যেদিন তুমি এসেছিলে সিজন ২ সারপ্রাইজ পর্ব ৩

যেদিন তুমি এসেছিলে সিজন ২ সারপ্রাইজ পর্ব ৩
মুন্নি আক্তার প্রিয়া

“বউয়ের রাগ হচ্ছে ভাই কঠিন রাগ। খুব সহজে মানানো কঠিন। অসাধ্য সাধন করতে হয়। তবেই না রাগ ভাঙানো সম্ভব।”
খুব জ্ঞানী জ্ঞানী ভাব ধরে কথাগুলো বলল আদিব। তার সম্মুখের চেয়ারে বসে আছে আহনাফ এবং হাসিব। কথাগুলো অবশ্য সে শুধু আহনাফকে উদ্দেশ্য করেই বলেছে। বেচারা বউয়ের রাগ ভাঙাতে অসফল হয়ে অবশেষে এসেছে আদিবের কাছে। প্রথমে সে হাসিবের শরণাপন্ন হয়েছিল। হাসিব উলটো দুঃখী দুঃখী কণ্ঠে বলেছে,

“কী বলছিস রে ভাই! আমি তোকে কীভাবে সাহায্য করব এই বিষয়ে? আমি তো নিজেই মিসকিন। অবিবাহিত। আমার তো ভাই, বউ নাই।”
আহনাফ তাই উপায় খুঁজতে আদিবের কাছে চলে এসেছে। আদিবের পাশে বসে ছিল মুন। সে স্বামীর মুখপানে তাকিয়ে রয়েছে কটমট করে। হাসিব সেদিকে ইশারা করতেই আদিবও তাকাল। বলাই বাহুল্য, সঙ্গে সঙ্গে ঢোক গিলতে হলো তাকে। মুন নাকের পাটা ফুলিয়ে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“তুমি যে দুলাভাইকে ভাব ধরে এত কথা বলছ, তুমি কবে কোন অসাধ্য সাধন করেছ আমার জন্য?”
আদিব আহ্লাদ করে বলল,
“এটা তুমি কী বলছ মুন? চাঁদ আমার, আমি কি তোমার রাগ ভাঙাই না বলো?”
“তোমার ঢং তো আমি পরে ছুটাব। আগে দুলাভাইয়ের সমস্যা সমাধান করো। আমি নাস্তা নিয়ে আসছি।”
মুন চলে যাওয়ার পর আহনাফ বলল,

“আমি এখন কোন অসাধ্য সাধন করব ভাই? শাহজাহানের মতো কি আমাকেও তাজমহল টাইপ কিছু বানাতে হবে নাকি?”
“না, না এ কি হয় নাকি এখন? মেয়েরা তো ঘুরতে-ফিরতে পছন্দ করে। আপনি অর্ষাকে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যান।”
আহনাফ হতাশ ভঙ্গিতে সোফায় গা এলিয়ে বলল,
“ছাই! ঘুরতে গেলে তো হতোই। তাহলে তো রাগ ভাঙানোর জন্য এত কসরত করতে হতো না। কাছেই ঘেঁষতে দেয় না, আবার যাবে ঘুরতে!”

“বুঝলাম। ও আপনার সঙ্গে ঘুরতে যাবে না। কিন্তু আমাদের সঙ্গে তো যাবে?”
“মানে? ঠিক বুঝলাম না।”
“বুঝিয়ে বলছি। অর্ষার বাকি ফ্রেন্ডস, মুন আমি আমরা সবাই মিলে যদি ঘুরতে যাওয়ার কথা বলি, তখন তো আর অর্ষা বারণ করতে পারবে না।”
আহনাফ খুশি হয়ে বলল,
“বাকিরা কি যাবে?”

