যদি তুমি বলো পর্ব ৪৫

যদি তুমি বলো পর্ব ৪৫
আফনান লারা

গিয়াস সাহেবের সাথে পাল্লায় না পেরে মিসেস আরাফাত সেদিনই বাসায় ফিরে গেছেন।কিন্তু গিয়াস সাহেব যাবেন না,তার হাতে এখনও ইশান,তিথি আছে। ওদের কচলিয়ে কচলিয়ে পাত্র খুঁজে পেতেই হবে।মেয়ে বিয়ে দিলে এই বংশেই দেবেন বলে ঠিক করেছেন তিনি।

ইশান অফিসের কাজের বাহানা দিয়ে টুকুস করে বাসা থেকে বের হয়ে চলে গেছে, এদিকে তিথি পালাতেই পারছেনা।রুম থেকে বের হলেই গিয়াস সাহেব কথা দিয়ে পেঁচিয়ে ধরছেন।কি একটা ঝামেলা!
গিয়াস সাহেব হুইল চেয়ারে বসে বসেই ঘুমিয়ে পড়েন একটা সময়।তখন তিথি রিদমকে দায়িত্ব দেয় গিয়াস সাহেবকে তুলে বাসায় দিয়ে আসতে,উনি ঘুমাচ্ছেন,কিছু টের পাবেন না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

রিদম হাতেপায়ে ধরে মানা করতে থাকলো,তাকে দিয়ে এই অসাধ্য সাধন হবেনা।কিন্তু তিথি আপু তাকে আশ্বাস দেয়,সে যদি এই অসাধ্য সাধন করতে পারে তাহলে তাকে বিদেশ নেয়ার জন্য তিথি ইশানের কাছে অনুরোধ করবে।
রিদম আর কি করবে!

গিয়াস সাহেবের হুইল চেয়ার ঠেলতে ঠেলতে লিফটে ঢুকলো।লিফটের দরজা আটকাতে যেতেই পাশে এসে দাঁড়ায় পান্না।রিদম ওকে দেখে যেন আশার আলো খুঁজে পেলো।একা একা যেতে কেমন যেন ভয় ভয় কাজ করছিল,এই বুঝি আঙ্কেল জেগে যায় আর ওকে ধরে মারপিট শুরু করে!
চলতে চলতে রিদম পিংকির কথা জানতে চায় পান্নার কাছে।কারণ তাকে কোথাও দেখেনি আসার সময়।

‘আসলে আপু তো তিথি আপু আর তানিয়া আপুর কাছে।চকলেট ভাগ করছে’
‘তোমার ভাগ লাগবেনা?’
‘বুবু বলেছে আমার ভাগটা নিয়ে আসবে।’
গিয়াস সাহেব ঘুমে থেকে বলে উঠলেন,’পিংকি আমার আদরের মেয়ে রিদম! আমি ওরে কোটিপতি ছেলের সাথে বিয়ে দিবো।সে তোমার হতে পারেনা না না না না!’

রিদম ওমনি থেমে যায়।ঘুমে থেকেও মানুষ হুমকি দিতে পারে তা ওনাকে না দেখলে রিদম জানতোই না।ভয়ে তার শরীর কাঁপছে।পিংকিদের বাসার কাছাকাছি আসতেই গিয়াস সাহেব উঠে পড়লেন।ওমনি পান্না রিদমকে সরিয়ে নিজে হুইল চেয়ারটা ধরে বলে,’কি হলো বাবা?’

‘আমাকে বাসায় আনলি কেন?’
‘অনেক রাত হয়ে গেলো তাই’
‘তার মানে পিংকি ঐ বাসাতে একা একা?’
রিদম চুপটি করে লুকিয়ে পড়েছিল,পান্না ওকে বাঁচাতেই এভাবে ওর পাশে পাশে এসেছিল, সে তো শুরুতে বুঝতে পারেনি।গিয়াস সাহেব যদি দেখতেন রিদম ওনাকে নিয়ে আসতেছেন তাহলে রেগে যেতেন।
এদিকে তিনি এখনও রেগে আছেন। কারণ হলো তার ধারণা পিংকি ঐ বাসায় রিদমের কাছাকাছি থাকলে সমস্যা আছে।

তাই পান্নাকে বললেন ওনাকে নিয়ে আবার চলতে।কিন্তু ঐ সময় ওনার স্ত্রী বাসা থেকে বের হয়ে এসে বললেন,’এটা কি ব্যাপার বলুন তো!একে তো বিনা দাওয়াতে আজ সারাটাদিন তিথিদের বাসায় থাকলেন,এখন আবার বাসায় ফিরে আবার ঐ বাসায় যেতে চাইছেন?’
‘আহা তুমি বুঝতেছোনা,পিংকি রয়ে গেছে’
‘থাকুক। পান্না গিয়ে ওকে নিয়ে আসবে।পান্না যা তো,দ্রুত গিয়ে পিংকিকে নিয়ে আয়’

