যেদিন তুমি এসেছিলে সিজন ২ শেষ পর্ব (২য় অংশ)

যেদিন তুমি এসেছিলে সিজন ২ শেষ পর্ব (২য় অংশ)
মুন্নি আক্তার প্রিয়া

রাফির ছোট্ট কণ্ঠস্বর ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছে বাড়ির প্রতিটা মানুষের কানে। সকলে প্রায় হতভম্ব। রাফি রেণুর হাত ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে বলছে,
“জানো মা, মামা না মামিকে চুমু খেয়েছে।”
রেণু রাফির মুখ চেপে ধরল। সবার দিকে তাকিয়ে ইতস্তত করে হেসে রাফিকে নিয়ে ঘরে চলে গেল। এদিকে রুম থেকে বের হওয়া দায় হয়ে পড়েছে অর্ষার। আহনাফ ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,

“আহা! এত সেন্টি খাওয়ার কী হলো বলো তো? সবাই জানে আমরা বিবাহিত। তুমি আমার বউ। তোমাকে চুমু খাব না তো কি পাশের বাসার ভাবিকে চুমু খাব?”
অর্ষা চোখ পাকিয়ে তাকাল। আহনাফ আমতা আমতা করে বলল,
“না মানে, কথার কথা বলেছি আরকি।”
“পাশের বাসার ভাবি মনে হচ্ছে বেশি সুন্দর?”
“সে কথা আমি কখন বললাম?”
“না হলে এত চুমু খাওয়ার শখ কেন তাকে?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ছি, ছি! তুমি ব্যতীত আর অন্য কোনো নারীকে চুমু খাওয়ার শখ, ইচ্ছে কোনোটাই আমার নেই।”
“আপনি কোথায় যাবেন এতক্ষণে আমি বুঝতে পেরেছি।”
“মানে! কী বুঝলে তুমি?”
“নিশ্চয়ই পাশের বাসার ভাবিকে নিয়ে ঘুরতে যাবেন।”
“মাথা খারাপ? আমার এত সুন্দর বউ থাকতে আমি অন্যের বউ নিয়ে কেন ঘুরতে যাব হু?”

“আপনার যেখানে যাওয়ার আপনি যান। আমি এখন কী করে সবার সামনে যাব সেই চিন্তায় ম-রে যাচ্ছি।”
“শুধু শুধু টেনশন করছ। কেউ কিছুই ভাববে না। তারা তো আর রাফির মতো বাচ্চা নয়। তুমি স্বাভাবিকভাবেই সবার সামনে যাবে, সবার সাথে মিশবে। আমি এখন আসছি কেমন?”
অর্ষা বিরসমুখে বলল,
“সাবধানে যাবেন।”

আহনাফ অর্ষাকে যতই বড়ো বড়ো কথা বলুক না কেন এতক্ষণ, এখন রুম থেকে বেরিয়ে সবার সামনে যেতে তার নিজেরই লজ্জায় ম-রি, ম-রি অবস্থা। সে ড্রয়িংরুম পার হলো অতি সংকোচ নিয়ে। বাকিরা তাকিয়ে মিটিমিটি হাসলেও কেউ দ্বিরুক্তি করেনি। আহনাফের পিছু পিছু হাসিবও এলো। গাড়িতে বসে বলল,
“শা-লা বিয়ে করে দেখি সিনেমা দেখানো শুরু করেছিস।”
“বাজে কথা বলিস না তো!”
“বাজে কথা বলতে যাব কেন? তুই ভাবিকে চুমু খাসনি?”

“হ্যাঁ, খেয়েছি। তো? নিজের বিয়ে করা বউকে চুমু খেয়েছি। এতে সমস্যাটা কোথায় ভাই? বিয়ের আগে অর্ষার ফ্রেন্ডরা জ্বালিয়েছে। এখন বিয়ে করে একটু চুমু খাচ্ছি সেখানেও তোদের যন্ত্রণা। করবটা কী বল তো?”
হাসিব শব্দ করে হেসে উঠল। হাসতে হাসতে পারছে না শুধু আহনাফের গায়ের ওপর পড়ে যেতে। আহনাফ বিরক্ত নিয়ে ওকে সরিয়ে দিল। হাসিব বলল,
“তোর মুখটা না এখন একদম দেখার মতো! তাকা একবার আয়নার দিকে। দেখ নিজেকে।”
আহনাফ তাকাল না। হাসিব বলল,

“চুমু খাওয়াতে তো আপত্তি নেই। তাই বলে রাফির সামনে?”
“ধুর! ওর সামনে কেন। ঐ সময়ে চলে গেছে।”
“দরজা লক করা উচিত ছিল না?”
“কে জানত এই সময়েই ও আসবে?”
“নেক্সট টাইম থেকে সাবধানে থাকিস।”
“হু। দশ, বারোটা তালা আগে লাগাব দরজায়। ঠিকাছে?”
হাসিব ভ্রুঁ নাচিয়ে হাসছে।

হাসিফ এবং আহনাফ দুজনে মিলে গিয়েছিল স্কুল লাইফের বন্ধুদের সাথে দেখা করতে। আজ কত বছর পর একেক জনের সাথে দেখা হলো তার হিসাব নেই। আহনাফের বিয়ের কথা শুনে সবাই যেমন আনন্দিত হয়েছে আবার তেমনি একটু আফসোসও প্রকাশ করেছে। এই দেখা করার প্ল্যান এবং যোগাযোগটা আগে থাকলে তো বিয়েটাও খেতে পারত। সে যাই হোক, এই আফসোস ঘোচাতে সবাইকে পরিবারসহ বাড়িতে দাওয়াত করেছে আহনাফ। পরিবার বলতে বউ, বাচ্চা। বাচ্চাদের প্রসঙ্গ ওঠায় হাসিব আহনাফের কানে কানে বলেছিল,

“ওদের তো বাচ্চাও হয়ে গেছে। তুই কবে আমাকে চাচা ডাক শোনার ব্যবস্থা করে দিবি বল তো?”
আহনাফও হাসিবের মতো করে ফিসফিস করে বলল,
“আমরা তো সবাই বিয়ে করে ফেলেছি। ইন-শা-আল্লাহ্ খুব শীঘ্রই আমি বাবাও হব। কিন্তু বন্ধু তোর জন্য খুব মায়া লাগে। বেচারা এতিম, অসহায়! তুই তো এখনও বিয়েটাই করতে পারলি না।”

এ কথা শোনার পর ফুটা বেলুনের মতো চুপসে গেছিল হাসিব। সেটা লক্ষ্য করে ভেতরে ভেতরে হাসছিল আহনাফ।
আহনাফের এতগুলো বন্ধুরা আসবে। এর মধ্যে আবার জহির চৌধুরীর কিছু নিকেট বন্ধুরাও তার পরিবার নিয়ে আসবে। বলতে গেলে আবারও একটা আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য বাড়িতে রান্না করার জন্য বাবুর্চি আনানো হয়েছে। অর্ষার বন্ধুরা চলে যেতে চাইলে জহির চৌধুরী এবং আহনাফ দুজনই নিষেধ করেছে। দাওয়াত রক্ষা করে তারপর যে যার বাড়িতে যেতে পারে। এর আগে নয়। রান্নাবান্নার জোগাড়-ব্যবস্থা দেখতে দেখতে জহির চৌধুরী ছোটো ছেলে আহিলকে ডেকে পাঠালেন। ব্যস্তভঙ্গিতে বাড়ি থেকে বাগানে এলো আহিল। বলল,

