হৃদয়হরণী পর্ব ২৯

হৃদয়হরণী পর্ব ২৯
তানিশা সুলতানা

ছোঁয়া দিব্যি ছেলেগুলোর সাথে হেসে হেসে কথা বলছে৷ হাত ধরছে৷ ছেলেগুলোও হা করে ছোঁয়াকে দেখছে৷ প্রচন্ড রাগ হয় সাদির৷ হাত মুষ্টি বদ্ধ করে ফেলে৷ চেংড়া পোলা বলতে এদের মধ্যেই কাউকে বুঝিয়েছে৷ কিন্তু সাদি কি করে বুঝবে কোন ছেলেটা ছোঁয়াকে পছন্দ করে? কারণ সকলেই তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে৷ সাদি যে বললো ছোঁয়া বিবাহিত এসব ওরা কানেই তুললো না
এবার সাদি দু পা এগিয়ে যায়

“ইডিয়েট চেংরা পোলা বলতে কাকে বুঝিয়েছো সত্যি করে বলো?
ছোঁয়ার হাত ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে সাদি। ছোঁয়া হাতে থাকা ফোনের স্কিনে নিজের ফেইসটা একটু দেখে নেয়। পাউড করে করে চুমু দেয় ফোনের স্কিনে৷

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বাচ্চারা সাদির দিকে তাকিয়ে আছে৷ মূলত এই আংকেলটা ডিস্টার্ব কেনো করছে এটাই তারা বুঝে চাইছে। ওরা ফুলবল খেলতে যাবে। এর মধ্যে এরকম ডিস্টার্ব মেনে নিতে না পেরে সাদির প্রতি রাগ জন্মায়।
ছোঁয়া সাদির হাতটা নিয়ের হাত থেকে ছাড়িয়ে বলে
” চেংরা পোলা বলতে আপনাকে বুঝিয়েছি। প্রেম করার জন্য আমার পিছে পিছে ঘুরছেন। আপনাকে পাত্তা দিবো আমি?

বুড়ো কোথাকার। সরুন সামনে থেকে। ভীমরতি ধরেছে৷
সাদি ভেবাচেকা খেয়ে যায়। কি বলে এসব?
ছোঁয়া মাঝারি সাইজের একটা ছেলের হাত ধরে। ছোঁয়ার থেকে বয়সে একটুখানি ছোটই হবে।
“এটা আমার বয়ফ্রেন্ড
আর ডিস্টার্ব করবেন না আমায়। প্রেম আমি করবো না আপনার সাথে।
ছেলেটা নিজের চুল গুলো বা হাতে পেছনে ঠেলে শার্টের কলার তুলে দু পা এগিয়ে এসে ছোঁয়াকে নিজের পেছনে নিয়ে বলে

” আংকেল আপনার সমস্যা কি? আপুকে কেনো ডিস্টার্ব করেন? আপু আপনার জন্য বাড়ি থেকে বের হতে ওবদি পারছে না৷ আপনাকে পছন্দ করে না আপু। সে আমাকে পছন্দ করে।
ছোঁয়া মুখ টিপে হাসছে৷ সাদি দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে৷
সাদির তাকানো দেখে ছোঁয়া শুকনো ঢোক গিলে
“চলো চলো সবাই৷ আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।

ছোঁয়া এখান থেকে যেতে পারলেই বাঁচে। সে এক পা বাড়াতেই সাদি আচমকা কোলে তুলে নেয় ছোঁয়াকে। চিৎকার করে ওঠে ছোঁয়া। সকলে এগোতে নিলে সাদি ধমককে ওঠে
” এক পা এগোলে সবার বাড়িতে কমপ্লেইন দিয়ে আসবো।

ভয়ে আর কেউ এগোয় না। সাদি ছোঁয়াকে কোলে নিয়ে ওই সরু রাস্তা ধরে এগোতে থাকে। তার ভাড়া বাড়িতে নিয়ে যাবে। বাড়িতে এখন সকলে রয়েছে। এই অবস্থায় কোলে করে ছোঁয়াকে নিয়ে যাওয়াটা বেমানান দেখায়।
রাস্তা ঘাটে লোক সংখ্যা নেই বললেই চলে। শুক্রবারের দিন। সকলের অফিস ছুটি। এই সময়টা তারা আরাম করে ঘুমচ্ছে বা পরিবারের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।

