যদি তুমি বলো পর্ব ৩৮

যদি তুমি বলো পর্ব ৩৮
আফনান লারা

তিথি যতদূর চোখ যায় হেঁটে চলেছে।আজ সে কিছুতেই ইশানের কাছে ধরা দিবেনা।ইশান কি মনে করে নিজেকে?
অতীতের একটা ভুল নিয়ে কি মাথা কিনে নিবে।এতদিন যা জ্বালিয়েছে ভাল।
‘আর না,আর সহ্য করবোনা আমি।আরে বিয়ের আগে যা করার করেছি,উনিও যা করার করেছেন তাই বলে কি বিয়ের পরেও করতে হবে!

কিন্তু যাচ্ছি যে আমি,কোথায় গিয়ে থামবো?’
তিথি থামলো।আশেপাশের মানুষগুলোর চেহারা,ব্যবহার,ভাষা কিছুই তার জানা নাই।আসার সময় ফোনটাও আনতে ভুলে গেছে।ফোন এনেও বা কি হবে।সে তো সিম নেয়নি।হোয়াটসএপে গিয়ে তানিয়ার সাথে কথা বলা যেতো কিন্তু তার এমবি শেষ।
ধুর!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

‘পালানোর আগে পূর্ব পরিকল্পনা কেন করলাম না!অবশ্য আমি কি জানি এরকম একটা দিন আসবে!
কোথাকার সেই ক্যাবলা ইশান আজ দুটো মেয়েকে নাচাচ্ছে।’
তিথি একটা বেঞ্চিতে বসে পা দুলাতে থাকে।হঠাৎ তার সামনে একটা কার এসে থামে।তিথি ভাবছে ইশান কিনা।পরে দেখে এটা তো নীল রঙের কার।ইশানেরটা ছাই রঙের।কার থেকে দুজন লোক বের হয় এরপর শুদ্ধ
বাংলা ভাষায় বলে,’ম্যাম গাড়ীতে উঠুন’

তবে শুদ্ধ করে বললেও তাদের মুখ থেকে যখন বাক্যটি শোনা গেলো,বোঝাই গেলো যে তারা এটা মুখস্থ করে বলেছে।
তিথি বেঞ্চি শক্ত করে ধররে বলে,’যাব না’
লোকগুলো হাতের ফোন দেখে ‘যাব না” এর মানে বের করে তারাও বাংলায় বলে,’আপনাকে যেতেই হবে’
তিথি তাদের চাল বুঝতে পেরে তখন দুষ্টুমি করে বলে,’তোমরা আমার নাগর লাগো?’
লোকগুলো এবার টেনসনে পড়ে যায়।নাগর মানে কি আবার!
তিথি খিলখিল করে হাসছে।
এদের ইশান পাঠিয়েছে তিথিকে তুলে আনার জন্য।তিথি ও বুঝতে পেরে মজা নিচ্ছে।

রিদমের বাড়ি থাকতেই পিংকি আর পান্না জানতে পারে তাদের বাবা হাসপাতালে ভর্তি।তাই তানিয়া আর রিদমের সাথে ওরা দুজন সোজা হাসপাতালে চলে আসে।
রিদম তো আর এত কিছু জানতোনা তাই সে সাথে করে কমলা চার কেজি কিনে নেয়।তানিয়া টাকা দিছিলো।হাসপাতালে যাবার পর রিদমকে দেখে গিয়াসউদ্দিন এমনিতেও রেগে গেছিলেন,এরপর ওর হাতে কমলা দেখে তার মাথা হয়ে গেলো চড়গ গাছ।

রিদম ভয় পেয়ে লুকিয়ে পড়েছে।গিয়াস সাহেব শুয়ে শুয়ে বলছেন,’দেখ পিংকি!কেন আমি এই বদমাইশটাকে দেখতে পারিনা’
‘বাবা ও তো জানতোনা তুমি যে কমলার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছো’
‘চুপ!আবার ও বলা হচ্ছে।পিরিত দেখলে বাঁচিনা!’
তানিয়ার খুব হাসি পাচ্ছিল কারণ গিয়াস সাহেবের পা বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল।সে অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে রাখে।রিদম তখন ফিসফিস করে বলে সে এখানে থাকতে চায়না আর।

