হৃদয়হরণী পর্ব ৩১

হৃদয়হরণী পর্ব ৩১
তানিশা সুলতানা

“আমাকে এখানে কেনো এনেছেন?
ঔশীর কন্ঠে রাগ স্পষ্ট। সামির খাটের ওপর টানটান হয়ে শুয়েছিলো। ঔশীর কথায় পায়ের ওপর পা তুলে নেয়। রাগে ঔশীর শরীর কাঁপছে। দিন দিন অসয্য হয়ে উঠছে লোকটা।

” কুতকুতি মাইয়া গানটা মুখস্থ করেছি। তোমাকে শোনানোর জন্য তুলে আনছি।
সামিরের মুখে হাসি। ঝকঝকে দাঁত গুলো দেখে ঔশীর রাগ তরতর করে বাড়তে থাকে। ইচ্ছে করছে লোকটার বড়বড় দাঁত গুলো হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে পেটে ঢুকিয়ে দিতে।
সামির এক লাফে বসে পড়ে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“আরেহহহ বা তোমায় তো দারুণ হ*ট লাগছে। উমমমম বেয়ারের থেকেও বেশি নেশা ধরে যাচ্ছে।
ঔশী এবার সামিরের গলা চেপে ধরতে যায়। সামির হাত ধরে টেনে পাশে বসিয়ে দেয়। ঔশী ছাড়া পাওয়ার জন্য ছোটাছুটি করতে থাকে।
সামির কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে ফিসফিস করে বলে
” একদম বাড়াবাড়ি করবে না। মানুষ মনে হয় না আমায়? কাল থেকে কন্টিনিউসলি ইগনোর করে যাচ্ছো। কষ্ট হয় না?।

ঔশী দাঁতে দাঁত চেপে জবাব দেয়
“মায়ার সাথে কি করেছেন আপনি মনে নেই? আপনার ইগনোর কেনো খু*ন করতে পারলে ভালো লাগতো।
সামির হাসে। ঔশীর কোঁকড়াচুল গুলো বিনুনি করা ছিলো। বিনুনিটা বা পাশে দিয়ে গলায় ওষ্ঠ ছোঁয়ায়। কেঁপে ওঠে ঔশী। শক্ত হয়ে বসে পড়ে।

” মায়ার সাথে আমি কিচ্ছু করি নি। ইনফ্যাক্ট আমি তাকে ভালো করে চিনিও না।
কান্না পায় ঔশীর। ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে সে। মায়া তার বেস্টফ্রেন্ড। গোটা দুনিয়া ঔশীকে মিথ্যে বললেও মায়া কখনোই মিথ্যে বলবে।
গত পৌরসু ঔশী এবং মায়া এক সাথে ভার্সিটিতে যাচ্ছিলো। তখনই সামিরকে দেখিয়ে বলে “এই ছেলেটাই আমার এক্স ছিলো”

দুনিয়া থমকে গিয়েছিলো ঔশীর। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলো মানুষটার সাথে আর যোগাযোগ রাখবে না।
সামির ছেড়ে দেয় ঔশীকে। মেয়েটা মাথা নিচু করে কাঁদছে।
“আমি তোমাকে ভালোবাসি ঔশী। ট্রাস্ট মি আমি মায়া নামের মেয়েটিকে ঠিকভাবে চিনিও না। তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে।

ঔশী জবাব দেয় না। সামির বিরক্ত হয়।
দাঁড়িয়ে যায় সে। দুনিয়ায় এই একটা মানুষ যার কান্না তার সয্য হয় না।
” মায়াকে ডাকো।
সামনাসামনি ক্লিয়ার করবো ব্যাপারটা। এভাবে রংতামাশা ভাল্লাগছে না আমার আর।
ঔশী তবুও জবাব দেয় না।

সাদি লাগেজ গোছাচ্ছে। হাতে আরও একটা দিন সময় আছে তবুও আজকেই লাগেজ গুছিয়ে রাখছে। গতকাল সারাদিন পরিবারের সাথো কাটাবে সময় পাবে না।
ছোঁয়া খাটের ওপর বসে আছে পা নাচাচ্ছে এবং নুডলস খাচ্ছে।

“আচ্ছা সাদু আমাদের বেবি কবে হবে? দিয়া কবে আসবে?
সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে
“একটা শয়তান সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছি। আরেকটা শয়তান কি করে আনবো?

