যদি তুমি বলো পর্ব ৪৪

যদি তুমি বলো পর্ব ৪৪
আফনান লারা

মিসেস আরাফাত অনেক বিরক্ত হচ্ছেন।গিয়াস সাহেব বকবক পকপক করে ওনার মাথাটাকে ঝাঁঝরা করে ফেলছেন।ইচ্ছে করছে ধরে হুইল চেয়ার থেকে ফেলে দিতে।
‘কি হলো আপা,কিছু বলছেন না যে?’
‘না ভাবছি!’
‘কি ভাবছেন? ‘

‘ভাবছি আমার বোধহয় বাসায় ফিরে যাওয়া উচিত।প্রচণ্ড মাথা ব্যাথা করছে’
‘তা তো হবেই,আপনার শুনলাম দুটো মেয়ে’
‘একটার বিয়ে হয়ে গেছে।আর অন্যটাকে নিয়ে আমার মোটেও চিন্তা নেই।মাথা ধরেছে অন্য কারণে’
‘কি কারণে?’
‘আক্কল মানুষের জন্য ইশারাই যথেষ্ট। ‘

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

এটা বলে তিনি চলে যান।গিয়াস সাহেব গালে হাত রেখে ভাবছেন কি হচ্ছে,কি বলছে?আর কি ঘটছে?
ভাবতে ভাবতেই তিনি দেখলেন পিংকি রিদমকে দেখে মিটমিট করে হাসছে।ওমনি তার গায়ে যেন কারখানার আগুন লেগে গেলো।ধমকে পিংকিকে ডাকলেন নিজের কাছে,এরপর ওখানেই বসিয়ে রাখলেন।
পান্না রান্নাঘরে তানিয়ার সাথে গল্প করছিল,তানিয়া তার নতুন বাসা নিয়ে বলছে আর পান্না মনযোগ সহকারে সেসব শুনছে।

তিথিও এসে যোগ দেয়।তানিয়া ওকে দেখে চায়ের কেটলিতে চাপাতা ঢেলে বলে,’কি হলো টুকু?এই গরমে বাসার ভেতর হিজাব পরে আছো কেন?আমাদের কি তোমাদের মতন এসি আছে?’
‘নাহ আসলে একটু ঠাণ্ডা লাগছে’
‘তাহলে চায়ে তুলসি পাতা দেবো?’

‘দিতে পারিস। আচ্ছা পিংকিকে তো চিনলাম।ও কে?’
‘ওকে চিনলেনা?অবশ্য ও তো বেশি বের হয়না।পিংকির ছোট বোন পান্না’
‘ওহ!!এবার চিনলাম।কেমন আছো বাবু?’
‘এই তো ভাল। আপনি খুব কিউট দেখতে,আর আপনার বর ও’

তিথি মুচকি হাসতে গেলো ওমনি তানিয়া দাঁত কেলিয়ে বলে,’কি?কেমন কাটলো বিদেশী জীবনযাপন? এখনও সেই টম এন্ড জেরি ভাব চলছে নাকি রোমিও জুলিয়েট হয়ে গেছে?’
‘তোর যে দুলাভাই! অভ্যাস জানিস তো!আমাকে পনেরো ঘাটের পানি খাইয়ে তারপর ছেড়েছে।’
‘তারপর?এখন ঠিক হয়েছে তো সব?’
‘আপাতত ঠিক।দেখি সামনে কি হয়’

গিয়াস সাহেব রিদমের দিকে গাল ফুলিয়ে রেখে তাকিয়ে আছেন,কোনো কথা বলছেন না। পারছেন না উপর দিয়েই চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে।
রিদম আর সইতে না পেরে উঠে ওখান থেকে পালানো ধরলো ওমনি ইশান এসে ওকে ধরে আবার বসিয়ে দেয় পাশে।এরপর ফিসফিস করে বলে,’এটাই সেই পিংকি?’

