মেইড ফর ইচ আদার পর্ব ৬

মেইড ফর ইচ আদার পর্ব ৬
অনামিকা রহমান

পূর্ণিমার রাত ।হু হু করে বাতাস বইছে।জোনাকিরা খেলা করছে ।জোনাকির আলোয় জ্বলমল করছে নদীর কিনারার ঝোপঝারে ,নদীর পারে রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে দুই মানব-মানবি।নদীর ঢেউ কলকল করে বয়ে চলছে।নদীর ধারে উঠেয়ে রাখা, নৌকার পাটাতনে পা ঝুলিয়ে বসে আইসক্রিম খাচ্ছে তৃনা। পূর্নিমার আলোয় তৃনার অবয়ব অবোলোকন করছে আবির।আবিরের স্বর ভেসে আসে,

পুতুল,
দেখো নদীর এই রুপ কতো সুন্দর। হাওয়া ঢেউয়ের সাথে সাথে খেলে যাচ্ছে, তীরের সাথে আছড়ে পড়া ঢেউ, কলকল শব্দ করছে।
তৃনা মৃদু হেসে জবাব দেয়, আমার বড্ড এই পরিবেশ পছন্দ।
আবির তৃনাকে বলল, তা তোমার আইসক্রিম খাওয়া হলো, মামনি যদি একবার জানে এই রাতে তুমি আইসক্রিম বিলাশ করতে বের হয়েছ,তাহলে আর তোমায় রক্ষা নেই। তবে তুমি যদি চাও, আমি একটা চান্স নিতে পারি তোমাকে বাচাবার। তা তুমি কি বলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তৃনা নৌকার পাটাতন থেকে নেমে আবিরের সামনে দাড়ায়। যদি আম্মুর কানে কথা গুলো লিক হয়, এই নদিতে চুবিয়ে মারবো আপনাকে।আবির চট করে দাড়িয়ে তৃনার দিকে ঝুকে বলল,আমাকে আবার যেমন তেমন নদীতে চুবালে মরব না ,তবে তোমার প্রেমের নদীতে যদি চুবিয়ে মারতে চাও,তাতে আমি রাজি। তৃনা ভ্রু কুচকিয়ে আবিরকে বলল,অনেক মরার সময় পাবেন এখন ,চলুন।
যেতে যেতে আরও কথা হলো ,দুই মানব মানবির মধ্যে।
❝জোছনার আলোতে তোমার ঐ লাজ রাঙা চিবুক
প্রেম নিবেদনে মত্ত আমার এই বুক।
তবে কি এই ভালোবাসা করিবে কবুল ।❞
রিয়াদের এমন কথা রোদেলার অন্তর কেপে ওঠে ।

সিড়ি ভেঙ্গে রোদেলা রুমে যাচ্ছিলো।রিয়াদের এমন কথায় রোদেলা দাঁড়িয়ে পড়ে সিড়িতে ।রিয়াদ এসে রোদেলার সামনে দাঁড়ায় ।রোদেলার মুখে লেপ্টে যাওয়া চুল গুলো রিয়াদের আঙ্গুল দিয়ে কানে গুজে দেয় ।
রোদেলা সোজা সাপ্টা জবাব,আমার সময় চাই ,ভেবে দেখব ।তবে আপনাকে পরীক্ষাও দিতে হতে পারে। যখন ভালোবাসার কথা বলতে পেরেছেন,তাহলে পরীক্ষার জন্য রেডি থাকবেন ।কাল ছাদে অপেক্ষা করবো আপনার পরীক্ষা নেওয়ার জন্য।

রোদেলা বাক ফিরে পা ফেলে রুমে যায় ,রিয়াদ মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে রয়।রিয়াদের মনে প্রেয়সীর কথায় একদফা আনন্দ বয়ে গেলেও,ভয় ঘিরে ধরে পরীক্ষার কথা মনে পড়ে যাওয়ায় ।
বিড় বির করতে করতে রিয়াদ পানি বোতলে পানি পুরে রুমে চলে যায়।

