অবিনাশী পর্ব ২২

অবিনাশী পর্ব ২২
রেজওয়ানা আসিফা

আয়ান বসে আছে। আর সবাই পাশে দারিয়ে আছে। তিশা তারাতাড়ি গিয়ে এক গ্ল্যাস দুধ গরম করে আনলো। প্রথম হিয়া গ্ল্যাস টা ধরে খাওয়াতে যাবে। পরে দেখলো সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা লজ্জা পেয়ে গ্ল্যাস টা রেখে দিলো। আয়ান একবার হিয়ার দিকে তাকিয়ে নিজেই গ্ল্যাস টা তুলে নিলো। ঢক ঢক করে খেয়ে সাথে সাথে বমি করে দিলো। সমটা দুধ পেটে যাওয়ার আগেই বেড়িয়ে এলো।

গ্ল্যাস টা রেখে আয়ান তিশার দিকে একবার তাকালো। তার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে এই মাটিতে পড়া দুধ ওকে তুলে খাওয়াবে। আয়ান আস্তে আস্তে বললো,
-এতো দুধ একসাথে খাই নাই কতো বছর হয়েছে! তাল সামলাতে পারিনি। বোন!
তিশা কমড়ে হাত দিয়ে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

-এক বোতল লাল পানি এনে দিরে তো ঢক ঢক করে ঠিকি খেয়ে ফেলবা! এখন এই গুলো কে পরিষ্কার করবে তোমার বউ!?
হিয়া উঠে বললো,
-আচ্ছা তুমি রাগ করো না। আমাকে সব কিছু এনে দাও আমি পরিষ্কার করে দিচ্ছি।
তানিয়া এগিয়ে বললো,
-কারো পরিষ্কার করতে হবে না। আমি করছি। তোমরা এখানে না বসে উপরে গিয়ে বসো। একটু পরেই মামা আসবে।
নূরের মা এসে বললো,

-না মা আমি করছি। তুইও যা। তোদের এসব করতে হবে না।
কথা গুলো বলতে বলতে হঠাৎ নূরের মা খেয়াল করলো হিয়াকে। হিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
-এটা কে রে? মাশাআল্লাহ ! আল্লাহ যেন পুতুল বানিয়ে দুনিয়ায় পাঠাইছে।
তিশা নূরের মার কাছে গিয়ে বললো,

-মামি! এটা হচ্ছে আয়ান ভাইয়ের উনি!
– ওনি তো এখনো হয় নি। বিয়ে তো করতে হবে। তা তোর মা জানে? মানবে তো?
আয়ান উঠে বললো,
-তার মানা আর না মানা যায় আসে না কিছু।
নূরের মা হিয়ার গালে হাত দিয়ে বললো,

-পরীর মতো মেয়ে। মাশাআল্লাহ ! আমার নূরের জন্য এমন একটা মেয়ে পেতাম।
কথাটা শুনেই তিশার মুখটি মলিন হয়ে গেলো। নূরও ব্যপার টা খেয়াল করেছে। কিন্তু সে কিছু বলছে না। হিয়া বিষয় টা বুঝতে পেরে বললো,
-নূর ভাইয়ার জন্য আমার থেকেও সুন্দর আর লক্ষী কেউ হয়তো অপেক্ষা করছে!
নূরের মা মুচকি হেসে বললো,

– মিষ্টি মেয়ে!
যাও যাও তোমরা উপরে যাও।
দুপুরের খাওয়া দাওয়া করে সবাই তৈরি হচ্ছে। তিশা নিজের তৈরি করা বোরকা টা পরেছে। ভিতরের পার্ট টা হালকা বেগুনি রং আর বাইরের কোটি টা সাদা। বেল সুন্দর লাগছে তাকে দেখতে।
হিয়া শাড়ি পড়া ছিলো। কিন্তু শাড়ি পরে এই বাড়ি থেকে বের হওয়া যাবে না। এইজন্য তিশার নিজের ডিজাইন করা একটা বোরকা পরেছে হিয়া।

নূহাপরেছে একটা ধূসর রং এর বোরকা। তিশার থেকে নেওয়া টা পরতে দেয় নি শেহজাদ। নিজে একটা এনে দিয়েছে। ওই বোরকার সাথে মিলিয়ে পাঞ্জাবী পরার জন্য।
তানিয়া একটা কালো বোরকা পরে হিজাব বাধছিলো। হঠাৎ ঈশান এলো ঘরে। হাতে একটা পার্সেল। তানিয়া একটু অবাক হলো ওর সাথে অনলাইন পার্সেল দেখে। ও কীভাবে অনলাইনে অডার দিলো!
ঈশান ব্যাগটা বিছানায় রেখে কেচি বের করলো।
তানিয়া কাছে গিয়ে বসে জিগ্যেস করলো,

-এটা কী? কোথা থেকে আনলে?
-অনলাইনের পার্সেল দেখো না!
-সেটা তো দেখেছি। তোমার হাতে তো মোবাইল নেই। তুমি কীভাবে অডার দিলে? আর কখন অডার দিলে?
-নূহার ফোন থেকে দিয়েছি, আজকে সকালেই।
– সকালে অডার দিয়ে এখনি হাতে পেয়ে গেলে? আর এটার মধ্যে কী দেখি!