“আব্বু ডেকেছিলেন?”
তিনি দু’পা এগিয়ে গিয়ে বললেন,
“হ্যাঁ, বাবা। দুপুর তো হতে চলল। অর্ষার বাড়ির কেউ তো এখনও এলো না। তুমি গিয়ে ওদের এগিয়ে আনো।”
“জি, আচ্ছা। তারা কি বাসায় এখন?”
“হ্যাঁ, বাসায়। আমি ফোন করেছিলাম মাত্র। এখন আবার ফোন দিয়ে বলে দিচ্ছি, তুমি গেলে তারপর যেন আসে।”
“ঠিক আছে। আমি তাহলে বের হচ্ছি।”
“সাবধানে যেও।”

অর্ষাদের বাড়ি গিয়ে বড়োসড়ো শক খেল আহিল। বলাই বাহুল্য, শক-টা সে সকালকে দেখেই খেয়েছে। বারান্দায় চেয়ারে পা ঝুলিয়ে বসে আছে সকাল। আহিল মুখ মৃদু হা করে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। চোখের পলকও পড়ছে না তার। সকাল লজ্জা পেল। অস্বস্তিও লাগছে কিছুটা। সে সুললিত কণ্ঠে বলল,
“ওভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”
মুখের হা বন্ধ হলো আহিলের। বিস্মিতকণ্ঠে বলল,
“এমন ময়দার বস্তা সেজে বসে আছেন কেন?”
লজ্জার কপালে যেন হঠাৎ-ই ঝাড়ুর বারি পড়ল। সকল অস্বস্তি, লজ্জা ভে-ঙে-চূ-ড়ে গিয়ে মুখের আকারই পালটে গেল সকালের। সে ঢের বেশি বিস্ময় নিয়ে শুধাল,

“মানে?”
“সাদা ড্রেস, সাদা অর্নামেন্টস। ময়দাও সাদা। সে যাই হোক, পোশাক, অর্নামেন্টস সব সুন্দর এবং ঠিক ছিল। কিন্তু আপনার সাজের তো বেহাল অবস্থা। এত মেকাপ করেছেন কেন? ড্রেসের সাথে মুখ একদম মিশে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় আপনাকে ময়দার বস্তা না বলে কি উপায় আছে?”

মুখটা কাঁদোকাঁদো হয়ে গেল সকালের। এভাবে কি মুখের ওপর কেউ অপমান করে? তাছাড়া তাকে কি সত্যিই দেখতে ময়দার বস্তার মতো লাগছে? কই, যখন সে রুহুল আর বাবাকে ডেকে জিজ্ঞেস করল,’বলো তো আমায় কেমন লাগছে?’ তখন তো ওরা হাসিমুখে বলল,’একদম চাঁদের মতো।’ মা তো চোখ থেকে কাজল নিয়ে কানের পিঠে লাগিয়ে দিয়ে বলল,’আমার চাঁদের মতো সুন্দর মেয়েটার দিকে কারও নজর না পড়ুক।’ তাহলে এই মানুষটা কেন বলছে তাকে ময়দার বস্তার মতো লাগছে? বাকিরা কি মিথ্যে বলেছে?

সে কি সুন্দর নয়? সবই কি মেকাপের গুণ? সকালের খুব করে বলতে ইচ্ছে করল,’আমি মোটেও ময়দার বস্তা নই। মেকাপও বেশি করিনি। এই দেখুন আমার হাত দেখুন। পা দেখুন। আমার হাত-পা’ও তো ফরসা। আমি তো আর হাত-পায়ে মেকাপ করিনি। তাহলে কেন এই মিথ্যে অপবাদ? কেন, কেন, কেন?’ কিন্তু সকালের এসব কোনো কথাই বলা হয়ে উঠল না। আহিল বাবা-মায়ের রুমে চলে গেছে। সকাল তার নিজের রুমে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াল। ঠোঁট ভেঙে কান্না পাচ্ছে তার। সে টিস্যু নিয়ে মেকাপ তুলছে।

এতেও সন্তুষ্ট না হয়ে সে ওয়াশরুমে গিয়ে ফেসওয়াস দিয়ে মুখ ধুয়ে এলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখ মুছে দেখল তাকে এখনও সুন্দর লাগছে। সব যদি মেকাপের গুণই হয়, তাহলে এখন কেন তাকে সুন্দর লাগছে? উত্তরটাও ভীষণ সোজা। সে সুন্দর। সর্বাবস্থাতেই সে সুন্দর। আল্লাহ্-র সৃষ্টি সুন্দর না হয়ে উপায় কোথায়? শুধু, শুধু অন্যের কথা শুনে নিজের সাজ নষ্ট করতে গেল। যখন ভাবল আবারও সাজবে তখনই বাইরে থেকে রুহুলের গলা ভেসে এলো। বের হতে হবে। সাজা না হলেও চটজলদি ঠোঁটে লিপস্টিক লাগিয়ে দৌঁড়ে বের হলো সকাল।

আহনাফ এবং জহির চৌধুরীর বন্ধুরা তাদের পরিবার নিয়ে চলে এসেছে। এর মাঝে এক ছেলের সঙ্গে খুব ভাব হয়েছে অর্ষার। অন্তত আহনাফের কাছে তো এরকমটাই মনে হচ্ছে। ছেলেটা জহির চৌধুরীর বন্ধুর ছেলে। নাম আরিয়ান। দেখতে, শুনতে বেশ স্মার্ট। ছোটো বোনকে নিয়ে সেই তখন থেকেই অর্ষার সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে। বন্ধুদের রেখে উঠতেও পারছিল না আহনাফ। দূর থেকেই সব কার্যকলাপ দেখছিল আর ভেতরে ভেতরে ফাটছিল। তবে বাইরে তার ক্ষোভ বিন্দুমাত্রও প্রকাশ করেনি।

আহিল ও অর্ষার পরিবারের সবাই আসার পর একসাথে খেতে বসে সবাই মিলে। জহির চৌধুরী বাগানে বসার জন্য চেয়ার, টেবিল পেতেছেন। কিন্তু তার বন্ধুরা আবদার করেছে তারা অনেকদিন পর যেহেতু একসাথে হয়েছেন, সেহেতু সেই পুরনো দিনের মতো একসাথে নিচে বসে খাবেন। ব্যবস্থাও হলো তাই। বাগানে ঘাসের ওপর বড়ো কাপড় বিছানো হলো। আহনাফ এবং তার বন্ধুরাই বা বাদ যাবে কেন? অবশেষে দেখা গেল চেয়ার-টেবিল সব সেভাবেই পড়ে রইল আর বাকি সবাই বসল নিচে।

আহনাফকে না দেখে আশিক কবিতা জুড়ল,
“দুলাই, দুলাই ডাকপাড়ি,
দুলাই মোদের কার বাড়ি?
আয়রে দুলাই ঘরে আয়,
সব খাবার যে দিদার খায়।”
কবিতা শুনে বাকিরা হাসল। ভ্রুঁ কুঞ্চন করল দিদার। সে অভিযোগের সুরে বলল,
“হ্যাঁ, আমি একাই তো খাই। আর তোরা সবাই শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখিস।”
আহনাফ এসে বসল ওদের সাথে। আশিক উচ্ছ্বাসের সঙ্গে বলল,

