অবিনাশী পর্ব ২৩

অবিনাশী পর্ব ২৩
রেজওয়ানা আসিফা

নূহাকে ছোয়ার এই প্রথম সাধ্য হয়েছে শেহজাদের। শেহজাদ ওকে বুকে নিতে পেরে বড্ড খুশি। তার মনের মধ্যে আলাদা শান্তি কাজ করছে। মেয়েটা বিড়ালের মতো পরে পরে ঘুমাচ্ছে শেহজাদের বুকে।
মেয়ে মানুষ, এতো ক্ষন জেগে না থাকতে পেরে হিয়াও ঘুমিয়ে গেছে।
সন্ধ্যা ৬ টা বাজে। এখনো অর্ধেক রাস্তা শেষ হয় নি।

আয়ান দের গাড়ি আগে ছিলো। তিশা ফোন করে গাড়িটা এক জায়গায় থামাতে বললো।
সবাই হালকা নাস্তা করে নিবে এইজন্য। আর হিয়া আয়ান কেউ জামা কাপড় নিয়ে আসেনি। ওদের একটু শপিং করতে হবে।
একটা ছোট বাজারের কাছে গিয়ে নামলো সবাই। সবাই মিলে রেস্টুরেন্টে ঢুকে খাবারের জন্য অপেক্ষা করছে। হঠাৎ জামাল সিকদারের ফোন এলো নূরের কাছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

সবাই বুকে হাত দিয়ে বসে আছে। যদি বকা শুরু করে এই ভেবে। সবাই কম বেশি জামাল সিকদার কে ভয় পায়।
নূর কথা বলার পর সবাই ওকে ধরেছে কি বলেছে এটা জানার জন্য। নূর মুখটা কালো করে হঠাৎ বলে উঠলো,
-বাবা জেনে গেছে। কিন্তু সে একটুও বকেনি।
সবাই শান্তর নিঃশ্বাস ছারলো। তারপর সবাই টুকটাক কেনা কাটা করে আবার গাড়িতে উঠলো।

রাতের জার্নি হয় বড্ড সুন্দর। চারপাশে হালকা গাছ পালা। রাতের আধারে সব আবছা আবছা দেখা জাচ্ছে। তানিয়া মনে মনে প্রচণ্ড খুশি হয়েছে। কিন্তু প্রকাশ করছে না। কারণ সে কখনো এভাবে ঘুরতে যায়নি। তাই তার খুশিটা বেশি। অনেক শুনেছে সাজেকের নাম। কিন্তু কখনো যাওয়া হয় নি। ইচ্ছে ছিলো খুব যাবে। আজকে পূরণ হয়েছে।
সকাল পাচ টা বাজে। সবাই মাত্র পৌছালো। আয়ান আগেই একটা হোটেলে রুম বুক করে রেখেছিলো ফোনে। তার এইসবে বেশি চেনা। অনেক বার এসেছে।

সবাই ভিতরে গিয়ে রুম খুজতে লাগলো। চারটা রুম নিয়েছে। একটায় হিয়া আর তিশা। একটায় আয়ান আর নূর। আরেক টায় তানিয়া ঈশান আর আরেকটায় শেহজাদ আর হিয়া। হিয়া বায়না শুরু করলো সে একা ওই রুমে থাকবে না। সবাই খুব জোর করেই ওই রুমে ওকে দিলো। তারপর সবাই ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তার জন্য বের হলো।
এইদিকের সব আয়ানের চেনা হওয়ায় খুব সুন্দর একটা জায়গায় ওদের খাবার খাওয়ার জন্য। রেস্টুরেন্টে টা পাহারের উপর। বাসের তৈরি। চার পাশ খুব সুন্দর করে সাজানো।

সবাই চার পাশ ঘুরে দেখছে। তানিয়া হা করে তাকিয়ে আছে। ঈশান ঘুরতে ঘুরতে তানিয়ার কাছে গিয়ে বললো,
-একদিন এখানে আমরা একা আসবো কেমন?
তানিয়া অবাক হয়ে পিছে তাকালো। ঈশান তার পাশে দারিয়ে আছে। তানিয়া ছলছল চোখে বললো,
-তুমি আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবে?
-কেনো যাবো না? তুমি না আমার স্ত্রী। তোমাকে নিয়েই তো ঘুরবো।

এক কিনারা হওয়ায় ওই পাশে কেউ ছিলো না। তানিয়া চার পাশ একবার তাকিয়ে জড়িয়ে ধরলো ঈশানকে। ঈশান মুচকি হেসে তানিয়াকে আকড়ে ধরলো।
নূহা একা কখনো আসে নি। এতো দূর। সব সময় জামাল সিকদার আর পুরো পরিবার একসাথে আসে। এবার একা এসে বাধন ছাড়া হয়ে এদিক সেদিক ঘুরছে। আর শেহজাদ তাকে দেখছে।

এই ছেলেটা বড্ড ভালোবাসে ওই ছোট মেয়েটাকে। যেইদিন প্রথম এই মেয়েটার আবছা দেখেছিলো পর্দার আড়ালে সেইদিন থেকেই ভালোবেসেছে। না দেখে ভালোবাসার কতো জ্বালা। হারে হারে টের পেয়েছে শেহজাদ। প্রথম যেইদিন নূহার মুখ দেখে। সেইদিন একটুর জন্য বেচে ছিলো শেহজাদ। নিঃশ্বস বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিলো তার।সেই মূহুর্ত মনে পরলে সে নিজেই লজ্জা পেয়ে মুচকি হাসে। সবাই রেস্টুরেন্টে একটু ঘুরে দেখার পর খেতে বসলো। কিন্তু ঘটনা ঘটলো একটা!

