অবিনাশী পর্ব ২৬

অবিনাশী পর্ব ২৬
রেজওয়ানা আসিফা

আজকে হিয়া আর আয়ানের বিয়ের পাকা কথা হবে। হিয়ার বাড়ি থেকে হিয়ার বাবা আর কিছু আত্মীয়রা এসেছে।
তমা সবাই কে খুব ভালো ভাবেই আপপায়ন করছে।
প্রথমে হিয়ার কথা বাড়িতে বলার পর তমা রাজি হয় নি। কারণ দুই বউ এক দল হয়ে তার সাথে ষড়যন্ত্র করবে এই ভয় তার মনের মধ্যে কাজ করেছে।কিন্তু ঈশানের মতো আয়ান তো ওতো ভদ্র নয়। তাই এই বিয়েতে তমা রাজি না থাকলেও আয়ান করবেই। তাই নিজের মুখ রাখার জন্য রাজী হয়।

আয়ান একটা সাদা পাঞ্জাবি পরেছে। সবাইকে খাবার বেরে দিচ্ছে সে। হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠলো। মোবাইলের স্কিনে নামটা দেখে একটু মুচকি হেসে ভির ঠেলে আড়ালে গেলো আয়ান। হিয়া ভিডিও কল করেছে। কল টা রিসিভ করলো আয়ান। হিয়া একটা গোলাপি বরং এর শাড়ি পরেছে। আয়ান বললো,
-এ বাড়ি তো আসো নি তাহলে শাড়ি পরেছো কেনো? কতো করে বললাম আসলে না!
হিয়া কোনো কথা বলছে না। সে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়ান আবারো বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

-এভাবে তাকিয়ে না থেকে কথা বলো! কাজ পরে আছে আমার।
হিয়া মুচকি হেসে বললো,
-আমার সুদর্শন পুরুষ তোমাকে বড্ড ভালোবাসি।
আয়ান হাসলো। হিয়াও হাসছে। আয়ান অভিমানি সুরে বললো,
-তোমাকে কতো বার বললাম একবার আসো বাবার সাথে। কেনো আসলে না?
হিয়া মুচকি হেসে বলল,

-মাথা গেছে তোমার? আমার লজ্জা লাগবে এখন ওই বাড়ি গেলে। একবারে বিয়ের পরেই যাবো। বউ হয়ে।
হিয়া একটু কথা বলে আর হাসে। আর আয়ান সেই হাসির দিকে তাকিয়ে থাকে। হিয়া খেয়াল করলো সে জতো কথাই বলছে কিন্তু তার মনে হচ্ছে আয়ানের মনটা খুব খারাপ।হিয়া কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-আয়ান! কী হয়েছে তোমার?
আয়ান হেসে বললো,

-কই কী হবে। ঠিক আছে তো আমি।
-শিউর তুমি ঠিক আছো?
আয়ানের মুখ খানা কালো হয়ে গেলো। মাথাটা নিচু করে বললো,
-তোমার বাবা দেখো বিয়েতে না করে দিবে।
হিয়া অবাক হয়ে জিগ্যেস করলো,

-সে কী! কেনো? এমন কথা বলছো কেনো?
-আরে এখানে সবাই আবার আগের কথা গুলো বলেছে। আমি যে ভালো হয়ে গেছি কেউ এটা চোখেই দেখে না।তোমার বাবা আত্মীয়রা সবার সাথে কথা বলে শুধো আমার খারাপ টাই শুনেছে। কেউ কী এতো বাজে বাজে অভিযোগ যেই ছেলের নামে সেই ছেলের হাতে নিজের মেয়েকে তুলে দেয়!
হিয়া একটু জোরে জোরে হেসে বললো,

-আচ্ছা এই নিয়ে আপনার মন টা খারাপ? এতে মন খারাপ করে কেউ ! আমি বাবাকে সব বলেছি। সে তোমার আগে পরের সব কথা জানে তাই চিন্তা করতে হবে না এই নিয়ে।
এখন জাও আমার বাড়ির লোকদের ভালো ভাবে আপপায়ন করো। নাহলে কিন্তু আমি বিয়ের পর এ নিয়ে ঝগড়া করবো বলে দিলাম।
আয়ান হাসলো হিয়ার কথা শুনে। তারপর আরো
কতোক্ষন টুকটাক কথা হলো দুই জনের।

হিয়ার বাড়ির লোক চলে গেলো। শুক্রবার দিন টা ভালো তাই বিয়ের তারিখ ঠিক করেছে শুক্রবার।
তিশা তানিয়া মিলে রান্না ঘর সব পরিষ্কার করছে। তমা সোফায় বসে আছে। পাশেই আমান চৌধুরী রেস্ট নিচ্ছে।তানিয়া শুনিয়ে শুনিয়ে আমান চৌধুরীকে বলছে,

-আমার কথা শুনলো না তো! বুঝবে মজা। যখন দুই টা মিলে সব শেষ করবে! আমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য এইসব বুদ্ধি করা হয়েছে। বুঝেছি তো আমি !
তমা অনেক ক্ষন একটার পর একটা বলেই জাচ্ছে।
তানিয়া এবার সহ্য করতে না পেরে বললো,

-আপনি কী কোনো ভুল করেছেন যে আপনাকে কেউ শাস্তি দিবে? একটা কথা মনে রাখবেন, কেউ যদি দোষ করে তাহলে ভালো কাজও তার নিজের বিরুদ্ধে মনে হয়।
২২ এ নভেম্বর ২০০২। সময় টা শীত কাল। দুই ছেলে নিয়ে আমান চৌধুরী আর মিসেস তমা চৌধুরী বাপের বাড়ি থেকে নিজের বাড়ি যাচ্ছে। হঠাৎ রাস্তায় গাড়ির সামনে বেশ ঝামেলা।