“এইতো দুলাই এসে পড়েছে।”
আহনাফ ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,
“দুলাই কী আবার?”
“দুলাভাইয়ের শর্টফর্ম।”
আহনাফ দীর্ঘশ্বাস গোপন করল।
মুন আশিকের উদ্দেশ্যে বলল,
“আজকে আবার তোমাকে গুড়া কৃ-মিতে কা-ম-ড়া-বে না তো? না মানে, আমরা সবাই একসাথে খেতে বসলেই তো তোমার এই হাল হয়।”

লামিয়া দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে বলল,
“আজকে শুধু একবার অ্যা, উউউ করে মোচড়াক কিংবা বিষম খাক তাহলে ওর একদিন কি আমার যেই কয়দিন লাগে।”
আশিক সরু দৃষ্টিতে সামনে তাকাল। আহনাফ এবং অর্ষা একসাথে বসেনি। দুজনের মাঝখানে রয়েছে সকাল এবং আহিল। আশিক তাই দাঁত বের করে হেসে বলল,
“না, না। আজ একদম বিষম খাওয়ার চান্স নেই। আর কৃ-মিতেও কা’ম’ড়া’বে না।”
মুন বলল,

“কেন ভাই? ওদের কি দাওয়াত খেতে পাঠিয়েছ?”
“মনে করো তাই। ওদেরও তো মাঝে মাঝে দাওয়াত খেতে মনে চায় বলো?”
“তাও ঠিক। তা কোন টয়লেটে? তোমাদের বাড়ির টয়লেটে নাকি এই বাড়ির টয়লেটেই?”
আশিক মুখ থমথমে করে তাকাল। এই মেয়ে বলে কী! কী বোঝাল এই কথা দ্বারা? রেশমি মুনের কাঁধ চাপড়ে হেসে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
“আমরা সবাই খেতে বসেছি মুন। সেইদিনের মতো দয়া করে আজও ওসব কথা বলো না।”
“আরে আমি তো…”

আশিক দু’হাত জড়ো করে বলল,
“মাফ চাই মা! ক্ষেমা দে আমাকে।”
মুন খ্যাঁক করে উঠল,
“আমি মা? আমি দেখতে মায়ের মতো? তুই মা। তোর শ্বশুরবাড়ির সবাই মা।”
জুঁই বলল,
“কয়টা বকা দাও অ’স’ভ্যটাকে।”
“জুঁই তুই একটা সা’প’গু’ই।”
“এটা আবার কী?” জানতে চাইল সকাল।

“গু’ই’সা’প গো গু’ই’সা’প। ওর নামের সাথে মেলানোর জন্য সা’প আগে বলেছি, গুই পরে বলেছি।”
“গু খা শালা!” দাঁত-মুখ খিঁচে বলল জুঁই।
অর্ষা মৃদু ধমক দিয়ে বলল,
“থামবি তোরা? এখানে কত মানুষজন! চুপ কর।”
সবাই আশেপাশে তাকিয়ে চুপ করে গেল। খাওয়ার পাট চুকিয়ে এক ফাঁকে আশিক অর্ষাকে চুপিসারে ডেকে বলল,
“অ্যাই, তুই এত স্বার্থপর কেন বল তো?”

অর্ষা ভড়কে গিয়ে বলল,
“আমি কী করেছি?”
“সবাইকে দাওয়াত করলি। অথচ স্মৃতিকে দাওয়াত করলি না। কেন? ও কি তোর ফ্রেন্ড নয়?”
“দাওয়াত করেছিলাম। কিন্তু অফিসের জন্য আসতে পারেনি।”
“ইশ! মহারানির কত ব্যস্ততা! কাজ যেন সে একাই সব করে। একদম রাজকার্য উদ্ধার করে ফেলবে।”
“ও না আসায় তুই এত প্যানিকড কেন?”

“ইয়ে মানে! বলেছিলাম না ওকে আমার ভালো লাগে?”
সটান এক থা’প্প’ড় বসাল অর্ষা আশিকের গালে। আশিক গালে হাত রেখে বিষণ্ণকণ্ঠে বলল,
“মারলি কেন?”
“ওর দিকে তোর কু’ন’জ’র দেওয়ার জন্য।”
“কী যা তা বলছিস! ছি! কু’ন’জ’র দেবো কেন? বল সুনজর। আমার মতো সুদর্শন একটা ছেলের নজর পড়েছে ওর দিকে। কত ভাগ্যবতী তোর বান্ধবী জানিস?”

এবার অন্য গালে পড়ল থা’প্প’ড়। দু’গালে হাত রেখে প্রায় কেঁদেই ফেলবে এমনভাবে আশিক বলল,
“আবার কী করলাম?”
“নিজের নামে নিজে প্রসংশা করার জন্য। তুই কেমন সেটা আমাকে নতুন করে জানতে হবে? তোকে আমি চিনি না?”
“তাই বলে মারবি?”
“অবশ্যই। এতগুলো গার্লফ্রেন্ড থাকতেও তোর আরও লাগবে?”
“না। শুধু ওকেই লাগবে।”
“আরেকটা থা-প্প-ড় খাবি?”

“দিবি? আচ্ছা দিতে পারিস। তবে একটা শর্ত আছে। যদি শর্তটা মানতে পারিস তাহলে একটা নয়। গুণে গুনে চারটা থা-প্প-ড় দিতে দেবো যদি তুই স্মৃতির ফোন নাম্বারটা আমাকে দিস।”
“সামনে থেকে ভাগ যা।”
অর্ষা চলে আসছিল পেছন থেকে আশিক বলল,
“দিবি না তো? ঠিক আছে, আমি তোকে অ’ভি’শা’প দিচ্ছি। স্বামীর ভালোবাসায় তুই ডু’বে ম’র’বি।”
অর্ষা পিছু ফিরে জু’তা খুলে হাতে নিয়ে দৌঁড় দিল। আশিকও ভয়ে দৌঁড়ানো শুরু করে। অর্ষা থেমে গিয়ে জু’তা ছুঁড়ে মা’রে আশিকের দিকে। একটুর জন্য গায়ে লাগেনি। আরিয়ানও সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিল। সে হেসে অর্ষার জু’তা নিয়ে আসলো। অর্ষা অপ্রস্তুত হয়ে বলল,

“একি! আপনি জু’তা আনতে গেলেন কেন? ছি!”
“আরে ইট’স ওকে! ওকে জু’তা ছুঁড়ে মা’র’লে’ন কেন?”
অর্ষা জু’তা পরতে পরতে বলল,
“আর বলবেন না, ব-দে-র হাড্ডি একটা।”
“যাই বলেন না কেন আপনাদের ফ্রেন্ডশিপের বন্ডিংটা কিন্তু দারুণ। এরকম বন্ধুত্ব সচরাচর দেখা যায় না।”
অর্ষা সন্তুষ্টির হাসি হাসল। সে নিজেও এরকম বন্ধু নিয়ে গর্ববোধ করে।

