যদি তুমি বলো পর্ব ৪২

যদি তুমি বলো পর্ব ৪২
আফনান লারা

ইশানের ইচ্ছে ছিল আরও কটাদিন তিথিকে কষ্ট দিয়ে বুঝিয়ে দেয়া সে আসলে কি অন্যায়টা করেছিল অতীতে।কিন্তু তিথির কাছে হেরে বসে আছে।অতীতে হেরে গিয়েছিল আজ আবার হেরে গেলো।
ইশান মনে করেছে তিথি ওকে বাধা দেবে,কারণ তিথি তো ইশানকে ভালোইবাসেনা।
কিন্তু সে এটা না করে নিজের ইচ্ছাতেই ইশানকে কাছে আসতে দিলো।

ইশান ওকে ছুঁতে গিয়ে শুধু একবার বলেছিল,’যদি তুমি বলো তবেই আমি আজ নিজেকে মিলিয়ে নিবো তোমার মাঝে বিলিয়ে দিয়ে’
তিথি মাথা নাড়িয়েছিল।হুট করে এরকমটা হয়ে যাবে তারা দুজনেই হয়ত ভাবেনি। আচমকা হওয়া ঘটনাগুলো মনে দাগ কাটে বেশি।
ইশান অনুমতি ছাড়া এসব কিছুই করতোনা,আর যাই হোক এই একটা বিষয় যেটা অনুমতি ছাড়া করলে মেয়েরা আজীবন মাথায় রাখে।
(বুঝে নেন ক,খ,গ,ঘ সব হই গেছে।এত বলতে পারবোনা,আমার শরম করে🥱)

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

তিথি সকাল সকাল উঠে বসে ইশানের ফোনের আওয়াজে।ঘুম ঘুম চোখে ফোনটা কানে ধরতেই ওপাশ থেকে একটা লোক পাংপুং ছা কত কি বলে গেলো যার মাথামুণ্ড কিছু বুঝলোনা তিথি।তাইই সে বাধ্য হয়ে ইশানকে উঠাতে থাকলো।

চোখ ডলতে ডলতে সে দেখে ইশান উদম শরীরে ঘুমায়, এটা দেখে তিথি একটা মূহুর্তের জন্য চমকে গেলেও কাল রাতের কথা মাথায় আসতেই ইশানের পিঠ থেকে হাতটা সরিয়ে বিছানা থেকে নেমে দশ কদম দূরে চলে যায় সে।হেসে হেসে কাল যে সে অসাধ্য সাধন করে ফেলেছে এটা মনে করে মাথা ঘুরছিল ওর।আর ইশানই বা কেমন করে সব ভুলে গিয়ে ওকে মাফ করে দিয়ে কাছে টেনে নিয়েছে!

দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে চোখ বড় করে এসবই ভাবছিল সে ওমনি ইশানের কল আবারও আসায় এবার সে নিজেই উঠে বসে।ফোনটা ধরে সেও জাপানি ভাষায় উত্তর দেয় তারপর ফোন রেখে দেখে তিথি দেয়ালের সাথে লেগে দাঁড়িয়ে আছে

‘কি?সব ঘোরের মতন লাগছে?’
‘না মানে হ্যাঁ।বিশ্বাস হচ্ছেনা’
‘এদিকে আয় তো’
তিথি ভ্রু কুঁচকে বলে,’কেন?’
‘প্রমাণ দেখাবো’
‘না না থাক।আমার বিশ্বাস হয়েছে’

এটা বলে তিথি দৌড় দিলো।ইশান মুচকি হাসি দিয়ে বলে,’রেডি হয়ে নে।এয়ারপোর্ট থেকে কল এসেছে।অফিসের সবাই বিদায় দেয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছে।এমনিতেও লেট হয়ে গেলো।

পিংকি গোসল করতে অনেক সময় লাগায়,তাই পান্নাই মায়ের কাছ থেকে নাস্তা নিয়ে এসে রিদমের সামনে দিয়েছে।গিয়াস সাহেব নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিলেন।
যখনই রিদম কথা বলার জন্য মুখ খুললো ওমনি তিনি চোখ মেলে বললেন,’কে মরে গেছে?’
‘না আঙ্কেল,আমি বলেছি কমলার টুকরা পড়ে গেছে’

‘ওহ!তাহলে কেউ মরে নাই।না জানি কবে আমি মরে যাই।দুইটা মেয়ে বিয়ে না দেয়া মানে মাথার উপর দুইটা আটার বস্তা, দেখতে হালকা হলেও বয়ে বেড়ানো ওজনের’
‘হুম।আমার ও তো দু বোন’

