যদি তুমি বলো পর্ব ৪৬

যদি তুমি বলো পর্ব ৪৬
আফনান লারা

হাতে হাত রেখে পথ চলতে চলতে সেরাতে ইশান,তিথির বাসায় ফিরতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল।যখন তারা বাসায় পৌঁছে ততক্ষণে গভীর রাত।সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে,কিন্তু তানিয়া জেগেছিল কারণ সে জেগে জেগে রকিবের সাথে কথা বলছিল।তাই দরজা সে এসে খুলে দেয়,দরজা খুলেই মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে সে ফোনে কথা বলতে বলতে চলে যায়।

তার হাসিটা রহস্যময় ছিল।
ইশান বুঝতে না পারলেও তিথির কাছে খটকা লাগতে শুরু করে।তানিয়ার হাসির মানে বুঝতে বুঝতে তারা এসে যখন রুমের দরজা খোলে,দেখে ফুল দিয়ে সাজানো রুম।
তিথি দেখেই অবাক,তানিয়া এত কিছু করলো কখন?আর করলোই বা কেন!
ইশানের বেশ ভাল লাগলো,এই উপলক্ষে তানিয়া বিয়েতে ডাবল গিফট পেতে চলেছে।সে রুমে ঢুকেই দরজা লক করে নেয় ভেতর থেকে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

তিথি হা করে সব দেখছিল। ইশান তখন হাই তুলতে তুলতে বলে,’ঘুমা!এত দেখার কিছু নাই’
‘ঘুমাবো?’
‘নয়ত কি?বাসর করবি?’

তিথি থতমত খেয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।ইশান বিছানার উপর থেকে ফুল সরিয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে।লম্বা একটা জার্নি করে এসেছে, শরীর আর টানছেনা।মন চাইছে চোখ জোড়া বন্ধ করে টাটকা ঘুমটা দিতে। কিন্তু তা সম্ভব নাহ,কারণ এই ফুলের রুমটা সাজিয়েছে তানিয়া এই ভেবে যে আজ রাতটাকে একটু মধুর করে গড়তে।তাই শুধু ঘুমালে তো এর মর্ম বোঝা যাবেনা।

তিথি মুখ ধুয়ে এসে দেখে ইশান চোখ বুজে শুয়ে আছে।তিথিও চুপচাপ ওর পাশে এসে বসে ওকে দেখতে থাকে।তখন ইশানের সেই বাসর করার কথাটা মনে আসতেই সে ফিক করে হেসে দেয়।ওমনি ইশান চোখ মেলে বলে,’কি?’
‘নাহ কিছুনা,ঘুমান’
‘ভাবছি ঘুমাবোনা এই রাতে’
‘তাহলে কি করবেন?’
‘ঐ সে বাসর করবো বললাম’

তিথি পিছিয়ে যায় যতটুকু,তার দ্বিগুণ এগিয়ে আসে ইশান।তিথির আর পালানোর জায়গা নেই কোথাও।সেদিন না পালালেও আজ তার মন পালাই পালাই বলে।
নেশায় মাতাল ইশানকে আজ একটু জ্বালিয়ে দেখার ইচ্ছা হলো।

তিথি দ্রুত বিছানা থেকে নেমে গেলো।ইশান তখন ফুলের পাপড়িতে বসে বসে ওকে দেখছিল।তিথি দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে রজনীগন্ধা ফুল নিয়ে ইশানের দিকে ধরে বলে,’ফুলের সুবাস নিবেন?’
ইশান উঠে চলে আসে।তিথির হাত থেকে রজনীগন্ধাটা কেড়ে ওর গলার কাছে ফুলটাকে লেপটে সরিয়ে নেয়,এরপর সেখানে নাক ডুবিয়ে,ফিসফিস করে বলে,’নিলাম’

অনেকক্ষণ কেটে যাবার পর বারান্দায় গিয়ে ইশানের শার্টের ভেতর দিয়ে নিজেকে নিয়ে নেয় তিথি।এরপর ওর গায়ের উষ্ণতায় চোখ বুঝে রাখে ওরই বুকের উপর।
আরামে,আবেশে তিথি জানতে চায় আর কোনোদিন ইশান তাকে কষ্ট দেবে কিনা,প্রতিশোধ বলে আদৌ কিছু অবশিষ্ট আছে কিনা।
ইশান উত্তরে জানায় সব শেষ,প্রতিশোধের খাতা আজ থেকে শূন্য।

