অবিনাশী পর্ব ২১

অবিনাশী পর্ব ২১
রেজওয়ানা আসিফা

ইশান এখন অনেক টা সুস্থ। তানিয়ার সাথে বেশ ভাব হয়ে গেছে। ওইদিনের ঘুরতে যাওয়া বাদ পড়ায় সবাই আজকে বের হবে ভেবেছে। সেই আগের মতোই প্ল্যান করে রেখেছে তিশা আর নূর। তবে প্ল্যান কে মাটি করে তানিয়া বলে গেছে সবাই একসাথে ঘুরবে। কারো একা কাপল হয়ে ঘুরতে মন চাইলে তারা আলাদা করে বাড়ি থেকে বের হবে।
এই কথা শুনে তিশা যাবেই না বলেছিলো। কিন্তু নূর বলায় রাজি হয়েছে।

তমা কাল চলে গেছে। এবার আয়ান ও যাইনি। যাওয়ার সময় দাতে দাত খিচে আয়ানকে বলে গেছে, তুমিও এদের সাথে তাল মিলিয়ে এদের মতো নিজের জীবন টাকে নষ্ট করছো। আয়ানও কঠিন গলায় বলেছে, জীবন নষ্ট আগে ছিলো এখন না। তারপর আর তমা কিছু বলেনি। মুখ ভারি করে চলে গেছে।তানিয়া কে বলে গেছে তারা যেনো এই রং তামাসা তারাতাড়ি শেষ করে বাড়ি ফেরে। ওই নূর মুচকি হেসে বলেছিলো,
-কে যান রং তামাসা আবার নতুন করে শুরু না হয়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

যে কয়েকজন নূরের কথাটার মানে বুঝেছিলো তারা ওই সময় হো হো করে হেসেছিলো।
সকাল সকাল সবাই ছাদে আড্ডা দিচ্ছিলো। হঠাৎ নিচ থেকে সবাইকে ঢাকলো নূরের মা। তার মুখে চিন্তার ছাপ। তার শরীর ঘামছে। সবাই তাকিয়ে আছে তার দিকে। হঠাৎ সবাইকে সে অবাক করে বললো,

-বেলা ১০ টা বাজে। কিন্তু আয়ান এখনো ঘুম থেকে উঠে নি। কাল নূর তোর সাথেই তো ও ঘুমিয়েছিলো। তুই একবার ডাকলি না? এতো ডাকলাম উঠলো না। আমার চিন্তা হচ্ছে। দেখ না কিছু খেয়ে টেয়ে পরে আছে নাকি। তমার ছেলের যদি এই বাড়ি বসে কিছু হয় ও সবাইকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে। ওর ছেলেরা ওর কলিজার টুকরা।
নূর আর শেহজাদ তারাতাড়ি ঘরে গেলো। কাল একসাথেই ঘুমিয়েছিলো। ওরা দুই জন সকালে উঠে নামাজ পরেছে। কিন্তু আয়ানকে ডাকে নি। আয়ান অন্য রকম। সকালে এমনিতেই দেরীতে উঠে তাই যখন অনেক সকালেও ও উঠে নি বিষয় টা তেমন গায়ে মাখেনি।

নূর আর শেহজাদ ঘরে গিয়ে আয়ান কে জোরে জোরে ডাকতে লাগলো। কিন্তু সে উঠছেইনা। ঈশান উত্তেজিত হয়ে বার বার বললো,
-কী হয়েছে? ওখানে কী হয়েছে।
তানিয়া ঈশাকে শান্ত করে রাখছে।

নূর বুঝতে পারলো ও কিছু খেয়েছে। ঘরের ডয়ারে হাত দিতেই দেখলো, ঘুমের ঔষধের পাতা। ঔষধ নেই একটাও। হয়তো ও সব খেয়েছে রাতে। নূর আয়ানের মুখে পানি মারলো। সে তারপরও উঠছেনা। নূর তারাতাড়ি ওকে কোলে করে গাড়িতে তুললো। হাসপাতালে নিয়ে গেলো।
তানিয়া সব কিছুর জন্য নিজেকে দাই করছে কারণ,

