প্রেয়সী পর্ব ৫৪(১)

প্রেয়সী পর্ব ৫৪(১)
নন্দিনী নীলা

সমুদ্র কে নিয়ে মিতুল যেখানে মধু কে আটকে রেখেছিল সেখানে এসেছে। সমুদ্র ফোন কেটে মিতুল কে আবার চেপে ধরে ছিল। মিতুল সবার থেকে আড়ালে গিয়ে সমুদ্র কে সব বলে দেয় মাথা নিচু করে। আর বলে, এসব যেন নাফিসা আন্টি কে না জানায়।

সমুদ্র সব শুনে প্রথমে একটা থাপ্পড় মারে মিতুল কে মধুর সাথে এসব করার জন্য। তারপর বলে ওকে সেখানে নিয়ে যেতে। মিতুল আচ্ছা বলে সমুদ্রকে নিয়ে আসে। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় সেখানে এসে মধু কে পায় না ওরা দুজন। যে দুই ছেলেকে পাহারায় রেখেছিল মিতুল তারা ও মিসিং। ছেলে দুটো কে কল করে মিতুল নাম্বার অফ‌‌। এদিকে সমুদ্র রাগে সারা রুম তন্ন তন্ন করে মধু কে খোঁজে না পেয়ে চিৎকার করে উঠে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” মধু কোথায়? আমাকে ভুল জায়গায় নিয়ে এসেছো কেন?”
সমুদ্রের চিৎকার এ মিতুলের হৃদপিন্ড কেঁপে উঠে ভয়ে। ভয়ে আতঙ্কে ও দিশেহারা হয়ে পরে। মধু কে তো এখানেই রেখে গিয়েছিল ও মধু কোথায়? আর পাহারা দুজন ফোন রিসিভ করছে না কেন? মিতুল সমুদ্রের রাগে লাল হ‌ওয়া মুখশ্রী দেখে ঢোক গিলতে থাকে থেকে থেকে। পাগলের মতো কল দিতে থাকে। মধু কে না পেলে সমুদ্র ওর কি অবস্থা করবে ভাবতেই ওর শরীর অসার হয়ে আসছে ভয়ে‌। সমুদ্র ক্রোধের ফেটে পরে বলে,,” এ্যান্সার মি। কোথায় মধু?”

মিতুল মিনমিন স্বরে বলতে লাগে,,” বিলিভ করো সমুদ্র আমি এখানেই মধু কে আটকে রেখে গিয়েছিলাম। ও এখানে থেকে উধাও হলো কি করে আমি কিচ্ছুটি জানি না।”
” মিথ্যা বলার জায়গা পাও না তাই না। সঠিক কথা বলো মিতুল। না হলে আমার খারাপ রুপ দেখাতে বাধ্য হবো।”
ভয়ে মিতুল মুখ সাদা হয়ে উঠে ও বলে,,” মিথ্যা কথা আমি বলছি না। মধু এখানেই ছিল। আমি নিজে ওকে রেখে দু’জন পাহারা দেওয়ার ছেলে রেখেছিলাম।”

সমুদ্র মিতুলের গলা চেপে ধরল এই পর্যায়ে। মিতুল চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে সমুদ্রের দিকে।
সমুদ্র হুংকার দিয়ে বলল,,” ওই ছেলে দুটো ক‌ই? ওরা মধুর কোন ক্ষতি করলে আই কিল ইউ।”

মিতুলের চোখ উল্টে আসবে এমন মুহূর্তে ওর গলা ছেড়ে দেয়। মিতুল গলা ধরে কাঁশতে লাগে। কল্পনা করে ফুয়াদের কথা। ফুয়াদ ও মধুর জন্য ওকে আঘাত করেছিল। আজ সমুদ্র ও মধুর জন্য ওকে মারতে চাইছে। রাগে দুঃখে ওর এখন হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। দুই ভাই মধুর মধ্যে কি এমন পেল যে ওর জন্য সব করতে পারে? ওকে পাবার জন্য ওর জন্য ও তো কেউ একজন এমন হতে পারত।
সমুদ্রের চিৎকার শুনে চমকে ভাবনা থেকে বেরিয়ে এল মিতুল।

” ওই ছেলে দুটোর নাম্বার দে।”
মিতুল থমকানো চোখে তাকাল সমুদ্রের দিকে ওকে তুই করে বলছে। ও বিলিভ করতাম পারছে না সমুদ্রের কাছে থেকে কখনো এমন ব্যবহার পাবে।
মিতুল ফোন অন নাম্বার বের করে এগিয়ে দিল সমুদ্র কে‌। সমুদ্র এক টানে ওর হাত থেকে ফোন নিয়ে নাম্বার তুলতে লাগল। মিতুল বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে দেখছে সমুদ্রের ছটফটানি।

