প্রেয়সী পর্ব ৫৫

প্রেয়সী পর্ব ৫৫
নন্দিনী নীলা

মিতুল দাঁড়িয়ে আছে মামুনের সামনে। এখানে এসে মিতুল সবটাই জানতে পেরেছে। ফুয়াদ পালিয়ে গিয়েছে। এখন মিতুল শিউর মধু কে ওর হাত থেকে বাঁচিয়ে নিয়েছে ফুয়াদ।
মিতুল রাগী কন্ঠে বলল,,” আপনি আমাকে আগে এসব জানান নি কেন? এসব জানলে আমি আরো সচেতন থাকতাম‌। ভেবেছিলাম ফুয়াদ তো বন্দি আছেই। মধু কে বাঁচাতে পারবে না।”

মামুন অবাক স্বরে বলল,,” মধু কে কি করেছিলে তুমি?”
মিতুল ঢোক গিলে সবটা খুলে বলল। ভয়ে ভয়ে বলল কারণ তার বোনকে আটকে রেখেছিল শুনে আবার বকাঝকা করতে পারে কিন্তু মামুন তেমন কিছু করল না। মামুনের প্রতিক্রিয়া চেঞ্জ না হ‌ওয়ায় মিতুল স্বস্তি নিল। বোনের প্রতি মায়া মহব্বত নাই দেখা যায় ভালোই হয়েছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মিতুল বলল,,” ফুয়াদ আর আপনার বোন এখন একসাথে‌।”
” তুমি এখন যাও। তোমাকে দিয়ে কোন কাজ হয় না।”
মিতুল বলল,,” সেদিন আমি খবর না দিলে ফুয়াদ কে ধরতে পারতেন? আমিই তো রিস্ক নিয়ে ফুয়াদ আপনাদের ওখানে গিয়েছে জানিয়ে ছিলাম ভুলে যাবেন না।” গর্ব করে বলল।
মামুন রাগী চোখে তাকাল মিতুল এর দিকে তারপর উঠে বেরিয়ে এলো। মিতুল ও ওর পেছনে পেছনে বেরিয়ে এলো।

মিতুল চিন্তিত গলায় বলল,,” ফুয়াদ কে ধরুন। ওকে আর মধু কে একসাথে থাকতে দেওয়া ঠিক না। কোথায় হাওয়া হয়ে গেছে কে জানে।”
মামুন বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,” সেসব তোমার ভাবতে হবে না। তুমি যাও কি করতে হবে আমি বুঝবো।”
মিতুল দাঁতে দাঁত চেপে বলল,” কাজ শেষ এখন আমাকে দরকার নাই। আপনাকে আমার ও দরকার নাই। কিন্তু ফুয়াদ কে আমার চাই। আপনার বোনকে ওর থেকে সরিয়ে নিন আমি আর কিছু চাই না।”

” তুমি আমাকে হুকুম করছো?”
মিতুল থতমত খেয়ে মাথা নাড়িয়ে না বোঝাল।
মামুন রাগে গজগজ করে গাড়িতে উঠে বসল। মিতুল বিড়বিড় করে বলল,,” আমাকে তেজ দেখায় কত বড়ো সাহস। এতো দিন তো আমার ইনফরমেশন ছাড়া চলতেই পারত না। এখন পাখা গজিয়েছে। দেখি মিতুলের সহযোগিতা ছাড়া কীভাবে চলে।”

বিড়বিড় করে রাগ ঝাড়তে ঝাড়তে মিতুল বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। বাসায় আসতেই সমুদ্রের সাথে দেখা হলো। ওকে দেখেই সমুদ্র উঠে দাঁড়াল। মিতুল সকাল সকাল উঠেই মামুন এর সাথে দেখা করতে গিয়েছিল‌। এসে আবার সমুদ্রের পাল্লায় পড়বে জানলে এখন বাসায় ই ফিরত না। বিপদ ওর পিছু ছাড়েই না। ফুয়াদ মধু একসাথে আছে জানাতে পারলে শান্তি লাগত কিন্তু এসব বললে ওই ফেঁসে যাবে। মুখে কুলুপ এঁটে থাকতে হবে।
সমুদ্র ওকে পেয়েই বলল,,” এতো ভোরে কোথায় গিয়েছিলে কার সর্বনাশ করতে?”