“ভাই যে কী বলেন না! আপনি কি এখনও ওদেরকে চেনেন না? ঘুরতে যাওয়ার কথা বললে কেউ যদি হাসপাতালে ভর্তিও থাকে; তবুও প্রয়োজনে অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে সবার সঙ্গে যাবে।”
আহনাফ হাসল। বলল,

“ঠিক আছে। আপনার প্ল্যান আমার পছন্দ হয়েছে ভাই। কিন্তু অর্ষা যেন বুঝতে বা জানতে না পারে যে, এই প্ল্যানে আমি ইনভলভ্ আছি। রাগ ভাঙার পর আমি অবশ্য নিজেই ওকে বলে দেবো সব।”
“ওসব নিয়ে আপনি ভাববেন না ভাইয়া। মনে করেন আমাদের ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান সাকসেস। কিন্তু ভাই, যাওয়ার পর রাগ কিন্তু আপনারই ভাঙাতে হবে।”

আহনাফ কিছু লজ্জা পেল। হাসিব উচ্ছ্বাসিত হয়ে বলল,
“ভালোই হলো। বিদেশে যাওয়ার আগে অন্তত সবার সঙ্গে একটা ট্যুরে তো যাওয়া হবে। কিন্তু যাব কোথায় আমরা?”
আদিব বলল,
“কোনো অচেনা জায়গায়। যেখানে সচরাচর কেউ ট্যুরে যায় না। কিন্তু আমরা যাব। একটা এডভেঞ্চারও হয়ে যাবে। কী বলেন আপনারা?”
আহনাফ এবং হাসিব দুজনই রাজি হলো।

সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিট।
গ্যাঞ্জাম পার্টি অর্ষার শ্বশুরবাড়িতে এসে হাজির হয়েছে। সচরাচর এমন ভরসন্ধ্যায় এভাবে একজোট হয়ে ওরা আসে না। আজ হঠাৎ কী হলো কে জানে! অর্ষা রেণুকে নাস্তা দিতে বলে নিজেও ওদের সঙ্গে বসল। সকলের সতর্ক দৃষ্টি ওর দিকেই নিক্ষেপ করা। সোফা থেকে একটা কুশন নিজের কোলের ওপর নিয়ে অর্ষা জানতে চাইল,

“সবকিছু ঠিকঠাক?”
লামিয়া মুখটা দুঃখী দুঃখী করে বলল,
“কিচ্ছু ঠিক নাই রে দোস্ত। বুকের ভেতর সারা রাত চিনচিন ব্যথা করে। ঘুমাতে পারি না।”
“বলিস কী! ডাক্তারের কাছে না গিয়ে আমার কাছে এসেছিস কেন?”
আশিক বলল,

“ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল তো।”
“কী বলল ডাক্তার?”
“বলেছে ঘুরতে যেতে। কোথাও থেকে ঘুরে এলে ভালো লাগবে।”
অর্ষা ভ্রুঁ কুঞ্চিত করে শুধাল,
“কোথাও ঘুরতে গেলে বুকের চিনচিনে ব্যথা ভালো হয়ে যায়?”
মুন উত্তরে বলল,

“আলবৎ ভালো হতে বাধ্য। প্রকৃতির মাঝে বিচরণ করলে মন ফুরফুরে হয়ে যাবে। আর মন ফুরফুরা থাকলে শরীরও ভালো লাগবে। সব ব্যথার উপশম হবে। রাতে ঘুমটাও ভালো হবে।”
“তোরা মনে হচ্ছে কিছু একটা লুকাচ্ছিস আমার থেকে।” দু’হাত বগলদাবা করে বলল অর্ষা।
রেণু এর মাঝে নাস্তা নিয়ে এলো। সবাই রেণুর সঙ্গে হালকা কথাবার্তা বলে চা নিল হাতে। দিদার চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল,

“তোর সঙ্গে কি আমরা লুকোচুরি খেলতে এসেছি নাকি?”
এরপর সে চোখ বন্ধ করে বলল,
“আহ্!”
তৎক্ষণাৎ চোখ খুলে রান্নাঘরের দিকে তাকাল। গলার স্বর যথাসম্ভব বাড়িয়ে বলল,
“চা টা অসাধারণ হয়েছে রেণু আপু!”

রেশমি দিদারের মাথায় গাট্টা মেরে বলল,
“তুই তো এসেছিস খেতে। তুই বরং চুপচাপ খা। কাজের কথা তোর দ্বারা হবে না।”
জুঁই বলল,
“অর্ষা শোন, তোর বিয়ের পর আমাদের কোথাও সেভাবে ঘুরতে যাওয়া হয়েছে বল তো?”
দিদার বাঁধ সেজে বলল,

“যাসনি? রেস্টুরেন্টে গিয়ে গাণ্ডেপিণ্ডে কে গিলেছে হু? আমি একা?”
লামিয়া দাঁত কিড়মিড় করে বলে,
“এটারে কেউ থামাবি? ও কোন পক্ষে যাচ্ছে বুঝতেছি না আমি।”
“কীসের পক্ষ?” জানতে চাইল অর্ষা।
লামিয়া থতমত খেয়ে বলল,
“কৃষ্ণপক্ষ, শুক্লপক্ষ নাম শুনিসনি?”