ও ভয় ভয় কন্ঠে সমুদ্র কে প্রশ্ন করল,,” মধু কে খুব ভালোবাসো তাই না সমুদ্র?”
সমুদ্র হতবিহ্বল চোখে তাকাল মিতুল এর দিকে। মিতুল জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ওর দিকেই চেয়ে আছে। সমুদ্র ওর কথার কোন উত্তর দিল না। নাম্বারে কল দিতে লাগল।

মিতুল এতো কষ্টের মাঝেও বাঁকা হাসতে লাগল। মুখ বাঁকা করে ভাবতে লাগল,,” মধু তোমাকে আর ফুয়াদ কে আলাদা করতে আর আমার কিছু করতে হবে না। এবার যা করার সমুদ্র ই করবে।”
সমুদ্র আর মিতুল বেরিয়ে এল। মিতুল কে রাস্তায় ফেলেই সমুদ্র কোথায় জানি চলে গেল। মিতুল সেদিকে আর লক্ষ্য করল না। ও একটা নাম্বার এ কল দিতে লাগল। ওর মুখে শয়তানি হাসি। গলা এখনো জ্বলছে। এতো শক্ত করে ধরেছিল আরেকটু হলে দম আটকেই মরে যেতো ও।

ফোন রিসিভ করতেই মিতুল তাকে বলল,,” ফুয়াদ কে ছেড়ে দাও। মধু আর ফুয়াদ কে আলাদা করতে সমুদ্র একাই যথেষ্ট।”

সমুদ্র ছেলে দুটোর নাম্বারে অনবরত কল করতে করতে। ও সোজা থানায় এসে হাজির হলো। তাদের কাছে নাম্বার দিল ও মধুর কথা সব বলল শুধু বলল না মিতুল এর কথা। ওকে পুলিশের হাতে দেওয়ার ইচ্ছা নেই কিন্তু এতো সহজে ছেড়ে ও দিবে না ও।
পুলিশরা নাম্বার ট্যাক করে ছেলে দুটোর অবস্থান চিনে ফেলল। তারপর সমুদ্র সহ পুলিশ ছেলে দুটোকে ধরতে বের হলো।

ছেলে দুটো কে একসাথেই পাওয়া গেল। পুলিশ দেখে তারা ভয় পেয়ে গেল। পালাতে চাইল কিন্তু পারল না। সমুদ্র তাদের সামনে পেয়ে আগে মারল কয়েক ঘুসি তারপর জিজ্ঞেস করতে লাগল মধু কোথায় ওকে কোথায় রেখেছে! ছেলে দুটো নাম শুনে চিনতে পারল না। তখন মিতুল এর ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করতেই বুঝতে পারল সব। ওর দুজনেই সমুদ্রের পায়ে পরে বলতে লাগল।

” আমরা কিছু জানি না। আমরা তো পাহারা দিচ্ছিলাম বাইরে থেকে হঠাৎ একটা কালো মুখোশ পরা লোক এলো রাতে। তারপর আমাদের দুজনে কে এলোপাথাড়ি মারল। আমরা তার শক্তির সাথে পারতেছিলাম না। সে বলল রুমের চাবি দিতে। দিচ্ছিলাম না বলে আরো কয়েক ঘা পরল। তারপর চাবি দিয়ে আমরা জান হাতে নিয়ে পালিয়ে এসেছি। তারপর আর কিছু জানি না।”

সমুদ্র লাথি মেরে সরিয়ে দিতে চাইল। কিন্তু দুজনে শক্ত করে দু’জন ওর হাঁটু চেপে ধরে রেখেছে।
দুশ্চিন্তায় সমুদ্র কিছু ভাবতে পারছে না কে মধুকে নিয়ে গেল। কে?
এতো ঝামেলা আর নেওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ ওদের দুজনকে থানায় নিয়ে গেল। যদি নিজেরাই কিছু করে মিথ্যা বলে থাকে। বের করতে হবে।

সমুদ্র বাসায় ফিরে মিতুল কে পেল না। জিজ্ঞেস করে জানতে পারল মিতুল ওর বাসায় চলে গেছে। সমুদ্রের খুব ক্লান্ত লাগছে তাই নিজেও আর এখনি কিছু করল না। একটু বিশ্রাম নিয়ে যাবে মিতুল এর কাছে। যদি কোন কথা গোপন করে থাকে ওকে ধরতে হবে।