লোকগুলো যখন বুঝতে পারে যে তিথি মজা করে চলেছে তখন তারা ইতিউতি না করে তিথিকে জোরপূর্বক গাড়ীতে বসায়।
তিথি অনেক চিৎকার করে তাও পারেনা।তাকে জোর করে আবারও ইশানের বাসার সামনে এনে রাখে ওরা।
তিথি বিরক্তি নিয়ে দরজার বাহিরেই অপেক্ষা করছিল তখনই ইশান দরজা খুলে।
তিথিকে দেখে সে হাসি দিয়ে বলে,’বড় ব্যবসায়ীর বউ হবার এই এক অসুবিধা।যেখানেই লুকাবি সেখান থেকে তুলে নিয়ে আসবো।’

‘আপনার আর কাজ নাই?আমি ঘুরতে গেছিলাম’
‘ ফ্রি হলে আমিই ঘুরিয়ে আনবো।তোর একা ঘুরতে যাবার কোনো দরকার নাই।’
এই বলে ইশান বের হয়ে তিথিকে টানতে থাকে,তিথিও নাছড়বান্দার মতন বাসায় ঢুকতে চায়না। ইশান এবার ওকে ধরে কোলে নিবে ওমনি কুয়িনার গাড়ী দেখে থামে।কুয়িনা গাড়ী থেকে নামলো। নেমে ওখানেই মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে থাকলো।তিথি কুয়িনাকে দেখে আরও রেগে গেলো কিন্তু তার কি যেন একটা বুদ্ধি মাথার ভেতর খেলে গেছে।
সে ইশানকে জড়িয়ে ধরে বলে,’ওয়াক ওয়াক!আমার না খুব বমি পাচ্ছে সোয়ামি!’

ইশান চোখ বড় করে তাকায় তিথির দিকে।কুয়িনা ওদের কাছে এসে গাড়ীর দিকে তাকাতেই একটা ছেলে গাড়ীর ভেতর থেকে হাতে বেবিদের জামাকাপড় আর খেলনার একটা সেট এনে ইশানকে দেয়।এরপর সে জাপানি ভাষায় কিসব বলে।তিথি ইশানের মুখের দিকে তাকালো।ইশান তো হাসেও না,কাঁদেও না।কোনো রিয়েকশানই দেখালো না।তবে সে বুঝবে কি করে যে কুয়িনা কি বলেছে?

তার পরেও বাচ্চাদের এসব দেখে সে আন্দাজ করলো কুয়িনা হয়ত গিফট দিয়েছে।
তিথি তখন কুয়িনাকে ধরে বললো’অনেক অনেক থ্যাংকস!’
কুয়িনা হাত ছাড়িয়ে নেয় তখন তিথি বলে,’ভাঙ্গবে তবু মচকাবেনা।ফকিন্নি ‘
কুয়িনা এটা আর বুঝলোনা,ইশান তখন জানতে চায় সে এখানে কেন এসেছে।
কুয়িনা নিজের ভাষায় বলে শেষবারের মতন দেখা করতে এসেছে।সে আমেরিকা যাবে পড়াশুনার জন্য।
তিথি আমেরিকা বুঝলো কান পেতে।তারপর ইশানকে ফিসফিস করে বললো,’আপনাকে নিয়ে আমেরিকা যেতে চায়?’

ইশান বিরক্ত হয়ে তখন ঐ লোকদুটোকে ইশারা করে।তাই ওরা দুজন এসে তিথিকে ধরে বাসার ভেতর নিয়ে যায়।যাবার সময় তিথি বলে,’আপনি একটা খারাপ স্বামী।এই লোকগুলোকে বলতেন কুয়িনাকে উঠিয়ে নিয়ে যেতে,সেটা না করে নিজের বউকে উঠিয়ে নিয়ে যেতে বললেন’

গিয়াসউদ্দিনকে সবাই বাসায় নিয়ে এসেছে।তিনি বিছানায় শুয়ে শুয়ে বলছেন’কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা কমলা’
পিংকি বাবাকে আপেলের জুস বানিয়ে দিয়ে নিজে আপেলের রস তুলা দিয়ে চোখের নিচে লাগাচ্ছে বসে বসে।পান্না আজকে আসার পথে একটা নার্সারীতে কমলা গাছ দেখেছিল।খালামণির টাকা দিয়ে সেই গাছ কিনে ছাদে লাগিয়ে দিয়েছে। সবসময় বিদেশী জিনিসের প্রতি আকর্ষণ না রেখে দেশী জিনিস ও ব্যবহার করা উচিত।
দিনশেষে দেশী পাশে থাকে,বিদেশী চলে যায়। ‘

