হৃদয়হরণী পর্ব ৩০

হৃদয়হরণী পর্ব ৩০
তানিশা সুলতানা

“খুলে বলো ছোঁয়া। আমি না ঠিক বুঝতে পারছি না।
সামির দুই পা গুটিয়ে গালে হাত দিয়ে আরাম করে বসে বলে৷ ছোঁয়া দীর্ঘ শ্বাস টানে।
” সাদি চাচা যাহ চা বানিয়ে নিয়ে আয়। সাথে পকোড়া বা নুডলস আনতে ভুলবি না।
সাদি কটমট চোখে তাকায় সামিরের দিকে। সামির অবশ্য পাত্তা দিচ্ছে না। যেনে সাদির রাগে তার কিছুই এসে যায় না। সে এবার ছোঁয়ার কথা শুনবে৷

“চায়ের সাথে বিষ মিশিয়ে আনবো।
বিরবির করে বলে সাদি। সামিরের কানে অবশ্য পোঁছেছে কথাটা তবে সে মনোযোগ নষ্ট করবে না। সাদি চাচাকে পড়ে দেখে নেওয়া যাবে।
” সেই দিন। উয়য়য়য়য়য় যে আমাদের বাড়িতে। আমি লজ্জা পেলাম?
“হ্যাঁ হ্যাঁ মনে আছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ইতিহাসের পাতায়ও লেখা হয়ে গেছে। জীবনে প্রথমবার তোমাকে লজ্জা পেতে দেখেছিলাম। তারপর শেখ হাসিনাকে বলে তোমার নামটা ইতিহাসের পাতায় কাজী নজরুলের বউয়ের পাশে লিখে দিয়ে এসেছি আমি।
খানিকটা ভাব নিয়েই জবাব দেয় সামির। সাদি কিচেনে যাওয়ার জন্য পা এগোচ্ছিলো সামিরের কথায় থেমে যায়।

বলা বাহুল্য এই দুই পাগলের কথা শুনতে সাদুর মন্দ লাগে না। মনে মনে ভীষণ এনজয় করে।
ছোঁয়া ভাবনায় পড়ে যায়। এতো মানুষ থাকতে কাজী নজরুল ইসলামের বউয়ের পাশেই কেনো?
প্রশ্ন করতে যাবে তখনই সামির আবারও বলে

” ছোঁয়া জলদি বলো। আমার কান্না কান্না ভাব ফুরিয়ে যাচ্ছে। কষ্ট ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। তোমার কথা শুনে তো আবার আমিও বলবো।
“হ্যাঁ হ্যাঁ বলছি। সেই দিন উনি মানে এই বুইড়া বেডা আমার সাথে নিকনিক করছে। তারপর আবার ওনার এক্সের কাছে যাওয়ার প্ল্যানিং করছে।
সামির মাথা চুলকায়। নিকনিক শব্দটা সে ঠিক বুঝতে পারছে না।

” নিকনিকটা কি ছোঁয়া?
“আরেহহ চুমু খেয়েছে।
” ওহহ আচ্ছা
বলতে বলতেই সামির লাফিয়ে ওঠে। চিল্লিয়ে বলে ওঠে
“কিহহহহহহহহহ

সাদি দুই হাতে কান চেপে ধরে। ছোঁয়াও ভয় পেয়ে যায় সামিরের চিৎকারে। ভীতু চোখে তাকায় সামিরের দিকে।
” চুমু তাও আবার সাদি চাচা?
ছোঁয়া ভয়ে ভয়ে মাথা নারিয়ে সম্মতি জানায়। সাদি বিরক্তিতে চোখ মুখ খিঁচে ফেলে৷
“আমি আগেই আন্দাজ করেছিলাম। ছোঁয়া তোমাকে আমি পরামর্শ দিচ্ছি এই বেডার পেছনে আঠার মতো লেগে থাকো। ভাড়ি বজ্জাত সাদি চাচা। আমার সাথে কি করেছিলো জানো?
ছোঁয়া মাথা নারায় মানে সে জানে না।

” আমার বিয়ে ভেঙে দিয়েছিলো। মেয়ে পটাতে গিয়েছিলাম দুজন ভালোই হাত ধরে হাঁটতেছিলাম তখনই ধমক দিয়ে দেয় মেয়েটাকে। অকালে বিধবা হয়ে যাই আমি।
আমাকে বিধবা করে দিয়ে এখন নিজে চুমুর প্রতিযোগিতা নেমে গেছে
সাদির কথায় চাপা রাগের আভাস পেয়েছে ছোঁয়া।

“কিন্তু আমার কপাল কতো ভালো তুমি জানো ছোঁয়া? সেই মাইয়া আজকে আবার ও আমার সামনে পড়েছিলো। এবং ধপাস করে একটা চুমু দিয়ে আরেকটা ছেলের হাত ধরে চলে গেছে।
সামিরের কথা বিশ্বাস করে নেয় ছোঁয়া। তখনই সাদি বলে ওঠে

