যদি তুমি বলো পর্ব ৪৭

যদি তুমি বলো পর্ব ৪৭
আফনান লারা

ইশান তিথিকে নিয়ে একবার মায়ের কাছে গেছে আজকে।মা বলেছেন আজকের দিনটা তার কাছে থাকার জন্য।তাই আসা।
তিথি তো ভয়ে ভয়ে ছিল।না জানি আবার কি না কি কথা ধরে টান দেয়।

বাসায় এসে তিথি তো অবাক,শুধু তাকেই না।ইশানের অনেক আত্নীয় স্বজনকেও দাওয়াত করেছেন তিনি।তিথি এমন জানলে কাতানের ঐ শাড়ীটা পরে আসতো যেটা বাবা তানিয়ার বিয়েতে পরার জন্য দিয়েছে।ইশান,তিথির বিয়েতে যারা যারা তিথিকে দেখেননি মূলত আজ তারাই দাওয়াত পেয়েছেন।
তিথি হলুদ রঙের একটা শাড়ী পরে এসেছিল।এত এত মানুষ দেখে সে এক কোণায় গিয়ে চুপটি করে বসে আছে।ইশান মায়ের কাছে কি নিয়ে যেন আলাপ করছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

সবাই তিথিকে দেখে কত কি বলে চলেছেন।সেটা অবশ্য তিথিও শুনছে।তারা বলছেন ইশানের সাথে মানাচ্ছে ওকে।
এটা শুনে তিথির মন আনন্দে ভরে উঠলো।তাকে মিটমিট করে হাসতে দেখে ইশান,সে তখন মায়ের রুম থেকে বেরিয়েছিল সবেমাত্র।ওখানে এসে তিথিকে মায়ের কাছে যেতে বলে ইশান।তিথিও চুপচাপ মায়ের রুমের দিকে যায়।যাবার পথে ইশানের কাছে জানতে চাইলো ব্যাপার কি।ইশান বলে মা নাকি ওকে বকার জন্য ডাকছেন।
তিথির তো ভয়ে গলা শুকিয়ে আসলো তখন।ঢোক গিলে দরজা হালকা করে খুলে উঁকি দিয়ে সে বলে,’আন্টি আসবো?’

‘এসো’
তিথি পা টিপে টিপে গিয়ে দাঁড়ায় ওখানে।মিসেস আরাফাতের হাতে একটা রুপার নেকপিস।উল্টে পাল্টে দেখছিলেন তিনি।তিথি ওটা দেখে ভাবছে তার তো রুপা পছন্দ না,কিন্তু তানিয়ার ভীষণ পছন্দ রুপা।ওমনি তিনি বললেন,’এটা আমি তোমার বোনের বিয়েতে দেবো ভাবছি।আমাদের পরিচিত এক কারিগর কে দিয়ে রুপার উপর পাথর বসিয়ে সেটটা তৈরি করেছি।তোমার বোনের বিয়েরদিন আমি ঢাকায় থাকবোনা।আমার বড় ভাই ভীষণ অসুস্থ। আমাকে যেতে হবে ওখানে,তুমি আর ইশান বিয়েতে যেও।এটা আমার পক্ষ থেকে তানিয়াকে দিও কেমন?’

‘এসবের কি দরকার ছিল আন্টি?’
‘দরকার ছিল।তানিয়া তোমার বিয়েরদিন আমার পায়ে মুভ মালিশ করেছিল আমার পায়ে ব্যাথা ওঠায়।মেয়েটা অনেক বেশি ভাল,আমার ইশানের আরেকটা ভাই থাকলে আমি তোমার বোনকেই বউ করে আনতাম, খুব মিষ্টি একটা মেয়ে।এটা ওকে দিও ‘

তিথি আচ্ছা বলে চলে যাচ্ছিল ওমনি মিসেস আরাফাত বললেন ‘তোমাকে যেতে বলেছি?’
‘না!সরি’
‘এটা ধরো’
তিথি দেখে তানিয়ারটার মতনই অন্য একটা নেকপিস,কিন্তু এটা স্বর্ণের। তিথি চোখ বড় করে তাকিয়েছিল।
‘কি?পছন্দ হয়েছে?’