গাছটা লাগিয়ে পান্না সিঁড়ি দিয়ে নামছিল ঠিক সেইসময় ছাদের পাশের কলা গাছটা অনবরত নড়ছে দেখে সে একটু কাছে আসে বিষয়টা পরিষ্কার ভাবে জানার জন্য।
সেদিনের সেই চোর দুটি উঠছে গাছ বেয়ে।তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছিলো।
পান্না দুটো লোককে উপরে উঠতে দেখে নিজে গিয়ে টাংকির পেছনে লুকিয়ে পড়ে।এরপর দেখতে থাকে এখানে কি ঘটছে।

সেই চোর নং ১ হাতে একটা কমলা গাছ নিয়ে উঠলো,এরপর পরের চোরটা হাতে কোদাল নিয়ে উঠেছে।
তারা জানতে পেরেছে গিয়াসউদ্দিনের হার্ট এটাক হয়েছে।তাই চুরির দায়ে মৃত্যুদণ্ড তারা ভাবতেও পারেনা।ঐ গিয়াসের কিছু হয়ে গেলে তখন পুলিশ তো এর তদন্ত করবে।এরপর যদি ওরাই দোষী সাব্যস্ত হয়?

‘ভাল করে গাছটা পুঁতে দে মনির!’
‘ভাইয়ে এখানে যে আরেকটা কমলা গাছ’
‘এ্যাঁ!তার মানে কি আমাদের বাহিরেও আরেকটা চোর আছে? ‘
‘না না!টবে লাগাইছে তার মানে বাসার কেউ এ কাজ করছে।আচ্ছা ভাইয়ে এই গোলাপ গাছ থেকে একটা ফুল আমি নিই?’

‘তুই গোলাপ ফুল দিয়ে কি করবি?’
‘সারাদিন গাছগাছালি তে থাকি তো তাই গায়ের থেকে কেমন একটা গাইচ্ছা গাইচ্ছা গন্ধ আসে।বউয়ে কইছে গোলাপ জল দিয়া গোসল করলে সব গন্ধ দূর হই যাইবো’
‘এ্যাহ!গিয়াসের বংশের ব্যাপারে তোর কোনো ধারণা আছে?সামান্য কমলা ছিঁড়ে খাওয়ায় ব্যাটার হার্টে সমস্যা দেখা দিছে,আর গোলাপ ছিঁড়লে জানি বংশের কোন বাতি নিভে যায়।না না বাপু!এতবার জেল খাটতে পারমু না।পরে দুই জেলে জেলে কাটাকাটি করে একেবারে ফাঁসিই হই যাইবো’
পান্না সব দেখছে আর মিটমিট করে হাসছে।

তখন মনির বললো,’এটা তো চারা গাছ।চারা গাছে কমলা কসটেপ দিয়ে লাগানো কি উচিত হবে?’
‘কমলা দেখলে গিয়াসের প্রাণ ভরে যাবে।সে পুরান কমলার শোক ভুলবে।নে ভাল করে কসটেপ লাগা’
দুজন মিলে কসটেপ দিয়ে কমলা একটা গাছের মধ্যে লাগিয়ে এবার চললো বাড়ির পথে।ছাদ থেকে নামার সময় মনিরের পকেট থেকে সরষে তেলের বোয়াম একটা নিচে পড়ে যায়।তখন পনির বলে,’তুই পকেটে করে সরষে তেল নিয়ে ঘুরোস কেন?’

‘আজ পুকুরে গোসল করবো তো তাই সরষে তেল নিছি’
‘এখন এটা যতবার পকেটে পুরবি ততবার পকেট থেকে পড়ে যাবে।তোর আর সরষে তেল মাখতে হবেনা।তেল ফেলো নেমে পড়’

মনির ও মাথা নাড়িয়ে সরষে তেলের বোয়াম খুলে সব তেল গাছে ঢেলে দিলো।
পনির তখন সেটা দেখে বললো,’ইশ রে এমন করলি কেন!’
‘তুমিই তো বললে তেল ফেলে নামতে’

যদি তুমি বলো পর্ব ৩৭

‘যা বেকুব!তাই বলে গাছেই ফালাবি?আমার মনে পড়ছেনা কলা গাছে তেল দিলে কি যেন একটা হয়!’
মনির আর দেরি না করে গাছ ধরে নামতে গিয়ে হাত-পা পিছলে ধপাস করে নিচে পড়ে গেছে।তখন পনির বললো ‘হুমমম মনে পড়েছে।কলাগাছে তেল দিলে সে গাছে আর উঠা যায়না রে মনির!কিরে তুই কই!এত জলদি নেমে গেছিস🐸?’

যদি তুমি বলো পর্ব ৩৯