অবিনাশী পর্ব ২৫

অবিনাশী পর্ব ২৫
রেজওয়ানা আসিফা

নুসার কথা শুনে আমান কিছুক্ষনের জন্য থমকে গেলো। আমান পাগলের মতো বললো,
-একবার তমা কে দেখা করতে বলো না আমার সাথে। একবার দেখা করতে বলো।
নুসা ভেতরে গেলো।
তমা একটা অন্ধকার ঘরে বসে আছে। চুল গুলো এলোমেলো। তার মধ্যে প্রচণ্ড ভয়। তার বড়ো ভাই জানলে কী হবে! তাকে মেরে ফেলবে। নুসা এসে তমার কাছে বসলো। তমার গায়ে হাত দিয়েই তমা ছিটকে দূরে গিয়ে বসলো। নুসা তমাকে শান্ত করে বললো,

-তমা! আমান ভাই আসছে। দেখা করবে।
আমানের কথা শুনতেই তমা বিরক্ত হয়ে বললো,
-চলে যেতে বল ওকে! দেখা করবো না আমি কারো সাথে। কারো সাথে দেখা করবো না।
-শোন না! একটা বার দেখা কর! প্লিজ।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

তমা কোনো কথা বলছে না। নুসা ঘরের লাইট অন করে বিছানা টা হালকা গুছিয়ে আমান কে ভেতরে আনলো।
আমান ভেতরে এসে তমার এই আবস্থা দেখে মাটিতে ধপাস করে বসে পরলো। এতো গুছিয়ে চলা মেয়েটার আজ এই আবস্থা ! যেই মেয়েকে এলাকার সব ছেলেরা বিরক্ত করে সেই মেয়েকে এখন দেখে চেনাই জাচ্ছে না। আমান উঠে গিয়ে তমার পাশে বসলো। নুসা দরজায় দারিয়ে আছে।

এটা নুসার নিজেদের বাড়ি। নুসার বাসা বিদেশে থাকে। মা আর ভাই নিয়ে তার পরিবার। আমানকে নুসার মা খুব ভালোবাসে। ছেলে ছেলে বসে জান দিয়ে দেয়। তাই এখানে আসতে তাকে কেউ কিছু বলেনা। নুসা তমা কে এখানে রেখেছে এটা বলে যে, তমা খুব অসুস্থ। তমাকে আমান ভালোবাসে এটা নুসার মা জানে। আর তমা আমানকে দেখতে পারে না এটাও জানে। আমানের মতো একা ভালো ছেলেকে তমা পছন্দ করে না এইজন্য নুসার মা তমাকে তেমন দেখতে পারেনা। কিন্তু মেয়ের বান্ধবী হয়। আবার এখন অসুস্থ এইজন্য বাসায় রেখেছে।

তমা চুপ করে বসে আছে অন্য দিকে তাকিয়ে।
আমান মৃদু কন্ঠে ডাকলো,
-তমা!
তমা ছ্যাত করে বললো,
-কেনো এসেছো এখানে? খুব ভালো লাগছে আমার এই অবস্থা দেখে। আর জানি তো সব শুনেছো। প্রতিশোধ নেওয়া হয়ে গেলো তোমার ! খুব মজা লাগছে তাইনা?
আমান কিছু বলছে না। কতোক্ষন চুপ থেকে হঠাৎ বললো,

-আমাকে বিয়ে করবে তমা?
আমানের এমন কথা শুনে নুসা হা করে তাকিয়ে আছে।
তমা পাগলের মতো জোরে জোরে হেসে বললো,
-দয়া দেখাতে এসেছো? আমাকেএই অবস্থায় কে বিয়ে করবে এই ভেবে দয়া করছো না?
– না তমা! আমি ভালোবাসি তোমাকে। বিশ্বাস করো ভালোবাসি।
তমা মলিন চোখে তাকালো আমানের দিকে।
সন্ধ্যা ৭ টায় দুই জন বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হলো।

