যদি তুমি বলো পর্ব ৩৯

যদি তুমি বলো পর্ব ৩৯
আফনান লারা

কুয়িনার ভালবাসাটুকু বরাবরই এক তরফা ছিল।ইশান কখনওই তাকে ভালবাসেনি।কিন্তু ইশান তাকে যেভাবে বিপদ থেকে বাঁচিয়ে এসেছিল কুয়িনার মনে হতো সেও হয়ত কুয়িনাকে ভালবাসে ওরই মতন।
তিথির কথা জানলে হয়ত কুয়িনা মনে ভালবাসার বীজ বুনতোনা।

সে সবকিছু সোজা করে কুয়িনা ইশানকে জানায়,এটাও জানায় ইশানের পছন্দ করা ছেলেটিকে সে বিয়ে করতে পারবেনা।পড়ালেখার জন্য চলে যাচ্ছে অন্য দেশে।শেষবারের জন্যই দেখা করতে এলো।
কিন্তু ইশান একবারও কুয়িনাকে ভেতরে এসে বসতে বলেনি,সে কখনওই কুয়িনাকে সুযোগ দিতো না,,, যে সুযোগে কুয়িনার মনে হয় তার মনে প্রেম আছে ওর জন্য।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

তিথি বসে বসে ভাবছে ওখানে এত সময় ধরে কি এমন কথা বলছে তারা,ঠিক সেইসময় ইশান বাসায় ঢোকে। তার কর্মচারীদের চলে যেতে বলে এবার।তিথি ইশানের মুখ দেখে বোঝার চেষ্টা করছে কিছু বোঝা যায় কিনা।নাহ,কিছুই বুঝতে পারলোনা সে।তাই হতবাক হয়ে শুধু চেয়েই থাকলো।
ইশান অফিসের পোশাক পরছে নিরব হয়ে,তিথি তখন দরজার এক পাশ ধরে দাঁড়িয়ে বলে,’কুয়িনার জন্য মন কেমন করছে?’

‘না’
‘তাহলে মন এত খারাপ কেন?’
‘খারাপ কারণ কুয়িনা মিথ্যে জেনে চলে গেছে ‘
তিথি তখন জানতে চাইলো কিসের মিথ্যে?
জবাব দিলো না ইশান।হাতে টাই নিয়ে তিথির সামনে এসে দাঁড়ায় সে,এরপর টাইটা তিথির হাতে দিয়ে ইশারা করে পরিয়ে দেবার জন্য।

তিথি টাইটা উল্টে পাল্টে বলে, ‘আমি তো টাই পরাতে পারিনা।’
ইশান তখন নিজের টাইটা পরতে পরতে বলে,’আর কি পারিস না?’
‘বাকি সব পারি’
‘কি কি?’

তিথি তখন বলে সে শার্ট,প্যান্ট পরাতে পারে।তার এমন আজগুবি কথায় ইশান কোনো রিয়েক্ট করলোনা।অফিসের কিছু কাগজপত্র গুছিয়ে নিয়ে চলে আসলো বাহিরে। তিথি ওর পিছু পিছু আসতে আসতে জানতে চাইলো সে কখন ফিরবে।

ইশান থামে এরপর বলে তার আসার সাথে তিথির এ কথা জেনে কি কাজ?
তিথি আমতা আমতা করলো।কিন্তু সঠিক উত্তর টা বললোনা।
ইশান চুপচাপ চলে গেছে।তিথির আজ বলতে ইচ্ছে করছিল এই যে ইশান তাড়াতাড়ি আসলে তারা দুজন গল্প করবে।

কিন্তু বলতে যেয়েও সে পারেনি।মুখ আটকে যায় অর্ধেকেই।
সে যদি ইশানের প্রতি অনুভব করা টানের কথা উল্লেখ ও করে তাও হয়ত ইশানের কাছে নেহাত ফাজলামোই মনে হবে।কারণ টা অনেক বড় কবিতার লাইন।
তিথি সোফায় বসে টিভি অন করে।সব জাপানী চ্যানেল।একটা জাপানী সিনেমা চালু করে সে ওটা দেখতে দেখতেই ঘুমিয়ে যায়।মেইডরা বাসার সব কাজ করে চলে যাবার সময় দারোয়ানকে জানিয়ে যায়।ইশানের নির্দেশ ছিল তিথি ঘুমে থাকলে যেন তাকে ওঠানো না হয়।