‘তোমার আর কি!তোমার বড় বোন তো প্রেম না করে করে শেষমেশ এমন একজনকে ধরেছে যে একাই তোমাদের বংশের সবার বিয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টালে দিতে পারবে।তা বাবা ঐ ছেলের কোনো ভাই টাই আছে নাকি?তাহলে বুক করে রাখতাম আমার পিংকি আর পান্নার জন্য’

‘নেই,তবে ওনাকে বললে বিজন্যাস পার্টনার খুঁজে দিতে পারবে ‘
গিয়াস সাহেব তো মহাখুশি হয়ে গেলেন।নড়েচড়ে বললেন,’তবে তাই হোক।তোমার বোনের বিয়েতে একবার গিয়ে তোমার দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলে নিবো’

ইশান এয়ারপোর্টে এসে চলে যাবার সময় কুয়িনার বাবার হাতে একটা নেকলেস বক্স ধরিয়ে বললো কুয়িনার বিয়ের গিফট।সে যেদিনই বিয়ে করুক না কেন,এটা যেন তিনি কুয়িনাকে দেয়,কারণ কুয়িনার বিয়েতে সে আসবেনা,সুযোগ থাকলেও আসবেনা।

তিথি ডায়মন্ডের সেটটা উঁকি দিয়ে দেখছিল,তার ডায়মন্ড খুব একটা পছন্দ না তারপরেও সেটটা দেখতে অসাধারণ ছিল,মনে মনে একটু হিংসা কাজ করছিল।বউ হিসেবে তার ও তো প্রাপ্য ছিল এটা!

এসব ভাবতে ভাবতেই তিথি ইশানের সাথে প্লেনে উঠে যায়।তিথি মোটেও মন খারাপ করে বসে ছিল না কিন্তু সে যখন উঁকি দিয়ে সেটটা দেখছিল ইশান সেটা লক্ষ করেছে।তাই সে বসে বসে গ্যালারিতে ডায়মন্ডের অন্য একটা সেট দেখতেছিলো।তিথির আর বুঝতে বাকি নাই যে তার হাসবেন্ড তাকেও গিফট করবে।কিন্তু এটাই বিপদ।ডায়মন্ড দেখতে শুনতে ভাল হলেও পরে বিপদে পড়লে বিক্রি করা ঝামেলা।আর তিথি তো সংসারী মেয়ে তাকে তো এই টুকু ভাবতেই হতো।

‘আমাকে দিবেন?’
‘না তো,তানিয়াকে দিব ভাবছি।তুই তো ওর বিয়ের গিফট কিনলি,আমার ও তো কিছু দেয়া লাগবে’
‘দিবেনই যখন,,,স্বর্ণের কিছু দিন।পরে কাজে আসবে।তাছাড়া অনেকেই দেখলে শুরুতে বুঝবেনা ডায়মন্ড নাকি এমিটেশন।’
‘তবে তাই হোক’

রিদম অনেক কষ্টে বেঁচে ফিরছে।গিয়াস সাহেব যেভাবে কথার প্যাঁচে ওকে পেঁচাচ্ছিলেন,সে ভেবেছে না জানি আরও কত কি বলে আজ ওর বাসায় আসাটাই বাতিল করে দিতো।এ সংসারের মেয়ে জামাই যে হবে তার আর রক্ষে নেই!
বুকে থুথু দিয়ে রিদম চলেই যাচ্ছিল,তখনই বারান্দা থেকে পান্না ওর নাম ধরে ডাকে।
পান্নার ডাক শুনে রিদম পেছনে তাকায়

‘কি পান্তুয়া? ‘
‘বাবা বলেছে কারোর সাথে প্রতিদিন দেখা করতে চাওয়া,ফুল দেয়া,বিপদে পাশে দাঁড়ানো এসব মানে প্রেম’
রিদম পান্নার কথা শুনে হা করে তাকিয়ে আছে।কি বলবে সে নিজেও জানেনা।পান্না আবার বললো,’আমরা কি প্রেম করি?’