কাল যখন হিয়ার কথা মতো তানিয়া বের হয়ে বলে হিয়া রাজী না তখন থেকেই আয়ান চুপ হয়ে গিয়েছিলো। কোনো কথা বলছিলো না। আর ও যে সাভাবিক নেই সেটা বুঝতেও দিচ্ছিলো না। তানিয়া তারাতাড়ি হিয়াকে ফোন করলো। হিয়া ফোন তুলছে না। হয়তো দেখেছে অপরিচিত নাম্বার তাই গুরুত্ব দিচ্ছে না। তানিয়া হিয়াকে মেছেজ করার ১০ মিনিট পর হিয়া কল ব্যাক করলো।

তানিয়া আয়ানের সুস্থতার কথা বলতেই সে উত্তেজিত হয়ে গেলো। তানিয়া হাসপাতালের ঠিকানা দিয়ে তারাতাড়ি আসতে বললো।
ওদের প্ল্যান ছিলো আজকে সবাই যখন বের হবে। তখন হঠাৎ হিয়াকে ওরা পিক করে নিবে আর আয়ান অবাক হয়ে যাবে। কিন্তু এর আগেই আয়ান এসব করে বসলো।
তানিয়া হাসপাতালে যাইনি। নূর আর শেহজাদ গেছে। তিশা বললো,

– যেহেতু হিয়াকে বলেছো আমাদের যাওয়া দরকার। মেয়েটা ওখানে একা ফিল করবে। আমাদের যাওয়া দরকার।
তানিয়া তিশার কথা শুনে মেনে নিলো। তারপর রেডী হয়ে দুই জন বের হয়ে গেলো। তিশা গাড়ি ড্রাইভ করছে। আর তানিয়া বিরক্ত হয়ে বলছে।
একটার পর একটা ঝামেলা লেগেই আছে। আল্লাহ যানে কবে এই সমস্যার সমাধান হবে।
-চিন্তা করো না। ঠিক হয়ে যাবে।

হিয়ার বাসা দূরে হওয়ায় তানিয়া আর তিশা আগে পৌছালো। তারা দেখলো আয়ানের ঘুম ভেঙেছে। তিশা পাশে বসে কান্না করে দিলো। জতোই হোক ভাই তো। মায়া হচ্ছে তার। জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো তিশা।
হঠাৎ রুমে প্রবেশ করলো হিয়া। পরনে একটা কালো পারের সাদা শাড়ি। চুল গুলো বেনি করা। বেনীতে বেলী ফুল গাথা। তানিয়া দেখেই বুজেছে ও আজকে আয়ানকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই এভাবে সেজেছে। মেয়েটা বড্ড সরল। তানিয়া ওর কতোটুকু জানা! তানিয়ার কথায় আবার আয়ানকে বিশ্বাস করলো।

হিয়া ফেরতে ঢুকেই কেদে দিয়েছি। আয়ান উঠে বসলো হিয়াক্র দেখে। সে তানিয়ার দিকে তাকিয়ে চোখে ইশারা দিয়ে জিগ্যেস করলো, ওখানে কেনো। তানিয়া ইশারা করে বললো,
সে আসতে বলেছে।

হিয়া ভিতরে এসে আয়ানের সামনে দারালো। আয়ান অন্য দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে। হিয়া বুঝতে পারলো আয়ান কষ্ট পেয়েছে। তাই সে তানিয়ার দিকে তাকালো একবার। তানিয়া ইশারা করে বললো, কাছে যেতে।
ওদের দুই জন কে একি ছেড়ে তানিয়া কথা ঘুড়িয়ে সবাই কে নিয়ে বের হয়ে গেলো। তানিয়া তিশাকে রেখে বাড়ি চলে গেলো। কারণ ঈশান বাড়িতে একা আছে। শেহজাদ নূর আর তিশাকে একা রাখার জন্য তানিয়াকে বললো,
-আপনি একা যাবেন কেনো? চলুন আমিও জাচ্ছি সাথে। এখানে তো ভাইয়া আছেই। আর সাধারন ব্যপার এটা তাই বেশি সময় এখানে থাকতে হবে না একটু পরেই ছেলের দিবে।

