মেইড ফর ইচ আদার পর্ব ৪

মেইড ফর ইচ আদার পর্ব ৪
অনামিকা রহমান

সফিউল আহমেদ আর তনয় আহমেদের কঠোর নির্দেষ,রাতে খাবার খেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হবে সবার। তন্নি আর তন্ময়ের বিয়ের অনুষ্ঠান কাল থেকে শুরু হবে। তাই সবাই রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে গিয়েছে। এছাড়া বাড়ির ছেলে মেয়েরা মেহেদীর অনুষ্ঠানের সকল আয়োজন করবে তাও বলে দিয়েছে। তাই সবাই বাধ্য হয়েই যে যার রুমে পা বাড়ালো।

তন্নি মেসেজে কথা বলছে, মেসেঞ্জারে টুংটাং শব্দ হচ্ছে, মুলত তন্ময় মেসেজে করছে। তারা দু দুটো বছর প্রেম করে সবার মত নিয়েই বিয়ে করছে। তন্ময় বলছে ছাদে যেতে তন্নিকে, কিন্তু তন্নি বলছে এখন আসা যাবে না, হঠাৎ মেসেজ আসা বন্ধ হলে তন্নি কিছুই বুঝতে পারলো না, কয়েক মিনিটের ব্যবধানে তন্ময় তন্নিকে পাজ্রা কোলে উঠিয়ে নিয়ে ছাদে চলে গেলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

পূর্নিমার আলোতে উজ্জ্বল হয়ে আছে চার পাশ। ছাদে ফুলের সুবাসে একাকার হয়ে আছে, তন্ময় গোলাপ গাছ থেকে একটা গোলাপ ছিড়ে কানে গুজে দিলো তন্নির।
তন্ময় তন্নির অবয়বের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,
❝প্রেমে পড়ার মতন এত আনন্দ পৃথিবীতে আর কোথাও নেই, জানো প্রিয়তমা।
কাউকে ভালোবাসতে হলে এক বুক সমুদ্র নিয়ে ভালোবাসতে হয়। আমি কি তোমার সেই এক বুক সমুদ্রের ন্যায় ভালোবাসতে পেরেছি?

কাউকে হুট করে ভালোবাসি বলে ফেলাটা কবিতা উপন্যাসের প্লটে বেশি মানায়। কাউকে ভালোবাসি বলার আগে মানুষটার ভয়কে জানতে হবে, তার সীমাবদ্ধতা বুঝতে হবে, তার ঘৃণা, তার হতাশা, তার অপ্রাপ্তি, তার ভালো না লাগা- সবকিছুকে চিনতে হবে। আমি কি তা পেড়েছি প্রিয়তমা।

একটা মানুষের প্রচন্ড সুখের সময়ে ভালোবাসি বলাটা যতটা সহজ , তার দুর্দিনে তাকে ভালোবাসাটা ততটাই কঠিন। তাই ভালোবাসাটা মূলত দায়িত্ববোধেরই একটা বহি:প্রকাশ।আমি কি সেই দূর দিনে তোমার ভালোবাসতে পেরেছি প্রিয়তমা। ❞
তন্নি তন্ময়ের বুকে মাথা রেখে বলল, পেরেছেন প্রিয়তম, এভাবেই আজীবন পাশে চাই আপনাকে প্রিয়তম।
এভাবেই কেটে যায় তন্নি আর তন্ময়ের কাটানো কিছু নির্জন প্রহর।

তৃনা প্ল্যান করছে আবিরকে ভয় দেখাবে, আজ এই আবিরের ১৩টা বাজাবে তৃনা। একটু আগে যে ভয়টা তৃনাকে আবির দেখালো,এর তো শোধ তুলবেই তৃনা।
❝কিছুক্ষণ আগের কথা❞

তৃনা বোতলে পানি নিয়ে সিড়ি দিয়ে এক পা এক পা উপরে উঠছে। আবির ও বোতলে পানি নিতে আসলে তৃনাকে দেখে পিছ পা হয়ে দাড়িয়ে পড়ে।হুট করেই মাথার মধ্যে শয়তানি বুদ্ধি আটে আবিরের। হঠাৎ করে তৃনার সামনে এসে দাড়ালে হতচকিত হয়ে পা পিছলে পড়ে যেতে নিলে আবির তৃনার হাত ধরে ফেলে, ভয়ে আতংকে জোরে জোরে শ্বাস টানতে থাকে তৃনা।

