সে আমার সুকেশিনী পর্ব ২৯

সে আমার সুকেশিনী পর্ব ২৯
রাউফুন

সুপ্রিয়র হাতে ডায়েরি, দু চোখ জ্বলজ্বল করছে।বিউটিকে শান্ত করতেই সে এই রাতে লুকিয়ে বাড়িতে ঢুকেছে। ঠিক বিউটির রুমের বারান্দায় গিয়ে তাকে নানা রকম ভাবে বুঝিয়েছে। বিউটি শান্ত হতেই মিনহাজের বাড়ি থেকে আনা, ডায়েরির কথা মনে পড়ে।

ডায়েরি নিয়ে সে বিউটির বাড়ি থেকে এসে সেদিন বিউটিকে আনা সেই খালের পাশে বসে পড়লো। তার অত্যন্ত মন খারাপ আর সুখের সময় এই জায়গায় সে আসে। ডায়েরির প্রথম পাতা উল্টাতেই তার সমস্ত শরীর কেঁপে উঠলো। ঠিক যেমনটা তার প্রথম পরীক্ষার সময় অনুভব হয়েছিলো। দুরুদুরু, কাঁপা কাঁপা হাতে সে ডায়েরি খুলতে চাইলো কিন্তু খুলতে সাহস পাচ্ছে না। কিন্তু সে খুললো। হতে পারে এটা তার সারা জীবনের সব সমাধানের কষ্টের ফল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কাকনের তাদের সঙ্গে থাকা থেকে শুরু করে অনেক কিছু লেখা। সুপ্রিয় প্রায় সবকিছুই পড়লো। সে ডায়েরির পাতা উল্টালো।
তারিখ, পৃষ্ঠা দুই

‘এই সুপ্রিয় নামক ছেলেটা নাকি আমার ভাই। এই বাড়িতে আসতেই দেখলাম গায়ে সাদা গেঞ্জি পড়ে দৌড়া দৌড়ি করছে একটা বাচ্চা মেয়ের সঙ্গে। বাচ্চা মেয়েটির বয়স বোধহয় সাত থেকে আট হবে। সুপ্রিয়কে দেখতেই গা টা ঘিন ঘিন করে উঠলো আমার। গা জ্বলে উঠলো সে যখন আমাকে বুবু বলে ডাকলো! ওর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম মেয়েটির নাম বিউটি!’

তারিখ, পৃষ্ঠা ছয়
‘বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী অর্থাৎ আমার সৎ মা আমাকে একটাও কাজ করতে দেই না। আমাকে বলে শুধু তার পাশে বসে থাকতে। গল্প করতে বলে। কিন্তু মহিলাকে তো বলতে পারি না, এমনিতেও আমি এখানে কামলা খাটুনি খাটতে আসিনি৷ এখানে এসেছি বিশেষ কাজে। তোমাদের শেষ করতে।

দুই বছর থেকে তিলতিল করে এই ক্ষোভ জমেছে তোমাদের প্রতি। আমি যে তাকে দু চক্ষে সহ্য করতে পারি না এটা বুঝতে দেইনা৷ মহিলা আমাকে আদর করে কাছে ডাকলে আমার এতো রাগ উঠে কেন জানি না। ক্রোধ নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমাকে নিজের হাতেই কামড়াতে হয়, চুল ছিড়তে হয়৷ তারপর স্বাভাবিক হয়ে তার সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলি। অন্তরে বিষ, মুখে মধু চলতে আমার থেকে কেউ-ই ভালো ভাবে পারবে না। সময় এলে সব ক্ষোভের অবসান এক সঙ্গে করে ফেলবো। মহিলার যত্তসব আদিখ্যেতা ভাল্লাগে না। মটকা গরম হয়ে যায়!’