রাইদ মেসেজ দিয়ে আন্নিকে দিশেহারা করে তুলেছে।
৫মিনিটের মধ্যে যদি ছাদে না আসো রুমে গিয়ে তুলে নিয়ে আসবো ।এমন মেসেজ দেখে আন্নি কি করবে বুঝতে পারছে না ।একে তো আন্নিকে ৩ দিনের সময় দিয়েছে ।সে উত্তর নিয়ে এখনও চিন্তিত ।
এর মধ্যে আবার রাইদের মেসেজ ,আমি আসব ,নাকি তুমি আসবে ।
আন্নি দেহে ওড়না জড়ায় ।বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে যায় ছাদে।

পূর্ণিমার আলোয় ছাদকে মনে হচ্ছে যেনো এক স্বর্গ ।
পেছন থেকে আন্নিকে বুকে টেনে জড়িয়ে ধরে রাইদ ।কেপে ওঠে আন্নি।কাপা গলায় ,রাইদ আপনি আমাকে ছাড়ুন ।
রাইদ মুচকি হাসে,উত্তর টা দিয়ে দিন মিস আন্নি ,ছেড়ে দিব ।
”’৩দিন তো এখনও হয় নি ।আমি ঠিক সময়ে উত্তর দিয়ে দিবো।
রাইদ আন্নিকে ছেড়ে দেয় ,আন্নি রাইদের থেকে দূরে গিয়ে দাড়ায় ।

রাইদ শান্ত দৃষ্টিতে আন্নির পানে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে, আবেগ মিশ্রিত সুরে আন্নিকে বলে,আন্নি আমি কিন্তু আশায় থাকব ,আপনার থেকে যেনো হ্যা উত্তর টাই আসে ।আর যদি উত্তর না হয় ,পরে যা হবে তা দেখা যাবে ।
আন্নি এক বুক সাহস নিয়ে বলল ,যদি “❝না ❞হয় উত্তর তাহলে কি করবেন রাইদ ।রাইদ অট্টহাসি হাসে, আপনি তো রাজি হবেন ,মিস আন্নি আমি জানি ,শুধু শুধু এইসব কথা বলে লাভ আছে ।আর উত্তর টা যাতে হ্যা আসে তার ব্যবস্থা আপনি নিজেই করে নিবেন ,আমার প্রয়োজন আর পরবে না।কথা শেষে রাইদ রুমে চলে যায় ।আন্নি আকাশের পানে চেয়ে বিড় বিড় করে ,কি করা উচিত আমার ?এক ঝাক চিন্তা নিয়ে আন্নি রুমের ছিটকানি আটকিয়ে ঘুমের রাজ্য পাড়ি দেয় ।

সাহেলা খানম, মেহেরিমা ও রেহানা সবাইকে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিয়ে বলল, সকালের নাস্তা শেষে, যেন সবাই সাজতে বসে, আছর বাদ বিয়ে হবে, তাই সবাইকে রেডি থাকা চাই।
সবাই সকালের খাবার শেষে যার যার রুমে চলে গেলো।
বিউটিশিয়ানরা ইতোমধ্যে চলে এসেছে। তন্নিকে সাজানো হচ্ছে। রোদেলা, আন্নি আর তৃনা ফেস মেইকাপ করে যার যার রুমে চলে গেলো, রোদেলা, আন্নি,তৃনা এই তিন জন আজ কালো কালারের লেহেঙ্গা পড়েছে। তন্নির সাজ প্রায় শেষের দিকে।

রাইদ,রিয়াদ আর আবির, তন্ময়কে রেডি করছে। সেরোয়ানি বাজ ঠিক করতে করতে, আবির তন্ময়কে মৃদু হেসে বলল, যাক শেষমেষ,ভাই আমার কোরবানি হতে চলছে। তন্ময় হাসে, সাথে রিয়াদ আর রাইদ দুজনেই।তন্ময় উত্তর দেয় আবিরকে পিঠে চাটি দিয়ে, তোমাদের ও বেশি সময় নেই, আশাকরি খুব শীঘ্রই তোমরা ও কোরবানি হতে চলছো। কাছের মানুষের জন্য নিজের জীবনকে বিলিয়ে দিতেও আনন্দ, যখন কাউকে খুব ভালোবাসবে তখনই বুঝতে পারবে।
আবিরের কল আসে, ইশারায় অপেক্ষা করার কথা বলে কলটা রিসিভ করে বাহিরের ব্যালকনিতে কথা বলে। কথা শেষে আবিরের তার পুতুলের কথা মনে পড়ে যায়। হাসির জিলিক ফোটে ঠোঁটের কোনে, হাটা শুরু করে তৃনার রুমে।