ড্রয়িংরুমে বসে জহির চৌধুরী, আমেনা বেগম, ওমর রহমান, সেলিনা বেগম, রুহুলসহ আরও কয়েকজন মিলে কথাবার্তা বলছিল। বড়োদের মাঝে বসে থেকে সকাল কী করবে? তাই সে বাগানে এসেছিল। তখনই সে অর্ষা এবং আশিকের ঝগড়া দেখতে পায়। ওদের কান্ড দেখে একা একাই হাসছিল। আহিল সেখানে উপস্থিত হয়ে বলল,
“এভাবে হাসলে তো ভূ’তে ধরবে।”
হাসি বন্ধ করে রাগান্বিত চোখে তাকাল সকাল। দু’হাত বগলদাবা করে আহিলের দিকে ঘুরে দাঁড়াল। রাগে নাকের পাটা ফুলে গেছে তার। আহিল ভয় পাওয়ার ভান ধরে বলল,

“ওরে বাবা! মা’র’বে’ন নাকি?”
“আপনার সমস্যা কী? কেন সবসময় আমার মনোবল ভাঙার চেষ্টা করেন?”
“আমার? কই আমার তো কোনো সমস্যা নেই।”
“তাহলে খেয়ে না খেয়ে আমার পেছনে কেন পড়ে আছেন?”
“কিন্তু আমি তো আপনার সামনে।”
“কথা ঘোরাবেন না একদম বলে দিচ্ছি। তখন বললেন, আমি মেকাপ করে ময়দার বস্তা সেজে বসে আছি। আর এখন বলছেন হাসলে নাকি আমাকে ভূ’তে ধরবে। কেন? আমি কি দেখতে এতটাই কু’ৎ’সি’ত? আমার হাসি কি এতটাই বি’শ্রী?”
আহিল অবাক হয়ে বলল,

“আপনি এত সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছেন কেন? আমি তো এসব মজা করে বলেছি।”
“না,আপনি মজা করেও বলবেন না। আপনার এসব কথা আমাকে কষ্ট দেয়।”
আহিল খেয়াল করে দেখল সকালের দু’চোখে পানি টলমল করছে। ব্যথিত হলো আহিল। সে তো সকালকে কষ্ট দেওয়ার উদ্দেশ্যে এসব বলেনি। সত্যিই সে মজা করে, রাগানোর জন্য বলেছিল। সকাল চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়। রাগ সামলাতে না পারলে কেঁদে ফেলার মতো অতি বাজে স্বভাবটা তার রয়েছে। কিন্তু সে কোনোমতেই চাচ্ছে না আহিলের সামনে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করতে। পেছন থেকে আহিল সকালের হাত টেনে ধরল। সকালের বিনুনিতে একটা সাদা জবা গুঁজে দিয়ে বলল,

“এবার আপনাকে পরিপূর্ণ লাগছে শুভ্রাবতী।”
সকাল টলমলে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকাল আহিলের দিকে। আহিলের চোখে-মুখে মুচকি হাসির ছোঁয়া। সে যেন অনেকটা কৈফিয়ত দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
“ময়দার বস্তা নয়, ভূ’ত ধরার জন্যও নয় এত সুন্দর শুভ্রাবতীকে দেখে তো আমারই মাথা ঘুরে দেখে। অন্যদের তাহলে কী হাল হবে ভাবুন একবার?”

সকাল লজ্জা পেয়ে যায়। মানুষটা এমন কেন? সামনা-সামনি অপমান করে আবার প্রসংশাও। এই দুটোই যে সামনের মানুষটিকে অপ্রস্তুত করে ফেলে এটা কি সে জানে না? বোকা মানব!
“চুপ করে আছেন কেন?” জানতে চাইল আহিল।
সকাল নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
“আপনি একটা বোকা মানব!”

এরপরই সে ছুটে পালাল। ওর এমন ধরণের পাগলামিতে হাসল আহিল।
সন্ধ্যার দিক দিয়ে সব মেহমান এবং আত্মীয়-স্বজনরা চলে গিয়েছে। বাড়িটা এখন কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। নিষ্প্রাণ লাগছে। এতদিন হৈ-চৈ, আনন্দে মেতে ছিল। রাফিকে একটুখানি পড়িয়ে অর্ষা শাশুড়ির রুমে গেল। তিনি শুয়ে আছেন। অর্ষা মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“খাবেন না, মা?”
“এখন না। তোমরা যখন খাবে তখন খাব। রেণু কোথায়?”
“আছে তার রুমে। ডেকে দেবো?”

“হ্যাঁ, দাও। গতকাল একটা ভূ’তের গল্প বলেছিল। অর্ধেক বলে বাকিটা শেষ করার আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে। ওটা তো শেষ করতে হবে তাই না বলো?”
অর্ষা হেসে বলল,
“তা তো বটেই। আমি ডেকে দিচ্ছি।”

রেণুকে শাশুড়ির কাছে পাঠিয়ে দিয়ে অর্ষা নিজের রুমে এলো। সারাদিন কাজকর্ম, হৈ-হুল্লোড় করে এখন শরীরটা ভীষণ ক্লান্ত লাগছে। সে হাত-মুখ ধুয়ে এসে দরজা লাগিয়ে দিল। শাড়ি পালটে থ্রি-পিস পরে চুল আঁচড়িয়ে শরীরটা বিছানায় এলানোর মিনিট পাঁচেক পরেই আহনাফ আসে। দরজায় কড়া নাড়ছে। অর্ষা হাসিমুখে দরজা খুলে দিল। আহনাফ ভেতরে আসার পর দরজা লক করে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল অর্ষা। আহনাফ অর্ষাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ায় বেশ অবাক হলো সে। গম্ভীর হয়ে আহনাফ ঘড়ি, শার্টের বোতাম খুলছে। অর্ষা জিজ্ঞেস করে,

“কী হয়েছে?”
আহনাফ নিরুত্তর। অর্ষাই একই প্রশ্ন আরও কয়েকবার করে। কিন্তু আহনাফ কোনো উত্তরই করেনি। সে জামা-কাপড় নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেল। এর মাঝে রেণু এসে ডাকে। রাতের খাবার দিতে হবে। অর্ষা চলে যায় রান্নাঘরে। রেণুর সাথে খাবার গরম করে। তার মন পড়ে আছে ঘরে। আহনাফ তার সাথে কথা বলছে না কেন?
“ভাবি, আমি খালারে ডাইকা নিয়া আসি?”
“যান। মাকে গল্প শোনানো শেষ?”

“না, না। খালু আইসা পড়ছে তো তাই শ্যাষ করতে পারি নাই।”
অর্ষা হেসে বলল,
“আচ্ছা। কাল শুনিয়ে শেষ করবেন। এখন সবাইকে খেতে ডাকেন। আমি খাবার টেবিলে দিচ্ছি।”
একে একে সবাই খেতে আসে। আহনাফও এসেছে। তবে কারও সাথে কোনো কথা বলেনি। একদম চুপচাপ। এটা লক্ষ্য করে জহির চৌধুরী জিজ্ঞেস করলেন,
“কী হয়েছে আহনাফ? শরীর খারাপ?”