তারিখ। পৃষ্ঠা ৯
‘ইদানীং দেখি, মুসা নামের একটা লোক নোংরা চোখে আমাকে দেখে। আমার মাঞ্জা মা’র শরীরের দিকে লালসার দৃষ্টি। জিব যেনো লকলক করতো। প্রথমে এতো রাগ উঠতো। পরে আমারই অবশ্যি মুসাকে ওতোটা খারাপ লাগে নাই। লোকটার তার থেকে তুলনামূলক বয়স বেশি হলে বেশ গাট্টাগোট্টা শরীর! দেখতে বেশ। আস্তে আস্তে প্রনয় জেগে উঠলো আমারও। অবশ্য আমার ভাবনা আছে মুসাকে যথাযথ সময়ে কাজে লাগাবো। বেশি হলে একে ফাঁসিয়ে দিয়ে নিজে ভাগবো।’

আলাদা তারিখ, পৃষ্ঠা দশ!
‘আব্বাকে যত দেখি তত অবাক হয়। তার যে প্রথম স্ত্রী ছিলো তিনি তা ভুলেই গেছেন। কোনো দিন এসে আমার সঙ্গে মায়ের গল্প করে না৷ লোকটা দিন কে দিন মন থেকে উঠে যাচ্ছে। যদিও ভেবেছিলাম আব্বাকে বাঁচিয়ে রাখবো। যতই হোক লোকটা আমার জনক। কিন্তু এখন আর সইতে পারি না৷ তাই পরিকল্পনা বদলালাম। আব্বাকেও শেষ করে দেবো।’

সুপ্রিয়র চোখ আটকালো একটা জায়গায় গিয়ে। সে শার্টের হাতায় চোখ মুছে নিচ্ছে বার বার। সে যতবার চোখ মুছছে ততবারই তার চোখ জলে ভরে উঠছে। চোখের পানি ফুরাচ্ছে না।
তারিখ, পৃষ্ঠা চোদ্দ

‘মুসাকে দিয়ে আব্বা আর ঐ মহিলাকে খু’নটা করানোর পরিকল্পনাটা করেই ফেললাম। মুসা আর ওর বন্ধু আলীকে আমার দেহের লোভ দেখালাম।তাও শুধু দেহে তাদের মন ভরবে না। পরবর্তীতে আমার আপণ মায়ের কিছু গয়নার লোভ দেখিয়ে রাজি করিয়েছি।
তারিখ, পৃষ্ঠা পনেরো

খুনের প্রায় অনেক দিন পর লিখতে বসলাম। খু’নের পর আমি প্রথমে গেছিলাম নানিদের বাড়িতে। মুসাদের শরীরের লোভ দেখালেও আমি আমার সতীত্ব হাঁরাতে নারাজ ছিলাম। ওঁদের কে এটা সেটা বুঝিয়ে চলে এসেছিলাম নানু বাড়িতে। নানু বাড়ি একদিন থেকে, মায়ের আমার জন্য গড়িয়ে রাখা সব গয়না আর মামার কিছু টাকা নিয়ে পালালাম।

ট্রেইনে আর বাসে চেপে ঢাকায় এলাম। রাস্তায় রাস্তায় হাঁটছিলাম এক সময়। রাস্তায় কিছু মদারু ঘুরছে আর আমাকে বাকা চোখে দেখছে।ওঁদের সঙ্গে আমি পেরে উঠতাম না। হঠাৎই সুপ্রিয়র বয়সি একটা ছেলে এসে আমাকে বাঁচিয়ে নিলো। আমি অবাক হয়ে শুধু ওঁকে দেখছিলাম। এই টুকু না-বালক বাচ্চার কতো ক্ষমতা। ও আমাকে ওর বাসায় জায়গা দিলো। আমি ওর প্রতি কৃতজ্ঞ ছিলাম। ওহ্ পনেরো বছরের ছেলেটির নাম মিনহাজ।
পৃষ্ঠা ষোলো,

আব্বা আম্মাকে খু’ন করে একটা জায়গায় পুঁতে রেখে এসেছিলাম। বাড়ি থেকে বেশ দূরে এক জঙ্গলের আর্কীনে। লোকজন ভুত প্রেত আছে বলে সেখানে যেতো না৷ গ্রামের মানুষ ভূতে বিশ্বাসী খুব। ওঁদের সেখানে পু’তে গাছ লাগিয়ে দিতে বলেছিলাম মুসাদের। সর্বশেষে সুপ্রিয়কে ছু’রির আ’ঘা’ত করলাম। ভাবলাম শেষবার ওঁকে মুখটা দেখিয়েই দিই।