অর্ষা তাকিয়ে রয়েছে সন্দেহের দৃষ্টিতে। সেই সময়ে আহিল এবং সকাল এসে উপস্থিত হলো। সকাল দৌঁড়ে এসে অর্ষাকে জড়িয়ে ধরে। অর্ষা নিজেও বোনকে পেয়ে খুশিতে আটখানা হয়ে গেল। সকালের চুলে হাত বুলিয়ে বলল,
“ভালো আছিস?”
“হ্যাঁ, আপু।”
“বাড়ির সবাই ভালো আছে?”

“সবাই ভালো আছে। তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল।”
“এজন্য কি আহিল গিয়ে নিয়ে আসলো?” কথাটা বলে চোরা দৃষ্টিতে তাকাল অর্ষা আহিলের দিকে।
আহিল ধরা পড়ে যাওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
“না মানে এমনিতেই ফেসবুকে কথা হচ্ছিল তাই আরকি! ও বলল তোকে দেখবে…”
“হয়েছে। এত কৈফিয়ত দিতে হবে না। ওরা সবাই ঘুরতে যাওয়ার কথা বলছে।”
“জানি তো! লামিয়ার নাকি কঠিন অসুখ হয়েছে।”

লামিয়া দাঁতমুখ খিঁচে বলল,
“হা-রা-ম-জা-দা কঠিন অসুখ না। বুকে ব্যথা!”
“ঐ যা হলো আরকি। মাঝে মাঝে এমন অসুখ বাঁধাবি। ভালোই হবে। সবাই মিলে একটু ঘুরতে-ফিরতে পারব।”
“কিন্তু আমার যেতে ইচ্ছে করছে না।” বলল অর্ষা।
সকলে হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

“কিন্তু কেন?”
আহিল বলল,
“তুই কি ভাইয়াকে নিয়ে ভাবছিস? ভাইয়াকে আমরা সবাই ম্যানেজ করে নেব।”
“আমি কাউকে নিয়েই ভাবছি না। আমার নিজেরই কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না।”
লামিয়া কাঁদোকাঁদো স্বরে বলল,
“আমার দুর্দিনে তুই আমার পাশে থাকবি না অর্ষা? এই তোর বন্ধুত্ব? এতদিন শুনেছি, বিয়ে হলে বন্ধুরা পর হয়ে যায়। আর আজ তার প্রমাণ পেলাম।

তোদের সবার সামনে একদিন বলেছিলাম না, অর্ষা পরিবর্তন হবে নাকি? দেখলি তো এবার? প্রমাণ পেলি?”
সবাই শব্দ করে দীর্ঘশ্বাস নিল। অর্ষার কেন জানি মনে হচ্ছে সবটাই সাজানো নাটক। কোনোটাই নিঁখুত নয়। তার প্রত্যুত্তরের পূর্বে বাহির থেকে আহনাফ, আদিব এবং হাসিবও চলে আসে। আদিব এসেই মুনকে বলে,
“কখন থেকে ফোন দিচ্ছি রিসিভ করছো না কেন? তোমাকে না পেয়ে আহনাফ ভাইয়াকে ফোন করেছি। চিন্তা হয় তো নাকি আমার!”

বলাই বাহুল্য, এটাও তাদের সাজানো নাটকের একটা অংশ। মুন বলল,
“সরি গো! ফোন সাইলেন্ট করা ছিল। খেয়াল করিনি।”
“ভাইয়া বসুন আপনি।” বলল অর্ষা।
এরপর সে রান্নাঘরে গিয়ে নিজেই ওদের জন্য চা, নাস্তা নিয়ে এলো। হাসিব সোফায় গা এলিয়ে বসে বলল,
“কী নিয়ে এত গুরুত্বপূর্ণ আলাপ-আলোচনা হচ্ছে সবার?”
আশিক বলল,

“আপনার লামিয়াকে নিয়ে
তার হয়েছে চিনচিনে ইয়ে,
ওপস ইয়ে নয় মাথা;
হয়েছে তার বুকে চিনচিনে ব্যথা।”
সিরিয়াস আলাপেও হাসির ঝড় উঠে গেল। হাসল না শুধু লামিয়া। সে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে রয়েছে। আশিক ফাঁকা ঢোক গিলে বলল,
“ভুল কিছু বললাম নাকি দোস্ত?”

