অবিনাশী পর্ব ২০

অবিনাশী পর্ব ২০
রেজওয়ানা আসিফা

কারো ঘুরতে যাওয়া হলো না আজ। সবাই ঈশান কে নিয়ে ব্যাস্ত। সে তেমন কথা বলে না। সব সময় একা বসে থাকে। চারদিকে এদিক সেদিক তাকিয়ে থাকে। সে কেমন যেনো উদাসীন হয়ে তাকিয়ে থাকে।
তবে বাড়িতে ঝামেলা লাগলো অন্য রকম। তমা তানিয়াকে ঈশানের কাছেই যেতে দিচ্ছে না।

যখনই একটু ওই ঘরে যায়, তখনই কোনো না কোনো কারণে বের করে দেয়। তিশা কয়েক বার তমার দিকে তেরে গেছে। কিন্তু তানিয়া যেতে দেয়নি। এই রকম কাজ দেখে শেহজাদ আর নূর দুই জনেই অনেক রেগে আছে। তানিয়া একটা কথাও বলেনা। সব সময় একা বসে আছে। খায় না ঠিক মতো।
বিকেলে তানিয়া ছাদে উদাস হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ তিশা ডাকছে। এসে হাপাতে হাপাতে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

-তারাতারি নিচে এসো।
কথাটা বলেই আবার চলে গেলো। তানিয়া চোখ টা মুছে নিচে গেলো।
নিচে গিয়ে দেখলো আয়ানের সাথে তুমুল ঝগড়া লেগেছে তমার। ঈশান কে আয়ান ঘর থেকে বের করেছে এই নিয়েই তার সাথে তমার ঝগড়া লেগেছে। তমার কথা সে কেনো বের করলো ঈশানকে।

তমা আয়ানকে অনেক রাগারাগি করে ঈশানকে নিয়ে ঘরে যেতেই আয়ান ঈশানকে একটানে নিয়ে আসলো। আয়ানের টান এতো জোরে ছিলো যে তমা ছিটকে কিছু টা দূরে গিয়ে পরলো। তানিয়া এসব দেখে তারাতাড়ি গিয়ে তমাকে ধরলো। তমা আস্তে আস্তে উঠে বসলো। আয়ান চিৎকার করে বললো,

-আমি না হয় মাতাল! ম*দ খাই। আমি খারাপ আমি জানি। আমি ভালো না। তোমরা! মানলাম ওই মেয়েটাকে এনেছো। খারাপ ব্যবহার আমিও করেছি সেটাও পাপ করেছি। কিন্তু ! এখন ও নিজে কষ্ট করে ঈশানকে ঠিক করেছে। ওর অধিকার থেকে কেনো বঞ্চিত করছো ওকে? ওকে কেনো ঈশানের কাছে যেতে দিচ্ছো না?
আচ্ছা মা একজন ডাক্তার হয়ে তুমি কীভাবে বুঝলে না ঈশান সুস্থ হোক? নাকি তুমি চাও নি?

তমা ঘামছে। আয়ানের প্রশ্ন গুলো যেনো তাকে খুরে খাচ্ছে। সে চোরের মতো এদিক সেদিকে তাকাচ্ছে।
বাড়িতে সব এক হয়ে গেছে। সবাই বসার ঘরে জরাও হয়েছে। শেহজাদ নতুন জামাই ওর সামনে ঝামেলা হবে এই ভয়ে নূর সবাইকে থামিয়ে সবার ঘরে পাঠিয়ে দিলো।
তানিয়া তিশার সাথে তার ঘরে চলে গেলো। দুই জন বসে আছে। সাথে নূর ও। নূর বললো,

-আমাদের বলাই উচিৎ হয় নি ঈশানের কথা। আগে ওকে তানিয়ার সাথে কিছু দিন রাখার দরকার ছিলো।
তানিয়া বিরক্ত হয়ে বললো,
-প্লিজ থামেন না! এসব শুনতে ইচ্ছে করছে না। ভাগ্যে যা আছে তা হবেই। কেউ ভাগ্য কে থামিয়ে রাখতে পারেনা।
হঠাৎ আয়ান ঘরে ঢুকে বললো,

-কিন্তুু তুমিই তো বলেছিলে, মাঝে মাঝে ভাগ্যের সাথে যুদ্ধ করতে হয় !
সবাই আয়ানের দিকে তাকালো।
হঠাৎ আয়ান তানিয়ার দুই হাত খপ করে ধরে নিজের মাথার সাথে ঠেকিয়ে বললো,
-অনেক অন্যায় করেছি। মাথ করে দাও বোন। প্লিজ মাফ করে দাও। আমি অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট করেছি। অনেক মেয়ে অভিশাপ দিয়েছে। কিন্তু কখনো আমার জীবন এমন হবে আমি কল্পনাও করিনি।
নূর পাশ থেকে বললো,

– হঠাৎ সূর্য উঠলো কোন দিকে? তোর এই রকম অবস্থার কী এমন কারণ। কীভাবে এলো এতো পরিবর্তন?
আয়ান নূরের কথায় কোনো কান না দিয়ে বললো,
-তানিয়া তুমি আমার ছোট বোনের মতো! প্লিজ মাফ করে দাও।
তানিয়া হাত ছারিয়ে বললো,

-কী হয়েছে তোমার?
-তুমি মাফ করো আগে!
– তুমি যদি সত্যি সত্যি সুধরে যাও তাহলে এটাই আলহামদুলিল্লাহ। মাফ এর কথা আসবে না। এখন বলো কি হয়েছে?

