যদি তুমি বলো পর্ব ৪৩

যদি তুমি বলো পর্ব ৪৩
আফনান লারা

ইশান আর তিথি এয়ারপোর্টে নেমে তাদের বাসার গাড়ীর অপেক্ষা করছিল তখনই তাদের দুজনের নজরে পড়ে একটা ব্যান্ডওয়ালার দল।হাতে লিফলেট লাগানো যাতে লেখা’ওয়েলকাম ব্যাক ইশান,তিথি’
ওরা দুজনে তো বেশ অবাক হলো।এটা কার কাজ হতে পারে!
দুজনে সেখানে দাঁড়াতেই ফুলের মালা পরিয়ে দেয়া হলো তাদের।
ভীড় থেকে বেরিয়ে এলো গিয়াসউদ্দিন,তাও হুইল চেয়ারে করে।

‘ইশান বাবা ভাল আছো?’
‘আপনি কে আঙ্কেল?’
তখন তিথি সালাম দিয়ে বলে এটা গিয়াস আঙ্কেল,ওদের প্রতিবেশী।
‘ওহ হো।কেমন আছেন?আর এসব কি?ঠিক বুঝতে পারছিনা’
‘কি আর বলবো বাবা!আমার অবস্থা তো দেখছোই।সেসব অনেক কাহিনী।সময় করে বলবো নাহয়।এখন আমার এখানে আসার অন্যতম কারণ হলো তোমাদের রিসিভ করা।দেখলে তো কেউ তোমাদের একটু নিতেও আসেনি,কিন্তু নো ওয়ারি হোয়েন গিয়াস উদ্দিন ইজ হিয়ার।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

‘আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।’
‘এবার চলো,আমি তোমাদের জন্য গাড়ী নিয়ে এসেছি’
এই বলে তিনি তার কর্মচারীকে বললেন হুইল চেয়ার ঠেলার জন্য।
ইশান ফিসফিস করে বলে দূর সম্পর্কের আত্নীয়র এত খাতির আসছে কই থেকে।
তিথি ও বুঝতেছেনা আসলে এনার মতলব টা কি।
গাড়ীতে তিনি ইশান আর তিথির মাঝ বরাবর বসেছিলেন।তিথিদের বাসায় যেতে দেড় ঘন্টার মতন সময় লাগবে তাই এই সুযোগ টাকে তিনি কাজে লাগাবেন।

‘বাবা তোমার কি চাচাতো,ফুফাতো, মামাতো,খালাতো,হুদাতো কোনো ভাই নাই?’
‘হুদাতো মানে কি আঙ্কেল?’
‘মানে এমনি ভাই’
‘ওহ।আছে তো,অভাব নেই কিন্তু কেন?’

‘আমার না ফুটফুটে দুইটা মেয়ে আছে বুঝছো?একটার নাম পিংকি আরেকটার নাম পান্না।দুজনকে নিয়ে আমার বড় চিন্তা হয়।এতো আর কটা বছর পর তারা বিবাহযোগ্য হয়ে যাবে।তখন আমি যদি তোমার মতো একটা ছেলে না পাই তাহলে কি হবে বলোতো?যদি খারাপ কেউ জুটে তাহলে তো জীবনটাই গেলো’
তিথি মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।ছোট ছোট দুইটা মেয়ে যাদের এখনও নাক টিপলে দুধ বের হয়,তাদের নিয়ে এত চিন্তা!

ইশানের ও মাথা ঘুরছে।নিজের বিয়ে করেছে কত তিলিসমাতি করে, এখন আবার পাশের বাসার আঙ্কেলের মেয়ের বিয়ে দিতে হবে।
আচ্ছা এটাই কি সেই পিংকি যার কথা রিদম বলেছিল? ‘
‘ঠিক আছে আঙ্কেল জানাবো’
‘তুমি কি জানাবে?ছেলে আছে কিনা সেসব কিছু তো বললেনা।’

‘আছে, থাকবেনা কেন?আপনি শুধু বলুন কিরকম লাগবে?’
‘তোমার মত চুল,তোমার মত দেহগঠন, তোমার মতন বাড়িগাড়ী,তোমার মতন ব্যবসা। আমার এত লোভ নেই,কিন্তু ঐ যে মেয়েরা ভাল থাকুক এটাই চাই’
তিথি বলে,’বাহ আঙ্কেল বাহ!একেবারে ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খলজির বংশ চাইছেন দেখছি’
ইশানের হাসি আসলো তাও সে নিজেকে অনেক কষ্টে দমিয়েছে।তিথি আবার বলে,’এরকম পারফেক্ট জামাইয়ের আবার কিছু সাইড এফেক্ট থাকে।যেমন উনি আমায় অনেক অত্যাচার করেন’
‘সেকি!কিরকম অত্যাচার?’

