যদি তুমি বলো পর্ব ৪৮

যদি তুমি বলো পর্ব ৪৮
আফনান লারা

পিংকির যে বয়স এ বয়সে মেয়েরা কাছের মানুষকেও হিংসার চোখে দেখে।হিংসার কারণ না থাকলেও হিংসা করে,তাদের মনে হয় ঐ মানুষটা অনেক খারাপ,তার খুশি চায়না।তাই তারা দুচোখে সহ্য করতে পারেনা অপর প্রান্তের মানুষটিকে।

পান্নাকে সেরকমই লাগে পিংকির কাছে।তার হিংসা বেড়ে দাঁড়ালো পাঁচগুণ যখন সে জানতে পারলো রিদম পান্নাকে একটা মালা গিফট করেছে।রিদম তো পারতো তাকেও একটা মালা দিতে।তাহলে সে এমনটা কেন করলোনা?
পান্না গলায় মালাটা পরে আয়নাতে নিজেকে দেখছিল অনেক গুলো খুশি মনের মাঝে জুড়ে রেখে।তার এতটা খুশি লাগছিল যে, সে ভাষায় তা প্রকাশ করতে পারছিল না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

‘পান্না এদিকে আয় ‘
পান্না খুশি মনে পিংকির কাছে এসে দাঁড়ায়।
‘কি বুবু??’
পান্নার কথাটা শেষ হতে না হতেই পিংকি মালাটা টেনে ছিঁড়ে ফেললো ওর গলা থেকে।এরপর চিৎকার করে বললো,’তুই জানিস রিদম আর আমি একজন আরেকজনকে পছন্দ করি।তার পর কোন সাহসে তুই রিদমের কাছ থেকে মালা চেয়ে নেস?তোর লজ্জা করেনা?’

পান্না ছিঁড়ে যাওয়া মালাটার দিকে চেয়ে আছে।তার যেন বুকটা ফেটে গেছে ঐ মালা ছিঁড়ার সাথে সাথে।চোখে পানি নিয়ে সে মালাটার যত অংশ ছিল সব জোড়া লাগাতে শুরু করে।
পিংকি উঠে চলে যায় তখনই।

তানিয়ার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান ছাদে হবে।রিদম অনেক বেশি ব্যস্ত। তার এই ব্যস্ততা আরও বাড়িয়ে দিলেন বাবা।রকিবদের বাসা থেকে আসা ডালার ফল তিনি এইবার গিয়াস সাহেবের বাসায় পাঠাতে চান,আগেরবার তিথির বিয়ের ডালার ফল আরাফ আঙ্কেলের বাসায় পাঠিয়েছিলেন।

রিদম সোজা মানা করে দেয় সে গিয়াস সাহেবের বাসায় যাবেনা।কিন্তু বাবা ওর হাতে ডালা দিয়ে আরও পাঁচশ টাকার নোট দিয়ে বললেন তার ভিডিও গেমসের অনলাইন পেমেন্টের টাকা এটা।
রিদম অবাক হয়ে গেছে।বাবা তাকে টাকাটা দিয়েই দিলো শেষমেশ?

কি আর করার!ডালা নিয়ে সে ঐ বাসায় এসে হাজির।আঙ্কেল দরজা খুলবেনা এটা নিয়ে সে নিশ্চিত কারণ উনি তো এখন হুইলচেয়ারে
কিন্তু যেটার ভয় ছিল সেটাই হলো।দরজা খুলেছেন সয়ং গিয়াসউদ্দিন।তার পা ভাল হয়ে গেছে আজকে ভোরবেলায় ওয়াশরুম থেকে পিছলে পড়ে যাবার সময়।

রিদম ওনাকে দেখে ভয়ে ভয়ে ডালাটা এগিয়ে ধরে বলে,’বাবা পাঠিয়েছে ‘
তিনি ডালা দেখে খুশি হয়ে গেলেন।ফলফলাদি তার খুব বেশি পছন্দ,খুশির চোটে তিনি দরজা খোলা রেখে ডালাটা নিয়ে চলে গেছেন।সেই সময় পিংকি রিদমকে দেখে এগিয়ে আসে কথা বলার জন্য।
‘দেখলাম পান্নাকে মালা দিছো।আমার জন্য কি কিনেছো?দিলে না যে?’

‘তুমি তো অনেক কিছু কিনলে দেখলাম।তাই তোমার জন্য কিছু কেনা হয়নি।তবে হ্যাঁ এই ব্রেসলেট টা পান্নাকে দিতে ভুলে গেছি।ও কোথায়?ওকে ডেকে দাও’
পিংকি মুচকি হাসি দিয়ে বললো,’ব্রেসলেটটা নিয়ে যাও।আর দেয়া হবেনা’
‘কেন?’