“মাথা ধরেছে আব্বু।”
“মেডিসিন নিয়েছ?”
“না। খেয়ে নেব।”
কথাবার্তা এরপর কাজকর্ম নিয়ে এগুলো। অর্ষা সবাইকে খাবার বেড়ে দিচ্ছিল এবং আড়চোখে আহনাফকে দেখছিল। রাফি বলল,
“মামি, আমাকে ডিম দাও।”
রেণু বলল,

“ভাবি আপনে খেতে বসেন।”
“পরে খাব।” বলল অর্ষা।
জহির চৌধুরী বললেন,
“পরে কেন? এখনই বসো। রেণুও বোস। আজ সবাই ক্লান্ত। তাড়াতাড়ি খেয়ে রেস্ট নিবি।”
আহিল হেসে বলল,
“আব্বু অর্ষা মনে হয় ডায়েট করছে।তাই খাবে না।”
অর্ষা বলল,
“তোর মাথা।”

সবার জোড়াজুড়িতে অর্ষাকেও খেতে বসতে হলো। খাওয়া শেষ হলে সব গুছিয়ে সে রুমে যায়। আহনাফ চোখের ওপর হাত রেখে শুয়ে ছিল। অর্ষা পাশে বসে হাত সরিয়ে বলল,
“বেশি মাথা ব্যথা করছে? আমি মাথা টিপে দিচ্ছি।”
অর্ষার হাত এবারও সরিয়ে দিল আহনাফ। গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“লাগবে না।”
“কী হয়েছে আপনার? এমন করছেন কেন?”
“কিছু হয়নি।”
“বলেন না! আমি কি কিছু করেছি?”
“না।”

“তাহলে?”
আহনাফ নিশ্চুপ।
“কী হলো? বলেন।”
আহনাফ শোয়া থেকে উঠে বসে। ধমক দিয়ে বলে,
“বললাম তো কিছু হয়নি। তারপরও কেন বিরক্ত করছ?”
অর্ষা আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আহনাফ এবার আর রাগ, ক্ষোভ ভেতরে চেপে রাখে না। সে বলে,
“আরিয়ানের সাথে তোমার হেসে হেসে এত কী কথা আমি তো সেসব বুঝি না।”
“মানে!”

“মানে বোঝো না তুমি?”
“নরমালি কথা হয়েছে। এটা নিয়ে আপনি রাগ করেছেন?”
“আমি নরমালি নিতে পারিনি। আমার বিষয়টা ভালো লাগেনি।”
“ছোটোখাটো বিষয় নিয়েও যদি আপনি এরকম রেগে যান তাহলে কীভাবে হবে? আমি তো লুকিয়ে কথা বলিনি। সবার সামনেই বলেছি। আপনিও ছিলেন সেখানে।”

“হাজারটা মানুষের সামনে বলো সেটা তো ফ্যাক্ট নয়। যতক্ষণ ছিল ততক্ষণই ওর সাথে তোমার কথা হয়েছে। এত কী কথা দুজনের? তোমরা কি পূর্বপরিচিত? নও তো! আজই দুজনের প্রথম দেখা, প্রথম পরিচয়। তাহলে এত কী গল্প করেছ আমাকে বোঝাও এখন।”
“ছোটো বিষয়টাকে আপনি টেনে বড়ো করছেন।”

“তোমার কাছে তাই মনে হচ্ছে? আহিল, আশিক, দিদার, হাসিব, আদিব ওদের সঙ্গে যখন তুমি কথা বলো, গল্প করো তখন কি আমি কিছু বলি? এমনকি ওদেরকে আমি বাসায়ও রেখেছি। আমার অনুপস্থিতিতেও তোমরা কথা বলো, গল্প করো। কখনও দেখেছ আমায় রাগ করতে? এসব নিয়ে কোনো কথা বলতে? ওদের সাথে তোমায় দেখলে তো আমার কখনও খারাপ লাগে না। রাগ আসে না। তাহলে আজ কেন আরিয়ানের সঙ্গে তোমায় কথা বলতে দেখে আমার রাগ হলো? বোঝো না তুমি? আমি একটা ছেলে হয়ে অন্য ছেলের চোখের ভাষা বুঝি না আমি?”

“আপনি কি বলতে চাচ্ছেন, সে একটা বিবাহিত মেয়েকে পছন্দ করেছে?”
“আমি কিচ্ছু বলতে চাচ্ছি না। কিচ্ছু না! তোমার যা ইচ্ছে, তুমি তা-ই করতে পারো। আই ডোন্ট কেয়ার!”
“আপনার কাছ থেকে আমি সত্যিই এমন ব্যবহার প্রত্যাশা করিনি।”
আহনাফ আরও রেগে যায়। গলার স্বর বাড়িয়ে বলে,
“এমন ব্যবহার বলতে তুমি কী বোঝাতে চাইছ?”
“ইমম্যাচিউরদের মতো আচরণ করছেন আপনি।”

“হ্যাঁ,আমি ইমম্যাচিউর,আমি রাগী, আমি খারাপ। থাকছ কেন তাহলে আমার সাথে? থেকো না। দরকার নেই তো এমন একটা মানুষের সাথে থাকার।”
অর্ষার কান্না চলে আসে। সে চোখ বন্ধ করে বড়ো করে নিঃশ্বাস নেয়। আহনাফের এমন ব্যবহার সে নিতে পারছে না। এত পজেসিভ ছেলেটা! সে আহনাফকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“আমি সরি। মাফ করে দিন। আমি বুঝতে পারিনি আপনি এত বেশি পজেসিভ।”
অর্ষাকে দূরে সরিয়ে বলল,

“হ্যাঁ,আমি পজেসিভ। তোমাকে আমি ভালোবাসি। তোমার প্রতি আমার পজেসিভনেস হাজার গুণ বেশি। তোমার এটা ভালো না-ই লাগতে পারে। কিন্তু আমি এমনই। আমি এটাই।”
অর্ষা ফের এগিয়ে যায়। হাত ধরে। আহনাফ এবারও হাত ছাড়িয়ে নিয়ে রাগারাগি করে শুয়ে পড়ে। অর্ষা ঠায় কিছুক্ষণ বসে থাকে। রুমের লাইট নিভিয়ে দিয়ে অপেক্ষা করে সকাল হওয়ার। প্রতিদিনের মতো সকালে উঠে সে ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে যায়।রেণু চমকে বলে,

“ভাবি, আপনের চোখে কী হইছে?”
“কী হয়েছে?”
“চোখ ফুইলা লাল হইয়া গেছে।”
“তাই নাকি? খেয়াল করিনি তো।”
“কানছিলেন আপনে?”