হঠাৎ শেহজাদ বললো, নূহাকে দেখছে না কোথাও। ফোন করতে যাবে তার আগেই তিশা বললো, নূহার মোবাইল তার কাছে। তাকে ছবি তুলতে দিয়েছিলো। নূরের মাথা খারাপ হয়ে গেলো। উঠে পাগলের মতো ছুটছে সে। সবাই খোজাখুজি শুরু করলো। নূর পা*গলের মতো খুজছে।
তারপর তিশা খুজতে খুজতে ছাদে গিয়ে দেখলো নূরের আইফোন টা সে তার পকেট থেকে ফাকে নিয়ে এখানে এসে ছবি তুলতে। তিশা নূহাকে দেখে ধমক দিয়ে মাথায় একটা থাপ্প*ড় মেরে বললো,

-কীরে এখানে কী করছিস? তোর ভাইয়া তোকে খুজতে খুজতে পাগ*ল হয়ে গেছে। আজকে নিচে আয়। তোর খরব আছে। নূহা কথা না বলে ভয়ে ভয়ে নিচে গেলো। নূর এসে নূহাকে দেখে বসে পরলো। বড্ড ভয় পেয়েছিলো সে। তার শরীর থেকে ঘাম ঝরছে। হঠাৎ সবাই শেহজাদের একটা কান্ড দেখে হেসে দিলো। নূহার হারিয়ে যাওয়া নিয়ে শেহজাদ জোরে কান্না করে উঠলো। যখন সে নূহাকে দেখলো।
নূহা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে শেহজাদের দিকে। হঠাৎ বলে উঠলো,

-আপনি তো আমার থেকেও ভিতু। আমি হারিয়েছি আর আপনি নিজে কান্না করছেন। এতো ভিতু আপনি !
শেহজাদ কান্না করতে করতেই বললো,
-আমি ভয় পাই না। কিন্তু তুমি হারিয়ে গেলে আমার কী হতো বলোতো!
তানিয়া মজা করে বললো,
-কী আর হতো। শেহজাদকে ভাই আপনাকে ধরে আরেকটা বিয়ে দিয়ে দিতাম।
শেহজাদ চোখ মুছে বললো,

ভুলেও না। একটা বিয়ে করেছি। এই একটাই শেষ।
তিশা বললো,
– না না একটা করবেন কেনো? একটা ছেলে তো চার টা বিয়ে করতে পারে।
হঠাৎ নূর ঠোঁট দিয়ে বাশি বাজিয়ে বললো,
-তাই তো ! হ্যা আমিও চার টা বিয়ে করবো। নবীজির সুন্নত পালন করবো।
সবাই নূরের কথা শুনে হেসে ফেললো। তিশা চোখ বড়ো বড়ো করে বললো,
-আচ্ছা! তাই নাকি চার টা বিয়ে করবেন? আপনি বেচে থাকলে তো চার টা করবেন। আসছে চার টা বিয়ে করবে।
তানিয়া বললো,

-তুমি নিজেই তো বললে, ছেলেরা চার টা বিয়ে করতে পারে।তাহলে সমস্যা কোথায়।
-তুমিও মজা নিচ্ছো। তোমাদের সাথে কথা বলে লাভ নেই। খিদে পেয়েছে। খেয়ে ঘুরতে বের হবো।
সবাই আর কথা না বাড়িয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করলো।
হোটেলে ফিরে সবাই গোসল করে নিলো। এখন একটু রেস্ট নিয়ে দুপুরে খাবার খেয়ে তারপর বের হবে ঘুরতে।
সবাই বসে আছে তানিয়ার রুমে। হঠাৎ আয়ানের ফোনে কল এলো। তমা ফোন করেছে। সবাই চুপ হয়ে গেলো। আয়ান ফোন রিসিভ করলো। ওপাস থেকে কড় কড় গলায় বললো,

-তূমি নাকি ওদের নিয়ে সাজেক গেছো? তোমরা দুই ভাই কী ভেবেছো আমাকে? আমি একা? আমাকে তোমরা একা করে প্রতিশোধ নিবে? আমার জীবনের বড়ো ভুল হয়েছে ওই মেয়েটাকে বউ করে আনা। মেয়েটা এক ছেলেকে বিয়ে করে দুই ছেলেকেই কেড়ে নিয়েছে। একবার বাড়ি আসো।

আমি যেভাবেই হোক ওকে ঈশানের থেকে দূর করবোই। ওদের ডি*ভোর্স যদি না করিয়েছি আমার নামও তমা না।ফোনের স্পিকার বারানো ছিলো। সব শুনছিলো সবাই। তমার এমন কথা শুনে ঈশানের প্রচণ্ড রাগ হলো।আয়ান হাত থেকে মোবাইল টা নিয়ে কঠিন গলায় বললো,

অবিনাশী পর্ব ২২

-আমি জীবনেও আমার বউকে ছারবো না। তুমি এতে আমাকে ছেড়ে দিলেও ছারবো না। আমিও দেখবো তুমি কীভাবে আমাদের আলাদা করো।।
ঈশান কথা গুলো বলে ফোন টা নিজেই কেটে দিয়ে মোবাইল টা বিছানায় ফেললো।

অবিনাশী পর্ব ২৪