মন পায়রা পর্ব ৭

মন পায়রা পর্ব ৭
নুসাইবা ইসলাম

আজ ও সেদিনের মতো কি হলো কিছুই বুঝতে পারতেছিনা।
আম্মু রুমে এসে বলছে আজ না কি আমার গায়ে হলুদ, এখন সময় টা হলো ৪ টার মতো। আমি আমার নিত্যদিনের মতো ছাদে দাঁড়িয়ে আছি, ছাদে দাঁড়িয়ে আগের কথা ভাবি। ছাদে দাড়ালেই দেখা যায় চারোপাশের প্রকৃতির সেই বিরল রুপ। চারোদিক কেমন নিশ্চুপ হাল্কা আঁধার ঝড় বা বৃষ্টি আসার আগেরি মূহুর্ত। ওগো প্রকৃতি আমার মতো কি তোমারো মন খারাপ, আমার মতো কি অঝোর ধারায় কান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছো? নিবে আচ্ছা নেও। এগুলাই একাএকা বিরবির করছিলাম তখন আমার মায়ের আগোমন ঘটে। আর এ কথা বলেন।

তিথিঃ মা আমার এখন কথা বলতে ভাল্লাগছে না, বাসায় যাও আমি আসছি সেখানেই কথা হবে। আমাকে একা এখন থাকতে দেও!
তিথির মাঃ চুপ করে এখন আয় আমার সাথে পার্লার থেকে মেয়েরা চলে আসছে সাজাতে।
তিথিঃ আমাকে একটু বলবে তোমরা? আমাকে কি আদোও মানুষ ভাবো, আমিন যে রোবট না আমারো অনুভূতি আছে আমারো কষ্ট হয়। সবসময় সব কিছুর দায়ভার আমাকে নিতে হয় কেন, আমার কথা কেও শুনে না কেন৷ সেদিন ও তোমরা আমাকে অবিশ্বাস করেছিলে, আমি তো তা মেনে নিয়েছিলাম, ফায়াজের সাথেও বিয়েটা ও করে নিয়েছিলাম। কেউ কি ভাবছো সেই ছোট্ট তিথির উপর দিয়ে কি যাচ্ছে বা যাচ্ছিলো?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তিথির এসব প্রশ্নের জবাব যে নাই তিথির মায়ের কাছে৷ তাই তো, হ্যাঁ তারা প্রথম থেকে মেয়ের মতামত নেয় নাই, শুরু থেকে তারা মেয়ের কথা শুনে নাই।
তিথির মাঃ আমাকে মাফ করে দিস মা, অইদিন আমাদের কিছুই করার ছিলো না, ফায়াজ প্রায় উন্মাদ এর মতো বিহেভ করছিলো। আমরা সেদিন ওর সাথে তোর বিয়ে না দিলে ফায়াজ সুইসাইড করে ফেলতো, ওর হাতে পয়জন এর বোতল ছিলো রে মা। এবার বল আমাদের ই বা কি করার ছিলো?

তিথি ওর মায়ের মুখে এসব শুনে আশ্চর্য প্রায়্, ফায়াজ এতো পাগলামি করছে তার জন্য?
তিথিঃ আচ্ছা মা, ভাইকে বিয়ে করার জন্য কি ফিহা আপু রাজি হইছে?
তিথির মাঃ না, রে ফিহা না কি এ বিয়ে করতে চায় না!
তিথিঃ আমার বিয়ে হলে ভাই এর বিয়েও হবে, না হলে আমি ফায়াজ কে বিয়ে করবো না।
তিথির মাঃ এটা কোন ধরনের ছেলেমানুষী?
তুমি জানো না মা ভাইয়া ফিহা আপু কে কতোটা ভালোবাসে, আমি দেখেছি ভাইয়াকে ফিহা আপুর জন্য কষ্ট পেতে কান্না কর‍তে।যা করা আমাকেই করতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ সে ফায়াজদের ফ্লাটে গেলো, আর তিথিকে সেখানে দেখায় সবাই অবাক ,