“আরে না! কাঁদব কেন? চা পাতা কোথায় রেখেছেন? পাচ্ছি না তো।” কথার প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে ফেলল অর্ষা।
সকালে আহনাফ নাস্তা না করেই অফিসে চলে গেল। যদিও আজ তার অফিসে যাওয়ার কথা ছিল না। ছুটিই তো শেষ হয়নি এখনও। অথচ তাও আজ অফিসে গেল। হয়তো অর্ষার থেকে দূরে থাকতে চাইছে তাই। আহনাফ যে অফিসেই গেছে এটা অর্ষা শিওর হয়েছে স্মৃতির ফোন পেয়ে। স্মৃৃতি ফোন করে বলেছে,
“কী গো, এত তাড়াতাড়ি বুঝি বিয়ের আনন্দ শেষ?”
অর্ষা বুঝতে না পেরে বলল,

“এ কথা বলছ কেন?”
“স্যার তো আজই অফিসে চলে এসেছে। তাকে কেমন গম্ভীর লাগছে। মনে হচ্ছে রেগে আছে খুব। কিছু হয়েছে নাকি?”
অর্ষা মিথ্যে করে বলল,
“না তো! অফিসে আজ জরুরী কাজ আছে বলে গেছে।”
“ওহ। ঠিক আছে রাখছি তাহলে এখন। পরে কথা হবে। আল্লাহ্ হাফেজ।”
“আল্লাহ্ হাফেজ।”

স্মৃতির সাথে কথা শেষ করে অর্ষা ডাইনিং রুমে আসে। সবাই সেখানে আছে। জহির চৌধুরী বললেন,
“আহনাফ কোথায়, মা? ঘুম থেকে ওঠেনি এখনও?”
“অফিসে গেছে বাবা। জরুরী কাজ নাকি আছে।”
“না খেয়েই চলে গেল? ছেলেটা যে এত কাজ পাগল! তুমি বসো। আমাদের সাথে খেয়ে নাও।”
“আমি রান্নাঘরেই খেয়ে নিয়েছি। বাবা, বলছিলাম বাড়ি থেকে কয়টা দিন ঘুরে আসি?”
“মন চাইলে যাবে। সমস্যা নেই তো মা। আহনাফ আসুক। ও দিয়ে আসবে তোমাকে।”
“তার তো ফিরতে দেরি হবে। আমি যেতে পারব একা।”

“আজই যাবে?”
“হ্যাঁ।”
তিনি আহিলকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“তাহলে তুমি গিয়ে ওকে দিয়ে আসো। আমি রাশেদকে বলে দিচ্ছি। গাড়িতে করে চলে যাও।”
“ঠিক আছে আব্বু।” বলল আহিল।

অফিসে এসেই কাজের মাঝে ডুবে আছে আহনাফ। কলিগরা মশকরা করলেও সে বিশেষ পাত্তা দেয়নি। নিজের মতো থাকার চেষ্টা করেছে। কিন্তু চাইলেই কি আর সব হয়? কোনোভাবেই নিজেকে শান্ত করতে পারছে না। অর্ষার থেকে দূর আসার পর থেকেই কেমন যেন লাগছে। মনে শান্তি নেই। অস্বস্তি লাগছে, খালি খালি লাগছে। কী যেন নেই, কী যেন নেই মনে হচ্ছে। ভেতরে ভেতরে অনুশোচনাও হচ্ছিল। সে নিজেই উপলব্ধি করছিল অর্ষার সাথে ওভাবে কথা বলা ঠিক হয়নি।

তার অতিরিক্ত পজেসিভনেসের জন্য অজান্তেই সে অর্ষাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে এটা ভেবেই তার সকল মানসিক শান্তিও তার থেকে দূরত্ব গড়ে নিয়েছে। ব্যস্ততার মাঝেও বারংবার সে অনুশোচনার অনলে দগ্ধ হচ্ছিল। কতবার ফোন করতে গিয়েও সংকোচে করতে পারেনি। ক্রমশই সে অস্থির হয়ে পড়ছিল। যে করেই হোক, এই অস্থিরতা দূর করতে হবে।
সন্ধ্যায় অফিস থেকে বেরিয়ে সে ফুলের দোকানে গেল ফুল কিনতে। দুইটা লাল গোলাপ আর অর্ষার পছন্দের কিটক্যাট চকোলেট কিনে রওনা হলো বাড়ির দিকে। খুশি মনে বাড়িতে এসে রুমে যাওয়ার পর দেখে অর্ষা রুমে নেই। সে রান্নাঘরে গিয়ে দেখে রেণু একা।

“চা খাইবেন ভাইজান?” আহনাফকে দেখে জিজ্ঞেস করল রেণু।
“না। অর্ষা কোথায়?”
“ভাবি তো বাপের বাড়ি গেছে। আপনেরে বলে নাই?”
আহনাফ অবাক হয়ে জানতে চাইল,
“কখন গেছে?”
“সকালেই। আহিল ভাইজান দিয়া আসছে।”
আহনাফ আর কিছু না বলেই তৎক্ষণাৎ অর্ষার বাড়ির দিকে রওনা দিল।

সকাল আর অর্ষা মিলে মিঠাইকে নিয়ে বারান্দায় বসে ছিল। মিঠাইকে দেখলেই অর্ষার ক্যাথির কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। সেই সাথে আহনাফের কথা আরও বেশি বেশি মনে হচ্ছে। বাসায় সে থাকছে খুব স্বাভাবিক হয়ে। বাড়ির সবাই তো আর জানে না আহনাফের সাথে মনোমালিন্য হওয়ায় চলে এসেছে। বাড়িতে বলেছে, মন টিকছিল না তাই বেড়াতে এসেছে। এই বাড়িতে থাকলেও তার মন পড়ে ছিল আহনাফের কাছে।

কিছুক্ষণ পরপর সে ফোন চেক করছে। আহনাফের একটা কল কিংবা ম্যাসেজ কিছুই আসেনি। মানুষটা এত কঠোর হওয়া শুরু করল কবে থেকে? ভালোবাসা বুঝি এত তাড়াতাড়িই শেষ হয়ে গেল? বিয়ে করেছে, একেবারে পেয়ে গেছে তাই বোধ হয় এখন আর হারানোর ভয় নেই। যা ইচ্ছে তাই করে যাবে। করুক! সে যদি কথা না বলে থাকতে পারে তাহলে অর্ষা কেন পারবে না? সেও মন কঠিন করবে বলে সিদ্ধান্ত নিল। অর্ষার ভাবনার মাঝেই সকাল উচ্ছ্বাসিতকণ্ঠে বলে উঠল,

“আপু, দেখ ভাইয়া এসেছে।”
অর্ষা চকিতে উঠোনের দিকে তাকাল। ঘেমেনেয়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে পুরো দমে এগিয়ে আসছে আহনাফ। সে অর্ষার পাশে বসে মিঠাইর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

“এখানে তুমি মিঠাইকে নিয়ে বসে আছো। আর ওদিকে ক্যাথিওন যে তোমাকে মিস করছে সেই খবর কি রাখো?”
কী স্বাভাবিক, সাবলীল ব্যবহার! যেন কিছুই হয়নি। অর্ষা অভিমান করতে গিয়েও সকালকে লক্ষ্য করে দমে গেল। স্বাভাবিক থাকার ভান ধরে বলল,
“নিয়ে আসতেন ওকে।”
“ও তো আসবে না। তোমাকে নিয়ে যেতে বলল।”
“আমি মাত্র এলামই তো আজ।”
“জানি। সকালে এসেছ। এখন প্রায় রাত হতে চলল। মোটামুটি অনেকটা সময় থেকেছ। দু’দিন পর আবার এসে কয়েক ঘণ্টা থেকে যাবে।”

অর্ষার উত্তরের অপেক্ষা না করেই আহনাফ বাবা-মায়ের রুমে গিয়ে ইনিয়েবিনিয়ে অর্ষাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কনভিন্স করে ফেলল। এখন আর না ফিরে গিয়ে উপায় নেই। যাওয়ার সময় সকাল মন খারাপ করে বলল,
“তুই আসতে না আসতেই চলে যাচ্ছিস আপু!”
আহনাফ বলল,
“মন খারাপ কোরো না বাচ্চা। তুমি চাইলে আমাদের সাথেই কিন্তু আসতে পারো।”
“না, না। এখন পড়ার অনেক চাপ। যেতে পারব না। আপু থাকলে ভালো হতো। সমস্যা নেই, দু’দিন পর আবার আপুকে দিয়ে যাবেন। মনে থাকবে?”