আমান আগেই তার বাবাকে ডেকেছে। বিয়ের সময় তার বাবা অপস্থিত ছিলো। এক বাবার এক ছেলে মা নেই আমানের। তাই ছেলের পছন্দের উপর কথা বলেনি আমানের বাবা।
বিয়ের একদিন পর আমান আর তমা মিলে জামান সিকদার,তমার ভাইয়ের সাথে দেখা করার জন্য রওনা হয়।
আদরের ছোট বোন এভাবে একা বিয়ে করে নিবে মেনে নিতে পারেনি জামাল সিকদার। তারপরও নিজের মন কে বুঝিয়েছে বোন ভালোবাসে।

এই ভেবে মেনে নিয়ে আপন করে নিয়েছে আমান কে।
এর পর থেকেই দুজনের সংসার শুরু হয়, তবে তমা আর সাভাবিক হতে পার না। মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পরে।
তমা অনেক বার পেটের সন্তান শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আমান তাকে বোঝায়। আমান এই সন্তানদের নিজের সন্তান বলে মেনে নেয়।

বিয়ের এক মাসের মাথায়, পেটে বাচ্চা শুনে খুব অবাক হয়ে তমার ভাবী। অনেক সন্দেহ হয় তার। আবার ভাবে হয়তো প্রেমের বিয়ে হয়তো তাই……..
বিয়ের পর একদিনও তমাকে ছুয়েও দেখেনি। আমানের কোনো আফসোসও নেই। স্কুল লাইফ থেকে ভালোবাসে তমাকে। সব সময় পিছু পিছু ঘুরেছে। অনেক অপেক্ষার পর নিজের ভালোবাসা পেয়েছে এতেই সে খুশি। তবে সম্পর্ক সাভাবিক হলেও তমা সাভাবিক হয় নি।

৯ মাসের মাথায় তমা দুই সন্তানের জন্ম দেয়। জমজ ছেলে। সবাই খুব খুশি। তবে সন্তানদের কোলে নিয়েই একটু বড়ো সন্তানটা সাভাবিক না বুঝতে পারে তমা। জতোই হোক। একজন ডাক্তার বলে কথা। তারপর অন্য ডাক্তারদের সাথে কথা বলে ভালো ভাবে চেকাপ করে জানতে পারে এই সন্তান টা মানসিক ভাবে অসুস্থ।

ডাক্তাররা বলে সুস্থ হতে দেরী হবে। কিন্তু সুস্থ হতে পারে। কিন্তু তমার ছিলো এই সন্তানদের প্রতি প্রচণ্ড ঘৃণা। তবে সেটা তার মনের মধ্যে। কখনো এই সন্তানদের সে নিজে লালন পালন করেনি। চার পাচটা কাজের লোক রেখেছে কিন্তু সন্তানদের সে ছুয়েও দেখতোনা। আমান চৌধুরী অনেক চেষ্টা করে বড়ো ছেলেকে মেডিসিন দেওয়ার কিছু তমা দিতো না ঠিক মতো কিছু সেটা গোপনে। অনেক বার সন্তানদের গলা টিপে ধরেছে তমা। কিন্তু বাচ্চারা বড়ো হওয়ার সাথে সাথে এসব ঠিক হয়। বড়ো ছেলেটি হলো ঈশান।

পরবর্তীতে মায়ের গর্ভ থেকেই সুস্থ তাই আমান চৌধুরীও ঈশানকে নিয়ে মাথা ঘামায় নি।
তমা পাগলের কাপড় খাচমে ধরে আছে। আর আমান বলছে,
-তমা অনেক তো হলো! এতো গুলো বছর তোমাকে কারণ বিহীন ভালোবেসে গেছি। তার মূল্যে কখনো কোনো সন্মান।ও পাইনি তোমার থেকে। তুমি কেনো পারছো না ভালো হয়ে যেতে! ছেলেদের ক্ষমা করো। ভুলটা তোমার ছিলো আর ওই জা*নোয়ার টার। ওরা তো কোনো ভুল করেনি। ওরা তো শিশু মাত্র!