” আমি জানি আমি শয়তান। কিন্তু আমাদের দিয়া অর্ধেক শয়তান হবে। কেনো বলুন তো?
আপনি ভালো আমি শয়তান। তাহলে ভালো + শয়তান যোগ করলে কি হয়? অর্ধেক শয়তান।
সাদি জবাব দেয় না। সে তার কাজে ব্যস্ত। ছোঁয়ার নুডলস খাওয়া শেষ। বাটিটা খাটের ওপরেই রাখে। সাদির পেছনে এসে দাঁড়ায়।

“সাদু একটা প্ল্যানিং করলাম এখুনি। আপনার সাথে আমাকেও নিয়ে যান না। হানিমুনটাও সেরে আসতে পারবো।
” তোমার পাসপোর্ট নেই।
“তাতে কি হইছে? আমি নাহয় দাঁড়িয়ে যাবো। আর তাও না হলে আপনার কোলে বসে যাবো।
সাদি কোমরে হাত দিয়ে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। ছোঁয়ার চোখে মুখে খুশির ঝিলিক। মেয়েটা সুন্দরী। বড়বড় চোখ দুটো উঁচু নাক চিকন পাতলা ঠোঁট জোড়া। ঠোঁট লিপস্টিক নিয়েছিলো। নিচের ঠোঁটের লিপস্টিক খেয়ে ফেলেছে। এবার ওপরের ঠোঁটে আছে শুধু।

নাকে চিকচিক করছে পাথরের নাক ফুল। গলায় চিকন স্বর্নের চেইন।
গোলাপি ওড়নাটা গলায় ঝোলানো।প্রথম বার বোধহয় মেয়েটাকে এতোটা গভীর চোখো পর্যবেক্ষণ করলো সাদি।
ছোঁয়া দু পা এগিয়ে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সাদিকে। মুখ ঠেকেছে সাদির প্রসস্থ বুকে।
সাদিও পরম যত্নে আগলে নেয় নিজের প্রেয়সীকে।

” আমি আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি সাদি। আপনার ভালোবাসা চাই আমি।
সাদি গম্ভীর গলায় জবাব দেয়
“সামান্য কিসটাই সয্য করতে পারো না। আমায় কিভাবে সামলাবে?
ছোঁয়া জবাব দেয় না। চুপচাপ মানুষটার হার্টবিট গুনতে থাকে।
এভাবে কতোটা সময় পার হয় জানা নেই কারোরই।

” আমায় নিবেন না?
সাদি ধমক দেয় না। খুবই নরম গলায় প্রেয়সীকে বোঝায়
“এভাবে হবে না জান। পাসপোর্ট ছাড়া তোমাকে এয়ারপোর্টের ভেতরেই ঢুকতে দেবে না।
ইনশাআল্লাহ খুব দ্রুত তোমাকে নিয়ে যাবো।
চট করে ছোঁয়া সাদির বুক থেকে মাথা তুলে। এক গাল হেসে শুধায়

” গবুর কাছে নিয়ে যাবে?
বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে সাদি। ইচ্ছে করছে শয়তান ইডিয়েটটার তুলতুলে গাল দুটো চাপকে লাল করে দিতে।
“বলুন।
গবুর কাছে নিবে?
সাদি লাগেজে মন দিয়ে বলে

” হুমম
“আনরোমান্টিক কোথাকার।
কোথায় বলবেন “তুমি আমার ছোঁয়া তোমাকে কেনো গবুর কাছে নিয়ে যাবো”
তা না
ধুররর

রোমাঞ্চ করার বয়সে জামাইকে আমিষ বানানোর চেষ্টা করছি। আমার মতো কপাল পোড়া আর কে আছে?
ছোঁয়ার ন্যাকামি দেখে সাদি ভ্রু কুচকে ফেলে। সিরিয়াসলি ভাই?
মানুষ এভাবে কি করে ন্যাকামি করে?

হৃদয়হরণী পর্ব ৩০

“তোমাকে আমি ভালো হওয়ার ওয়ার্নিং দিলাম ইডিয়েট
” আমিও আপনাকে রোমান্টিক হওয়ার ওয়ার্নিং দিলাম জামাই।
“তাই না?
বলতে বলতো সাদি ছোঁয়ার হাত ধরে কাছে টেনে নেয়।

হৃদয়হরণী পর্ব ৩২