তিথি চোখ খুলে দেখে চারিদিকে অন্ধকার।মেইডরা যখন গেছে তখন বিকাল ছিল বলে তারা আলো জ্বালিয়ে যায়নি,যার কারণে রাতের অন্ধকার নামতেই সব আঁধার হয়ে গেলো।তিথি একা একা অন্ধকারে হাঁটছে একটা লাইট খুঁজে পাবার জন্য,হঠাৎ তার মনে হলো সুইমিং পুলের দিকে কিছু একটা জ্বলছে।

সে আলোর খোঁজে এগিয়ে এসে দেখে সুইমিং পুলের সম্পূর্ণ কিণারায় ছোট ছোট বাতি জ্বালানো।
তিথি ভাবছে হয়ত প্রতি সন্ধাবেলাতেই এই আলো জ্বলে।কিন্তু নাহ,এটা আজকেই জ্বলেছে।
তিথি আর বাসায় গেলোনা,ওখানেই বসে বসে পানিতে হাত বুলাচ্ছিল,সেসময় বাসার ভেতর কিসের একটা আওয়াজ পেয়ে সে ভয় পেয়ে যায়।এখন তো কেউ থাকার কথা না,তবে বাসায় কে?

ভয় পেয়ে তিথি সুইমিংয়ের কোণায় গিয়ে বসে পড়ে আর দোয়াদরুদ পড়তে থাকে।
কালো পোশাকের একজনকে আবছা আবছা দেখা যাচ্ছিল।তিথি দেহের গড়ন দেখে শুরুতে ইশান ভাবলেও কণ্ঠস্বর অচেনা ঠেকলো।তার ভয়টা আরও বেড়ে যায়।সে নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারেনা।ঐ লোকটার হাতে টর্চ লাইট ছিল।

ইশান বাসায় ফেরে তার থেকে এক ঘন্টা বাদে।সে বাসায় ঢোকার আগে দারোয়ানকে কারের চাবি দেয় পার্ক করার জন্য তাই প্রতিদিনের মতন চাবিটা সে বাড়িয়ে ধরে ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছিল।তার কথা বলা শেষ তাও দারোয়ান ফেদার এখনও তার হাত থেকে চাবিটা তুলে নিলোনা।
ইশান অবাক হয়ে সাইডে চেয়ে দেখে ফেদার এখানে নেই।
ফেদারকে ডাকতে ডাকতে ইশান কলিংবেলে নক করে।

মিনিট পাঁচেক পরেও কারো কোনো সাড়া না পাওয়ায় ইশানের ভয় হলো।সে ইন্টারকমে কল দিতে থাকলো। তাও কারোর কোনো সাড়া না পেয়ে ইশান বাধ্য হয়ে পকেটে থাকা এক্সট্রা চাবি দিয়ে দরজা খোলে।
ভেতরে ঢুকেই সে তিথির নাম ধরে ডাকতে ডাকতে চারপাশে ওকে খুঁজতে থাকে।
কিন্তু আফসোস তিথি কোথাও নেই।ইশান সুইমিং পুলে বিচসিট থেকে একটা লেটার পায়।যেটাতে জাপানি ভাষায় লেখা ছিল তারা তিথিকে তুলে নিয়ে গেছে।তার বিনিময়ে তাদের ঠিক কি লাগবে তা পরবর্তীতে তিথির কিছু অংশের সাথে প্রেরণ করা হবে।

ইশান পুল সাইডে বসে বসে চিঠিটা দেখছিল।এর আগেও কুয়িনার সাথে একই ঘটনা ঘটেছিল।কিন্তু কুয়িনা ইশানের কিছু লাগতোনা বলে বিষয়টা বেশি আগায়নি।কিন্তু এখন মামলা সিরিয়াস।
তিথি যে ইশানের স্ত্রী এটা হয়ত ওরা কোনোভাবে জেনে গেছে।ইশান এটাও জানে ওরা আসলে কি চায়।
ওরা ইশানের পুরো কোম্পানির পাওয়ার অফ এটর্ণি নিজেদের নামে করে দিতে বলবে।

