুখ দেয় শান্তি দেয়। তিথি ফায়াজের কাধে মাথা রেখে নিশ্চুপ বসে আছে।
ফায়াজ তিথির মাথায় এক হাত দিয়ে বিলিকেটে দিচ্ছে, তিয়া নিজের দাদির সাথে ঘুমাচ্ছে।
তিথিঃ আচ্ছা ফায়াজ ফিহা আপু কি আমার জন্য আপনাদের ছেড়ে চলে গেছে?
ফায়াজঃ যে যাওয়ার সে যে কোনও কারণে যেতে পারে, ফিহা আমার খুব আদরের ছিলো। আমরা জমজ ছিলাম একে অপরের জন্য অনেক টান ছিলো। ফিহা অন্যায় করেছে সেই অন্যায়ের জন্য যদি সে ক্ষমা চাইতো তাহলে এই দিন আর দেখতে হতো না। সে নিজের মনে তোর জন্য রাগ পুষে রেখে ঘর ছেরেছিলো।

তিথিঃ তবুও জানি না কেন অইদিন অই কথা না বললে হয়তো ফিহাপি তোমাদের আমাদের সাথে থাকতো তাই না?
ফায়াজঃ আচ্ছা বাদ দেও এসব এসো ঘুমাবে তুমি সারাদিন অনেক টায়ার্ড ছিলা।
সাথি এপাশ ওপাশ করছে শুধু কেমন অসস্থি লাগছে, পেটে ব্যাথা শুরু হইছে। ব্যাথার পরিমান বারায় উঠে বসে সে, তামিমের দিকে তাকিয়ে দেখে তামিম ঘুমোচ্ছে। এবার কি করবে সে ব্যাথা তো বেরেই যাচ্ছে, খাট থেকে নেমে হাটাহাটি করতাছে সে। মেডিকেল স্টুডেন্ট ছিলো সাথি সেই সুবাধে একটু আধটু জানে, নরমাল ডেলিভারি হওয়ার জন্য হাটাহাটি প্রয়োজন। শেষমেশ টিকতে না পেরে সে,

সাথিঃ তামিম! তামিম তুমি শুনছো?
সাথির ডাকে ঘুম থেকে উঠে দেখে সাথির এ অবস্থা বুঝতে পারে ডেলিভারি সময় চলে আসছে। তামিম তা মা কেও ডাকে আর বলে গরম পানি করে নিয়ে আসতে। তামিম যেহুতু ডাক্তার সে সাথির ডেলিভারি বাড়িতেই করাবে। প্রায় অনেক্ক্ষণ পর বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনা যায়, তিথির মা খুশি হয়ে ফোন লাগ্য তিথিকে।
তিথির মাঃ হ্যালো! তিথি তুই ফুপি হয়েছিস আমাদের তামিম এর ছেলে হয়েছে।
তিথিঃ সত্যি মা আমরা আসছি।

তিথিরা বেরিয়ে পড়লো এই বাসার উদ্দেশ্য, তামিম বেবিকে পরিষ্কার করে তোয়ালে পেচিয়ে তার মায়ের কাছে দেয়। নিজেই সাথিকে ফ্রেস করিয়ে খাটে শুইয়ে দেয়। সাথিকে ঘুমে ইঞ্জেকশন দিয়ে দেয় আর স্যালাইন লাগিয়ে দেয়। সাথির শরীর অনেক দূরবল,মায়ের কাছ থেকে যখন তামিম সন্তান কে কোলে নেয় তখন চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। এটা তার নিজের সন্তান ভবতেই অনুভুতি গুলো বেরিয়ে আসে। এরিমধ্যে তিথিরাও চলে আসে,
তিথিঃ ভাইয়া ও ভাইয়া দেও দেও পুচকুরে আমা কাছে দেও তো।
তিয়াঃ মাম্মা এতা তো দল এর মতো(মাম্মা এটা তো ডল এর মতো)
তিথিঃ হ্যা বাচ্চা এই ডল টা তোমার ভাই পিচ্চি ভাই, তোমার মামু আর মামনির পিচ্ছি ডল।

তিয়া এবার তার ছোট ছোট আঙ্গুল দিয়ে বেবির হাতের মুঠো ধরে আর বেবি তিয়ার দিকে ডেবডেব করে তাকিয়ে আছে। ওদের এই কাহীনি তে সবাই হেসে উঠে।
তিথিঃ ভাবি কেমন আছে ভাইয়া? ঘুমাচ্ছে কেনো?
তামিমঃ ঘুমের ইঞ্জেকশন দিছি, শরীর অনেক দূরবল তোর ভাবির তাই।
সবাই বাবুকে নিয়ে হই হুল্লোড় কর‍তে করতে সকালে হয়ে যায়। এতোক্ষনে সাথির ও জ্ঞান ফিরে আসে বাবুকে কোলে নিয়ে বসে আছে সে, তিথি আর ফায়াজ।বাবুর প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে বের হয়েছে।
তিয়াঃ মামুনি আমাল ভাইয়ুকে আমাল কুলে দিবা?
সাথিঃ আরে তিয়ু পাখি কি জানে ভাইয়ু এখন ছোট তিয়ু পাখি কোলে নিতে পারবে না।

মন পায়রা পর্ব ৭

তিয়ুঃ তেন তেন?
সাথিঃ কারণ তিয়ু পাখি ও তো ছোট না, তিয়ু পাখির মামু তিয়ুকে কোলে নেন তো।
তামিম হেসে তিয়া কে কোলে নেয়, সে তিয়ার মাঝে সেই চঞ্চল তিথিকে খুজে পায়।
তামিমঃ জানো তিথিও না ছোট বেলায় এরকম দুষ্ট ছিলো, আমার হাত ছাড়া খেতো না আর সেই তিথি আজ কতোবড় হয়ে গেলো।
এভাবেই সুখে দুঃখে কাটতে লাগলো তাদের জিবন দোয়া রইলো তারা যেনো একসাথে খুব সুখে থাকে।

( লেখাঃ নুসাইবা ইসলাম ) এই লেখিকার আরও লেখা গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন এই গল্পের সিজন ১,৩ পড়তে চাইলেও এখানে ক্লিক করুন