প্রেয়সী পর্ব ৫৪(২)

প্রেয়সী পর্ব ৫৪(২)
নন্দিনী নীলা

ফুয়াদ আর মধু কাজী অফিসের ভেতরে এসে দেখল আরেকটা কাপল বসে থাকে বিয়ে করার জন্য। কিন্তু তারা হয়তো বাসা থেকে পালিয়ে এসেছে। তাদের সাথে আছে একজন বন্ধু ছেলের। তারা সাক্ষীর অভাবে বিয়ে করতে পারছে না। ছেলেটা নিজের অনেক ফ্রেন্ড কে কল দিচ্ছে কেউ ধরছে না।

তারা নাকি দুই ঘন্টা ধরে বসে আছে কিন্তু কাজ হচ্ছে না। ফুয়াদ আর মধু ভেতরে এসে বুঝতে পারল ওরা নিজেরাও কোন সাক্ষী নিয়ে আসে নি। তাহলে কি ওদের বিয়েটা ও হবে না নাকি। মধু ওই মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা লাল বেনারশির শাড়ি পরে বসে আছে‌। মাথায় লাল দুপাট্টা। মধু চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তাদের দেখছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” সাক্ষী ছাড়া বিয়ে হবে না। আগে সাক্ষী নিয়ে আসুন।” কাজী গম্ভীর গলায় বলল। ফুয়াদ এতোক্ষণ ওই কাপল দের সমস্যা জেনে নিয়েছে। সব শুনে ফুয়াদের সি আইডি মাথা থেকে বের করল সলিউশন। ওই কাপল টার বিয়ে আগে হলো। তাদের বিয়ের সাক্ষী হলো মধু আর ফুয়াদ। তারপর মধু আর ফুয়াদ বিয়ের কার্যক্রম শুরু হলো। ওদের বিয়ের সাক্ষী হলো ওই দু’জন কাপল, বন্ধু , ও কাজী।

কাজীকে জোর করে সাক্ষী বানিয়েছে ফুয়াদ। এক প্রকার থ্রেট দিয়ে। বলেছে,,” আপনি যে পরিবার ছাড়া বিয়ে দেন অসংখ্য সেই খবর যদি পত্রিকায় লেখায় হয় ভালো লাগবে? আমি কিন্তু একজন সাংবাদিক।”
ভয়ে কাজী রাজি হয়েছে। কবুল বলার সময় ফুয়াদ মধুর নিকাব খুলে দেয়।

তারপর বলে,,” আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কবুল বলো।”
মধু মুখ কালো করে কবুল বলে। বিয়ে সম্পুর্ণ হলো।
ফুয়াদ মধুর কপালে চুমু খেয়ে বলল,,” লাভ ইউ ব‌উ।”
ওই কাপল টার নাম, শাহিন, বিথী। শাহিনের বন্ধু কাজ শেষ করেই চলে গেছে। এখানে থাকলে বন্ধু আর বন্ধুর ব‌উকে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে তাই ভয়েই পালিয়ে গেছে। ফুয়াদ আর মধু বাইরে এসে দাঁড়ায় দেখে শাহিন আর বিথী ও দাঁড়িয়ে আছে চিন্তিত মুখে।

ফুয়াদ ওদের দুজনের সাথে করে বাসায় আসে। সারা রাস্তা মধু বিথীর সাথে কথা বলে সব শুনে। বিথীর বিয়ে ছিল আজ বিথী গতকাল পালিয়ে এসেছে। তারপর শাহিনের বন্ধুর বাসায় ছিল। আজ বিয়ে করতে এসেছে। শাহিন স্টুডেন্ট এখনো। দুজনের কারো বাসা থেকে ওদের সম্পর্কটা মেনে নেয়নি তাই দুজনেই পালিয়ে এসেছে। মধু গভীর মনোযোগ দিয়ে বিথীর কথা শুনল।

বিথী মধু কে জিজ্ঞেস করল,,” তোমরা ও কি পালিয়ে এসেছ?”
মধু ভাবছে কি বলবে। ওরা তো পালিয়ে আসে নি। কিন্তু বিয়েটা তো পালিয়ে লুকিয়েই হলো। মধু বলল,,” হ্যা।”
এটা শুনে বিথীর চোখ মুখ উজ্জ্বল দেখা গেল‌। মধু বলল,,” তুমি কি শাড়িই পরে থাকবে চেঞ্জ করবে না?”
” আমি তো সাথে করে কিছুই আনিনি।” মুখ নিচু করে বলল বিথী।