তানিয়া বুঝতে পারলো শেহজাদ কেনো এই গুলো বলছে। তাই সে শেহজাদের কথায় সায় দিলো।
ওরা দুই জন বাড়ি চলে গেলো। নূর আর তিশা দারিয়ে আছে। কেবিনের বাইরে। হঠাৎ দেখলো ডাক্তার কেবিনে ঢুকছে। নূর গিয়ে তারাতাড়ি ডাক্তার কে ধরলো।

-একি ডাক্তার কোথায় জাচ্ছেন!
-এটা কেমন কথা। ভিতরে জাচ্ছি।
-না না ভিতরে যেতে হবে না। আপনার রুগী সুস্থ হয়ে গেছে।
-কীভাবে আমি তো দেখলাম মাত্র তার জ্ঞান ফিরেছে।
-হ্যা হ্যা জ্ঞান ফেরার পরেই সুস্থ হয়ে গেছে।

ডাক্তার চলে গেলো। একটু পরেই আয়ানকে হিয়া ধরে বের করলো বাইরে। নূর গিয়ে হাসপাতালে বিল মিটিয়ে গাড়িতে উঠলো। তিশাও ধরেছে আয়ানকে। আয়ান বিরক্ত হয়ে বললো,
-বুঝলাম না তোরা দুই জন আমাকে এভাবে ধরলি কেন? আমি কী মরার ঘর থেকে ফিরে এসেছি নাকি?

কথা টা শুনেই দুজন টুপ করে ছেড়ে দিলো আর আয়ান দপাস করে মাটিতে পরে গেলো। আয়ান বেথায় উহ করে উঠলো আর তিশা অন্য দিকে তাকিয়ে ঠোঁট দিয়ে বাশি বাজাতে লাগলো। হিয়া মুচকি হেসে আয়ানকে তুলে ধরলো আবার। সবাই গাড়িতে গিয়ে বসলো। তিশা মোবাইল টিপতে টিপতে বললো,
-বুঝতেছি না। আমাদের ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান টা কী খারাপ? নাকি অশুভ। কোনো ভাবেই যাওয়া হচ্ছে না। একটা না একটা বিপদ লেগেই আছে। এইজে আজকেও যাওয়া হচ্ছে না।

আয়ান হঠাৎ বলে উঠলো!
-কেনো যাওয়া হবে না। আজকে যাবোই। যেভাবেই হোক।
তিশা মুখ বাকা করে বললো,
-এহহহ সখ কতো! মরার ঘর থেকে উঠে এসে আবার ঘুরতে যাবে।
-তোকে বলেছে ! আমার যদি ঘারে মাথা টা নাও থাকতো তাহলেও যেভাবেই হোক ঘুরতে যেতাম।
এবার তিশা সিরিয়াস হয়ে বসে বললো,

– সত্যি যাবা? বাড়ি গিয়েই কিন্তু বের হবো তাহলে !
বাড়ির কথা শুনেই হিয়া চেচিয়ে উঠে বললো,
-এইরে! গেলো! আমি কেনো তোমাদের বাড়ি যাচ্ছি। আমি তো আমার বাড়ি যাবো। তোমাদের গাড়িতে উঠলাম কেনো! ধূররর। এখন কী হবে!
আয়ান বিরক্ত হয়ে বললো,

-মনে হচ্ছে অনেক বড়ো পাপ করে ফেলেছো। আমার মামা বাড়ি গেলে কী তোমাকে কেউ খেয়ে ফেলবে নাকি? বাড়ি থেকে বলে বের হয়েছো না আসতে দেরী হবে?
-তা বলেছি। কিন্তু বাবা বাড়িতে। চিন্তা করবে।
আয়ান হিয়ার হাতের মোবাইল টা হিয়ার চোখের কাছে নিয়ে বললো,
-এটা দেখো! এটা আবিষ্কার করছে ব্যবহার করার জন্য। এটা ব্যবহার করে তোমার বাবার চিন্তা কমাতে পারো। গা*ধা কোথাকার।