‘কারণ পান্না চলে গেছে দাদুর বাড়িতে। এখন থেকে ওখানেই থেকে পড়াশুনা করবে’
‘কিন্তু কেন?আর হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত কেন নেয়া হলো?গেলোই বা কখন?একবার দেখা করে গেলো না কেন?’
‘তাতে কি রিদম?তোমার তো খুশি হবার কথা যে পান্নার মতন আমিও দাদুর বাড়ি চলে যাইনি’
রিদম চুপ করে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ কি এমন হলো যে সে দাদুর বাড়িতে একেবারে চলে গেছে?

তিথি হলুদ শাড়ী একটা পরে তানিয়ার সাথে পার্লারে বসে আছে।তানিয়া সাজছে আর তিথি বসে বসে ফোন টিপছে। ইশানের কড়া নিষেধ,তিথি সাজতে পারবেনা।
‘আপু ইশান ভাইয়া আর রকিবের মাঝে আকাশপাতাল তফাৎ’

‘তা তো থাকবেই।রকিব খুবই ভদ্র একটা ছেলে।আর ইশান তো কিছু হলেই ছ্যাঁত করে ওঠে।’
‘না সেটা নয়।ইশান ভাইয়া তুমি না বলতেই সব করে দেয় আর রকিবকে আমার ধরে ধরে করাতে হয়।বিয়ের পর কি হবে আমার!’

‘সব দিক দিয়ে তো পাওয়া যায়না।’
‘তুমি তো পেলে’
‘কোথায়?রকিবের মতন ভদ্র হলে তো হতোই।একেবারে অভদ্র একটা ছেলেকে হাসবেন্ড হিসেবে পেয়েছি আমি।’
‘তাই না?’

ইশানের কথা শুনে তিথি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।মেয়েদের পার্লারে ওকে ঢুকতে দিয়েছে কিভাবে সেটাই ভাবছে তিথি তখনই পার্লারের আপুটা বললো ইশান নাকি তার ক্লাসমেট ছিল।
তিথি জিভ কামড়ে এক পাশে গিয়ে লুকিয়ে আছে।তার মানে এতক্ষণ যা যা বলেছে সব এই মেয়েটা ইশানকে বলে দিবে নয়ত ইশানই সব শুনেছে আগেই এসে।

‘তানিয়া তুমি সাজো,আমি আমার বোনকে তোমায় নিয়ে বাসায় ফিরতে বলেছি।এখন তোমার আপুকে নিয়ে আমি একটু আমার বাসায় যাব কাজ আছে’
‘কি কাজ?’
‘গেলেই দেখবি,চল চল’

ইশান তিথিকে আর একটা কথাও বলতে দেয়নি।টেনে নিয়ে গেছে।
তিথি বের হয়ে বলে,’কি হলো বলুন না,কেন যাচ্ছি?’
‘আমরা বাসায় যাচ্ছিনা একচুয়ালি’
‘তাহলে কোথায়?’
‘আমি অভদ্র’

‘না না একদমই না’
‘আমি কিছু না কিছু হলেই ছ্যাঁত করে উঠি’
‘না না,এগুলা মিথ্যা কথা।আপনি তো খুব ভাল’
ইশান আর কিছু বললোনা,গাড়ীর ভেতর তিথিকে ঢুকিয়ে সিট বেল্ট লাগিয়ে দিয়ে নিজেও এসে বসে।
তিথি ভয়ে শেষ,না জানি আজকে ওর ১২টা বাজায়।
ইশান গাড়ীর সামনের কাঁচের উপর হাত রেখে বলে ‘এই কাঁচ ভেঙ্গেছিলি, মনে আছে?’
‘হুম’

‘ভাঙতে খুব ভালো লেগেছিল তাই না?ভেবেছি তোর থেকে আর প্রতিশোধ নিবোনা।কিন্তু এখন মনে হয় এতদিন যা প্রতিশোধ নিছি ওগুলার একশান কম ছিল।’
তিথি ঢোক গিলে বলে,”আমি সত্যি ফান করে বলেছিলাম।সরি’
‘এখন আর সরি বলে কি লাভ?’
‘আচ্ছা আমরা কোথায় যাচ্ছি?’
‘নরসিংদী ‘
‘এতদূর?কেন?’
‘গেলেই দেখবি ‘

