অবিনাশী পর্ব ২৪

অবিনাশী পর্ব ২৪
রেজওয়ানা আসিফা

ঈশান সবার সামনে তানিয়াকে জড়িয়ে ধরে ফুসতে লাগলো। তাকে দেখেই বোঝা জাচ্ছে সে প্রচণ্ড রেগে আছে। আয়ান নূর সহ সবাই বুঝতে পারছে কিছু একটা হয়েছে। কারণ ও হঠাৎ এমন করবে না।
নূহা মুচকি হেসে বেড়িয়ে গেলো। সবাই নূহার কাজ টা খেয়াল করেছে। তিশা নূহার পিছে পিছে গেলো। বাইরে গিয়ে নূহাকে ধরলো তিশা। কড়া গলায় জিগ্যেস করলো,

-কীরে এভাবে হাসচ্ছিস কেনো? তুই কিছু করেছিস?
নূহা বললো,
-আমি কী করবো! আমি কী কিছু করতে পারি নাকি।
-নূহা সত্যি করে বল কী করেছিস? তুই ঈশানকে কিছু বলেছিস?
নূহা চুপ করে আছে। তিশার বুঝতে বাকি রইল না যে নূহাই কিছু করেছে। তিশা নূহার হাত ধরে ঝাকাতে ঝাকাতে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

-বল আমাকে কি করেছিস। আমি কাউকে বলবো না।
নূহা নখ কামড়াতে কামড়াতে বললো,
-এতোদিন তানিয়া ভাবির সাথে আন্টি কী কী করেছে। কে কী রকম ব্যবহার করেছে আমি সব বলে দিয়েছি।
তিশা মুখে হাত দিয়ে বললো,

-হায় হায়, কবে করেছিস এসব! কখন করছি এইসব! আর তুই এতো কিছু জানলি কীভাবে?
-তুমি যখন তানিয়া ভাবির সাথে কথা বলতা আমি তো সাথেই থাকতাম।
তিশা মাথায় হাত দিয়ে বললো,
-হায়রে পাকনি! এইজন্য মানুষ বলে ছোটদের সামনে সিরিয়াস বিষয় আলোচনা করোনা। ঈশান দেখিস এবার কী কান্ড করে। আর এইসব দেখলে মা কষ্ট পাবে।
নূহা অনুতপ্ত হয়ে বললো,

– আমি তো এতো কিছু বুঝে করিনি। এখন কী হবে!
-তুই এই কাজ করেছিস কাউকে বলিস না। তোর ভাইয়া শুনলে মাইর মাটিতে পরবে না।
তিশার কথা শুনে নূহা ভয় পেয়েছে খুব। নূর কে সে বড্ড ভয় পায়। তিশার হাত ধরে বললো, তুমি বললো,
-তুমি কাউকে বলো না প্লিজ।
-আচ্ছা দেখছি দারা কী করা জায়।

অন্ধকার রুমে বসে আছে তমা। তার সন্তানরা এভাবে তার হাত থেকে বেলুনের মতো উড়ে যাবে সে কখনো ভাবে নি। রাগে নিজেকে বার বার আঘাত করেছে সে। সারা শরীরে খামচির দাগ। হঠাৎ কারো পায়ের শব্দ পেলো তমা। মনে মনে বললো, বাড়িতে তো কেউ নেই। তাহলে পায়ের শব্দ কেনো। পিছে ঘুরে তাকাতেই দেখলো আয়ান চৌধুরী এসেছে।
হাতের ব্যাগটা টেবিলে রেখে বললো,

-কীহ্! ছেলেরা হাত থেকে বের হয়ে গেছে? আচ্ছা তমা আমি নাহয় কারো জন্মদাতা পিতা না। তুমি তো ওই ছেলে দুই টার মা। তুমি কীভাবে ওদের জীবন গুলো নষ্ট করতে চাইলে। আর একটা জিনিস দেখো, ওদের জীবন নষ্ট হতে হতেও বেচে গেলো। কীভাবে বাচলো, এই তোমার জন্য ! ওদের মায়ের উছিলায় উদের জীবন বাচলো। আমি তো প্রথম ওই মেয়েটাকে আনতে চাইনি। তুমিই এনেছো। দেখো ওই মেয়েটা এক ছেলের বউ হয়ে দুই ছেলের জীবন পালটে দিলো। একটা কথা কী জানো তমা! তুমি কখনো ওদের ভালোবাসোনি।

আর সব থেকে বড়ো কথা নিজে একজন মানসিক রুগী হয়ে অন্যের চিকিৎসা কীভাবে করবে!
আমানের কথাটা শুনে তমা আগুন চোখে তাকালো আমানের দিকে। দাতে দাত খিচে বললো,
-তুমি আমাকে অসুস্থ বললে ! মানসিক ভাবে অসুস্থ বললে?