-ওদের শপ কাছেই ছিলো। এইজন্য তারাতাড়ি পেয়েছি। আর টানাটানি করো না। আমি দেখাচ্ছি। শান্ত হয়ে বসো।
তানিয়া শান্ত হয়ে বসলো। ঈশান প্যাকেট না খুলছে। প্যাকেট টা খুলতেই একটা সাদা কালারের বিশাল ঘেরের বোরকা হুমরি খেয়ে পরলো তানিয়ার কোলে। তানিয়া জীবনেও এতো সুন্দর বোরকা দেখেনি। তার চোখ আটকে গেছে বোরকাটার দিকে।
ঈশান একটা সাদা পাঞ্জাবী নিয়ে ওয়াশ রুমে জেতে জেতে বললো,

– ওটা খুলে এটা পরে নাও।
তানিয়া বোরকা টা হাতে নিয়ে ঈশানের যাওয়ার পানে চেয়ে বললো,
-এটা আমার জন্য?
ঈশান ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করতে করতে বললো,
– নাহ্। আরো একটা বউ আছে তো তার জন্য এনেছি।
তানিয়া খুশিতে বোরকাটায় কয়েকটা চুমু খেলো। তারপর বোরকা টা পরে তৈরি হয়ে নিলো।

সবাই আরো আগেই চলে এসেছে বসার ঘরে। এই তানিয়া আর ঈশানের দেরী হচ্ছে।তিশা বিরক্ত হয়ে বললো,
-কোথাও যাওয়ার সময় দেরী হলে আমার একদম ভালো লাগে না। আমার তর সইছে না। তোমরা দারাও আমি গিয়ে দেখে আসি।
তিশা ডাকতে যাবে তার আগেই ঈশান আর তানিয়া দুই জন একসাথে বের হলো। সবাই তাকিয়ে আছে দুই জনের দিকে।
তিশা ভ্রু কুচকে বললো,

-যাদু করে কালো বোরকা সাদা করে ফেললে নাকি?
নূহা মুচকি হেসে বললো,
-এটা আমার মোবাইলের যাদু।
নূর সবাইকে তারা দিয়ে বললো,
-চলো বের হওয়া যাক। অনেক রাত হলে বাবা কিন্তু রাগ করবে।

সবাই বেড়িয়ে পরলো। বাইরে গিয়ে মনে পরলো, এক গাড়িতে হবে না। তাই আয়ানের টা আর নূরের টা নিলো। একটায় আয়ান হিয়া আর শেহজাদ নূহা বসেছে। আর নূরের গাড়িতে নূর, তিশা, ঈশান আর তানিয়া বসেছে। সবাই বেশ খুশি। হঠাৎ দুই গাড়ির সবাই ফিক করে হেসে দিলো।
এখানের সব থেকে বড়ো টুইস্ট হলো তারা সবাই তিন দিনের জন্য সাজেক যাচ্ছে। কিন্তু বাড়িতে বলা হয় নি। বললে যেতে দিবে না কখনো। আর নূহাকে তো কোনো মতেই যেতে দিতো না।
এই বুদ্ধি টা তানিয়ার। আসলে তানিয়ার মনে হলো,

যেহেতু বিয়েটা হয়ে গেছে তাই ওদের একটু কাছাকাছি আসা দরকার। আর বিয়ে হয়ে গেলে ছোট বাচ্চা মেয়েটাও আস্তে আস্তে ম্যাচিউর হয়ে যায় এটা তানিয়া বুঝতে পেরেছে। আর দরকার হয় তিন বছর পরেই নূহা ওই বাড়িতে যাবে। এর আগে ওদের কাছাকাছি আসাটা তো ক্ষতি নেই। আর নূর এটাও খেয়াল করেছে যে, শেহজাদের সব সময় মন খারাপ থাকে। কারণ নূহা তেমন কাছে আসে না তার। কথাও বলে না তেমন। পর পর ভাবে থাকে। মনে হয় বিয়ে হয়েছে তো কী হয়েছে। একসাথে তো এখন থাকা যাবে না। নূহার এমন শেহজাদের প্রতি বেখেয়ালি ভাব দেখেই তিশা এই বুদ্ধি বের করেছে। প্রথমে তিশা নূকে বলেছিলো একা যাওয়ার কথা। তিশার কথা শুনে নূহা কান্না করে দেয়। আর বলে,

-সে নাকি একা একটা ছেলের সাথে দূরে কোথাও যাবে।
তারপর অনেক বোঝানোর পর রাজী হলেও সর্ত দেয় সবাই একসাথে যাবে।
সবাইকে বলার পর সবাই রাজি হয়। কিন্তু শেষে মনে হলো বাসায় কোনো ভাবেই জানানো যাবে না। কাল রাতে সবাই কাপড় প্যাক করে গাড়ির মধ্যে রেখে গেছে। আয়ানকে বলা হয় নি কারণ তাকে হিয়ার সাথে সারপ্রাইজ দেওয়ার ইচ্ছে ছিলো সবার।

অবিনাশী পর্ব ২১

আয়ান যখন গাড়ি চালাচ্ছিলো তখন সব কিছু যানায় হিয়া।
অনেক ক্ষনের জার্নি। কিন্তু নূহা এখনি ঘুমিয়ে গেছে। শেহজাদ নূহাকে জানালার কাছ থেকে নিজের কাছে নিয়ে আসলো।

অবিনাশী পর্ব ২৩