তৃনাকে হাত ধরে টান দিলে আবিরের বুকে ঠাই পায়, তৃনার ছোট দেহ।
এবার আবির হালকা গলায় তৃনাকে জিজ্ঞেস করে, পুতুল খুব বেশি ভয় পেয়েছ?
তৃনা এবার আবিরের থেকে দূরে সরে গিয়ে পিট পিট চোখ মেলে ভ্রু কুচকিয়ে ভেংচি কেটে চেচিয়ে বলল,না ভয় পাই নি। এমন টা করলেন কেনো আবির ভাই। আমি এর শোধ তো গুনে গুনে তুলবো, আর যদি এর শোধ না তুলি আমার নাম ও তৃনা না। তৃনা আবিরের পাশ কাটিয়ে চলে যায়।
আবির একটা মৃদু হাসি দিয়ে পানি আনতে চলে যায়।

আবিরের বোতলে পানি ভরা শেষ হওয়া মাত্রই আবিরের ফোনে কল আসলে কথা বলতে বলতে ১০মিনিট চলে যায়, কথা শেষ করে আবির রুমে যাওয়ার জন্য হাটা শুরু করে। আবির এসে রুমে দরজায় ছিটকানি আটকে মুখ ঘুড়াতে ভুত ভুত বলে চেচিয়ে উঠে আবির।
❝ফ্লাসব্যাক এ যাওয়া যাক ❞

তৃনা নান সেজেছে, সত্যি ভয়ংকর লাগছে, যে কেউ দেখলে ভয় পেয়ে অজ্ঞান হবে নিশ্চিত। তৃনা নিজেকে আয়নায় দেখেই ভুবন কাপানো হাসি দিলো, ভাগ্যিস❝ দ্যা নান ❞ হরর মুভিটা দেখেছিলো, তাই ওই ভাবেই মেইকাপ দিয়ে সেজেছে। কোনো কিছু না ভেবেই আবিরের রুমে ডুকে পড়লো তৃনা , কিন্তু আবির রুমে নেই, সব জায়গায় খুজেও যখন আবির কে পেলো না, তখন তৃনা দরজায় সটান হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

আবির আসার শব্দ পেয়ে তৃনা খুব ভালো ভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে দাড়িয়ে রইলো। তারপর আবির তৃনার এই অবস্থা দেখে ভুত ভুত বলে চেচিয়ে উঠে। কিন্তু তৃনা আবার ভয় দেখাতে নিলে আবির এবার তৃনা নামক ভুতনিকে জড়িয়ে ধরলো। এবার তৃনা ভয় দেখানোর বদলে তৃনার ভেতরে ভেতরে ভয় পেতে শুরু করলো।

আবির ঠোঁট কামড়ে তৃনাকে বলে উঠল, জানো ভুতনি তোমায় দেখে না আমার বড্ড পছন্দ হয়েছে, তোমায় এই প্রথম দেখাতেই আমার ভালো লেগে গেছে, আই লাভ ইউ ভুতনি। তোমায় আমি আমাকে ছেড়ে যেতে দিব না ভুতনি, আজ যখন চলেই এসেছো,আর যেতে দিচ্ছি না।
এবার তৃনা হাসফাস করতে লাগলো, আর বলতে লাগলো এইয়ে মানে, না মানে।

আবির এবার একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল, ওমা ভুতনি, তোমাকে না দেখলে জানতেই পারতাম না, ভুতনিরাও লজ্জা পায়। না না লজ্জা পেলে চলবে না, একবার যখন ধরে ফেলছি আর যেতে দিচ্ছি না এইটাই ফাইনাল।
এবার তৃনা আবিরকে স্বজোরে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে গেলো।

আবির এবার অট্টহাসি দিয়ে বলতে লাগলো, এই পুতুল দাড়াও, দাড়াও।
কিন্তু আবিরের কথা কে শোনে তৃনা ছুটে গিয়ে দরজার ছিটকানি আটকে দিয়ে বলতে লাগলো বড় বাচা বেচে গেছি, আল্লাহ, আল্লাহ।

তৃনার বিছানার এক কর্ণারে দাড়িয়ে মেহরিমা,অন্য কর্ণারে সাহেলা খানম, রেহানার কোলের মাঝে তৃনা মুখ গুজে বসে আছে, রাঢ় গলায় রেহানা বলল, কয়টাই বা বাজে, এইভাবে কেউ ঘুম থেকে উঠায় ভাবি। সাহেলা খানম চেচিয়ে বলল, তোমার আর তোমার ভাইয়ের কারনে আজ এতো বজ্জাত হয়েছে,লাই পেয়ে মাথায় চড়ে বসেছে।মেহরিমা সাহেলা খানমকে বলল, আপা চলেন রেহু আপা যখন আসছে তৃনা উঠে যাবে। এই বলে মেহরিমা সাহেলা খানমকে হাত টেনে নিয়ে গেলো।