মধু কে অনলাইনে অর্ডার করে ড্রেস এনে দিয়েছে ফুয়াদ। মধু এক সেট বিথী কে দিল।
এই বাসায় রুম একটা আর বসার রুম একটা। আছে চারজন মানুষ কে কোথায় থাকবে কে জানে। মধু রুমে থেকে উঁকি মেরে দেখল ফুয়াদ আর শাহিন কথা বলছে। মধু উঁকি মেরে এসে আবার বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়াল।

এমন নাটকীয় ভাবে বিয়ে হলো যে ও থমকে গেছে। উদাস হয়ে রেলিং পেরিয়ে আরেকটা সাদা বাসার দিকে তাকিয়ে আছে মধু। পেছনে থেকে এক জোড়া হাত মধুর পেট জড়িয়ে কাঁধে থুতনি ঠেকালো। মধু শিউরে উঠল। কোন বাক্য বিনিময় করল না। না কথা বলল ও আগে গভীর ভাবনায়। ফুয়াদ ওর কানে ফিসফিস করে বলল,,” মিস থেকে মিসেস হয়ে অনুভূতি কেমন সুইটহার্ট?”

মধু যন্ত্র মানবের মতো দাড়িয়ে আছে।
ফুয়াদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মধু কে টেনে ওর দিকে ঘুরিয়ে বলল,,” আমাকে বিয়ে করে তুমি কি অখুশি?”
সিরিয়াস মুখ করে বলল কথাটা ফুয়াদ। মধু ফুয়াদ কে দুহাতে জড়িয়ে ওর বুকে মাথা রাখল। ফুয়াদ নিজেও জড়িয়ে নিল ওকে। মধু ফুঁপিয়ে উঠে কান্না মাখা গলায় বলল,,” আপনার জন্য এই কয়দিন আমার কতটা কষ্টে কেটেছে জানেন?”

ফুয়াদ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,,”জানি তো।”
ওয়াশরুমের দরজা খুলে বিথী বেরিয়ে এল‌। মধু দরজা খোলার শব্দ পেয়েই ফুয়াদ কে ছেড়ে দিছে। বিথী বেরিয়ে মধু কে ডেকে উঠে। মধু ফুয়াদ কে রেখেই রুমের দিকে পা বাড়ায়। ফুয়াদ ওর হাত চেপে ধরে,,” কি হলো? ডাকছে শুনছেন না?”

ফুয়াদ বলল,,” ব‌উয়ের সাথে একটু প্রেম ও করতে পারব না শান্তিতে।”
মধু খিলখিলিয়ে হেসে উঠে ওর কথা শুনে। হাত ছাড়িয়ে রুমে আসে।
বাইরে থেকে খাবার আনা হয় রাতে সেসব ই খাওয়া হয়। খাবারের সাথে ফুয়াদ ফুল নিয়ে আসে। এসে মধু কে নিয়ে রুম সাজাতে লাগে‌। মধু গাল ফুলিয়ে বলল তা দেখে,,” নিজের বাসরঘর নিজেকেই সাজাতে হচ্ছে কি কপাল আমার। পোড়া কপাল, বিয়ে করলাম বিয়ের শাড়ি ছাড়াই।”
ফুয়াদ ওর কথা শুনে বলল,,” এটা তোমার বাসর না সুইটহার্ট।”

” মানে?”
” সুইটহার্ট তুমি দেখি বাসর করতে পাগল হয়ে গেছ?”
মধু থতমত খেয়ে কপট রাগ দেখিয়ে বলল,,” মোটেও না।”
” তাই নাকি? কিন্তু সরি এই রুম সাজানো হচ্ছে শাহিন ভাইয়ের জন্য।”
মধু আর কিছু বলে না। বললেই ফুয়াদ ওকে কি না কি বলবে আল্লাহ জানেন। তাই নিশ্চুপ থাকাই ভালো।
এতোক্ষণ নিজের কথা ভেবে রাগে অসুন্দর করে সাজাচ্ছিল এখন রাগ বাদ দিয়ে মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে লাগল।