‘হুম,আর ঐ তো রান্নাঘরের কিনারায় হেলানো দোলানো পান্তুয়া ‘
‘পান্তুয়া? আমি শুনলাম ওর নাম পান্না’
‘ঐ তো আদর করে ডাকি,পান্তুয়ার মতন দেখতে তো তাই’
‘আদর করে?সিটের প্যাজেঞ্জার বদলেছে?’
‘ছিলোই বা কবে!আমি এখনও ছোট।ওদের কথা বাদ দেন,আমাকে একাই বিদেশ নিয়ে চলেন এখানে এত ঝামেলা ভাল লাগেনা’

‘কিসের ঝামেলা?শুনি একটু, দেখি বিদেশে না গিয়েই সমাধান করে ফেলতে পারি কিনা’
‘সমস্যা হলো গিয়াস আঙ্কেল মনে করেন আমি তার মেয়ে পিংকিকে পছন্দ করি,এদিকে পিংকিও আমাকে পছন্দ করে।এইটুকুই চলছিল কিন্তু মাঝখানে পান্না এসে যায়।এবার পান্নাও আমাকে পছন্দ করে,কিন্তু গিয়াস আঙ্কেল তার মেয়ে পিংকিকে নিয়ে আমায় সন্দেহ করেন’

‘ওহ মাই গড!এই দেখি তুলকালাম বাঁধিয়েছো।আচ্ছা আমি বুদ্ধি দিচ্ছি।
যখন অনেকবছর আগে আমি তোমার টুকুকে পছন্দ করতাম সেসময়ে আমাকে কেউ পছন্দ করতোনা,তোমার বোন ও না। কিন্তু আমি যখন প্রতিষ্ঠিত হলাম তখন তোমার বোন সমেত আশেপাশের সব মেয়েরা আমাকে পছন্দ করতে লাগলো।

এমনটা হলো কারণ আমি সেই আগের যুগে রিজেকশান দেখে দমে যাইনি,চেষ্টা করে গেছি বড় কিছু করার।আমি পেরেছি ও।
তোমার কাছে প্লাস পয়েন্ট হলো কেউ তোমাকে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ছাড়াই পছন্দ করছে।কিন্তু তোমায় দেখতে হবে জীবনের ঐ সময়টাতে কে তোমার পাশে থাকবে।মানে যখন তুমি একটা পরিপূর্ণ বয়সে পা রাখবে,প্রতিষ্ঠিত হবে, তোমার বিয়ে করা জরুরি হবে,সময় হবে, তখন তোমার জন্য কে থাকছে,রয়েছে তাকেই তুমি বেছে নিবে।তাই এই সুন্দর সমাধানটা পেতে হলে আগে তোমাকে সব ছেড়ে ক্যারিয়ারে মনযোগ দিতে হবে।বুঝেছো?’

‘বুঝেছি,কিন্তু যদি তখন এরা দুজনই থেকে যায়,তবে কাকে বেছে নিবো?’
‘প্রতিষ্ঠিত হওয়া এত সহজ পথ না।এই ধাপ গুলোতে তোমার একটা মানসিক শান্তির জায়গা গড়ে তুলতে হবে।এই দুজনের মাঝে যে তোমায় মানসিক শান্তি দেবে তাকেই তুমি বেছে নাও।’

‘আপা আপনি কি ঘুমাচ্ছেন?’
‘হু,কে!!!’
‘আমি আমি’
মিসেস আরাফাত লাফ দিয়ে উঠে বসলেন।গিয়াস সাহেব হুইল চেয়ারে বসে দরজার ফাঁক বরাবর ড্রয়িং রুম থেকে এ কথা বললেন।মিসেস আরাফাত বুকে থুথু দিয়ে চোখ ডলতে ডলতে রুম থেকে বের হলেন।
জীবনে এরকম মেয়ের বাপ তিনি চোখে দেখেন নাই।আজ চোখে দেখে নিলেন।এই লোকটাকে একটা শাস্তি দেয়া দরকার।

‘আচ্ছা ভাই,আপনি যে মেয়ে বিয়ে দিবেন।আপনার মেয়েরা শিক্ষিত,মার্জিত না হলে তো ইশানের মতন ছেলে পাবেন না’
‘আরে রাখেন ঐসব।সুন্দর হইলেই হয়,আর কিছু লাগেনা।মাশাল্লাহ আমার মেয়ে দুইটা একেবারে কাশফুলের মতন নরম আর সুন্দর’
‘তিথিও সুন্দর।কিন্তু আমার ছেলে তিথিকে কেন বিয়ে করেছে জানেন?’
‘কেন?’

‘কারণ সে মার্জিত এবং শিক্ষিত’
‘তো আমার মেয়েরাও শিক্ষিত হবে,মার্জিত হবে’
‘সেটার জন্য তো সময় লাগবে,অনেক বছর লাগবে।আপনার কি উচিত না অপেক্ষা করা?’
‘কত বছর?’

‘আমার বোনের ছেলেরা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে এ বছর।দুজনে জমজ।গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করলে ওদের ইশান জাপান নিয়ে নিজের কোম্পানিতে চাকরি দিবে,ভাল পোস্ট।তাদের জন্য রেখে দেন নাহয়!পড়ান,মেয়েদের বিয়ের বয়সটাও হোক।এবার বিয়ের বিষয়টা বন্ধ করলে ভাল হয় না ভাই?’