রেহানা খান তৃনার মাথায় হাত দিয়ে ব্লাশ করতে করতে বলল, তিনু মা এবার উঠ, তোদের আবার হলরুম সাজাতে হবে তার কথা কি মনে আছে সবাই উঠে পড়েছে, এই যে ভং ধরেছিস, আমি কিন্তু জানি তুই সেই সকালে উঠে নামাজ পড়ে, বিছানায় পড়ে পড়ে মোবাইল টিপাচ্ছিস। এবার তৃনা মুখটা তুলে হালকা হাসি দিয়ে রেহানার দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি আছো দেখেই একটু বেশিই ভং ধরছি।রেহানা এবার তৃনার পিঠে একটা চাপড় মেরে বলল, দুষ্ট একটা। তৃনা বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে গেলো।

হলরুমে একপাশে তৃনা,রোদেলা, আন্নি দাঁড়িয়ে, অন্য পাশে রিয়াদ,রাইদ আবির দাঁড়িয়ে কাজ ভাগাভাগি করছে। সবাই সবার কাজ বুঝে নিয়ে সাজানো শুরু করে দিল।
আবির,আর রাইদ স্টেজ সেট করছে, তাতে বেলুন লাগানোর দায়িত্বে আছে রোদেলা আর রিয়াদ। আন্নি আর তৃনা বেলুন ফুলিয়ে জমিয়ে রেখেছে, স্টিলের মইটা ধরে আছে রিয়াদ।

হঠাৎ ই রোদেলা পা ফসকে পড়ে যেতে নিলে রিয়াদ ধরে ফেলে রোদেলাকে পাজ্রাকোলে, এমন কান্ডে রোদেলা চেচিয়ে উঠলে, সবাই রিয়াদ আর রোদেলার দিকে চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে থাকে। রিয়াদ আর রোদেলা দুজন দুজনের পানে তাকিয়ে আছে, আবির হালকা কেশে উঠলে রিয়াদ রোদেলাকে কোল থেকে নামিয়ে দেয়। আবার সবাই সবার মতো কাজ শুরু করে দেয়, কিন্তু রোদেলা রিয়াদের মাঝে চোখাচোখি হলে যেনো দুজনেই লজ্জায় মুখ লুকানোর প্রতিযোগিতা শুরু করে।

মেহেদী অনুষ্ঠানের জন্য স্টেজ সাজানো শেষ, খাওয়া দাওয়া সেরে বিকালে মেহেদীর অনুষ্ঠানে শুরু হবে। বাড়ির বড় রা এসে দেখে নিয়েছে হলরুম সাজানো।
মেহেদীর জন্য তন্নি,রোদেলা,আন্নি,তৃনা, তুলি সবাই রেডি হচ্ছে যার যার রুমে। তন্ময়,আবির, রাইদ,রিয়াদ একই রকম পাঞ্জাবি পড়ে হলরুমে অবস্থান করছে।

এর মধ্যে তৃনা, তন্নি, রোদেলা,আন্নি,তুলি হলরুমে এসে পৌছায়। তৃনা মাথায় হাত আর জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলল, আসল জিনিসটাই আনা হলো না, আন্নি মেহেদীর ডালাটা নিয়ে আয় তো। আন্নি তৃনার কথায় দৌড়ে ডালা আনতে বের হয়ে গেলো।আবির কিছু ক্ষন তার ক্যামেরা খোজাখুজির পর রাইদকে বলল, ক্যামেরাটা মনে হয়ে রুমে রেখে এসেছি, একটু নিয়ে আয়। রাইদ সাথে সাথে আবিরের রুমে চলে গেলো।

আন্নি সিড়ি দিয়ে একপা একপা করে উঠছে উপরে, হঠাৎ আন্নির পায়েরটা খুলে গিয়ে সিড়ি দিয়ে পড়ে গেলো, আন্নি একবার পায়েলের দিকে তাকিয়ে আবার রুমের দিকে চলে যায়, আন্নি ভাবলো যাওয়ার সময় পায়েলটা নিয়ে যাবে। আন্নি সিড়ি ছেড়ে বাক ঘুরতেই রাইদ সিড়িতে উঠতে গিয়ে রাইদের সামনে পায়েল টা এসে পড়ে, একটা মৃদু হাসি দিয়ে রাইদ পায়েল টা তুলে নেয়।

আন্নি পায়েলটাকে তন্নতন্ন করে খুজছে, কিন্তু পাচ্ছে না। হঠাৎ পুরুষালি কন্ঠে পিছন থেকে কেউ বলে উঠল, এই যে আপনার পায়েল। আন্নি হতচকিত দৃষ্টিতে তাকায় রাইদের পানে। আন্নি ভ্রু কুচকিয়ে বলল, পায়েলটা এখানে ছিলো, আপনার কাছে গেলো কিভাবে?

