যদি তুমি বলো পর্ব ৪০

যদি তুমি বলো পর্ব ৪০
আফনান লারা

তানিয়ার বিয়ের তারিখ সামনে চলে আসায় সে ফোন করে ইশানের হাতে পায়ে ধরছে যেন সে তিথিকে নিয়ে দেশে ফিরে।শুধুমাত্র ১০দিনের ব্যাপার।
ইশান রাজি হচ্ছেনা কারণ তার অনেক কাজ আছে যেগুলো এখনও সম্পূর্ন হয়নি।সে কথা শুনে তানিয়া তো বলেই দিলো সে আসতে না পারলে যেন তিথি একাই চলে আসে।আপন বোন বলে কথা,এটা কিছুতেই ছাড় দেয়া যাবেনা।তিথির ও ইচ্ছা আছে কিন্তু ইশান না বললে তো আর আসা যায়না,টিকেট থেকে শুরু করে সব খরচ ইশানই বহন করবে।

এদিকে ইশানের কাজ এক দিকে আর তিথি এক দিকে।কাজ বন্ধ করে দিবে তাও তিথিকে সে একা কোথাও যেতে দিবেনা।
অনেক ভাবনাচিন্তা করে শেষে ইশান রাজি হয়।তিথির তো আনন্দ আর ধরেনা।এই জাপানিদের মাঝে থেকে সে তার মাতৃ ভাষাটাই ভুলে যাচ্ছিলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

কি করে যে দেশে ফিরবে,এবার দেশে ফিরলে রাস্তার ল্যাম্প পোস্ট গুলো জড়িয়ে ধরে বসে থাকবে যাতে ইশান আর ওকে জাপানে নিয়ে আসতে না পারে।
এসব ভেবে তিথি মিটমিট করে হাসছিল তখন ইশান এসে বলে,’এত হেসে লাভ নেই,আমি ঠিকই আসার সময় তোকে ধরে নিয়ে আসবো ‘

তিথি খাটে বসে পা দোলাতে দোলাতে বলে,’হুহ!একবার যদি গিয়ে উঠি।তারপর দেখি কি করে আনেন।আমার দম বন্ধ হয়ে আছে এখনও।দেশের হাওয়া লাগবে’
‘ওকে ফাইন।তুই যদি না আসিস তবে আমি জাপানে এসে কুয়িনার সাথে সংসার করবো ‘
এটা শুনে তিথি রেগে গেলো।দাঁতে দাঁত চেপে বললো,’আমি যাব না দেশে’

‘কেন?বোনের বিয়ে খাবিনা?’
‘নাহ!’
‘তাহলে সংসারের প্রতি মায়া আছে তোর?বিশ্বাস হচ্ছেনা।ভাল কথা মাথায় এসেছে।আমার তো এখনও প্রতিশোধ নেয়া হয়নি’
‘আর কত অত্যাচার করলে আপনার এই প্রতিশোধের ঘড়া পূর্ণ হবে?’

রিদম তানিয়ার বিয়ের কার্ড দিতে এসেছে পিংকিদের বাসায়।শুধু কার্ডের জন্য নাহ,আঙ্কেলকে একবার দেখে আসতেও বলেছে বাবা মা।
রিদমকে যেন এভারেস্ট জয় করার টার্গেট দিয়েছে বাবা।এত কঠিন কাজ কেউ এত কম বয়সী একটা ছেলেকে দেয়?
অনেকক্ষণ ধরে ওদের মেইন গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে রিদম।কি করে কি করবে সেটাই পরিষ্কার হতে পারছেনা।অনেক অংক কষাকষি করে সে কলিংবেলে চাপটা দিয়েই দেয়।

পিংকির মা এসে দরজা খুললেন।তাকে দেখে রিদম হাঁপ ছেড়ে বাঁচে।এরপর মুচকি হাসি দিয়ে ভেতরে এসে বসে সোফায়।তানিয়ার বিয়ের ব্যাপারে বলে কার্ডটা ধরিয়ে দেয় পিংকির মায়ের হাতে। এরপরই পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছিল রিদম কিন্তু আন্টি বলে উঠলেন,’পিংকির বাবার সাথে দেখা করবেনা?’
যাঃ হয়ে গেলো!রিদম ঢোক গিলে সাড়া জানায়।এরপর হাঁটতে থাকে করিডোর দিয়ে সোজা পিংকির বাবার রুমের দিকে।

‘আআআআসসসাবো আঙ্কেল?’
‘বেয়াদবের বাচ্চা চোরের বাচ্চা চোর!তুই নিবিই যখন আমার ঘরের অলঙ্কার জাতীয় কিছু নিতি।তুই কেন আমার কলিজার টুকরা,জানের জান,আমার কমলা গাছের কমলাটা নিবি!আমি শুধু একবার পাই!দেখিস তোর কি হাল করি!চামড়া তুলে বিন ব্যাগ বানাবো!’