❝আয়নাতে ঐ মুখ দেখবে যখন
কপোলের কালো তিল পড়বে চোখে
ফুটবে যখন ফুল বকুল শাঁখে
ভ্রমর যে এসেছিলো জানবে লোকে❞

তৃনা হতচকিত দৃষ্টিতে পেছন ফেরে, আবিরের এই রুপ তৃনার অন্তর কাপিয়ে তোলে, তৃনার ভাষ্যমতে, এমন সুর্দশন পুরুষ তৃনা আগে কখন ও দেখে নি। আবির তৃনার পানে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়,সাথে তৃনাও। আবির এগিয়ে আসে ড্রেসিং টেবিলের কাছে। তৃনা দুপা পেছায়। আইলিনারের ক্যাপ খুলে আবির তুলিটাকে বের করে, তৃনার কপোলের কালচে তিলটা গাঢ় করে আবির, আবিরের নিঃশ্বাস তৃনার অবয়বে বিচরন করে,তৃনা কেপে উঠে, হৃদয়ে ঘন্টা বাজে, যেনো অন্যরকম ভালোলাগার ঘন্টা।

আবির দুপা পিছায়। আবিরের স্ব ভেসে আসে,এবার ❝পারফেক্ট❞।
তৃনা তাকিয়ে রয়। আবির তাড়া দিয়ে বলে মা সবার সাজ শেষ হলে হল রুমে যেতে বলেছে। তাই তন্নিকে নিয়ে যেনো রোদেলা, আন্নি আর তৃনা যেনো খুব দ্রুত চলে যায়। আবির কথা শেষে চলে যাবে, কিন্তু থেমে যায়। পকেট থেকে ফোনটা বের করে,তৃনাকে এক টানে আবিরের বুকে মিশায়,মৃদু স্বরে তৃনাকে বলে ক্যামেরার দিকে তাকাও, আমার পানে না চেয়ে।আবিরের এমন কথায় তৃনা ভিষম খায়, চট জলদি তাকায় ক্যামেরার পানে, আবির ক্যামেরায় ক্লিক করে, সুন্দর একটা মুহূর্ত ক্যাপচার হয়। আবির তৃনাকে ছেড়ে চলে যায়, তৃনা খানিক ক্ষন রোবটের ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকে। এর মধ্যে রোদেলা আর আন্নি তৃনার রুমে উপস্থিত হয়, সুর ভেসে আসে, চল দেড়ি হয়ে যাচ্ছে, তন্নি আপুকে নিয়ে যেতে হবে হল রুমে।

কাজি সাহেব ইতোমধ্যে চলে এসেছে। গোলাপ ফুলের পর্দার একপাশে তন্ময় অন্য পাশে তন্নি বসে আছে। দোপাট্টা দিয়ে টেনে রাখা তন্নির মুখশ্রী বোঝা যায় আংশিক।কাজি সাহেব কালিমা পড়ে বিবাহ শুরু করলো। কাজি সাহেব তন্ময়কে বলল, বাবা বলুন, কবুল। তন্ময় চট জলদি বলে ফেলে ৩কবুল।কাজি সাহেব ফের তন্নিকে বলে, মা আপনার এই বিয়েতে সম্মতি থাকলে বলুন, কবুল। তন্নি জবাব দেয়। ৩কবুল বলে বিয়ে সম্পন্ন হয়।
বিয়ে শেষে দুজনকে স্টেজে বসিয়ে মিষ্টিমুখ করায় রেহানা খান। হল রুম আরও জাক জমক হয়ে ওঠে আনন্দে।