কাজ কমপ্লিট করে মধু বলল,,” বাহ আমি কি সুন্দর করে বাসর ঘর সাজাতে পারি। তিন্নির বাসর ঘর সাজানোর দায়িত্ব ও আমিই নেব।”
গর্বিত স্বরে বলল।
” নিজের টা নিজেই সাজিও সুইটহার্ট।”
মধু মুখ ভেংচি কেটে রুম থেকে বেরিয়ে এল।

ফুয়াদ আর মধু এই রাতের বেলা বেরিয়ে এল‌ বাসা থেকে। শাহিন আর বিথী কে ওই বাসায় এক মাস থাকতে পারবে বলে এসেছে। কারণ ফুয়াদ এক মাসের ভাড়া ক্লিয়ার করে রেখেছে। মধু বলল,” আজকে বাসায় যাবেন বলেন নি তো।”

” বাসায় যাচ্ছি তোমাকে কে বলল?”
” তো কোথায় যাচ্ছেন?” অবাক স্বরে বলল মধু।
” বিয়ের পর কোথায় যায়?”
মধু অবুঝ স্বরে বলল,,” কোথায় যায়?”
” হানিমুনে।”

মধু বিষ্ময় এ মুখটা হা করে ফেলেছে। ফুয়াদ ওকে একের পর এক চমক দিয়েই যাচ্ছে।
ওরা একটা অটো নিয়ে এক কিলো এসে থামল। ওরা এসেছে শপিং মলে। কেনাকাটা করে বেরিয়ে মধু দেখল প্রান্ত দাঁড়িয়ে আছে গাড়ি নিয়ে। মধু কে দেখে কেমন আছে জিজ্ঞেস করল। তারপর মধু কে গাড়িতে বসিয়ে দু’জনে কিছু কথা বলল কিছুক্ষণ। বিদায় নিয়ে ফুয়াদ ও এসে ড্রাইভিং সিটে বসল।

মধু চোখ বড়ো বড়ো করে বলল,,” আপনার মাথায় কখন কি চলে বলেন তো? আপনাকে কে কিডন্যাপ করেছে জানার পর ও এতোটা স্বাভাবিক কীভাবে আছেন?”

ফুয়াদ মধুর গাল ছুঁয়ে বলল,,” তো কি করব তোমার ভাইকে কি এর অপরাধে মেরে ফেলব নাকি? তোমার ভাই বলে এমন দুঃসাহস করার পর ও ক্ষমা করে দিলাম নয়ত বুঝিয়ে দিতাম ফুয়াদ কে টাচ করার শাস্তি কি হয়?”
মধু হতবুদ্ধি চোখে তাকিয়ে আছে ফুয়াদের দিকে। ফুয়াদ ওর গাল টেনে দিয়ে সোজা হয়ে বসে গাড়ি স্টার্ট করল। মধু নিজের বাপ ভাইকে সন্দেহ করেছিল।

শুধু করেছিল না শিউর ছিল ফুয়াদের নিখোঁজ হওয়ার পেছনে তাঁদের ই হাত আছে। কিন্তু ওর ধারণা চেঞ্জ হয়েছে সমুদ্র কে হাতেনাতে ধরার পর। ফুয়াদ তো এখনো জানেই না সমুদ্রের হাত ও ছিল। তাই তো ভাবি এতোটা শান্ত কীভাবে আছে। মধু ভাবল এখনি সব বলে দিবে ও তাকাল ফুয়াদের দিকে। ফুয়াদ ও একটু পর পর ওর দিকে তাকাচ্ছে ও তাকাতেই চোখাচোখি হলো।

ফুয়াদের চোখে মুখে সে কি হাসি। মধু মুখ ঘুরিয়ে নিল। ওর বুক কাঁপছে নিজের ভাইয়ের সত্যি জানার পর ফুয়াদের রিয়েকশন কেমন হবে? খুব বেশি কষ্ট পাবে কি? কথাটা বলতে চেয়েও বলতে পারল না মধু। এখন বলে ফুয়াদের এই আনন্দ টা নষ্ট করতে চায় না মধু। কতদিন পর মানুষটাকে কাছে পেয়েছে। তার মুখের হাসি কেড়ে নিতে পারবে না ও।

প্রেয়সী পর্ব ৫৪(১)

মধু সারা রাস্তা মলিন মুখে বসে র‌ইল। ফুয়াদ ওর মলিন মুখ দেখে অনেকবার জিজ্ঞেস করেছে,,” কি হয়েছে মুড অফ কেন?”

প্রেয়সী পর্ব ৫৫