গিয়াস সাহেব কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছিলেন।কথাটা বলে তিনি আসতে বললেন ভেতরে।
রিদমকে রুমে ঢুকতে দেখে তার মেজাজটা গেলো খারাপ হয়ে!
‘কি আশ্চর্য! এই ভর দুপুরে কেউ রোগী দেখতে আসে?’
এ কথা শুনে রিদম ভয়ে ভয়ে বলে সে বিয়ের কার্ড দিতে এসেছে।

‘বিয়ে?কার বিয়ে?তোমার বাবাও না কেমন ধাঁচের মানুষ।মেয়ে বিয়ে দেয়া শুরু করে দিতেই আছেন,দিতেই আছেন।এত টাকা আসছে কোথা থেকে? আমি তো জানতাম উনি ঘুষ খান না’
‘না আসলে আঙ্কেল,,,বাবা তো জমিয়ে রেখেছিলেন’
‘তাও হতে পারে।আসলে ডাকাতি চুরি সব এই গিয়াসের কলোনীতেই হয়।তোমরা তো নবাবী কলোনীতে বসবাস করো!’

রিদম চুপ করে আছে।তখন গিয়াস সাহেব পান্নার নাম ধরে ডাকলেন। পান্না সবেমাত্র গোসল করে বেরিয়েছিল।বাবার গলা শুনে ছুটে আসতেই রিদমের সাথে এক ধাক্কা খেলো।
রিদম কোনোরকমে দু কূল বাঁচিয়েছে।পড়লোনা ছিটকে।
‘পান্না তোর রিদম ভাইয়াকে বিকালের নাস্তা করে যেতে বলবি।আর পিংকি কোথায়?’
‘আমি বের হয়েছি,এবার বুবু গোসলে গেছে’

‘ওর দরজার বাহিরে দিয়ে লক করে দে।আমি চাইনা দুই চুম্বক কাছাকাছি হয়ে আটকে যাক’
রিদম হালকা কেশে বললো,’না থাক আঙ্কেল পরে একদিন এসে নাহয় খেয়ে যাবো।’
‘পরে আবার কেন আসবে?আজকেই শেষ খানা খেয়ে যাও।পান্না যা ওরে নাস্তা দে’
‘বাবা এখন তো দুপুরের ভাত খাওয়ার সময়’

‘ওহ! ভাত খাইবা?’
‘না না,নাস্তাই ঠিক আছে।আমি ভাত খেয়েই এসেছি’
পান্না নাস্তা আনতে চলে গেছে।রিদম ও পিছু পিছু যাচ্ছিল ওমনি গিয়াস সাহেব বললেন,’খামোশ!তুমি কই যাচ্ছো?’
‘ইয়ে ঐ যে নাস্তা করতে’
‘এখানে করবা নাস্তা।ঐদিকে যাও কেন?পিংকিকে দেখতে?’
‘না না।আচ্ছা বসছি’

এই বলে রিদম ওনার সামনে একটা চেয়ারে বসে পড়ে।কি মহা ঝামেলায় পড়তে হলো এই বিয়ের কার্ড দিতে এসে।
‘তোমার ছোট দুলাভাই কি চাকরি করে?নাকি তোমার মতই বেকার!হাহাহাহাহাহা’
রিদম মনে মনে বলছে,’ক্লাস সেভেনের ছেলের কাছ থেকে কি বিসিএস ক্যাডার হওয়া আশা করে এই লোক!’
‘কি হলো বলছো না যে?’
‘জ্বী,দুলাভাই চাকরি করে’
‘ভালো!তা যৌতুক কিছু চেয়েছে??’

