মায়াবতী পর্ব ৪০

মায়াবতী পর্ব ৪০
তানিশা সুলতানা

সাগর হাসপাতালে থাকতে চায় না। বাড়ি যেতে চায়। কিন্তু ডাক্তার তাকে ছাড়তে নারাজ। তাদের মতে আরও পনেরো দিন তাকে হাসপাতালে থাকতে হবে৷ সাগর সাফ সাফ মানা করে দিয়েছে। সে ইতোমধ্যে বেড থেকে নেমেও পড়েছে। সালমা ছেলেকে সামলাতে পারছে না।

তখনই কেবিনে ঢোকে অর্ণব। সাগরের অর্ণবের দিকে চোখ পড়তেই সে মাথা নিচু করে শান্ত হয়ে যায়। অর্ণবের মুখটা দেখলেই তার মনে পড়ে যায় তন্নির বিধস্ত মুখটা। দুনিয়া ওলট পালট করে দিতে ইচ্ছে হয়।
অর্ণব গিয়ে সাগরের পাশে দাঁড়ায়।
“আন্টি আপনি গিয়ে কিছু খেয়ে নিন। আমি কথা বলছি সাগরের সাথে।
চোখের ইশারায় চলে যেতে বলে। সালমা বেরিয়ে যায়। ডাক্তারও চলে যায়। অর্ণব সাগরের পাশে বসে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” কেমন আছো?
“ভালো
গম্ভীর গলার উওর সাগরের।
” আমি ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলতে পারি না। স্পষ্ট ভাবে বলছি। আমার বোন অথৈ তোমাকে ভালোবাসে।
সাগর কথা বলে না। অথৈ তাকে ভালোবাসে কথাটা সে আগেই আন্দাজ করেছিলো। কিন্তু ভাবনাটা সিরিয়াসলি নেয় নি।
“আমি চাই তুমি আজকেই অথৈকে বিয়ে করো।
সাগর বাঁকা চোখে তাকায় সাগরের দিকে। কিছু বলে না।

” আমার বউকে ভালোবেসে আমারই বোনকে বিয়ে করতে খুব প্রবলেম হবে তাই না? অনির মাম্মা ভালো আছে। সে আমার সাথে হ্যাপি আছে এটা দেখে বুক জ্বলবে তোমার? হিংসা হবে?
সাগর হাসে। ঠোঁটের পাশে কেটে গেছিলো। সেখানে র*ক্ত জমে আছে। ফোলা ঠোঁটের বাঁকা হাসি ভারি অদ্ভুত লাগে অর্ণবের।

“আমি আপনার মতো নই ভাইয়া। আমি যাকে ভালোবাসি তাকে আমি সবসময়ই ভালোবাসি। সাথে তার ভালোবাসার মানুষ গুলোকেও ভালোবাসি। সে ভালো আছে এটা জেনে আমার বুক জ্বলবে না। কিন্তু সে খারাপ আছে তার পাশের মানুষটা তাকে সম্মান দিতে জানে না এটা জানলে অবশ্যই আমার বুক জ্বলবে। হাহাকার করবে বুকটা। কারণ আমি তাকে ভালোবাসি।

অর্ণব রেগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে। চোয়াল শক্ত করে চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়। রাগে তার শরীর কাঁপছে। এটা দেখে সাগর আলতো হাসে।
“আমার ভালোবাসার মানুষটিকে আপনি বিয়ে করে ফেলেছেন। আমার তো রাগ হয় না।
অর্ণব ফোঁস করে শ্বাস টানে।
” সব সময় তুমি এটাই বোঝাতে চাও আমি মায়াবতীর জন্য পারফেক্ট না। সে তোমার ভালোবাসা ডিজার্ভ করে। আমি জাস্ট উড়ে এসে জুড়ে বসেছি। সে আমার জেদ।

এক সপ্তাহ
এক সপ্তাহের মধ্যে তুমি নিজে বলবে “অর্ণব মায়াবতীর জন্য পারফেক্ট। আমি পারফেক্ট ছিলাম না”
বলতেই হবে ইটস মাই চ্যালেন্স।
সাগর তৃপ্তির হাসি হাসে। এটাই চাইছিলো সে। তার জন্যই অর্ণবকে উস্কে দিচ্ছিলো।
অর্ণব কল করে অথৈকে। অথৈ ফোন নিয়েই বসে ছিলো।
রিং হওয়ার সাথে সাথে রিসিভ করে

“তুই যার পেছনে ছুটেছিস সে তোর জন্য পারফেক্ট না। তুই কখনোই তার সাথে ভালো থাকবি না। বাকিটা তোর সিদ্ধান্ত।
অথৈ জোর গলায় বলে
” আমার সাগরকেই চাই। ভালোবাসতে হবে না। শুধু আমার পাশে থাকলেই হবে।
লাউডস্পিকারে দেওয়া ছিলো। কথাটা সাগরও শুনতে পায়। অর্ণব কল কেটে দেয়।
“তুমি কি বলো? আমি চাই তুমি আজকেই অথৈকে বিয়ে করো।

” আমিও অথৈকে বিয়ে করতে চাই৷ আর আপনাকে দেখিয়ে দিতে চাই “ভালো কি করে বাসতে হয়”
অর্ণব আর এক সেকেন্ড ও দাঁড়ায় না। এই ছেলেটার বাঁকা বাঁকা কথা তার বিরক্ত লাগে। রাগ কন্ট্রোল করতে পারে না। সোজা লথা কখনোই সোজা ভাবে বলতে পারে না সে।
দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো সালমা বেগম।
অর্ণব তাকে বলে

“আপনার ছেলে আমার বোনকে বিয়ে করতে চায়। আর আমিও দিতে চাই। আজকেই৷
ডাক্তারের সাথে কথা বলছি। আংকেল আসলে ছেলেকে নিয়ে পৌঁছে যাবেন।
বলেই সে চলে যায়। সালমা হতদম্ভ হয়ে যায়। তার অসুস্থ ছেলেটা বিয়ে করবে?