বাসরঘর সাজাচ্ছে, রোদেলা,আন্নি আর তৃনা। তন্নি একটা কাঠের মোড়ায় বসে সব কিছু অবোলোকন করছে। বাসরঘর সাজানো শেষে রোদেলা,আন্নি আর তৃনা বুদ্ধি আটে, মোটা অংকের টাকা হাসিলের জন্য।
প্লান করা শেষ, এবার করে দেখানোর পালা, এই বলে তৃনা অট্টহাসিতে মেতে উঠে।

আবির, রিয়াদ আর রাইদ তন্ময় কে নিয়ে হাজির হয় বাসরঘরের সামনে। কিন্তু ডুকতে পারছে না। দরজার সামনে রোদেলা আর আন্নি দাঁড়িয়ে আছে ।
তন্ময় ভাই ২০ হাজার না হলে ডুকতে পারবেন না।
রোদেলা আর আন্নির এই কথায় তন্ময় কাদো কাদো চোখে বলল, আর কত ভাঙবি বোইন এইবার তো একটু নিস্তার দে।

রোদেলা আর আন্নি হাসে, ভাই তুমি এই নাটক করলে আর ডুকতে পারবা না। তার চেয়ে যা চাইছি, দিয়ে দেও আর ডুকে পড়।
তন্ময় পকেট থেকে ডেবিট কার্ট টা বের করে রোদেলা আর আন্নির হাতে দিয়ে দেয়।

বউ নিজ দায়িত্বে খুজে নিন, না হয় ট্রিট দিন দুলাভাই। এখানে কে আপনার বউ সেটা যদি না বের করতে পারেন, তাহলে আজ এই ঘরে আপনি না আমি ঘুমাবো। আর যদি বউ ধরতে না পারেন তাহলে আপনাকে যে আমায় ট্রিট দিতে হবে।

বাসরঘরের বিছানায়, বউ সেজে বসে আছে দুজন, বোঝার উপায় নেই, কোনটা আসল বউ। ঘোমটার আড়ালে বসে আছে তৃনা আর তন্নি। তন্ময় আবিরের দিকে তাকায়। তন্ময়ের অবস্থা দেখে আবির হাসে। হাসি হাসি কন্ঠে আবির তন্ময় কে বলে, আমি তো আছি ভাই। তোমার বউ আমি খুজে দিবো। কিন্তু একটা শর্ত আছে।
তন্ময় চট করে জবাব দেয় আমি সব শর্তে রাজি।

আবির মুচকি হেসে বলল, তোমার বউকে আমি রেখে যাবো, কিন্তু তোমার বউ বাদে যে বউটা বসে আছে,ওই বউটাকে যে আমার চাই। আমায় যদি দিয়ে দেও তাহলে তোমার বউকে আমি খুজে দিতে রাজি। তন্ময় আবিরের কথায় হাসে, আবিরের পিঠে চাটি মেরে বলে আমার বউ পেলেই হলো, শালি আমার চুলোয় যাক।

তন্ময়ের কথায় তৃনা চেচিয়ে উঠে বলল, এটা কিন্তু দুনম্বরি কাজ হচ্ছে দুলাভাই। খুজবেন আপনি, আমি তো বলি নি অন্য কেউ আপনার হয়ে খুজে দিবে। আর আমায় নিয়ে যাবে তাতে আপনি রাজি ও হলেন, কেমন দুলাভাই আপনি।
কথা শেষ না হতেই আবির এসে বিছানার নিকট দাঁড়িয়ে দুমিনিট শান্ত দৃষ্টিতে বউ সাজে থাকা দুজনকেই অবোলকন করে,তৃনাকে পাজ্রা কোলে তুলে নেয়।