-একদম গাধা বলবা না। বলে দিলাম। তোমার বাড়ির মানুষ দেখলে বলবে টা কী? ওহ্ এটা তো আবার তোমার মামার বাড়ি।
-আমার মামারা এসব নিয়ে বসে থাকে না।
বাড়িতে ঈশান একা বিরক্ত হচ্ছিলো। তানিয়াকে দেখে সে খুব খুশি হলো। আস্তে করে জিগ্যেস করলো,
-ওর এখন কী অবস্থা। কেমন আছে।

তানিয়া হাসি মুখে বললো, সুস্থ আছে এখন।
-আজকে বের হবে না? আমার তো অনেক ইচ্ছে ছিলো বের হওয়ার।
তানিয়া মন খারাপ করে বললো,
– যানি না তো। দেখি ওরা আসুক। তারপর কী বলে।
ঈশান ভ্রু কুচকে বললো,

-মন খারাপ নাকি তোমার? আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলোতো!
-কী?
-সত্যি কথা বলবে তো?
-হ্যা বলো তো কী বলবে?
– তুমি রাগ করো না। আমাদের বিয়েটা কীভাবে হয়েছিলো? আসলে মনে পরছে না আমার।
-শুনবে তুমি?

-হ্যা। খুব জানতে ইচ্ছে করছে।
তানিয়া ঈশানের হাত টা ধরে ঘরে নিয়ে গেলো।
ঈশান বিছানায় বসলো। আর তানিয়া জানালার কাছে গিয়ে দারালো। তারপর বলতে শুরু করলো,
-একটা ছোট্ট গ্রামে একদিন প্রবেশ পরলো এক প্রতারকের। চোখ পরলো একটা নিষ্পাপ মনির দিকে। তারপর সেই মনিটার সাধীনতা কেড়ে নিলো আড়ালে। তারপর নিয়ে গেলো এক অন্ধকার বাড়িতে। এর পর আস্তে আস্তে সেই মনি ওই বাড়িতে আলো ফোটালো।
ঈশান বিরক্ত হয়ে বললো,

-ধূর…….. তোমাকে বললাম বিয়ে কীভাবে হলো সেটা বলতে। তুমি কী বললে!
-এর মধ্যেই আমাদের বিয়ে লুকিয়ে আছে।
-কীভাবে!?
– তোমার মা আমাকে যেইদিন তোমার বাড়ির বউ করে আনলো, তখনও আমি জানতাম না যে আমার স্বামী অসুস্থ। আস্তে আস্তে সব জানলাম। প্রথমে তোমার মা আমাকে আটকে রেখেছিলো। পরে আবার নিজের পাখা পেলাম। তারপর আবার উরতে শুরু করলাম। আর তোমার বাড়িতে আবার আলোকিত করলাম।

-তুমি খুব কষ্ট করেছো আমার জন্য?
-নাহ্ তুমি সুস্থ হয়ে গেছো আমার আর কোনো কষ্ট নেই।
-আমি তোমাকে কখনো ছেড়ে যাবো না।
তানিয়া ঈশানের কথাটা শুনে হা করে তাকিয়ে আছে। ও এই কথা কীভাবে বললো। ও কী তানিয়াকে বুঝতে পেরেছে!
তানিয়া কান্না করে দিলো ঈশানের কথা শুনে। ঈশান তানিয়ার দুই গালে হাত দিয়ে বললো,

অবিনাশী পর্ব ২১

-কান্না করো না তো।
হঠাৎ দুই জন শুনতে পেলো বাইরে গাড়ির আওয়াজ। ঈশান বললো,
-ওই তো ওরা চলে এসেছে। বাইরে চলো।

অবিনাশী পর্ব ২২