রাইদ আন্নির সামনে এসে ঝুকে বলল, ফেলে গিয়েছিলেন তাই নিয়ে নিয়েছি, একটা কথা আছে জানেন তো, কিছু নিতে হলে কিছু দিতে হয়। তাই যদি পায়েল টা একান্তই আপনার লাগে, রাতে ছাদে এসে নিয়ে যাবেন,পায়েলের বদলে আমি যা চাইবো তাই দিতে হবে।
এই বলে রাইদ পাঞ্জাবির পকেটে পায়েলটা রেখে আন্নির পাশ কাটিয়ে চলে যায়। আন্নি কিছুক্ষন রাইদের পানে আহত চোখে তাকিয়ে থেকে মেহেদীর ডালা নিয়ে হলরুমে চলে আসে।

আবির সবার ছবি তুলছে, তৃনা আর রোদেলা তন্নিকে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে, আন্নি ছোট করে তন্ময়ের হাতের তালুতে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে। তন্ময় আর তন্নির মেহেদী লাগানো শেষ হলে, আন্নিকে মেহেদী দিয়ে দেয় রোদেলা আর তৃনা, সবার হাতে মেহেদী লাগানো শেষ হলে তৃনার হাতে তন্নি আর রোদেলা মিলে মেহেদী পড়িয়ে দেয়। তৃনা মেহেদী দিয়ে চুপটি করে বসে আছে, এখন ও শুকায় নি মেহেদি।

আন্নি, তন্নি হাতের মেহেদী উঠাতে চলে গেছে। রোদেলার হাতেও মেহেদী দেওয়া। সমস্যা হয়েছে তৃনার চুল গুলো নিয়ে।চুলে বেনী করার পরেও সামনের ছোট চুল গুলো এসে মুখ লেপ্টে দিচ্ছে হাত দিয়ে সরাতেও পারছে না,মুখ দিয়ে বাতাস বের করে চুল সরানোর চেষ্টা ।আবির বিষয় টা লক্ষ্য করলে, তৃনার পাশে এসে বসে, তৃনার চুল গুলো কানে গুজে দেয়।তৃনা আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে, আবির তৃনাকে বলল, পুতুল একটু হাসি দিয়ে তাকাও তো, তৃনা হেসে তাকালো, ওমনি আবির ক্যামেরায় একটা সুন্দর ছবি তুলে ফেলল তৃনার, তৃনাকে ছবিটা দেখিয়ে আবির উঠে চলে গেলো।

মেহেদীর পর্ব শেষ হলে, রাতের খাবার সেরে কাজিন মহল আড্ডায় মেতে উঠেছে,তবে এই আড্ডা বেশিক্ষন স্থায়ী হলো না, সফিউল আর তনয় এসে সবাই কে ঘুমাতে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে গেলো ।

রাইদ চুল গুলো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চিরুনি করছে।রিয়াদ ভ্রু কুচকিয়ে বলল, এমন ভাব করছিস যেনো কোথাও যাচ্ছিস। রাইদ বাকা হেসে উত্তর দিলো, প্রেম করতে। এমন কথায় রিয়াদ শোয়া থেকে উঠে বসলো। রিয়াদ জবাবে বলল, মানে?

রাইদ রিয়াদের পিঠে চাপড় মেরে বলল সালা, আবিরের কাজিন গুলা দেখছিস, উফ কত সুন্দর। ভাই আন্নিকে না আমার ভালো লেগে গেছে, চাইছি প্রেম করবো, এখন দেখি রাজি হয় কিনা, চেষ্টা তো করা যায়।
এই বলে রুম থেকে রাইদ বের হয়, পেছন থেকে রিয়াদ বলল আরে এত রাতে কই যাস, রাইদ হেসে বলল বউর সাথে দেখা করতে।

আন্নি রুমে বসে নখ খোটাচ্ছে, কি করবে, ছাদে যাবে নাকি যাবে না, সেটা ভাবছে, আন্নির পায়েলটাও লাগবে। পায়েল টা যে তার ভাই তন্ময় দিয়েছে। সব কিছু বাদ দিয়ে আন্নি সিদ্ধান্ত নিলো ছাদে যাবে।
দোলনায় বসে আছে রাইদ, গুটিগুটি পায়ে আন্নি ছাদে এসে দোলনার পিছনে দাঁড়িয়ে কেশে উঠলে, রাইদ বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।