‘হ্যাঁ,কিন্তু আমাকে কেন?’
‘বিয়েতে আমি তোমায় কিছুই দেইনি,সব ইশানই কিনে দিছে। আমার থেকেও তো তোমার হক আছে’
তিথি মুচকি হাসি দিয়ে ধন্যবাদ জানায়।কি সুন্দর এটা!নিশ্চয় ইশান বলেছে। কারণ এয়ারপোর্টে তো ইশানকে সে বলেছিল তার ডায়মন্ড পছন্দ না,স্বর্ণ পছন্দ।

দুটো বক্স নিয়ে ইশানের রুমে আসে তিথি,সেগুলোকে ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে নিজের নেকপিসটা নিয়ে গলায় পরার চেষ্টা করে,সেসময় ইশান আসে সেখানে।সে এগিয়ে এসে তিথিকে নেকপিসটা পরাতে হেল্প করলো।সম্পূর্ণ পরিয়ে দিয়ে মুচকি হাসে সে।

‘আমার কেন যেন মনে হচ্ছে এটা আপনার কেনা’
‘আমার পছন্দ এত খারাপ?’
‘এটা দেখতে খারাপ বুঝি?’
‘হুম।’

ইশান সোফায় বসে পড়ে।তিথি পেছনে তাকিয়ে বলে,’তবে বলতে হয় আসলেই আপনার পছন্দ খারাপ।আমার না একটুও পছন্দ হয়নি এটা।কেমন যেন পুরোনো পুরোনো!’
‘পুরোনো?একদিন আগে কেনা এটা।অরজিনাল!’
‘তার মানে সিওর হলাম এটা আপনিই কিনেছেন।’
ইশান জিভ কামড়ে ধরে,তিথি কিভাবে যে বুদ্ধি খাটিয়ে কথাটা বের করে নিলো।ইশ!

পিকনিক থেকে ফেরার পুরো পথে গিয়াস সাহেব অজ্ঞান ছিলেন।তার অভিযোগ পৃথিবীর সবাই তাকে ঠকায়,আজীবন ঠকেই গেলেন।
এই শোকে তিনি চার ঘন্টা অজ্ঞান ছিলেন।তার জ্ঞান ফিরেছে বাসায় ফিরে।তানিয়া রিদমকে নিয়ে গিয়াস সাহেবকে দেখতে এসেছে,মা জোর করে পাঠিয়েছিল ওদের। নাহয় রিদম আর তানিয়া কারোরই ইচ্ছা নাই এমসিকিউ পরীক্ষা দেয়ার।

গিয়াস সাহেব বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে শুয়ে বলছেন,’জানো তোমরা!নিজেকে কাঁটা ছাড়া মাদার গাছ মনে হয়!মাদার গাছের পরিচয় তার কাঁটা দিয়ে,আর সেই গাছেই যদি কাঁটা না থাকে তবে কেউ মূল্যায়ন করবে?আমার জীবনটা সেরকম হয়ে গেছে।যাই করিনা কেন ডোজ খেতেই হয়।মানসিক অবসাদগ্রস্ত রুগী হই গেছি।ইচ্ছে করছে পাবনা মানসিক হাসপাতাল থেকে একবার ঘুরে আসতে’

কালাম বলে,’স্যার আপনি ওদের সাথে থাকবেন নাকি?এতবড় প্রতিদান দিবেন?’
‘আরেহ না আমি তো যাবো পাগলদের দেখতে।তাদের দেখলে মনটা ভাল হয়ে যাবে।নিজেকে বুঝাতে পারবো আমার চেয়েও পাগল আছে দুনিয়াতে।’

কালাম মাথায় হাত দিয়ে চলে যায়।সে বের হতেই তানিয়া আর রিদম ঢুকলো রুমে।রিদমকে দেখে গিয়াস সাহেব চটে গেলেন।দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে থাকলেন,আজ এই রুমে তানিয়া না থাকলে ওর খবর ছিল!ওর কারণেই পিংকিকে পাহারা দিতে এতদূর যেতে হলো হুইল চেয়ার নিয়ে,১৭০০টাকা লস হলো!’

‘আঙ্কেল এখন কেমন আছেন?’
‘দেখতেই তো পারছো মরেও বেঁচে আছি’
‘জ্বী?বুঝলাম না’
‘টুকু,উনি বুঝাতে চাইছে বেঁচেও মরে আছেন’
‘ওহ আচ্ছা।আঙ্কেল আমি আপনার জন্য ড্রাগন ফল এনেছি।শুনলাম বান্দরবনে নাকি আপনার ড্রাগন ফল নিয়ে মন খারাপ হয়েছিল?’