সুপ্রিয় তখন র’ক্তা’ক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে। দু চোখ ভর্তি তার জল। মাথা চেপে ধরে আমাকে গোলগোল আর আশ্চর্যজনক ভাবে দেখছে। ওর দৃষ্টিতে অবিশ্বাসের ছাঁয়া। আমি আনন্দিত খুব। ওঁকে তাকাতে দেখে ক্রুর হাসলাম। সুপ্রিয় গো গো করে আওয়াজ বের করতে লাগলো মুখ থেকে। আমার ইচ্ছে হচ্ছিলো গলায় পা’ড়া দিয়ে এক্ষুনি নিঃশ্বাস টা বন্ধ করে দিই। সুপ্রিয় কোনো রকমে করুণ কন্ঠে বললো,

‘কাকন বুবু, তোমার মনে আমাদের জন্য এতো বিষ ছিলো? আমার আম্মা তো তোমায় আপন করে নিয়েছিলো তাকে কেন মা’র’লে বুবু? সেসময় অন্তত আমার মায়ের মুখের জায়গায় তোমার মাকে দেখতে পারতে। আর আব্বা, সে তো কখনোই তোমাকে অবহেলা করে নাই?’

‘করেছে করেছে। তুই পনেরো ষোল বছরের ছোকড়া তুই কি বুঝবি? আমার মায়ের ক্যান্সার, আমার মায়ের অসহায়ত্ব, কষ্ট, করুণা, তোর এই নিমোকহারাম বাপের চোখে পড়ে নি? কু-**ত্তার বাচ্চা আমার মাকে ছেড়ে আড়ালে তোর মাকে বিয়ে করলো? আমার আম্মা বেঁচে থাকা অবস্থায় ঐ লোকটা কিভাবে পারলো তোর মাকে বিয়ে করতে? আমি জন্ম নেওয়ার পর একবার আমাকে দেখতে পর্যন্ত যায়নি তোর বাপ।

আমার আম্মা কিন্তু ম’রে যায়নি, তোর এই বাপ আম্মাকে মে’রে ফেলেছে। আর তোর আম্মা? তোর আম্মা আমার আম্মার প্রিয় বান্ধবী হয়েও আম্মাকে ধোঁকা দিয়েছে। সেটার শাস্তি তো পেতেই হতো ঐ মহিলাকে। আর তোর প্রতি? তোর প্রতি আমার কোনো টান নাই। তুই আমার কেউ হোস না।

সর্বক্ষণ কানের গোড়ায় বুবু বুবু করে, আর তোর ঐ বিউটি ফিউটির কথা শুনিয়ে শুনিয়ে কানের পোকা নাড়িয়ে দিস যখন তখন। তবে তোর প্রতি একটু মায়া তো কাজ করছে। কিন্তু তোকে বাঁচিয়ে রাখলে পুলিশ আমার খোঁজ পেয়ে যাবে। তোকে বাঁচিয়ে রাখা মানে আমার নিজের জন্য কবর খোড়া। তাই তোকে মা’র’তেই হবে ভাই আমার।’
সুপ্রিয় শেষ বার করুন কন্ঠে বললো,

‘আমার বিউটি ঠিক তোমাকে শাস্তি দেবে বুবু। আমি জানি আব্বা তোমাদের সঙ্গে বেইমানি করে নাই। আর যেদিন তুমি সত্যিটা উপলব্ধি করবে বুবু সেদিন তোমার জীবনের সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণায় ভুগবে, কেঁদেও কুল কিনারা পাবে না। আর আমার আম্মাকে বিনা অপরাধে মা’রা’র জন্য আল্লাহ্ তোমাকে কঠিন শাস্তি দেবে। প্রকৃতি সব ফিরিয়ে দেবে।’