ঘোমটার আড়ালে তৃনা চিল্লাতে থাকে। আবির পেছন ফিরে মুচকি হেসে চোখ দিয়ে তন্ময় কে ইশারা করে। রাইদ আর রিয়াদ ও চলে যায়। আবির তৃনাকে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দেয়, তৃনা সেই একই ভাবে চেচাচ্ছে। আবির শান্ত দৃষ্টিতে তৃনার দিকে তাকিয়ে, রাগন্বীত সুরে বলে, একদম চুপ একটা কথা ও আর বলবে না, সিটে চুপ করে বসে থাকো। আবির পকেট থেকে ফোন বের করে রেহানা খানকে ফোন করে বলে দেয় তারা বাইরে যাচ্ছে বাড়িতে কেউ জিজ্ঞাসা করলে যেনো সামলে নেয়। আবির গাড়িতে উঠে গাড়ি চালানো শুরু করে।

রিয়াদ ছাদে অপেক্ষা করছে রোদেলার জন্য। রোদেলা ইতোমধ্যে ফ্রেশ হয়ে ছাদে এসে হাজির।খক খক কাশি দিয়ে রিয়াদকে বোঝানোর চেষ্টা, সে এসেছে। রিয়াদ পিছন ফেরে রেলিং ছেড়ে। মুখোমুখি হয় দুজন।
আপনাকে যে পরিক্ষা দিতে হবে, তাতে কি আপনি রাজি। রিয়াদ চিন্তিত মুখে রোদেলার পানে তাকায়।

রোদেলা আবার বলা শুরু করে, বেশি কিছু না, আমার সাথে প্রেম ভালোবাসা করতে হলে আপনাকে আমার সাথে লোকাল বাসে চড়তে হবে। প্রতিবার যখন দেখা করবেন, একটা করে গোলাপ সাথে নিয়ে আসতে হবে, পারবেন আপনি রিয়াদ?

রিয়াদ প্রশান্তির হাসি দেয়, রোদেলার হাতের উল্টো পাশে অধর ছুয়ে দিয়ে বলে❝ কবুল, মেরি মালেকা ❞
রোদেলা হেসে বলে ভালোবাসার মর্যাদা রাখবেন রিয়াদ, আমায় যেনো না ঠকতে হয়।
এর পর তাদের মাঝে আরো কথা হয়, সূচনা হয় এক মিষ্টিমধুর প্রেম কাহিনি।

তন্নির সামনে বসে আছে তন্ময়। দুজনে ফ্রেশ হয়ে বিছানার বসে জানালা দিয়ে জ্যোৎস্না বিলাশ করছে। দখিনা হাওয়া সুর সুর করে রুমে প্রবাহিত হচ্ছে, যার ফলে জানালার পর্দা হাওয়ায় দুলছে। তন্নি তন্ময়ের বুকে মাথা রেখে বলছে, আজকের এই দিন আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মনে থাকবে তন্ময়,আপনাকে বড্ড ভালোবাসি। তন্ময় তন্নির কপোলে অধর দিয়ে ছুয়ে দেয়।
ভালোবাসার আঁকিবুঁকি করতে করতে শুরু হয় এক মিষ্টিমধুর মধুচন্দ্রিমা।

কোনো কালেই এই প্রেম ভালোবাসায় জড়াতে চাই নি আমি রাইদ, আমি এইগুলা খুব ভয় পাই। ভালোবেসে যদি হারিয়ে ফেলি তার ভয়। তাই কখন ও এইসব নিয়ে ভাবি নি। রাইদ আন্নির কাধে হাত রেখে শান্ত দৃষ্টিতে তাকায়। হালকা মুচকি হেসে বলে, আমি ওইরকম ছেলে নই। একবার সুযোগ দিয়ে দেখো, কোনো দিন তোমায় হারাতে দিবো না, আমার ভালোবাসার মর্যাদা কখনও ক্ষুন্ন হতে দিবো না। একবার হ্যা বলে দেখো, তোমায় মন উজার করে ভালোবাসবো। আন্নি রাইদের পানে তাকায়, রাইদের চোখ সত্যি কথা বলছে, তার মনে কোনো খাত নেই। নিখাত এই মানুষ নিশ্চিত ভালোবাসার মান রাখতে পারবে। আন্নি জবাব দেয় ঠিক আছে আমি রাজি। রাইদ আন্নিকে বুকে জড়িয়ে ধরে কপালে ভালোবাসার ছোয়া একে দেয়। শুরু হয় নতুন এক অদম্য প্রেম কাহিনি।