‘তোমাদের বংশ এমন কেন?যেটা দিয়ে এক্সিডেন্ট হয় সেটার নামে ফল আনো!আশ্চর্য! ‘
তানিয়া ও তব্দা খেয়ে গেলো।এ লোক কথায় কথায় এত চটে যায় কেন?সে আর ওখানে থাকলোনা চুপটি করে বেরিয়ে গেলো রিদমকে নিয়ে।

রিদম পিংকিদের বাসা থেকে বেরিয়েই যাচ্ছিল তখন পান্না এসে দাঁড়ায় ওর সামনে।মুচকি হাসি দিয়ে বলে,’বাবা বান্দরবন থেকে আসার সময় কিছু আনতে পারেনি। বাবার কাছে টাকা ছিল না।’
এই বলে সে হাত পেতে ধরে।তানিয়া এসে সেও শুনতে পায় পান্নার এ কথা।তখন সে আফসোস করে বলা ধরে রিদমের কাছে টাকা নেই,সে কিনতে পারেনি কিছু।তানিয়া ওকে কিনে দিবে।

কিন্তু তানিয়াকে অবাক করে দিয়ে রিদম পকেটের ভেতর থেকে একটা মালা নিয়ে পান্নার হাতে দেয়।
পান্না তো ভীষণ খুশি হয়ে লাফাতে লাফাতে চলে গেলো।
তানিয়া অবাক চোখে তাকিয়ে ছিল রিদমের দিকে।সে জানতে চাইলো এটা কেনার টাকা রিদম কই পেয়েছে।তখন রিদম জানায় তাকে মা সবজি কিনার জন্য যে টাকা দেয় তার থেকে বাঁচিয়েছে।

‘বাহঃ কি ভালুবাসা’
‘টুকু তুমিও মজা নিচ্ছো?পান্না হচ্ছে আমার সফটকর্ণার’
‘এ্যাহ?সফট কর্ণার?তোদের বয়সে সফট কর্নার জানা চেনা তো দূরের কথা,এই বয়সে আম্মু আমাদের সফট ফুড দিতো।যাকে বলে সেরেলাক’
আর কথা না বাড়িয়ে রিদম তানিয়াকে টানতে টানতে নিয়ে গেছে।ওখানে আর এক মূহুর্ত থাকলে গিয়াস সাহেব আবার এমসিকিউ পরীক্ষা শুরু করে দিবে।

রাতের খাবার খেয়ে ইশান আর তিথি চলে আসতে চেয়েছিল কারণ পরেরদিন তানিয়ার গায়ে হলুদ।অনেক অনেক কাজ। কিন্তু মা কিছুতেই তাদের আজ রাতে যেতে দিবেন না।জোর করে রেখেই দিলেন।
তিথি ভারী ডিজাইনের শাড়ী পরে এসেছিল।খুবই ভারী।এখন এই শাড়ীটা বদলে সুতির একটা শাড়ী কিংবা সেলোয়ার সুট পরলে আরাম লাগতো,ঘুম ও আসতো।

ইশান মায়ের সাথে অনেকক্ষণ গল্প করে রাত সাড়ে দশটার দিকে রুমে এসে অবাক হয়ে যায়।তিথি ওর একটা শার্ট পরে ওয়ারড্রবের উপর উঠে বসে বসে পেয়ারা খাচ্ছে।
ইশান কোমড়ে হাত রেখে বলে,’আমি কাল গায়ে হলুদে যে শার্ট পরবো বলে ভেবে রেখেছিলাম,ওটাই পরতে হলো?’

‘কি করতাম?আমার শাড়ী জামা সব জাপানে নিয়ে গেছিলাম একটাও নেই এখানে,তামিয়ার কাছে চাইতে গিয়ে দেখি তার রুম ভেতর থেকে লক করা আর সে নাকি ঘুমের ঔষুধ খেয়ে ঘুমাচ্ছে বুয়া বললো।’
‘নাম!’
‘উহু!’

ইশান কাছে এসে তিথির পায়ের পাতা মুঠো করে ধরতেই তিথি লাফ দিয়ে নেমে যায়।নামার সময় ইশান ওকে ধরে ফেলে।দুজনেই খিলখিল করে হাসছিল,তিথির পায়ের পাতার সুরসুরি লাগায় তার হাসি আর থামছিলই না।

‘হে!কে মরে গেছে?’
‘বললাম খাবার ঠাণ্ডা হয়ে গেছে।খাবেন না কিছু্?’
‘ওহ!ঐ রিদম কোথায়?গেছে নাকি এখনও আছে?সারাদিন আমার বাসাতেই থাকে ঐ ছেলে।আমার বাসায় এত কি তার?’

যদি তুমি বলো পর্ব ৪৬

পিংকির মা গাল ফুলিয়ে বললেন,’বাসায় আসবেনা তো কি করবে?আপনি যে দিনে ১০০বার এক্সিডেন্ট হোন তার জন্যই তো আপনাকে দেখতে আসে’

যদি তুমি বলো পর্ব ৪৮