রিদম মন খারাপ করে এক কোণায় বসে আছে,কোনো কাজেই হাত দিচ্ছেনা,তানিয়ার কাজিন যারা আছে তারা রিদমের অনুপস্থিতিতে সব কাজে হেল্প করছে।তানিয়া পার্লার থেকে সেজে আসার পর থেকে খেয়াল করেছে রিদম মনমরা হয়ে বসে বসে টিভি দেখছে।

‘কিরে?তোর আদরের টুকুর গায়ে হলুদ,কাজ না করিস অন্তত কথায় কথায় নাচবি তো!কি হলো তোর?’
‘কিছু হয়নি’
‘বল আমায়।’
‘না তো কিছু হয়নি’

তিথিকে নিয়ে ইশান এসেছে পান্নার দাদার বাড়ি।রিদমের মন খারাপ দেখে ইশান জানতে পারে পান্না নাকি কাল রাতেই তার চাচ্চুর সাথে দাদার বাড়ি চলে গেছে।ওর বাবা মা আগেও চাইতে সে যেন দাদুর বাড়িতে থেকে মানুষ হয়,কারণ দাদা দাদি একা থাকেন।পান্না রাজি হতোনা,কিন্তু কাল রাতে হঠাৎ করে সে মত পাল্টায় এবং যাওয়ার জন্য জেদ করে।

তার চাচ্চু ঢাকায় ছিলেন বলেন যাবার সময় ওকে নিয়ে গেছেন।
ইশান তিথিকে নিয়ে এখানে আসার কারণ যে ঘটনা ঘটেছে তাকে ঠিক করা।তার বারবার মনে হচ্ছিল কিছু তো একটা হয়েছে যার জন্য পান্না এতদিন যেটাতে রাজি হয়নি,সেটাই করতে রাজি হয়ে গেলো,রাতারাতি চলেও গেলো!
এসব শুনে তিথি বলে,’রিদম তো পিংকিকে পছন্দ করে জানি’

‘তোর মন্ডু জানিস!’
গাড়ী থেকে বের হয়ে দুজনে আসমান আলীর বাড়ি খুঁজতে লাগলো।দ্রুত কাজ করতে হবে,সন্ধ্যার পর তানিয়ার গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে।দেরি হলে সে আবার রেগে যাবে।
তিথি হাতে ঠিকানা নিয়ে ছুটতে গেলো ওমনি ইশান ওর হাত টেনে ধরে।

‘একি!মানুষ দেখলে কি বলবে?আপনার মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে?’
‘আমি অভদ্র তাই না?’
‘না রে ভাই।তুমি অনেক ভদ্র,আমাকে মাফ করে দাও।আর বলবোনা’
‘ভাই??তাই না?’
‘রাস্তার মধ্যে কি শুরু করেছেন?’

‘রাস্তাটা ফাঁকা,আর আমি যতদূর জানি এই রাস্তায় দুই ঘন্টা ওর একটা সাইকেল যায়।সুতরাং আমার যেটা করার সেটা করতে সময় নিতেই পারি’
‘মানে!’
“করেন করেন, কেউ দেখছেনা ভাই’

এ কথা শুনে ইশান আর তিথি দুজনেই দূরে সরে উপরে তাকায়।একটা বন্ধ দোকানের ছাদে বসা এক যুবক কথাটা বললো।ইশান সানগ্লাস ঠিক করে বলে,’আসমান আলীর বাড়ি চিনো?’
‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকে শুনছিলাম।বাড়ির নাম দিয়ে চুমু ঢাকতে এ প্রথম শুনলাম’
‘হোয়াট চুমু!কি বুঝাতে চাইছো তুমি?’
‘ওটাই বুঝাতে চাইছি যেটা এখন করতে চাইছিলেন আপনারা।আমি কিন্তু সব দেখছি’
‘কি দেখছো?’

তিথি লজ্জায় লাল হয়ে ইশানের পকেট হাতিয়ে মানিব্যাগ বের করে এক হাজার টাকার নোট নিয়ে বলে,’নাও ধরো,চা বিসকিট খেয়ে নিও’
ছেলেটা হাসি দিয়ে নোটটা নিয়ে এক দৌড় দিছে।

যদি তুমি বলো পর্ব ৪৭

‘আপনার জন্য এক হাজার টাকা লস হলো।গাড়ীতে অভদ্রগিরি দেখাতে পারতেন না?’
‘কিসের লস!ছেলেটাকে যে টাকা দিছিস, ওটা নকল টাকা ছিল।তানিয়ার হলুদে টাকা ছিঁটাবো বলে নকল টাকা এক বান্ডেল জোগাড় করেছি’

যদি তুমি বলো পর্ব ৪৯