রিদমের সাথে বাসে বসে গিয়াস সাহেব রিদমের মাথাটাকে যেন কিনে নিয়েছেন।পুরো জার্নিতে রিদমের চৌদ্দ গুষ্টিকে তিনি উদ্ধার করে ছেড়েছেন।
বাস থেকে যখন ব্রেকে নামানো হলো রিদম একটা ছেলের হাতেপায়ে ধরে সিট বদল করে নিয়েছে সেই সুযোগে।
গিয়াস উদ্দিন তো প্রচণ্ড রেগে গেলেন।রিদমের এত বড় সাহস!সে তার সাথে বসার ভয়ে সিট বদলায়!তাকে তো পরে দেখে নিবেন তিনি।এখন এই ছেলেটার সাথে কথা বলা যাক।

‘এই ছেলে তুমি কোন ক্লাসে পড়ো?’
‘সেভেন’
‘রিদমকে চিনো?’
‘হুম।’
‘পিংকিকে চিনো?’
‘হুম’
‘আমাকে চিনো? ‘
‘হুম’

‘বেয়াদব ছেলে!ফোন হাতে দিছে কে তোমায়?আমি যে প্রশ্ন করছি,শুনতে পারছোনা?বার বার হুম হুম করছো কেন?’
‘পিকনিকে ফোন টিপবোনা তো কি আপনার পরীক্ষার এমসিকিউর আন্সার করবো?’
‘দেখছো কি বেয়াদব ছেলে!অবশ্য বেয়াদব হবেই না কেন!ঐ রিদমের ক্লাসের ছেলে তো বেয়াদবই হবে!এই ছেলে!তোমাকে যে বেয়াদব বলেছি তুমি কিছু বলছো না কেন?’

‘আমাকে আম্মু আব্বু ও বেয়াদব বলে।ইটস ওকে!’
‘বেয়াদব বললেও তোমায় গায়ে লাগেনা?তবে তুমি একটা আস্ত অসভ্য’
‘আমরা জাতিরা সভ্য হলাম কবে আঙ্কেল?’
‘আমি কি জানি?’

‘তবে আপনিও অসভ্য।যে জাতি জানেনা সে সভ্য হলো কবে,সে নিজেই তবে অসভ্য”
‘(ছেলেটার কথায় কারেন্ট আছে তো।)আচ্ছা ছেলে,, তোমার বাবা কি বিদ্যুৎ অফিসার?’
‘জ্বী,আপনি জানলেন কি করে?’
‘বাতাসে জেনে গেছি।সরকারি চাকরি করে!আল্লাহ গো!’
বাবা তোমার নাম কি?’
‘সিয়ামুল কারিম’
‘ডাকনাম কি?’
‘কারিম’

‘বাবা কারিম,তোমার ভাই বোন কয়টা?’
‘আমি একজনই।বাবা মায়ের অতি আদরের লাস্ট প্রোডাক্ট ‘
‘(এক পিস মানে সব সম্পত্তির মালিক+পেনশন!)বাবা তোমাদের কি নিজস্ব বাসা ঢাকায়?’
‘জ্বী’

‘(নিজেদের বাসা+এক পিস মানে সব সম্পত্তির মালিক+পেনশন+সরকারি চাকরি=সোনায় সোহাগা)
তোমার কেমন মেয়ে ভাল লাগে বাবা?আমি তো আঙ্কেলই,আমাকে বলতে পারো।আমি কাউকে বলবোনা’
ওমনি পিকনিক স্পট এসে গেলো।ছেলেটি নামতে নামতে বললো,’ক্লাস সিক্সে একটা মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে গেছিলাম।বিয়েও করেছি হুজুরের মাধ্যমে।প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া অবধি মেয়েটা তার বাসায় আর আমি আমার বাসায়।আপনি চাইলে আপনার মেয়েকেও বিয়ে করতে পারি।বিয়ের বেলায় আমার কোনো বাহানা নাই’
‘এই ছেলেটা আসলেই একটা অসভ্য ছেলে! ”

‘ভাই তুই এই লোকের মেয়েকে পছন্দ করিস?’
‘মোটেও না।মেয়ের বাবাকে দেখার পর থেকে মেয়ের প্রতি ইন্টারেস্ট কমে গেছে’
‘আমাকে বিশ মিনিটে পাবনা মানসিক হাসপাতালের দশ বছর পুরোনো পাগল বানিয়ে দিয়েছে।’
‘আর আমাকে তো পাগল বলেই ব্যাখ্যা দেন উনি’
‘রিদম!’