গিয়াস সাহেব গালে হাত দিয়ে ভাবতে থাকলেন।অনেকক্ষণ পর বললেন,’কিন্তু আমি শুনেছি তিথি অনার্সের একটা বিষয়ে ফেল করেছে,ইম্প্রুভ দিয়েছে।তাহলে সে শিক্ষিত হয় কি করে?’
‘এটা সেই শিক্ষিত না ভাই।এই শিক্ষিত মানে যে বাচ্চাকাচ্চাকে একটা নূন্যতম জ্ঞান দিতে পারবে যেটা অশিক্ষিত মেয়ে দিতে পারবেনা।’

‘তা অবশ্য ঠিক।এই তো মিলে গেলো!আমার পিংকি অংকতে ৩পাইছে।তার মানে সেও তিথির মতন বর পাবে’
(‘এই লোকটা জঘন্য একটা লোক!’)
‘কিছু বললেন আপা?’
‘না বলেছি ঠিক বলেছেন।’

তানিয়া চায়ের ট্রে নিয়ে চলে গেছে,তার পিছু পিছু পান্নাও গেছে।
তিথি তাকের সাথে হেলান দিয়ে চা খাচ্ছিল।সেসময় রান্নাঘরে কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে সে না দেখেই বলে,’তানু? নে তোর চা খেয়ে নে’
এ কথা শেষ করার আগেই মাথায় ওড়নার বাহিরে দিয়ে কানের কাছে কারোর ঠোঁটের আওয়াজ শুনতে পেলো।সেই ঠোঁটজোড়া বলছে,’প্রতিশোধ শেষ করি?’

তিথি ভয় পেয়ে পেছনে তাকায়।
‘প্রতিশোধ? এখনও বাকি?’
ইশান একটু ঝুঁকে বলে,’শুরুই বা হলো কবে?’
‘আর কি করতে চান?’
‘যদি বলি এই খানেই…..?’
তিথি চোখ বড় করে পিছিয়ে যায়।ইশান ওর হাতটা টেনে ফাউন্ডেশন দিয়ে বলে,’এটা লাগালে দাগ দেখা যাবেনা আই গেস!”

‘আপনাকে কে বলেছে শুনি?’
‘অনলাইনে দেখেছি,এই টুকু বুঝি’
এই বলে ইশান ওর হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে চলে যায়।
তিথি বলতে থাকে সে চা খাবে,তার চা খাওয়া দরকার।
ইশান হাসতে হাসতে চলে গেছে।
এরপর ড্রয়িং রুমে এসে সে তানিয়াকে বলে তার কাপটা তিথিকে দিয়ে আসতে। সে রান্নাঘর থেকে এটা এনেছে।

‘আপা আরও একটা কথা ছিল। বলি?’
‘না,আমি চা খেয়ে নিই?’
‘আপা চায়ের আড্ডাতেই তো মানুষ আলাপ আলোচনা করে।বলি?শুনুন না একটু!আপনি আমার মায়ের পেটের বোন নাহলেও আপনাকে দেখে আমার কেমন রগে রগে টান খাচ্ছে, যেন আপনি আমার মায়ের নাড়ি-ছেঁড়া ধন!’
‘কিহ!’

‘মানে আমারই আপন বোন, দেখুন না ডান হাতের রগটা পু পু করেছে’
‘কই দেখছিনা তো’
‘আপনি দেখবেন কিভাবে!রগটা তো আমার। যা বলছিলাম শুনুন,ঐ ছেলে দুটোর ছবি দেখাতে পারবেন?মানে নিজের হবু মেয়ে জামাইদের একটু দেখে নিতাম।চোখের শান্তি বলেও তো একটা ব্যাপার আছেনা?’
মিসেস আরাফাত ইশানকে ডেকে বললেন,’গুলু- চুলুর ছবি আছে তোর কাছে?’

যদি তুমি বলো পর্ব ৪৩

‘কেন?’
‘ওনাকে একটু দেখানোর জন্য’
‘এক মিনিট আপা,গুলু -চুলু কি আমার হবু মেয়ে জামাইদের নাম?’
‘আমার বোনের ছেলেদের নাম।’
‘এটা কেমন নাম?নামের মধ্যেই ফাজলামি মিশে আছে।ছেলেগুলা আর কিরকমই বা হবে।আমি ছবি দেখবোনা’

যদি তুমি বলো পর্ব ৪৫