ইশান তিথিকে সব গোঁছগাছ করতে বলে একটু অফিসে গেছে,দেশে ফেরার আগে অফিসের কাজ কমপ্লিট করে তারপর যাবে ভেবে।তিথিকে বারবার করে বলে গেছে যেন বাসা থেকে বের না হয়।
কিন্তু তিথি তো বের হবেই।সে বাসার কাছে একটা শপিংমলে সুন্দর একটা জামা দেখেছে, এটা সে তানিয়াকে কিনে দিবে।তাই সে ইশানের পকেট থেকে টাকা সরিয়ে বেরিয়ে গেছে।পরে বাংলাদেশ গিয়ে টাকাটা ফেরত দিবে।আর বিদেশ থেকে ফেরার সময় কিছু না নিয়ে গেলে কেমন দেখায়!

সেই শপিংমলে এসে তিথির যেটাই দেখছে সেটাই ভাল লাগছে কিন্তু তার কাছে তো এত টাকা নাই।
আজকে ইশান বাসায় তাড়াতাড়ি ফিরে আসলো কারণ তার তিথিকে নিয়ে সন্দেহ জাগছিল মনে।বাসায় এসে যে সন্দেহ সে করেছিল তাই হলো।তিথি বাসায় নেই।
মাথাটা গেলো গরম হয়ে।এখন কি করার!

‘আরে ব্যাডা ওয়ানফু!৫০টাকা কমান তো!নাহয় আমি এটা নিতাম না।এটা কি দেখেন!মশারি দিয়ে জামা বানাই নাম দিছে নেটাংপু!
আচ্ছা নিলাম নেটাংপু!তাই বলে দাম এত বেশি চাইবেন?৫০টাকা কমান নাহয় আমি চলে যাচ্ছি বাংলাদেশ’
দোকানদার তিথির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।এটা কোন ধরনের ভাষা সে ব্যবহার করছে আর এটা মানে টা কি হতে পারে?

তিথি আবারও কমাতে বলে কিন্তু দোকানদার কিছু না বুঝে আস্তে করে চলে গেলো ওখান থেকে। তিথি রেগেমেগে শেষমেশ যে দাম ওরা বলেছে সে দামেই জামাটা কিনে হাঁটা ধরতেই ইশানের মুখোমুখি পড়লো।
ইশান অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।

‘আরে আপনি এসেছেন,ভাল করেছেন। এই দোকানদার আমার থেকে টাকা বেশি চেয়েছে।কিছু বলেন’
ইশান তিথির হাত ধরে টানতে টানতে চললো।তিথিকে আর কিছু বলার সুযোগই দিলোনা।
বাসায় আসার পর ইশান তিথিকে খুব করে বকলো।চিৎকার করলো,কেন সে না বলে বেরিয়েছে।এত মানা করার পরেও কেন একা একা বেরিয়েছে।

তিথি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল শুধু।
‘আমার চেয়ে বেশি বুঝিস?আমি কি জাপানের মিনিস্টার যে তুই যে কোণায় থাকবি তোকে খুঁজে বের করতে পারবো?যেভাবে বিনা ভয়ে ঘুরছিস ফিরছিস মনে হয় তোর কাছে আমাকে ফিল্মের নায়ক মনে হয়,বারবার গুম হবি আর বারবার আমি রক্ষা করবো’

‘অপহরণকারীরা যেটা করেছে সেটাতে আমার হাত ছিল?আমি যাবার আগে সবার জন্য কিছু কিনতে চেয়েছিলাম।এটাই আমার দোষ।আমি আর কোনোদিন আপনার সাথে জাপানে ফিরবোনা,এটার জন্য আপনি মেরেই ফেলুন যদি তাও ফিরবোনা’
এটা বলে তিথি চলে যাচ্ছিল তখনই ইশান ওকে আটকে ধরে।ঠাণ্ডা মাথায় ধীরে ধীরে বলে,’মেরে ফেলার অনুমতি দিলি?’

যদি তুমি বলো পর্ব ৩৯

‘হ্যাঁ,মেরে ফেললে এ জাত যাক’
ইশান তখন তিথির ওড়না মুঠো করে আরও শক্ত করে ধরে বললো,’তবে আজ মেরেই ফেলি।জাতকূল শেষ হয়ে যাক।শেষ হয়ে নতুন কিছুর জন্ম হোক,ঝড় থামুক!’

যদি তুমি বলো পর্ব ৪১