‘নে!এসে গেছে তোর কারিনা কাপুর’
এটা বলে কারিম চলে যায়।রিদম চেয়ে দেখে পিংকি দাঁড়িয়ে।সে ওর কাছে এসে আইসক্রিম খেতে খেতে বলে,’বাবা তোমার কাছে আসতেই দেয়না।কি ঝামেলা!এখন ওয়াশরুমে গেছে কালামের সাথে। তাই তো এলাম।ভাবলাম পিকনিকে কত মজা করবো।তা আর হলো কই!বাবা শুরু থেকে সিসি ক্যামেরার মতন নজর রাখছে’
‘তুমি এখন যাও।তোমাকে আমার সাথে দেখলে আবার ঝামেলা করবে’

গিয়াস সাহেব হুইল চেয়ারে বসে একটা পাহাড়ে ওঠার চিন্তাভাবনা করছেন তখন কালাম সহ আর যারা আছেন সবাই তাকে মানা করলেন কিন্তু তিনি শুনছিলেন না,পরে নিজের চোখে একজনকে পাহাড়ে উঠতে দেখে জন্মে পাহাড়ে ওঠার শখ মিটে গেলো তার।

এরপর তিনি দেখলেন একটা লোক কতগুলা গাছ বিক্রি করছে,লোকটা বলছে অরিজিনাল ড্রাগন ফল গাছ।এই ড্রাগন ফলের রঙ নাকি নীল হবে।কমলা উদ্ভোধন করে মানুষ খাওয়াতে পারেন নি কিন্তু নীল ড্রাগন ফল উদ্ভোধন করে নিশ্চয় মানুষ খাওয়াতে পারবেন আর কেক ও কাটতে পারবেন।কেকের উপর লেখা থাকবে”গিয়াস সাহেবের নীল ড্রাগন’

কি সুন্দর!ভাই গাছ যে নীল রঙের,ফল ও কি নীল হবে?নাকি আমাদের দেশের গুলার মতন গোলাপি হবে?’
‘না ভাই,নীলই হবে।আর যদি নীল না হয় তবে কালো হবে তাও গোলাপি হবেনা আমার কথা মিলাইয়া নিয়েন’
‘তাই নাকি!কালো ও ভাল!! নীল বা কালো একটা হলেই হয়।তাও তো অানকমন একটা রঙ পাবো।দাম কত ভাই?’
‘১৭০০টাকা’
‘এত বেশি কেন?’

‘মানুষ সবুজ পেঁপে কম খায় আর কমলা রঙের পেঁপে বেশি খায় কেন বলুন তো?’
‘কমলা পেঁপে মিষ্টি তাই’
‘সেটাই তো বুঝাইলাম।নীল ড্রাগন স্বাদ বেশি’

গিয়াস সাহেব ১৭০০টাকা দিয়ে নীল ড্রাগন ফল গাছ কিনে নিলেন।কোলে ফলটা নিয়ে কিছুদূর হুইলচেয়ার টেনে যাবার পর মনে পড়লো ফল কবে আসবে সেটা জিজ্ঞেস করা হয়নি তাই আবার আসলেন ওখানে।এসে দেখলেন লোকটা নাই।সেখানে আবার একটা লোক মাইকিং করতে করতে যাচ্ছে’কেউ নীল ড্রাগন ফল বলে নীল রঙের গাছ বেচতে আসলে কিনবেন না।

ওটা নীল ড্রাগন বা,কলমি শাকের ডাটাতে নীল রঙ করে টবে পুরে বিক্রি করে প্রতারণা করছে এক চক্র!আপনাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে গাছ বিক্রি করে চক্রটি উধাও হয়ে যাবে।সহজেই বোকা হবেন না,নিজেকে সংযত রাখুন এবং ভেবে চিনতে ভাল জিনিস কিনুন-প্রচারে জনসেবা কমিটি’

যদি তুমি বলো পর্ব ৪৫

‘আসলেই সবগুলা অসভ্য!আমার ১৭০০টাকা কলমি শাকের মতন পানিতে ডুবে গেলো🙂’
‘স্যার এবার ভাজি করে খান।মনের ড্রাগনই বড় ড্রাগন’

যদি তুমি বলো পর্ব ৪৭