মিষ্টিমধুর প্রতিশোধ পর্ব ৩৫

মিষ্টিমধুর প্রতিশোধ পর্ব ৩৫
লেখিকাঃ দিশা মনি

ফাহিম অনেকক্ষণ ধরে ড্রয়িং রুমে সমানে পায়চারি করে চলেছে। নামাজ আদায় করে ফারজানা বেগম ড্রয়িং রুমে এসে ফাহিমকে এভাবে পায়চারি করতে দেখে বলেন,
‘কি হইছে ফাহিম? তোরে এত অস্থির লাগতেছে কেন?’
‘আম্মু আমি ইভানার জন্য চিন্তিত। আজ আমাদের বাইরে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান ছিল৷ তাই ও বলেছিল তাড়াতাড়ি কলেজ থেকে আসবে। সেটা তো এলোই না কিন্তু এখন ওর কলেজ ছুটি হওয়ার এক ঘন্টা হয়ে যাচ্ছে তবু ফেরে নি।’

‘সেকি কথা! তুই এখনো চুপ করে আছিস ক্যান? ইভানার সাথে তো ফোন থাকার কথা। ওরে কল কর।’
‘কল করেছিলাম কিন্তু ধরে নি।’
‘তাইলে আর সময় নষ্ট না কইরা ওর কলেজে গিয়া খোঁজ নে। ‘
ফাহিম তাই করল। দ্রুত বাড়ি থেকে বের হয়ে ইভানার কলেজের দিকে রওনা দিলো। কলেজে এসে দেখল কলেজের গেট বন্ধ। ফাহিম এবার কলেজের সিকিউরিটি গার্ডের সাথে কথা বলল। তার সাথে কথা বলে জানতে পারল কলেজ অনেক আগেই ছুটি দিয়েছে। সিকিউরিটি গার্ড ইভানাকে চেনে। তাই তাকে ইভানার কথা জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন,
‘ইভানা তো আজ অনেক আগেই বেরিয়ে গেছে।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ফাহিমের এবার ভয় হয়ে থাকে। অজানা আশংকায় তার বুক কাপতে থাকে। ফাহিম সর্বপ্রথম ইভানার বাড়িতে খোঁজ নেয়, ইভানা সেখানে যায়নি জানার পর ফাহিম কোন উপয়ান্তর না দেখে আশেপাশে খোঁজ করতে থাকে। ইভানাকে কোথাও না পেয়ে সে হতাশ হয়ে পুলিশ স্টেশনে যায়। পুলিশ স্টেশনে গিয়ে সব জানালে তারা বলে,
‘আপনার স্ত্রী যে স্বেচ্ছায় কোথাও যায়নি তার কি মানে? ৪৮ ঘন্টা না হলে আমার মিসিং ফাইল করতে পারব না। আপনি আরেকটু ভালো ভাবে খোঁজ নিয়ে দেখুন।’

ফাহিম হতাশ হয়ে যায়। এরপর সে বাড়িতে ফিরে আসে। বাড়িতে এসে আরো একদফা অবাক হয়। কারণ বাড়িতে ঢুকতেই ফারহান ফাহিমের হাতে একটি চাবি তুলে দিয়ে বলে,
‘এই নে। এটা তোর সারপ্রাইজ। আমি তোর জন্য নতুন একটা বাইক কিনেছি তোর জন্মদিন উপলক্ষে।’
ফাহিম হঠাৎ করে ফারহানকে জড়িয়ে ধরে। দুঃখের সাথে বলে,

‘ভাইয়া আমি ইভানাকে কোথায় খুঁজে পাচ্ছি না। ওর ফোন বন্ধ, স্কুল থেকেও নাকি অনেক আগে চলে এসেছে, নিজের বাড়িতেও যায়নি৷ আমি ওকে অনেক খুঁজেছি কিন্তু কোথাও পাইনি।’
‘চিন্তা করিস না ফাহিম। হয়তো ও কোন বন্ধুর বাড়িতে গেছে।’
‘না আমি ওর সব ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করেছি। কারো কাছে যায়নি ও।’
‘পুলিশে জানিয়েছিস?’
‘৪৮ ঘন্টা না হলে তো মিসিং ডাইরি কর যায়না। ভাইয়া তুই তো আইনের লোক। তুই দেখ কিছু করতে পারিস কিনা।’
‘আচ্ছা, তুই শান্ত হ, আমি দেখছি কি করা যায়।’

ফারহান ইভানার খোঁজ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যায়। এরমধ্যে হঠাৎ তার কাছে রিয়ার ফোন আসে। ফারহান রিয়ার ফোন পেয়ে দুদিন আগের কথা মনে করে। দুদিন আগে সে রিয়ার সাথে দেখা করেছিল। সেইসময় রিয়া ইভানার বিরুদ্ধে নিজের মনে যত বি’ষ আসে সব ঢেলে দেয়। সাথে ফারহানকে এই প্রস্তাবও দেয় যেন দুজনে মিলে ইভানার সর্ব’নাশ করে।

কিন্তু ফারহান একজন আইনের লোক হয়ে এমন কিছু করার কথা ভাবে নি। হ্যাঁ, এটা ঠিক সে প্রথমে ভেবেছিল ইভানার জন্য তার সাথে তোহার মিল হয়নি। কিন্তু পরে ভালো করে ভেবে দেখতে পায় ইভানার কোন দো’ষ নেই। এখানে কারো দো’ষ থাকলে সেটা তার নিজের। তাছাড়া একজন ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে এসব বাচ্চামো করার ইচ্ছাও তার নেই। সেইজন্য ফারহান স্পষ্ট করে রিয়াকে জানিয়ে দেয়, যে সে এমন কিছুই করবে না এবং ভালো হয় যদি রিয়াও এমন বা’জে কাজ করার চিন্তা বাদ দিয়ে নিজের লাইফে ফোকাস করে।
এখন হঠাৎ এভাবে রিয়ার ফোন পেয়ে ফারহানের সন্দেহ হয়। তাই দ্রুত ফোন রিসিভ করে। ফারহান ফোন রিসিভ করতেই রিয়া বলে,