ফায়াজেন মাঃ কি ব্যাপার তিথু তুমি এখানে? রেডি হচ্ছো না কেনো একটু পর তো হলুদ।
তিথিঃ আমার কিছু কথা ছিলো, ফিহা আপু আর ফায়াজ কে ডাকবেন?
ফায়াজের মাঃ ফায়াজ ফিহা জলদি আসো তিথি তোমাদের ডাকছে? এসে দেখে যাও।
ফায়াজঃ কি হয়েছে এখানে, কি বলবা বলো?

ফায়াজ বিরক্তিকর এক্সপ্রেশন দিয়ে বলল, তা পুরাটাই তিথি অগ্রাহ্য করে নিজের বক্তব্য রাখলো।
তিথিঃ আন্টি আমি এ বিয়ে কর‍তে চাই না, এগুলা এখানেই বন্ধ করু। এইটুকু বলে থামলো তিথি ফায়াজের স্থিতি বোঝার চেষ্টা করলো, ইতিমধ্যে ফায়াজেত ফেস থেকে বিরক্তিকর ছাপ টা দূর হয়ে রাগ হতে শ্ররু করলো।
ফায়াজের মাঃ এটা দুষ্টামি করার সময় না তিথি গিয়ে রেডি হয়ে নেও।

তিথিঃ আমি কোনোরকম মজা করছিনা, আমি বাচ্চা নই। আমার নিজস্ব মতামত আছে, আমি এ বিয়ে করবো না ঠিক যেভাবে ফিহাপু আমার ভাইয়াকে বিয়ে করতে অস্বিকার করছে ঠিক অইভাবেই আমি আজ ফায়াজ কে রিজেক্ট করলাম। আমাদের যেহেতু আইনে ভাবে বিয়ে হয় নাই, আপনি ফায়াজ আমাদের ধর্ম অনুযায়ী তিন তালাক দিয়ে দিন।
সবাই আশ্চর্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তারা ভাবতে পারছে না এই কারণে তিথি বিয়ে করবে না বলে না করছে। ফায়াজের এখন পাগল পাগল হওয়া অবস্থা।

ফায়াজঃ এগুলা তোমার কাছে মজা মনে হচ্ছে? এ বিয়ে হবেই আর আজ ই গায়ে হলুদ হবে।
তিথিঃ আমাকে জোর করে যদি আপনি বিয়ে করার চেষ্টা করেন তাহলে মনে রাখবেন এইদিন ই আমার লাইফের শেষ দিন।
ফায়াজ তিথির এসব কথা রাগ সামলাতে না পেরে টেবিলে থাকা সব কিছু নিচে ফেলে দিয়ে ভেঙে দিচ্ছে। ফিহা স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কি বলবে বুঝতে পারছেনা তবুও নিজেকে ধাতস্ত করে বলল,
ফিহাঃ আমি তামিম কে বিয়ে করার জন্য না করায় সে এইভাবে প্রতিশোধ নিচ্ছে। এতোটা নোংরা তামিম ছিহঃ শেষ অবদি নিজের বোন কে হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করছে। তিথি তুমি কিভাবে তোমার ভাই এর কথায় এসব বলতে পারবা আমার ভাইটা তোমাকে ভালোবাসে , আর তামিম এতোটা স্বার্থপর কিভাবে হচ্ছে।