ফুয়াদ মধু কে নিয়ে সকাল বেলা বাসা থেকে বের হয়েছে। শুধু বের হলে মধু অবাক হতো না‌। ওকে বিষ্ময় এর চরম সীমায় পৌঁছে দিয়েছে বের হবার ড্রেস‌আপ এ। ফুয়াদ তো মাক্স পায়জামা পাঞ্জাবি, ও মাথায় টুপি মুখে মাক্স। একবারে হুজুর সেজে বের হয়েছে আর ওকে বের করেছে কালো বোরকা, কালো হাতে পায়ের মোজা, মুখে নিকাব‌।

এমন অদ্ভুত ভাবে কেন ওকে নিয়ে বের হলো ও জানে না। আর ফুয়াদ তো ফুয়াদ ই উত্তর ও দেয়নি সেই আগের মতোই নিশ্চুপ নিজের কাজ করছে ও ওকে করাচ্ছে। আমি তার মনের খবর কিছুই জানতে পারছি না। তিনি বলছে ও না। কোথায় এমন বেশ করে নিয়ে যাচ্ছে উনিই জানেন। ও কখনো বোরকাই পরে না তার উপর এতো পর্দাশীল না ও তাই একটু আন‌ইজি লাগছে কিন্তু নতুন বেশে খারাপ লাগছে না। ফুয়াদ কে দেখতে তো শুভ্র সিগ্ধ লাগছে।

আমরা একটা সিএনজি করে গন্তব্যে এসে পৌঁছালাম। নামার আগেও মধু অনেক প্রশ্ন করেছে যেমন,
” আমরা এভাবে কোথায় যাচ্ছি? কিছু বলছেন না কেন? বললে কি সমস্যা আমি গেলে তো জানব‌ই আগে জানালে কি হয় এতো টেনশন কি নেওয়া যায়।”

সিএনজি থেকে নেমেই ওর সব কথা থেমে গেছে। ওরা দুজনে দাঁড়িয়ে আছে কাজী অফিসের সামনে। মধু চোখ বড়ো বড়ো করে কাজী অফিস নামটা দেখল। ফুয়াদ ভাড়া মিটিয়ে মধু হাত শক্ত করে ধরে সামনে যেতে লাগল। মধু শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ফুয়াদ মধুর দিকে তাকিয়ে বলল,,” কি হলো চলো!”
” এখানে কেন নিয়ে এসেছেন?” ভীত গলায় বলল
মধু।

” বিয়ে করতে। কেন তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও না আমার হতে চাও না জান?” কেমন জানি করে বলল ফুয়াদ। যে কথায় নেই কোন ভালোবাসা অনুভুতি। মধু ঢোক গিলে বলল,” আমাকে আগে সব বললে কি হত? এই বিয়ে সম্ভব না।”
” কেন?” মধু মাথা নিচু করে আছে। সমুদ্র আর ওর বিয়েটার কথা কীভাবে বলবে। ধর্মীয় ভাবে না হলেও আইনি ভাবে তো হয়েছে।

” কথা বলো। তুমি আমাকে রিজেক্ট করছো? বিলিভ মি মধু আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। আমি ভেবেছিলাম তুমি অনেক খুশি হবে। খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরবে কিন্তু হলো উল্টো‌।”
মধু অসহায় চোখে তাকাল ফুয়াদের দিকে। তারপর বলল,,” আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে।”
” হোয়াট?” বিষ্ময় এ হতভম্ব হয়ে বলল ফুয়াদ।

মধু বলল,,” আমার বিয়ে আপনার ভাইয়ের সাথে হয়েছে।”
ফুয়াদ এখনো হাত ছাড়ে নি‌। হাত শক্ত করে ধরেই করল,,” সত্যি বিয়ে হয়েছে?”
মধু অবাক স্বরে বলল,,” মানে ধর্মীয় ভাবে কবুল বলে হয়নি। কিন্তু আইনি ভাবে হয়েছে।”
ফুয়াদ একটু হেসে বলল,,” সেটাও হয়নি‌।”

প্রেয়সী পর্ব ৫৩(২)

“মানে? কি সব বলছেন। আমি নিজে সাইন করেছি।”
” হলে হয়েছে‌। তুমি হবে আমার বউ। আমার ভাই বিয়ে করলেই হলো নাকি। ওটা আমি বিয়েই মানি না। চলো আমাদের বিয়ে এখনি এই কাজী অফিসে হবে দুই নিয়ম মেনে সুইটহার্ট।”
মধু কে টেনেই ফুয়াদ কাজী অফিসে নিয়ে গেল।

প্রেয়সী পর্ব ৫৪(২)