আহনাফ হেসে বলল,
“মনে থাকবে।”
অর্ষা চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বসল। জানালার কাচ লাগানো। তাই নিস্তব্ধতা খুব ভালো করেই টের পাওয়া যাচ্ছে। আহনাফ বলল,
“একটা গান ছাড়ি?”
অর্ষা কোনো উত্তর দিল না। আহনাফ ফের বলল,
“গান শুনবে না?”
“আপনার ইচ্ছে হলে ছাড়ুন।”
থমথমে মুখ করে বলল অর্ষা।

“তার মানে তোমার ইচ্ছে নেই। আচ্ছা থাক তাহলে, গান ছাড়ব না। রেগে আছ?”
অর্ষা নিরুত্তর। পথে আর কোনো কথা বলল না সে। আহনাফও হঠাৎ করে চুপ হয়ে গেল। বাড়িতে গিয়ে রাগ ভাঙানো যাবে। বাড়ি ফিরে অর্ষা রুমে চলে গেল সরাসরি। ড্রয়িংরুম ফাঁকা। রেণু ছাড়া আর কেউ ওদের দেখেনি। আহনাফ রুমে গিয়ে দেখল অর্ষা ব্যাগ থেকে কাপড় বের করছে। সে অর্ষার হাত টেনে ধরে মুখোমুখি দাঁড় করাল। দু’হাতের আঁজলায় অর্ষার বিষণ্ণ মুখখানা তুলে নিয়ে বলল,
“তাকাও আমার দিকে। খুব রেগে আছো?”

অর্ষা তাকাল না। তার চোখ, গলা ধরে আসছে। কান্না আসার পূর্ব লক্ষণ। আহনাফ ম্রিয়মাণ কণ্ঠে বলল,
“আমার ভুল হয়ে গেছে। এভাবে তোমার সাথে কথা বলা ঠিক হয়নি। কিন্তু কী করব বলো? মাথা ঠিক রাখতে পারিনি। এখন থেকে সব পরিস্থিতিতেই মাথা ঠাণ্ডা রাখব প্রমিস করলাম। তুমি প্লিজ আর রাগ করে থেকো না।”
অর্ষা এবার নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আবারও ব্যাগ থেকে কাপড় বের করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
আহনাফ বলল,

“কী করলে তোমার রাগ ভাঙবে বলো তো? একটা গান শোনাই? শোনাব?”
কোনো জবাব না পেয়ে আবার নিজেই বলল,
“গানের গলা ভালো নয়। তবুও শুধুমাত্র তোমার জন্য মান-সম্মানের ভয় না করে গান গাচ্ছি।”
সে কেশে গলা পরিষ্কার করে গান শুরু করে,

“যা বলার বলে যা
যা করার করে যা,
যা ভাবার ভেবে যা আমাকে।
এই মনের কারণে
চাই হাজার বারনে,
চাই হাওয়ায় উড়াতে ইচ্ছেটাকে।
ও তাইতো প্রেমের গান লিখেছি
আর তাতে তোর নাম লিখেছি,
মাঝ রাতে বদনাম হয়েছে মন।
যেইনা চোখের ইচ্ছে হলো
তোর পাড়াতেই থাকতে গেল,
ডাক নামে তোর ডাকতে গেল মন।
কি করি এমন অসুখে
জমেছে মরণ এ বুকে।”

গান শেষ হওয়ার পূর্বেই ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করে অর্ষা। আহনাফ ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরে বলে,
“তুমি কাঁদবে না বাটারফ্লাই। তোমার কান্না আমি সহ্য করতে পারি না।”
অর্ষার কান্নার দমক বাড়ে। সে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে,
“কেন আপনি আমাকে কষ্ট দেন?”
“অনেক বড়ো ভুল করে ফেলেছি জান। এই ভুল কী করে সংশোধন করব বলো? তুমি যা বলবে তা-ই হবে। আমি সেটাই করব।”

“সত্যি?”
“তিন সত্যি।”
“আমাকে আগের থেকেও বেশি ভালোবাসতে হবে।”
“এইটুকুই?”
“হ্যাঁ, এইটুকুই। যদি কখনও মনে হয় আপনার ভালোবাসা আমার জন্য একটুও কম হয়েছে তাহলে কিন্তু আমি আবার চলে যাব।”
“একটা কথা বলি?”
“হু।”

“যত যা-ই হোক, যত ঝগড়া, রাগ-অভিমান, মনোমালিন্যই হোক না কেন প্লিজ আমাকে কখনও ছেড়ে যেও না। বাবার বাড়িতেও নয়। বিয়ের পর প্রতিটা সংসারেই টুকটাক ঝগড়াঝাঁটি, কথা কা’টা’কা’টি হয়। আমাদেরও হবে। এটা বাস্তবতা; কোনো স্বপ্ন কিংবা কল্পনা তো নয় তাই না? সবকিছু স্বপ্নের মতো তাই হবেও না। অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়েও আমাদের একসাথে থাকতে হবে। দোষ যারই হোক কখনও ছেড়ে কোথাও যাবে না এটা তোমার কাছে আমার অনুরোধ। দূরত্বকে কখনও আমাদের মাঝখানে আসতে দিও না। ভুল বুঝাবুঝি হলে হোক। আমরা মিটিয়ে নেব। ভালোবেসে সব অভিমানও মুছে দেবো। তবুও তোমার বিরহ, তোমার অনুপস্থিতি কিংবা তোমার দূরত্ব আমি সইতে পারব না জান।”
অর্ষা আরেকটু শক্ত করে আলিঙ্গন করল। আহনাফ বলল,

“বলো, যাবে না তো?”
কান্না থামিয়ে অর্ষা আহ্লাদিতস্বরে বলল,
“যাব না। কখনও যাব না।”
অর্ষার কপালে চুমু খেল আহনাফ। টেবিলের ওপর অর্ষার জন্য আনা গোলাপ ফুল এবং কিটক্যাট ছিল। ক্যাথিওনও সেখানেই বসা। আহনাফ বলল,
“টেবিলের ওপর তোমার গিফ্ট।”
“আবারও ক্যাথিকে গিফ্ট দিচ্ছেন আমায়?”
আহনাফ হেসে বলল,

“আরে না! গিয়ে দেখো তো আগে।”
অর্ষা টেবিলের কাছে যাওয়ার আগেই ক্যাথি ফু্লগুলো কা’ম’ড়ে মুখে ধরে রইল। অর্ষা অবাক হয়ে বলল,
“ফুল, চকোলেট আমার জন্য?”
“হ্যাঁ।” বলল আহনাফ।
অর্ষা ক্যাথির দিকে ডান হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“ফুল কি আমায় দেবেন নাকি নিজেই রেখে দেবেন?”
অর্ষার হাতের ওপর ফুল দিল ক্যাথি। আদুরে ভঙ্গিতে মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিল অর্ষা। আহনাফের কাছে গিয়ে বলল,

“থ্যাঙ্কিউ।”
“শুধু থ্যাঙ্কিউ?”
“আর কী? বিয়ে তো করে ফেলেছি। নয়তো বলতাম, যান কাজী ডেকে আনেন।”
আহনাফ ফিক করে হেসে ফেলল। বলল,
“চলো বারান্দায় বসে চন্দ্রবিলাস করি আজ। দুই চাঁদকে আজ একসাথে দেখব।”
অর্ষা লাজুক হাসল। আহনাফের সঙ্গে বারান্দায় গিয়ে বসল ফ্লোরে। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে আহনাফ। অর্ষা গোলাপের ঘ্রাণ নিয়ে বলল,
“কী সুন্দর ঘ্রাণ!”