তারিখ, পৃষ্ঠা উনিশ।
‘আজ আম্মার আনা একটা ডায়েরি পড়লাম। ডায়েরিটার কথা ভুলেই গেছিলাম। প্রায় এক বছর পর সেটা হাতে নিলাম। রাতের আঁধারে ডায়েরিয়া পড়ে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলাম না। জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়লাম। কারণ সেদিন আমি চরম সত্যিটা জানতে পারি।’

এরপর অনেক দিন পর ডায়েরিতে লেখা হয়েছে। আগের লেখা গুলো ঘোলাটে। হলেদেটে ভাব।
তারিখ, পৃষ্ঠা কুড়ি
‘আমি সেদিনের নির্মমতার কথা মনে পরলেই দূর্বল হয়ে পড়ি। কারণ আমি সত্যিই পরে আমার মায়ের ডাইরি পড়ার পর জানতে পারলাম, আমার আব্বা আমার আম্মার সঙ্গে বেইমানি করেনি। বরং আমার আম্মা নিজেই বলেছিলো বিয়ে করতে আরেকটা।

এবং সেটাও নিজের তার প্রিয় বান্ধবীকেই বিয়ে করতে বলেছিলো। ছোট আম্মাও এসব কিছু জানতো না৷ আমার আম্মা চাইতো না ক্যান্সার হয়েছে সে সম্পর্কে কেউ-ই জানুক। অনিশ্চিত জীবনে আর আমার আব্বাকে জড়াতে চাইনি আম্মা। এরপর থেকে আমি এখনো অব্দি এই খু’নের দায়ভার বহন করছি। তীলে তীলে শেষ হয়ে যাচ্ছি।

তিন তিনটি খু/ন করে দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছি আমি। এই পৃথিবীতে শ্বাস নিচ্ছি। মুক্ত শ্বাস। ছেলে দুটোর জন্য এখন আমি আরও মরিয়া হয়ে থাকি। মৃ’ত্যু’র ভয় আজকাল যেনো আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরছে আমাকে। ডায়েরি লিখার গুণ টা বোধহয় আম্মার থেকে পেয়েছি আমি। আম্মাকে প্রায়ই দেখতাম ডায়েরি নিয়ে বসে আছে। খুটিনাটি সবকিছুই আমি লিখে রাখি আমার এই ব্যাক্তিগত ডায়েরিতে। এতে আমার মনের ভেতরের চাপটা কমে। মাঝে মধ্যে মনে হয় মাথাটা ছিড়ে যাচ্ছে। দপদপ করে। আর আমি বিশ্বাস করি, এই ডায়েরি টাই একদিন আমাকে শেষ করে দেবে।’

তারিখ, পৃষ্ঠা বাইশ।
‘মাঝে মাঝেই স্বপ্নে দেখি, সুপ্রিয় এসেছে। আমি যেভাবে তাকে পেটে ছু’রি দিয়ে আ’ঘা’ত করেছি অনুরূপ ভাবে সেও আমাকে আঘাত করছে। আমাকে র’ক্তা’ক্ত অবস্থায় দেখে উল্লাসে ফেটে পড়ছে। অত্যন্ত ভয়ংকর আর ক্রুর হেসে বলছে, ‘কি কষ্ট হচ্ছে? তুমিও তো আমাকে এই একই ভাবে কষ্ট দিয়েছিলে, মনে পড়ে? পড়ছে নিশ্চয়ই।

আমিও আমার অত্যন্ত আপন, অত্যন্ত ভালোবাসার বুবুর সেই ভয়ংকর রূপ মেনে নিতে পারিনি। তোমার ছু’রির আঘাতের চেয়েও বেশি আঘাত দিয়েছিলো তোমায় সেই ভয়ংকর রূপ। আজ আমার শান্তি! শান্তি!’
এই বলে সুপ্রিয় কঠিন চোখ মুখে আমার বুকের উপর চেপে বসে, পরপর ছু’রির আঘাত করতে করতে, উম্মাদের মতো হাসতে থাকে। আমি তখনই ঘুম থেকে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসি। জেগে জেগেও বার বার সুপ্রিয়র সেই ক্রুর হাসি দেখতাম। দিনকে দিন আমার মানসিক যন্ত্রণা বেড়েই যাচ্ছিলো।’