পান্নার পাশে পাশে রিদম ও আসছে।চলতে চলতে রিদম সেদিনের ঐ ছেলেটার কথা জানতে চাইলো, এরপর আর ডিস্টার্ব করেছে কিনা জানার জন্য।
‘আচ্ছা আপনি নাকি বিদেশ চলে যাবেন,শুনেছি’
‘হুম।জাপান যাবো,ভাল দেশ।ভাল না?’

‘ঐ ছেলেটা যদি আমায় আবার ডিস্টার্ব করে?’
‘তাহলে ফোন…..ওহ হো!ফোন দিয়ে তো লাভ হবেনা।ওখানে থেকে আমি তো আর বাঁচাতে পারবোনা।কি করা যায় বলোতো?’
‘যাইয়েন না’

ইশান তিথিদের বাসার কাছের পার্কটাতে বসেছিল,হঠাৎ মনে হলো তিথিকে দরকার।তাই একটা দোকান থেকে ফোন নিয়ে তানিয়ার নাম্বারে কল দেয় সে,তিথিকে পার্কে আসতে বলে।তিথি মানা করে তাও ইশান জোরাজুরি করায় সে রাজি হয়।

মাথায় ওড়না পেঁচিয়ে সে পার্কটাতে চলে আসে।দুজনে বেঞ্চের মাঝ বরাবর বসে। তিথি পা দোলাতে দোলাতে বলে,’এই পার্কে আদিলের সাথে বহুবার দেখা করেছে সে’
ইশান চুপ করে একটা ফুলগাছ দেখছিল ল্যাম্প পোস্টের আলোয়।
‘জানিস তিথি?আমি তোকে মাফ করে দিয়েছিলাম সেই একটা দিনে।যেদিন আদিল তোর গলার দিকে তাকানোই তুই ওড়না টেনে দিয়েছিলি।

আদিলের হাত বহুবার ধরতে চেয়েছিলি তাতে আমার কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু দেহের কিছু কিছু অংশ আছে যাকে কেবল আমিই ছুঁতে চেয়েছিলাম,আমিই সেই নজরে দেখতে চেয়েছিলাম।
সেদিন আমার এত ভাল লেগেছিল যে আমার ইচ্ছে হয়েছিল তোকে ঐদিনই বউ করে আনি।কিন্তু তখনও আমার সেই প্রোপার্টি হয়নি যার কারণে দমে থাকতে হয়েছিল।’

‘এতকিছু দেখলেন কি করে?’
‘আমি সেদিন ঐ জায়গাতেই ছিলাম। রেস্টুরেন্টে তোর আর আদিলের সামনের সিটে।দুদিন আগে দেশে ফিরে তোদের প্রতিটি পদক্ষেপ আমি ফলো করেছি।তোকে খুব কাছ থেকে দেখেছি’
‘ব্লু শার্ট?’

ইশান চমকে তাকায় তিথির দিকে।তিথি হাসি দিয়ে বলে,’আমার রুমাল ছিল টেবিলে।অন্যমনস্ক হয়ে যখন হুশ আসে তখন আর রুমালটা খুঁজে পায়নি। এরপর দেখলাম একজন ভদ্রলোক চলে যাচ্ছেন তার হাতে আমার রুমাল ঝুলছে।শুরুতে খেয়াল করতে না পারলেও যখন বুঝতে পারলাম ওটা আমারই রুমাল ছিল তখন আর আপনাকে কোথাও পাইনি।অবাক করার বিষয় হলো আদিল বারবার বলছিল এক রুমাল গেলে আরেক রুমাল আসবে।
আচ্ছা সেসব বাদ,আমার জানতে ইচ্ছা করে,অনেক আগে মাফ করে দিলে এত কষ্ট কেন দিছেন? ‘

‘কারণ মাকে যে কষ্ট দিছিস,তার দেনা রয়ে গেছিলো। ‘
‘এখন কি সেসব শেষ?আন্টি মনে হয় আমাকে এখনও মাফ করেননি’
‘করবে,কোলে নাতিপুতি ধরিয়ে দিলে দেখবি আমাকেও চিনবেনা।শুধু তুই আর তুই!’
‘এখন এই সময় এখানে ডাকলেন কেন?রুমেও তো কথা বলা যেতো’
‘গিয়াস আঙ্কেলের ভয়ে।উনি কি গেছেন নাকি এখনও পটরপটর করছেন?’
‘রিদমকে দিয়ে পাঠিয়েছি’