‘না’
‘তাহলে প্রতিদিন দেখা হয় কেন?’
রিদম পান্নার দিকে তাকিয়ে আছে।এর উত্তর কি দিবে তা ভাবতে যেয়েই বলে দিলো সে আর দেখা করবেনা।কথাটা পান্নার খুব খারাপ লাগলো।এতটাই খারাপ লাগলো যে সে ওখানেই কেঁদেই ফেলেছে।

রিদম বাসায় ফিরে দেখে তার বিশিষ্ট রুমটা খালি করে ফেলা হয়েছে যেটা আসলে তিথির রুম ছিল।
এর কারণ হলো ইশান আর তিথি বিয়ের এ কটাদিন এই রুমেই থাকবে
রিদম তো মহাখুশি,সে দুলাভাইকে আবার বোঝাবে তাকে বিদেশ নিয়ে যাবার জন্য।দেশের এই জঞ্জাল তার ভাল লাগেনা,এ বয়সে দুটো মেয়ে টানাটানি করছে,আরেকটু বয়স হলে মনে হয় এলাকায় থাকা যাবেনা।

আপাতত রিদম ড্রয়িং রুমের সিঙ্গেল বেডেই থাকবে বলে ঠিক করা হলো।
ঐদিকে তানিয়া আজ সকাল থেকে বাসায় নেই।রকিব নতুন ফ্ল্যাট নিচ্ছে।সেটা দেখতে ওর পুরো পরিবার গেছে কিন্তু তানিয়াকে নিয়ে যাওয়া হলোনা কারণ বিয়ের আগে এত বর কনের সাক্ষাত ভাল দেখায়না বলে।কিন্তু তানিয়া তো তিথিরই বোন।

তাকে আটকায় কে?বিয়ের শপিংয়ে তাকে কেউ আটকাতে পারেনি,আর এত বড় একটা কাজের বেলায় তাকে আটকানো যাবে?
মায়ের পুরোনো শাড়ী আর মুখে কালি মেখে সে হাজির রকিবের নতুন ফ্ল্যাট দেখতে।ধরা খেলে বলবে সে কাজের বুয়া।

সবার আগে ধরা খেলো রকিবের কাছেই।কারণ তারা নিজেদের লোকরা ছাড়া বারতি লোক কেন আসছে। এখন কি কাজের বুয়ার দরকার আছে?
‘আপনি কে?’
‘ইয়ে আমি তো কাজের বুয়া।দেখলাম আপনারা নতুন উঠছেন তাই বলতে এলাম আমি ফিরি আছি।আমাকে কাজে রাখতে পারেন।রান্নাবান্না আর ধোয়া মোছা বাদে সব পারি।একেবারে একশোতে দুইশ’

‘তানিয়া?বিয়ের চারদিন আগে কেউ মুখে পাতিলের তলার কালি মাখে?ব্রণ উঠলে কি করবা?’
‘চিনে ফেললেন?’
‘বুয়াদের মুখ কালো আর পা সাদা হয়না’
তানিয়া জিভে কামড় দেয়।সে পায়ে কালি দিতে ভুলে গেছে।তখন সে ফিসফিস করে বলে,”চাচুমা যেন টের না পায়।আমি বাসা দেখতে এসেছি।সব রুমই সুন্দর তবে ঐ যে পশ্চিমের রুমটা ভাল লাগেনি’

‘তবে সেটা গেস্ট রুম হবে।এবার কি কনফার্ম করবো ম্যাডাম?’
‘জ্বী স্যার’
ওমনি মা এসে বললেন,’রকিব বাবা?এই মহিলা কে?এত চিপকাই কথা বলছিস কেন?’
‘আরেহ মা।দেখে যাও,নতুন বুয়া পেয়েছি’
‘ওমা তাই!আমি আরও ভাবছিলাম বুয়া কই পাবো বিয়ের সিজনে।উমমম দেখে তো কম বয়সী মনে হচ্ছে।তা কি কি কাজ পারো?’

‘মা সে রান্নাবান্না আর ধোয়া মোছা বাদে সব পারে’
‘এ কেমন কথা!এগুলাই তো আসল’
‘সে তোমার পা টিপে দিবে।কি বলো রেখে দিবো?’
‘তবে রান্না করবে কে?’
‘সেটা তানিয়া করবে।তাইনা বুয়া?’

যদি তুমি বলো পর্ব ৪১

তানিয়া দাঁতে দাঁত চেপে মাথা নাড়ায়।মা চলে যেতেই তানিয়া রকিবকে ঝাপটে ধরে ওর গালে চুমু খেয়ে এক দৌড়ে পালিয়ে গেলো ওখান থেকে।মা যেতে যেতে ভাবছেন মেয়েটাকে চেনাপরিচিত মনে হলো।তাই তিনি আবারও পেছনে মুড়তেই দেখলেন রকিবের মুখে কালি আর সে চোরের মতন দাঁড়িয়ে আছে।

যদি তুমি বলো পর্ব ৪৩