অবিনাশী পর্ব ১৯

অবিনাশী পর্ব ১৯
রেজওয়ানা আসিফা

তানিয়া তিশার ব্যবহার দেখেই বুঝতে পেরেছে রাতে কিছু একটা হয়েছে। যেই মেয়ে চলে যাবে চলে যাবে বলেও সব কাপড় তুলে রেখেছে যাবে না বলে এর মধ্যে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে এটা তানিয়ার বুঝতে বাকি নেই।
জামাল সিকদার শেহজাদ এই বাড়িতে দুই দিন থাকবে এর জন্য যা জামা কাপড় লাগবে তা আনতে সকালেই বেড়িয়ে গেছে। নূর গেছে একটু বাইরে। অনেক দিন নিজের বিজনেসের প্রতি খেয়াল দেয় না সে। সকালে ম্যানেজার ফোন করে যানায় একটু ঝামেলা হয়েছে।

বাড়িতে তেমন মেহমান নেই। তাই শেহজাদ বলেছে আজকে সবাইকে ঘুরতে নিয়ে যাবে। নূহা এটা নিয়ে বেশ খুশি। কারণ বাড়ি থেকে তাকে তেমন বের হতে দেয় না। কিন্তু শেহজাদ বলেছে এইজন্য বাড়ির কেউ না করতে পারেনি।তিশার বের হওয়াও তেমন পছন্দ না জামাল সিকদারের। তবে জতো যাই হোক নিজের মেয়েনা তাই কিছু তেমন কিছু বলেনা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

তিশা বাড়িতে এতো কাজের মাঝেও নিজের জন্য একটা বোরকা তৈরি করলো বাইর যাবে বলে। তার যাওয়ার তেমন ইচ্ছে ছিলো না। নূর বলেছে ওখান থেকে আলাদা বের হবে তাই তার যাওয়ার ইচ্ছে বারলো। তিশা নিজে ডিজাইনার। প্রথম নূরের সাথে এভাবে বের হবে তাই নিজের জন্য খুব যত্ন করে বোরকা টা তৈরি করেছে। যখন সে আয়রন করছিলো তখন নূহা আর তানিয়া রুমে এলো। নূহা এসেছে তিশার থেকে নতুন একটা বোরকা নেওয়ার জন্য। আজকে পরে বের হবে। নূহা চলে যেতেই তানিয়া তিশার দিকে তাকালো। তানিয়ার চাহনি দেখেই তিশা বুঝে গেলো। তানিয়া বুঝে গেছে সব। তিশা আমতা আমতা করে বললো,

-আসলে ও কালকে রাতেই সব বলেছে।
তানিয়া ভ্রু কুচকে বললো,
-তা আমাকে বললে কী আমি এলাকায় ঢোল বাজিয়ে বলতাম নাকি?
-না ! সময় পাইনি। রাগ করোনা।

তানিয়ার হঠাৎ খেয়াল হলো তিশার তৈরি করা নতুন বোরকা টার দিকে। মসকরা করে বললো,
-বুজেছি এই প্ল্যান করে রেখেছো তাহলে? আমরা বের হলেই নিজেরা আলাদা হয়ে যাবে তাই না?
-আমি বলিনি বিশ্বাস করো। আমি তো জেতেই চাইনি। ও বললো…….
তানিয়া থামিয়ে দিয়ে বললো,

-থাক থাক আর নিজেকে ধোয়া তুলসি পাতা বানাতে হবে না।
কিছুক্ষনের মধ্যেই তানিয়ার মুখটা মলিন হয়ে গেলো। শাড়ির আচল নারতে নারতে বললো,
-তোমার ভাই যদি সুস্থ থাকতো! আমারে আইসা বলতো, চলো একটু হাত ধরে ঘুরে আসি। অনেক সপ্ন ছিলো। সব শেষ !

তিশা তানিয়ার কাধে হাত দিয়ে দেখলো, তার চোখের পানি। সান্ত্বনা দিবে কীভাবে সেটা তিশার যানা নেই।
হঠাৎ নিচ থেকে চেচামেচির আওয়াজ আসলো। কেউ তানিয়াকে ডাকছে। সেটাও খুব জোরে। শান্ত গলায় না। তার গলায় আতঙ্ক। তানিয়া চোখ মুছে দৌড় দিলো নিচে। পিছে তিশাও।
নিচে গিয়ে তিশার চোখ কপালে উঠে গেলো। চিৎকার করে দৌড়ে বসার ঘরে গেলো।

ঈশানকে সে টিভির সামনে বসিয়ে উপরে গিয়েছিলো। কিন্তু সে মাটিতে বসে আছে। আর তার হাত পা কাপছে। নূর বাইরে গিয়েছিলো। একটু আগেই বাড়ি ফিরেছে ঘরেই ছিলো। হঠাৎ বাইরে চেচামেচির আওয়াজ শুনে বাইরে এসে এই অবস্থা দেখে তারাতাড়ি ঈশানকে ধরে মেডিকেল নিলো। তানিয়া পাগলের মতো কাদছে। জামাল সিকদার তমা আর আমান চৌধুরীকে কল করে বলেছে। তারা এখনো বাড়ি গিয়ে পৌছায় নি। ঈশানের কথা শুনতেই গাড়ি ঘুরালো।
তানিয়ার কোলে ঈশানের মাথা। তিশা নিজেও কাদছে। তারপরও নিজেকে সামলে তানিয়াকে বোঝানোর চেষ্টা করছে।