আমান চৌধুরী গাড়ি থেকে নেমে দেখলো একটা তিন বছরের বাচ্চা মেয়েকে একটা পাগল লোক গলায় সরি বেধে কুকুরের মতো করে রেখেছে। বাচ্চা টা কাদছে। সবাই পাগল টার থেকে বাচ্চাটা ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। কারো কথা শুনছে না পাগল টা। ওইদিকে বাচ্চা টা খিদের জন্য কাদছে। বাচ্চা টার সামনে পাগল টা একটা নষ্ট পাউরুটি রেখেছে।

আমানকে আসতে না দেখে তমা বের হলো। তমা ওখানে গেছে বাচ্চাটাকে দেখে বড্ড মায়া হলো।
তমা আমানকে ঈশারা করে পাগল টাকে ধরতে বললো। তমার ঈশারায় আমান পাগল টাকে পেছন থেকে ধরতেই তমা দৌড়ে বাচ্চা টাকে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। আশেপাশের সবার থেকে বাচ্চার বাবা মার খোজ করলো। কিন্তু কোনো খোজ পাওয়া গেলো না। সবার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে তমা বাচ্চা টাকে নিজে নিয়ে আসলো।

আমান চৌধুরী আর কিছু বললো না। সে প্রথম থেকেই বাচ্চা টাকে নিতে চেয়েছিলো। তমার ভয়ে কিছু বলেনি।
ছোট মেয়েটাকে বাড়ি নিয়ে এসে সুন্দর করে গোসল করিয়ে নিজের হাতে খাবার খাওয়ালো তমা। আদর করে নিজের নামের সাথে মিলিয়ে নাম রাখলো তিশা।

কিন্তু ঝামেলা হলো একটা ! তিশা যখন আস্তে আস্তে বড়ো হয় তখন থেকেই তিশা তমার অবাদ্ধ হয়। তমার অনেক কাজই তিশার পছন্দ না। তমা তিশার প্রতি বিরক্ত হয়। এর পরে তাকে জামাল সিকদারের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।
কিন্তু আমান চৌধুরী তমাকে কড়া ভাবে নিষেধ করে কখনো যেনো তিশা তার এই ছোট বেলার কথা না জানতে পারে।

আর তিশা এখনো যানে না তার ছোট বেলার ভয়ংকর কাহিনি।
বিয়ের আর কিছু দিন বাকি। সবাই এখন খুব ব্যস্ত। আমান চৌধুরীর ইচ্ছা অনেক অনুষ্ঠান করে আয়ানের বিয়ে দিবে।
তাই অনেক আয়োজন করেছে। নূর ফাতেমা আর নূহা আরো আগেই চলে এসেছে। দুই দিন আগে সবাই লুকিয়ে হিয়াকে বাড়ি এনেছিলো। অনেক মজা করেছে।

আজকে বিয়ে! সবাই সকাল সকাল তৈরি হয়ে গেছে। আয়ান পাঞ্জাবী পরলে বরাবরই সাদা কালার পরে।তাই তাকে অনেক জোর করেও অন্য কোনো কালারের পাঞ্জাবি পরানো জায়নি। ঘুরে ফিরে সেই সাদা পাঞ্জাবিই পরেছে। তানিয়া তিশা নূহা ফাতেমা এবং বাড়ির আরো মেয়েরা এক কালার বোরকা পরেছে।

ঈশান শেহজাদ নূর ও এক রং এর পাঞ্জাবী পরেছে।সবাই বের হয়ে গেছে। আমান চৌধুরী আর আরো কী মুরব্বীরা এক গাড়িতে সাথে জামাল সিকদার ও আছে। এবং তানিয়ার বাবাও আছে। আর অন্য গাড়িতে আয়ানের সাথে নূর শেহজাদ ঈশান গেছে। এবং অন্য একটা গাড়িতে তিশারা গেছে সাতে মিসেস তমা নূরের মা ও আছে।। নূর আর শেহজাদ একটু আগে চলে আসবে। কারণ তাদের বাসর ঘর সাজাতে হবে।

বাড়িতে ঢুকতেই হিয়ার কাজিন রা বাড়ির দরজায় দারালো। কতোক্ষন মজা করে তারপর বাড়িতে ঢুকলো। সবাই খাওয়া দাওয়া করার পর আয়ানকে হিয়ার কাছে নিয়ে গেলো। হিয়া একটা লাল রং এর লেহেঙ্গা পরেছে। দুই জন পাশাপাশি দারানোর পর সবাই হা করে তাকিয়ে আছে।

তমা এবং আমান চৌধুরী বসে আছে। একটা কোনে, হিয়ার বাবাও বসে আছে। কথায় কথায় হিয়ার বাবা বললো,
-আমরা দুই ভাই। আমার ছোট ভাইয়ের সাথে তো আপনাদের পরিচয় করানো হলো না। একটু বসুন ওকে ডেকে আনছি। হিয়ার বাবা গিয়ে হিয়ার চাচাকে ডেকে আনলো।

অবিনাশী পর্ব ২৫

হিয়ার চাচাকে দেখে তমা এবং আমান চৌধুরী দুই জনেই দারিয়ে গেলো। তমার পায়ের নিচের মাটি সরে গেলো। হা করে তাকিয়ে আছে সে। তার শরীর বড্ড ভার ভার লাগছে তার।

অবিনাশী পর্ব ২৭+২৮