ইশান চুপচাপ মাথা ঠাণ্ডা করে ভাবছে কি করে সে তিথিকে বাঁচাবে।
বিনা কারণে তিথির কোনো ক্ষতি করবেনা এ ব্যাপারে ইশান নিশ্চিত কিন্তু যদি করেও ফেলে!
অবশ্য তিথি তো আর কুয়িনার মতন না।ও মাথা খাটালে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে।কিন্তু তাকে তো এভাবে ছেড়ে দেয়া যায়না।কিছু না কিছু করে তিথিকে বাঁচাতেই হবে।ওর উপর ভরসা নাই।যত মারামারি সব ইশানের সাথেই পারে,বাহিরের কারোর সামনে ভেজা বেড়াল।

তিথিকে সুন্দরমতন চেয়ারে হাত পা বেঁধে বসিয়ে রেখেছে সেই দলের লোকজন।তিথি বসে বসে ভাবছে কখন ইশান আসবে,নায়কের মতন এন্ট্রি নিবে আর দুমদাম মারবে।ইশ কি ভাল সিন হবে তখন।তিথির আর তর সইছেনা।
কিন্তু এতক্ষণ কেন লাগছে?

ও হ্যাঁ ইশান তো বাসায় দেরি করে ফেরে।তাই বলে এখনও ফিরলোনা?
তিথির খিধে পেয়েছিল। সে বাংলা,ইংরেজী,হিন্দি,জাপানি যা পেরেছে তাই বলেছে তাও লোকগুলো ওর কোনো কথাই বুঝেনি।একটা লোক এমন ভাব করছিল যেন সে বুঝতেছে কিছু কিছু।

তিথিও খুশি হয়ে যায়।সে লোকটা ইশারা দিয়ে বলে,’খানাপিনা ওয়াংফু,খাবো চাবাই চাবাই কিংফু’
লোকটা মাথা চুলকাচ্ছে। এটা কোন জাতের ভাষা তাই বুঝতেছেনা লোকটা।
তিথি যখন বুঝলো লোকটা তার কথা বুঝতেছেনা তখন সে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
এরই মাঝে একটা লোক একটা দলিল এনে তিথির সামনে ধরে এরপর কিসব বলে ওর হাত খুলে হাতে কলম ধরিয়ে দেয়।

তিথি কাগজটা দেখে বলে,’সম্পত্তি লাগবে আপনাদের?কিন্তু আপনারা কি জানেন?আপনাদের ইশান স্যার তো আমার নামে একটা ল্যাট্রিন ও রেজিস্ট্রি করে দেয়নি,বাড়ি গাড়ি তো দূরেই থাকুক।আমি যে সই করবো এই সইয়ে আপনারা কিছুই পাবেন না’

লোকটা তারপরেও সই করার জন্য তিথিকে বাধ্য করতে থাকে।তিথিও কম না।সে রেগেমেগে কলম দিয়ে পুরো দলিলে ব্যাঙ,ব্যাঙয়ের ছাতা আঁকিবুকি করে রেখে দেয়।
লোকটা তখন একটা চিৎকার করে চলে গেলো।তিথি এতটা ভয় পেয়েছে যে সে ভাবছে তাকে বুঝি ধরে পিটাবে।কিন্তু নাহ,তারা ইশানকে ভয় পায় বলে তিথিকে একটা টোকাও দেয়নি।

তিথি এবার আবারও ঐ লোকটাকে ইশারা করে খাবার আনতে বলে।লোকটা ওমনি ভেতরের রুমে গিয়ে আসার সময় একটা মদের বোতল নিয়ে এসে তিথিকে ধরিয়ে দেয়।

যদি তুমি বলো পর্ব ৩৮

তিথি তো দেখেই বুঝেছে এটা মদের বোতল।তখন সে বললো,’এই গাধার দল!মদ খাবোনা চিয়াংপু!!বুঝোস না কেন!উনপু উনপু ভাত ভাত?ভাত চিনো?ভাত খাবো!মদ খেয়ে পেট ভরবে না তো রে বাপ!জাপানি ভাষায় ভাতকে কি বলে!
এই ব্যাডা!তোমরা ভাতকে কি বলো?রাইস রাইস?রাইসকে কি বলো তোমরা?’

যদি তুমি বলো পর্ব ৪০