আহনাফ অর্ষার খোলা চু্লের মাঝে মুখ ডুবিয়ে বলল,
“তোমার চুলের ঘ্রাণের চেয়ে বেশি সুন্দর নয়।”
“কী যে বলেন! মাথা গেছে পুরো।”
“সত্যিই বলছি। মা’তা’ল করা ঘ্রাণ রয়েছে তোমার চুলে। সেই প্রথম দিন থেকেই একটু একটু করে আমায় পাগল করা শুরু করেছ।”
“প্রথম দিন থেকেই?”
“হু একদম প্রথমদিন থেকেই। ঐযে গাড়িতে তোমার ওড়না আটকিয়েছিল, রাশেদকে নিয়ে তোমার মজা করা।”
“ওয়েট, ওয়েট! সেদিন আপনি গাড়িতে ছিলেন?”
আহনাফ হেসে বলল,

“হ্যাঁ, পেছনে বসা ছিলাম। আবার কলেজেও তো তোমায় দেখেছি। তুমি রাশেদের টাক মাথার প্রসংশা করেছিলে।” এইটুকু বলেই হাসল আহনাফ।
অর্ষা ভড়কে গিয়ে বলল,
“আমি? আমি না তো! লামিয়া বলেছিল।”
“বলো কী! আমি তো আরও ভেবেছিলাম তুমি বলেছিলে।”

“ছি! আপনি কেমন করে ভাবলেন? আমি কি এমন মশকরা করি? রাশেদ ভাই আমাকেই দেখিয়েছিল?”
“না। ও তোমাদের দিকে তাকিয়ে বলেছিল ‘ঐ’ মেয়েটা। স্পেসিফিকভাবে বলেনি যে কে বলেছে। সকালেই তোমার ওড়না আমার গাড়িতে আটকিয়েছিল। রাশেদের সাথে তোমার কিছুটা বাকবিতণ্ডাও হয়েছিল। তাই আমি ধরে নিয়েছিলাম, তুমিই রাশেদকে নিয়ে মজা উড়িয়েছ।”

“ধুর যা!”
“যাব না।” বলে আরেকটু কাছে টেনে নিল আহনাফ।
“আচ্ছা আপনি আমায় এত ভালোবাসেন কেন?”
“বলব?”
“হ্যাঁ।”
আহনাফ অর্ষার ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেয়ে বলল,

“প্রথম যেদিন দেখেছি তোমায়
প্রেমে আমি পড়েছি,
যেদিন তুমি এসেছিলে;
তোমাতেই ম’রে’ছি।
ভালোবাসা বলতে যদি
কিছু থেকে থাকে,
তাহলে শোনো বলছি;
তোমাকেই ভালোবেসেছি।”

(সমাপ্ত)

[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।
বিঃদ্র-১ঃ অনেকটা সময় অপেক্ষা করিয়ে আজ তার অবসান হলো। নানানরকম ব্যস্ততা এবং বাধা-বিপত্তির জন্য মাঝখানে বিশাল বিশাল গ্যাপ গেছে। লিখতে পারিনি, গল্প দিতে পারিনি। এজন্য একটা বড়ো সমস্যাও হয়েছে। সমস্যাটি হলো, আমি যেভাবে গল্পটি সাজাতে চেয়েছিলাম সেভাবে হয়তো এগোতে পারিনি। এজন্য হয়তো গল্পও অনেকটাই তার মাধুর্য হারিয়েছে। লেখা অগোছালো হয়েছে। আগের মতো লেখার জন্য পর্যাপ্ত সময়, সুযোগ পেলে হয়তো আরও ভালো কিছু উপহার দিতে পারতাম আপনাদের। তবুও আমি পড়াশোনা, জব, পরিবার সবকিছু সামলিয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি ভালো কিছু দেওয়ার। কতটা পেরেছি এবং কতটা ব্যর্থ হয়েছি সেটা আমার চেয়ে আপনারা ভালো বলতে পারবেন। তাই অবশ্যই ভালো-খারাপ মিলিয়ে গঠনমূলক কিছু রিভিউ কিংবা মন্তব্য জানতে চাই আপনাদের থেকে।

যেদিন তুমি এসেছিলে সিজন ২ শেষ পর্ব ( ১ম অংশ )

বিঃদ্র-২ঃ সিজন-১ এর সাথে সিজন-২ এর মিল খুঁজতে যাবেন না। দুটো গল্পেরই আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কোনো গল্পই কোনো গল্পের মতো নয়। তাই কোনোটা হয়তো ভালো লাগবে, কোনোটা ভালো লাগবে না। ভালো লাগা, খারাপ লাগা দুটোই নির্ভর করছে আপনাদের ওপর। এটা নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। আপনারা যে এতটা সময় ধরে সাথে ছিলেন, সাপোর্ট করেছিলেন আলহামদুলিল্লাহ্‌ আমি এতেই সন্তুষ্ট। খুব শীঘ্রই আপনাদের সারপ্রাইজ পর্ব দেওয়ার চেষ্টা করব ইন-শা-আল্লাহ্। আমার জন্য মন থেকে দোয়া করবেন, আল্লাহ্ যেন আমার সহায় হয়। মন থেকে কিছু চাইছি আমি আল্লাহর কাছে। পেয়ে গেলে হয়তো লেখালেখিরর জগতে আমার পথচলাটা সুন্দর এবং সহজ হবে ইন-শা-আল্লাহ্ এবং আমিও পুরোদমে লেখালেখিতে এবং আপনাদের মাঝে থাকতে পারব। নয়তো এই জগতে আমার পথচলা ধীরে ধীরে কমে যাবে। একটা সময় হয়তো ভুলেও যাবেন মুন্নি আক্তার প্রিয়া নামে কোনো লেখিকা ছিল; যাকে কেউ কেউ লেখার জন্য পছন্দ করতেন, ভালোবাসতেন, কেউ বা আবার অপছন্দ করতেন, ঘৃণা করতেন। আমি চাই আমার কলম চলুক, আপনাদের সাথে আমার পথচলা অনেক বেশি দীর্ঘ হোক। আমি আপনাদের দোয়ায়, ভালোবাসায়, ঘৃণায় থাকতে চাই। তাই দোয়া করবেন। ভালো থাকবেন। ভালোবাসি আপনাদের সবাইকে ভীষণ।]

যেদিন তুমি এসেছিলে সিজন ২ সারপ্রাইজ পর্ব