তারিখ, পৃষ্ঠা চব্বিশ।
‘আজ যখন বিউটির সাথে আমার দেখা হলো, ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে গেলাম আমি। বিউটির কব্জিতে জন্ম দাগ, বাবার নাম, মায়ের নাম, ভাইয়ের নাম শুনেই আমি তাকে চিনে ফেললাম। তারপর সুপ্রিয় সব সময়ই বিউটির নাম জব করতো। বিউটির সঙ্গের সকল ঘটনা সুপ্রিয় আমার সঙ্গে শেয়ার করতো৷ বিউটির জন্মদাগটার কথাও বলেছিলো। আমার ভয় বাড়লো। বিউটিকে আমি অযথাই ভয় পেতে শুরু করলাম। এখন আর স্বপ্নে সুপ্রিয়র না বিউটির ভয়ংকর রূ’প দেখি।’

তারিখ, প্রষ্ঠা পঁচিশ।
বিউটি আর সুপ্রিয়র সম্পর্কে এতো কিছু আমি জানি বলেই মিনহাজকে আজ জানিয়েছি বিউটির ব্যাপারে৷ বুঝিয়ে বানিয়ে গল্প ফেঁদে বললাম, “দেখ মিনহাজ, সুপ্রিয় আমার ভাই ছিলো। তার সম্পর্কে আমি সব জানি। সে কলেরা হয়ে মা’রা গেছে। আর মৃ’ত্যুর আগে সে আমাকে বলেছিলো আমি যেনো বিউটিকে খুঁজে পেলে কখনোই তার মৃ’ত্যু’র কথা তাকে না জানাই। যেনো তাকে আমি সামলাই।

বিউটির ভালো থাকার দায়িত্ব আমাকে দিয়েছে আমার ছোট ভাই। আমি চাই বিউটি খুব সুখী হোক। আর তুই ছাড়া কেউ-ই ওঁকে সুখী করতে পারবে না। এদিকে বিউটি গো ধরে বসে আছে সে সুপ্রিয় ভাইকে ছাড়া কাউকেই বিয়ে করবে না। যেহেতু সুপ্রিয় বেঁচে নেই সেহেতু বিউটি আসল সুপ্রিয়কে কখনোই পাবে না। তুই আজীবন তার কাছে সুপ্রিয় ভাই হিসেবেই থাকতে পারবি।

তোর তাকে মিথ্যা বা আসল সুপ্রিয় ফিরে আসা নিয়ে ভয় পেতে হবে না। তাই আমি যা বলছি তাই কর। দেখ ভাই, তুই তো আর বিউটির কোনো ক্ষতি করছিস না। ওকে ভালোবেসে কাছে রাখতে এইটুকু মিথ্যার আশ্রয় নিলে কিছুই হবে না। ওঁকে ভালো রাখার দায়িত্ব নিতে হবে তোকেই। তোর চেয়ে ভালো এই দায়িত্ব কেউ-ই সুন্দর ভাবে পালন করতে পারবে না।”

এতো বুঝানোর পরেও মিনহাজ রাজি হচ্ছিলো না৷ মিনহাজ ইনিয়েবিনিয়ে বললো,
‘আমি কোনো মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে তার ভালোবাসা পেতে চাই না বুবু।’
‘আরে মিথ্যা কোথায়? আমি তোকে সুপ্রিয় আর বিউটির ছোট বেলার সম্পর্কে সবকিছু বলছি। মন দিয় শোন। আমার ছোট ভাইটা আমাকে ছাড়া তো কিছুই বুঝতো না। সব কিছু আমাকে বলতো।’
তারিখ, পৃষ্ঠা আঠাশ।

‘অনেক জোরাজোরি করার পর মিনহাজ বিউটির সঙ্গে অভিনয় করে সুপ্রিয় সাজার৷ অভিনয় করে এসে সে ভেতরে ভেতরে দগ্ধ হতে থাকে। মিনহাজ পায়নি বিউটির মন। বরং হিতে বিপরীত হয়েছে। সে আবারও প্রমাণ পেলো মিথ্যাচার কোনো ভালো কিছু বয়ে আনতে পারে না। বরং এর পরিনতি হয় ভয়ংকর থেকে ভয়ংকর!’
তারখ পৃষ্ঠা ত্রিশ!