“আপনার লামিয়া মানে কী রে গাধা? আমার বাবা-মা কি আমাকে তার কাছে লিখে দিয়েছে? নাকি তুই দিয়েছিস? তুই কি আমার অভিভাবক?”
হাসিব শার্টের কলার একটু পেছনে ঠেলে দিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
“একদিন না একদিন তো দিতে হবেই!”
“সেই আশাতেই আপনি স্বপ্ন দেখতে থাকেন। এখন আসল আলাপে আসি আমরা।” বলল লামিয়া।
আদিব গলায় মধু ঢেলে বলল,

“লামিয়া বোন আমার, কী হয়েছে তোমার? সত্যিই খুব অসুখ করেছে?”
মুন মুখ বাঁকিয়ে বিড়বিড় করল,
“আদিখ্যেতা!”
লামিয়াও অসহায়ের মতো বলল,
“হ্যাঁ, ভাইয়া। সবাই মিলে কোথাও থেকে একটু ঘুরে আসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু অর্ষা যেতেই চাইছে না।”
আদিব অর্ষার দিকে তাকিয়ে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,

“সেকি অর্ষা! কী সমস্যা? ভাইয়া কি তোমাকে কোথাও যাওয়ার পারমিশন দেয় না?”
অর্ষা আহনাফের দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল,
“না, না ভাইয়া ওরকম কিছু না। আসলে…”
“তাহলে আসল, নকল সব বাদ। আমরা সবাই মিলে ঘুরতে যাচ্ছি একসাথে।” বলল হাসিব।
অর্ষা ভ্রুঁ বাঁকিয়ে বলল,

“সবাই মানে? আপনারাও যাবেন?”
হাসিব যেন ধরা পড়ে যাচ্ছিল। আদিব সেই যাত্রায় বাঁচিয়ে দিয়ে বলল,
“তোমাদের একা কী করে যেতে দেই? মুনকে তো একা ছাড়তেই পারব না! আমি তোমাদের সঙ্গে একা একা বোর হবো না? তাই আহনাফ ভাই এবং হাসিব ভাইও যাবে।”
আহনাফ এতক্ষণ চুপচাপ ছিল। এবার সে অভিমানীস্বরে বলে,
“না, ভাই। আপনি হাসিবকে সাথে নিয়ে যান। আমি যেতে পারব না। অফিসে কাজ আছে।”
লামিয়া ঠোঁট ফুলিয়ে বলে,

“হ্যাঁ, এখন তো আপনার কত কাজই থাকবে! আমার জায়গায় যদি সকালের অসুখ হতো। আপনি কি যেতেন না? তখন সব কাজকর্ম গোল্লায় পাঠিয়ে দিতেন।”
“আমাকে কেন এসবের মধ্যে টানতেছ? সত্যিই আমার অনেক কাজ আছে।”
“শালীকার অসুস্থতার চেয়েও বেশি জরুরী কাজ?”
“প্লিজ! আমাকে ফোর্স কোরো না বোন।”

লামিয়া একটু নড়েচড়ে বসে এক কলি সুর দিয়ে গাইল,
“শুনেন, শুনেন দুলাভাই আমার কথা, চিনচিনে করে বুক লাগে যে ব্যথা!”
আহনাফ বিব্রতবোধ করছে। সে ওদের মতো এত ভালো নাটক তো জানে না। আহনাফকে এই পর্যায়ে বাঁচাতে হাসিবও লামিয়ার মতো সুর দিয়ে গাইল,
“এই ব্যথা তো আর সেই ব্যথা নয়, বয়সের দোষে বেয়াইন এই ব্যথা হয়।”
”মিথ্যা অপবাদ দিয়েন না বেয়াই,