হাসপাতালে নিতেই ডাক্তার ঈশানকে ভিতরে নিয়ে গেলো। কিন্তু তানিয়ার কান্না থামছে না।
জামাল সিকদার, নূর, তিশা সবাই পাইচারি করছে। কেউ বসতে পারছে না চিন্তায়। তানিয়া দুই বার ঙ্গান হারিয়েছে। এখন কিছু টা ভালো আছে। ডাক্তার এক ঘন্টা সব চেকআপ করে দেখার পর বাইরে আসলো। সবাই ঘীরে ধরলো তাকে।
ডাক্তার চিন্তাপূর্ণ চোখে বললো,

-কিছুই বোঝা জাচ্ছে না। কোনো সমস্যা দেখা দিচ্ছে না কিছু তে। ঘুমের ঔষধ দেওয়া হয়েছে। তিন ঘন্টা পর ঙ্গান ফিরবে। তারপর বোঝা যেতে পারে কী হবে।
দুই ঘন্টা কাটার পরেই শেহজাদ আসে হাসপাতালে। সে একটু বাইরে গিয়েছিলো। বাড়ি এসে নূহার থেকে সব শুনে তারাতাড়ি হাসপাতালে চলে আসে।
তানিয়া একটুর জন্যও বসেনি। হাসপাতালের একটা কেবিনে বসে নফল নামাজ পরে কান্না করছিলো। কখন যে সারে তিন ঘন্টা কেটে গেছে তার খেয়ালি নেই। হঠাৎ তিশার ডাক পরতেই বাইরে গেলো। তিশা বললো, ঈশানের ঙ্গান ফিরেছে।

ওর প্রেশার পরতে পারে এইজন্য জামাল সিকদার একমাত্র তানিয়াকে যেতে বললো। আর কাউকে যেতে দিলো না।
এক ঘন্টা পর এলো তমা আর আমান চৌধুরী, সাথে আয়ানও কেবিনে ঢুকেই তানিয়ার গালে একটা থাপ্পড় দিতে যাবে, এমন সময় কেউ তার হাত টা ধরে ফেললো। তমা উপরে তাকাতেই দেখলো ঈশান তার হাত ধরে আছে।
ঈশানের প্রতিক্রিয়া দেখে তমা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ঈশান বলে উঠলো,

-ওর গায়ে হাত তুলছো কেনো? করেছে কী ও?
তমা অবাক হয়ে বললো,
-তুমি এতো সাভাবিক ভাবে কথা বলছো কীভাবে?
নূর পাশ থেকে বললো,
-ফুপু ইশান সুস্থ হয়ে গেছে।

নূরের কথাটা তমার কানে বাজছে। ঈশানের দুই গালে হাত দিলো তমা। তমার চোখে পানি টল টল করছে। তানিয়াকে পাশ থেকে সরিয়ে নিজে ছেলের পাশে বসতে যাবে ঈশান আবার বললো,
-তুমি যেমন মা ও তো আমার স্ত্রী দুই জন দুই পাশে বসো।
এক ঘন্টা আগে তানিয়া যখন প্রথম কেবিনে ঢোকে, তখন ঈশান মাটির দিকে তাকিয়ে ছিলো। হঠাৎ ঈশান বলে উঠলো,

-আমার কেমন যেনো হালকা লাগছে। মনে হচ্ছে মাথায় কিছু বাধা ছিলো। এখন নেই।
তানিয়ার বুঝতে বাকি রইলো না কিছু একটা হয়েছে।
ডাক্তারকে ডাকলো সবাই। ডাক্তার সব কিছু দেখে বললো,

-ঈশান মানসিক ভাবে অসুস্থ ছিলোনা। তার এইটুকুই সমস্যা ছিলো তার মধ্যে সাধারণ বিবেগ বুদ্ধি ছিলো না। কোনটা সঠিক কোনটা ভুল সে ও নির্ণয় করতে পারতো না। আমি এমন মানুষ সুস্থ হতে খুব কম দেখেছি। প্রচণ্ড খাটার পর এমন মানুষ সুস্থ হয়। সেটাও লাখে একজন। কপাল ভালো ছিলো হয়তো তাই আজকে আপনারা এমন দিন দেখতে পারছেন। ও সুস্থ হয়ে গেছে। তবে তাকে প্রেশার দিয়েন না। তার সবার মুখ মনে থাকলেও কে কোনটা এটা নির্ণয় করতে সময় লাগবে। আস্তে আস্তে বুঝিয়ে দিবেন।

ডাক্তারের কথা শুনে তানিয়া খুশিতে কান্না করে দিয়েছিলো তখন। তিশাও খুব খুশি হয়। ঈশানকে সবার সাথে নতুন করে পরিচয় করায় নূর। তিশার দিকে তাকাতেই নূর বললো,
-এটা তোমার বোন। তোমার ভাই আছে একটা জমজ। সে একটু পর আসবে। আর এটা তোমাদের দুই ভাইয়ের একমাত্র বোন। তিশা ঈশানের কাছে এসে বসলো।
এবার তানিয়ার দিকে আঙুল দেখিয়ে বললো,

-এটা তোমার প্রিয় তমা। তোমার স্ত্রী।
তানিয়া নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না। সে কাদছে। এটা তার খুশির কান্না।
ছোট থেকে ভাইকে ভয় দেখাতো। মারতো, তবে হঠাৎ আয়ানও ঈশানের কাছে এসে বললো, আমি তোর ভাই! তোর জমজ ভাই।

অবিনাশী পর্ব ১৭+১৮

ঈশান সব শুনছে। তবে তেমন কথা বলছে না। তার চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে কীভাবে কেমন করে কথা বলবে যানেনা।
একজন নার্স যানিয়ে গেলো, তারা বাড়ি চলে যেতে পারবে। সবাই সব কিছু গুছিয়ে বাড়ির দিকে গেলো।

অবিনাশী পর্ব ২০