-হ্যা বললাম ! নাহলে কেউ ছেলেকে আচলে বেধে রাখার জন্য এভাবে নষ্ট করে না। বাবা না হয়েও বাবা হয়ে আছি ওদের। কখনো বুঝতে দেইনি ওদের বাবা না আমি। একটা তো কতো বছর হয়ে গেছে আমার সাথে ঠিক মতো কথা বলে না সেটা ও নিজেই না। আরেকটা কে তো ভালোবেসেছি। আশা করি ওটা আমায় একটু সন্তানের ভালোবাসা দিবে।

যানো তমা তোমার সত ভুল জানার পরেও বড্ড ভালোবেসেছি তোমাকে। আজ পযর্ন্ত তোমার শরীরে হাত দেওয়ার অধিকার পযর্ন্ত দাও নি তুমি, আমিও দেইনি! আমি কী দোষ করেছিলাম, ওই ছেলে দুটো কী দোষ করেছে?
২৬ বছর আগের ঘটনা ! তমা মেডিকেলের করিডোর দিয়ে হাটছে। চোখে মুখে প্রচণ্ড বিরক্তী। তমার বেস্ট ফ্রেন্ড নুসাকে একটু আগে ফোন করেছে মেডিকেল আসার জন্য। নুসা আসার পর দুই জন পার্কের একটা কনারে বসলো। তমা দেয়ালের সাথে কয়েকবার হাত দিয়ে আঘাত করেছে এইজন্য হাতটা লাল হয়ে আছে। নুসা বসে আছে চুপ করে।

মূলত আমান নামের ছেলেটি প্রচণ্ড বিরক্ত করছে তাকে। রাতে হোস্টেলের জানালা দিয়ে চিঠি পাঠায়। অনেক রাতে শিশ বাজায়। সাইকেল নিয়ে মেডিকেল পযর্ন্ত পিছে পিছে আসে। এইজন্য আজকে একটা রুগী দেখার পর তমার প্রেমিক ইফাদ মেডিকেলে এসে তার সাথে রাগারাগি করেছে। তাই এতো রেগে আছে তমা।
নুসাকে বললো,

-দেখ ওর একটা ব্যবস্থা করতে হবে। নাহলে ইফাদ এবার আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। ছেলেটা কোথায় থাকে কী করে খোজ নিতে হবে। তারপর পূর্ব পাশের গলিতে কতো গুলো ছেলে বসে থাকে না ওদের বলে মাইর খাওয়াবো। ওরা এই এলাকার ছেলে। একবার ধরলে হাড্ডি গুড়া করে দিবে।
নুসা ভয় পেয়ে বললো?

– এটা কী ঠিক হবে? এভাবে ছেলেটাকে মার খাওয়ানো ঠিক হবে না। ছেলেটাকে আমি জতো দূর চিনি অনেক ভদ্র ছেলে। পাশের ওই টিন সিটের বাড়িতে থাকে আর টিউশন করায়। তবে ওর বাবা খুব বড়োলোক অনেক টাকা পয়সা আছে। কিন্তু বাবার হাতে কি কারণে ঝগড়া হওয়ায় এখন এখানে থাকে।
তমা মুখ ভেংচি কেটে বললো,

-তোকে আমি ওর ঠিকানা জিগ্যেস করেছি ওর গুণ গান খাইতে বলি নাই। আর ও বড়লোক না টোকাই এইসব জানার দরকার নাই। আমার ইফাদও কম টাকার মালিক না। এই বয়সে কতো কিছু করেছে দেখেছিস। কয়দিন পর বিয়ে করে আরা আয়েস করবো দুই জন। এদিক সেদিক ঘুরবো।
নুসা আর কোনো কথা বললো না। ইফাদ কে তার ভালো লাগে না। ছেলেটাকে তার সন্দেহ হয় সব সময়। কেনো হয় তা সে জানে না।

পরের দিনটি ছিলো আমানের জন্য ভয়ংকর। সকাল বেলা গোসল করে মাথায় তেল দিয়ে দিনের প্রথম টিউশনের জন্য বের হলো। তার নিজেরও জানা ছিলো না এতো ভয়ংকর কিছু হতে পারে তার সাথে। গলি থেকে বের হওয়ার পরেই একটা ছেলে সাইকেল আটকে ধরলো আমানের। ছেলেটাকে সে চেনে। সব সময় এখানেই আড্ডা দেয়। আর সব মেয়েদের বিরক্ত করে। ছেলেটা সাইকেল আটকে ধরার পর আস্তে আস্তে আরো চারজন ছেলে এলো। একটা ছেলে মানের কাধের ব্যাগটা ফেলে দিয়ে কলার ধরে সাইকেল থেকে নামিয়ে বললো,

-কীরে এলাকার মেয়েদের বিরক করোস কেন?
কথাটা বলেই আমানকে রাস্তায় ফেলে লাথি মারা শুরু করলো সবাই। মার খেতে খেতে আমান জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।
পরে আমানের কয়েকজন বন্ধুরা জানতে পেরে আমানকে হাসপাতালে নিয়ে গেলো।
আমানের বন্ধুরা আমানের এই অবস্থা দেখে বললো,