ছোঁয়া সাদির গলা জড়িয়ে আরামসে সাদিকে দেখছে। লোকটার গম্ভীর মুখখানা। কন্ঠনালির পাশের ওই তিলটা দারুণ ভাবে টানছে ছোঁয়াকে। টুপ করে একটু ঠোঁট ছুঁয়িয়ে দিতে মন চাচ্ছে। কিন্তু লোকটা যাদি ঠাসস করে ফেলে দেয়?
আরেহহহ ফেললে ফেললো তাতে কি হয়েছে?
একটা চুমু খাওয়াই যায়।

ছোঁয়া আরও একটু শক্ত করে গলা জড়িয়ে নেয়। চোখ দুটো বন্ধ করে ওষ্ঠদ্বয় ছুঁয়িয়ে দেয় সাদির গলায়। সাদি থামে না এবং কিছু বলেও না। ছোঁয়া ভেংচি কাটে। পাথর লোক একটা।
এবার ছোঁয়া ছোট করে কামড়ে দেয় সাদির গলায়। থেমে যায় সাদি। চোখ পাকিয়ে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। ছোঁয়া লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয়।

“আপনার গলা থেকে গন্ধ আসছে। ভাবলাম রাক্ষস টাক্ষস না কি তাই একটু কামড়ে পরিক্ষা করে নিলাম। জাস্ট এতটুকুই।
আপনার মতো বুড়োর প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্টি নেই।
সাদি আবার হাঁটতে থাকে। ছোঁয়া মুখ টিপে হাসে। একবার চিমটি কেটে দেয় সাদির বুকে টিশার্টের ওপর দিয়ে। পরে কি মনে করে টিশার্টের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে বুকের বা পাশে শক্ত করে হাত চেপে ধরে।
সাদি আবারও তাকায় ছোঁয়ার দিকে। ছোঁয়া দাঁত কেলিয়ে জবাব দেয়

” চেক করছি আপনি মানুষ না কি এলিয়েন।
“আমারও চেক করা দরকার তোমাকে ঠিক কিসে লাড়ে।
” চেক করার কি আছে। আমি নিজেই বলে দিচ্ছি আমাকে শয়তানে লাড়ে। আর আপনাকে মানুষ বানাতে বলে।
সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। কপাল করে বউ পেয়েছিলো। জাদু ঘরে তুলে রাখার মতো।
সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে দরজার সামনে নামিয়ে দেয় ছোঁয়াকে।
পকেট থেকে চাবি বের করে দরজা খুলে। ছোঁয়া ভেতরে ঢুকে টিভি চালিয়ে দেয়।

“যাকক এখানে এনে ভালোই করেছেন। এখন আমি মুভি দেখবো। উফফফফ গবুকে দেখবো। আমার জন্য চিপস নিয়ে আসুন ছোট ভাইয়া।
সাদি বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। ছোঁয়ার মাথায় গাট্টা মেরে কিচেনে চলে যায়। ছোঁয়া মাথায় হাত বুলিয়ে টিভি অন করে চিল্লিয়ে বলে

” ভাবছি গ্যাব্রিয়েল এর নেক্সট মুভির নায়িকা আমি হবো।
সাদি রান্না ঘর থেকেই একটা টমেটো ছোঁয়ার মাথা বরাবর ছুঁড়ে মারে। সত্যিই মাথায় গিয়ে লাগে।
ছোঁয়া গাল ফুলিয়ে তাকায় সাদির দিকে।
“গ্যাব্রিয়েল ওর শার্ট ধোঁয়ার জন্যও নিবে না তোমার। তুমি বরং জায়েদ খানের পেছনে লেগে যাও। দুই পাগলে মানাবে ভালো। মুভি হিট হবে।
ছোঁয়া ভেংচি কাটে।