রিদম শুয়ে শুয়ে গেমস খেলছিল,হঠাৎ মনে হলো পিংকির গায়ের কড়া পারফিউমের ঘ্রাণ। তারপরেও সেটাকে অদেখা করে সে গেমে মন দেয় কিন্তু এরপরই পান্নার গায়ের মিষ্টি গন্ধ নাকে আসতেই সে উঠে বসে।চেয়ে দেখে দুবোন সেজেগুজে এসে হাজির।রিদম হা করে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে আস্তে আস্তে সেই সিঙ্গেল বেড থেকে নেমে খাটের তলায় চলে যায়।পান্না আর পিংকি ঘুরে ঘুরে উপরের ঝাড়বাতি দেখছিল।

‘বুবু,মনে হলো রিদম ভাইয়া ছিল এখানে’
‘আরে না,এখানে সে থাকলে তো কথাই বলতো।চল ভেতরের রুমে যাই’
‘না না,এভাবে কারোর বাসায় ঢুকতেই ভেতরের রুমে যাব কেন?আমরা এই খাটে বসে থাকি। তানিয়া আপু আসলে কথা বলবো’

এই বলে পান্না আর পিংকি এসে খাটের উপর বসে পড়ে।রিদম ফ্লোরে শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছে।
‘বুবু রিদম ভাইয়াকে যে দেখছিনা? ‘
‘এই তুই সারাক্ষণ রিদম রিদম করিস কেন?ও আমার বিএফ নাকি তোর?’
‘বিএফ মানে কি বুবু?’
‘আমি নিজেও জানিনা,ক্লাসে সবাইকে দেখলাম এরকমটাই বলে ছেলে বন্ধুকে ‘
পান্না ভাবছে তবে রিদম ও ওর বিএফই হবে।

গিয়াস সাহেব তার দুই মেয়েকে বলে গেছিলেন তারা যেন সেজেগুজে রিদমদের বাসায় চলে যায়,কারণ তিনি ইশানকে এনে ওদের দেখাবেন।
তেমনই হলো।ইশান আর তিথি বাসায় ঢুকতেই গিয়াস সাহেব তার মেয়ে দুটোকে ইশারা করলেন যাতে এসে সালাম করে।

দুজনে তাই করে।ইশান মুচকি হাসি দিয়ে বলে,’রিদম কোথায়?’
তিথি তার মাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।মা ইশানের কথা শুনে রিদমকে ডাকা শুরু করে।তখন রিদম খাটের তলা থেকে বেরিয়ে সালাম দিলো।
(‘বেয়াদব ছেলে!দুলাভাই বাসায় এসেছে আর সে খাটের তলায় বসে আছে!’)
কথাটা গিয়াস সাহেব বিড়বিড় করে বললেন।
রিদম চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে,আচ্ছা পান্না এভাবে তাকিয়ে আছে কেন!
ওর কেমন একটা অস্বস্তি লাগছে।এদিকে এখান থেকে নড়তেও পারবেনা।কি একটা মুছিবত!’

তিথি ফ্রেশ হয়ে বের হতেই ইশানের সাথে ধাক্কা লেগে কপালে ব্যাথা পেলো।তারপর কপাল ঘঁষতে ঘঁষতে বললো,’ইচ্ছে করে এমন করেন সবসময়”
‘ইচ্ছে করে করি নাই।যেহেতু অপবাদ দিলি তবে সেটাকে সত্যি করতে হয়’
এই বলে ইশান তিথিকে ধরে কপালে আরেকটা বাড়ি দিয়ে নিলো এরপর হাসতে হাসতে নিজে ফ্রেশ হতে চলে গেছে।

তিথি কপাল মুছে রুম থেকে বের হতেই মুখোমুখি হয় ইশানের মায়ের সাথে।
ওনাকে দেখে তার তো ভয়ে গলা টলা শুকিয়ে গেলো মূহুর্তেই।
সালাম দিয়ে এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকলো সে।
‘আমার ছেলে কোথায়?’
‘উনি ওয়াশরুমে’

উনি গাল ফুলিয়ে রুমে ঢুকে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে পাউডার নিয়ে তিথির গলায় ঘঁষতে লাগলেন এরপর বললেন,’মান সম্মান তো কিছুই রাখবেনা দেখছি।গলায় এমন দাগ নিয়ে নিশ্চয় সবাইকে দেখিয়ে দেখিয়ে এসেছো এতদূর?’