-দেখ ভাই এই মেয়ের দিকে আর ভুলেও তাকাস না। এই মেয়ে খুব ভয়ংকর আর খুব বাজে। আর মেডিকেলের মেয়ে গুলো এমনি হয়।
আয়ান ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে। তার ভেতর টা শেষ হয়ে জাচ্ছে।

আমানকে ম্যাচে নিয়ে আসা হয়েছে। ডাক্তার বলেছে কয়েকদিন রেস্ট করতে। আমানের বন্ধু রা তাকে মেন্টালি প্রচণ্ড সাপোর্ট করছে। দুই সপ্তাহ লেগেছে আমানের সুস্থ হতে। যাদের টিউশন করাতো সবার বাসায় বলেছে। কয়েকটা বাচ্চার পরিবার এসে তাকে দেখে গেছে আর কিছু টাকাও দিয়ে গেছে। আমানের বাবা এইসব শুনে ছেলেকে নিতে এসেছিলো। কিন্তু আমানের এই জীবন টা ভালো লাগে। এই বন্ধু বান্ধবের সাথে সে ভালো আছে । তাই আর জোর করেনি।

চলাচলের জন্য আমানকে একটা মটর বাইক কিনে দিয়ে গেছে আমানের বাবা।
দুই সপ্তাহ পর আমান ম্যাচ থেকে বের হয়েছে। বাইক চালাতে পারে না সে। তাই সাইকেল টা নিয়ে বের হয়েছে তার এক ছাত্রর বাসায় জাবে। রাস্তার ডান পাশে সে সাইকেল চালাচ্ছে। আর বা পাশে তমা আর নুসা। আমানকে দেখে নূসা দৌড়ে এসে জিগ্যেস করে,

-আমান ভাই কেমন আছেন?
আমান হালকা হেসে বললো,
-ভালো আছি। আল্লাহ ভালো রেখেছে। তোমরা তো চাউনি এটা তাইনা?
-ভাই আমি এসব কিচ্ছু করিনি। আমি চাইনাই এসব করতে। আপনি না আমারে ছোট বোন বলছিলেন। তাহলে এই বোনরে বিশ্বাস করেন।
আমান নুসার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

-জানি বোন! তুমি চাইবে না আমার ক্ষতি।
নূর থেকে সব শুনেছে তমা। এগিয়ে এসে বললো,
-ও না চাইলেও তুমি সাপের লেজে পা দিয়েছিলে তাই আজ তোমার এই অবস্থা। পরবর্তীতে বেচে ফিরতে পারবে না।

আমান আর কথা বললো না। মুচকি হেসে নুসাকে বিদায় দিয়ে সাইকেল নিয়ে এগিয়ে গেলো।
আরো এক সপ্তাহ কেটে গেলো। যাওয়া আসার মধ্যে এই প্রতিটা দিনি আমান তমাকে দেখেছে। তমা আমানকে দেখলেই তাচ্ছিল্যের হাসি এসেছে। আর আমান ওই হাসি দেখাও জন্যও বার বার এক রাস্তা দিয়ে গেছে।
গত দুই দিন তমাকে কোথাও দেখছে না। কুল কিনারা না পেয়ে নুসার বাড়ি একটা ছাত্রী কে পাঠিয়েছে আমান। আর বাইরে দারিয়ে আছে সে। ছাত্রী নুসাকে ডেকে এনে চলে গেছে। নুসাকে দেখে আমান উত্তেজিত হয়ে বললো,

-নুসা তমাকে খোথাও দেখছি না। তুমি ও বের হচ্ছো না কেনো? কী হয়েছে তোমাদের?
নুসা মেয়েটা বড্ড সরল। ছোট থেকে নুসা আর তমা একসাথে বড়ো হয়েছে। আমানের দিকে তাকিয়ে নুসা ওরনা দিয়ে মুখ ঢেকে ঢুকরে কেদে উঠলো।
নূসাকে কাদতে দেখে আমান পাগলের মতো জিগ্যেস করলো,

-নুসা বোন কী হয়েছে? তমার কিছু হয়েছে? নুসা কথা বল!
নুসা আমানকে যা বললো তা শোনার জন্য আমান মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।
নুসা বললো,

অবিনাশী পর্ব ২৩

– ভাইয়া ইফাদ ভাইকে খুজে পাওয়া জাচ্ছে না। ফোন বন্ধ। সব জায়গায় খুজেছে। ওর গ্রামের বাড়িতেও খোজ নিয়েছে কিন্তু ঠিকানা ভুল। এদিকে তমা প্র‍েগন্যান্ট। তমা বার বার সুই*সাইড করার চেষ্টা করছে। এখনো ও আমার বাড়ি আছে। অনেক অসুস্থ হয়ে গেছে।

অবিনাশী পর্ব ২৫