– তানিয়া তোমার মনে আছে হিয়ার কথা?
হিয়ার কথা শুনেই তানিয়া তিশা দুই জন নিজেদের মধ্যে চাওয়া চাওয়ি করলো একবার !
তানিয়া বললো,
-হ্যা মনে আছে। কিন্তু এতো দিন পর ওর জন্য কী এমন হলো? আর ও কোথা থেকে আসলো?
আয়ান মাথায় দুই হাত দিয়ে বললো,

– ওকে সত্যি সত্যি ভালোবেসে ফেলেছি। পাগল হয়ে যাবো ওকে না পেলে, প্রতিদিন ওকে সপ্নে দেখি। আমার মাথা নষ্ট হয়ে যায়। আমার চোখে ভাসে ও বলেছিলো,
-কাজটা ঠিক করো নি আয়ান। এর ফল পাবে।
ওর কান্না আমার চোখে ভাসে।

-ওকে এনে দাও। প্লিজ। ও আমার ফোন ধরে না। ওর পর আর কোনো মেয়েকে ভালো লাগেনি।
তিশা মুখ বেকিয়ে বললো,
-আগে বিশ্বাস করতাম না যে! একটা মেয়ে একটা খারাপ ছেলেকে ভালো বানাতে পারে। এখন দেখছি, সত্যি সত্যিই এটা সম্ভব।
তানিয়া বললো,

-তুমি যে ভালো হয়ে গেছো এটা বিশ্বাস কীভাবে করবো? আমাকে ক্ষতি করার জন্য বা হিয়াকে ক্ষতি করার জন্য কিছু প্ল্যান করোনি এটা কীভাবে বিশ্বাস করবো?
-তুমি বিশ্বাস করো বা না করো আমায় ওকে এনে দাও। নাহলে ওর অভিশাপ আমাকে মুচরে খাবে।
কথা গুলো বলেই আয়ান হাউমাউ করে কাদছে।
তানিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছে। মনে মনে বলছে,
-কীভাবে এতো খারাপ একটা ছেলে এভাবে একটা মেয়ের জন্য ভেঙে পরতে পারে!
তানিয়া বললো,

– চিন্তা করো না। ভাই সব ঠিক হয়ে যাবে।
ঈশান এখন মুটামুটি কথা বলে। তানিয়া আগের মতোই দেখা শোনা করে। তমা কিছু বলার সাহস করে না এখন আর। আগে আয়ান পক্ষে ছিলো এখন সেও নেই। সে একা হয়ে গেছে। বুঝতে পেরেছে।
তানিয়া কে আয়ান হিয়ার সব ঠিকানা দিলো। এবং নিজে নিয়ে আসলো আজ। তানিয়া আয়ান তিশা আর নূর ঈশান একসাথে সবাই বের হয়েছিলো রেস্টুরেন্টে খাবার খাওয়ার জন্য। কিন্তু আয়ান জোর করে নিয়ে আসলো হিয়ার ঠিকানায়। শেহজাদ নূহাও এসেছিলো। কিন্তু তারা ওখান থেকে বাড়ি চলে গেছে। নূর ঈশান আর আয়ান বাইরে দারালো। তানিয়া আর তিশা ভিতরে গেলো।

ভেতরে গিয়ে একজন মহিলার কাছে জিগ্যেস করতেই হিয়াকে ডেকে দিলো। হিয়া তানিয়াকে দেখে খুশিতে জড়িয়ে ধরলো। তানিয়া দেখে সে খুব খুশি হলো।
অনেক ক্ষন কথা বলার পর হিয়া বললো,
-তোমার জন্য ওই মা ছেলের হাত থেকে বেচে ফিরেছি। তুমি না থাকলে যে আমার কী হতো, ভাবতেই আমার শরীরে কাটা দিয়ে উঠে।
তানিয়া হিয়ার কথা গুলো শুনে বললো,

– কিন্তু আজ আমি ওই ছেলের পক্ষ নিয়েই যে তোমার কাছে এসেছি।
হিয়া ভ্রু কুচকে তাকালো। তানিয়ার হাত ধরে জিগ্যেসাপূর্ব চোখে তাকিয়ে বললো,
-তোমার কথা বুঝতেছিনা আমি। কী হয়েছে বলোতো?
তানিয়া নিচের দিকে তাকিয়ে বললো,
-তুমি আয়ানকে ক্ষমা করে দাও। ও তোমাকে সত্যি ভালোবাসে।
হিয়া অবাক হয়ে বললো,

– তোমার কী হয়েছে? তুমি হঠাৎ এইসব বলছো কেনো?
-ও কাল পাগলের মতো কান্না করেছে। ও ভালো হয়ে গেছে। আরেকটা সুযোগ দিয়ে দেখোনা।
-ও আমার যেই বিশ্বাস ভেঙেছে সেটা জোড়া সম্ভব না। তবে তুমি বলেছো। এইজন্য তোমার কথায় আর একবার ওকে সুযোগ দিতে পারি। এই একবার !
তানিয়া খুশি হয়ে বললো,

অবিনাশী পর্ব ১৯

– ধন্যবাদ তোমাকে। আমি ওকে গিয়ে বলছি। ও বাইরের দারিয়ে আছে।
-না না এখনি গিয়ে বলোনা আগে একটু শাস্তি দেই।

অবিনাশী পর্ব ২১