তমা বেড়িয়ে গেলো আমান চৌধুরী খাটের উপর বসে একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো।
তিশা বসে আছে চুপ করে। নূর তার পাশেই বসা। জামা কাপড় গুছিয়ে দুই জনেই ক্লান্ত হয়ে গেছে। এবার একটু রেস্ট নিচ্ছে। একটু পরেই বের হবে সবাই।
নূহা বাদাম খাচ্ছে আর শেহজাদ কাপড় গোছাচ্ছে।
হোটেলে প্রতিটা রুমেই অনেক গুলো বাদাম রাখা ছিলো। নূর আয়ান আর তিশা হিয়ার রুমের টা সে প্যাক করে নিয়েছে। আর নিছের রুমের টা খাচ্ছে।

ঈশানের সব জামা কাপড় তানিয়া গুছিয়ে নিয়েছে।
আয়ান আর ঈশান গেছে গাড়ি বের করতে।
দুই জন গাড়ি বের করে একসাথে হোটেলে ঢুকে। হঠাৎ ঘটনা ঘোটে গেলো একটা। কোনো একটা বিষয় নিয়ে বেশি খুশির ঠেলায় হিয়া এসে ঈশানকে আয়ান ভেবে জড়িয়ে ধরে। দুই জনেই একি রকম পাঞ্জাবি পরেছিলো। তাই বেচারি বুঝতে পারেনি। আয়ান পাশে দারিয়ে জিভ কেটে মাথা নামিয়ে বলে, ওটা আমি না আমি এখানে।

হিয়া লজ্জায় এক দৌড়ে ঘরে চলে জায়। তিশা এই অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে শেষ।
সবাই সন্ধ্যায় গাড়িতে উঠলো। তিনায়া ঈশানের কাধে মাথা দিয়ে ঘুমাচ্ছে। ফিরতে ফিরতে সকাল হবে।
বাড়ি ফিরতেই ফাতেমার অভিমানের শেষ নেই। তাকে কেনো নিয়ে গেলো না। তাকে একা রেখে গেলো কেনো।
দেখতে দেখতে তানিয়া ঈশান আর আয়ানের বাড়ি ফেরার সময় হয়ে গেছে। এবার নূর বলেছে তিশাকেও বাড়ি ফিরতে। বউ করে তারপর এই বাড়ি আনবে। তাই তানিয়ার সাথে তিশাও যাবে। তিশার যাওয়া নিয়ে জামাল সিকদার আপত্তি জানায়। কারণ সামনেই তার পরিক্ষা।

তিশা জামাল সিকদার কে বলেন, অল্প কিছু দিন থেকেই চলে আসবে।
আয়ান হিয়াকে হিয়ার বাড়ি দিয়ে এসেছে। আর হিয়ার বাবার সাথে কথা বলে এসেছে। বলে এসেছে বাড়ি ফিরেই বাবার সাথে কথা বলবে সে।
সকাল সকাল সবাই খাওয়া দাওয়া করে বের হলো।গাড়িতে উঠার সময় তিশা জামায় পা আটকে গিয়ে পরেই জাচ্ছিলো। হঠাৎ দুই ভাই দুই হাত ধরে ফেলে। ঈশান শান্ত কন্ঠে বলে,

অবিনাশী পর্ব ২৪

-দেখে চল! পরে জাচ্ছিলিত।
বাড়ি ফেরার সময় এই প্রথম তিশার ভালো লাগছে। সে আগে কখনো উপলদ্ধি করতে পারেনি তার দুই টা ভাই আছে। এই প্রথম তার মনে হচ্ছে সে দুই ভাইয়ের আদরের এক বোন।

অবিনাশী পর্ব ২৬