মিতুল চোখ কপালে তুলে বলল,,” কি বললে তুমি? আমি কি কারো সর্বনাশ ছাড়া কিছু করতে পারি না?”
রাগে মিতুলের ফর্সা মুখটা লাল হয়ে উঠল।
সমুদ্র বলল,,” ভালো কিছু তো করতে দেখলাম না। যা করলে সব খারাপ ই। এবার বলো মধু কোথায়?”
মিতুল আশেপাশে তাকিয়ে বলল,,” এটা আমার বাসা সমুদ্র এসব বাদ দাও।”

” তো কি? তাদের ও তো জানতে হবে তাদের মেয়ের কাজ কর্ম।”
মিতুল ভয়ে আঁতকে উঠে বলল,,” কি সব বলছো তুমি? আসো আমার সাথে।”
বলেই টেনে সমুদ্র কে নিজের রুমে এনে দরজা আটকে বলল,” বলো কী বলবে?”

” মধু কে কোথায় আটকে রেখেছ বলো।”
” আমি তো সব বলেছি তোমায় সমুদ্র তাও কেন বিশ্বাস করছো না? আমি আর কিছু জানি না।”
সমুদ্র বলল,,” আমার সাথে মিথ্যাচার করো না। সত্য কথা আমাকে বলো মিতুল না হলে তোমাকেও পুলিশের হাতে তুলে দিতে আমি সময় নেব না।”

মিতুল এখন কি বলবে ভাবছে।ও তো সত্যিই জানে না কোথায় আছে মধু ফুয়াদের সাথে। জানলে না বলবে কিন্তু এই কথাটা জেদি সমুদ্র কে বুঝাবে কি করে?
রুমে সমুদ্রের চিৎকার শুনে মিতুলের বাবা মা দরজা ধাক্কাধাক্কি শুরু করে দিয়েছে। সমুদ্র এগিয়ে এসে দরজা খুলে দিল তারা দুজনেই অবাক হয়ে ভেতরে ঢুকে কি হয়েছে এসব জিজ্ঞেস করল।

সমুদ্র সবটা খুলে বলল তাদের। সব শুনে তারা অবিশ্বাস্য চোখে মিতুলের দিকে তাকিয়ে আছে। মিতুলের বাবা মা মেয়ের এমন অধঃপতনের কথা শুনে হতবাক বনে গেছে‌। লজ্জায় তারা সমুদ্রের সাথে কোন কথা বলতে পারল না। মিতুল ভয়ে মাথা নিচু করে কাঁদছে। মিতুলের বাবা এগিয়ে এসে মিতুল কে এক নাগাড়ে চর থাপ্পড় মারতে লাগল। মিতুলের মা এগিয়ে এসে মেয়েকে তার হাত থেকে বাঁচাল‌।

সমুদ্র বলল,,” মেরে আর কি হবে আঙ্কেল। ওকে বলতে বলেন ও মধু কে কোথায় রেখেছে। না বললে আমি কিন্তু পুলিশ নিয়ে আসতে বাধ্য হবো।”
মিতুলের বাবা হাত জোড় করে বলল,,” পুলিশ এনো না বাবা আমাদের মান সম্মান সব শেষ হয়ে যাবে।”
” আমিও তাই এখনো পুলিশ আনিনি আপনাদের কথা ভেবে। তাই ওকে মুখ খুলতে বলুন তাড়াতাড়ি। আমি এখন আসছি।”

সমুদ্র বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে এলো।
মিতুলের বাবা আর মা মিতুল কে চেপে ধরল সব খুলে বলতে। মিতুল কাঁদতে কাঁদতে বলল ও কিছু জানে না। মিতুলের বাবা মেয়ের উপর রাগারাগী করে চলে গেলেন। মেয়ের জন্য তার হাটুর বয়সী ছেলের সামনে মাথা নত করতে হয়েছে। এমন মেয়ে থাকার থেকে না থাকাই ভালো।

সমুদ্র থানায় গিয়ে ও খোঁজ নিয়েছে ছেলে দুজন এখনো এক কথাই নাকি বলে যাচ্ছে। সমুদ্রের এবার খটকা লাগছে। সত্যি কি কেউ মধু কে ওদের হাত থেকে নিয়ে গেছে। কিন্তু কে এমন রিস্ক নিয়ে কাজটা করল? সব কিছু সমুদ্রের কাছে তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। মধু কোথায় আছে কিছুই বুঝতে পারছে না। ওর পরিবারের সাথে ও কথা বলেছে তারাও কিছু জানে না।