বয়সের দোষ নয়, এই ব্যথা হায়!”
“কী কারণে তাহলে বেয়াইন এই অসুখ হয়?”
আশিক চোখ-মুখ অন্ধকার করে বলল,
“তোরা দুজনে আমার ক্যারেক্টারে ঢুকে যাচ্ছিস কেন?”
অর্ষা সবটাই বুঝতে পারে। কে যে এর মাস্টার মাইন্ড সেটাও তার কাছে পরিষ্কার। তবে সে যে সবকিছু বুঝতে পেরেছে এটা বাকিদের বুঝতে দিল না। সে অবুঝ সেজে থেকে বলল,
“ঠিক আছে, থাম তোরা। আমরা সবাই মিলে ঘুরতে যাব। তোদের দুলাভাইও যাবে।”
আহিল ইনিয়েবিনিয়ে বলল,

“সকাল যাবে না?”
“ওকে নিয়ে তোর এত মাথা-ব্যথা কেন?”
“না মানে, তোরই তো বোন।”
“আমার বোন, তোরও বোন।”
আহিল দু’গালে হাত ছুঁইয়ে বলল,
“নাউজুবিল্লা! তওবা, তওবা।”
হাসিব বিড়বিড় করে বলল,
“এবার আমার একটা হিল্লে হলেই হলো। ব্যথার উপশমটা যদি হতে পারতাম!”
“আমরা কোনো হিল্লে পার্টি করতে যাচ্ছি না বেয়াই। আমরা যাচ্ছি ঘুরতে বুঝতে পেরেছেন?” ভেংচি কেটে বলল লামিয়া।
আদিব বলল,

“তাহলে খুব শীঘ্রই আমাদের ট্যুরে যাওয়া হচ্ছে?”
“ইন-শা-আল্লাহ্।” সমস্বরে বলল সবাই।
রাতের খাওয়া-দাওয়া এখানেই করে যে যার বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে গেল। সকালকে বাড়িতে দিয়ে আসতে গেছে আহিল। বাড়ির সবাই ঘুমানোর প্রস্তুতি নিয়েছে। অর্ষা নিজেও শুয়েছে রেণুর রুমে। ঝগড়ার শুরু থেকেই সে আহনাফের থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছে কিনা! তবে আহনাফের আজকের অভিনয়ের কথা মনে করে সে নিজে নিজেই হাসছে। ড্রামাবাজগুলোর সাথে থেকে থেকে নিজেও ড্রামাবাজ হয়ে যাচ্ছে। চোখ বন্ধ করতেই দরজায় নক করে আহনাফ। রেণু গিয়ে দরজা খুলে বলল,

“কিছু লাগব ভাইজান?”
আহনাফ অজুহাত দেখিয়ে বলল,
“রাফিকে গরম দুধ দিয়ে আসোনি কেন? এখনই যাও।”
“মনে আছিল না ভাইজান। যাইতাছি।”
দুজনের কথোপকথন চলাকালীন সময়েই অর্ষা বিছানায় উঠে বসেছে। রেণু চলে যাওয়ার পর আহনাফ একবার পেছনে তাকিয়েই দৌঁড়ে ভেতরে চলে এলো। অর্ষাকে জাপটে ধরে দু’গালে চুমু খেয়ে বলল,
“এবার দেখব নিজেকে আমার থেকে কত দূরে তুমি রাখতে পারো। তুমি আমার প্রজাপতি, আমার মনের আঙিনাতেই তোমায় উড়তে হবে।”

যেদিন তুমি এসেছিলে সিজন ২ সারপ্রাইজ পর্ব ২

এইটুকু বলেই আবার সে চলে আসার জন্য উদ্যত হয়। দরজার কাছে এসে থমকে যায়। পেছনে তাকিয়ে বলে,
“সেই সময়টার জন্য অপেক্ষায় থেকো। ভালোবাসি আমার জান।”
যাওয়ার পূর্বে সে ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিয়ে যায়। অর্ষা হতবিহ্বল হয়ে গেলেও আহনাফ চলে যাওয়ার পর শব্দ করেই হেসে ফেলে। বুকে বালিশ জড়িয়ে শুয়ে আনমনেই বলে ওঠে,
“পাগল একটা!”

যেদিন তুমি এসেছিলে সিজন ২ সারপ্রাইজ পর্ব ৪