“জায়েদ খানও আপনার থেকে ভালো। অন্তত রোমান্টিক গান গাইতে পারে। আপনি তো করলা গেলা ছাড়া আর কিছুই পারেন না।
” তোমাকেও গিলতে পারি। গিলে দেখাবো?”
সাথে সাথে ছোঁয়া দুই হাতে মুখ চেপে ধরে। মনে মনে সাদিকে শ-খানিক গালি দিয়ে টিভির চ্যানেল পাল্টাতে থাকে।
সাদি দুইজনের জন্য দুই মগ কফি বানিয়ে এসে ছোঁয়ার পাশে বসে।
ছোঁয়া তাকায়ও না সাদির দিকে। সাদি তাকিয়ে আছে।

“সানডে আমি সিঙ্গাপুর যাচ্ছি”
সাদির নরম গলা। সে ভাবে ছোঁয়া রিয়েক্ট করবে। সাদিকে জড়িয়ে ধরবে। যেতে না করবে। কিন্তু ছোঁয়া উল্টে হাতে কফির মগ নিয়ে গোল হয়ে বসে পড়ে।
“সত্যি?
আমার জন্য একটা রোমান্টিক সুন্দর জামাই নিয়ে আইসেন।
সাাি হতাশ হয়। হাত বাড়িয়ে ছোঁয়ার কাঁধ জড়িয়ে ছোঁয়ার মাথাটা বুকের সাথে চেপে ধরে। ছোঁয়াও ভদ্র মেয়ের মতো পড়ে থাকে সাদির বুকে।

” তোমাকে ভালোবাসি না আমি। তুমি শুধুমাত্র আমার বউ।
ভালোবাসি শোনার জন্য তুমি যা যা করছো এতে কাজ হবে না।
বুক ভাড়ি হয়ে আসে ছোঁয়ার। চোখেও পানি টলমল করে

“ভালোবাসা লাগবে না আমার। শুধু একটা বেবি দিন। যাতে বেবিটার মুখের দিকে তাকিয়ে আপনি কখনো আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা না ভাবতে পারেন।
সাদি কিছু বলতে যাবে তখনই কলিং বেল বেজে ওঠে। ছোঁয়া সাদির বুক থেকে মাথা তুলে। সাদি উঠে গিয়ে দরজা খুলে। আর তখনই হুরমুরিয়ে ঢুকে পড়ে সামির। সোজা গিয়ে ছোঁয়ার পাশে বসে

” আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে।
সাদি মাথায় হাত দিয়ে বলে। সাদি বিরক্ত। আবার ড্রামা শুরু করবে। ছোঁয়া আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। কি হয়েছে সামিরের জানতে চায় সে।
“কি হয়েছে ভাইয়া?।

” একটা মেয়ে আমাকে খেয়ে ছেড়ে দিয়েছে। এই মুখ আমি সমাজে কিভাবে দেখাবো? আমার কি আর এই জীবনে বিয়ে হবে? অকালে কপাল পুড়লো আমার।
ছোঁয়া এক পলক সামিরের দিকে তাকাচ্ছে তো আরেক পলক সাদির দিকে তাকাচ্ছে। খেয়ে ছেড়ে দেওয়ার বেপারটা আসলে ছোঁয়া বুঝতে পারছে না।
সামির তো কেঁদেই যাচ্ছে।
ছোঁয়া শুকনো ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করে
“ভাইয়া খেয়ে ছেড়ে দেয় কিভাবে?
সামিরের কান্না শেষ। চোখে কোনো পানি নেই।
” বোঝো নাই বেপারটা?

হৃদয়হরণী পর্ব ২৮

একটা মাইয়া আমাকে চুমু খেয়ে ব্রেকআপ করে দিয়েছে। তাহলে বেপারটা খেয়ে ছেড়ে দেওয়া হলো?
এখন অন্য পোলার লগে ঘোরাঘুরি করছে। আমার কি হবে?
ছোঁয়া এবার সামিরের দিকে একটু এগিয়ে বসে বলে
“ভাইয়া আমারও একই অবস্থা। খেয়ে ছেড়ে দেওয়ার বেপারটা আমার সাথে ঘটেছে। আপনার কষ্টটা আমি বুঝতে পারছি।

হৃদয়হরণী পর্ব ৩০