ফিহা আর কিছু বলবে তার আগেই তিথি ফিহার গালে চর মেরে দেয়, এতে সবাই আরো বেশি অবাক হয়।
তিথিঃ আমাকে ক্ষমা করবেন মিস ফিহা, আমি বুঝতে পারিনাই, আমার ভাই আমাকে ব্যাবহার করছে না, শুনেন এসব কিছুই আমার ভাই আমাকে বলে নাই। আমি একা একা ই জানছি আর কি বললেন আমার ভাই নোংরা? নোংরা মনের মানুষ তো আপনি হ্যা আপনি, আপনার মতো মেয়ের ভাগ্য যে আমার ভাই আপনাকে ভালোবেসেছিলো। আর শুনেন আমার ভাই আপনাকে নিজেত স্বার্থে ব্যাবহার করেনাই আপনার অই সো কল্ড বয়ফ্রেন্ড এর মতো। আমি এটা কখোনোই বলতাম না ফিহা আপু আজ বলতে বাধ্য হচ্ছি তোমার নিজের ক্যারেক্টার ঠিক আছে?

ফায়াজ নিজের বোনকে ক্যারেক্টর হিন শব্দ শোনা মাত্র তিথি কে থাপ্পর মারলো ।
ফায়াজঃ তোমার সাহস কিভাবে হয় আমার বোনকে এসব বলার?
তিথি এবার তাচ্ছিল্যপূর্ণ হাসি দিলো,যার অর্থ কেও না বুঝলেও ফিহা ঠিক ই বুঝছে তাই তো সে রিতীমত ঘামছে।
তিথিঃ আরে আমাকে মারার আগে আপনি শুনতেন এসব কথা আমি কেনো বলছি? আপনার থেকে এসব ব্যাতিত আর কি ই বা আশা করবো আমি ফায়াজ?

আপনার বোন যে ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা আপনারা জানেন? আপনার বোনের বয়ফ্রেন্ড যে আপনার বোনকে ডিচ করেছে জানেন। না জানবেন কিভাবে তামিম ভাই তো আপনাদের বলে নাই এসব। আপনার বোন আর তার বয়ফ্রেন্ড গেছিলো এবোরশন করাতে আমার ভাইয়ের চেম্বারে, তারা ভাবেনাই যে ডক্টর টা আমার ভাই তামিম হবে। এসব জানার পর ও আমার ভাই আপনার বোন ফায়াজ আন্টি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাইছে আর সে কি আমার নেক দিল ভাইকে এসব কটু কথা বললো? আমি পারলে সব চেপে যেতে পারতাম কিন্ত এটা আমার ভাইয়ের প্রশ্ন তাই তার সাথে কোনো কম্প্রোমাইজ করবো না। অনেক বলে ফেলেছি আমাকে ক্ষমা করে দিবেন ছোট হয়েও বড় মানুষের গায়ে হাত উঠিয়েছি, কিন্তু আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে এসব বললে আমি কখোনোই সহ্য করবো না। আসছিলাম সব ঠিক করতে এলোমেলো করে দিয়ে চলে যাচ্ছি।

তিথি চলে যাওয়ার পর সবাই স্তব্ধ হয়ে বসে আছে, ফায়াজের মা মুখে কাপড় চেপে কান্না করছে। ফায়াজ সোফায় বসে দুইহাত মাথায় ঠেকিয়ে রাখছে, আর ফিহা দাঁড়িয়ে আছে সে ভাবে নাই তার এসব এভাবে ফাস হবে। রাগ হচ্ছে ফিহার ক্ষোভ জমছে তিথির উপর।

মন পায়রা পর্ব ৬

ফায়াজের মাঃ আমার লালন পালনে কি কোনো খামতি ছিলো? কি দেই নাই আমি তোকে,কম আদরে মানুষ করিনাই তাহলে এসব করার আগে তোর কলিজা কাপলো না? তোর জন্য আমার ছেলেটার জিবন ও নষ্ট হওয়ার পথে তোর অন্যায় হওয়ার পর ও ফায়াজ তোর জন্য অই বাচ্চা মেয়েটার গায়ে হাত উঠালো।
ফায়াজঃ খুব ভালোবাসতাম আমরা তোকে ফিহা, তার প্রতিদান এভাবে দিলি? কিভাবে পারলি তুই, আজ থেকে আমার কোনো বোন নাই।

মন পায়রা শেষ পর্ব