দূরে ধান ক্ষেতের মাঝে কুড়েঘরে ধান পাহাড়া দিচ্ছে লোকেরা। বাঁশির সুরে একের পর এক গানের পশড়া বিছিয়ে বসেছে। রাতের গভিরতার সাথে সাথে বাঁশির সুর যেনো আরো প্রখরতা বাড়িয়ে তুলছে। রাস্তার পাশে গাড়িতে হেলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আবির আর তৃনা।
তৃনা থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। আবির গাড়ির ভেতর থেকে কিছু একটা বের করেছে। আবির একটা টিনের কৌটার বক্স তৃনার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে, খুলে দেখো।

তৃনা হাত বাড়িয়ে কৌটাটা নিয়ে খুলে,কৌটার ভেতর থেকে বেড়িয়ে আছে অনেক জোনাকিপোকা। তাদের আলো নেভা জ্বলা যেনো এক অন্য রকম পরিবেশ তৈরি করেছে। তৃনা হেসে আবিরের পানে চায়। তৃনা কিছু বলার আগেই, আবির নরম গলায় তৃনাকে বলে,❝ আমাকে ভালোবাসবে পুতুল, আমি তোমায় ভালোবাসতে চাই, বুকের এই খানটাতে তোমায় রেখে সারাজীবন পাড়ি দিতে চাই, ভালোবাসবে পুতুল, ভালোবাসবে আমায়। ❞

তৃনা অবাক দৃষ্টিতে আবিরের দিকে তাকিয়ে রয়।
তৃনা আবিরকে বলে, আবির ভাই আপনি কি সত্যি একটু আগে আমায় প্রোপজ করেছেন। মানে সত্যিই আপনি আমায় ভালোবাসতে চান।
আবির হেলানো থেকে সোজা গিয়ে তৃনার সামনে দাঁড়ায়,মাথা ঝুকে তৃনাকে বলে তোমাকে আমার পুতুল বউ বানাতে চাই, তবে যদি শান্ত ভাবে যদি না মানতে চাও, জোর জবর দস্তি করতে আমি পারি।

তৃনা কৌটাটা হাত দিয়ে গাড়িতে রেখে আবিরকে বলে, খুব ভালোকথা বলেছেন। তবে কন্ডিশন আছে, আমার সাথে প্রেম করতে হলে আপনাকে অনেক ধৈর্য্য ধরতে হবে, তাছাড়া আমি অনেক আইসক্রিম প্রেমি, হুটহাট আইসক্রিম খেতে মন চায় তাই যেদিন আমার সাথে দেখা করবেন অবশ্যই আইসক্রিম, চকলেট সাথে করে নিয়ে আসতে হবে। আমি বাধ্য প্রেমিকার মতো আপনার সাথে প্রেম করতে পারবো না। খাদ্য রশিক হওয়ার পাশাপাশি আমি খুব ঘুম প্রেমি তাই যথা সময়ের কল ধরতে পারবো না। আরো ও অনেক কন্ডিশন আছে পরে ফর্দ করে আপনাকে লিস্ট করে পাঠিয়ে দিব।যদি রাজি থাকেন প্রেম করতে পারি।

আবির ভিষম খায়। তৃনা পিঠে চাটি মারে। আবির তৃনার হাতটা হঠাৎ ধরে বলতে থাকে, তোমার মতো দুষ্টু প্রকৃতির
মেয়ের সাথে কিভাবে প্রেম করতে হয়, সেই তড়িকাও আমার জানা আছে, সো গেট রেডি হয়ে যাও। প্রেম তো তোমায় করতেই হবে।

মেইড ফর ইচ আদার পর্ব ৫

আবিরের কথায় তৃনা জিহ্বায় কামড় মারে।আবির এবার মুচকি হাসি দিয়ে বলে গাড়িতে আইসক্রিম আছে, বাসায় যেতে যেতে খেয়ে নিবে। এবার যাওয়া যাক।এরপর
আবির আর তৃনা গাড়িতে উঠে বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে যায়।

মেইড ফর ইচ আদার পর্ব ৭