তিথি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে বলে,’না আসলে আমি হিজাব পরে এসেছিলাম।হিজাবটা মাত্রই খুলছি’
‘তবে আবার পরো, বাসায় সব ছোট ছোট ছেলেমেয়ে।তারা কি ভাববে?’
তিথি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।’নিজের ছেলের দোষ সব,আর যেভাবে ঝাড়ি দিচ্ছে যেন আমি ওনার ছেলেকে বলছি,”আসো আমাকে কামড়াও।দিছে তো দিছে।আমার জামাই দিছে তাই বলে এত অপমান করার কি আছে!আর ছোট রা কি ভাববে মানে!ওদের কি বলবো যে আমার জামাই কামড়িয়েছিল?ওদের বলবো বল্লা কামড় দিছিলো।ব্যস হয়ে গেলো।’

সেই সময় ইশান বের হয়।মা তো আবেগে আপ্লুত হয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে।ইশানই তামিয়াকে বলেছিল মাকে নিয়ে সোজা এই বাসায় চলে আসতে।সেও মাকে পেয়ে জড়িয়ে ধরে।তিথি ইশানকে দেখিয়ে গলার দাগটা ইশারা করে মনমত গালি দিলো মনে মনে,তারপর হিজাব বাঁধতে থাকলো।ইশান বুঝে গেছে মা নিশ্চয় উত্তম মধ্যম দিয়েছে ওকে এটা নিয়ে।

সে হাসতে লাগলো, ওকে হাসতে দেখে মা বললেন,’তোর বউকে কিছু শেখা।এভাবে খোলামেলা এসব প্রকাশ করতে নাই।ছোটদের কথা বাদ দিলাম,বড়রা কি ভাববে?দেখলাম পাশের বাসার এক ভদ্রলোক ও এসেছেন’
‘হ্যাঁ মা,আমিও বলছি মৌমাচির চাকের নিচে না যাইতে।তাও সে গেছে এখন দেখছো কিরকম লজ্জাকর পরিস্থিতিতে ওকে পড়তে হলো’
‘মৌমাচির চাক?জাপানে?’

‘হ্যাঁ তো।ঘুরতে গেছিলাম পার্কে,সেখানে বিদেশী তেঁতুল গাছে ধরেছিল।তিথিকে তো চিনোই সব কিছুতে ওর নাক গলানোর স্বভাব”
তিথি রেগেমেগে তেড়ে এসে বললো,”মোটেই না।মিথ্যা কেন বলছেন?মা জানেন,উনি আমাকে ঝাপটে ধরে এই যে এই জায়গায় কামড়েছিল।সেটারই দাগ এটা।আমি নাক গলাইনি’

মা লজ্জায় লাল হয়ে রুম থেকে চলে গেছেন একেবাসে।ইশান তখন তিথির কান টেনে ধরে বললো,’গাধী!তোকে বাঁচানোর জন্য মৌমাছির কথা বলছি,আর তুই কিনা বাড়া ভাতে ছাই ঢেলে দিলি!’
ইশান ও বিরক্ত হয়ে চলে গেলো।তিথি ভাবতে থাকলো দোষটা কোন জায়গায় ছিল তার!

‘আপনার কোনো বোনের ছেলে আছে?কম বয়সী বিসিএস ক্যাডার,কিংবা নুডুলস,কোক,চিপসের কোম্পানির মালিক?আমার এই তো দুটো মেয়ে।ওদের জন্য’

যদি তুমি বলো পর্ব ৪২

ইশানের মা গিয়াস সাহেবের কথা শুনে চোখ বড় করে চেয়ে রইলেন।তাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে গিয়াস সাহেব পান্না আর পিংকিকে যেটা শিখিয়ে এসেছিলেন সেটা ইশারা করলেন করার জন্য।
ওমনি দুবোন এসে ইশানের মায়ের দুপাশে বসে খালামণি খালামণি করতে লাগলো

যদি তুমি বলো পর্ব ৪৪