” তোর ওই বাঁদরের মতো মুখে কোনো মেয়ে কিস করবে? দুই পাগল এক জায়গায় হলে ফ্রীতেই জোকস দেখতে পাওয়া যায়।
আমার কপালেই জুটেছে দুটো। ডিজগাস্টিং।
ছোঁয়া ফুঁসে ওঠে
“দুই দিন পরে যখন গবুর সাথে মুভি করবো না। তখন বুঝবেন পাগল না কি নায়িকা। আফসোসও করবেন।
” হ্যাঁ

আমিও যখন গবুর ওই এক্স নায়িকার সাথে মুভি করবো না তখন বুঝবি বাঁদর না কি নায়ক।
সাদি রাগে হিসহিস করে বলে
“মাইর খাওয়ার আগে আমার চোখের সামনে থেকে বেরিয়ে যা তোরা।
” ইচ্ছে করে এসেছি না কি? কিডন্যাপ করে এনেছেন আমায়। তাও আবার কোলে নিয়ে।
আঙুল তুলে বলে ছোঁয়া।

“আমিও ইচ্ছে করে এসেছি না কি? এক্স গার্লফ্রেন্ডকে আরেক বেডার সাথে দেখে আবেগের বসে তোর বাড়িতে চলে এসেছি। তখন আমার আবেগে কাজ করেছিলো। বিবেগে কাজ করলে এট লিস্ট তোর বাড়িতে আসতাম না।
সাদি চুপচাপ কিনেচে চলে যায়। এদের সাথে কথা বলতে গেলে মাথা নষ্ট হয়ে যাবে।
ছোঁয়া ফিসফিস করে বলে

” দেখলেন ভাইয়া ঝগড়া করে জিততে পারে নি বলে পালিয়ে গেলো।
সামির হাই ফাই করে ছোঁয়ার সাথে।
“ছোঁয়া শুনো। পাশের ফ্ল্যাটে একটা মেয়ে আছে নাম ঔশী। এতোদিন আমার সাথে মেসেঞ্জারে সংসার করেছে। কিন্তু কাল থেকে কথা বলছে না। এখন তুমি ওই ফ্ল্যাটে যাবে। মেয়েটাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে আসবে। আমি ওই রুমে থাকবো। তুমি মেয়েটাকে ওই রুমে দিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিবে।
বুঝেছে?
ছোঁয়া একটু ভাবে।

” তাহলে আমাকেও এভাবে সাদুর সাথে রুমে বন্ধ করে দিবেন কথা দিন?
“ঠিক আছে। পাক্কা।
ছোঁয়া মাথায় ওড়না দিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে যায়। সাদি নিশ্চিত ছোঁয়া ঔশীকে আনতে পারবে। তাই সে খুশিতে ” তুমি দিও না গো বাসর ঘরের বাতি নিভিয়ে গান গাইতে গাইতে রুমে ঢুকে যায়।
ছোঁয়া ঔশীদের ফ্ল্যাটে গিয়ে কলিং বেল চাপে। ফর্সা লম্বা সুন্দরী একটা মেয়ে দরজা খুলে।

“কাকে চাই?
ছোঁয়া ঔশীকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে
” ওয়াশরুমের দরজা খুলতে পারছি না। বাসায় কেউ নেই। একটু হেল্প করবা আপু?
ছোঁয়ার মুখখানা দেখে নিষ্পাপ মনে হয় ঔশীর। তাই সে মুচকি হেসে ছোঁয়ার সাথে যায়। ঔশী রুমে ঢুকতেই ছোঁয়া ধাক্কা দিয়ে দরজা লক করে দেয়।

ভেতর থেকে ঔশি কিছুখন চেঁচামেচি করলেও এখন চুপ হয়ে গেছে।
ছোঁয়া কিচেনে চলে যায়। সাদি সত্যিই নুডলস রান্না করছে।
“আপুটা চুপ হয়ে গেলো কেনে?
” বাঁদর দেখে ভয়ে সেন্সলেস হয়ে গেছে।

সাদির কথা মোটেও ছোঁয়া বিশ্বাস করে না। তাই মুখ বাঁকিয়ে সাদির চুল টানার জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়। সাদি মাথা উঁচু করে ফেলে। যার ফলে ছোঁয়া নাগাল পায় না।
“হাত বড় হয়ে যাচ্ছে তোমার। এখানে ওখানে চলে যাচ্ছে। সেম টু ইউ আমি করলে কেমন হবে?
ছোঁয়া এক লাফে চুলার পাশে বসে পড়ে।

“দারুণ হবে”
সাদি তাকায় ছোঁয়ার দিকে। চোখে হাসে।
“ইডিয়েট
আমাকে জ্বালানোর একটা উপায়ও হাত ছাড়া করো না।
” দিয়া চলে আসলে আর জ্বালাবো না।
“দিয়া কে?

হৃদয়হরণী পর্ব ২৯

” আমার আর আপনার মেয়ে। সাদি এর দি ছোঁয়ার যা মোটমাট হলো দিয়া।
দারুণ না?
সাদি এবার সত্যিই হেসে ফেলে।
চুলা বন্ধ করে এসে ছোঁয়ার সামনে দাঁড়ায়।
ছোঁয়ার দুই গালে হাত দিয়ে কপালে শব্দ করে চুমু খায়। তারপর কপাল ঠেকিয়ে বলে
“আমার আধপাগল বউ।

হৃদয়হরণী পর্ব ৩১