আন্নিঃ পায়েলটা দিন।
রাইদঃআমার কিছু চাই।
আন্নিঃ ভ্রু কুচকিয়ে, কি চাই আপনার, আমার দেওয়ার মত পুজি থাকলে অবশ্যই দিব।
রাইদঃ সত্যি।
আন্নিঃ হুম।

রাইদঃআমি তোমাকে ভালোবাসতে চাই আন্নি, তুমি কি আমায় ভালোবাসবে। এই বলে পাশের গাছথেকে কাঠ গোলাপ ছিড়ে আন্নির কানে গুজে দেয়।
আন্নিঃ রাইদের দিকে আহত চোখে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষন পর আন্নি বলল, ভেবে দেখবো। আমার পায়েল টা দিয়ে দিন।

রাইদঃ যতক্ষন উত্তর পাবো না, ততদিন পায়েল পাবে না। তিন দিন সময় দিলাম এর মধ্যে আমার উত্তর চাই, আর হ্যা সোসাল একাউন্ট থেকে রিকুয়েষ্ট পাঠিয়েছি কনফার্ম করে দিও।
এই বলে রাইদ চলে গেল।
আন্নি কিছুক্ষন থম মেরে দাঁড়িয়ে থেকে রুমে চলে গেলো। রাইদের কথা গুলো আন্নির মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। রাইদের কথা ভাবতে ভাবতে আন্নি কখন যে ঘুমিয়ে গেলো, আন্নি টেরই পেলো না।

আহমেদ ভিলায় প্রতিবেশী লোকজন রা জড়ো হয়েছে।মানুষে ভরে গেছে বাড়ি, হলুদ অনুষ্ঠান শুরু হতে বেশি সময় নেই। মেহমানদের জন্য রান্না হচ্ছে, সেখানে মিজান কাকা তদারকি করছে। হলরুমে একপাশে স্টেজে তন্নি আর তন্ময় কে বসানো হয়েছে, বাড়ির মেয়েরা সবাই বাসন্তি আর হলুদ মিশ্রিত কালারের লেহেঙ্গা পড়েছে,ছেলেরা বাসন্তী কালার পাঞ্জাবি পড়েছে।

গান বাজনার জন্য নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্র আনা হয়েছে।
এর মধ্যেই সকলকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য আতিক খান মাইক হাতে নিলো,হালকা কেশে আতিক খান এনাউন্সমেন্ট করল, হলুদ অনুষ্ঠানে ছেলেদের আর মেয়েদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা হবে, যারা এই প্রতিযোগিতায় জিতবে তারা পাবে নগদ ৫০হাজার টাকা। প্রতিযোগিতাতে নিয়ম অনুযায়ী ছেলে পক্ষকে একটা নাচ আর একটা গান পরিবেশন করতে হবে, মেয়েদের ক্ষেত্রে ও। আর জাজ হিসেবে আমরা নিচ্ছি,আমার বাল্যকালের বন্ধু,মানে তোমাদের সাখাওয়াত কাকাকে।

এনাউন্সমেন্ট শোনার সাথে সাথে তৃনা, আন্নি আর রোদেলা উত্তেজিত হয়ে গেলো।
প্রতিযোগিতা কিছুক্ষনের মধ্যেই শুরু হবে তাই আবির তার টিম রেডি করছে, আর তৃনা ও।
আবিরের টিমের মুখোমুখি তৃনার টিম। তৃনা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে, আবিরকে বলল, আবির ভাই জিতবো তো আমরাই।তাই বলছি আগে থেকেই হার মেনে যান।

মেইড ফর ইচ আদার পর্ব ৩

আবির কপালে আঙুল রেখে স্লাইড করে,তৃনার দিকে ঝুকে বলল তা দেখা যাবে, কে জিতবে আর কে হারবে।
এর মধ্যে বাড়ির সবাই হাজির হলো, আরও আশেপাশের মেহমানরা হাজির হয়েছে প্রতিযোগিতা দেখার জন্য।
সবার ভাষ্যমতে, তৃনার দল আর আবিরের দল এমন ভাবে প্রতিযোগিতায় নেমেছে, মনে হচ্ছে যেনো রণক্ষেত্রে যুদ্ধ করতে নেমেছে।

মেইড ফর ইচ আদার পর্ব ৫