সুমন্ত পনেরো বছরের ছেলেকে আমি নিজের মতো করে তৈরি করলাম। এই বয়সে সুমন্ত কত কিছুই না করে। পড়াশোনা ছেড়ে নেশা, জুয়া সবকিছুই করছে। আমার ছেলেটা এমন হতো না যদি না আমি চাইতাম। কাকন এই টাকা ওয়ালা বুড়োকে বিয়ে করেছে তো শুধু ক্ষমতা, আর টাকার লোভে। টাকা থাকলে একদিন সবকিছু নিজের হাতের মুঠোই আনা যাবে। যখন প্রয়োজন পরবে নিজের ছেলেকে তো ব্যবহার করবোই।

কারণ বিউটিকে মিনহাজের জীবনে আনাটা আমার উদ্দেশ্য। কিছুতেই আমি পরাজিত হবো না। এবারে বিউটিকে ম’র’তে হবে। আমি জানি সুমন্ত উঠতি বয়সের গড়পড়তায় বখে গেছে। কিন্তু তার বখে যাওয়ার পেছনে তো শুধু মাত্র আমিই দায়ী। তবে আমি ছোট ছেলেটার প্রতি আলাদা ভাবে নজর রাখছি সে যেনো বড়টার মতো না হয়। আমি ভেবেছিলো বড় ছেলেকে হাতের মুঠোই রেখে সবকিছু করবো।

কিন্তু এখন হচ্ছে উল্টোটা। কথা তো শুনেই না বরং আমার গলায় ছু’রি ধরে, গায়ে হাত উঠায়, নানান অন্যায় করে বেড়ায়। কিছু বললেই হুমকি সরুপ বলবে,’ মিনহাজ মামাকে বলে দেবো? তুমি একটা খু’নি? তোমার এসব কথা তো জেনেছি তোমার গোপন ডায়েরি পড়ে। আজ আমার এই অবস্থার জন্য তুমি নিজেই দায়ী। আম্মু, আমি আমার বন্ধুদের থেকে শুনি, ওঁরা কি বলে জানো?

বলে বাবা মা সব সময় সন্তানের ভালো চায়। তবে আমাকে তুমি এভাবে কেন মানুষ করলে? এমন বখাটে কেন বানালে? এবার যখন বখাটেদের খাতায় নাম উঠেই গেছে তোমাকে ছাড়বো কেন? আমার স্বীকার তবে তুমিও! তুমি যেমন তোমার মা বাবাকে হত্যা করেছো আমিও তোমাকে….. হাহাহা, আমার কিন্তু হাত পা’কা হয়ে গেছে। এক বিন্দুও হাত কাঁপবে না আমার। এখন ছেলেকে আমার ভয় হয়। প্রকৃতি সবকিছু আমাকে এভাবে ফিরিয়ে দেবে কল্পনাতীত ছিলো।’

সে আমার সুকেশিনী পর্ব ২৮

আর কিছু লেখা না। নিজেকে স্থির না রাখতে পেরে সুপ্রিয় চেঁচিয়ে উঠলো। মনকে শান্ত করতে মনের ইচ্ছে মতো চিৎকার করলো। ছোট বেলার মতো মাটিতে গড়াগড়ি করে কাঁদলো। কাঁদতে কাঁদতে সে মাটিতেই ঘুমিয়ে পড়লো। তার মনে হলো, তার গায়ে কেউ কাঁথা টেনে দিচ্ছে। সে আঁধো আঁধো চোখে দেখলো তার মায়ের হাতের সেই বালা। মা আসছে।তার মা এসেছে।

সে আমার সুকেশিনী পর্ব ৩০