আশা বেগম রেগে আছে। তার মেয়ের বিয়ে দিবে? তার কাছে একবার পারমিশনও নিলো না? আনোয়ার একটু পরপর পানি খাচ্ছে। তার ছেলেটা যে চরম লেভেলের বেপরোয়া। বাই এনি চান্স যদি জানতে পারে আশা তন্নিকে পছন্দ করছে না। তখন কি করবে?
আশা দাঁত কটমট করে আনোয়ারকে বলে

” ছেলেকে থামাচ্ছো না কেনো?
“তোমারও তো ছেলে। তুমি সামলাও।
আশা হতাশ হয়ে বসে পড়ে। তার ছেলে কি আর তার কথা শুনবে? কখনোই না।
তখন অর্ণব ঢোকো বাবা মায়ের রুমে।
বাবার পাশে গিয়ে বসে।
আনোয়ার ছেলের মতিগতি দেখে বলে

” বাবা আমার হার্ট দুর্বল। আর কিছু বলিস না
অর্ণব মুচকি হাসে। বাবার শার্টের বোতাম খুলে দেয়। কারণ সে ঘামছে।
“ছোট্ট একটা কথা বলবো। বাড়ির মেয়ের বিয়ে। সেখানে বাড়ির বউ না থাকলে জমবে?
তুমি আর মাম্মা গিয়ে আমার বাচ্চার মাকে নিয়ে আসবে৷ তার মাকে বোঝাবা। তার বাবার কথা বলবা। দেন ভালোবেসে তাকে নিয়ে আসবা হবু পুত্রবধু হিসেবে।
আনোয়ার খুশি হয়। আশার মুখ কালো হয়ে যায়। সেদিন এতো অপমান করলো আর আজকে তাদের সামনে গিয়ে ক্ষমা চাইবে? মানসম্মান থাকবে।

” মাম্মা যাবে তো?
আশা চমকে ওঠে। ছেলের মুখের ওপর না বলার সাহস তার নেই।
সে মাথা নারায়। অর্ণব মুচকি হাসে।
“তাহলে এখুনি বেরিয়ে পড়ো।
আমি গিয়ে বাকি কাজ গুলো সেরে ফেলি।
অর্ণব চলে যায়।
আশা চিন্তা করতে থাকে।
অর্ণব নিজের রুমে গিয়ে তন্নিকে কল করে। তন্নি রান্না করছিলো। অর্ণবের কল দেখে মুচকি হেসে কল রিসিভ করে।

” পাপা আর মাম্মা যাচ্ছে তোমায় আনতে।
তন্নি অবাক হয়
“কিহহহ
” আজকে অথৈয়ের বিয়ে দিবো সাগরের সাথে। সেখানে তোমাকে ভীষণ প্রয়োজন। তুমি বলেছিলে না আমার জন্য তোমার আর অথৈয়ের দুরত্ব তৈরি হচ্ছে? সেটাই মেটানোর চেষ্টা করছি। তোমাকে আমার বাবা মা আজকে সসম্মানে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসবে বাড়ির হবু বউ হিসেবে।
তন্নি রহস্যময় হাসি হাসে।

“আমি তো ঘোড়ায় চেপে যেতে চাইছিলাম
” সবে এটা বোঝাবো তোমায়। আমাদের বাড়ির সবাইকে আমি মেনেজ করে ফেলেছি। যখন তোমার বাবা মাকে মানাতে পারবো তখন পুরো শহর জানিয়ে ঢাক ঘোল পিটিয়ে ঘোড়ায় চেপে রাজপুত্রের মতো তোমায় আনতে যাবো সারাজীবনের জন্য।

তন্নি হাসে।
অর্ণব তন্নির হাসি অনুভব করে
“ভালোবাসি অনির মাম্মা
” আমিও ভালোবাসি তাতানের পাপা।
“তাতান?
” ছেলেও তো হতে পারে। আমাদের ছেলের নাম থাকবে তাতান।
“বাহহহ বাহহহ
আমার পালাই পালাই বউ দেখি বেশ রোমান্টিক হয়ে গেছে। বাচ্চার নামও ঠিক করে ফেলেছে।
এবা আমাদের ফুলসজ্জা আর খুব বেশি দুরে না।
” অজাত
তন্নি কল কেটে দেয়। অর্ণব হেসে ফেলে। কয়েকবার তাতান নামটা উচ্চারণ করে।

অথৈ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আজকে তার বিয়ে। ইসস কাল ওবদি ভাবতে পারছিলো না। আজকে সাগর পুরোপুরি তার হয়ে যাবে। কেউ আর কখনো তাদের আলাদা করতে পারবে না। সারাক্ষণ সাগরকে সামনে থেকে দেখতে পারবে ছুঁয়ে দিতে পারবে। আর কি চাই?
আর্থি বোনের ভাবসাব দেখছে৷ নিজের বিয়েতে কেউ এতো খুশি থাকে সেটা অথৈকে না দেখলে বুঝতেই পারতো না আর্থি। নিলজ্জের একটা সীমা থাকে।

মায়াবতী পর্ব ৩৯

“দাঁত বের করিস না তো অথৈ। কেউ দেখলে নিলজ্জ বলবে।
অথৈ আর্থির দিকে তাকিয়ে মুখ বাঁকায়।
” তুই ছাড়া আর কেউ বলবে না।

মায়াবতী পর্ব ৪১