বাসায় আসতেই সমুদ্র সবার মধ্যে একটা উত্তেজনা লক্ষ করল। সবাই এমন করছে কেন ও জিজ্ঞেস করল। পত্রিকা দেখে জানতে পারল সবার উত্তেজিত খবর। মামুন কে অ্যারেস্ট করা হয়েছে সেটাই ছাপানো হয়েছে। সমুদ্র বিষ্ময় এ হতভম্ব হয়ে লেখাগুলো পড়ছে। শুধু মামুনের ছবি ছাপানো হয়নি সাথে ফুয়াদের ছবিও ছাপানো হয়েছে। ফুয়াদ কে অপহরণ করে আটকে রেখেছিল মামুন।

ফুয়াদ মারা গেছে এক্সিডেন্ট এ এই ভুয়া খবর সবার মধ্যে প্রচার করেছে মামুন। ফুয়াদ বন্দি থেকে ছাড়া পেয়ে মামুনের খারাপ যত কাজ করেছে সব কিছু প্রমাণ সহ ভাইরাল করে দিয়েছে। সব কিছু একঘন্টা আগেই বের হয়েছে। তার পর পর‌ই পুলিশ মামুন কে অ্যারেস্ট করেছে। সমুদ্র সকাল থেকে মিতুল এর জন্য এতোটাই অস্থির হয়ে ওর বাসায় বসে ছিল ওর সাথে চিৎকার চেঁচামেচি করে, থানা থেকে ঘুরে বাসায় ফিরেছে। এসব ও জানত‌ই না।

সমুদ্রের মনে আশার আলো জ্বলে উঠল ধপ করেই। তাহলে কি মধু ফুয়াদের কাছে আছে? মিতুলের বন্দি থেকে কি ফুয়াদ ই নিয়ে গেছে মধু কে। ফুয়াদ তার মানে বেঁচে আছে। কষ্টের মাঝেও আনন্দে ফিরে এসেছে বাসার সবার মনে।
সমুদ্র মাকে খুঁজছে। তিনি কোথায় এমন একটা সু-খবর পেয়ে মায়ের খোঁজ নেওয়ার কথা সবার আগে মনে পড়ল সমুদ্রের।

মধু আর ফুয়াদ তিন দিন পর বাসায় ফিরেছে। এখন ওর জন্য দাঁড়িয়ে আছে বাসার সামনে। ফুয়াদ চোখে থেকে সানগ্লাস খোলে মধুর হাত ধরে বাসার কলিং বেল চাপল। ওর বেঁচে থাকার খবর সবার মধ্যে ভাইরাল হয়ে গেছে‌‌। ও মামুনের আস্তানা থেকে বেরিয়েই সব প্রমাণ ভিডিও প্রকাশ করে দিয়েছে। এখন মামুন জেলে বন্দি। ও বন্দি করে রেখেছিল তার শোধ ওকে জেলে রেখে তুলবে ফুয়াদ।

মধু কে নিয়ে হানিমুন করতে গিয়েছিল সিলেট। মধু সেখানে গিয়েও হাঁসফাঁস করেছে শুধু ফোনের জন্য। কিন্তু ফুয়াদ তো নিজের ফোনের সাথে ওর ফোনটাও লুকিয়ে ফেলেছিল। এতো দিন সবার থেকে দূরে থেকে কষ্টের ব্যতিত মনটা ভালো করতে একাকী সময় কাটাতে চেয়েছিল মধুর সাথে। তাই করেছে। নিজের মতো করে সময়টা কাটিয়েছে। তিনদিন ফুয়াদ মধুতে বিভোর থেকেছে শুধু। মধু অন্যমনষ্ক হলেও পাত্তা দেয় নি ফুয়াদ।
মধুর পরণে মিষ্টি কালারে শাড়ি ফুয়াদ জোর করে পরিয়ে নিয়ে এসেছে মধু পরতে চাইছিল না কিন্তু ফুয়াদের সাথে পারে নি।

প্রেয়সী পর্ব ৫৪(২)

মধু জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দরজা খুলে দিল সমুদ্র। ফুয়াদ মধুর কাঁধ জড়িয়ে ধরে ছিল। দরজা খুলতেই সমুদ্র কে দেখে মধু কে ছেড়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরল।
সমুদ্র ধরল না‌। ও তাকিয়ে আছে মধুর দিকে মধু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। পরণে শাড়ি ওর বুকের ভেতরটা চিনচিন করে উঠল।

প্রেয়সী পর্ব ৫৬