‘আপনাকে একটা সুখবর দেওয়ার আছে।’
‘কি বলবে বলো।’
‘ইভানাকে আমি বন্দি করে রেখেছি।’
‘হোয়াট! তুমি!’
‘হুম। আমার হোস্টেলে বন্দি করে রেখেছি। এখন কেউ ওকে খুঁজে পাবে না। আপনি এই সুযোগকে কাজে লাগান। নিজের পরিবারের সবাইকে বলুন যে ইভানা অন্য কারো সাথে ভে’গে গেছে। আমি দু তিনদিন পর ইভানাকে ছেড়ে দেব। তারপর ও বাড়িতে ফিরে গেলেও সবাই ওকে খা’রাপ ভেবে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেবে। আর এভাবে আমাদের দুজনের প্রতিশোধ নেওয়া হয়ে যাবে।’

রিয়ার কথা শুনে ফারহান ভীষণ রেগে যায়। একটা মানুষ কতটা নিচে নামতে পারে সেটা হয়তো রিয়াকে না দেখলে ফারহান বুঝতেই পারত না। তবুও অনেক কষ্টে নিজের মেজাজ ঠিক রাখে ফারহান৷ এখন আগে ইভানাকে উদ্ধার করতে হবে। তাই রিয়ার সাথে নাটক করতে হবে। তাই ফারহান বলে,
‘তুমি আমাকে নিজের হোস্টেলের ঠিকানা দাও। আমি ওখানে যাচ্ছি। তারপর দুজনে মিলে দেখব কিছু করা যায় কিনা।’
রিয়া সরল মনে ফারহানকে বিশ্বাস করে হোস্টেলের ঠিকানা বলে দেয়। ফারহান কল রেখে রিয়ার হোস্টেলের দিকে রওনা দেয়। ফাহিমকেও নিজের সাথে নেয় সে।

পুলিশ সদস্যদের সাথে নিয়ে রিয়ার হোস্টেলে উপস্থিত হয়েছে ফারহান ও ফাহিম। রিয়া হোস্টেলের বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিল। ফারহান যে এভাবে তাকে ঠ*কাবে সেটা ভাবতে পারে নি। রিয়া পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তখনই কয়েকজন মহিলা পুলিশ গিয়ে তাকে আটক করে। অতঃপর রিয়ার হোস্টেল রুমের তালা ভেঙে ভেতর থেকে ইভানাকে উদ্ধার করা হয়। ইভানাকে দেখে তার কাছে ছুটে যায় ফাহিম। তার চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করে। কিছু সময়ের মধ্যেই ইভানার জ্ঞান ফেরে।
ফাহিম ইভানাকে আগলে নিয়ে বলে,

‘ঠিক আছ তো তুমি?’
ইভানা কিছু বুঝতে পারছিল না৷ সে চোখ বন্ধ করে কি ঘটেছিল তা মনে করার চেষ্টা করে। সবটা মনে পড়তেই বলে ওঠে,
‘রিয়া আপু আমাকে এখানে নিয়ে এসেছিল৷ তারপর আমাকে কফি খেতে দিল। কফি খাওয়ার পর আমার খুব ঘুম পেতে থাকে। তারপর আমার আর কিছু মনে নেই।’
পাশ থেকে ফারহান বলে,

‘এই সবকিছু রিয়ার চাল। তোমার বাবা রিয়ার বাবার থেকে টাকা ধার নিয়েছিল৷ সেই ধারের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য রিয়ার বাবাকে নিজের বাড়ি বিক্রি করে দিতে হয়। যার ফলে ওদের অনেক আর্থিক কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই ও এমন করেছে।’
ইভানা সব শুনে অবাক হয়। এত কিছু যে ঘটে গেছে এটা তার জানা ছিল না। ফারহান পুলিশের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘রিয়াকে নিয়ে যান। ও যা শাস্তি ডিজার্ভ করে তাই দিন ওকে। আর কোন প্রমাণ লাগলে আমাকে ডাকবেন। ওর বিরুদ্ধে সব প্রমাণ আছে আমার কাছে।’

রিয়া রক্তিম চোখে ফারহানের দিকে তাকায়। ফারহানের সেদিকে কোন খেয়াল নেই। পুলিশ জিপে করে রিয়াকে নিয়ে চলে যায়।
অতঃপর ফাহিম ইভানাকে সামলে নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসে। বাড়িতে আসার পর ফাহিম ফারহানকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলে,

মিষ্টিমধুর প্রতিশোধ পর্ব ৩৪

‘তোর কাছে আমি কৃতজ্ঞ থাকব ভাইয়া। তোর জন্য আজ ইভানাকে ফেরত পেলাম।’
‘আমি তোর ভাইয়া। তোর জন্য এটুকু করতেই পারি, এখানে কৃতজ্ঞতা জানানোর কিছু নেই। এভাবে সব বিপদ কে’টে যাক। আমরা সবাই মিলে সুখে থাকব।’
ফাহিম ফারহানকে জড়িয়ে ধরে। ইভানা এই দৃশ্য দেখে খুব খুশি হয়। তার মনে হতে থাকে এবার সব ঠিক হয়ে যাবে।

মিষ্টিমধুর প্রতিশোধ পর্ব ৩৬