‘রিদম অনেক স্মার্ট। ওকে আমাদের সাথে নিয়ে গেলে মনে হয় ভাল হতো।কিন্তু ওর তো এসএসসি শেষ হয়নি।এখন নিলে পড়াশুনার ক্ষতি হবে।আগে এসএসসিটা দিক।আমি নিয়ে আসবো’

পান্না আর পিংকি একা একা বলে তিথির আম্মু রিদমকে বললেন ওদের দুজনকে বাসায় দিয়ে আসতে। রিদম রাজি হয়ে দুজনকে নিয়ে চললো।
পিংকি হাঁটতে হাঁটতে বলে,’কাল স্কুল থেকে পিকনিকে যাবে।তুমি যাবে তো রিদম?’
‘হুম,সব গুছিয়ে নিয়েছি’

পান্নার মন খারাপ হলো।সে প্রাইমারিতে বলে ওদের সাথে যেতে পারবেনা,আর পান্নার স্কুল ও আলাদা।মন এত খারাপ হলো যে রাস্তায় আর টু শব্দ টুকু ও সে করেনি।
বাসায় পৌঁছে রিদম ওদের বাই বলে পেছনে তাকাতেই দেখে গিয়াস সাহেব হুইল চেয়ারে বসে আছেন।তার কাজের একটা লোক তাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
‘কি বাছা! বডিগার্ড হইছো নাকি?’

‘না আঙ্কেল,আম্মু বললো ওরা মেয়ে মানুষ,কি না কি হয়ে যায় রাতের বেলা।কত দুষ্টু ছেলে আছে তো এলাকায়’
‘তাদের নিয়ে আমার চিন্তা নাই।আমার একমাত্র চিন্তা তোমায় আর পিংকিকে নিয়ে।তুমি ওর থেকে দূরে থাকবা এ কথা কি দরখাস্ত করে পাঠাতে হবে?’
রিদম চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।গিয়াস সাহেব আবার বললেন,’যত কিছুই করো না কেন!আমি তোমাদের বিয়ে কিছুতেই মানবোনা।কালাম আমাকে নিয়ে চলো’

ইশান তিথিকে নিয়ে ফাঁকা পথে হাঁটছে,তিথির হাতটা ঝুলছিল,ইশান হাঁটতে হাঁটতেই ওর হাতটা শক্ত করে ধরে।তিথি চুপ করেই ছিল তখনও।
চলতে চলতে একটা সময়ে ইশান থেমে যায়।একটা গাছের নিচে দুজনে দাঁড়িয়ে,মৃদু হাওয়ায় গাছের হলুদ রঙের পাতা গুলো ঝরে ঝরে পড়ছিল।

ইশান তিথির মাথার ওড়নাটা টেনে দিয়ে বলে,’যদি তুমি বলো আমি হবো তোমার শেষ অধ্যায়ের শেষ পাতাটি।যেটাকে তুমি কখনওই ছিঁড়বেনা ,বরং লিখে রাখবে নিজের নাম অথবা হাতে আঁকা কোনো ফুল।যদি তুমি বলো আমি ভুলে যেতে পারি তোমার দেয়া সেই আঘাত যে আঘাতে আজ আমি এই জায়গায়,,,,যদি তুমি একবার বলো “তোমায় আমি ভালবাসি” তবে আমি পৃথিবীর ভালবাসার সব সংজ্ঞাকে সত্যি করে এনে দেবো তোমার হাতে’

পরেরদিন ভোর পাঁচটায় পিকনিকের বাস স্কুলের গেটে দাঁড়িয়ে থাকলো,সবাই এক এক করে আসছে। রিদম পিংকির জন্য সিট রেখে বসে ছিল ওমনি বাইরে পিংকিকে দেখে সে সিট থেকে ব্যাগটা সরিয়ে রাখে।কিন্তু রিদমের মন্দ ভাগ্য,আজকে পিংকির সাথে গিয়াস সাহেব ও যাবেন।

যদি তুমি বলো পর্ব ৪৪

তিনি হুইল চেয়ার সমেত বাসে উঠেছেন কাজের লোকের হেল্পে এবং রিদমকে সরিয়ে বাসের সেই সিটেও বসেছেন।
‘কি?ভাবছো আমার মেয়ের সাথে বসে বান্দরবন যাবে,বসাচ্ছি।বান্দর কোথাকার!’

যদি তুমি বলো পর্ব ৪৬